Продолжая использовать сайт, вы даете свое согласие на работу с этими файлами.
ইসলাম ও শিশু
ইসলাম |
---|
বিষয়ক ধারাবাহিক নিবন্ধের অংশ |
ইসলাম ও শিশু বিষয়ক আলোচনায় ইসলামে শিশুদের অধিকার, মাতা-পিতার প্রতি তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য, ঔরসজাত ও পালিত সন্তানসন্ততির উপর মাতা-পিতার অধিকার, আকীকাহ ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত।
মুহাম্মাদ (স:)
মুহাম্মাদ (স:) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত আইন ও দৃষ্টান্তগুলো মুসলিম সমাজের জন্য মেনে চলা বাধ্যতামূলক। তাই শিশুদের সাথে তাঁর আচরণও মুসলমানদের জন্য অনুসরনীয়।
মুহাম্মাদ (স:) এর সাতজন সন্তানসন্ততি (তিন ছেলে ও চার মেয়ে) ছিল। তার ছেলেদের সবাই (ইবরাহিম ইবনে মুহাম্মাদ সহ) শৈশবে মৃত্যুবরণ করেন। এ কারণে, কখনো কখনো বাবা হিসেবে তার অনুভূতিকে "দুঃখপূর্ণ" হিসেবে বর্ণনা করা হয়।
মুহাম্মাদ (স:) এর একজন পালিত সন্তানও ছিল। তার নাম ছিল জায়েদ। হাসান ও হুসাইন নামে তার দুইজন নাতিও ছিল। আর তার তিন নাতনিরা হলেন: উম্মে কুলসুম, জয়নব ও উমামাহ। ইয়ালা ইবনু মুররাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তাঁরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে তাঁকে প্রদত্ত এক আহারের দাওয়াতে রওনা হন। তখন হুসায়ন গলির মধ্যে খেলাধূলা করছিলেন। রাবী বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকেদের অগ্রভাগে এগিয়ে গেলেন এবং তাঁর দু হাত বিস্তার করে দিলেন। বালকটি এদিক ওদিক পালাতে থাকলো এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে হাসাতে হাসাতে ধরে ফেলেন। এরপর তিনি তাঁর এক হাত ছেলেটির চোয়ালের নিচে রাখলেন এবং অপর হাত তার মাথার তালুতে রাখলেন, অতঃপর তাকে চুমা দিলেন এবং বললেনঃ হুসায়ন আমার থেকে এবং আমি হুসায়ন থেকে। যে ব্যক্তি হুসায়নকে ভালোবাসে, আল্লাহ তাআলা তাকে ভালোবাসেন। হুসায়ন আমার নাতিদের একজন।(হাসান,সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৪৪)। নামাজ পড়ার সময়ও মুহাম্মাদ (স:) উমামাহ কে কাঁধের উপর বসতে দিতেন।(সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন),৫৫৭০)। মুহাম্মাদ (স:) যখন তার নাতিদের চুমো দিতেন তাতে কেউ অবাক হলে তিনি তাকে বলেন:‘‘যে দয়া করে না, তার প্রতি দয়া করা হয় না।’’(সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন),৫৫৭১)।আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক বেদুঈন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললো। আপনারা শিশুদের চুম্বন করে থাকেন, কিন্তু আমরা ওদের চুম্বন করি না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ যদি তোমার অন্তর থেকে রহমত উঠিয়ে নেন, তবে আমি কি তোমার উপর (তা ফিরিয়ে দেওয়ার) অধিকার রাখি?(সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন),৫৫৭২)
মুহাম্মাদ (স:) শিশুদের খুবই ভালবাসতেন।মুহাম্মাদ (স:) শিশুদের সাথে খেলাধুলা করতেন,তাদের সাথে রসিকতা করতেন,তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতেন। মুহাম্মাদ (স:) অন্য ধর্মের শিশুদেরও ভালবাসতেন।একবার এক ইহুদির সন্তান অসুস্থ হলে তিনি তাকে দেখতে গিয়েছিলেন।(সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন),১২৭৩। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে আসতেন। আর আমার একটি ছোট ভাই ছিলো তার উপনাম ছিলো আবূ উমাইর এবং তার একটি ছোট পাখি (নুগার) ছিলো। একে নিয়ে সে খেলতো। নুগার মারা গেলে একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিকট এসে তাকে মর্মাহত দেখে বললেনঃ তার কি হয়েছে? তারা বললেন, তার নুগার (পাখিটি) মারা গেছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ "ওহে আবূ উমাইর! কি হয়েছে তোমার নুগাইর?"(সহীহ বুখারী ৬১২৯, ৬২০৩; মুসলিম ৩০-(২১৫০), আবূ দাঊদ ৪৯৬৯, তিরমিযী ৩৩৩, ইবনু মাজাহ ৩৭২০, সহীহুল জামি‘ ৭৮৩০, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ২০৩, মুসান্নাফ ইবনু আবূ ইয়া‘লা ২৮৩৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ২৩০৮ সুনানুন্ নাসায়ী আল কুবরা ১০১৬৪, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ৫৬১৪, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১০২৮৫)।
নবজাত শিশু সবার কাছেই বড় আদরণীয়। নবী করীম (স)-ও এ ধরনের শিশুদের বড্ড আদর-যত্ন করতেন। আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) বলেন: উম্মে সুলাইম যখন একটি পুত্র সন্তান প্রসব করলেন তখন তাকে নবী করীম (স) এর নিকট উপস্থিত করা হয় এবং তার সাথে কিছু খেজুরও পাঠিয়ে দেয়া হয়।রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে (শিশুটিকে) কোলে নেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, তার সাথে কিছু আছে কি? তারা বললো, হ্যাঁ, কয়েকটি খেজুর। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেগুলো বের করলেন ও চিবালেন। তারপর তা তার মুখ হতে নিলেন এবং বাচ্চাটির মুখের মধ্যে দিলেন। এরপর তাকে তাহনীক করে তার জন্যে দু'আ করলেন এবং তার নাম রাখলেন ‘আবদুল্লাহ।(সহীহ মুসলিম,ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৪২৮)
আয়িশাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে শিশুদেরকে আনা হতো। তিনি তাদের জন্যে বারাকাত ও কল্যাণের দু'আ করতেন এবং 'তাহনীক (কিছু চিবিয়ে মুখে ঢুকিয়ে দিতেন) করতেন। একদিন একটি শিশুকে আনা হল, (তিনি তাকে কোলে তুলে নিলেন) শিশুটি তার কোলে প্রস্রাব করে দিল, পরে তিনি পানি চেয়ে নিলেন এবং প্রস্রাবের উপর পানির ছিটা দিলেন, আর তা ধুলেন না।(সহীহ মুসলিম,৫৫৩)
শিশুদের অধিকার
- প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া না পর্যন্ত শিশুদের খাদ্য, বস্ত্র এবং সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
- শিশুদের অবশ্যই বাবা মায়ের কাছ থেকে স্নেহ-ভালবাসা পাওয়ার অধিকার আছে।
- আর্থিক বিষয়গুলোতে প্রত্যেক শিশুর তার ভাইবোনদের সমান অংশ পাওয়ার অধিকার রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ''তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমাদের সন্তানদের মাঝে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা কর।''(বুখারী ২৬৫০, মুসলিম ৪২৬২-৪২৭৪)
- শিশুর প্রয়োজনীয় শিক্ষা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। মনীষী আবু কালাবা বলছেন:"যে লোক তার ছোট ছোট শিশু সন্তানদের জন্যে এমন ভাবে অর্থ ব্যয় করে, যাতে করে আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দেবেন, তাদের বৈষয়িক উপকার দেবেন; সে লোক অপেক্ষা পুরস্কার পাওয়ার দিক দিয়ে অধিক অগ্রসর আর কেউ হতে পারে না।"
- পিতামাতার প্রতি সন্তানের প্রয়োজনীয় থাকার ব্যবস্থা করার তাগিদ দেয়া হয়েছে।
- পিতামাতার এক সন্তানের উপর অন্য সন্তান কে অনর্জিত প্রাধান্য দেয়া অবিচার বলে গণ্য করা হয়, কারণ এটি পরিবারের বাচ্চাদের মধ্যে ঘৃণা, ক্ষোভ, এবং হতাশার পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু কোনও পিতামাতা যদি তার কোন সন্তানের বিশেষ আর্থিক প্রয়োজন পূরণ করে যেমন, চিকিৎসার খরচ; তাহলে তা অবিচার বা অন্যায় হিসেবে দেখা হবে না।এই ধরনের খরচ শিশুর অবশ্য প্রয়োজনীয় খরচের মধ্যে পড়বে, যা পূরণ করা পিতামাতার অবশ্য কর্তব্য।
সন্তানের প্রতি পিতামাতার কর্তব্য
সন্তানের জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই পিতামাতার প্রতি তাদের প্রাথমিক পর্যায়ের কতক হক কার্যকর হতে শুরু করে এবং তখন থেকেই হক অনুযায়ী আমল করা পিতামাতার কর্তব্য হয়ে যায়।হযরত আবু হুরায়রা (রাদি.) নবী করীম (স.) থেকে এ সম্পর্কে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন : পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের হক হচ্ছে প্রথমত তিনটি: জন্মের পরপরই তার জন্য উত্তম একটি নাম রাখতে হবে, জ্ঞান বুদ্ধি বাড়লে তাকে কুরআন শরীফ তথা ইসলাম শিক্ষা দিতে হবে। আর সে যখন পূর্ণবয়স্ক হবে, তখন তার বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। – (তানবীহুল গাফিলিন -৪৭)।
- ইসলামী নিয়ম অনুসারে একজন পিতার তার সন্তান কে বিষয়ে উপায়ে শিক্ষা দান করা কর্তব্য:
- ঈমান এবং উপাসনা সম্পর্কিত মৌলিক জ্ঞান
- নৈতিক গুণাবলি সম্পর্কিত মৌলিক জ্ঞান
- অন্য কারও সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখা প্রয়োজন তার ধারণা দেয়া
- এমন শিক্ষায় শিক্ষিত করা যাতে সে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ''জেনে রেখো! তোমাদের প্রত্যেকেই একজন দায়িত্বশীল; আর তোমরা প্রত্যেকেই নিজ অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। অতএব ইমাম, যিনি জনগণের দায়িত্বশীল তিনি তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন। পুরুষ গৃহকর্তা তার পরিবারের দায়িত্বশীল; সে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। নারী তার স্বামীর পরিবার, সন্তান-সন্ততির উপর দায়িত্বশীল, সে এসব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। কোন ব্যক্তির দাস স্বীয় মালিকের সম্পদের দায়িত্বশীল; সে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। অতএব জেনে রাখ, প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ দায়িত্বাধীন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।''(সহীহ বুখারী-৬৬৫৩-ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
- বিয়ের উপযুক্ত বয়সে উপনীত হলে তাকে বিবাহ দেয়া
আল কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন:''আর তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন তাদের বিয়ে সম্পাদন কর এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরও। তারা অভাবগ্ৰস্ত হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন;আল্লাহ তো প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।'' (কুরআন ২৪:৩২)
আকীকাহ
- [[]]
সন্তান জন্মের পরপরই পিতামাতার কর্তব্য হচ্ছে তার জন্যে আকীকাহ করা। পিতামাতার প্রতি এ হচ্ছে সন্তানের বিশেষ হক। সালমান ইবনু আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, ''সন্তানের সাথে আকীকা সম্পর্কিত। তার পক্ষ থেকে রক্ত প্রবাহিত (অর্থাৎ আকীকার জন্তু যবাহ) কর এবং তার অশুচি (চুল, নখ ইত্যাদি) দূর করে দাও।''(সহীহ বুখারী-৫০৭৬-ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
সামুরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আকীকার সাথে শিশুর বন্ধক। তার পক্ষ থেকে সপ্তম দিনে পশু যবাহ করা হবে। তার নাম রাখা হবে। তার মাথা মুন্ডন করা হবে। (সহীহ, ইবনু মাজাহ ৩১৬৫, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ১৫২২)
এ হাদিস দুটি থেকে বোঝা গেল, সন্তান জন্মের পর তার নামে একটি জন্তু জবাই করাকেই আকীকাহ বলা হয়। ইমাম শাওকানী লিখেছেন: "আকীকাহ বলা হয় সেই জন্তুটিকে, যা সদ্যোজাত সন্তানের নামে জবাই করা হয়।আর নবজাত শিশুর মুণ্ডিত চুলকেও আকীকাহ বলা হয়।"
বস্তুত, আকীকাহ করার রেওয়াজ প্রাচীন আরব সমাজে ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল।এর মধ্যে ছিল সামাজিক, নাগরিক মনস্তাত্ত্বিক― সর্বপ্রকারের কল্যাণবোধ। এ কারণেই নবী (স.) আল্লাহ্র অনুমতিক্রমে এ প্রথাকে চালু রেখেছিলেন। নিজে আকীকাহ দিয়েছেন এবং অন্যদেরও এ কাজে উৎসাহিত করেছেন। শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভীর মতে এর উপকারিতা অনেক। তার মধ্যে বিশেষ উপকারিতা হচ্ছে : "আকীকার সাহায্যে খুব সুন্দরভাবেই সন্তান জন্মের ও তার বংশ-সম্পর্কের প্রচার হতে পারে। কেননা বংশ পরিচয়ের প্রচার একান্তই জরুরী, যেন কেউ কারাে বংশ সম্পর্কে অবাঞ্ছিত কথা বলতে না পারে। আর সন্তানের পিতার পক্ষে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে তার সন্তান হওয়ার কথা চিৎকার করে বলে বেড়ানােও কোনাে সুস্থ ও ভদ্র পন্থা হতে পারে না। অতঃপর আকীকার মাধ্যমেই এ কাজ করা অধিকতর সমীচীন বলে প্রমাণিত হলাে। এ ছাড়াও এর আর একটি ফায়দা হচ্ছে এই যে, এতে করে সন্তানের পিতার মধ্যে বদান্যতা ও দানশীলতার ভাবধারা অনুসরণ প্রবল ও কার্পণ্যের ভাবধারা প্রশমিত হতে পারে।"
সন্তান জন্মের সপ্তম দিনে আকীকাহ করার কথা বলা হয়েছে এজন্যে যে, জন্ম ও তার আকীকার মাঝ সময়ের কিছুটা ব্যবধান হওয়া আবশ্যক। কেননা নতুন শিশুর জন্মলাভের ব্যাপারটিও ঘরের সকলের জন্যেই বিশেষ ব্যস্ততার কারণ হয়ে থাকে। এ থেকে অবসর হওয়ার পরই আকীকার প্রস্তুতি করা যেতে পারে। নবী করীম (স) তাঁর দৌহিত্র হাসানের নামে আকীকাহ করলেন এবং বললেন: "হে ফাতিমা, এর (হাসানের) মস্তক মুণ্ডন করে ফেল এবং তার মাথার চুলের ওজন পরিমাণ রৌপ্য সাদকা করে দাও।"(তিরমিজী-১৫১৯,হাসান) আর ইমাম মালিক বর্ণনা করেছেন: "হযরত ফাতিমা হাসান, হুসাইন, জয়নব ও উম্মে কুলসুমের মাথা মুণ্ডন করেছিলেন এবং তাদের চুলের ওজন পরিমাণ রৌপ্য সাদাকা করে দিয়েছিলেন।"
আকীকাতে কার জন্যে কয়টি জন্তু জবাই করা হবে এ সম্পর্কে নিম্নোক্ত হাদীস থেকে স্পষ্ট নির্দেশ পাওয়া যায়:
নবী করীম (স) বলেন: "পুরুষ সন্তানের জন্যে দুটি ছাগল এবং মেয়ে সন্তানের জন্যে একটি ছাগল জবাই করাই যথেষ্ট হবে।"
সন্তানের উপর পিতা-মাতার অধিকার
উপরে পিতামাতার প্রতি সন্তানের হক সম্পর্কে বিস্তারিত আলােচনা করা হয়েছে। কিন্তু ইসলামে যেহেতু কোনাে ক্ষেত্রেই একতরফা হক ধার্য করা হয়নি বরং সেই সঙ্গে অন্যদের প্রতি কর্তব্যের কথাও বলা হয়েছে, তাই কেবল পিতামাতার ওপরই সন্তানের হক নেই, সন্তানের ওপরও রয়েছে পিতামাতার হক এবং এ হক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ- এতদূর গুরুত্বপূর্ণ যে, কুরআন মজীদে এ হকের স্থান হচ্ছে মানুষের ওপর আল্লাহর হকের পরে-পরেই।
সূরা বনী ইসরাঈলে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে: ''তোমার রাব্ব নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তিনি ছাড়া অন্য কারও ইবাদাত করবেনা এবং মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে; তাদের একজন অথবা উভয়ে তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে বিরক্তিসূচক কিছু বলনা এবং তাদেরকে ভৎর্সনা করনা; তাদের সাথে কথা বল সম্মানসূচক নম্রভাবে।অনুকম্পায় তাদের প্রতি বিনয়াবনত থাক এবং বল: হে আমার রাব্ব! তাঁদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তাঁরা আমাকে লালন পালন করেছিলেন।''(সূরা বনী ইসরাঈল ২৩-২৪)
এ আয়াত প্রথমে তওহীদ— আল্লাহকে সর্বতােভাবে এক ও লা-শরীক বলে স্বীকার করার নির্দেশ এবং এক আল্লাহ্ ছাড়া আর কারােই একবিন্দু বন্দেগী করতে সুস্পষ্ট ভাষায় নিষেধ করা হয়েছে। এর সঙ্গে সঙ্গেই এবং পরে পরেই নির্দেশ দেয়া হয়েছে পিতামাতার সাথে ভালাে ব্যবহার করার। এ দুটো নির্দেশ এক সঙ্গে ও পরপর দেয়ার মানেই এই যে, প্রতিপালনের ক্ষেত্রে আল্লাহ্ ও পিতামাতা দুজনেরই বিশেষ ক্ষেত্রের মধ্যে বিশেষ অনুগ্রহ রয়েছে। প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা ও লালন-পালনকারী তাে আল্লাহ্ এবং বান্দার ওপর সর্বপ্রথম হক তাঁরই ধার্য হবে। কিন্তু আল্লাহ্ যেহেতু এ কাজ সরাসরি নিজে করেন না, করেন পিতামাতার মাধ্যমে, কাজেই বান্দার ওপর আল্লাহর হকের পরপরই পিতামাতার হক ধার্য হবে।
অতঃপর পিতামাতার হক সম্পর্কে আরাে বিস্তারিত কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে ও পিতামাতা দুজনই কিংবা তাদের একজনও যদি বার্ধক্যে উপনীত হয়, তখন সন্তান যেন তাঁকে বা তাঁদের দুর্বহ বােঝা বলে মনে না করে এবং তাদের সাথে কথাবার্তা ও ব্যবহারেও যেন কোনাে অনমনীয়তা প্রকাশ না পায়। তাঁদের মনে কোনােরূপ কষ্ট দেয়া চলবে না, তাঁদের সাথে এমন ব্যবহার করা যাবে না যার ফলে তাঁদের মনে কষ্ট বা আঘাত লাগতে পারে। এমন কথাও বলা যাবে না, যাতে করে মনে ব্যাথা পেয়ে বলে উঠবে উহু। পক্ষান্তরে সন্তানও যেন পিতামাতার কোনাে কাজে, কথায় ও ব্যবহারে “উহ' করে না ওঠে, মন আঘাত অনুভব যেন না করে। তেমন কিছু ঘটলেও তা মনে স্থান দেবে না। কোনােরূপ বিরক্তি প্রকাশ করবে না, কোনােরূপ অপমানকর আচরণ তাঁদের প্রতি প্রদর্শন করবে না ।
দত্তকগ্রহণ ও লালনপালন
দত্তকগ্রহণের বিষয়ে ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি পশ্চিমা বিশ্ব ও পূর্ব এশিয়ার রীতিনীতি থেকে ভিন্ন।
ইসলামে নিজ ঔরসজাত নয় এমন সন্তানসন্ততি লালনপালন করা বৈধ; এমনকি এক্ষেত্রে ইয়াতিমদের লালনপালনের বিষয়ে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে।কিন্তু কাউকে পালিত সন্তানরূপে গ্রহণ করলেই সে ঐ ব্যক্তির প্রকৃত সন্তান হয়ে যায় না।
ইসলাম-পূর্ব আরব বিশ্বে দত্তকগ্রহণ একটি সাধারণ প্রচলিত রীতি ছিল।এই রীতি অনুসারে, পালিত পুত্র তার নামের সাথে দত্তকগ্রহণকারী পিতার নাম যুক্ত করত এবং আইনি ভাবে সে ঐ পিতামাতার পরিবারের একজন বলে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেত।ইসলাম এটিকে "জন্মগত পরিচয়ের লোপ" হিসেবে দেখে এবং বিষয়টিকে রহিত করে; এর পরিপ্রেক্ষিতে সূরা আহযাবের ৪ ও ৫ নম্বর নাজিল হয়।
আল্লাহ তায়ালা বলেন: "আল্লাহ কোন মানুষের অভ্যন্তরে দু’টি হৃদয় সৃষ্টি করেননি; তোমাদের স্ত্রীরা, যাদের সাথে তোমরা যিহার করে থাক, তাদেরকে আল্লাহ তোমাদের জননী করেননি এবং তোমাদের পোষ্যপুত্রকে তিনি (আল্লাহ) তোমাদের প্রকৃত পুত্র করেননি; ঐগুলি তোমাদের মুখের কথা। আল্লাহ সত্য কথাই বলেন এবং তিনিই সরল পথ নির্দেশ করেন।তোমরা তাদেরকে ডাক তাদের পিতৃ পরিচয়ে; আল্লাহর দৃষ্টিতে এটা অধিক ন্যায় সঙ্গত, যদি তোমরা তাদের পিতৃ-পরিচয় না জান তাহলে তারা তোমাদের ধর্মীয় ভাই অথবা বন্ধু; এ ব্যাপারে তোমরা কোন ভুল করলে তোমাদের কোন অপরাধ নেই, কিন্তু তোমাদের অন্তরে সংকল্প থাকলে অপরাধ হবে। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।" (সূরা আল-আহযাব ৪-৫)
পূর্বে পালিত সন্তানকে পালনকারীর নামের সাথে সম্বন্ধ লাগিয়ে ডাকা গেলেও এই আয়াত নাজিলের পরে তা রহিত হয়ে যায় এবং তাকে তার প্রকৃত পিতার দিকে সম্বন্ধ লাগিয়ে ডাকার নির্দেশনা কার্যকর হয়। এর মধ্যেই নিহিত রয়েছে ন্যায়, হক ও সত্য। কারণ এর মাধ্যমেই তার প্রকৃত বংশ পরিচয় জানা যায়।
মহানবী মুহাম্মাদ (সঃ) এর পালক পুত্র ছিল যায়িদ ইবনে হারিসাহ (রাঃ)। তাকে ডাকা হত ইবন মুহাম্মাদ নামে।এ বিষয়ে আব্দুল্লাহ ইবন উমার (রাঃ) বলেন : এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে আমরা যায়িদ ইবনে হারিসাহকে (রাঃ) ইবন মুহাম্মাদ বলতাম। কিন্তু এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর তা বলা পরিত্যাগ করি। (ফাতহুল বারী ৮/৩৭৭, মুসলিম ৪/১৮৮৪,তিরমিজি ৯/৭২ নাসাঈ ৬/৪২৯) পূর্বেতো পালক পুত্রের ঐ সমুদয় হক থাকতো যা ঔরসজাত সন্তানের থাকে।
আরও দেখুন
বহিঃসংযোগ
ইসলাম প্রসঙ্গসমূহ
| |||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
| |||||||||||||||
| |||||||||||||||
| |||||||||||||||
|