Продолжая использовать сайт, вы даете свое согласие на работу с этими файлами.
ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস
ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস অর্থোমিক্সোভিরিডি (Orthomyxoviridae) পরিবারের একটি ভাইরাস, যা ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের জন্য দায়ী। বিভিন্ন সময়ে এটা লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে এসেছে। ১৯১৮ থেকে ১৯১৯ সাল সময়ে ইনফ্লুয়েঞ্জাতে বিশ্বব্যাপি প্রায় ৬ কোটি মানুষ মারা যায়। ভয়াবহ এই মহামারীকে তখন নাম দেওয়া হয় "স্প্যানিশ ফ্লু"। এরপর বিভিন্ন সময়ে নতুন নতুন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের উদ্ভব হয়েছে যা বিশ্বব্যাপি মানব মৃত্যুর কারণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। একই ভাইরাসের বিভিন্ন রূপ মানুষ, পাখি, শূকর প্রভৃতি জীব প্রজাতীকে নিজের পোষক রূপে ব্যবহার করতে পারে। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সব চাইতে ভয়াবহ ক্ষমতা হচ্ছে নিজের পোষক পরিবর্তনের ক্ষমতা। নতুন পোষক প্রজাতীতে ইনফ্লুয়েঞ্জার বিরুদ্ধে প্রতিরোধক ব্যবস্থা না থাকায় সেটি দ্রুত শরীরে স্থান করে নেয়, প্রজাতীর অন্যান্য সদস্যদের আক্রান্ত করে এবং পোষকের মৃত্যুর কারণ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে।
সংক্রমনের ইতিহাস
গ্রিক বিজ্ঞানী হিপোক্রেটিস প্রথম ২৪,০০ বছর আগে ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের লক্ষণ লিপিবদ্ধ করেন। এরপর বিশ্বব্যাপি ইনফ্লুয়েঞ্জা ঘটিত নানা মহামারী ঘটার প্রমাণ রয়েছে। সবচাইতে ভয়ঙ্কর মহামারী হয়েছিল ১৯১৮-১৯১৯ সালের দিকে। তখন বিশ্বব্যাপি সংঘটিত এই মহামারীর নাম দেওয়া হয় "স্প্যানিশ ফ্লু"। এই একবছরে প্রায় ৫ কোটি মানুষের মৃত্যু ঘটে। এর জন্য দায়ী ছিল ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের টাইপ এ (Type A, H1N1)। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস দ্বারা (Type A H2N2) ১৯৫৭-১৯৫৮ এর দিকে এশিয়াতে একটি মহামারীতে প্রায় ১০ থেকে ১৫ লক্ষ মানুষ মারা যায়। এই মহামারীর নাম ছিল "এশীয় ফ্লু"। ১৯৬৮-১৯৬৯ এ H3N2 ঘটিত মহামারীতে ৭.৫ থেকে ১০ লক্ষের মত মানুষ মারা যায়।
নতুন সহস্রাব্দে ইনফ্লুয়েঞ্জা এ ভাইরাসের নতুন যে ধরন দেখা যায় তা হল H5N1, যা এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা নামে ব্যাপক পরিচিত পায়। মানুষের তেমন একটা ক্ষতি না করলেও পাখি হতে উদ্ভব হওয়ায় কারণে ব্যাপক সংখ্যাক মুরগী এই সময় হত্যা করা হয়। এতে ব্যবসা বাণিজ্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়। অতি সম্প্রতি (এপ্রিল ২০০৯) মেক্সিকোতে শূকর হতে উদ্ভব হওয়া সোয়াইন ফ্লুতে বিশ্বব্যাপি কয়েকটি মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এটি পুরোনো H1N1 ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস যার বিরুদ্ধে মানুষের কোন প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন এই ভাইরাসের উদ্ভব নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তিত।
ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের ধরন
তিন ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলো হল টাইপ এ, বি ও সি। টাইপ এ পাওয়া যা পাখি, শূকর, ঘোড়া এবং সীলের। এগুলোর মাঝে ইনফ্লুয়েঞ্জা এ সব চাইতে ভয়ংকর। বিশ্বব্যাপি ইনফ্লুয়েঞ্জা এ ভাইরাস কয়েকটি মহামারীর কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ইনফ্লুয়েঞ্জা বি ভাইরাস মাঝে মাঝে কিছু মহামারীর জন্য দায়ী হলেও ইনফ্লুয়েঞ্জা সি ভাইরাস তেমন ক্ষতিকর নয়।
ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের গঠন
ভাইরাস কনিকার গঠন
ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের ভিরিয়ন গোলাকার, ব্যাস ৮০-১২০ ন্যানোমিটার। এর গঠনে মোট নয়টি প্রোটিন আছে। সামগ্রিক ভাবে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের কনিকার ১% আরএনএ, ৭৩% প্রোটিন, ২০% লিপিড ও ৬% কার্বোহাইড্রেট (শর্করা)। ইনফ্লুয়েজা ভাইরাসের কণিকা একটি আবরন বা এনভেলপ দ্বারা আবৃত থকে।
ভাইরাসের প্রোটিনগুলোর মাঝে তিনটি এর আরএনএর সাথে যুক্ত থাকে, এগুলোকে রাইবো নিউক্লিয়প্রোটিন/আরএনপিবলা হয়। তিনটি বৃহৎ প্রোটিন এই আরএনপিগুলোর সাথে যুক্ত থাকে। ম্যাট্রক্স প্রোটিন M1 ভাইরাসের এনভেলপের নিচে ম্যাট্রিক্স গঠন করে। বাকি দুইটি প্রোটিন হিমাগ্লুটিনিন ও নিউরামিনিডেজ ভাইরাসের এনভেলপ ভেদ করে বাহিরের দিকে উম্মুক্ত থাকে।
হিমাগ্লুটিনিন
হিমাগ্লুটিনিন ভাইরাসের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, এটির সাহায্যেই ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস তার পোষক কোষের সাথে যুক্ত হয়। অন্যদিকে জীবের ইমিউনসিস্টেম প্রধানত এই হিমাগ্লুটিনিন প্রোটিনের বিরুদ্ধেই অ্যান্টিবডি তৈরি করে। যেই দেহে হিমাগ্লুটিনিনের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি আছে তার দেহে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস প্রবেশ করলে অ্যান্টিবডি হিমাগ্লুটিনিনকে দেহ কোষে প্রবেশে বাধা দেয়।
হিমাগ্লুটিনিনের উপর ভিত্তি করে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসকে ১৫ টি সাবটাইপে (H1-H15) ভাগ করা হয়। এগুলোকে করা হয় H1, H2 এভাবে চিহ্নিত করা হয়। Influenza Type A H5 লিখলে বুঝতে হবে ভাইরাসটি ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ এ এবং এর সবটাইপ হিমাগ্লুটিনিন নম্বর ৫।
নিউরামিনিডেজ
নিউরামিনিডেজ একটি এনজাইম। এটির সাহায্যে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস পোষক কোষ হতে সংখ্যাবৃদ্ধির পরে বেরিয়ে আসে। নিউরামিনিডেজ এর উপর ভিত্তি করে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসকে মোট ৯ টি সাবটাইপ (N1-N9) করা হয়। কোন ইনফ্লুয়েঞ্জা এ ভাইরাসের সাবটাইপ নিউরামিনিডেজ ১ হলে তাকে লেখা হয় Influenza A N1.
যেহেতু বেশিরভাগ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসেই (ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস সি তে নিউরামিনিডেজ থাকে না) হিমাগ্লুটিনিন ও নিউরামিনিডেজ থাকে তাই এদের উভয়কেউ উল্লেখ করা হয়। যেমন এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের টাইপ হল এ এবং সাবটাইপ H5N1 তাই এটিকে লেখা হয় Influenza A H5N1।
মানুষের মাঝে পাওয়া ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসগুলোতে চারটি হিমাগ্লুটিনিন (H1, H2, H3 ও H5) ও দুইটি নিউরামিনিডেজ (N1 ও N2) পাওয়া গেছে।
নিউক্লিক এসিড
এর নিউক্লিক এসিড এক সূত্রক আরএনএ। ভাইরাসটির আরএনএ মোট আটটি খন্ড বিশিষ্ট এবং নেগেটিভ সেন্স। জিনোমের আকার ১৩.৬ কিলো বেস পেয়ার।
সংক্রমন ও ভাইরাসের সংখ্যা বৃদ্ধি
ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস আক্রান্ত মানুষ অথবা প্রানীর হাচি বা কাশির মাধ্যমে নির্গত কণার দ্বারা ছড়ায়। এই কণা গুলোকে ড্রপলেটও বলা হয় কারণ এগুলোর ব্যাস প্রায় ১০ মাইক্রোমিটার হয়ে থাকে। ছোট ছোট এই কণা গুলো বাতাসের ভাসতে পারে এবং এভাবেই আশে পাশের মানুষ বা প্রাণীকে আক্রান্ত করে।
যখন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস সুস্থ প্রাণীর (মানুষ, শূকর, পাখি প্রভৃতি) শ্বসনযন্ত্রের উপরের অংশে পৌছে সেখানের এপিথেলিয়াল (আবরনী) কোষের রিসেপ্টর অণুর সাথে ভাইরাস পৃষ্টের হিমাগ্লুটিনিন (Hemagglutinin) প্রোটিনের সংযোগ স্থাপিত হয়। এই হিমাগ্লুটিনিন এখানে লিগান্ড হিসেবে কাজ করে। দেহের কোন কোষ পৃষ্টের যে অণুর সাথে বাহির থেকে আসা অন্য বস্তুর (কোন অনু, ব্যাক্টেরিয়া বা ভাইরাস প্রভৃতি) সংযোগ হয় তাকে রিসেপ্টর (Receptor) বলা হয়। আর বাহির থেকে আসা বস্তুর যে অংশ রিসেপ্টরের সাথে যুক্ত হয় তাকে বলে লিগান্ড। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের ক্ষেত্রে এই রিসেপ্টর হচ্ছে আপার রেস্পিরেটরি ট্রাক্টের এপিথেলিয়াল কোষের সায়ালিক এসিড।
রিসেপ্টর-লিগান্ডের সংযোগের পরপরই ভাইরাসের এনভেলপ এবং প্রানীর শ্বাসনালীর এপিথেলিয়াল কোষের কোষ ঝিল্লীর মিলে যায়। ফলে ভাইরাসটি প্রানীকোষের অভ্যন্তরে এন্ডোসাইটোসিসের মাধ্যমে প্রবেশ করে।
প্রাণী কোষে প্রবেশের পর পর ভাইরাস কণিকার এক একটি অংশ খুলে আলাদা হয়ে যায়। ভাইরাসের নিউক্লিক এসিড বা আরএনএ প্রাণী কোষের নিউক্লিয়াসে প্রবেশ করে এবং নিজস্ব অণুলিপি তৈরি করতে থাকে। কিছু নতুন আরএনএ প্রাণী কোষের নিউক্লিয়াস হতে সাইটোপ্লাজমে প্রবেশ করে এবং ভাইরাস কণিকার অন্যান্য অংশ গুলো আরো বেশি পরিমাণে তৈরি করতে থাকে। এক পর্যায়ে ভাইরাস দেহের উপাদান গুলো একত্রিত হয়ে (Assembly) নতুন ভাইরাস কনিকার সৃষ্টি করে। পরিশেষে ভাইরাসের নিউরামিনিডেজ (Neuraminidase) এনজাইমের ক্রিয়ায় প্রাণী কোষের কোষ ঝিল্লী ভেদ করে নতুন নতুন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস (Progeny) বেরিয়ে আসে। এইক্ষেত্রে আক্রান্ত প্রাণী কোষটি কিন্তু ফেটে (lysis) যায় না।
নতুন ভাইরাসগুলো নির্গত হয়ে আশে পাশে যেই সব কোষের গায়ে সায়ালিক এসিড রিসেপ্টর পায় সেগুলোকে আবার আক্রমণ করে এবং একই প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি হয়।
ইনফ্লুয়েঞ্জার লক্ষন
ইনফ্লুয়েঞ্জার লক্ষণগুলোকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমত, দেখা যায় কাপুনী, মাথা ব্যাথা ও শুকনো কফ শুরু হয়। এর ফলশ্রুতিতে উচ্চ জ্বর, পেশিতে ব্যাথ্যা, খারাপ লাগা, অস্থির লাগা এগুলো শুরু হয়। প্রায় ৩ দিন ধরে জ্বর থাকে, শ্বসননালীর সমস্যাগুলো প্রায় সপ্তাহ ব্যাপী থাকে। ব্যক্তি ভেদে ১ থেকে ৩ সপ্তাহ ধরে দুর্বল লাগতে পারে। শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক উভয়েরই একই সমস্যা দেখা যায়। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি জ্বর ও বমি থাকতে পারে। প্রায় ১২% শিশুর কানে ব্যাথ্যা (Otistis Media) হয়।
দ্বিতীয়ত, ইনফ্লুয়েঞ্জা নিউমোনিয়া পর্যায়ে গড়াতে পারে। সাধারণত যাদের অনেকদিন ধরে কোন রোগ আছে বা গর্ভবতি মহিলারা অধিক আক্রান্ত হয়। অনেকক্ষেত্রেই ভাইরাল নিউমোনিয়ার সাথে সাথে ব্যাক্টেরিয়াল নিউমোনিয়াও হতে পারে।
ভাইরাসের বিবর্তন ও নতুন মহামারীর উদ্ভব
ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস মানুষ, পাখি, শূকর, সীল প্রভৃতি প্রাণীতে পাওয়া যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এটা প্রাণীতে তেমন রোগ করতে পারে না। তবে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস তার জিনোমে পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন রূপ নিতে পারে। সাধারণত দুই পদ্ধতিতে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের জিনোমে পরিবর্তন আসে। প্রথমত, অ্যান্টিজেনিক সিফট ও দ্বিতীয়ত অ্যান্টিজেনিক ড্রিফট।
অ্যান্টিজেনিক সিফট
ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস একটি আরএনএ ভাইরাস যার আরএনএ আট খণ্ডে খন্ডিত। সাতটি খন্ড হতে সাতটি প্রোটিন এবং অবশিষ্ট খন্ড হতে দুইটি প্রোটিন তৈরি হয়।
সাধারণত মানুষের দেহে যেই ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস থাকে তা অন্যপ্রাণী যেমন শূকর বা পাখির কোষে ঢুকবার সম্ভবনা খুবই কম। ধরা যাক শূকরের দেহ কোষে মানুষকে আক্রান্তকারী ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস কোন ক্রমে ঢুকে পড়ল এবং একই কোষে শূকরকে আক্রান্তকারী ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসও ছিল। তখন সম্ভবনা থাকে যে হয়ত কোন ভাবে সংখ্যা বৃদ্ধির সময় মানুষের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের এক বা একাধিক খন্ড শূকরের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসে ঢুকে গেল বা উলটোটা। সাধারনত, এমন ঘটলে যে নতুন ভাইরাস তৈরি হয় তা অধিকাংশক্ষেত্রেই সংক্রমন করতে পারে না। তবে সম্ভবনা থেকে যায় এমন নতুন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের উদ্ভবের যা মূলত শূকরের কিন্তু তা মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে। এই নতুন ভাইরাসটি তখন মানুষের দেহ কোষে সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারবে এবং ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জা ঘটাবে।
এভাবে নতুন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের উদ্ভব হওয়াকে বলে অ্যান্টিজেনিক সিফট্। এমনটাই ঘটেছিল এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার ক্ষেত্রে। তখন শূকরের কোষে মানুষ ও পাখির ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ঢুকে পড়েছিল। ফলাফলে মানুষকে আক্রান্ত করতে সক্ষম একটি নতুন এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের উদ্ভব হয়। যেহেতু, এই ভাইরাসটি পূর্বে মানুষকে আক্রমণ করেনি ফলে মানুষের ইমিউন সিস্টেমের নিকট এই ভাইরাস অপরিচিত ছিল। দেহ যথাসময়ে ভাইরাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হওয়ায় এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ছড়িয়ে পড়ে।
অ্যান্টিজেনিক ড্রিফট
অ্যানটিজেনিক ড্রিফটের মাধ্যমে ভাইরাসের সংখ্যা বৃদ্ধির সময় আরএনএ (RNA) এর অণুলিপিকরণকালে ঘটে যাওয়া ত্রুটির জন্য নতুন ভাইরাসের উদ্ভব ঘটে। অ্যান্টিজেনিক সিফটের মত এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ খন্ড পরিবর্তন হয় না, পরিবর্তন হয় আরএনএ-এর একটি অংশের অল্প কিছু নিউক্লিয়োটাইড এর বিন্যাসে। এভাবে ভাইরাসের বিবর্তন হয় অপেক্ষাকৃত ধীরে। এভাবে সৃষ্ট ভাইরাস মূলত এক পোষোক হতে অন্য পোষকে বিস্তৃত হতে পারে না, তবে নতুন ভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরের রোগ প্রতিরোধ যন্ত্র বাধা গড়ে তুলতে ব্যর্থ হলে, মহামারীর আবির্ভাব ঘটতে পারে।
ভাইরাস সনাক্তকরণ
রোগীর দেহে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের উপস্থিতি সনাক্তকরণের জন্য প্রথমত দেহে ইনফ্লুয়েঞ্জার বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডির উপস্থিতি দেখা হয়। এটা সাধারণত এলাইসা পদ্ধতিতে।
বর্তমানে রোগীর দেহের ভাইরাসের উপস্থিতি ও সংখ্যাও নির্ধারণ করা সম্ভব হয়েছে রিয়েল টাইম পিসিআর এর মাধ্যমে। এক্ষেত্রে প্রথমে রোগীর কফ বা এই জাতীয় শ্বসনতন্ত্রের তরল সংগ্রহ করা হয়। তারপর সেগুলো হতে ভাইরাসের আরএনএ সংগ্রহ (RNA Extraction) করা হয়। তারপর রিভারস ট্রান্সক্রিপসনের দ্বারা আরএনএকে ডিএনএতে রুপান্তরিত করে রিয়েল টাইম পিসিআর করা হয়। যদি স্যাম্পলে ভাইরাস থেকে থাকে তবে তার উপস্থিতি ও সংখ্যা পাওয়া যায়। পুরো কাজটই একদিনের মাঝেই করা সম্ভব।
প্রতিরোধ
ব্যাক্টেরিয়া ঘটিত রোগ প্রতিরোধের জন্য যেমন অ্যান্টিবায়োটিক আছে সেইরকম কোন অ্যান্টিভাইরাস ভাইরাস জনিত রোগের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত পাওয়া যায় নি। অল্প কিছু ঔষুধ আছে যারা ইনফ্লুয়েঞ্জার বিরুদ্ধে লড়তে শরীরকে সাহায্য করতে পারে। যেমন, ওসেলটামিভির ও যানামিভির।
ওসেলটামিভির
ওসেলটামিভির একটি নিউরামিনিডেজ ইনহিভিটর। এটি নতুন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসকে পোষক কোষ হতে বের হতে দেয় না। জার্মানির বিখ্যাত রচ্ (Roche) ঔষুধ কম্পানি ওসেলটামিভিরকে টামিফ্লু নামে বাজারজাত করে থাকে।
যানামিভির
ওসেলটামিভিরের মত যানামিভিরও একটি নিউরামিনিডেজ ইনহিভিটর। এটিকে রেলেঞ্জা নামে বাজারজাত করা হয়।