Мы используем файлы cookie.
Продолжая использовать сайт, вы даете свое согласие на работу с этими файлами.

জরায়ু

Подписчиков: 0, рейтинг: 0
জরায়ু
Figure 28 02 01.JPG
মানব জরায়ু এবং এর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অঙ্গের চিত্র প্রদর্শন
বিস্তারিত
পূর্বভ্রূণ প্যারামেসোনেফ্রিক নালী
তন্ত্র জননতন্ত্র
ধমনী ডিম্বাশয়ের ধমনী এবং জরায়ুর ধমনী
শিরা জরায়ুর শিরা
লসিকা দেহ এবং জরায়ু মুখে অভ্যন্তরীণ ইলিয়াক লসিকাবাহ পর্ব, ফান্ডাসে প্যারা-অ্যাওর্টিক লসিকাবাহ পর্ব, লাম্বার এবং সুপারফিসিয়াল ইঙ্গুইনাল লসিকাবাহ পর্ব।
শনাক্তকারী
লাতিন জরায়ু
গ্রিক ὑστέρα (hystéra)
মে-এসএইচ D014599
টিএ৯৮ A09.1.03.001
টিএ২ 3500
এফএমএ FMA:17558
শারীরস্থান পরিভাষা
থ্রিডি অ্যানিমেশন স্থিরচিত্র ব্যবহার করে জরায়ুর বিভিন্ন অংশ দেখানো হয়েছে
থ্রিডি অ্যানিমেশন স্থিরচিত্র ব্যবহার করে জরায়ুর বিভিন্ন অংশ দেখানো হয়েছে

জরায়ু (ল্যাটিন: “ইউটেরাস”, বহুবচন: ইউটেরি) বা গর্ভ মানুষসহ বেশিরভাগ স্তন্যপায়ী প্রাণীদের জননতন্ত্রের একটি প্রধান হরমোন-প্রতিক্রিয়াশীল স্ত্রী গৌণ-জননাঙ্গ। জরায়ুতে যা ঘটে তাকে ‘ইন ইউটেরো’ বলে বর্ণনা করা হয়। মানুষের ক্ষেত্রে, জরায়ুর নিম্নপ্রান্ত, জরায়ুমুখ, যোনিপথে উন্মুক্ত হয় এবং এর ঊর্ধ্বাংশ, ফান্ডাস, ডিম্বনালীর সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। গর্ভকালে এই জরায়ুর মধ্যেই গর্ভস্থ ভ্রূণ বড়ো হতে থাকে। মানুষের ভ্রূণাবস্থায়, জরায়ু প্যারামেসোনেফ্রিক নালী থেকে একটি একক অঙ্গে রূপান্তরিত হয়, যাকে সরল জরায়ু বলে। অন্যান্য অনেক প্রাণীর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের জরায়ু থাকে এবং কোন কোন প্রাণীর ক্ষেত্রে এটি দ্বৈত জরায়ু হিসেবে বিদ্যমান থাকে।

চিকিৎসাশাস্ত্র এবং এর সংক্রান্ত পেশায় ইউটেরাস বা জরায়ু শব্দটিকেই সাধারণভাবে ব্যবহার করা হয়, অন্যদিকে দৈনন্দিন ক্ষেত্রে একে জার্মান শব্দ উম্ব বা গর্ভ বলা হয়ে থাকে।

গঠন

পেলভিক অঞ্চলের মধ্যে মুত্রাশয়ের ঠিক পেছনে এবং এর ওপর প্রায় শোয়ানো অবস্থায় এবং সিগময়েড কোলনের সামনে জরায়ুটি অবস্থান করে। মানুষের জরায়ুটি নাশপাতির আকৃতির এবং প্রায় ৭.৬ সেমি (৩.০ইঞ্চি) লম্বা, ৪.৫ সেমি (১.৮ ইঞ্চি) প্রশস্ত (পাশাপাশি), এবং ৩.০ সেমি (১.২ ইঞ্চি) পুরু। একটি পরিণত জরায়ু ৬০ গ্রাম ওজনের হয়ে থাকে। জরায়ুকে অঙ্গসংস্থানগতভাবে চারটে অঞ্চলে ভাগ করা যেতে পারে: ফান্ডাস – জরায়ুর শীর্ষভাগের গোলাকার অংশ, কর্পাস (দেহ), সার্ভিক্স বা জরায়ুমুখ এবং সার্ভিকাল ক্যানেল। জরায়ুমুখ যোনিপথে বেরিয়ে থাকে। পেলভিসের মধ্যে জরায়ুটি লিগামেন্ট দ্বারা আবদ্ধ থাকে যা এন্ডোপেলভিক ফাসিয়ার অংশ। এইসকল লিগামেন্টের মধ্যে রয়েছে পিউবোসার্ভিকাল লিগামেন্ট, কার্ডিনাল লিগামেন্ট এবং ইউটেরোস্যাক্রাল লিগামেন্ট। এটি চাদরের মতো দেখতে পেরিটোনিয়াম নামক একটি বড়ো লিগামেন্টের ভাঁজে ঢাকা থাকে।

রেখাচিত্রের মাধ্যমে জরায়ুর বিভিন্ন অঞ্চল প্রদর্শিত

বহির্দেশ থেকে অন্তর্দেশে, জরায়ুর ক্ষেত্রগুলো হল:

  • সার্ভিক্স ইউটেরি – “জরায়ুর ঘাড়”
  • জরায়ুর বহির্ছিদ্র
  • সার্ভিকাল ক্যানেল
  • জরায়ুর অন্তর্ছিদ্র
  • দেহ (ল্যাটিনে কর্পাস)
  • জরায়ু গহ্বর
  • ফান্ডাস

স্তর

জরায়ু প্রাচীরের পুরুত্ব (সেমি)
অবস্থান মধ্যমান (মিমি) পরিসর (মিমি)
পূর্ববর্তী প্রাচীর ২৩ ১৭ - ২৫
পরবর্তী প্রাচীর ২১ ১৫ - ২৫
ফান্ডাস ২০ ১৫ - ২২
ইস্‌থুমাস ১০ ৮ - ২২

জরায়ুর তিনটে স্তর রয়েছে, যেগুলো জরায়ুর দেওয়াল তৈরি করে। বাইরের দিক থেকে ভেতরের দিকে এগুলো হল এন্ডোমেট্রিয়াম, মিয়োমেট্রিয়াম, এবং পেরিমেট্রিয়াম

এন্ডোমেট্রিয়াম হল স্তন্যপায়ীদের জরায়ুর ভেতরের এপিথেলিয়াল স্তর এবং এর সাথে থাকা মিউকাস পর্দা। এটির একটি ভিত্তি স্তর এবং একটি কার্যকারী স্তর রয়েছে; মাসিক ঋতুচক্র বা এস্ট্রাস চক্রের সময়ে কার্যকারী স্তরটি পুরু হয় এবং তারপর খসে যায়। গর্ভাবস্থায়, এন্ডোমেট্রিয়ামের জরায়ু গ্রন্থি এবং রক্তবাহগুলো আকারে আরো বড়ো হয় এবং সংখ্যাতেও বাড়ে এবং ডেসিডুয়া সৃষ্টি করে। অন্তর্বর্তী স্থানগুলো এই সময়ে রূপান্তরিত হয় এবং এদের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক সৃষ্টি হয়; এর ফলে তৈরি হয় অমরা যা ভ্রূণ এবং ফিটাসকে পুষ্টি ও অক্সিজেন প্রদান করে।

জরায়ুর মিয়োমেট্রিয়াম স্তরটির অধিকাংশই মসৃণ পেশী দিয়ে গঠিত। মিয়োমেট্রিয়ামের ভিতরের স্তরটিকে জাংকশানাল জোন বলে যা অ্যাডেনোমিয়োসিসের সময় পুরু হয়ে যায়।

পেরিমেট্রিয়াম হল অন্তর্বর্তী পেরিটোনিয়ামের একটি সেরাস স্তর। এটি জরায়ুর বাইরের তলটিকে ঢেকে রাখে।

জরায়ুকে ঘিরে একটি তন্তুজ এবং চর্বিজাতীয় যোগকলার স্তর বা ফিতে থাকে যাকে প্যারামেট্রিয়াম বলা হয়; এটি জরায়ুকে পেলভিসের অন্যান্য কলার সাথে সংযুক্ত করে।

জরায়ুতে মিথোজীবী প্রাণী বসবাস করে এবং জরায়ুর মাইক্রোবায়োম সৃষ্টি করে।

ধারণ

বৃহৎ লিগামেন্ট দ্বারা জরায়ু আবৃত

জরায়ুটি প্রাথমিকভাবে পেলভিক পর্দা, মূলাধারীয় অংশ, এবং মুত্রজননীয় পর্দা দ্বারা ধারণ করা থাকে। দ্বিতীয়ত, এটি পেরিটোনিয়াল লিগামেন্ট এবং জরায়ুর বৃহৎ লিগামেন্টসহ অন্যান্য লিগামেন্ট দ্বারাও ধারণ করা থাকে।

মুখ্য লিগামেন্ট

এটি বেশ কিছু পেরিটোনিয়াল লিগামেন্ট দ্বারা স্বস্থানে অবস্থান করে যাদের মধ্যে নিম্নলিখিতগুলো হল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ (প্রতিটির দুটি করে):

নাম এখান থেকে এই পর্যন্ত
ইউটেরোস্যাক্রাল লিগামেন্ট পশ্চাদবর্তী জরায়ুমুখ স্যাক্রাম বা ত্রিকাস্থির সম্মুখবর্তী মুখ
কার্ডিনাল লিগামেন্ট জরায়ুমুখের পার্শ্বদেশ ইসচিয়াল স্পাইন
পিউবোসার্ভিকাল লিগামেন্ট জরায়ুমুখের পার্শ্বদেশ পিউবিক সিম্ফিসিস

অক্ষ

সাধারণভাবে, জরায়ু অ্যান্টিভার্সন এবং অ্যান্টিফ্লেক্সনে অবস্থান করে। বেশিরভাগ মহিলাদের ক্ষেত্রেই, মুত্রাশয়ের বিপরীতে জরায়ুর দীর্ঘ অক্ষটি যোনির দীর্ঘ অক্ষের দিকে ঝুঁকে থাকে। এই অবস্থানটিকে জরায়ুর অ্যান্টিভার্সন বলে। আরো, জরায়ুদেহের দীর্ঘ অক্ষটি জরায়ুমুখের দীর্ঘ অক্ষের সাথে থাকা জরায়ুছিদ্রের তলের দিকে আনত অবস্থায় থাকে। এই অবস্থানটিকে জরায়ুর অ্যান্টিফ্লেক্সন বলে। ৫০% মহিলার ক্ষেত্রে জরায়ুটি পূর্ববর্তী অবস্থান করে থাকে, ২৫% মহিলাদের ক্ষেত্রে এটি বিপরীতমুখী অবস্থান করে থাকে, এবং বাকী ২৫% মহিলার ক্ষেত্রে এটি মধ্যবর্তী অবস্থান করে থাকে।

অবস্থান

জরায়ুটি পেলভিক গহ্বরের মাঝখানে সম্মুখবর্তী তলে অবস্থান করে (লিগামেন্টাম ল্যাটাম ইউটেরির কারণে)। ফান্ডাসটি লিনিয়া টার্মিনালিসকে অতিক্রম করে না এবং জরায়ুমুখের যোনি অংশটি ইন্টারস্পাইনাল রেখার নিচে অতিক্রম করে না। জরায়ুটি চলমান এবং পূর্ণ মুত্রাশয়ের চাপে এটি পিছনের দিকে সরে আসে অথবা পূর্ণ মলাশয়ের চাপে এটি সম্মুখদিকে অগ্রসর হয়। যদি দুটিই পূর্ণ থাকে, তবে এটি উপরের দিকে সরে যায়। পেটের ভিতরের চাপ এটিকে নিচের দিকেও স্থানান্তরিত করতে পারে। জরায়ুর এই চলনের জন্য দায়ী পেশী-তন্তুময় একটি অঙ্গ যার মধ্যে প্রলম্বক্ষম এবং ভারবহনে সক্ষম এমন অংশ বর্তমান। সাধারণ অবস্থায় প্রলম্বক্ষম অংশটি জরায়ুকে অ্যান্টিফ্লেক্সন এবং অ্যান্টিভার্সনে সহায়তা করে (৯০% মহিলার ক্ষেত্রে) এবং পেলভিস অঞ্চলে একে ভাসমান অবস্থায় রাখতে সাহায্য করে। এইসকল শব্দগুলোর অর্থ নিচে বর্ণিত হল:

প্রভেদ বেশি সাধারণ বিরল
উল্টোনো অবস্থান "অ্যান্টিভার্টেড": সম্মুখভাগে আনত "রেট্রোভার্টেড": পশ্চাদমুখে আনত
ফান্ডাসের অবস্থান "অ্যান্টিফ্লেক্সড": জরায়ুমুখের তুলনায় ফান্ডাস সম্মুখদিকে অবস্থান করে "রেট্রোফ্লেক্সড": ফান্ডাস পশ্চাদমুখে অবস্থান করে

ভারবহনে সক্ষম অংশটি পেলভিক অঙ্গগুলোর ভারবহন করে এবং পিছনে বৃহত্তর পেলভিক পর্দা এবং সামনে ক্ষুদ্রতর মুত্র-জননাঙ্গ পর্দা দ্বারা গঠিত হয়।

জরায়ুর অবস্থানের অস্বাভাবিক পরিবর্তনগুলো হল:

  • রেট্রোভার্সন/রেট্রোফ্লেক্সন, যদি এটি স্থায়ী হয়
  • হাইপারঅ্যান্টিফ্লেক্সন – সামনের দিকে অধিক ঝুঁকে যায়; বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি জন্মগত, তবে টিউমারের কারণেও হতে পারে,
  • অ্যান্টিপজিশন, রেট্রোপজিশন, লেটারোপজিশন – সম্পূর্ণ জরায়ুটিই সরে যায়; প্যারামেট্রাইটিস অথবা টিউমারের কারণে হতে পারে
  • জরায়ুর উত্থান, ডেসসেন্সাস, প্রোল্যাপ্স
  • ঘূর্ণন (সম্পূর্ণ জরায়ুটি অনুদৈর্ঘ্য অক্ষের চারিদিকে ঘোরে), টর্সন বা মোচড় (জরায়ুর কেবল দেহাংশটি এক্ষেত্রে ঘোরে)
  • ইনভার্সন

জরায়ু “উলটে গেলে”, যা রিভার্টেড ইউটেরাস নামেও পরিচিত, ব্যক্তিটি যৌন সঙ্গমের সময়ে বেদনা অনুভব করতে পারে, ঋতুস্রাবের সময়েও বেদনা অনুভূত হতে পারে, মল/মুত্রত্যাগের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণের অল্প অভাব দেখা দিতে পারে, মুত্রনালীতে সংক্রমণ, প্রজননে জটিলতা এবং ট্যাম্পন ব্যবহারের ক্ষেত্রেও অসুবিধা হতে পারে। চিকিৎসক পেলভিক অঞ্চলের পরীক্ষা করে জরায়ু উলটে গেছে কিনা বোঝেন।

রক্তের যোগান

মায়োমেট্রিয়াম এবং এন্ডোমেট্রিয়ামের প্রস্থচ্ছেদের মধ্যে প্রদর্শিত জরায়ুর ধমনীয় রক্তবাহতন্ত্রের প্রতীকি রেখাচিত্র।
জরায়ুর রক্তবাহ এবং এর সংযোজন, পশ্চাদদৃশ্য।

জরায়ুর ধমনী এবং ডিম্বাশয়ের ধমনী উভয় থেকেই জরায়ুতে ধমনীর রক্ত আসে। আরেকটি অ্যানাস্টোমোটিক শাখাও এই দুটি ধমনীর অ্যানাস্টোমোসিস থেকে জরায়ুতে রক্তের যোগান দিতে পারে।

স্নায়ুর যোগান

জরায়ুতে থাকা অ্যাফারেন্ট স্নায়ু হল টি১১ এবং টি১২। হাইপোগ্যাস্ট্রিক প্লেক্সাস এবং ওভারিয়ান প্লেক্সাস থেকে সিম্প্যাথেটিক স্নায়ু আসে। এস২, এস৩ এবং এস৪ স্নায়ু থেকে প্যারাসিম্প্যাথেটিক স্নায়ু আসে।

বিকাশলাভ

আদি ভ্রূণজ অবস্থাতেই দ্বিপার্শ্বীয় মুলেরিয়ান নালী গঠিত হয়। পুরুষের ক্ষেত্রে, অ্যান্টি-মুলেরিয়ান হর্মোন (এএমএইচ) শুক্রাশয় থেকে নির্গত হয় বলে এই নালী গঠিত হতে পারে না। নারীর ক্ষেত্রে, এই নালীগুলো ডিম্বনালী এবং জরায়ুর জন্ম দেয়। মানুষের ক্ষেত্রে, এই দুটি নালীর নিচের অংশ একটি একক জরায়ু গঠন করে, তবে জরায়ুর গঠন-ত্রুটি হলে এর বিকাশলাভে সমস্যা দেখা যেতে পারে। বিভিন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণীর জরায়ুর বিভিন্ন গঠনের কারণ হল দুটি মুলেরিয়ান নালীর ভিন্ন ভিন্ন মাত্রার রূপান্তর।

জরায়ুতে বিভিন্ন ধরনের জন্মগত সমস্যার দেখা দিতে পারে। যদিও অস্বাভাবিক, তবুও এর মধ্যে কিছু কিছু হল দুটি জরায়ুর অবস্থান, ডিডেলফিক জরায়ু, বাইকরনেট জরায়ু এবং অন্যান্য।

কাজ

জরায়ুর জনন কাজটি হল ডিম্বনালী থেকে ইউটেরো-টিউবাল জাঙ্কশানের মধ্যে দিয়ে আসা নিষিক্ত ডিম্বাণুটিকে গ্রহণ করা। নিষিক্ত ডিম্বাণুটি বিভক্ত হয়ে ব্লাস্টোসিস্টে পরিণত হয় এবং এন্ডোমেট্রিয়ামে প্রোথিত হয়, এবং এর মধ্যে থাকা রক্তবাহের দ্বারা এর পুষ্টিলাভ হয়; প্রসঙ্গত এই রক্তবাহ কেবলমাত্র এই কারণেই এখানে গঠিত হয়। নিষিক্ত ডিম্বাণুটি একটি ভ্রূণে পরিণত হয়, জরায়ুর দেওয়ালে সংযুক্ত হয়, অমরা গঠন করে, এবং সন্তানের জন্ম হওয়া পর্যন্ত ফিটাসের বিকাশ ঘটায়। পেলভিসের অঙ্গসংস্থানগত বাধার দরুণ, জরায়ুটি গর্ভধারণের সময় এর প্রসারণের ফলে কিছুটা উদরগহ্বরের দিকে ঢুকে যায়। গর্ভধারণের সময়েও জরায়ুর ওজন প্রায় মাত্র ১ কিলোগ্রাম (২.২ পাউন্ড) থাকে।

জরায়ু পেলভিস এবং ডিম্বাশয়ে এবং যোনি, লেবিয়া এবং ক্লিটোরিসসহ বহির্জননাঙ্গে রক্তসংবহনের নির্দেশ দেওয়ার মাধ্যমে যৌন সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রেও ভূমিকা পালন করে।

কিছু কিছু প্রমাণের মাধ্যমে এটা বোঝা গেছে যে জরায়ু ডিম্বাশয়ের মত একই উপায়ে সংজ্ঞানের ক্ষেত্রেও ভূমিকা পালন করে। ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা করে দেখা গেছে, যদি জরায়ু বাদ দেওয়া হয়, তবে তাদের স্থানিক স্মৃতি দূর্বল হয়ে পড়ে। এই পরীক্ষাটির যুগ্ম লেখক অধ্যাপক বাইমন্ট-নেলসন ব্যাখ্যা করেছেন: “শরীরের স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র, যা “স্বয়ংক্রিয়” বিপাকীয় পদ্ধতিকে নিয়ন্ত্রণ করে, যেমন হৃদগতি, শ্বাসপ্রশ্বাস, পরিপাক এবং যৌন উত্তেজনা, এদের সাথে জরায়ু এবং মস্তিষ্কের যোগ আছে। এমন ধরনের পরীক্ষা মানুষের ক্ষেত্রে করা হয়নি।

চিকিৎসাশাস্ত্রে গুরুত্ব

হিস্টেরেকটমি নামক অস্ত্রোপ্রচারের মাধ্যমে জরায়ুকে বাদ দেওয়া হয় বিভিন্ন কারণে যেমন বিনাইন এবং ম্যালিগন্যান্ট টিউমার অপসারণের জন্য। সম্পূর্ণ হিস্টেরেকটমির মাধ্যমে জরায়ুদেহ, ফান্ডাস এবং জরায়ুমুখ বাদ দেওয়া হয়। আংশিক হিস্টেরেকটমির মাধ্যমে জরায়ুমুখ রেখে শুধুমাত্র জরায়ুদেহটিকে বাদ দেওয়া যেতে পারে। এটিই সবথেকে প্রচলিত স্ত্রীরোগজনিত অস্ত্রোপ্রচার পদ্ধতি।

গর্ভধারণের সময় ফিটাসের বৃদ্ধি হার ফান্ডাসের উচ্চতা দেখে নির্ণয় করা হয়।

কিছু রোগজনিত অবস্থা হল:

  • জরায়ুর স্থানচ্যুতি
  • জরায়ুমুখের কার্সিনোমা – ম্যালিগন্যান্ট নিওপ্লাজম
  • জরায়ুর কার্সিনোমা - ম্যালিগন্যান্ট নিওপ্লাজম
  • ফাইব্রয়েডস্‌ – বিনাইন নিওপ্লাজম
  • অ্যাডিনোমিওসিস – মায়োমেট্রিয়ামের মধ্যে এন্ডোমেট্রিয়াল কলার এক্টোপিক বৃদ্ধি
  • এন্ডোমেট্রাইটিস, জরায়ুর গহ্বরের মধ্যে সংক্রমণ
  • পায়োমেট্রা – জরায়ুতে সংক্রমণ, মূলত কুকুরদের ক্ষেত্রে দেখা যায়
  • জরায়ুর গঠনত্রুটি – এটি মূলত জন্মগত গঠনত্রুটি যার মধ্যে রয়েছে ইউটেরাইন ডিডেলফিস, বাইকর্নুয়েট ইউটেরাস এবং পৃথক জরায়ু। এর মধ্যে রোকিটান্সকি সিন্ড্রোম অর্থাৎ জন্মগত কারণে জরায়ুর অনুপস্থিতিও রয়েছে
  • অ্যাশারম্যান্স সিন্ড্রোম, ইন্ট্রাইউটেরাইন অ্যাডহেশন নামেও পরিচিত এই রোগটি দেখা দেয় যখন এন্ডোমেট্রিয়ামের ভিত্তি স্তরটি অস্ত্রোপ্রচারের ফলে (যেমন ডিএবংসি) বা সংক্রমণের ফলে (যেমন এন্ডোমেট্রিয়াল যক্ষ্মা) ক্ষতিগ্রস্ত হয় যার দরুন এন্ডোমেট্রিয়ামে ক্ষত সৃষ্টি হয়; এরপর সেখানে অ্যাডহেশন তৈরি হলে জরায়ু গহ্বরটি আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে অবলুপ্ত হয়
  • হেমাটোমেট্রা, যেখানে জরায়ুতে রক্ত জমা হতে থাকে।
রজোনিবৃত্তি হয়ে যাওয়া এক মহিলার ট্রান্সভ্যাজাইনাল অ্যাল্ট্রাসোনোগ্রাফিতে প্রদর্শিত জরায়ুজ তরল।
  • রক্ত ছাড়া অন্য তরল বা অচেনা চরিত্রের তরল জমা হওয়া। একটি সমীক্ষা থেকে এই সিদ্ধান্তে আসা হয়েছে যে যেসকল মহিলাদের রজোনিবৃত্তি হয়ে গেছে তাদের স্ত্রীরোগ সংক্রান্ত আলট্রাসোনোগ্রাফিতে যদি এন্ডোমেট্রিয়াম তরল দেখা যায় তবে তাদের এন্ডোমেট্রিয়াল বায়োপসি করা উচিত যদি এন্ডোমেট্রিয়াল রেখাটি ৩ মিমির চেয়ে পুরু হয় এবং এন্ডোমেট্রিয়াল তরলটি যদি ইকোজেনিক হয়। রেখাটি যদি ৩মিমি বা তার চেয়ে কম হয় এবং স্বচ্ছ এন্ডোমেট্রিয়াল তরল পাওয়া যায়, তবে এন্ডোমেট্রিয়াল বায়োপসির প্রয়োজন হয় না, কিন্তু এন্ডোসার্ভিকাল ক্যান্সার রয়েছে কিনা জানতে এন্ডোসার্ভিকাল কিউরেটেজ করার দরকার।
  • মায়োমেট্রাইটিস – পেশীময় জরায়ু প্রাচীরের প্রদাহ।

অন্যান্য প্রাণী

পক্ষী এবং সরীসৃপ প্রাণীরা যারা ডিম পাড়ে, এবং বেশিরভাগ ওভোভিভিপ্যারাস প্রজাতির জরায়ুর বদলে ওভিডাক্ট থাকে। তবে সম্প্রতি গবেষণায় দেখা গেছে যে ভিভিপ্যারাস (শুধু ওভোভিভিপ্যারাস নয়) স্কিঙ্ক ট্র্যাকিলেপিস ইভেনসির দেহেও ইউথেরিয় স্তন্যপায়ী অমরাসদৃশ গঠন রয়েছে।

মোনোট্রিমের ক্ষেত্রে অর্থাৎ যেসকল স্তন্যপায়ীরা ডিম পাড়ে, যেমন প্লাটিপাস এবং একিডনাস, এদের অঙ্গটিকে জরায়ু বা ওভিডাক্টের যেকোন একটি বলা যেতে পারে, কিন্তু মায়ের দেহে ডিম্বাণু কখনোই অমরা গঠন করে না এবং তার ফলে এর গঠন ও নিষেক হয়ে গেলে আর পালন হয় না।

মার্সুপিয়ালসের দেহে দুটি জরায়ু থাকে, যার প্রতিটি একটি পার্শ্বীয় যোনির সাথে যুক্ত থাকে এবং এ দুটিই একটি তৃতীয়, মধ্য “যোনি” ব্যবহার করে যা জন্ম-পথ হিসেবে কাজ করে। মার্সুপিয়াল ভ্রূণ একটি ক্লোরিওভিটেলাইন অমরা গঠন করে (যাকে একটি মোনোট্রিম ডিম এবং একটি ‘সত্যিকারের’ অমরার মধ্যে যেকোন কিছু ধরা যেতে পারে) যেখানে ভ্রূণের অধিকাংশ পুষ্টিই ডিমটির কুসুম থলি থেকে হয়, কিন্তু এটি জরায়ু প্রাচীরেও যুক্ত থাকে এবং মায়ের রক্তবাহ থেকেও পুষ্টি নেয়। তবে ব্যান্ডিকুটদেরও ক্লোরিওঅ্যালানোটোয়িক অমরা রয়েছে, যা স্তন্যপায়ীদের অমরার সদৃশ।

অমরাগঠনে সক্ষম এমন স্তন্যপায়ীরাই ফিটাস বা মাতৃভ্রূণ গঠন করে এবং ক্যাঙ্গারু ও অপোসামের মত মার্সুপিয়ালদের ক্ষেত্রে এটি আংশিক গঠিত হয়। মার্সুপিয়ালদের ক্ষেত্রে দুটো জরায়ু একটি দ্বৈত অঙ্গ হিসেবে গঠিত হয়। প্লাটিপাস জাতীয় মোনোট্রিমের ক্ষেত্রে (ডিম পাড়া স্তন্যপায়ী) জরায়ু হল দ্বৈত এবং তারা ভ্রূণকে প্রতিপালন করার চেয়ে ডিমের চারিদিকে আস্তরণ নিঃসরণ করে। এটি পক্ষী এবং সরীসৃপদের শেল গ্রন্থির অনুরূপ, জরায়ু যার সমজাতীয়।

স্তন্যপায়ীদের ক্ষেত্রে, জরায়ুর চারটি রূপ হল: ডুপ্লেক্স, বাইপারটাইট, বাইকর্নুয়েট এবং সিম্প্লেক্স।

ডুপ্লেক্স

         দুটি সম্পূর্ণরূপে পৃথক জরায়ু বর্তমান, প্রতিটির একটি করে ডিম্বনালী থাকে। মার্সুপিয়াল (যেমন ক্যাঙ্গারু, তাসমানিয়ান ডেভিল, অপোসাম প্রভৃতি), রোডেন্ট (যেমন ধেড়ে ইঁদুর, নেংটি ইঁদুর এবং গিনিপিগ), এবং লাগোমর্ফার (খরগোশ এবং বুনো খরগোশ) ক্ষেত্রে দেখা যায়।

বাইপারটাইট

         দুটি জরায়ুই তাদের দৈর্ঘ্যের বেশিরভাগ অংশ জুড়েই পৃথক, কিন্তু তাদের একই জরায়ুমুখ বিদ্যমান। রোমন্থক (হরিণ, মুস, এল্ক), হাইর‍্যাক্স, বিড়াল এবং ঘোড়ার ক্ষেত্রে দেখা যায়।

বাইকর্নুয়েট

         জরায়ুর ঊর্ধ্বাংশ দুটি পৃথক থাকে, কিন্তু নিম্নাংশ দুটি রূপান্তরিত হয়ে একটি অঙ্গ গঠন করে। কুকুর, শূকর, হাতি, তিমি, ডলফিন এবং টারসিয়ার এবং অন্যান্যদের মধ্যে স্ট্রেপসিরাইন প্রাইমেটদের ক্ষেত্রেও লক্ষিত হয়।

সিম্প্লেক্স

         সম্পূর্ণ জরায়ুটিই একটি নির্দিষ্ট অঙ্গ গঠন করে। উচ্চতর প্রাইমেটদের (যেমন মানুষ, শিম্পাঞ্জী) দেহে দেখা যায়। কদাচিৎ, কোনো কোনো স্ত্রীদেহে (মানুষসহ) বাইকর্নুয়েট জরায়ু দেখা যায়, তবে সেটা একটা জরায়ুর গঠনত্রুটির কারণে হয়ে থাকে যেক্ষেত্রে জরায়ুর দুটি অংশ ভ্রূণ গঠনের সময়ে সম্পূর্ণভাবে রূপান্তরিত হতে ব্যর্থ হয়।

প্রাথমিকভাবে স্ত্রী ফিটাসে এবং সাধারণত পুং ফিটাসেও দুটি জরায়ু সাধারণভাবে গঠিত হয় এবং অমরা গঠনকারী স্তন্যপায়ীদের দেহে তারা প্রজাতি অনুসারে আংশিক অথবা সম্পূর্ণরূপে একটি জরায়ুতে পরিণত হয়। দুটি জরায়ু সমন্বিত অনেক প্রজাতির ক্ষেত্রেই একটি জরায়ুই কেবল কাজ করে। মানুষ এবং অন্যান্য প্রাইমেট যেমন শিম্পাঞ্জীদের ক্ষেত্রে একটি সম্পূর্ণরূপে গঠিত জরায়ু অবস্থান করে যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে জরায়ু সম্পূর্ণরূপে একটি একক হিসেবে গঠনলাভ করতে পারে না।

অতিরিক্ত চিত্র

১. ভালভা; ৯. যোনি; ১৪. জরায়ু: অংশ: ১৫. জরায়ুমুখ ১৬. দেহ এবং ১৭. ফান্ডাস। ১৮. ছিদ্র: বহিঃস্থ এবং অন্তঃস্থ; ১৯. জরায়ুমুখের রন্ধ্র ২০. জরায়ু গহ্বর; স্তর: ২১. এন্ডোমেট্রিয়াম; ২২. মায়োমেট্রিয়াম এবং ২৩. পেরিমেট্রিয়াম২৪. ফ্যালোপিয়ান নালি ৩০. ডিম্বাশয় ৩১. ভিসেরাল পেলভিক পেরিটোনিয়াম ৩২. বৃহৎ লিগামেন্ট(এর সাথে ৩৫. মেসোমেট্রিয়াম)লিগামেন্ট: ৩৬. গোলাকার রক্তবাহ: ৪০. জরায়ুর ধমনী এবং শিরা অন্যান্য: ৪২. মুত্রনালি ৪৬. ইন্টারনাল ইলিয়াক ভেসেল (পূর্ববর্তী শাখা); ৪৮. উদর গহ্বর

আরও দেখুন

বহিঃসংযোগ


Новое сообщение