 
				ফিঙ্গার স্পিন
| বোলিং কৌশল | 
|---|
| ধারাবাহিকের একটি অংশ | 
ফিঙ্গার স্পিন (অফ স্পিনও বলা হয়) হল ক্রিকেট খেলায় বোলিংয়ের একটি ধরন। এটি ক্রিকেট বলের বিশেষ দিকে স্পিন করানোর জন্য সুনির্দিষ্টভাবে হাত এবং আঙুল ঘোরানোকে বোঝায়। অন্য আর একটি স্পিনের কৌশল, যেটি সাধারণত বিপরীত দিকে বল স্পিন করতে ব্যবহৃত হয়, সেটি হল রিস্ট স্পিন। যদিও ব্যতিক্রম রয়েছে, তবে ফিঙ্গার স্পিনাররা সাধারণত রিস্ট স্পিনারদের চেয়ে কম বল ঘোরায়। তবে কৌশলটি সরল এবং সহজেই আয়ত্ত করা যায় বলে, ফিঙ্গার স্পিনাররা অনেকটাই নির্ভুল বল করতে পারে।
ফিঙ্গার স্পিন নামটি কিন্তু সার্থক নাম নয়, যেহেতু বলে চরিত্রগত স্পিন তৈরির জন্য আঙুলের ক্রিয়াটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ নয়। ফিঙ্গার স্পিন কৌশলে বলটিকে ছাড়ার সময় হাতকে সম্পূর্ণরূপে সুপিনেটেড অবস্থানে (যাতে হাতের তালু ঊর্ধ্বমুখী হয় বা বাইরের দিকে থাকে) রাখা হয়, আঙুল থাকে বলের বাইরের দিকে (ডানহাতি বোলারের ডানদিকে)। যদি বল ছাড়ার সময় এই অবস্থানটি বজায় থাকে, আঙুলগুলি স্বাভাবিকভাবেই বলের দিকটি সঙ্কুচিত করে এবং ঘড়ির কাঁটার দিকে স্পিন তৈরি করে। বিখ্যাত ইংরেজ ফিঙ্গার স্পিন বোলার ডেরেক আন্ডারউড এইধরনের স্পিন বোলিংয়ের জন্য বিখ্যাত।
দুটি অন্য উপায়ে বলের উপরে অতিরিক্ত স্পিন করানো যেতে পারে: বলটি ছাড়ার ঠিক আগে প্রোনেটেড অবস্থান (যাতে হাতের তালু অধঃমুখী হয় বা ভেতরের দিকে থাকে) থেকে বাহুকে সুপিনেটেড অবস্থানে নিয়ে যাওয়া, এবং বল ছাড়ার মুহুর্তে কব্জিটির মোচড় বা প্রসার। দুটি কৌশলই স্পিনের প্রভাব বাড়িয়ে তোলে। একজন স্পিন বোলার যত ধীরে বল ছাড়ে, বলের ঘূর্ণির একই হার বজায় রাখতে তাকে আরও সক্রিয়ভাবে বলে স্পিন দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
ফিঙ্গার স্পিনারের প্রকার
যদিও ডানহাতি এবং বাঁ হাতি উভয় বোলারই একই কৌশলে ফিঙ্গার স্পিন (যদিও পার্শ্বীয়ভাবে ওল্টানো, যেমন আয়নাতে দেখা যায়) বল করে, এই জাতীয় বোলারদের প্রায়শই আলাদা বিভাগে রাখা হয়, কারণ ক্রিকেট পিচে বল পড়ার পর বলের স্পিন করার দিকটি পৃথক:
- ডান হাতের ফিঙ্গার স্পিন অফ স্পিন নামে পরিচিত।
- বাঁ-হাতের ফিঙ্গার স্পিন বাহাতি অর্থোডক্স স্পিন নামে পরিচিত।
সরলতার জন্য, এই নিবন্ধের বাকি অংশটিতে ধরা হয়েছে ডানহাতি ফিঙ্গার স্পিনার ডানহাতি ব্যাটসম্যানকে বল করছে।
তবে, ক্রমবর্ধমানভাবে, পার্থক্যটি অবশ্যই প্রচলিত ফিঙ্গার স্পিনার এবং অপ্রচলিত ফিঙ্গার স্পিনারদের মধ্যে তৈরি করা উচিত, বিশেষত দুসরা এবং ক্যারাম বলের মত বোলিং উদ্ভাবনের সাথে, যার জন্য বলের উপর একটি পৃথক গ্রিপ (বলটি ধরার কৌশল) প্রয়োজন (এবং ফলস্বরূপ একটি ভিন্ন বোলিং কৌশল)।
বোলিংয়ের এই ধরনের শৈলীকে এইভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা যেতে পারে:
- প্রচলিত ফিঙ্গার স্পিন, যেখানে বলটি তর্জনী এবং মধ্যমার অঙ্গুলি গাঁট দিয়ে ধরা থকে, বলের সেলাইয়ের আড়াআড়ি ভাবে। বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠটি বলের সেলাইয়ের (সিম) ওপর হালকাভাবে রাখা থাকে। এই কৌশলটির উল্লেখযোগ্য ব্যবহারকারীদের মধ্যে রয়েছেন গ্রিম সোয়ান এবং নাথান লিয়ন। এই ধরনের বোলিংয়ের সাথে সাধারণত ব্যবহৃত প্রকরণগুলির মধ্যে রয়েছে আর্ম বল এবং টপ স্পিন।
- মধ্যমা ফিঙ্গার স্পিন, যেখানে মধ্যমা দিয়ে বলটি ধরা হয় সরাসরি বলের উপরের দিকে, তর্জনী এবং অনামিকা দিয়ে বলটি নিচের দিকে ধরা থাকে, যেমনটি করেন সাঈদ আজমল, সাকলাইন মুশতাক এবং সুরেশ রায়না। স্টক বল হল অফ ব্রেক, যেখানে বলে ঘূর্ণন তৈরি করতে মধ্যমা এবং তর্জনী বলের সিমের দুপাশে রাখা থাকে। সাধারণত করা বিভিন্ন প্রকারের মধ্যে রয়েছে দুসরা এবং তিসরা।
- ক্যারম স্পিন (ক্যারম বল), যেখানে বলটি মধ্যমা এবং বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের মধ্যে ধরা হয়, মধ্যমা হাতের তালুর সমান্তরালে থাকে। প্রচলিতভাবে বল ছাড়ার পরিবর্তে, বলটি চেপে ধরে আঙুলের সাহায্যে ক্যারমের ক্ষেপকের মত করে ছাড়া হয়। তবে, সাধারণত এই বলটি একটি লেগ ব্রেক হয়, যদিও এই গ্রিপ ব্যবহার করে অফ ব্রেক, টপ-স্পিন এবং ব্যাক-স্পিন বল করা যেতে পারে, যেমনটি দেখিয়েছেন জ্যাক ইভারসন। এই কৌশলে এখন বল করেন অজন্তা মেন্ডিস এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিন।
অন্যান্য ধরনের ফিঙ্গার-স্পিনও রয়েছে, তবে এই বিভাগটি প্রধানত আধুনিক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যবহৃত প্রধান ধরনের ফিঙ্গার স্পিনের নির্দেশিকা হিসাবে দেখা উচিত। অনেকে হয়তো এই তালিকায় মুত্তিয়া মুরালিধরনের মত স্পিনারকে যুক্ত করবেন, এবং যদিও তাঁর স্টক বলটি ডান হাতের অফ-ব্রেক, এই ধরনের বোলিং কৌশলটি অপ্রচলিত রিস্ট স্পিন হিসাবে আরও ভালভাবে বর্ণনা করা যেতে পারে, যেখানে বলের ঘূর্ণন তৈরি করতে আঙুলের চেয়ে হাতের কব্জি অনেক বেশি জড়িত।
