Продолжая использовать сайт, вы даете свое согласие на работу с этими файлами.
অ্যাক্রোমেগালি
অ্যাক্রোমেগালি | |
---|---|
অ্যাক্রোমেগালির জন্য নিম্ন চোয়ালের দাঁতের মধ্যে ফাঁক থাকে। | |
উচ্চারণ | |
বিশেষত্ব | এন্ডোক্রাইনোলজি |
লক্ষণ | হাঁত, পা, কপাল, চোয়াল ও নাক বড়ো হয়ে যাওয়া, পুরু ত্বক, ভরাট কণ্ঠ। |
জটিলতা | টাইপ ২ ডায়াবেটিস, স্লিপ অ্যাপনিয়া বা নিদ্রাকালীন শ্বাসব্যাঘাত, উচ্চ রক্তচাপ উচ্চ কোলেস্টেরল, হৃদ্রোগ, বিশেষ করে হৃৎপিণ্ড আকারে বড়ো হয়ে যাওয়া (কার্ডিয়োমায়োপ্যাথি), অস্থিসন্ধি প্রদাহ, সুষুম্নাকাণ্ডের সংনমন অথবা ভাঙন, ক্যান্সার-সদৃশ অর্বুদ, কোলনে ক্যান্সারপূর্ব বৃদ্ধি (পলিপ)। |
রোগের সূত্রপাত | মধ্যবয়স |
কারণ | বৃদ্ধি হরমোনের আধিক্য |
রোগনির্ণয়ের পদ্ধতি | রক্ত পরীক্ষা, মেডিকেলীয় চিত্র পরীক্ষা |
পার্থক্যমূলক রোগনির্ণয় | প্যাকিডার্মোপেরিঅস্টোসিস |
চিকিৎসা | শল্যচিকিৎসা, ওষুধ, বিকিরণ চিকিৎসা। |
ঔষধ | সোমাটোস্ট্যাটিন অ্যানালগ, বৃদ্ধি হরমোন রিসেপ্টর অ্যান্টাগনিস্ট। |
আরোগ্যসম্ভাবনা | চিকিৎসা নিলে সাধারণত স্বাভাবিক আয়ুষ্কাল পাওয়া যায়, চিকিৎসা না নিলে আয়ুষ্কাল ১০ বছর কমতে পারে। |
সংঘটনের হার | ৫০,০০০ জনে ৩ জন |
অ্যাক্রোমেগালি (ইংরেজি: acromegaly) হলো এমন একটি রোগ যা বৃদ্ধি ফলক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বৃদ্ধি হরমোনের আধিক্যের ফলে হয়। প্রারম্ভিক উপসর্গ হলো হাত ও পায়ের বৃদ্ধি। কপাল, চোয়াল ও নাক আকারে বৃদ্ধি পেতে পারে। অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে রয়েছে অস্থি সন্ধিতে ব্যথা, ত্বক পুরু হয়ে যাওয়া, ভরাট কণ্ঠ, মাথাব্যথা, দৃষ্টির সমস্যা। এই রোগের জটিলতাগুলো হলো টাইপ ২ ডায়াবেটিস, ঘুমের মধ্যে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া ও উচ্চ রক্তচাপ।
পিটুইটারি বা পোষণিকা গ্রন্থি থেকে অতিরিক্ত পরিমাণে বৃদ্ধি হরমোন ক্ষরণের ফলে অ্যাক্রোমেগালি হয়। ৯৫% এর বেশি ক্ষেত্রে অতিরিক্ত উৎপাদন হয় নিরীহ অর্বুদের জন্য, যা পিটুইটারি অ্যাডিনোমা নামে পরিচিত। এটি পিতামাতা থেকে আগত বংশীয় কোনো রোগ নয়। বিরল ক্ষেত্রে দেহের অন্য অংশের অর্বুদের জন্যও অ্যাক্রোমেগালি হতে পারে। রোগ নির্ণয় করার জন্য গ্লুকোজ দ্রবণ পান করার পর বৃদ্ধি হরমোন মাত্রা অথবা রক্তে ইনসুলিন-সদৃশ বৃদ্ধি ফ্যাক্টর পরিমাপ করতে হয়। রোগ শনাক্তের পর পিটুইটারি গ্রন্থির চিত্র তুলে দেখতে হয় কোনো অ্যাডিনোমা আছে কি না। যদি শৈশবকালে অতিরিক্ত বৃদ্ধি হরমোন উৎপাদিত হয়, তাহলে অ্যাক্রোমেগালির পরিবর্তে জাইগ্যান্টিজম বা দানবত্ব নামক রোগ হয়, এবং এতে আক্রান্ত রোগী অনেক বেশি লম্বা হয়ে থাকে।
চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে অর্বুদ দূর করার জন্য শল্যচিকিৎসা, ওষুধ ও বিকিরণ চিকিৎসা। শল্যচিকিৎসা হলো পছন্দনীয় চিকিৎসা; অর্বুদ যত ছোটো হবে, শল্যচিকিৎসা তত আরোগ্য-সহায়ক হবে। যদি শল্যচিকিৎসা প্রতিনির্দেশিত হয় অথবা আরোগ্য-সহায়ক না হয়, তাহলে সোমাটোস্ট্যাটিন অ্যানালগ বা বৃদ্ধি হরমোন রিসেপ্টর অ্যান্টাগনিস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। শল্যচিকিৎসা বা ওষুধ কোনোটাই যদি কার্যকর না হয়, তাহলে বিকিরণ চিকিৎসা বা রেডিওথেরাপি দেওয়া যেতে পারে।চিকিৎসা না করলে প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল প্রায় ১০ বছর পর্যন্ত কমতে পারে, চিকিৎসা করালে স্বাভাবিক আয়ুষ্কাল পর্যন্ত বাঁচতে পারে।
প্রতি ৫০,০০০ জনে ৩ জন ব্যক্তি অ্যাক্রোমেগালিতে আক্রান্ত হয়। মধ্যবয়সি ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়। পুরুষ ও নারী সমানুপাতিক হারে আক্রান্ত হয়। ১৭৭২ খ্রিষ্টাব্দে Nicolas Saucerotte সর্বপ্রথম এই রোগের বর্ণনা প্রদান করেন। অ্যাক্রোমেগালি শব্দটি গ্রিক ἄκρον (অ্যাক্রোন) "শাখাঙ্গ", ও μέγα (মেগা) অর্থ "বৃহৎ"। বাংলায় এর পারিভাষিক অর্থ বৃহৎ শাখাঙ্গ বা দীর্ঘাঙ্গতা।
উপসর্গগুলো
অ্যাক্রোমেগালির উপসর্গগুলো খুবই ধীরগতিতে প্রকাশ পায়, তাই উপসর্গ শুরু হওয়ার পর রোগ শনাক্ত হতে গড়ে প্রায় ১০ বছর সময় লাগে।
অ্যাক্রোমেগালিতে নিম্নলিখিত উপসর্গগুলো দেখা যায়:
- মাথাব্যথা – প্রায় ৬০% রোগীর ক্ষেত্রে প্রাথমিক উপসর্গ। এটি তীব্র ও প্রলম্বিত হয়।
- কোমল টিসু পুরু হয়ে যায় ফলে হাত, পা, নাক, ঠোঁট ও কান বড়ো ও মোটা হয়ে যায় এবং পুরো শরীরের ত্বক পুরু হয়ে যায়।
- হাত আকারে বড়ো হয়ে যায় এবং করমর্দন করার সময় ভেজা-ভেজা ও ময়দার তালের মতো নরম লাগে। হাতের আঙুলগুলো মোটা হয়ে যায় ফলে আংটির আকার বৃদ্ধি করার প্রয়োজন হয়।
- অভ্যন্তরীণ অঙ্গসমূহ বিশেষ করে হৃৎপিণ্ড ও বৃক্কের কোমল টিসু স্ফীত হয়ে যায় ও হৃৎপিণ্ডের পেশি দুর্বল হয়ে যায়। স্বরতন্ত্রীও স্ফীত হওয়ায় রোগীর ভরাট কণ্ঠ ও কথা ধীরগতির হয়ে যায়।
- ফন্টানেল বা করোটি ঝরোকাতে করোটির সার্বিক প্রসারণ ঘটে। করোটির সাইনাস বা অস্থিগহ্বরগুলোর আকার বৃদ্ধি পায়।
- চোখের ভ্রুর অঞ্চলটি উঁচু ও প্রশস্ত হয়, করোটির ফ্রন্টাল অস্থিটির অতিবৃদ্ধি ঘটে।
- নিম্ন চোয়ালের সুস্পষ্ট বহিঃসরণ ঘটে যাকে প্রোগন্যাথিজম বা উদ্হনুতা বলে, এর সাথে জিহ্বা আকারে বড়ো হয়ে যায় (ম্যাক্রোগ্লোসিয়া বা বৃহৎ জিহ্ব) ও দাঁতের ফাঁক বৃদ্ধি পায়।
- হাইপারট্রিকোসিস বা অতিলোমশতা, হাইপারপিগমেন্টেশন বা অতিরঞ্জন ও হাইপারহাইড্রোসিস বা অতিস্বেদন বা অতিঘর্মণ হতে পারে।
- অ্যাক্রোকর্ডোন বা সবৃন্ত অর্বুদ
জটিলতাসমূহ
- অস্থি ও অস্থিসন্ধির সমস্যা, অস্থিসন্ধির প্রদাহ, অস্থি-অতিবৃদ্ধির ফলে স্নায়ু সংনমন সিনড্রোম ও কারপাল টানেল সিনড্রোম।
- কার্ডিয়োমায়োপ্যাথি বা হৃৎপেশি আপজাত্য, যা হৃদ্বৈকল্য ঘটাতে পারে।
- গলবিল বা ফ্যারিংসের কোমল টিসুর অতিবৃদ্ধির ফলে স্লিপ অ্যাপনিয়া বা নিদ্রাকালীন শ্বাসব্যাঘাত হয়।
- হাইপোগোনাডিজম বা যৌনরসাল্পতা
- পিটুইটারি অ্যাডিনোমার বৃদ্ধির কারণে অক্ষি ঢ্যারা বা অপ্টিক কায়াজ্মার সংনমন ঘটে এবং দৃষ্টির সমস্যা হয়।
কারণসমূহ
পিটুইটারি অ্যাডিনোমা
৯৮% ক্ষেত্রে পিটুইটারি অ্যাডিনোমা (৬০-৮০% ক্ষেত্রে ম্যাক্রোঅ্যাডিনোমা ও ২০-৪০% ক্ষেত্রে মাইক্রোঅ্যাডিনোমা) নামক পিটুইটারি গ্রন্থির নিরীহ অর্বুদের ফলে বৃদ্ধি হরমোনের অত্যুৎপাদনের কারণে অ্যাক্রোমেগালি হয়। এই অর্বুদগুলো অত্যধিক বৃদ্ধি হরমোন উৎপাদন করে এবং আকারে বড়ো হওয়ার সাথে সাথে পারিপার্শ্বিক মস্তিষ্ক কলা বা টিসুকে সংনমিত করে। কিছু কছু ক্ষেত্রে এরা অপটিক স্নায়ুকে সংনমিত করতে পারে। অর্বুদের আকার বৃদ্ধির ফলে মাথাব্যথা ও দৃষ্টির সমস্যা দেখা দিতে পারে। অধিকন্তু, পারিপার্শ্বিক স্বাভাবিক পিটুইটারি টিসুর সংনমন ঘটার ফলে অন্যান্য হরমোন উৎপাদন পরিবর্তিত হতে পারে, ফলে মহিলাদের মাসিকের পরিবর্তন ও স্তন থেকে ক্ষরণ হয় এবং পুরুষদের টেস্টোস্টেরন হরমোন উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার কারণে পুরুষত্বহীনতা বা ধ্বজভঙ্গ রোগ দেখা দেয়। বৃদ্ধি হরমোন উৎপাদন হার ও অর্বুদের আক্রমণাত্মকতায় অনেক বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়। কিছু অ্যাডিনোমা খুবই ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং বৃদ্ধি হরমোনের আধিক্যজনিত উপসর্গগুলো অনেক বছর ধরে অপ্রকাশিত থাকে। অন্যান্য অ্যাডিনোমাগুলো খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং পারিপার্শ্বিক মস্তিষ্কের অঞ্চল অথবা পিটুইটারির নিকটে অবস্থিত প্যারানেজাল সাইনাস বা পরানাসিক্য অস্থিগহ্বরকে আক্রান্ত করে। সাধারণত, অপেক্ষাকৃত অল্পবয়সিদের ক্ষেত্রে টিউমার বা অর্বুদগুলো আক্রমণাত্মক হয়। অধিকাংশ পিটুইটারি অর্বুদগুলো বংশগতভাবে না হয়ে বরং স্বতঃস্ফূর্তভাবেই হয়। অনেক পিটুইটারি অর্বুদ একটি পিটুইটারি কোষে একটা জিনগত পরিবর্তনের থেকে উদ্ভূত হয় যার ফলে কোষ বিভাজন হার বৃদ্ধি পায় এবং অর্বুদ তৈরি হয়। GNAS (গুয়ানিন নিউক্লিওটাইড বাইন্ডিং প্রোটিন, আলফা স্টিমিউলেটিং) জিনে সোমাটিক মিউটেশনের ফলে G প্রোটিন অত্যধিক সক্রিয় হলে, অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধির ফলে পিটুইটারি অ্যাডিনোমা ও বিস্তৃত সোমাটোম্যামোট্রফ হাইপারপ্লেজিয়া হতে পারে, যেটি অর্জিত অথবা ম্যাকিউন-অলব্রাইট সিনড্রোম-এর সাথে সংশ্লিষ্ট হতে পারে।
অন্যান্য অর্বুদসূমহ
অল্প কিছু ক্ষেত্রে, দেহের অন্য অংশের কার্সিনয়েড অর্বুদসমূহ যেমন, অগ্ন্যাশয়, ফুসফুস অথবা অন্যান্য নিউরো-এন্ডোক্রাইন অর্বুদসমূহ থেকে বৃদ্ধি হরমোন অথবা বৃদ্ধি হরমোন অবমুক্তকারী হরমোন ক্ষরিত হতে পারে যা বৃদ্ধি হরমোনের ক্ষরণ কে উদ্দীপিত করে।
রোগ নির্ণয়
অ্যাক্রোমেগালি রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও মেডিকেল চিত্রণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইনসুলিন-সদৃশ বৃদ্ধি ফ্যাক্টর-১ (IGF1) হলো অ্যাক্রোমেগালি শনাক্তে সবচেয়ে সংবেদনশীল পরীক্ষা। IGF-1 মাত্রা সরাসরি বৃদ্ধি হরমোনের সক্রিয়তাকে প্রতিফলিত করে। অর্ধায়ু অনেক বেশি হওয়ায় এটির মাত্রা বৃদ্ধি হরমোন মাত্রার তুলনায় কম উঠানামা করে। প্রায় সকল অ্যাক্রোমেগালি রোগীদের ক্ষেত্রেই IGF-1 মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
বৃদ্ধি হরমোন মাত্রা যদি অনির্ণেয় হয়, তাহলে অ্যাক্রোমেগালি হয়নি বলে অনুমান করা যেতে পারে, তবে রক্তে কেবল বৃদ্ধি হরমোনের নির্ণয়যোগ্য মাত্রা পেলেই অ্যাক্রোমেগালি হয়েছে তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। স্বাভাবিক প্রাপ্তবয়স্কদের দিনের অধিকাংশ সময় বৃদ্ধি হরমোনের স্বাভাবিক মাত্রা হলো <০.৫ µg/L (মাইক্রোগ্রাম/লিটার)। শারীরিক বা মানসিক চাপ বা পীড়নের সময় বৃদ্ধি হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়।
মুখে গ্লুকোজ পান করানোর পর ‘বৃদ্ধি হরমোন অবদমন পরীক্ষা’ হচ্ছে খুবই সুনির্দিষ্ট একটি পরীক্ষা। গ্লুকোজ সহনশীলতা পরীক্ষা করার পর বৃদ্ধি হরমোনের মাত্রার অবদমন না ঘটলে অ্যাক্রোমেগালি হয়েছে বলে ধরে ধরে নেওয়া যায়। অ্যাক্রোমেগালি রোগীদের ক্ষেত্রে বৃদ্ধি হরমোন ০.৩ µg/L এর নিচে নামে না, বরং কারও কারও ক্ষেত্রে বৃদ্ধি পেতে পারে; প্রায় ২৫% অ্যাক্রোমেগালি রোগীর ক্ষেত্রে গ্লুকোজ সহনশীলতা পরীক্ষায় ডায়াবেটিস ধরা পড়ে।
অর্বুদ থেকে প্রোল্যাক্টিন হরমোন সহ-ক্ষরণ হওয়ায় ৩০% ক্ষেত্রে প্রোল্যাক্টিন ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। প্রোল্যাক্টিনোমা নামক পিটুইটারি গ্রন্থির অর্বুদ হলে প্রোল্যাক্টিন মাত্রা >২০০ µg/L-এর বেশি হয়। প্রোল্যাক্টিন মাত্রা ২০ থেকে ২০০ মাইক্রোগ্রাম/লিটার (µg/L)-এর মধ্যে থাকলে হাইপারপ্রোল্যাক্টিনিমিয়ার অন্যান্য কারণগুলো বিবেচনা করা উচিত। অ্যাক্রোমেগালিতে অন্যান্য পরীক্ষার মধ্যে মলান্ত্রবীক্ষণ বা কোলনোস্কপি করে বৃহদন্ত্র বা কোলনের অর্বুদ আছে কি না তা নিরীক্ষা করে দেখা। অ্যাক্রোমেগালিতে দৃষ্টিক্ষেত্র পরীক্ষায় প্রায়শই সমস্যা দেখা দেয়, যেমন বাইটেম্পোরাল হেমিয়ানোপিয়া বা দ্বিরগ অর্ধান্ধতা।
চিকিৎসা
চিকিৎসার লক্ষ্য হচ্ছে বৃদ্ধি হরমোনের মাত্রাকে স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে এনে অ্যাক্রোমেগালির উপসর্গগুলো উপশম করা, বর্ধিঞ্চু পিটুইটারি অর্বুদ পারিপার্শ্বিক মস্তিষ্ক অঞ্চলে যে চাপ প্রয়োগ করছে তা কমানো ও পিটুইটারি গ্রন্থির কার্যক্রম স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসা। চিকিৎসা না করালে মৃত্যু সম্ভাবনা অনেকগুণ বেড়ে যায়। অধিকাংশ মৃত্যু হৃদ্বৈকল্য, করোনারি ধমনি রোগ ও উচ্চ রক্তচাপজনিত কারণে হয়। অধিকন্তু, অর্বুদজনিত কারণেও মৃত্যুসংখ্যা বেশি হতে পারে, বিশেষত বৃহদন্ত্রের অর্বুদ; এজন্য কোলনের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস করতে মলান্ত্র বা কোলনের পলিপ বা বৃন্তার্বুদ শনাক্ত ও দূরীকরণের নিমিত্তে নিয়মিত মলান্ত্রবীক্ষণ বা কোলনোস্কপি পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয়, যদিও এ-ব্যাপারে প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণাদি নিশ্চয়জনক নয়। চিকিৎসার লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে বৃদ্ধি হরমোনের গড় মাত্রা ২.৫ µg/L-এর নিচে রাখা; এটি সর্বদা 'নিরাপদ' না হলেও মৃত্যুহার কমিয়ে স্বাভাবিক মাত্রায় নিয়ে আসে বলে এটি 'নিরাপদ' বৃদ্ধি হরমোন মাত্রা বলে বিবেচিত হয়। বর্তমানে শল্যচিকিৎসা, রেডিওথেরাপি বা বিকিরণ চিকিৎসা ও ওষুধ এই তিনভাবে অ্যাক্রোমেগালির চিকিৎসা করা হয়।
শল্যচিকিৎসা
সাধারণত ট্রান্স-স্ফিনয়ডাল অস্ত্রোপচার হলো প্রথম সারির চিকিৎসা এবং বৃদ্ধি হরমোনের আধিক্য থেকে আরোগ্য লাভ হতে পারে, বিশেষ করে মাইক্রোঅ্যাডিনোমার (অর্বুদের আকার <১ সে.মি.) রোগীর ক্ষেত্রে। প্রায়শই দেখা যায় যে, অস্ত্রোপচার করলে অর্বুদের আকার ছোটো হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে অস্ত্রোপচার-পরবর্তী চিত্রণ ও গ্লুকোজ সহনশীলতা পরীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফল অনুসারে দ্বিতীয় সারির চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
রেডিওথেরাপি
অস্ত্রোপচারের পরও যদি অ্যাক্রোমেগালি ভালো না হয়, তাহলে অর্বুদের বৃদ্ধি বন্ধ করা ও বৃদ্ধি হরমোনের মাত্রা নিচে নামিয়ে আনার জন্য দ্বিতীয় সারির চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে সাধারণত বাহ্যিক রেডিওথেরাপি বা বিকিরণ চিকিৎসা প্রয়োগ করা হয়। তবে, এই চিকিৎসায় বৃদ্ধি হরমোন মাত্রা খুব ধীরে ধীরে নামে (অনেক বছর ধরে) এবং হাইপোপিটুইটারিজম বা অবপোষণিকা বিকারের ঝুঁকি আছে।
ওষুধ
অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করার পরও অ্যাক্রোমেগালি ভালো না হলে, ওষুধ প্রয়োগ করে বৃদ্ধি হরমোন মাত্রা ( ১.০ μg/L বা প্রায় ৩ mIU/L-এর নিচে) ও ইনসুলিন-সদৃশ বৃদ্ধি ফ্যাক্টর-১ ঘনত্ব স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়। যে-সব রোগী রেডিওথেরাপি চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন, তারা কয়েক বছর পর ওষুধ সেবন বন্ধ করতে পারেন। সোমাটোস্ট্যাটিন অ্যানালগসমূহ (যেমন অকট্রিওটাইড, ল্যানরিওটাইড বা প্যাসিরিওটাইড) ধীরে ধীরে অবমুক্ত হয় এমন ইনজেকশন হিসেবে কয়েক সপ্তাহ পরপর প্রদান করা যেতে পারে। এই ওষুধগুলো অস্ত্রোপচারের পূর্বে অথবা এর বিকল্প হিসেবে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলো কোনো কোনো রোগীর ক্ষেত্রে অর্বুদের আকার কমাতে পারে।
অকট্রিওটাইডের বিরূপ প্রতিক্রিয়াগুলো হলো বমনেচ্ছা, বমন, পেটব্যথা, পেটফাঁপা ও স্টিয়েটোরিয়া বা মেদদাস্ত। ৬ মাস ব্যবহারের পর ২০-৩০% রোগীর ক্ষেত্রে বিলিয়ারি স্লাজ ও পিত্তপাথুরী হতে পারে, যা সাধারণত উপসর্গবিহীন। তবে, লক্ষণযুক্ত পিত্তাশয় পাথরের বার্ষিক ঘটন হার প্রায় ১%। হৃদ্গত প্রভাবের মধ্যে রয়েছে ২৫% ক্ষেত্রে হৃদ্ মন্থরতা (সাইনাস ব্র্যাডিকার্ডিয়া) ও হৃদ্গত পরিবহণ বিশৃঙ্খলা (১০%)। অকট্রিওটাইড দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহারে ভিটামিন বি১২ ঘাটতি দেখা যায়। অস্ত্রোপচারের যোগ্য নয় এমন অর্বুদগুলো অকট্রিওটাইড রোধক হতে পারে, এ-সব ক্ষেত্রে দ্বিতীয় প্রজন্মের সোমাটোস্ট্যাটিন অ্যানালগ, প্যাসিরিওটাইড, অর্বুদ নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে, ইনসুলিন ও গ্লুকোজ মাত্রা সতর্কভাবে পরিবীক্ষণ করা উচিত, কারণ প্যাসিরিওটাইড ইনসুলিন ক্ষরণ কমিয়ে রক্তের শর্করা মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে।
ডোপামিন অ্যাগনিস্টগুলো (যেমন, ব্রোমোক্রিপ্টিন, ক্যাবারগোলিন) বৃদ্ধি হরমোনের মাত্রা কমাতে কিছুটা কম কার্যকর, তবে কখনো কখনো সহায়ক হতে পারে, বিশেষ করে যদি প্রোল্যাক্টিন হরমোন বেশি ক্ষরণ হয়। অ্যাক্রোমেগালির চিকিৎসায় সাম্প্রতিক সংযোজন হলো বৃদ্ধি হরমোন রিসেপ্টর অ্যান্টাগনিস্ট। এই গোত্রভুক্ত একমাত্র সদস্য হলো পেগভিসোম্যান্ট। অন্তর্জাত বৃদ্ধি হরমোন অণুসমূহের ক্রিয়াকে অবরুদ্ধ করার মাধ্যমে, এই যৌগটি অ্যাক্রোমেগালির উপসর্গগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম। পেগভিসোম্যান্ট ইনজেকশন প্রত্যহ ত্বকের নিচে দিতে হবে।
আরোগ্য সম্ভাবনা
অ্যাক্রোমেগালি রোগীদের আয়ুষ্কাল নির্ভর করে কত তাড়াতাড়ি রোগটি শনাক্ত হয় তার ওপর। শুরতেই শনাক্তকৃত অ্যাক্রোমেগালির সফলভাবে চিকিৎসা সম্পন্ন করার পর প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল সাধারণ মানুষের মতোই হয়। অ্যাক্রোমেগালি শনাক্ত হওয়ার পূর্বেই অনেক বছর পেরিয়ে যায়, ফলে পরিণতি অপেক্ষাকৃত খারাপ হয় এবং বলা হয়ে থাকে যে, বৃদ্ধি হরমোনের মাত্রা যত ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে, অ্যাক্রোমেগালির পরিণতি তত ভালো হবে। অ্যাক্রোমেগালির সফল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হলে মাথাব্যথা ও দৃষ্টির সমস্যা দূর হয়ে যায়। একটি ব্যতিক্রম হলো স্লিপ অ্যাপনিয়া, যা প্রায় ৭০% ক্ষেত্রে দেখা যায়, কিন্তু বৃদ্ধি হরমোনের মাত্রা সফলভাবে কমিয়ে আনার পরও এই সমস্যা দূর হতে চায় না। প্রায় ৪০% ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিলেও, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের নিয়মিত ব্যবহৃত ওষুধ ব্যবহারে ভালো সাড়া পাওয়া যায়। অ্যাক্রোমেগালিতে আক্রান্ত ব্যক্তির বহুমূত্ররোগ হলে বহুমূত্ররোগের ওষুধ দিয়ে এর চিকিৎসা করা হয়, তবে বৃদ্ধি হরমোনের মাত্রা সফলভাবে কমিয়ে আনা গেলে প্রায়শই বহুমূত্ররোগের উপসর্গগুলোর উপশম হয়। যদি গোনাড বা জননাঙ্গ ঠিক থাকে, তাহলে চিকিৎসায় হাইপোগোনাডিজম বা যৌনরসাল্পতা ভালো হয়ে যায়। অ্যাক্রোমেগালিতে ক্যান্সারের ঝুঁকি কিছুটা বাড়ে।
বহিঃসংযোগ
- কার্লিতে অ্যাক্রোমেগালি (ইংরেজি)
- 2011 American Association of Clinical Endocrinologists Guideline ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৯ আগস্ট ২০১৭ তারিখে
শ্রেণীবিন্যাস | |
---|---|
বহিঃস্থ তথ্যসংস্থান |
|
]