Продолжая использовать сайт, вы даете свое согласие на работу с этими файлами.
ধাতু দোষ
ধাতু দোষ | |
---|---|
বিশেষত্ব | মনোরোগ বিজ্ঞান |
ধাতু দোষ (ইংরেজি: Dhat syndrome) হচ্ছে ভারতীয় উপমহাদেশের সংস্কৃতিতে প্রথম দেখা যাওয়া এমন একটি অবস্থা যেখানে পুরুষ রোগীগণ দাবি করেন, তারা অকাল বীর্যপাত ও ধ্বজভঙ্গের সমস্যায় ভুগছেন, এবং একই সাথে বিশ্বাস করেন যে তাদের মূত্রের সাথে বীর্য নির্গমন হচ্ছে। এই অবস্থার জন্য এখন অবধি কোনো জৈবিক শারীরবৃত্তিক কারণকে দায়ী করা যায় নি, ধারণা করা হয় এ অবস্থাটি একটি মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা।
হিন্দুধর্মীয় আধ্যাত্মিকতার পরম্পরাতে বীর্যকে "অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তরল" (ভাইটাল ফ্লুইড) হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যৌনক্রীয়া বা স্বমেহনের ফলে এই গুরুত্বপূর্ণ তরল শরীর থেকে বের হয়ে গেলে উদ্বিগ্নতা ও বিষণ্ণতার অনুভূতি তৈরি হয়। প্রায়ই রোগীগণ মূত্রের সাথে সাদা সাদা তরল প্রবাহের কথা বলেন। অন্যান্য সময়ে রোগীগণকে "অতিরিক্ত" স্বমেহনের ধারণা থেকে তৈরি হওয়া অপরাধবোধের কথা বলতেও শোনা যায়।
অনেক চিকিৎসক ধাতু দোষকে ভারতের লোক রোগনির্ণয়সংক্রান্ত শব্দ হিসেবেও দেখেন যাকে বীর্যপাতের সাথে সম্পর্কিত উদ্বিগ্নতা ও স্নায়বিক উদ্বেগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় ও যার সাথে মূত্রের রং এর পরিবর্তন এবং দুর্বলতা ও অবসাদের অনুভূতিও জড়িত। ধাতুদোষকে একটি সংস্কৃতি-সীমাবদ্ধ লক্ষণ হিসেবে দেখা হয় যা (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার) জিরিয়ান , (শ্রীলঙ্কার) প্রামেহা, এবং (চীনের) শেনকুই এর অনুরূপ। ধাতুদোষ অন্যান্য উত্তর-রাগমোচনজনিত রোগ যেমন উত্তর-রতিক্রিয়া বিষণ্ণতা (পোস্ট-কয়টাল ট্রিস্টিস বা PCT), উত্তর-রাগমোচন অসুস্থতা লক্ষণ (পোস্টঅরগাসমিক ইলনেস সিনড্রোম বা POIS), এবং রতিক্রিয়াকালীন মাথাধরার (সেক্সুয়াল হেডেক) সাথে সম্পর্কিত হতে পারে।
উপসর্গসমূহ
তরুণ পুরুষের মাঝে প্রায়ই এমনটা দেখা যায়। যদিও নারীদের মধ্যেও অতিরিক্ত যোনিস্রাব বা লিউকোরিয়ার ফলে এরকম উপসর্গগুলো দেখা যায়। যোনিস্রাবকেও "অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তরল" (ভাইটাল ফ্লুইড) হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
সাধারণত অকাল বীর্যপাত এবং ধ্বজভঙ্গই দেখা যায়। অন্যান্য শারীরিক উপসর্গ যেমন দুর্বলতা, সহজেই অবসাদগ্রস্ততা, অনিদ্রা, নিম্ন মেজাজ, অপরাধবোধ এবং উদ্বিগ্নতা প্রায়ই দেখা যায়। পুরুষেরা কখনও কখনও ব্যক্তিবাচক অনুভূতির কথা বলেন যেমন তাদের পুরুষাঙ্গ খাটো হয়ে গেছে। এই লক্ষণগুলোকে উদ্বিগ্ন ও অবসাদগ্রস্ত মেজাজের অবস্থা হিসেবে সম্পর্কিত করা হয়।
চিকিৎসা
কগনিটিভ বিহ্যাভিওরাল থেরাপি হচ্ছে এই রোগের প্রধান চিকিৎসা। অন্যান্য ক্ষেত্রে কাউনসেলিং, এন্টি-এনজাইটি এবং এন্টিডিপ্রেসেন্ট জাতীয় ওষুধের প্রয়োগ করতেও দেখা গিয়েছে।
ইতিহাস
ধাতু শব্দটি একটি তৎসম শব্দ যার সংস্কৃত রূপ হচ্ছে "धातु"। সুশ্রুত সংহিতায় ধাতু শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়, যার অর্থ হচ্ছে "শরীর গঠনকারী মহৌষধ"। ভারতীয় চিকিৎসক নরেন্দ্র উইগ ১৯৬০ সালে স্বপ্নদোষ বা স্বমেহনের ফলে বা প্রস্রাবের সাথে বীর্যপাতের ফলে তৈরি হওয়া অবসাদ, দুর্বলতা, উদ্বিগ্নতা, ক্ষুধামন্দা, অপরাধবোধ, যৌন অক্ষমতার মনোদৈহিক উপসর্গগুলোকে "Dhat syndrome" হিসেবে চিহ্নিত করেন। আয়ুর্বেদ অনুসারে বীর্যকে শুক্র ধাতু বলা হয়, যা সপ্তধাতু বা সাতটি ধাতুর মধ্যে একটি। বীর্যকে শরীরের অতি গুরুত্বপূর্ণ (vital) উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এরকম উল্লেখ খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দের সাহিত্যে পাওয়া যায়। ধাতুর এই মানসিক সমস্যা চরক সংহিতায় উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে মূত্রের সাথে বীর্যপাতকে শুক্রমেহ (शुक्रमेह) হিসেবে উল্লেখ করা হয়। চীনে ধাতু দোষের সাথে তুলনীয় বিভিন্ন নামের লক্ষণ রয়েছে যেমন, "শেনকুই", শ্রীলঙ্কায় আছে "প্রমেহ" এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে রয়েছে "জিরিয়ান"। ইন্টারন্যাশনাল ক্লাসিফিকেশন অফ ডিজিসেস (ICD-10) অনুসারে ধাতু দোষ হচ্ছে একটি স্নায়ু-বৈকল্য বা নিউরোটিক ডিজর্ডার (কোড এফ৪৮.৮) এবং একটি সংস্কৃতি-নির্দিষ্ট বিকার; (পরিশিষ্ট ২) যা "বীর্য নির্গমনের জন্য হওয়া দুর্বলতা সম্পর্কিত অযৌক্তিক উদ্বেগের" কারণে তৈরি হয়।
সংস্কৃতি-সীমাবদ্ধ লক্ষণ
কোন কোন চিকিৎসক মনে করেন, ধাতু দোষ হয় মানসিক পীড়ার কারণে তৈরি হওয়া দৈহিক বৈকল্যের লক্ষণ হিসেবে চিকিৎসাশাস্ত্রীয় বিষণ্ণতার সংস্কৃতি-সীমাবদ্ধ লক্ষণ, না হয় পাশ্চাত্যের চিকিৎসকদের তাদের অঞ্চলের কোন সমস্যায় আক্রান্ত রোগী সম্পর্কিত অপব্যাখ্যা।
নেপালীয় সংস্কৃতিতেও এটা খুব সাধারণ। তাদের বেশিরভাগই বীর্যপাত এর অভিযোগ নিয়ে আসে এবং "পৌরুষ ক্ষমতা" হারানো নিয়ে চরম উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করে। প্রায়ই একে আবেশজনক রোমন্থন এবং মানসিক পীড়নের দরুণ দৈহিক বৈকল্যের লক্ষণের সাথে সম্পর্কিত করা হয়। অন্যেরা একে স্বতন্ত্র চিকিৎসাশাস্ত্রীয় সত্তা হিসেবে দেখেন যা এতটাও সংস্কৃতি-নির্দিষ্ট নয় যেভাবে সমালোচকগণ বর্ণনা করে থাকেন। তারা একে "সিমেন-লস এনজাইটি" বা "বীর্য-ক্ষয় উদ্বিগ্নতা" লক্ষণের একটি ধরন হিসেবে বর্ণনা করেন যা অন্যান্য প্রাচ্যের সংস্কৃতিতে জিরিয়ান এবং শেনকুই প্রভৃতি হিসেবে এবং পাশ্চাত্যের সংস্কৃতিতে দেখা যায়।
ক্ল্যামিডিয়া সংক্রমণের সাথে ধাতু দোষের সম্পর্ক থাকতে পারে, কারণ ইউরেথ্রার সংক্রমণের ফলেও (ইউরেথ্রাইটিস) একই রকম লক্ষণ দেখা যায়। এরফলে প্রস্রাবের সময় ব্যাথা থাকা (ডিসইউরিয়া) বা না থাকা নির্বিশেষে শিশ্ন থেকে সাদা নির্গমন দেখা যায়।