Продолжая использовать сайт, вы даете свое согласие на работу с этими файлами.
প্রোস্টেট
প্রোস্টেট গ্রন্থি পুরুষ দেহের একটি অংশ যা পুরুষের প্রজননতন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত। কেবল পুরুষদেরই প্রস্টেট গ্রন্থি রয়েছে। এটাকে সচরাচর শুধু প্রোস্টেট হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এর আকার অনেকটা কাজুবাদামের সমান। মূত্রথলির তলদেশে থেকে যেখানে মুত্রনালীর শুরু সেখানটার চারপাশ জুড়ে এই গ্রন্থিটির অবস্থান। এর মধ্য দিয়েই মূত্র এবং বীর্য প্রবাহিত হয়। এই গ্রন্থির মূল কাজ হচ্ছে বীর্যের অন্যতম উপাদান একটি তরল আঠালো পদার্থ সৃষ্টি করা। শুক্রাণু এবং এই তরলের মিশ্রণই বীর্য।
প্রোস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধি
প্রোস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধি একটি রোগ। এর কারণে প্রাথমিকভাবে যেসব উপসর্গ দেখা দেয় সেগুলো হচ্ছে স্বাভাবিক প্রস্রাব নির্গমন প্রক্রিয়ার কিছু পরিবর্তন, যেমন- দিন কিংবা রাতে অথবা উভয় সময় ঘন ঘন প্রস্রাব, প্রস্রাবের ধারা সরু হওয়া, প্রচণ্ড বেগ সত্ত্বেও প্রস্রাবের নির্গমন শুরু হতে দেরি হওয়া, প্রচণ্ড বেগ থাকা সত্ত্বেও তৎক্ষণাৎ প্রস্রাব করতে না পারলে খানিকটা প্রস্রাব বেরিয়ে এসে কাপড়চোপড় ভিজে যাওয়া, প্রস্রাবের পর দীর্ঘসময় ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব নি:সরণ এবং প্রস্রাব করার পর অতৃপ্তি, যেন কিছু প্রস্রাব রয়ে গেল ইত্যাদি। কেবল উল্লিখিত বয়সসীমার মধ্যে এরূপ উপসর্গ হলে প্রাথমিকভাবে প্রোস্টেটের বৃদ্ধি সন্দেহ করা যেতে পারে। বিলম্বিত উপসর্গের মধ্যে অন্যতম হলো প্রস্রাব আটকে যাওয়া, প্রস্রাবের সাথে রক্তপাত ও কিডনির কার্যকারিতা কমে যাওয়া ইত্যাদি। আমাদের দেশে প্রায়ই রোগীরা প্রাথমিক উপসর্গগুলোকে অবজ্ঞা করেন এবং হঠাৎ প্রস্রাব আটকে গিয়ে প্রস্রাবের থলি ফুলে তীব্র ব্যথা ও অস্বস্তি নিয়ে হাসপাতালে আসেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রস্রাবের থলিতে দীর্ঘমেয়াদিভাবে এক লিটারের বেশি প্রস্রাব আটকে থাকে ও পাশাপাশি ঘন ঘন একটু আধটু প্রস্রাব হয় ও ঘুমের মধ্যে প্রস্রাব হয়ে বিছানা নষ্ট হয়। এই অবস্খায় কোনো ব্যথা হয় না বলে অনেকেই এটাকে স্বাভাবিক মনে করেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এসব রোগীই এক সময় দীর্ঘমেয়াদি কিডনি অক্ষমতার উপসর্গ নিয়ে বেহুঁশ অবস্খায় হাসপাতালে আসেন।
চিকিৎসা
প্রোস্টেট বৃদ্ধির কারণে স্বাস্থ্যগত সমস্যা হলে দৈনন্দিন জীবনযাত্রা প্রচণ্ডভাবে বিঘ্নিত হলে কিংবা বিলম্বিত উপসর্গসহ তৎসঙ্গে জটিলতা দেখা দিলে উপযুক্ত ডাক্তারের চিকিৎসা নিতে হবে। এখন পর্যন্ত সর্বজনস্বীকৃত চিকিৎসা হলো অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রোস্টেট গ্রন্থির অপসারণ। তবে প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হলেই অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হবে তা নয়। অনেকের বেলায় প্রাথমিক উপসর্গ দেখা দেয়ার আড়াই থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয় না। এমনকি উপসর্গের প্রকোপ অনেক হ্রাস পায়। এ কারণে একজন বয়স্ক ব্যক্তির এ ধরনের একটি বড় ধরনের অস্ত্রোপচারের আগে অবশ্যই সবকিছু বিবেচনা করা আবশ্যক।
প্রোস্টেট অপসারণ
প্রোস্টেট অপসারণ দু’ভাবে করা যায়। সনাতন পদ্ধতিতে তলপেট কেটে প্রোস্টেটের অপসারণ অথবা মূত্রনালীর ভেতর দিয়ে যন্ত্র ঢুকিয়ে এনডোস্কোপিক পদ্ধতিতে প্রোস্টেট অপসারণ। আধুনিক বিশ্বে এনডোস্কোপিক পদ্ধতিতে ৯০ শতাংশ প্রোস্টেট অপসারণ করা হয়। যে পদ্ধতিতেই অস্ত্রোপচার করা হোক না কেন তা সুনির্দিষ্ট উপসর্গের কারণেই করা হয়-প্রাথমিক, মাধ্যমিক কিংবা বিলম্বিত অবস্থার জন্য নয়। কাজেই প্রাথমিক অবস্থায় অপারেশন করা ভালো ডাক্তারী শাস্ত্রে এমন কোনো চূড়ান্ত প্রস্তাব নেই।
অপসারণ পরবর্তী জটিলতা
শল্যচিকিৎসা বা অপসারণের উদ্দেশ্যই হলো রোগীকে সমস্যামুক্ত করে জীবনযাত্রার মান স্বাভাবিক পর্যায়ে উন্নীত করা। তবে যে কোনো অপারেশনের মতো প্রোস্টেটের অপারেশনেও বেশ কিছু ঝুঁকি থাকে এবং অপারেশনের কারণে স্বল্পমেয়াদি বা দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা দেখা দিতে পারে। ঝুঁকি এই কারণে যে বার্ধক্যজনিত অনেক স্বাস্খ্যগত সমস্যা যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ইত্যাদি প্রায়ই প্রোস্টেট রোগীদের মধ্যেও থাকে যা অপারেশন ও এনেসথেসিয়া প্রয়োগজনিত শারীরিক-মানসিক চাপ কাটিয়ে ওঠায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করতে পারে। তা ছাড়া অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ ও নিয়ন্ত্রণাতীত সার্বক্ষণিক প্রস্রাব নির্গমন ইত্যাদি অবস্থা অপারেশনের পর সংকটজনক সমস্যা হিসেবে দেখা দিতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হিসেবে প্রোস্টেট গ্রন্থির অবস্থানে মূত্রনালী শীর্ণ হয়ে পুনর্বার প্রস্রাব নির্গমনের সমস্যা কিংবা প্রস্রাব আটকে যেতে পারে। এছাড়া যৌন অক্ষমতা পরবর্তীকালে এই রোগের জটিলতা হিসেবে দেখা দিতে পারে।
বিলম্বজনিত জটিলতা
প্রোস্টেট অপসারণের সুনির্দিষ্ট প্রয়োজন হলে তা যথাসময়ে করা শ্রেয়। তা না হলে প্রস্রাব আটকে গিয়ে সংকটময় অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। যেমন দীর্ঘমেয়াদিভাবে প্রস্রাব আটকে যেতে পারে এবং পশ্চাৎমুখী চাপ বৃদ্ধি করে ক্রমান্বয়ে কিডনির কার্যকারিতা লোপ পেয়ে জীবনহানির কারণ হতে পারে। তা ছাড়াও মূত্রথলিতে সার্বক্ষণিক প্রস্রাব জমে থাকার কারণে মূত্রথলির সংক্রমণ ও মূত্রপাথরি রোগ হতে পারে। তা ছাড়া অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করে প্রস্রাব করার কারণে উদর গহ্বরের চাপ বৃদ্ধি পেয়ে হার্নিয়া ও অর্শ রোগ দেখা দিতে পারে ।