Мы используем файлы cookie.
Продолжая использовать сайт, вы даете свое согласие на работу с этими файлами.

দুঃখ

Подписчиков: 0, рейтинг: 0
১৬৭২ সালের খ্রিস্টের সমাহিতকরণ ভাস্কর্য, যাতে মেরি ম্যাগডালিনকে কাঁদতে দেখা যাচ্ছে।

দুঃখ হল প্রতিকূলতা, ক্ষতি, নিরাশা, শোক, অসহায়তা, হতাশা প্রভৃতি বিভিন্ন অনুভূতির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা মানসিক যন্ত্রণার এক বিমূর্ত প্রকাশ। দুঃখে মানুষ চুপচাপ কিংবা অবসন্ন হয়ে পড়ে এবং অন্যের থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নেয়। হতাশা, যার কারণ হিসেবে গুরুতর অবসাদজনিত ব্যাধি বা পারসিসটেন্ট ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডারকে দায়ী করা হয়, তা আসলে দুঃখেরই অন্যতম চরম একটি রূপ। কান্নার মাধ্যমে দুঃখের ইঙ্গিত পাওয়া যেতে পারে।

পল একম্যান বর্ণিত "ছটি প্রাথমিক অনুভূতির" মধ্যে আনন্দ, রাগ, বিস্ময়, ভয় ও বিরক্তির সঙ্গে এক পঙক্তিতে রয়েছে দুঃখও।

শৈশব

দুঃখী মেয়েরা। ছবি পাওলো মন্টি, ১৯৫৩

দুঃখ হল শৈশবের এক অতিপরিচিত অভিজ্ঞতা। কখনও কখনও, দুঃখ হতে হতাশার উদ্রেক হতে পারে। কিছু পরিবারে (লিখিত বা অলিখিতভাবে) এই নিয়ম জারি করা থাকে যে, কোনোমতেই "দুঃখ করা চলবে না"। কিন্তু রবিন স্কিনারের মতে, এতে উল্টে সমস্যা হতে পারে, কারণ তার যুক্তিতে, দুঃখের প্রকাশ্যে ব্যাঘাত ঘটলে মানুষ পরবর্তীকালে অন্তঃসারশূন্য এবং মানসিকভাবে বিচলিত তথা বাতিকগ্রস্ত হয়ে পড়ে। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ টি.বেরি.ব্র্যাজেল্টনের কথা মতে, দুঃখ জিনিসটাকে যথাযথ গুরুত্ব দিলে পরিবারের পক্ষে আরও জটিল আবেগজনিত সমস্যার হদিশ পেতে বরং সুবিধাই হয়।

মায়ের উপর সন্তানের আদি চিরন্তন নির্ভরতার পর্যায় ছেড়ে ধীরে ধীরে স্বাবলম্বীতার দিকে এগোনোর যে স্বাভাবিক যাত্রাপথ, তাতে অংশীদার হয় দুঃখ। যতবার শিশু একটু একটু করে ছেড়ে যায়, ততবার একটু একটু করে অপ্রাপ্তির সঙ্গে যুঝতে হয় তাকে। এবার মা যদি এই ছোট ছোট যন্ত্রণাগুলোর মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ান, তবে শিশুও হয় তো কোনোদিন নিজে থেকে দুঃখের মুখোমুখি হতে পারবে না। ব্র্যাজেল্টনের মত অনুযায়ী, মাত্রাতিরিক্ত উদ্দীপনা যোগানো হলে প্রকৃতপক্ষে শিশুর দুঃখবোধকেই ছোট করে দেখা হয়। সেলমা ফ্রেইবার্গ বলছেন যে, একজন শিশুর পক্ষে কোনো ক্ষতিকে সম্পূর্ণ ও গভীরভাবে অনুভব করার যে অধিকার,  তাকে সম্মান জানানোটা খুব জরুরি।

মার্গারেট মলার আবার অবিরাম কর্মব্যস্ততার মধ্য দিয়ে দুঃখকে নিবৃত্ত করার চেয়ে বরং তাকে গভীরভাবে অনুভব করাকেই কৃতিত্ব হিসেবে দেখেছেন। দুঃখে চোখের জল ফেলার মধ্যে একইভাবে সারা জীবনের অমূল্য সাংগীতিক অনুভূতিগুলোর মূলস্রোত দেখতে পেয়েছেন ডি.ডব্লিউ.উইনিকট।


স্নায়ুতন্ত্র

দুঃখের পিছনে থাকা স্নায়ুবিজ্ঞানকে নিয়ে বহু গবেষণা হয়েছে। আমেরিকান জার্নাল অফ সাইকিয়াট্রির মতে মধ্য ও পশ্চাদ্বর্তী টেম্পোরাল কর্টেক্স, ল্যাটেরাল সেরিবেলাম, সেরিবেলার ভার্মিস, মিডব্রেন, পুটামেন এবং কডেট সংলগ্ন অঞ্চলের দ্বিপার্শ্বীয় ক্রিয়ার বৃদ্ধির সঙ্গে দুঃখের যোগ বর্তমান। জোস.ভি.পার্ডো এই ক্ষেত্রে M.D এবং Ph.D র অধিকারী এবং সংজ্ঞানাত্মক স্নায়ুবিজ্ঞানের (কগনিটিভ নিউরোসায়েন্স) উপর গবেষণার নেতৃত্বে আছেন। তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা সাতজন সাধারণ পুরুষ ও মহিলার মনে দুঃখের বিষয়ে ভাবার মধ্যে দিয়ে দুঃখ জাগাতে সক্ষম হন। তারা লক্ষ্য করলেন, বাইল্যাটেরাল ইনফেরিয়র এবং অরবিটোফ্রন্টাল কর্টেক্স অংশে মস্তিষ্কের সক্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। আবেগতাড়িত চলচ্চিত্রের টুকরো টুকরো অংশ দেখিয়ে দুঃখ জাগানো হয়েছিল একটি সমীক্ষায়, যেখানে অনুভূতির সঙ্গে জড়িত মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের সক্রিয়তা বৃদ্ধি ঘটনা লক্ষ্য করা গিয়েছে, বিশেষত প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্সে, ব্র্যাডম্যান এরিয়া ৯ নামক অঞ্চলে এবং থ্যালামাসে। এছাড়াও উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা গিয়েছিল বাইল্যাটেরাল অ্যান্টেরিয়র টেম্পোরাল গঠনে।

সামলানোর উপায়

একজন ব্যক্তি হাত দিয়ে মুখ ঢেকে দুঃখ প্রকাশ করছেন
মারিয়া এবং পিটারের পরিবারের একটি খোদাই

মানুষ নানা উপায়ে দুঃখকে সামলায়। আসলে এই দুঃখ অনুভূতিটা এতটা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে মানুষকে যুঝে ওঠার প্রেরণা যোগায়। সামলে চলার বিভিন্ন পন্থার মধ্যে কয়েকটা হল : মানুষের কাছ থেকে সামাজিক সহযোগিতা পাওয়া, এবং/বা পোষ্যের সঙ্গে সময় কাটানো, পছন্দের তালিকা বানানো কিংবা দুঃখ প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে কোন কাজের মধ্যে নিজেকে জড়িয়ে রাখা। দুঃখ পেলে কিছু মানুষ আবার সমাজের বৃত্ত থেকে খানিকটা বিরতি নিয়ে নেয়, যাতে সেই ফাঁকে দুঃখের কবল থেকে খানিকটা রেহাই পেতে পারে।

যদিও অনেক অবাঞ্ছিত অনুভূতির মতই মানুষ দুঃখকেও টলিয়ে দিতে চায়, তবু নানা কৌশলে তাকে সামলাতে গিয়ে সেই দুঃখই বরং এঁটে বসে থাকে অনেক সময়। তখন স্মৃতি রোমন্থন করা, দুঃখ ভোলার খাতিরে "রঙিন তরলের নেশায় ডুবে যাওয়া" কিংবা চিরতরে বিচ্ছিন্নতার কামনা পেয়ে বসে মানুষকে। সেক্ষেত্রে বিকল্প পথ হিসেবে বেছে নেওয়ার সময় সংজ্ঞানাত্মক আচরণীয় চিকিৎসা (কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি) অনুযায়ী, হয় নেতিবাচক চিন্তাগুলোর দিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে হবে, আর নয় তো মনোযোগ ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো কোনো ইতিবাচক ঘটনার উত্থাপন করতে হবে।

মনোযোগ আর ধৈর্য থাকলে দুঃখও মানুষের কাছে নিঃসঙ্গ সময়ে শেখার অনবদ্য মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে। "দুঃখ নিয়েও বাঁচা যায়"— মানসিক সহায়তার মাধ্যমে এই তাগিদটা যোগানো যদিও আরো বেশি কার্যকরী। এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গির পিছনে এই বিশ্বাস লুকিয়ে থাকে যে, সেই ক্ষয় (অন্তরের অন্তস্থল থেকে অনুভব করা গেলে) আমাদের উজ্জীবিত হওয়ার চেতনাকে এবং ফের বহির্জগতের সঙ্গে একাত্মতাকে টেনে আনে।

চোখের মণির মাধ্যমে সহানুভূতি

চোখের মণির আকার দুঃখের নির্দেশক হতে পারে। ছোট মণিযুক্ত একটা দুঃখী-দুঃখী মুখের ক্ষেত্রে মণি যত ছোট হয়, তত বেশি দুঃখী বলে মনে করা হয়। ছোট মণিযুক্ত দুঃখী মুখ দেখতে গিয়ে একজন মানুষের চোখের মণিও একইভাবে ছোট হয়ে যায়। তবে মানুষ যখন নিরপেক্ষ, আনন্দিত বা রাগী অভিব্যক্তিযুক্ত মুখের দিকে তাকায়, তখন এমনটা হয় না। কারোর চোখের মণি অন্যের মণির সঙ্গে সঙ্গে যতটা পাল্টে যায়, সে ততটাই বেশি সহমর্মী। তবে অটিজম বা সাইকোপ্যাথির মত অসুস্থতায় মুখের দুঃখজনিত অভিব্যক্তিগুলো বেশ চাপা ও সূক্ষ্ম হয়, যেটা প্রকৃতপক্ষে এই বোঝায় যে, ওদের সঙ্গে একই স্তরে সহমর্মী হতে গেলে মৌখিক প্রকাশের বাইরে গিয়ে অন্য পথে বেশি করে পা বাড়াতে হবে।

কণ্ঠস্বরের অভিব্যক্তি

DIPR এর বিজ্ঞানী স্বাতী জোহরের মতে, "চলতি কথাবার্তা এবং কার্যক্রমের প্রণালী দ্বারা শনাক্তকরণ" করা যায় দুঃখের। মানুষের কন্ঠস্বরে অন্য আবেগের থেকে দুঃখকে পৃথক করার ক্ষেত্রে, মূল গড় বর্গীয় শক্তি, শব্দের মাঝের নীরবতা এবং কথা বলার গতি - ইত্যাদির পরিমাপ করতে হয়। মৌলিক কম্পাঙ্কের পরিবর্তনশীলতা(f⁰) এবং গড় মানের অবনমনের মাধ্যমে এই যোগাযোগ সম্ভব হয়। এক্ষেত্রে কম তীব্রতার কণ্ঠস্বরের সাথে সংযোগ রাখা হয়, এবং f⁰-কে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমানোও হয়। শ্রীমতি জোহরের যুক্তিতে "দুঃখ পেলে, ধীর ও উচ্চ কম্পাঙ্কের শক্তিযুক্ত নিচু স্বর উৎপন্ন হয়"। একইভাবে, "ধীর লয়, অল্প কথা ও স্বরের মাঝারি তীব্রতা হল নিম্ন শক্তিস্তরীয় দুঃখের লক্ষণ"।

ক্লাউস শিয়েরা-র ব্যাখ্যা অনুযায়ী, দুঃখ হল "মানুষের গলার আওয়াজে সবচেয়ে ভালো ভাবে প্রকাশ পাওয়া অনুভূতিগুলো"-র মধ্যে অন্যতম। যদিও সেটা "মুখের অভিব্যক্তির তুলনায় বেশ খানিকটা কম"। শিয়েরা-র করা একটা সমীক্ষায় দেখা গেছে, পাশ্চাত্য দেশে মুখ ও কথার অভিব্যক্তি দেখে যথাক্রমে ৭৯ ও ৭১ শতাংশ ক্ষেত্রে নির্ভুলভাবে দুঃখকে চিহ্নিত করা যায়। অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে এই ফলাফল ছিল যথাক্রমে ৭৪ এবং ৫৮ শতাংশ।

সাংস্কৃতিক অন্বেষণ

চিন্তায় নিমগ্নতা, ছবি উইলহেম অ্যামবার্গ। একজন দুঃখি ব্যক্তি চুপচাপ থেকে বা অবসন্ন হয়ে নিজের ভাব প্রকাশ করতে পারে এবং নিজেকে অন্যদের থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে।

রেনেসাঁ বা নবজাগরণের যুগে নিজের লেখা 'দি ফেইরি কুইন'-এ দুঃখকে আধ্যাত্মিক সমর্পণের চিহ্ন হিসেবে ব্যক্ত করেছিলেন এডমান্ড স্পেনসার।

জে.আর.আর.টোলকিন মনে করতেন, "আশা কিংবা নিরাশার তুচ্ছতর প্রলোভনের চেয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞভাবে দুঃখকে বরণ করে নেওয়াই শ্রেয়"। তারই জলজ্যান্ত প্রতিফলন হিসেবে "দ্য লর্ড অফ দ্য রিংস"-এ দুঃখ এবং নিরানন্দকে পৃথকভাবে দেখিয়েছেন তিনি।

জুলিয়া ক্রিস্টেভার মতে, "বহুবিচিত্র মানসিক স্থিতি বা মেজাজ, হরেক কিসিমের দুঃখ, সেই দুঃখ বা শোকের অনুতাপ, আত্মশুদ্ধি — এই সবকিছু সেই মনুষ্যত্বেরই ছাপ, যা প্রকট নয় ঠিকই, তবে অন্তঃসলিলা, যা লড়ার জন্য মুখিয়ে থাকে এবং যা সবসময়ই সৃজনশীল"।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাবনায়, দুঃখ জীবনের এক অনন্য অঙ্গ। তাই তিনি বলেছেন, "আমৃত্যু দুঃখের তপস্যা এ জীবন"। তার জীবনচেতনা, সাহিত্য, গান প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বারবার দুঃখের কথা উঠে এসেছে। রবীন্দ্রনাথের জীবনেও দুঃখ বারবার এসেছে, তার মধ্যে বেশিরভাগ সময়ই তা আছড়ে পড়েছে মৃত্যুশোকের রূপ ধরে। মৃত্যু বারবার প্রিয়জনের সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটিয়েছে তার। তবু সেই ক্ষয়ের মধ্যেই অক্ষয়ের সন্ধান তিনি করেছেন। তার চেতনায় যেন "দুঃখ বলে 'রইনু চুপে তাঁহার পায়ের চিহ্নরূপে'...."। এমন বহু গানে তিনি দুঃখকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ দিয়ে উপলব্ধি করার চেষ্টা করেছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রবীন্দ্রনাথের পূজা পর্যায়ে উপপর্যায় হিসেবে এসেছে 'দুঃখ'। সেই উপপর্যায়ের একটি গানে তিনি দুঃখকে সমর্পণ করছেন এই বলে যে,

" দিন ফুরালে, জানি জানি, পৌছে ঘাটে দেব আনি
আমার দুঃখ দিনের রক্তকমল তোমার করুণ পায়ে।।"

রবীন্দ্রনাথের জীবনে, ভাবনায় এবং লেখায় কীভাবে দুঃখ এসেছে, তা নিয়ে বহু চর্চাই হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তার 'শেষ লেখা' কাব্যগ্রন্থের একটি কবিতায় তিনি লিখেছেন,

" দুঃখের আঁধার রাত্রি বারে বারে
এসেছে আমার দ্বারে;
একমাত্র অস্ত্র তার দেখেছিনু
কষ্টের বিকৃত ভান, ত্রাসের বিকট ভঙ্গি যত—
অন্ধকার ছলনার ভূমিকা তাহার। "

আরও দেখুন


Новое сообщение