Продолжая использовать сайт, вы даете свое согласие на работу с этими файлами.
জাইলিন
জাইলিন(Xylene) একটি বর্ণহীন তরল জৈব যৌগ। এর রাসায়নিক নাম ডাইমিথাইলবেনজিন ( dimethylbenzene)। জাইলিনকে অনেক সময় জাইলল (xylol) ও বলা হয়। গ্রিক শব্দ জাইলো (xylo) মানে কাঠ, সেখান থেকে জাইলিন নামটি এসেছে। জাইলিনের রাসায়নিক সংকেত (CH3)2C6H4 অর্থাৎ একটি বেনজিন রিং -এ দুটি মিথাইল মূলক যুক্ত। মিথাইল মূলকগুলির অবস্থানের উপর নির্ভর করে তিন ধরনের ডাইমিথাইলবেনজিন হয়। এগুলি সমাবয়বী ( isomers)। সেই হিসেবে জাইলিন তিন ধরনের। তাই জাইলিন বলতে এই তিন ধরনের জাইলিনের যে কোন একটি বা একাধিক জাইলিনের মিশ্রণ বোঝায়। একাধিক জাইলিনের মিশ্রণের ক্ষেত্রে জাইলিনস্ ( xylenes) শব্দটি বেশি ব্যবহার হয়।
প্রাপ্তি এবং উৎপাদন
জাইলিনস্ একটি গুরুত্বপূর্ণ পেট্রোলিয়ামজাত রাসায়নিক। অর্থাৎ খনিজ তেলে পাওয়া যায়। অশোধিত পেট্রোলিয়ামে শতকরা 0.5–1ভাগ মাত্রায় জাইলিনস্ থাকে। তবে এটি নির্ভর করে পেট্রোলিয়াম উৎসের উপর। ক্যাটালাইটিক রিফরমিং পদ্ধতির সাহায্যে পেট্রোলিয়ামের থেকে বেনজিন, টলুইন ও জাইলিনস্ এর মিশ্রণ আলাদা করা হয়। এই মিশ্রণের বাণিজ্যিক নাম হল বিটিএক্স (BTX)। এই মিশ্রণ থেকে আংশিক পাতনের সাহায্যে জাইলিনস্ উৎপন্ন করা হয়। কয়লার অন্তর্ধূম পাতনের সময় যে আলকাতরা পাওয়া যায়, তার থেকেও আংশিক পাতনের সাহায্যে জাইলিন পাওয়া যায়।
গ্যাসোলিন ও বিমান জ্বালানী উৎপাদনের সময় অল্প পরিমানে জাইলিনস্ও পাওয়া যায়। জাইলিনের মিশ্রণ একটু তৈলাক্ত। জাইলিনের বর্ণহীন মিশ্রণ সাধারনতঃ দ্রাবক হিসাবে ব্যবহৃত হয়। প্রতি বছর কয়েক লক্ষ টন জাইলিন উৎপাদন করা হয়।
ইতিহাস
1850 সালে ফরাসি রসায়নবিদ অগাস্টে আন্দ্রে থমাস ক্যাওরাস্ (Auguste André Thomas Cahours) সর্বপ্রথম কাঠের অন্তর্ধূম পাতন থেকে উৎপন্ন উদ্বায়ী পদার্থগুলিকে ঠান্ডা করে এক ধরনের হালকা তেল ( Light Oil) পান। তার থেকে তিনি জাইলন আবিষ্কার করেন। কাঠের অন্তর্ধূম পাতন থেকে এটি পেয়েছিলেন বলে এই জৈব পদার্থটির নাম দেন জাইলিন। তবে তাঁর দেওয়া জাইলিনের রাসায়নিক সংকেত পরে ভুল প্রমাণিত হয়। অবশ্য সেইসময় রসায়নবিদরা কার্বনের পারমাণবিক ভর ১২ বদলে ৬ ধরতেন, তাই এই ভুল হয়েছিল।
সমাবয়বী
জাইলিনের তিনটি সমাবয়বী (isomers) দেখা যায়। এই সমাবয়বীগুলিকে অর্থো (ortho), মেটা(meta), প্যারা(para) এই ভাবে চিহ্নিত করা হয়। তাই বেনজিন রিং-এ মিথাইল মূলক দুটির অবস্থানের উপর জাইলিনের নাম নির্ভর করে। সেই হিসাবে তিন রকম জাইলিনের নাম হলো অর্থো-জাইলিন, মেটা-জাইলিন ও প্যারা-জাইলিন। তিনটি সমাবয়বীর মধ্যে প্যারা সমাবয়বীটি বাণিজ্যিকভাবে বেশি গুরুত্বপূর্ণ যেহেতু এটিকে জারিত করে টেরিথ্যালিক অ্যাসিড তৈরি করা যায়।
বাণিজ্যিক উৎপাদন
জৈব যৌগ টলুইন এবং বেনজিনকে মিথাইলেশন বিক্রিয়া করেও জাইলিন তৈরি করা হয়। বাণিজ্যিকভাবে যে জাইলিন তৈরি হয় তাতে সাধারণতঃ শতকরা ৪০ থেকে ৬৫ ভাগ মেটা- জাইলিন (m-xylene) এবং শতকরা ২০ ভাগ পর্যন্ত অর্থো-জাইলিন (o-xylene), প্যারা-জাইলিন (p-xylene) এবং ইথাইল বেনজিনের মিশ্রণ থাকে। প্যারা-জাইলিন বেশি দামি বলে এর উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বিশেষ পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া হয়।
ধর্ম
জাইলিনের রকমভেদের উপর এর ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম নির্ভর করে। যেমন, মেটা-জাইলিনের গলনাঙ্ক −৪৭.৮৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, প্যারা-জাইলিনের গলনাঙ্ক ১৩.২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস কিন্তু অর্থো-জাইলিনের গলনাঙ্ক −২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জাইলিনের ঘনত্ব ০.৮৭ গ্রাম/মিলিলিটারের কাছাকাছি। অর্থাৎ জলের থেকে হালকা। বাতাসের দশ লক্ষ ভাগের মধ্যে ০.০৮ ভাগ থেকে ৩.৭ ভাগ জাইলিনের বাষ্প থাকলেও এর গন্ধ আমরা অনুভব করি। তেমনি আবার দশ লক্ষ ভাগ জলে ০.৫৩ ভাগ থেকে ১.৮ ভাগ জাইলিন থাকলে তার গন্ধ টের পাওয়া যায়।
ব্যবহার
টেরিথ্যালিক অ্যসিড এবং এর অনুষঙ্গ যৌগ
টেরিথ্যালিক অ্যাসিড ( terephthalic acid ) এবং ডাই-মিথাইল টেরিথ্যালেট(dimethyl terephthalate) এই দুই জৈব যৌগ তৈরি করার প্রধান উপাদান হিসাবে প্যারা-জাইলিন ব্যবহার করা হয়। এই টেরিথ্যালিক অ্যাসিড এবং ডাই-মিথাইল টেরিথ্যালেট আবার মোনোমার অর্থাৎ একক অণু হিসাবে পলিইথিলন টেরিথ্যালেট (PET) প্লাস্টিক উৎপাদনে ব্যবহার হয়। পলিইথিলন টেরিথ্যালেট থেকে প্লাস্টিকের বোতল এবং পলিএষ্টার নামে কৃত্রিম তন্তু তৈরি হয়। এই পলিএষ্টার তন্তু থেকে তৈরি হয় জামাকাপড়। তাই প্যারা-জাইলিন উৎপাদনের শতকরা ৯৮ভাগ এবং সমগ্র জাইলিনস্ উৎপাদনের অর্দ্ধেকটাই প্লাস্টিক এবং বস্ত্রশিল্পে ব্যবহার হয়ে যায়।
অর্থো-জাইলিন থেকে থ্যালিক অ্যানহাইড্রাইড ( phthalic anhydride ) জৈব যৌগ তৈরি করা হয়। মেটা-জাইলিনের থেকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আইসোথ্যালিক অ্যাসিড তৈরি করা হলেও এর চাহিদা কম থাকায় বেশির ভাগ মেটা-জাইলিনকে অর্থো এবং প্যারা-জাইলিনে রূপান্তরিত করা হয়।
দ্রাবক এবং বাণিজ্যিক ব্যবহার
অর্থো, মেটা ও প্যারা জাইলিনের মিশ্রণ দ্রাবক হিসাবে ব্যবহার হয়। তাই বাজারে এটি জাইলিনস্ অথবা জাইলল নামে বেশি পরিচিত।অনেক সময় জাইলিন দ্রাবকে অল্প পরিমাণে ইথাইল বেনজিন অশুদ্ধি হিসাবে থেকে যায়। জাইলিনের মিশ্রণ বর্ণহীন এবং মিষ্টি গন্ধযুক্ত। তবে তীব্র জ্বলনশীল। চামড়া ও রাবার শিল্পে জাইলিন ব্যবহার হয়। লিখবার কালি ও আঠা (adhesives) তৈরিতে জাইলিনের ব্যবহার দেখা যায়।
রং এবং বার্নিশ লাগাবার পর যেখানে ধীরে ধীরে শুকানর প্রয়োজন হয় সেইসব ক্ষেত্রে জৈব তরল টলুইনের পরিবর্তে জাইলিন ব্যবহার করা হয়। ইস্পাত এবং ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি পরিষ্কার করতে জাইলিন ব্যবহার করা হয়। দাঁতের রুট ক্যানেল চিকিৎসায় রবার জাতীয় পদার্থ গাটা পারচা (gutta percha) দ্রবীভূত করতে জাইলিন ব্যবহার করা হয়।
পেট্রোলিয়াম শোধনাগার কারখানায় প্যারাফিন মোম উৎপাদনের সময় কোন কারণে ঐ মোম পাইপলাইনের মধ্যে জমে গেলে যে প্যারাফিন দ্রাবকের সাহায্য নেওয়া হয় তাতে জাইলিন থাকে।
পরীক্ষাগারে ব্যবহার
পরীক্ষাগারে রাসায়নিক বিক্রিয়া পাত্র ( reaction vessels ) কে ঠাণ্ডা করতে শুষ্ক বরফের সঙ্গে জাইলিন ব্যবহার করা হয়। হাল্কা অণুবীক্ষণ যন্ত্রে পরীক্ষার সময় যে সিন্থেটিক তেল ব্যবহার হয় তাকে সরাতে দ্রাবক হিসাবে জাইলিন কাজে লাগে।কলাস্থানবিদ্যা (histology)-য় জীবদেহের বিভিন্ন কলা-র গঠন, অবস্থান ও কাজ সম্বন্ধে পরীক্ষার সময় বিভিন্ন কলা পরিষ্কারের কাজে জাইলিনের ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে।
অন্য জৈব যৌগের কাঁচামাল
টেরিথ্যালিক অ্যাসিড তৈরির জন্য জাইলিন কাঁচামাল হিসাবে সব থেকে বেশি ব্যবহার হয়। তবে কিছু পরিমাণ জাইলিন কাঁচামাল হিসাবে অন্য জৈব যৌগ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। যেমন জাইলিন সঙ্গে ক্লোরিনের বিক্রিয়া ঘটিয়ে জাইলিন ডাইক্লোরাইড তৈরি করা হয়। তেমনি আবার ব্রোমিনের সঙ্গে বিক্রিয়া ঘটিয়ে জাইলাইল ব্রোমাইড (xylyl bromide) উৎপন্ন করা যায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় এই যৌগটি কাঁদানে গ্যাস (tear gas) হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছিল।
স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা
জাইলিন দাহ্য পদার্থ। এর মাঝারি মানের বিষক্রিয়া রয়েছে। প্রাণীদের ক্ষেত্রে LD50 -র মান প্রতি কেজিতে ২০০ থেকে ৫০০০ মিলিগ্রাম।
জাইলিনের বাষ্প শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে মানবদেহে প্রবেশ করলে তার প্রভাবে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র ( central nervous system) অবসাদগ্রস্থ হতে পারে। তার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির মাথাব্যাথা, মাথাঘোরা, বমিভাব, বমি প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দেয়। তবে লক্ষণগুলি নির্ভর করে জাইলিনের বাষ্পের মাত্রার উপর। বাতাসের দশ লক্ষ ভাগে একশ ভাগ ( ১০০ পিপিএম) জাইলিনের বাষ্প থাকলে আক্রান্ত ব্যক্তির বমিভাব অথবা মাথাব্যাথা হয়। এই মাত্রা দু’শ ভাগ ( ২০০ পিপিএম ) থেকে পাঁচশ ভাগ( ৫০০ পিপিএম) হলে খুব বেশি মাথাঘোরা, দূর্বলতা, উত্তেজিতভাব, বমি, ধীর প্রতিক্রিয়া প্রভৃতি লক্ষণ প্রকাশ পায়।