Продолжая использовать сайт, вы даете свое согласие на работу с этими файлами.
প্রসবকালীন সহিংসতা
প্রসবকালীন সহিংসতা (অথবা প্রসূতি সহিংতা) বলতে প্রসবকালীন সময়ে গর্ভবতী নারীর প্রতি অপরাধকে নির্দেশ করে। অবহেলা, সম্মান না দেওয়া এবং শারীরিক সহিংসতা এর বিভিন্ন রূপ আছে। এ ধরনের আচরণ নারী অপরাধ হিসেবে এবং নারী অধিকারের লঙ্ঘন হিসেবেও বিবেচিত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এটি একটি পৃথিবীব্যাপী পুনরাবৃত্তিক সমস্যা এবং মাতা ও সন্তানের জন্য ভয়াবহ পরিণাম বয়ে নিয়ে আসতে পারে। প্রসবকালীন সহিংসতার কারণে নারীরা প্রসব পূববর্তী সেবা এবং পরবর্তীতে অন্যান্য সেবা থেকে বঞ্চিত হতে পারে।
প্রসবকালীন সহিংসতার আরো উদাহরণের মধ্যে রয়েছে অনুমোদনহীন সেবা, অগোপনীয় সেবা ,মর্যাদাহীন সেবা, বৈষম্যতা, মাতৃত্বকালীন যত্নের প্রতি অবহেলা এবং বন্দি করে রাখা।কিশোরী অবিবাহিত, নিম্ন আর্থ-সামাজিক মর্যাদার, প্রবাসী, এইচআইভি আক্রান্ত বা জাতিগতভাবে সংখ্যালঘিষ্ঠ্য নারীদের প্রসবকালীন সহিংসতার শিকার হওয়ার আশঙ্কা অধিক।
সংজ্ঞা এবং প্রকারভেদ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রসবকালীন সহিংসতার কোনো চূড়ান্ত বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞা বা পরিমাপ নির্ধারন করা হয়নি। তবে প্রসবকালীন সহিংসতাকে সাধারণত অবহেলাজনিত, শারীরিক নির্যাতন সম্পর্কিত এবং/অথবা প্রসবকালীন সময়ে রোগীর প্রতি স্বাস্থসেবা কর্মীদের অসম্মানজনক আচরণ হিসেবে ব্যাক্ত করা হয়। এ ধারণের আচরণকে নারীর মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
প্রসাবকালীন সহিংসতা বিভিন্ন প্রকারে হতে পারে,যার মধ্যে রয়েছে: অগোপনীয় সেবা ,মর্যাদাহীন সেবা, বৈষম্যতা, প্রত্যক্ষ শারীরিক নির্যাতন, অনুমোদনহীন সেবা, মাতৃত্বকালীন যত্নের প্রতি অবহেলা এবং বন্দি করে রাখা।
বিস্তার এবং প্রভাব
বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা প্রবসকালীন সহিংসতার বিস্তার সম্পর্কে একটি তদন্ত পরিচালনা করে। তাদের গবেষণা থেকে দেখা যায় যে, পৃথিবীব্যাপী হাসপাতালে প্রসবকালে নারীরা প্রায়ই অসম্মানজনক, সহিংসতামূলক এবং এবং অবহেলার অভিজ্ঞতার শিকার হন।
ঘানা, গিনি, মিয়ানমার এবং নাইজেরিয়াকে কেন্দ্র রেখে করা একটি গবেষণায় দেখা যায় যে, পর্যবেক্ষণ করা নারীদের ৪০ শতাংশ এবং জরিপে অংশ নেওয়া নারীদের ৩৫ শতাংশ প্রসবকালে দুর্ব্যবহারের শিকার হন। এছাড়াও কিশোরী, প্রবাসী, সংখ্যালঘিষ্ঠ্য গোষ্ঠির এবং এইচআইভি আক্রান্ত নারীদের প্রসবকালীন সহিংসতার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে বিবেচনা করা হয়।
প্রসবকালে নারীরা খুবই অসহায় হওয়ায় এবং দুর্ব্যবহার থেকে নিজেদের রক্ষা করতে অক্ষম হওয়ায়, প্রসবকালীন সহিংসতা মাতা এবং সন্তান উভয়ের জন্য ভয়ানক হতে পারে। প্রসবকালীন সহিংসতার কারণে নারী এবং তার স্বাস্থসেবা প্রদানকারীদের মধ্যে গড়ে ওঠা সম্পর্কের কারণে তার স্বাস্থ সেবার প্রতি সাধারণ অবিশ্বাস তৈরি হতে পারে। এছাড়াও, প্রসব পূববর্তী সেবা, প্রসবকালে এবং ভবিষ্যতে চিকিৎসা সেবা গ্রহণে অনিচ্ছা সৃষ্টি হতে পারে।
ভৌগোলিক অবস্থা
উত্তর এবং দক্ষিণ আমেরিকা
কিছ উৎস অনুসারে কিছু প্রসূতি বিশেষজ্ঞ এবং স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, বিশেষ করে “দি হাসবেন্ড’স স্টিচ” নামক একটি প্রথা অবলম্বন করত, যাতে প্রসবের সময়ে হওয়া এপিসিওটমি বা প্রাকৃতিক বিচ্ছিন্নতা আটকাতে নারীদের যোনিতে অতিরিক্ত সেলাই দেওয়া হতো। এই প্রথা স্বামীর ভবিষ্যৎ যৌন আনন্দ বৃদ্ধির জন্য অনুশীলন করা হতো বলে ধারণা করা হয় এবং এর কারণে প্রায়ই নারীদের দীর্ঘকালীন ব্যাথা এবং অস্বস্তি অনুভব হতো। এ প্রথাটি উত্তর আমেরিকায় ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল এরকম কোনো প্রমাণ নেই। তবে ব্রাজিলের মতো কিছু আমেরিকা মহাদেশের রাষ্ট্রের এপিসিওটমি সংক্রান্ত গবেষণায় এটির কথা প্রায়ই উল্লেখ করা হয়।
উত্তর আমেরিকার ডাক্তারদের গর্ভবতী নারীদের চিকিৎসার একটি আরো সম্প্রতি দৃশ্য পাওয়া যায়। ধারণা করা হয় যে, প্রসবকালীন সহিংসতার কোনো প্রতিকার আছে এবং কিছু ক্ষেত্রে নারীদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারে বাধা প্রদান করা হয়। যেসকল ক্ষেত্রে নারী এবং ভ্রূণের জীবন বিদাপন্ন, সেসকল ক্ষেত্রে সিজার, এপিসিওটমি এবং ভ্যাকিউম-সহায়ক পদ্ধতির মাধ্যমে নারীদের সেবা প্রত্যাখ্যনের অধিকার রয়েছে। এ ধরনের আক্রমণাত্মক পদ্ধতিতে নারীদের বাধ্য করা হয়, যদিও এ ধরনের বাধ্যবাধকতা অনেক নারীকে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি হয়েছে বলে প্রমাণিত, যারা এটিকে ধষর্নের সাথে তুলনা করেন।
“প্রসূতি সহিংসতা” কথাটি মূলত লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে ব্যবহৃত হয়, যেখানে আইনানুযায়ী এ ধরনের কার্যকলাপ নিষিদ্ধ। আর্জেন্টিনা. পুয়ের্তো রিকো এবং ভেনেজুয়েলা সহ বেশ কিছু লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে এ ধরনের আইন রয়েছে।
২০১২ সালে, মেক্সিকোতে প্রসূতি সহিংসতার একটি গবেষণায় দুটো হাসপাতালে দুই মাস ধরে প্রসব অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণে পাওয়া যায় যে, সেখানে হাসপাতাল জুড়ে শারীরিক সহিংসতা, মৌখিক সহিংসতা এবং বৈষম্যতা প্রকাশ্যে ঘটে। চিকিৎসা কর্মীরা নারীদের সরকার প্রদত্ত বীমা পাওয়ার বিষয়টিকে কেন্দ্র করে তাদের প্রতি সবচেয়ে বেশি বৈষম্য করে।
আফ্রিকা
তানজানিয়ায় প্রসবকালীন সহিংসতার একটি ব্যাপক ইতিহাস আছে। ২০১১ সালে, প্রসবকালীন সহিংসতার ব্যাপকতা কমাতে কথিত মধ্যবর্তীতা কার্যকর হয়েছিল কিনা তা পর্যবেক্ষণ করেন। নারীদের সাক্ষাতকার নেওয়ার সময় তারা তাদের অভিজ্ঞতাকে প্রথমে মাঝামাঝি বা পূর্বের থেকে ভালো বলে। তবে তাদের সহিংসতার বিভিন্ন ধরন দেখানোর পর, অধিকাংশ নারীই প্রসবকালীন সহিংসতার অভিযোগ করে। ২০১৩-২০১৪ সালে, হ্যানা রেটক্লিফ এবং অন্যরা নারীদের প্রসবকালীন অভিজ্ঞতা উন্নতির জন্য কোনো উপায় খুজতে একটি গবেষণা শুরু করেন। তারা “ওপেন বার্থ ডে” চালু করেম যা রোগী এবং সেবা প্রদানকারীদের মধ্যে যোগাযোগ সহজ করে এবং তাদের প্রসব সম্পর্কিত পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে শিক্ষা প্রদান করা হয়। তারা একটি “সম্মানজনক মাতৃসেবা কর্মশালা” তৈরি করেন, যার উদ্দেশ্য রোগী এবং চিকিৎসা কর্মীদের মধ্যে সম্মান বিষয়ক আলোচনার সুযোগ তৈরি করা। তারা দেখলো যে, এই উপায়টি কম ব্যায়ে সম্পূর্ণ পদ্ধতির পুনর্গঠনে সফল হয়েছে। নারীদের প্রসবকালীন অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ সন্তুষ্টির হার বৃদ্ধি পেয়েছে। রেটক্লিফ এর সময়ে স্টিফেনি কুজাওয়াখি এবং অন্যরাও মধ্যবর্তীতা সহ বা ছাড়া একই ধরনের গবেষণা করেন। গবেষণাটির প্রথম অংশ ২০১১-২০১২ সালে সম্পাদিত এবং শেষ অংশ ২০১৫ সালে সম্পাদিত হয়। এ গবেষণা দেখা যায় যে, মধ্যবর্তীতার পরে প্রসবকালীন সহিংসতা এবং সম্মানহানিতার ৬৬% কমে হ্রাস পেয়েছে। গবেষণাটি থেকে দেখা যায় যে, নারীদের প্রসবকালীন সম্মানহানিতার জন্য দায়ী প্রথাগুলো পরির্তনে সম্প্রদায় এবং চিকিৎসা পদ্ধতির সংস্কার সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
এশিয়া
২০১৪-২০১৫ সালে,শ্রীপর্ণা ভোট্টাচার্য এবং টি.কে. সুন্দরী রবীন্দ্রন প্রশ্নের মাধ্যমে ভারতের বারাণসী জেলায় প্রসবকালীন সহিংসতার ব্যাপকতা নির্ণয়ের জন্য প্রশ্নোত্তর পদ্ধতিতে একটি জরিপের করেন। বারাণসী জেলার অন্তর্ভূক্ত নারীদের হাসপাতালে প্রসবের হার বেশি এ ধরনের দুটি এলাকা এই গবেষণার কেন্দ্রে ছিল এবং জরিপটিতে এলাকাটিতে বসবাসকারী নারীদের মধ্যে এলোমেলোভাবে। শ্রীপর্ণা এবং রবীন্দ্রন এর মতে, সহিংসতারমূলক ঘটনা ঘটার হার ২৮.৮ শতাংশ এবং “সহিংসতামূলক আচরণ” কথাটি ছিল বহুল ব্যবহৃত। সবচেয়ে বেশি প্রচলিত সহিংসতার ধরনের মধ্যে ছিল অসম্মানজনক সেবা (১৯.৩%)এবং শারীরিক সহিংসতা (১৩.৪%)। রোগীদের মধ্যে ৮.৫ শতাংশ অবহেলিত হওয়ার, গোপনীয় সেবার অভাব এবং ৪.৯ শতাংশ অপরিচ্ছন্নতার জন্য অপমানের শিকার হওয়ার অভিযোগ করে। শ্রীপর্ণা এবং রবীন্দ্রন আরো উল্লেখ করেন যে, রোগীদের কাছে অন্যায়ভাবে অর্থের দারি করা হয়। আর্থ-সামাজিক অবস্থান এবং সহিংসতার মধ্যে কোনো বড় সম্পর্ক পাওয়া যায়নি, তবে যে নারীরা প্রসবকালে জটিলতার সম্মুখীন হয়, তাদের হাসপাতালে সহিংসতার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা চার গুণ বেশি।
ফাতিমা আলজিউদ এবং তার সহকর্মীরা জর্ডানে প্রসবকালীন সহিংসতা সম্পর্কে গবেষণা করেন, যার উদ্দেশ্য ছিল মূলত অবহেলা এবং মৌখিক সহিংসতা সম্পর্কে গবেষণা। চারটি সরকারি এবং মাতৃ এবং শিশু স্বাস্থ কেন্দ্রে এই গবেষণা পরিচালনা করা হয় এবং এতে ১৮-৪৫ বছরের ৩৯০ জন নারী অংশগ্রহণ করেন। প্রবসকালীন মৌখিক সহিংসতা এবং অবহেলা পরিমাপক অনুযায়ী, শেষ শিশুর প্রসবকালে তাদের ৩২.২ শতাংশ অবহেলা এবং ৩৭.৭ শতাংশ মৌখিক সহিংসতার শিকার হয়। এছাড়াও, তাদের বয়স এবং তাদের প্রতি অবহেলা বা মৌখিক সহিংসতার মধ্যে একটি নেতিবাচক সম্পর্ক পাওয়া যায়।