অ্যাম্বার অ্যালার্ট
অ্যাম্বার অ্যালার্ট (Amber Alert) বা শিশু অপহরণে জরুরি বার্তা (কোড: CAE) হলো শিশু অপহরণ হলে খুঁজে পাওয়ার জন্য এক ধরনের সতর্ক বার্তা প্রদান প্রক্রিয়া। এটি ১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম ব্যবহৃত হয়।
" অ্যাম্বার" এর অফিসিয়াল পূর্ণরূপ "আমেরিকা'স মিসিং: ব্রডকাস্ট ইমার্জেন্সি রেসপন্স", কিন্তু " অ্যাম্বার" নামটি করা হয়েছিল মূলত ৯ বছর বয়সী মার্কিন শিশু "অ্যাম্বার হ্যাগারম্যান (Amber Hagerman)" এর নামানুসারে, যাকে ১৯৯৬ সালে আর্লিংটনে অপহরণের পর হত্যা করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাম্বার অ্যালার্ট, ইমার্জেন্সি অ্যালার্ট সিস্টেম এবং নোআ ওয়েদার রেডিও কর্তৃক বাণিজ্যিক রেডিও স্টেশন, ইন্টারনেট রেডিও, স্যাটেলাইট রেডিও, টেলিভিশন স্টেশন, টেক্সট মেসেজ ও ক্যাবল টিভির মাধ্যমে পরিবেশন করা হয়ে থাকে। যখন কোনো শিশু অপহৃত হয় তখন অ্যাম্বার অ্যালার্টটি ইমেইল এবং বাণিজ্যিক বৈদ্যুতিক বিলবোর্ডের মাধ্যমেও দেখানো হয়।গুগলবিং এবং ফেসবুক ও অ্যাম্বার অ্যালার্টের মাধ্যমে সতর্ক বার্তা দিয়ে থাকে। যখন কেউ কোনো বিশেষ জায়গায় গুগলে অ্যাম্বার অ্যালার্ট সার্চ করে এবং সেখানে যদি সম্প্রতি কোনো শিশু অপহৃত হয় তাহলে সেখানে গুগল চাইল্ড অ্যালার্ট (কিছু দেশে গুগল অ্যাম্বার অ্যালার্ট ও বলা হয়) জারি করা হয়। এই সতর্কতা বার্তাটি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র এবং বেশ কিছু ইউরোপের দেশেও চালু রয়েছে। যদি কেউ তাদের মোবাইলে অ্যাম্বার অ্যালার্ট ব্যবস্থার মাধ্যমে খুদে বার্তা পেতে চায় তাহলে তারা ওয়্যারলেস অ্যাম্বার অ্যালার্ট চালু করতে পারেন, যেটি বিনামূল্যে তাদের ফোনে বার্তা পৌঁছে দেয়। অনেক রাজ্যের লটারি টার্মিনালের সামনের স্ক্রলবোর্ডেও অ্যাম্বার অ্যালার্ট প্রদর্শন করা হয়।
প্রত্যেক পুলিশ, রাজ্য পুলিশ এবং হাইওয়ে পুলিশ নির্দিষ্ট অপহরণ তথ্য অনুসন্ধান এর ভিত্তিতে অ্যাম্বার অ্যালার্ট জারি করতে পারেন। অপহরণকৃত ব্যক্তির নাম, বর্ণনা এবং গাড়ীর ক্ষেত্রে নাম্বার প্লেট ইত্যাদি বলার পর অ্যাম্বার অ্যালার্ট জারি করা হয়।
কার্যক্রমের মানদণ্ড
সতর্ক বার্তাটি ইমার্জেন্সি অ্যালার্ট সিস্টেম কর্তৃক সম্প্রচার করা হয়। কানাডাতে অ্যালার্ট রেডি নামক কানাডিয়ান ইমার্জেন্সি ওয়ার্নিং সিস্টেম কর্তৃক জারি করা হয়। মিথ্যা ও ভুয়া সতর্কতা জারি থেকে বিরত থাকতে কতগুলা মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে, যেগুলোর ওপর ভিত্তি করেই "অ্যাম্বার অ্যালার্ট" জারি করা হয়।
- কোনো কিছু অপহরণ হয়েছে এর সত্যতা নিশ্চিত করতে হবে।
- শিশু মারাত্মক ঝুঁকিতে বা গুরুতর হতে হবে।
- শিশু অপহরণের পর্যাপ্ত তথ্য ও সঠিক বর্ণনা দিতে হবে।
- শিশুর বয়স ১৮ বছরের নিচে হতে হবে।
উপর্যুক্ত মানদণ্ডের উপর #২ নং টা অ্যাম্বার অ্যালার্ট জারির ক্ষেত্রে খুব কমই বিচার করা হয়। অ্যালার্টের বার্তা তৎক্ষণাৎ এফবিআই ও ন্যাশনাল ক্রাইম ইনফরমেশন সেন্টার এর কাছেও পাঠানো হয়।
অ্যাম্বার হ্যাগারম্যান
অ্যাম্বার হ্যাগারম্যান | |
|---|---|
![]() ১৯৯৪ সালে অ্যাম্বার হ্যাগারম্যান
| |
| জন্ম |
অ্যাম্বার ক্রিশ্চিয়ানা হ্যাগারম্যান
(১৯৮৬-১১-২৫)২৫ নভেম্বর ১৯৮৬
আর্লিংটন, টেক্সাস, যুক্তরাষ্ট্র
|
| মৃত্যু |
আনু. ১৭ জানুয়ারি,১৯৯৬ (৯ বছর বয়স) আর্লিংটন, টেক্সাস, যুক্তরাষ্ট্র
|
| মৃত্যুর কারণ | অপহরণের পর হত্যা |
| পিতা-মাতা | ডনা নরিস (মা) রিচার্ড হ্যাগারম্যান (বাবা) |
১৩ জানুয়ারি ১৯৯৬, অ্যাম্বার হ্যাগারম্যান (নভেম্বর ২৫, ১৯৮৬ - জানুয়ারি ১৭, ১৯৯৬) টেক্সাসের আর্লিংটনে তার ভাইয়ের সাথে সাইকেল চালাতে গিয়ে অপহৃত হয়। হ্যাগারম্যানের এক প্রতিবেশী তাকে অপহরণের বিষয়টি তার পরিবারকে জানায় এবং তারা তাকে খুঁজতে শুরু করে। অপহরণের চারদিন পর তার লাশ অপহরণের স্থান থেকে প্রায় ৫ মাইল দূরে খুঁজে পাওয়া যায়।
বিভিন্ন দেশে অ্যাম্বার অ্যালার্ট
মেক্সিকো
মেক্সিকোতে ২৮শে এপ্রিল ২০১১ সালে অ্যাম্বার অ্যালার্ট চালু করা হয়।
অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়ার রাজ্য কুয়িনসল্যান্ডে অ্যাম্বার অ্যালার্ট চালু হয় ২০০৫ এর মে মাসে। অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য রাজ্যগুলো জুন ২০১৭ এ ফেসবুকের অ্যাম্বার অ্যালার্টে যোগদান করে।
ইউরোপ
বর্তমানে, ইউরোপের ২০ টি দেশে অ্যাম্বার অ্যালার্ট চালু আছে। দেশগুলো হলো: বেলজিয়াম, বুলগেরিয়া, সাইপ্রাস, চেক প্রজাতন্ত্র, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রীস, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, লিথুয়ানিয়া, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া, স্পেন, সুইজারল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্য।
ফ্রান্স
ফ্রান্সে ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিচার বিভাগ কর্তৃক অ্যাম্বার অ্যালার্ট চালু করা হয়।
নেদারল্যান্ডস
নেদারল্যান্ডসের ডাচ ন্যাশনাল পুলিশ কর্তৃক ২০০৮ সালে এই ব্যবস্থা চালু করা হয়। নেদারল্যান্ডসে ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ এ প্রথমবারের মতো অ্যালার্টটি চালু করা হয়, যখন ৪ বছরের একটি বাচ্চাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছিল না।
যুক্তরাজ্য
১লা এপ্রিল ২০০৭, উত্তর পশ্চিম ইংল্যান্ডে অ্যালার্টটি চালু করা হয়।
