Мы используем файлы cookie.
Продолжая использовать сайт, вы даете свое согласие на работу с этими файлами.

ওলম

Подписчиков: 0, рейтинг: 0
ওম
Proteus anguinus Postojnska Jama Slovenija.jpg
প্রজাতি প্রোটিয়াস এঙ্গুইনাস

ওলম (ইংরেজি: Olm, উচ্চারণ: ওম) বা প্রটিয়াস (বৈজ্ঞানিক নাম: প্রটিয়াস এঙ্গুইনাস) প্রটিডে প্রজাতির এক ধরনের জলজ সালাম্যান্ডার। এটা ইউরোপে পাওয়া গুহায় বসবাসকারী একমাত্র মেরুদন্ডী প্রজাতি। এরা অন্যান্য উভচর প্রাণীর বিপরীত, এবং এরা সম্পূর্ণভাবে জলজ প্রাণী; এরা খাওয়া দাওয়া করে, ঘুমায় এবং শ্বাস নেয় পানির নিচে। দিনারিক আল্পসের গুহায় বসবাসকারী এই প্রাণীটি সে অঞ্চলের মাটির নিচে বয়ে যাওয়া পানিতে বিচরণ করে। জন্মসূত্রভাবে এদের বাসস্থান হচ্ছে প্রবাহিত পানির নিচে। মধ্য ও দক্ষিণ পশ্চিম ইউরোপের কার্স্ট, বিশেষ করে দক্ষিণ স্লোভেনিয়া, ট্রিস্টে, ইতালি, দক্ষিণ-পশ্চিম ক্রোয়াশিয়া, এবং বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায় এদের দেখা যায়। প্রবর্তিত জনসংখ্যা দেখা যায় ভিঞ্চেঞ্জা, ইতালি ও ক্রাঞ্জ, স্লোভিনেয়ায়।

এরা এদের মাংশল রঙের চামড়ার কারণে ‘মনুষ্য মাছ’ নামেও পরিচিত। এছাড়া ‘কেভ সালাম্যান্ডার’ বা ‘সাদা সালাম্যান্ডার’ নামেও পরিচিত।স্লোভেনিয়াতে এরা মোসেরিল নামে পরিচিত, যার অর্থ যারা ভেজা স্থানে গর্ত খুঁড়ে। ১৬৮৯ সালে স্থানীয় প্রকৃতিবিজ্ঞানী ভাল্ভাসর তার গ্লোরি অফ দ্য ডাচি অফ কার্নিওলা গ্রন্থে সর্বপ্রথম ওম-এর কথা উল্লেখ করেন। উনি তার বিবরণে বলেন যে, প্রচন্ড বৃষ্টির পর এই ওমরা মাটির নিচের পানি থেকে ভেসা উঠে আসে এবং স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করেন এরা কেভ ড্রাগনের সন্তান-সন্ততি।

এই প্রাণীটির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হল যে এরা মাটির নিচের সম্পূর্ণ অন্ধকারেও খুব ভালভাবে খাপ খাইয়ে বসবাস করতে পারে। ওমদের চক্ষুগুলি সম্পূর্ণভাবে বিকাশিত নয় যার ফলে এরা অন্ধ, কিন্তু এদের অন্যান্য ইন্দ্রিয়, যেমন ঘ্রানশক্তি ও শ্রবনশক্তি খুব তীক্ষ্ণভাবে বিকশিত। এদের চামড়ায় কোন রঞ্জন নেই। এদের সামনের পায়ে তিনটি পদাঙ্গুলি আছে, কিন্তু পিছনের পায়ে আছে শুধু দু’টি পদাঙ্গুলি। এছাড়া এদের প্রাপ্তবয়সেও কিছু অপ্রাপ্তবয়স্ক গুণাবলী আছে, যেমন প্রাপ্তবয়সেও এদের বাহিরের গিল থাকে।

শব্দোৎপত্তি

ওম শব্দটির উৎপত্তি জার্মান ভাষা থেকে যা ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে ইংরেজিতে যুক্ত হয়। মূল জার্মান শব্দ ‘ওম’ বা ‘গ্রটেনোল্ম’ এর উৎপত্তি অজানা। এটা মোলচ স্যালাম্যান্ডার (Molch salamander) শব্দটির বিকল্প শব্দ হতে পারে।

শারীরিক গঠণ

বাহ্যিক রূপ

১৯০৭ সালে ফরাসী জীব বিজ্ঞানী গ্যাস্টন বনিয়ে যেভাবে ওম চিত্রিত করেছিলান

ওমের দেহ সরিসৃপের মত, লম্বায় ২০-৩০ সেন্টিমিটার (৮-১২ ইঞ্চি), এবং কোন কোন প্রজাতি ৪০ সেন্টিমিটার (১৬ ইঞ্চি) পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এদের স্ত্রীগুলি পুরুষদের চেয়ে বড় হয়। এদের ধড় হয় সিলিন্ডার আকৃতির এবং সমপরিমাণ পুরু। এদের লেজ তুলনামূলকভাবে ছোট, চ্যাপ্টা এবং এর চারিদিকে ডানা আছে। এদের হাত ও পা ছোট ও সরু, এবং এদের আঙ্গুলের সংখ্যা অন্যান্য উভচর প্রাণীর তুলনায় কম। সামনের পায়ে স্বাভাবিক চারটির পরিবর্তে ৩টি আঙ্গুল আছে এবং পেছনের পায়ে আছে স্বাভাবিক পাঁচটির পরিবর্তে দুইটি আঙ্গুল। এর শরীর একটি পাতলা চামড়া দ্বারা আবৃত, যাতে খুব কম পরিমাণে রাইবোফ্লেভিন নামে এক ধরনের রঞ্জন রয়েছে, যার ফলে এদেরকে হলদেটে সাদা বা গোলাপি দেখায়। এদের পেটের দিকে তাকালে এদের আভ্যন্তরীন অঙ্গগুলি জ্বলজ্বল করতে দেখা যায়। এদের গাত্রবর্ণ শ্বেতাঙ্গ মানুষদের মত হওয়ায় কোন কোন ভাষায় এদেরকে ‘মৎস্য মানব’ নামেও অভিহিত করা হয়। কিন্তু, ওমের চামড়া মেলানিন উৎপাদনের ক্ষমতা রাখে। আলোর সংস্পর্শে এলে এরা ক্রমে ক্রমে গাঢ় বর্ণ ধারণ করে এবং কখনো কখনো লার্ভাও রঙ্গিন হয়ে যায়। এদের মুখের অগ্রভাগ খুব ছোট, এবং ক্ষুদ্র দাঁতগুলি একটি ছাকনির ন্যায় কাজ করে, যাতে বড় কোন বস্তু মুখে প্রবেশ করতে না পারে। এদের নাসিকা গহ্বর এত ক্ষুদ্র যে চোখেই পড়ে না। এদের পশ্চাদবর্তী চোখ দু’টি একটি আবরণ দ্বারা আবৃত। এরা শ্বাস নেয় বাহ্যিক শ্বাসতন্ত্র দ্বারা। এদের গিল বা শ্বাসতন্ত্র দেখতে টকটকে লাল, কারণ স্বচ্ছ চামড়ার মধ্য দিয়ে অক্সিজেন ভর্তি লাল রক্ত দেখা যায়।

অনুভবকারী ইন্দ্রিয়সমূহ

গুহায় বাস করা প্রাণিরা গুহায় বাসের সাথে নিজেদেরকে খাপ খাইয়ে নিতে অনুভবকারী ইন্দ্রিয়সমূহ উন্নত করার চেষ্টায় থাকে। ওম যেহেতু চোখে দেখতে পায় না, তাই তারা তাদের অন্য ইন্দ্রিয়সমূহ ভালভাবে কাজে লাগাতে চেষ্টা করে। তাদের এই ইন্দ্রিয়গুলো ডাঙ্গায় বাস করা উভচর প্রাণীদের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর।

ফটোরিসেপ্টর

অন্ধ হওয়া সত্ত্বেও ওম আলো থেকে দূরে থাকে। এদের চোখগুলো পশ্চাদবর্তী হলেও এতে অনুভূতি বিদ্যমান। এই চোখগুলো চামড়ার নিচে অবস্থিত এবং সহজে চোখে পড়ে না। গবেষণায় দেখা গেছে যে এদের চামড়াও আলোর প্রতি সংবেদনশীল। শূককীট অবস্থায় এদের চক্ষুগুলি স্বাভাবিক মাপের থাকে, কিন্তু পরিপূর্ণতা খুব শীঘ্রই বন্ধ হয়ে যায় এবং চার মাস বিকাশ লাভের পর ক্ষয় হতে থাকে। প্রোটিয়াসের মস্তিষ্ক গ্রন্থিতে সম্ভবতঃ শারীরবৃত্তিয় প্রক্রিয়ার উপর কোন ধরনের নিয়ন্ত্রণ থাকে। বিশেষ ধরনের কোষের ভিতর মেলানোস্ফোর নামে রঞ্জন পদার্থ থাকার কারণে এদের বহিরাগমণের আলোক-সংবেদনশীলতা আছে।

কিমোরিসেপ্টর

ওমের মাথার সম্মুখ ভাগে আছে সংবেদনশীল কিমো-, মেকানো- এবং ইলেক্ট্রো রিসেপ্টর.

ওম পানিতে খুব অল্প পরিমণে জৈব পদার্থ থাকলেও তা অনুভব করতে পারে। অন্যান্য জলজ প্রাণীর তুলনায় এরা শিকারের গুণ ও পরিমাণ খুব ভালভাবে অনুভব করতে পারে। ওমের মাথার সম্মুখভাগে সংবেদনশীল কিমো, মেকানো এবং ইলেক্ট্রোরিসেপ্টর রয়েছে। পানিতে খুব অল্প পরিমাণে প্রাকৃতিক উপাদান থাকলেও ওম সেটা অনুভব করতে পারে। এরা অন্য উভচরের তুলনায় এদের শিকারের পরিমাণ ও গুণগত মান খুব গন্ধ শুঁকে ভালভাবে যাচাই করতে পারে। অনুনাসিক গহ্বরের ভিতরে অবস্থিত নাকের এপিথিলিয়াম অন্যান্য উভচর প্রাণীর তুলনায় বেশি পুরু। এদের স্বাদগ্রন্থি অবস্থিত মুখের মিউকাস এপিথিলিয়ামে, বেশিরভাগ জিহ্বার উপরের ভাগে। মুখ গহ্বরের স্বাদগ্রন্থি ব্যবহৃত হয় খাদ্যের স্বাদ নিতে, আর ফুলকায় অবস্থিত স্বাদগ্রন্থি দ্বারা সম্ভবতঃ পানিতে কেমিক্যালের উপস্থিতি অনুভব করে থাকে।

মেকানো এবং ইলেক্ট্রোরিসেপ্টর

ওমের কানের ভিতরের অনুভবশীল পর্দা বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে এরা পানির নিচে শব্দতরঙ্গ ও ভূকম্পন অনুভব করতে পারে। জটিল অনুভূতিশীল কোষের কারেণে এরা শব্দের উৎস জানতে পারে। যেহেতু দীর্ঘ জীবনের বেশিরভাগ সময় এদের কিছু শারিরীক গঠন অপরিণত থাকে, তাই এরা খুব কম সময় এদের শ্রবণেন্দ্রিয় খোলা জায়গায় ব্যবহার করার সুযোগ পায়। এ কারণে এরা লাভবান হয় গুহার অন্ধকারে পানির নিচে শ্রবণেন্দ্রিয় ব্যবহারের মাধ্যমে শব্দ শুনে ও শিকারের সন্ধান করে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রোটিয়াসদের শ্রবণ সংবেদনশীলতা ১০ থেকে ১৫,০০০ হার্জ পর্যন্ত হতে পারে। বিজ্ঞানীরা আলো এবং ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে ওমের মাথায় অবস্থিত একটি নতুন ধরনের অনুভূতিশীল ইন্দ্রিয়ের সন্ধান পান। এই ইন্দ্রিয়গুলোকে বিজ্ঞানীরা এম্পুলারি ইন্দ্রিয় হিসেবে আখ্যায়িত করেন। অন্যান্য মেরুদন্ডী প্রাণীর মত ওম ও সূক্ষ্ণ বৈদ্যুতিক পরিধি অনুভব করতে পারে। গবেষণা অনুসারে, ওম নিজেকে খাপ খাওয়াতে পৃথিবীর বৈদ্যুতিক পরিধি অনুভব করতে পারে। ২০০২ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রোটিয়াস এঙ্গুইনাস প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম চৌম্বক ক্ষেত্রের সাথে একই রেখায় অবস্থান করতে পারে।

বাস্তব্যবিদ্যা ও জীবনবৃত্তান্ত

ওম সরিসৃপের ন্যায় এঁকেবেঁকে সাঁতার কাটে.

এরা মাটির নিচে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সম্পন্ন ৮-১১ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রার পানিতে ভালভাবে জীবনযাপন করতে পারে। পানির উপরের ভাগে যেখানে তাপমাত্রা একটু বেশি সেখানে কখনো কখনো কালো ওম দেখা যায়।

১০ ডেগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ডিমের ভিতরে থাকা এদের ভ্রূণের পরিপক্বতার সময় লাগে ১৪০ দিন, কিন্তু এটা আরো ঠান্ডা পানিতে ধীরে ও তুলনামূলকভাবে গরম পানিতে দ্রুত (সর্বনিম্ন ৮৬ দিনে) হয়। ডিম ফুটার পর প্রাপ্তবয়স্ক হতে এদের আরও ১৪ বছর লাগে, যদি সেটা ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রার পানিতে হয়। লার্ভা প্রাপ্তবয়স্ক রূপ পায় আরো ৪ বছর পর এবং সেটাও নির্ভর করে পানির তাপমাত্রার উপর। অসমর্থিত ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায় যে ডিম পাড়া উভচর প্রাণীদের মত স্ত্রী ওমের গন্ড আছে যা ডিমের আধার উৎপাদন করে। পল ক্যামেরোর প্রতিবেদন করেন যে ১৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রার নিচে পানিতে স্ত্রী ওম জ্যান্ত শিশুর জন্ম দেয় এবং ডিম পাড়ে আরো বেশি তাপমাত্রার পানিতে। কিন্তু পর্যবেক্ষণে দেখা যায় ওম শুধুমাত্র অন্ডোতপাদী।

স্ত্রী ওম এক সাথে ৭০ টি পর্যন্ত ডিম পাড়তে পারে, যার প্রতিটির ব্যস ১২ মিলিমিটার, এবং এগুলিকে সে পাথরের মধ্যবর্তী স্থানে রাখে নিরাপদ থাকার জন্য। গড়ে স্ত্রী ওম ৩৫ টি ডিম পাড়ে এবং ডিম পাড়ে প্রতি সাড়ে ১২ বছরে একবার।

ওম কোন ধরনের রূপান্তের মধ্যে হয় না এবং এদের লার্ভা রূপ এরা ধরে রাখে। নিওটেনির মাধ্যমে এরা প্রাপ্তবয়স্ক হয়। নিওটেনি হচ্ছে বিলম্বিত দৈহিক পরিপক্বতা, যেমন প্রজননের জন্য পরিপক্বতা লাভ করে কিন্তু বাহ্যিক রূপ শূকের ন্যায় থাকে। ওমের থাইরয়েড স্বাভাবিকভাবেই পূর্ণতা পায়, তাই থাইরক্সিন হরমোনে প্রয়োজনীয় টিসুর নিঃসাড়তার কারণে মেটামর্ফসিস হয় না।

সামঞ্জস্যহীন লম্বা মাথা ও শ্বাসতন্ত্র

ওম সাঁতার কাটে ঈল মাছের মত এঁকেবেঁকে। এদের খাদ্য হচ্ছে এক ধরনের ক্ষুদ্র চিংড়ি, ক্ষুদ্র শামুক ও মাঝে মাঝে পোকামাকড়। এরা খাবার চিবিয়ে খায় না, বরং পুরোটাই গিলে ফেলে। মাটির নিচে বসবাসের ফলে ওম কিছু কিছু সমস্যার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে, যেমন খাদ্য সংকট হলে এরা বহুদিন না খেয়ে থাকতে পারে। এরা এক সাথে অনেক খাবার গিলে ফেলে ও পুষ্টিগুলো লিভারে জমা করে রাখে এবং খাদ্য সংকটের সময় তা কাজে লাগায়। গবেষণায় দেখা গেছে যে ওম একটানা ১০ বছর না খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে।

যৌনক্রিয়া

ওম দলবদ্ধভাবে বাস করতে ভালবাসে এবং পাথর বা ফাটলের মাঝে জড়ো হয়। যৌন সক্রিয় প্রাপ্তবয়স্ক ওম এর ব্যাতিক্রম। তারা নারীকে আকৃষ্ট করতে তাদের নিজস্ব অঞ্চল প্রতিষ্ঠা ও প্রতিরোধ করে। খাদ্য ঘাটতির কারণে এরা কোন ধরনের বিবাদে জড়াতে চায় না কারণ এটা এদের শক্তির জন্য খুবই ব্যয়বহুল।

এদের যৌনক্রিয়া শুধুমাত্র বন্দীদশায় পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। যৌনক্রিয়ার আগে এরা অন্যান্য পুরুষ ওমদের তাড়িয়ে দেয় এবং নারী ওমদের আকর্ষণ করার জন্য এক ধরনের ফেরোমোন নিঃসরণ করে। যখন নারী ওম কাছে আসে তখন সে তার চারিদিকে ঘুরে এবং তার লেজ দিয়ে আলতোভাবে ছুয়ে তাকে উত্তেজিত করে। তারপর সে নাক-মুখ দিয়ে নারী ওমটির শরীর স্পর্শ করে এবং নারীটিও তার নাক-মুখ দিয়ে তার যৌনাঙ্গ স্পর্শ করে। তারপর পুরুষটি আঁকাবাঁকা ভঙ্গিতে সামনে যায় এবং নারীটি তাকে অনুসরণ করে। তারপর পুরুষটি তার বীর্য নিঃসরণ করে এবং তারা এগিয়ে যেতে থাকে যতক্ষণ না নারীটি বীর্যের সংস্পর্শে আসে। সংস্পর্শে এলে নারীটি থেমে যায় এবং বীর্য কোষ সাঁতার কেটে যোনিপথে নারীটির দেহে প্রবেশ করে ও তাকে গর্ভবতী করে। এই রতিক্রিয়া কয়েকবার পুনরাবৃত্তি করা হয় এবং তা কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত চলতে পারে।

আয়ু

ওমের আনুমানিক আয়ু ৫৮ বছর। একটি গবেষণায় উল্লেখ করা হয় যে এদের আয়ু সর্বোচ্চ ১০০ বছরের উপর হতে পারে এবং গড় আয়ু ৬৮.৫ বছর। এদের দেহের আয়তনের হিসেবে এরা অন্যান্য উভচরদের তুলনায় বেশিদিন বাঁচে।

শ্রেণীকরণের ইতিহাস

ভিন্ন ভিন্ন গুহায় বসবাসকারী ওম তাদের দেহের মাপ, রঙ এবং কিছু আণুবীক্ষণিক বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে আলাদা। পূর্বে, বিজ্ঞানীরা এইসব বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করে জীবটিকে পাঁচ প্রজাতিতে ভাগ করেছিলেন, কিন্তু এখনকার বিজ্ঞানীরা বলেন বাহ্যিক আকারের জন্য এরা আলাদা প্রজাতির হতে পারে না। বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত ওমের আলাদা আলাদা বৈশেষ্ট্য হচ্ছে এদের মাথার দৈর্ঘ্য। স্টিচনা (Stična), স্লোভেনিয়ায় বসবাসরত ওমের মাথা  ট্রিচ (Tržič), স্লোভেনিয়া এবং ইস্ত্রিয়ান পেনিন্সুলার ওমের মাথার তুলনায় ছোট।

কালো ওম

কালো ওম একটি উপপ্রজাতি, যার আছে ছোট মাথা ও আরো পরিপক্ব চক্ষু।
জেলসেভনিকে (Jelševnik) গবেষণার বায়ুরন্ধ্র (vent hole), ভেন্ট হোল গবেষণা, যেখানে নিয়মিত পানি ও তলানির মান পরীক্ষা করা হয়, এবং যেখানে কালো ওমদের কার্যকলাপ ইনফ্রারেড ক্যামেরা দ্বারা নিবন্ধন করা হয়।

কালো ওম (Proteus anguinus parkelj) ছোট মাথা ও পূর্ণতর চোখবিশিষ্ট, ওমের একটি উপপ্রজাতি। ওমের একমাত্র স্বীকৃত উপপ্রজাতি হচ্ছে কালো ওম। এদের আবাস হচ্ছে ক্রনমলি, স্লোভেনিয়া, যা ১০০ বর্গ কিলোমিটারের চেয়ে ছোট একটি অঞ্চল। স্লোভেনিয়ান কার্স্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউটের সদস্যরা ১৯৮৬ সালে এদের প্রথম আবিষ্কার করেন।

এদের বেশ কিছু বৈশেষ্ট্যের কারণে এদেরকে অন্যান্য ওমের চেয়ে আলাদা করা হয়।

বৈশিষ্ট্য প্রোটিয়াস এঙ্গুইনাস এঙ্গুইনাস প্রোটিয়াস এঙ্গুইনাস পার্কেল টীকা
ত্বক রঞ্জিত নয় সাধারণতঃ রঞ্জিত গাঢ় খয়েরি বা কালো রঙ্গে স্পষ্টত প্রতীয়মান পার্থক্য
মাথার আকার লম্বা, সরু ছোট সমানভাবে পুরু। শক্ত চোয়ালের পেশী যা দু'টি কন্দের ন্যায় মাথার উপরে পরিলক্ষিত
দেহের দৈর্ঘ্য ছোট, ২৯-৩২ মেরুদন্ডের অস্থি লম্বা, ৩৪-৩৫ মেরুদন্ডের অস্থি উভচরদের নির্দিষ্ট পরিমাণে মেরুদন্ডের অস্থি থাকে না।

ওম গবেষণার ইতিহাস

ওমের অস্তিত্বের প্রথম লিখিত প্রমাণ পাওয়া যায় ১৬৮৯ সালে, ইয়োহান ওয়াইকহার্ড ভন ভাল্ভাসরের “দ্য গ্লোরি অফ দ্য ডুচি অফ কার্নিওলা” গ্রন্থে। এতে উনি লেখেন যে, প্রচন্ড বৃষ্টির পর ওমরা মাটির নীচ থেকে উপরে ভেসে আসে, এবং সেটা প্রাচীন লোককাহিনীকে সমর্থন করে যে ড্রাগনরা এক সময় মাটির নিচে বাস করত। ভাল্ভাসর তার বইতে ড্রাগনদের অস্তিত্বের পৌরাণিক বিশ্বাসকে তুলে ধরতে চেষ্টা করেন।

পৃথিবীতে সর্বপ্রথম জীবিত ওম দেখতে পান গবেষক জিওভানি আন্তোনিয় স্কপোলি। জোসেফাস নিকোলোস লরেন্ট ছিলেন প্রথম বিজ্ঞানী যিনি ১৭৬৮ সালে প্রথম ওমের বর্ণনা দেন এবং এদের বৈজ্ঞানিক নাম দেন প্রোটিয়াস এঙ্গুইনাস। শতাব্দীর শেষ ভাগে ভিয়েনা যাদুঘরের (Naturhistorisches Museum of Vienna) কার্ল ফ্রানয এন্টন রিটার ভন শ্রাইবার্স এদের শারিরীক গঠনের পরীক্ষা শুরু করেন। তার কাছে ওমের নমুনাগুলি পাঠান যিগা যোয়া। শ্রাইবার্স তার পরীক্ষার ফলাফল পাঠান রয়াল সোসাইটি অফ লন্ডনে ১৮০১ সালে ও পরে প্যারিসে। শীঘ্রই ওম ব্যাপক স্বীকৃতি লাভ করে, যার ফলে মানুষ পরীক্ষার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের কাছে হাজার হাজার ওম পাঠাতে থাকেন। ডাঃ এডওয়ার্ডস নামে একজন তার ১৮৩৯ সালে প্রকাশিত বইয়ে লিখেনঃ ...প্রোটিয়াস এঙ্গুইনাস হচ্ছে একটি জীবের প্রথম ধাপ যেখানে তাকে কার্নিওলার ভূগর্ভস্থ পানিতে বিচরেণের মাধ্যমে পূর্ণ পরিপক্ব হওয়া থেকে নিবারণ করা হয়।

১৮৮০ সালে মারি ভন শভেন সর্বপ্রথম বন্দিদশায় দীর্ঘমেয়াদি ওম গবেষণা শুরু করেন। তিনি দেখেন যে এই যখন এই প্রাণিদের সামনে কোন ভারি বস্তু ফেলা হয় তখন এরা ভয় পায়, এবং অল্প আলোতে কয়েক ঘণ্টা থাকলে এরা রঙ ধারণ করে, কিন্তু এদেরকে উনি ডাঙ্গায় বসবাসের যোগ্য করতে পারেননি।

১৯৮০’র দশকে স্লোভেনিয়ায় প্রয়োজনীয় অঙ্গসংস্থানের তদন্তের ভিত্তি স্থাপন করেন লিলি লিস্টেনিচ (Lili Istenič)। বিশ বছরেরও বেশি সময় পর লুবিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাংকশনার মর্ফোলজিক্যাল স্টাডিজের গবেষণা দল হচ্ছে অন্যতম মুখ্য গবেষক দল যারা বোরিস বুলগের তত্ত্বাবধানে ওম গবেষণায় নিযুক্ত। ইউরোপে বেশ কিছু গুহা গবেষণাগার (cave laboratories) আছে যেখানে ওম গবেষণা করা হয়। এগুলো হচ্ছে আরিজ (ফ্রান্স), কেন্টস ক্যাভার্ন (যুক্তরাজ্য), হান-সুর-লেস (বেলজিয়াম) এবং আগতেলেক (হাঙ্গেরি)। এদেরকে হার্মান্সোল (জার্মানি) এবং ওলিয়েরো (ইতালি)’র গুহায়ও প্রবর্তন করা হয়, যেখানে তারা আজও বাস করছে।

চার্লস ডারউইন তাঁর বিখ্যাত অন দ্য অরিজিন অব স্পিসিস বইতে ওম উদাহরণস্বরূপ ব্যবহার করেন।

"আশ্চর্য হওয়া তো দূরের কথা যে কিছু কিছু গুহার প্রাণী ব্যতিক্রমী হবে, যেমন ইউরোপের সরিসৃপের ক্ষেত্রে অন্ধ প্রোটিয়াস, আমি শুধু আশ্চর্যান্বিত যে আরো প্রাচীন প্রাণী সংরক্ষণ করা হয় নি, অন্ধকার গুহায় বসবাসকারী এই ক্ষুদ্র প্রাণীগুলি প্রদর্শনের বেলায় কম প্রতিযোগিতার কারণে।"

সংরক্ষণ

গুহায় বসবাসের জন্য মানিয়ে চলার ক্ষেত্রে পরিবেষগত পরিবর্তনের কারণে ওমের অস্তিত্ব মারাত্মক হুমকির মুখে আছে। কার্স্ট অঞ্চলের পানি দূষণের ক্ষেত্রে খুবই নাজুক।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর রাসায়নক পদার্থগুলি হচ্ছে কীটনাশক, সার ও পিসিবি। স্লোভেনিয়ার গুহাগুলি এখানে বসবাসকারী প্রাণীদের জন্য খুবই বিখ্যাত, এবং এসব প্রাণী অন্য কোন অঞ্চলে দেখা যায় না। অনেক সংরক্ষণকারী অবৈধ উপায়ে গুহা থেকে ওম চুরি করছে। EU Habitats Directive (92/43/EEC এর Appendices II এবং IV এ ওম অন্তর্ভুক্ত আছে।

Appendix II এর লক্ষ্য হচ্ছে প্রাণী ও গাছপালা সংরক্ষণের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা, তাদের বাসস্থান রক্ষা করা এবং এদের রক্ষার জন্য নিরাপদ এলাকার ব্যাখ্যা করা। অল্প পরিমাণে ওম শিকার ও ব্যক্তিগতভাবে সংরক্ষণ করা আইন অনুযায়ী বৈধ, কিন্তু সেটা হতে হবে কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে।

১৯২২ সালে স্লোভেনিয়ায় প্রথম ওমদের অস্তিত্বের নিরাপত্তা দেয়া হয়, কিন্তু সেটা ছিল ক্ষণস্থায়ী।

ক্রোয়েশিয়ায় ওম দের নিরাপত্তা দেয়া হয় উভচর প্রাণীদের নিরাপত্তা আইনের আওতায়। বসনিয়া হার্যেগোভিনা এবং মন্টিনেগ্রোতে এদের সংরক্ষণের ব্যাপারে পরিষ্কার কিছু জানা যায় না। IUCN এর রেড লিস্টে ওমকে এদের স্বল্পতা এবং সংখ্যা হ্রাসের কারণে অরক্ষিত প্রাণী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।

কৃষ্টিগত গুরুত্ব

ওম স্লোভেনিয়ার প্রাকৃতিক পরম্পরার একটি প্রতীক।

৩০০ বছর আগে আবিষ্কৃত স্লোভেনিয়ার গুহায় বসবাসকারী এই প্রাণীটি আজো বিজ্ঞানী এবং জনসাধারণের মাঝে প্রচুর উদ্যমতার সৃষ্টি করে। স্লোভেনিয়া ইকো টুরিজমের প্রচারের কাজে ওমের চিত্র ব্যবহার করে। পোস্তোনিয়া গুহায় পর্যটকদের টুরের ব্যবস্থা আছে, যেখানে গুহার বিভিন্ন পরিবেশে ওমের বসবাস পর্যটকদের সামনে তুলে ধরা হয়।

স্লোভেনিয়ার তোলার মুদ্রায় ওমের ছবি ব্যবহার করা হয়। সে দেশের সবচেয়ে পুরাতন বৈজ্ঞানিক ম্যাগাজিনের নাম ‘প্রোটিয়াস’ যা প্রথম মুদ্রিত হয় ১৯৩৩ সালে।

বহিঃসংযোগ


Новое сообщение