Продолжая использовать сайт, вы даете свое согласие на работу с этими файлами.
বর্জ্যপানি শোধন
বর্জ্যপানি শোধন বা বর্জ্যজল শোধন বলতে এমন একটি প্রক্রিয়াকে বোঝায় যাতে বর্জ্যপানি থেকে দূষক পদার্থ দূর করে সেটিকে এমন একটি নির্গম পানিপ্রবাহে রূপান্তরিত করা হয়, যেটিকে পানিচক্রে ফেরত নিয়ে আসা যায়। পানিচক্রে একবার ফেরত আসার পরে নির্গম জলপ্রবাহটি পরিবেশের উপর এক ধরনের গ্রহণযোগ্য প্রভাব ফেলে এবং এটিকে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা সম্ভব হয় (যাকে পানি পুনরুদ্ধার বলে)। শোধন প্রক্রিয়াটি যে কেন্দ্রে সম্পাদিত হয়, তাকে বর্জ্যপানি শোধনাগার বা বর্জ্যজল শোধনাগার বলে। বর্জ্যপানির বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে, যেগুলির জন্য যথাযথ শোধনাগার বিদ্যমান। গৃহস্থালি বর্জ্যপানি বা পৌর বর্জ্যপানি বা পয়ঃবর্জ্যের জন্য শোধনাগারটিকে পয়ঃশোধনাগার বলে। শিল্পজাত বর্জ্যপানির শোধন প্রক্রিয়াটি হয় একটি পৃথক শিল্পবর্জ্যপানি শোধনাগারে সম্পাদিত হয়, কিংবা (কিছু প্রাক-শোধন প্রক্রিয়াশেষে) একটি পয়ঃশোধনাগারে সম্পাদন করা হয়। বর্জ্যপানি শোধনাগারের অন্যান্য প্রকারভেদের মধ্যে আছে কৃষি বর্জ্যপানি শোধনাগার এবং পরিস্রুত তরল বর্জ্য শোধনাগার।
বর্জ্যপানি শোধনের সময় যে প্রক্রিয়াগুলি সাধারণত ব্যবহার করা হয়, সেগুলির মধ্য আছে দশা পৃথকীকরণ (যেমন থিতুকরণ বা অবক্ষেপণ), জৈব ও রাসায়নিক প্রক্রিয়াসমূহ (যেমন জারণ) বা পালিশকরণ। বর্জ্যপানি শোধনাগারগুলি থেকে প্রধান যে উপজাতগুলি পাওয়া যায়, সেগুলি হল এক ধরনের থকথকে আঠালো কাদা, যেটিকে ঐ একই শোধনাগারে বা পৃথক আরেকটি শোধনাগারে শোধন করা হয়। যদি নির্বাত শোধন প্রক্রিয়াসমূহ ব্যবহার করা হয়, তাহলে উপজাত হিসেবে জৈবগ্যাস পাওয়া যেতে পারে। কিছু প্রকারের বর্জ্যপানিকে উচ্চমাত্রায় শোধন করা হতে পারে এবং এগুলিকে পুনরুদ্ধারকৃত পানি হিসেবে পুনর্ব্যবহার করা হতে পারে। বর্জ্যপানি শোধনের মূল উদ্দেশ্য হল নিরাপদে শোধিত বর্জ্যপানির নিষ্পত্তিসাধন বা এর নিরাপদ পুনর্ব্যবহার। তবে শোধনের পূর্বেই কীভাবে নিষ্পত্তি করা হবে বা পুনর্ব্যবহার করা হবে, সে সংক্রান্ত পছন্দগুলি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী সঠিক শোধন প্রক্রিয়াটি বর্জ্যপানির উপর প্রয়োগ করতে হবে।
বিভিন্ন রচনায় "বর্জ্যপানি শোধন" ও "পয়ঃবর্জ্য শোধন" বা "পয়ঃশোধন" পরিভাষাগুলি একই অর্থে ব্যবহার করা হতে পারে। কিন্তু পরিভাষার স্পষ্টতা রক্ষা করতে চাইলে বর্জ্যপানি শোধন অপেক্ষাকৃত ব্যাপকতর একটি ধারণা, এবং পয়ঃবর্জ্যপানি শোধন এটির একটি প্রকারভেদ।
ধাপ
বর্জ্যপানি শোধন বেশ কয়েকটি ধাপে ঘটে। প্রথম ধাপটি হল গরাদ ছাঁকন (Bar Screening), যে ধাপে আগম জলপ্রবাহ থেকে বড় আকারের বস্তুসমূহ যেমন কাপড়ের বস্তু, প্লাস্টিকের বস্তু, গাছপালার ডাল, ইত্যাদিকে গরাদের মাধ্যমে ছেঁকে দূর করা হয়, যাতে শোধনাগারের উত্তোলক-নিষ্কাশক পাম্পযন্ত্র, কপাটিকা ও অন্যান্য যন্ত্রপাতির যেন কোনও ক্ষতি না হয়।
দ্বিতীয় ধাপটি হল কাঁকরকণা ছাঁকন (Grit screening), যেখানে একটি বিশেষ কাঁকর পরিস্রাবণ কক্ষে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাঁকরের কণাগুলি ছেঁকে দূর করা হয়, কারণ এই কাঁকরকণাগুলিও যন্ত্রপাতির ক্ষতি করতে পারে এবং পানিপ্রবাহে বাধার সৃষ্টি করতে পারে।
তৃতীয় ধাপটি হল বর্জ্যপানি থেকে কঠিন জৈব পদার্থের প্রাথমিক পৃথকীকরণ। এই ধাপে বর্জ্যপানিকে একটি প্রাথমিক পরিস্করক (Primary clarifier) বা অধঃক্ষেপক জলাধার (Sedimentation tank) বা টাংকিতে (এগুলি প্রায় ৭৫ ফুট ব্যাস ও ১০ ফুট গভীরতার হয়ে থাকে) চালনা করা হয়, যেখানে আগম বর্জ্যপানিপ্রবাহ থেকে কঠিন জৈব পদার্থের ২৫ থেকে ৫০% দূর করা হয়। জলপ্রবাহের গতি এমনভাবে ধীর করা হয়, যাতে কঠিন জৈব পদার্থগুলি থিতু হয়ে ধীরে ধীরে টাংকির নিচে অধঃক্ষিপ্ত হয় এবং পয়ঃকর্দম হিসেবে জমা হয়। পয়ঃকর্দমগুলিকে নিয়মিতভাবে পাম্পের সাহায্যে বের করে নেওয়া হয় ও পরবর্তীতে সার হিসেবে ব্যবহার করা হয় বা আবর্জনাভূমিতে প্রেরণ করা হয়। জলপ্রবাহের গতি এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, যাতে শোধন প্রক্রিয়া খুব ধীরগতির না হয়ে পড়ে কিন্তু একই সাথে যেন অধঃক্ষেপণ বা পরিস্করণের হার যথেষ্ট হয়।
চতুর্থ ধাপটি হল বাতন (Aeration)। এই ধাপে বর্জ্যপানিকে একটি জলাধার তথা বাতন পুকুরে (Aeration pond) নিয়ে তার ভেতরে বায়ুচালনা করা হয়। বায়ুর অক্সিজেন পানির ভেতরে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। এই ব্যাকটেরিয়াগুলি প্রাকৃতিক উপায়ে বর্জ্যপানিতে বিদ্যমান সব জৈব পদার্থগুলিকে ভাঙতে শুরু করে। ব্যাকটেরিয়াগুলি প্রথমে অ্যামোনিয়াকে নাইট্রাস অক্সাইড এবং সেটিকে নাইট্রোজেন গ্যাসে রূপান্তরিত করে। এ সংক্রান্ত একটি প্রধান পরিমেয় রাশি হল প্রাণরাসায়নিক অক্সিজেন চাহিদা হল এই সবাত (অক্সিজেনসমৃদ্ধ) ভাঙন বা জৈববিয়োজন প্রক্রিয়াতে ব্যাকটেরিয়াসমূহের জন্য আবশ্যক অক্সিজেনের চাহিদা। এছাড়া পানির অম্লমাত্রা বা পিএইচ, তাপমাত্রা, দ্রবীভূত অক্সিজেন, মোট নিলম্বিত কঠিন পদার্থ, উদস্থিতিক ধারণ সময় (প্রবাহের হার), ইত্যাদি সর্বক্ষণ সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হয়, যাতে অক্সিজেনের মাত্রা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
পঞ্চম ধাপটি হল কঠিন জৈব পদার্থের দ্বিতীয় পর্যায়ের পৃথকীকরণ। বর্জ্যপানি বাতন প্রক্রিয়াশেষে একটি দ্বিতীয়-পর্যায়ের পরিস্করক (secondary clarifier) টাঙ্কিতে প্রবেশ করে, যেখানে প্রাথমিক পরিস্করকের মত অত্যন্ত ক্ষুদ্র বা সূক্ষ্ম কঠিন জৈব পদার্থগুলি টাঙ্কির নিচে অধঃক্ষিপ্ত হয়। এই অধঃক্ষিপ্ত কঠিন পদার্থগুলিকে সক্রিয়কৃত পয়ঃকর্দম (activated sludge) বলে, কেননা এগুলিতে বহুসংখ্যক সক্রিয় বা জীবন্ত ব্যাকটেরিয়া উপস্থিত থাকে।
ষষ্ঠ ধাপটি হল সংক্রমণ নিবারণ (Disinfection)। এ ধাপে দ্বিতীয় পর্যায়ের পরিস্করক থেকে আগত পানিতে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি ও ঘনমাত্রা পরীক্ষা করা হয়, এবং পরিবেশে পানি ছেড়ে দেবার আগে জীবাণুগুলির সংখ্যা নিরাপদ মাত্রায় নামিয়ে আনার জন্য ক্লোরিন গ্যাস (ক্লোরিনায়ন, Chlorination), ওজোন গ্যাস বা অতিবেগুনি রশ্মির সাহায্যে সংক্রমণ নিবারণ তথা জীবাণু দূরীকরণ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।
সপ্তম ধাপে পানি বিশ্লেষণ ও পরীক্ষণ (Water analysis and testing) করা হয়। পানির আম্লিক মাত্রা বা পিএইচ, অ্যামোনিয়া, নাইট্রেট, ফসফেট, দ্রবীভূত অক্সিজেন ও অবশিষ্ট ক্লোরিনের আইনি গ্রহণযোগ্য মাত্রা পরীক্ষা করে দেখা হয়। এগুলি ঠিকমত মাত্রায় না থাকলে জরিমানা ও কারাভোগের মত শাস্তি হতে পারে।
অষ্টম ও শেষ ধাপে শোধিত পরিষ্কার ও নির্মল পানির নির্গমপ্রবাহ পরিবেশে অবমুক্ত (Effluent discharge) করে দেয়া হয়।
অপেক্ষাকৃত উন্নততর শোধনাগারগুলিতে নির্গমপ্রবাহ অবমুক্তকরণের আগে নির্গমপ্রবাহ পালিশকরণ (Effluent polishing) বলে আরেকটি ধাপ থাকতে পারে, যে ধাপে দ্বিতীয় পর্যায়ের পরিস্করণের পরেও পানিতে থেকে যাওয়া অত্যন্ত সূক্ষ্ম কণাগুলিকে দূর করা হয়। এ কাজে, বালি, কাঠকয়লা, কাপড় বা কার্বনের দানাদার ঝিল্লিবিশিষ্ট অনেকগুলি ধারাবাহিক পরিস্রাবকের মধ্য দিয়ে পানিকে চালনা করা হয় এবং এভাবে সাধারণত o.০০১ মাইক্রোমিটারের চেয়ে বড় সব কঠিন কণা দূর করা হয়। পরিস্রাবকগুলিতে যেন ময়লা জমে পানিপ্রবাহ ব্যাহত না হয় এবং এগুলি যেন বারবার ব্যবহার করা যায়, সেজন্য এগুলি যথাস্থানে পরিস্করণের (Cleaning in place) ব্যবস্থা থাকে।
বিদ্যুৎশক্তির চাহিদা
অবস্থান, আগম বর্জ্যপানিপ্রবাহের গুণমান, প্রক্রিয়ার নকশা, শোধন ক্ষমতা বা শোধনাগারের আকার, নির্গম শোধিত পানিপ্রবাহের গুণমান, ইত্যাদির ভিত্তিতে শোধনাগারের শক্তির ব্যবহার ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। যেসব শোধনাগারে পুষ্টিমৌল পৃথক করা হয় না, সেগুলি কম বিদ্যুৎশক্তি ব্যবহার করে। যেসব শোধনাগারে অবাত হজমকারক ব্যবহার করা হয়, সেগুলিও কম বিদ্যুৎশক্তি ব্যবহার করে।
বর্জ্যপানি শোধন প্রক্রিয়াটি একটি নগরী, অঞ্চল বা দেশের বিদ্যুৎশক্তির সরবরাহের উপর বড় ধরনের চাপের সৃষ্টি করতে পারে। যেমন ২০১৫ সালে চীনের পৌর বর্জ্যপানি শোধনাগারগুলি তথা পয়োশোধনাগারগুলি ৫ হাজার ৩ শত ৫২ কোটি ঘনমিটার বর্জ্যপানি শোধন করে, যেগুলির পেছনে ২ হাজার ৫ শত ১৫ কোটি কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎশক্তি খরচ করতে হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রায় ৩% এবং পৌর বিদ্যুৎশক্তি চাহিদার প্রায় ৩০ থেকে ৬০% পৌর বর্জ্যপানি শোধনের সাথে জড়িত। আরেকটি হিসাব অনুযায়ী বিশ্বে উৎপাদিত বিদ্যুৎশক্তির ২%-এরও বেশি পানি সরবরাহ ও বর্জ্যপানি শোধনে ব্যবহৃত হয়। তাই বর্জ্যপানি শোধনাগারগুলি বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের মত পরিবেশগত সমস্যাগুলিতে নেতিবাচক অবদান রাখতে পারে। এই পরিস্থিতিতে নির্গম শোধিত জলপ্রবাহের গুণমান বজায় রেখে একই সাথে বিদ্যুৎশক্তি ব্যবহারে দক্ষতা বৃদ্ধি করা বর্জ্যপানি শোধনাগারগুলির জন্য একটি আবশ্যকীয় লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে মাথাপিছু ২০ থেকে ৪৫ কিলোওয়াট-ঘণ্টা শক্তির ব্যবহার আদর্শ বা দক্ষ হিসেবে ধরা হয়।