Продолжая использовать сайт, вы даете свое согласие на работу с этими файлами.
বাসা পরজীবীতা
বাসা পরজীবীতা বলতে কয়েকটি নির্দিষ্ট প্রজাতির পাখি, মাছ ও পোকামাকড়ের এমন একটি স্বভাব বোঝায়, যে স্বভাবের বলে সেসব প্রাণীরা তাদের সন্তান লালন-পালনের ভার অন্য কারো উপর চাপিয়ে দেয়। এ ধরনের প্রাণীদের বাসা পরজীবী বলে। আর যেসব প্রাণী বাসা পরজীবী প্রাণীদের সন্তান লালন পালন করে, তাদেরকে বলে পোষক। বাসা পরজীবীতা একই প্রজাতির বা দুটি ভিন্ন প্রজাতির জীবের মধ্যেও ঘটতে পারে। বিশেষ ধরনের এই পরজীবী ব্যবস্থায় পরজীবীরা সাধারণত পোষকের বাসায় ডিম পেড়ে যায় আর পোষক পরজীবীর ডিম ফুটিয়ে তার সন্তানকে নিজের সন্তান ভেবে লালন-পালন করে। বাসাকে কেন্দ্র করে পুরো পোষক-পরজীবী সম্পর্কটা আবর্তিত হয় বলে একে বিশেষভাবে বাসা-পরজীবীতা বলা হয়।
বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষার একটি প্রাকৃতিক পদ্ধতি হচ্ছে বাসা পরজীবীতা। কারণ বাসা পরজীবী জীব পোষকের বাসায় ডিম পেড়েই ক্ষান্ত হয় না, অনেক সময় পোষকের ডিম, বাচ্চারও ক্ষতি করে। এমনকি পরজীবীর সন্তানরাও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পোষকের ডিম, বাচ্চার ক্ষতি সাধন করে। এর ফলে পোষকের পরিমাণ প্রকৃতিতে বিপজ্জনক হারে বেড়ে যায় না।
প্রকারভেদ
দুই ধরনের বাসা পরজীবীতা দেখা যায়-
- অন্তঃপ্রজাতি বাসা পরজীবীতা: এ ধরনের বাসা পরজীবীতায় একই প্রজাতির দুটি সদস্যের মধ্যে পোষক-পরজীবী সম্পর্ক দেখা যায়।
- আন্তঃপ্রজাতি বাসা পরজীবীতা: দুটি ভিন্ন প্রজাতির জীবের মধ্যে পোষক-পরজীবী সম্পর্ক থাকলে সেটা আন্তঃপ্রজাতি বাসা পরজীবীতা।
পাখিদের বাসা পরজীবীতা
পাখিদের মাঝে বাসা পরজীবীতার ব্যাপারটি সবচেয়ে বেশি। কোকিল তার এই অদ্ভুত চরিত্রের জন্য বেশ ভালভাবেই পরিচিত। পৃথিবীর সমগ্র পাখি প্রজাতির মধ্যে মাত্র ১ শতাংশ বাসা পরজীবী। মোট ১০৩ প্রজাতির পাখি বাসা পরজীবী। অ্যানাটিডি গোত্রের খুব কম সংখ্যক হাঁস (সোনালীচোখ হাঁস, লালশির হাঁস ইত্যাদি), ইন্ডিকেটোরিডি গোত্রের সবকটি অর্থাৎ ১৭ টি প্রজাতি (এরা হানিগাইড বা মৌপায়ী, মূল আবাসস্থল আফ্রিকা আর দক্ষিণ এশিয়া), কুকুলিফরমিস বর্গের দুটি গোত্র- নিওমরফিডি (বৃষঠোকরা বা Cowbirds) আর কুকুলিডি (কোকিল) গোত্রের ৬২টি প্রজাতি, ভিডুইডি গোত্রের সবকটি অর্থাৎ ১৫ টি প্রজাতি, ইক্টেরিডি গোত্রের ৫টি প্রজাতি বাসা পরজীবী। কোকিল প্রজাতির পাখির মধ্যে মাত্র ৪০ শতাংশ বাসা পরজীবী, বাকিরা নিজেরা বাসায় ডিম পাড়ে, ছানা তোলে। কোকিলের এসব প্রজাতিগুলোর মধ্যে পাপিয়া, বউ কথা কও, হিমালয়ের কোকিল, চোখগেলো পাখি, বড় চোখগেলো পাখি, হজসনের চোখগেলো পাখি, ফিঙ্গে কোকিল, ধূসর কোকিল, বাদামী কোকিল, লালপাখা কোকিল, চাতক, বেগুনি কোকিল উল্লেখযোগ্য।
উটপাখি ও এর বিভিন্ন জাতভাইয়েরাও অনিয়মিতভাবে অন্তঃপ্রজাতি বাসা পরজীবী। এরা স্থায়ী বাসা পরজীবী প্রজাতি নয়।
বাসা পরজীবীতার কারণ
বহু প্রজাতির পাখির মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সঙ্গী বা সঙ্গীনীর সাথে ঘর বাঁধার সম্পর্ক বিদ্যমান। এ ধরনের সম্পর্কে পুরুষ সদস্যটি অনেক সময় একের অধিক নারী সদস্যের সাথে মিলিত হয়। কিন্তু একাধিক সঙ্গীনীর সন্তান একই সাথে প্রতিপালন করা পুরুষের পক্ষে সম্ভব হয় না। সেকারণে সে যে কোন একটি সঙ্গীনীর সন্তান লালন-পালনের ভার নেয়। এর ফলশ্রুতিতে অন্য সঙ্গীনীরা একই প্রজাতির অপর কোন স্ত্রী সদস্যের বাসায় ডিম পেড়ে যায়। সোনালীচোখ হাঁসেদের (Bucephala clangula) মধ্যে এই প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এক্ষেত্রে পোষক হাঁসকে একাধিক পরজীবী হাঁসের ছানাও লালন-পালন করতে দেখা যায়।
আবার ডিম পাড়ার মৌসুমে কলোনিতে অনেক পাখির ভিড়ে বাসা বানানোর জায়গা না থাকলে অনেক পাখি একই প্রজাতির অন্য পাখির বাসায় ডিম পাড়ে। পাহাড়ী সোয়ালোর কয়েকটি প্রজাতির মধ্যে এ স্বভাব লক্ষ্য করা যায়।
ডিম পাড়ার সময় ঝড়ে বা বৃক্ষনিধনের কারণসহ অন্য কোন কারণে বাসা ক্ষতিগ্রস্ত হলে অন্যের বাসায় ডিম পাড়ে পরজীবীরা। যেসব হাঁস গাছের কোটরে বা গর্তে বাসা বানায়, তাদের কয়েকটি প্রজাতি উপযুক্ত বাসার অভাবে অন্য হাঁসের বাসায় ডিম পাড়ে। যেমন- লালশির (Aythya americana) হাঁস, ক্যানভাসপিঠ হাঁস (Aythya valisineria) বা অন্য লালশিরের বাসায় ডিম পাড়ে উপযুক্ত বাসার অভাবে।
কোকিলের বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে আবার একটা বিচিত্র বিষয় লক্ষ্য করা যায়। কোকিলরা অসংখ্য প্রজাতিকে পোষক হিসেবে বেছে নিলেও একটি স্ত্রী কোকিল কেবলমাত্র একটি প্রজাতিকেই পোষক হিসেবে বেছে নেয় এবং পোষকের ডিমের যে রঙ, ঠিক সেই রঙেরই ডিম পাড়ে। অর্থাৎ একটি স্ত্রী কোকিল যদি ছাতারেকে পোষক হিসেবে বেছে নেয়, তবে সে ছাতারের ডিমের রঙে ডিম পাড়বে। একই প্রজাতির আরেকটি স্ত্রী কোকিল যদি কাককে বেছে নেয়, তবে সে কাকের ডিমের অনুকরণে ডিম পাড়বে। কোকিলরা এ কাজটা কীভাবে করে তা এখনও গবেষণাসাপেক্ষ বিষয়। বিভিন্ন প্রকল্প আর অনুমান নেওয়া হলেও সেগুলো এখনও প্রমাণিত হয় নি।
বাসা পরজীবী পাখিরা খুব কম সময়ে ডিম পাড়তে সক্ষম। পাহাড়ী সোয়ালোরা প্রায় ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে ডিম পাড়তে সক্ষম।
পোষকের ক্ষয়ক্ষতি
আন্তঃপ্রজাতি বাসা পরজীবীরা বহুসংখ্যক প্রজাতিকে পোষক বানায়। উত্তর আমেরিকার বাদামী মাথা বৃষঠোকরার (Molothrus ater) মোট ২২১ প্রজাতির পোষক রয়েছে। মোটামুটি পরিচিত পোষকরা হচ্ছে কাক, ময়না, শালিক, ফিঙ্গে, সাত ভাই ছাতারে, দোয়েল, বুলবুলি, খঞ্জন, টিকরা, টুনটুনি ইত্যাদি।
কুকুলিডি গোত্রের পাখিরা সাধারণত এক মৌসুমে একটিমাত্র পাখিকেই পোষক হিসেবে নেয় না, একই প্রজাতির পোষকের একাধিক বাসায় ডিম পাড়ে। যেমন পাপিয়া ৪-৫টি ডিম ঘুরে ঘুরে একাধিক পোষকের বাসায় পাড়ে। যতটি ডিম পাড়ে, পোষকের ততটি ডিম এরা বাসা থেকে ঠোঁটে করে বয়ে নিয়ে ফেলে দেয়। কয়েক প্রজাতির কোকিলের ডিম পোষকের ডিমের থেকে আগে ফোটে। কোকিল হিসেব করে ডিম পাড়ে। বাচ্চা ডিম ফুটে বের হওয়ামাত্র বাসায় কঠিন যা কিছু পায় ঠেলে ফেলে দেয়। এভাবে পোষকের ডিম নষ্ট করে কোকিলছানা ভবিষ্যৎ প্রতিদ্বন্দ্বীকে সরিয়ে দেয়। আবার অনেক সময় পরজীবীর ছানা পোষকের ছানা থেকে খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়। যার ফলে খাবার দখলের লড়াইয়ে পোষকের ছানা পরজীবীর ছানার সাথে এঁটে উঠে না। একসময় খাবারের অভাবে পোষকের ছানা মারা যায়।
অন্যান্য বাসা পরজীবীরা
কয়েক প্রজাতির কোকিল মৌমাছিকে (Cuckoo bee) বাসা পরজীবী আখ্যা দেওয়া হলেও এরা আসলে ক্লিপ্টোপ্যারাসাইট, অর্থাৎ অন্যের বাসার খাবার পরোক্ষভাবে চুরি করে। এরা অন্য মৌমাছির বাসায় ডিম পেড়ে যায় আর এদের সন্তানরা পোষক মৌমাছির জমানো খাবার খায়; কিন্তু প্রত্যক্ষভাবে লালিত-পালিত হয় না। কয়েক প্রজাতির প্রজাপতির মধ্যেও বাসা পরজীবীতার প্রবণতা দেখা যায়। কোকিল মাছ (Synodontis multipunctata) নামের এক প্রজাতির মাছ বাসা পরজীবী।
বহিঃসংযোগ
- যে পাখিরা জানে না বাসা বুনতে, মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ইমন, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১১, দৈনিক পূর্বকোণ।
- বাসা পরজীবীতা বিষয়ক আরো তথ্য