Продолжая использовать сайт, вы даете свое согласие на работу с этими файлами.
পাম তেল
পাম তেল একধরনের ভোজ্য উদ্ভিজ্জ তেল, যা পাম ফলের মধ্যবর্তী অংশ হতে পাওয়া যায়। উচ্চ বিটা-ক্যারোটিনের কারণে স্বাভাবিকভাবেই পাম তেল লালচে রংয়ের হয়। একই ফলের শাঁস(বীজ) হতে পাম শাঁসের(বীজের) তেল পাওয়া যায়।আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ব্রাজিল অঞ্চলে পাম তেল রান্নায় ব্যবহৃত খুব সাধারণ একটি উপাদান।
ইতিহাস
মানুষের পাম তেল ব্যবহারের ইতিহাস জানার জন্য ফিরে যেতে হবে ৫০০০ বছর পিছনে পশ্চিম আফ্রিকায়। ১৮০০-এর দশকের শেষের দিকে, প্রত্নতাত্ত্বিকরা মিশরের অ্যাবাইডোস (Abydos) এ ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের পুরনো একটি সমাধিতে একটি পদার্থ আবিষ্কার করেন এবং তারা উপসংহারে পৌঁছান যে, এটি মূলত পাম তেল ছিল। এটা মনে করা হয় যে, আরব ব্যবসায়ীরা পাম তেল মিশরে নিয়ে আসেন। আফ্রিকান পাম তেল এর গাছ (Elaeis guineensis) থেকে পাম তেল পশ্চিম এবং মধ্য আফ্রিকার দেশগুলোতে স্বীকৃত হয়েছে এবং এটি ব্যাপকভাবে রান্নার তেল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ইউরোপীয় বণিকরা মাঝে মাঝে পশ্চিম আফ্রিকার ব্যবসায়ীদের সাথে পাম তেল ক্রয় করতো ইউরোপে রান্নার তেল হিসাবে ব্যবহারের জন্য। ব্রিটেনের শিল্প বিপ্লবের সময় যন্ত্রপাতির জন্য পিচ্ছিলকারক (লুব্রিকেন্ট) হিসাবে ব্যবহারের জন্য পাম তেল ব্রিটিশ ব্যবসায়ীদের দ্বারা পরবর্তীতে জনপ্রিয় পণ্য হয়ে ওঠে।সাবান পণ্যগুলির ভিত্তি পাম তেল দিয়ে গঠিত, যেমন লিভার ব্রাদার্স (এখন ইউনিলিভার) এর "সানলাইট" সাবান এবং আমেরিকান পালমোলিভ (Palmolive) ব্র্যান্ড। ১৮৭০ এর দিকে পাম তেল কিছু পশ্চিম আফ্রিকান দেশগুলির রপ্তানির প্রধান অংশ ছিল, যেমন ঘানা এবং নাইজেরিয়া, যদিও এটি ১৮৮০-এর দশকে কোকো (Cocoa) দ্বারা ছাড়িয়ে গিয়েছে।
প্রক্রিয়াকরণ এবং ব্যবহার
অনেক ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাবারে খেজুরের তেল ব্যবহার করা হয় এবং বিভিন্ন উপাদান তৈরিতেও এই তেল কাযে লাগে।
বিশোধক
তেলের মিলগুলো বিভিন্নভাবে পাম তেল পণ্যগুলি পরিশোধন প্রক্রিয়া ব্যবহার করে থাকে।প্রথমে পামকে ভাঙ্গা হয়, স্ফটিককরণ এবং পৃথক প্রক্রিয়ার সাথে সলিড (পাম স্টিয়ারিন) এবং তরল (ওলিন) করা হয়। তারপরে গলনশীল ও রেশম জাতীয় পদার্থ দূর করা হয়। তারপরে তেল ছাঁকন ও ধলাই করা হয়। অনেক কোম্পানি রান্নার তেল হিসাবে পাম তেলকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় পরিশোধন করে বাজারজাত করে।
লাল পাম তেল
১৯৯০ এর দশকের মাঝামাঝি, সেই সময় থেকে লাল পাম তেল তৈরি করা হতো পাম ফল থেকে। শীতকালে পাম তেল জমাট বেধে যেতো এবং পরবর্তিতে রান্নার তেল হিসাবে ব্যবহারের জন্য বোতলজাত করা শুরু হয়েছে। মেয়োনেজ এবং উদ্ভিজ্জ তেল মিশ্রিত হিসাবে অন্যান্য ব্যবহারের পাশাপাশি। মেয়োনেজ এবং উদ্ভিজ্জ তেল হিসাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
পাম ফল থেকে উৎপাদিত তেল বলা হয় লাল পাম তেল বা শুধু পাম তেল। এতে প্রায় ৫০% সম্পৃক্ত চর্বি- পামের পরিমান যথেষ্ট কম এবং ৪০% অসম্পৃক্ত ফ্যাট এবং ১০% পলিয়নস্যাচুরেটেড ফ্যাট।
সাদা পাম তেল
সাদা পাম অয়েল প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং পরিশোধন ফলাফল।পরিমার্জন করার ফলে পাম তেলটি তার গভীর লাল রঙ হারিয়ে সাদা স্বচ্ছ তেলে পরিনত হয়। এটি খাদ্য উৎপাদন বা রান্না করতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় এবং চিনাবাদাম, মাখন এবং চিপস সহ বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাবারগুলিতেও পাওয়া যায়। সাদা তেলে পামের পরিমান কম থাকে। বিভিন্ন হাইড্রোজেনেটেড ফ্যাটগুলির প্রতিস্থাপন উপাদান হিসাবে এটি ব্যবহৃত হয়। ভাজা পণ্য তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়।
উৎপাদন
২০১৬ সালে বিশ্বব্যাপী পাম তেলের উৎপাদন ছিল আনুমানিক ৬২.৬ মিলিয়ন টন, যা ২০১৫ সালের তুলনায় ২.৭ মিলিয়ন টন বেশি। ২০১৬ সালে পাম তেলের উৎপাদন মূল্য ছিল আনুমানিক ৩৯.৩ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছর সংরক্ষিত উৎপাদন চিত্রের তুলনায় ২.৪ বিলিয়ন ডলার (বা +৭%) বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৬২ থেকে ১৯৮২ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী বার্ষিক পাম তেল রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে অর্ধ মিলিয়ন থেকে ২.৪ মিলিয়ন টন এবং ২০০৮ সালে বিশ্বে পাম তেল এবং পাম শাঁসের তেলের উৎপাদিত পরিমাণ ৪৮ মিলিয়ন টন। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার পূর্বাভাস অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী পাম তেলের চাহিদা ২০২০ সালে দ্বিগুণ এবং ২০৫০ সালে তিনগুণ হবে।
চাষাবাদ ও প্রক্রিয়া
এটি বর্ষজীবী উদ্ভিদ। টানা ৬০-৭০ বছর ফল দেয়। ঝড় জলোচ্ছাসে গাছের ক্ষতি হয় না। অন্যান্য গাছ থেকে ১০ গুণ বেশি অক্সিজেন দেয়। ২০ ফুট দূরত্বে ২ ফুট বাই ২ ফুট গর্ত করে মাটির সাথে ৫/৭ কেজি গোবর, ১শ গ্রাম টিএসপি ও ৫০ গ্রাম এমওপি মিশিয়ে চারা রোপন করতে হয়। ফল থেকে হাতে ও মেশিনে তেল সংগ্রহ করা হয়। ফল পানিতে সিদ্ধ করে চিপন দিলে তেল বের হয়।
ব্যবহার
অত্যন্ত সম্পৃক্ত প্রকৃতি তেল। ঘরের ঠান্ডা তাপমাত্রায় এটি জমে যায়। মাখন বা হাইড্রোজেনেশনে উদ্ভিজ্জ তেল হিসাবে সস্তা বা কম খরচে তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয়। ময়দার তৈরি খাবার ও কড়া ভাজা বা চিপস তৈরিতে ব্যবহার করা হয় পাম তেল।
পুষ্টি এবং স্বাস্থ্য
উল্লেখযোগ্য ক্যালোরির উৎস হিসাবে এটি কাজে লাগে। পাম তেল অনেক কিছু রান্নার জন্য প্রধান তালিকায় আছে। বিশ্বব্যপী গড় করে দেখা গিয়েছে, ২০১৫ সালে প্রতিটি মানুষ সাড়ে ৭ কেজি পাম তেল গ্রহণ করেছে। পাম তেল ব্যবহারে রোগের ঝুঁকি আছে, কিন্তু গবেষণায় সেটা খুব কম বলে দেখানো হয়েছে।