Продолжая использовать сайт, вы даете свое согласие на работу с этими файлами.
প্যারাফাইলি
প্যারাফাইলি কথাটা জীববিজ্ঞান আর ভাষাতত্ত্ব উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয় এমন কোনো গোষ্ঠীকে বোঝাতে, যা উৎপত্তির (বা বিবর্তনের) বিচারে কোনো এক বিশেষ বিন্দুতে অন্য কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর থেকে আলাদা হয়ে গেছে। জীববিজ্ঞানের ভাষায়,
প্যারাফাইলেটিক গোষ্ঠী = কোনো সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভূত সমস্ত প্রজাতি - এক বা একাধিক মনোফাইলেটিক গোষ্ঠী।
এই বহির্ভূত মনোফাইলেটিক গোষ্ঠীগুলোর সাপেক্ষে প্যারাফাইলেটিক গোষ্ঠীর প্যারাফাইলি নির্ধারিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, সরীসৃপদেরকে প্রথাগতভাবে পাখি ও স্তন্যপায়ীদের সাপেক্ষে প্যারাফাইলেটিক বিবেচনা করা হয়, কারণ একই পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভূত সমস্ত জীবিত সরীসৃপ ও বিলুপ্ত স্তন্যপায়ী-সদৃশ সরীসৃপ এদের অন্তর্গত, শুধু পাখি ও স্তন্যপায়ী ছাড়া, যারা ঐ পূর্বপুরুষেরই দুই বিশেষ ধারার বংশধর। অন্যান্য পরিচিত প্যারাফাইলেটিক গোষ্ঠীর মধ্যে মাছ আর টিকটিকিরা উল্লেখযোগ্য।
জাতিজনি
মনোফাইলেটিক গোষ্ঠীসমূহের সাথে সম্পর্ক
যে সমস্ত গোষ্ঠী কোনো এক সাধারণ পূর্বপুরুষের সমস্ত উত্তরসূরীকে অন্তর্ভুক্ত করে তাদের মনোফাইলেটিক বলা হয়। একটা মনোফাইলেটিক গোষ্ঠী থেকে এক বা একাধিক 'ক্লেড' বা অন্তর্ভুক্ত ক্ষুদ্রতর মনোফাইলেটিক অংশ সরিয়ে নিলে অবশিষ্ট অংশকে 'প্যারাফাইলি' বা 'প্যারাফাইলেটিক' গোষ্ঠী বলে। এরেশেফস্কি বলেছেন যে প্যারাফাইলি হল এই সরিয়ে নেওয়া ক্ষুদ্রতর গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অ্যানাজেনেসিসের ফল। যেমন, ডাইনোসরেরা হল পাখিদের সাপেক্ষে প্যারাফাইলেটিক, কারণ পাখিদের দেহে এমন অনেক বৈশিষ্ট্য আছে যা ডাইনোসরদের দেহে নেই, এবং এর ফলে পাখিরা সম্পূর্ণ আলাদা একটা শ্রেণী হিসেবে গণ্য হয়।
বিবর্তনের আলাদা আলাদা ধারায় আবির্ভূত কিছু বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যের সাদৃশ্যের ভিত্তিতে যে সমস্ত গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করা হয় তারা হল পলিফাইলেটিক (গ্রিক πολύς [পলিস্]/'বহু')। বৃহত্তর অর্থে এমন যে কোনো ট্যাক্সন বা গোষ্ঠী যা মনোফাইলেটিকও নয় আবার প্যারাফাইলেটিকও নয়, তাদের পলিফাইলেটিক বলা যায়।
এই পরিভাষাগুলোর প্রচলন হয়েছিল ১৯৬০ ও ১৯৭০ এর দশকে, ক্ল্যাডিস্টিক্স বিদ্যার উদ্ভব ও তৎসংক্রান্ত নানা আলোচনার সূত্র ধরে।
প্যারাফাইলেটিক গোষ্ঠীর উদাহরণ
পুরোনো শ্রেণীবিন্যাস ব্যবস্থায় চিহ্নিত অনেক গোষ্ঠীই প্যারাফাইলেটিক, এবং এদের মধ্যে প্রথাগত রাজ্য নির্ভর তত্ত্বটিও পড়ে। এছাড়া মেরুদন্ডীদের প্রথাগত বিভাগগুলোতেও প্যারাফাইলির উপস্থিতি চোখে পড়ার মত। পরিচিত কয়েকটা প্যারাফাইলেটিক গোষ্ঠীর উদাহরণ হলː
- সপুষ্পক উদ্ভিদ-দের মধ্যে দ্বিবীজপত্রীরা প্যারাফাইলেটিক, কারণ তাদের মধ্যে থেকে একবীজপত্রীদের বাদ দেওয়া হয়। আইসিবিএন অনুসৃত শ্রেণীবিন্যাস পদ্ধতিতে কয়েক দশক ধরে "দ্বিবীজপত্রী" নামটার আনুষ্ঠানিক ব্যবহার হয়নি, যদিও ম্যাগনোলিওফাইটার সমার্থক শব্দ হিসেবে এর ব্যবহার আছে। ম্যাগনোলিওফাইটা অর্থাৎ ভূতপূর্ব গুপ্তবীজী উদ্ভিদগোষ্ঠীর মধ্যে দুটো বিভাগকেই ধরা হত। পরবর্তীকালে জাতিজনি শ্রেণীবিন্যাস থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে একবীজপত্রীরা বাস্তবিক এক রকম দ্বিবীজপত্রী পূর্বপুরুষ থেকেই উদ্ভূত। তাই একবীজপত্রীদের বাদ দিলে অবশিষ্ট দ্বিবীজপত্রীরা একটা প্যারাফাইলেটিক গোষ্ঠী।
- আর্টিওড্যাক্টাইলা বর্গটা (যুগ্ম খুরবিশিষ্ট আনগুলেট) প্যারাফাইলেটিক, কারণ এদের মধ্যে থেকে সিটাসিয়ানদের (তিমি, ডলফিন প্রভৃতি) বাদ দেওয়া হয়। আইসিজেডএন নির্দেশক অনুযায়ী দুটো গোষ্ঠীই সমান পর্যায়ের বর্গ। কিন্তু আণবিক স্তরে গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে সিটাসিয়ানরা প্রকৃতপক্ষে আর্টিওড্যাক্টাইল পূর্বপুরুষদের থেকেই বিবর্তিত হয়েছে, যদিও তাদের অভ্যন্তরীণ বিবর্তনের বিভিন্ন ধারা তথা জাতিজনি সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সিটাসিয়ান উত্তরসূরীদের বাদ দিলে অবশিষ্ট আর্টিওড্যাক্টাইলরা অবশ্যই প্যারাফাইলেটিক।
- প্রথাগত শ্রেণীবিন্যাস অনুযায়ী সরীসৃপ শ্রেণীটি প্যারাফাইলেটিক, কারণ এদের মধ্যে থেকে স্তন্যপায়ী এবং পাখিদের বাদ দেওয়া হয়। আইসিজেডএন কোড অনুযায়ী তিনটি ট্যাক্সনই সমান পর্যায়ের শ্রেণী। যদিও স্তন্যপায়ীরা বিবর্তিত হয়েছে স্তন্যপায়ী-সদৃশ সরীসৃপ থেকে, আর পাখিরা এসেছে ডায়াপসিডদের একটা শাখা ডাইনোসর থেকে; আর এই দুই প্রাণীগোষ্ঠীই (স্তন্যপায়ী-সদৃশ সরীসৃপ ও ডাইনোসর) সরীসৃপদের অন্তর্গত।
- ইউক্যারিওটদের বাদ দিলে প্রোক্যারিওটরা প্যারাফাইলেটিক, কারণ ইউক্যারিওটরা তাদেরই উত্তরসূরী। ব্যাক্টেরিয়া ও আর্কিয়া প্রোক্যারিওট, কিন্তু আর্কিয়া ও ইউক্যারিওটরা এক সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে বিবর্তিত যাদের ব্যাক্টেরিয়ার সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। প্রোক্যারিওট/ইউক্যারিওট বিভাজনের ধারণাটির উদ্ভাবক এডুয়ার্ড চ্যাটন, এবং ১৯৩৭ খ্রিঃ তিনি এর প্রবর্তন করার পর ১৯৬২ খ্রিঃ রজার স্ট্যানিয়ার ও সি. বি. ভান নীল কর্তৃক এটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে। উদ্ভিদবিদ্যার নামকরণ সংস্থা (ভূতপূর্ব আইসিবিএন, এখন আইসিএন) ১৯৭৫ খ্রিঃ ব্যাক্টেরিয়ার নামকরণ নিয়ে মাথা ঘামানো বন্ধ করে দেয়। ১৯৮০ এর ১লা জানুয়ারী থেকে প্রোক্যারিওটদের নামকরণের তত্ত্বাবধানে রয়েছে আইসিএনবি (আইসিবিএন/আইসিএন এই কাজটা করে আসছিল ১৭৫৩ খ্রিঃ থেকে)।
- অস্থিবিশিষ্ট মাছ বা অস্টিক্থিসরা প্যারাফাইলেটিক, কারণ অ্যাক্টিনোপ্টেরিজিয়াই ও সার্কোপ্টেরিজিয়াই - এই দুই গোষ্ঠী নিয়ে অস্টিক্থিস গঠিত, এবং চতুষ্পদরা এদের সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভূত হলেও অস্টিক্থিসদের মধ্যে চতুষ্পদদের গণ্য করা হয় না।
প্যারাফাইলেটিক গোষ্ঠীর ব্যবহার
বিবর্তনের ধারায় স্বতন্ত্র কিছু বৈশিষ্ট্যের উদ্ভবের ফলে যখন কোনো জীবগোষ্ঠী তার বৃহত্তর জনিতৃ গোষ্ঠী থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে আলাদা হয়ে যায় (গঠনগত ও আচরণগত দিক দিয়ে), তখন ঐ জনিতৃ গোষ্ঠীর বাকি সদস্যদের বাদ দিয়ে অবশিষ্ট প্যারাফাইলেটিক গোষ্ঠীর চর্চা বেশি যুক্তিযুক্ত হয়। যেমন, নিওজিন যুগে আর্টিওড্যাক্টাইলা বা যুগ্ম খুরওয়ালা আনগুলেটদের বিবর্তন তাদেরই জ্ঞাতি সিটাসিয়া বা তিমি-ডলফিনদের থেকে এত বেশি আলাদা পরিবেশে হয়েছে যে হামেশাই সিটাসিয়াদের বাদ দিয়ে শুধু আর্টিওড্যাক্টাইলার আলোচনা করা হয়। প্রোক্যারিওট গোষ্ঠীটাও আর একটা উদাহরণ। এরাও প্যারাফাইলেটিক কারণ এদের অনেক বংশধরকে (ইউক্যারিওট প্রভৃতি) এদের থেকে আলাদা ধরা হয়, কিন্তু এভাবে আলোচনার সুবিধেও অনেক, কারণ একটা স্পষ্ট বৈশিষ্ট্য এদেরকে ইউক্যারিওটদের থেকে আলাদা করে রেখেছে; তা হল প্রকৃত নিউক্লিয়াসের অনুপস্থিতি।
বিবর্তনের নানা সন্ধিক্ষণেও অনেক প্যারাফাইলেটিক গোষ্ঠীর ভূমিকা ছিল। যেমন, প্রথম চতুষ্পদদের বিবর্তনের ঘটনা এখানে উল্লেখযোগ্য। চতুষ্পদদের পূর্বপুরুষদের চিহ্নিত করার জন্য ব্যবহৃত যে কোনো নাম (মাছ প্রভৃতি) বাধ্যতামূলকভাবে প্যারাফাইলেটিক, কারণ তাদের মধ্যে থেকে চতুষ্পদদের বাদ দেওয়া হয়।
"বিবর্তনীয় গ্রেড" কথাটা মাঝে মাঝে প্যারাফাইলেটিক গোষ্ঠীর সমার্থক শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
পরস্পর সদৃশ অথচ স্বতন্ত্রভাবে বিবর্তিত বৈশিষ্ট্য
মানুষ এবং অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণী জোলো স্কিংক (Southern Water Skink) নামক সরীসৃপের পূর্বপুরুষদের মধ্যে আলাদাভাবে জরায়ুজতা (Vivipary) বা ডিম না পেড়েই সন্তানের জন্ম দেওয়ার ক্ষমতার উদ্ভব হয়েছিল। অন্যভাবে বলতে গেলে, এই দুই প্রজাতির সাম্প্রতিকতম সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে বিবর্তিত অন্তত কোনো একটি শাখায় অণ্ডজ প্রাণীর উপস্থিতি ছিল; যেমন মানুষের বিবর্তনের একটা পর্যায়ে আসা পেলিকোসররা অণ্ডজ ছিল। জরায়ুজতার উদ্ভব পরবর্তীকালে হয়েছে।
স্বতন্ত্রভাবে বিবর্তিত এই রকম বৈশিষ্ট্যকে প্যারাফাইলেটিক বলা যায় না, কারণ প্যারাফাইলি হতে গেলে বাদ পড়া গোষ্ঠীগুলোকে মনোফাইলেটিক হতে হয়। পেলিকোসরেরা মানুষ আর স্কিংকদের সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভূত হয়েছিল, তাই জরায়ুজতাকে তখনই প্যারাফাইলেটিক বলা যেত যদি স্কিংকদের ধারা বাদে বাকি পেলিকোসরেদের সমস্ত উত্তরসূরীরা অণ্ডজ হত। বাস্তবে তা হয়নি, কারণ মানুষও তাদের অন্যতম উত্তরসূরী। তাই মানুষ ও স্কিংক সমেত জরায়ুজ প্রাণীদের গোষ্ঠী প্যারাফাইলেটিক নয়।
প্যারাফাইলি নয়
- উভচর মাছেরা গোষ্ঠী হিসেবে প্যারাফাইলেটিক নয়। দেখতে এক রকম হলেও উভচর মাছেদের বিভিন্ন শাখা বিবর্তনের আলাদা আলাদা ধারা অনুসরণ করে এসেছে। দেখুন অভিসারী বিবর্তন।
- উড্ডয়ন ক্ষমতাহীন পাখিরা প্যারাফাইলেটিক নয়, কারণ তাদের বিভিন্ন প্রজাতিও বিবর্তনের আলাদা আলাদা ধারায় আলাদা আলাদা সময়ে তাদের ওড়ার ক্ষমতা হারিয়েছে।
- পৃষ্ঠপাখনাযুক্ত প্রাণীরা প্যারাফাইলেটিক নয়, কারণ তাদের অন্তর্গত শুশুক গোষ্ঠীর মেসোজোয়িক পূর্বসূরীদের পৃষ্ঠপাখনা ছিল না।
- চতুষ্পদ আর্কোসরেরা প্যারাফাইলেটিক নয়। এদের অন্যতম গোষ্ঠী চতুষ্পদ ডাইনোসরেরা ইওর্যাপ্টর থেকে উদ্ভূত হয়েছিল এবং ইওর্যাপ্টররা ছিল দ্বিপদ (যদিও ইওর্যাপ্টরদের পূর্বসূরীরা আবার ছিল চতুষ্পদ)।
ভাষাতত্ত্ব
প্যারাফাইলির ধারণা ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও প্রযুক্ত হয়েছে, কেননা এই ক্ষেত্রটিতে ক্ল্যাডিস্টিক পদ্ধতিগুলো বিভিন্ন ভাষার তুলনামূলক আলোচনায় সহায়ক। যেমন, ফর্মোসান ভাষাগোষ্ঠীটি অস্ট্রোনেশীয় ভাষাসমূহের একটি প্যারাফাইলেটিক গোষ্ঠী, কেননা এর অন্তর্গত নয়টি শাখা অস্ট্রোনেশীয় ভাষা পরিবারের অন্তর্গত কিন্তু মালয়ো-পলিনেশীয় নয়, আর ভৌগোলিক ভাবে তাইওয়ান দ্বীপে সীমাবদ্ধ।
টীকা
বইপত্র
- Simpson, Michael George (২০০৬)। Plant systematics। Burlington; San Diego; London: Elsevier Academic Press। আইএসবিএন 0-12-644460-9।
বহিঃসংযোগ
- Funk, D. J.; Omland, K. E. (২০০৩)। "Species-level paraphyly and polyphyly: Frequency, cause and consequences, with insights from animal mitochondrial DNA" (পিডিএফ)। Annual Review of Ecology, Evolution and Systematics। 34: 397–423। ডিওআই:10.1146/annurev.ecolsys.34.011802.132421।