বেলের পক্ষাঘাত
| বেলের পক্ষাঘাত | |
|---|---|
| বিশেষত্ব |
স্নায়ুচিকিৎসাবিজ্ঞান |
বেলের পক্ষাঘাত (Bell's palsy) হল করোটিক স্নায়ু (Cranial nerve) নং ৭-এ (ফেসিয়াল নার্ভ) কাজ না করার ফলে হওয়া মুখমণ্ডলের একপ্রকারের পক্ষাঘাত। এর ফলে পক্ষাঘাত হওয়া মুখের মাংসপেশীগুলির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যায়। কয়েকটি কারণে মুখের পক্ষাঘাত হতে পারে, যেমনঃ- মস্তিষ্কের টিউমার, স্ট্রোক, লাইম রোগ ইত্যাদি। যদি পক্ষাঘাতের কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া না যায় তবে একে "বেলের পক্ষাঘাত" বলা হয়। আজ থেকে দুশো বছর আগে স্কটল্যান্ডর চার্লস বেল নামক এ্ক চিকিৎসক প্রথম এই রোগের বর্ণনা দিয়েছিলেন বলে রোগটির সাথে তাঁর নাম যুক্ত করে "বেলস্ পালসি" বলা হয়৷
মস্তিষ্কের ভিতর থেকে ওলাই অহা ৭ নম্বর স্নায়ু হল ফেসিয়াল নার্ভ৷ এই স্নায়ু কানের পিছনের একটি সরু ছিদ্র দিয়ে এসে মুখমণ্ডলের মাংসপেশী সমূহের সাথে যুক্ত হয়েছে। আমাদের হাঁ করা, মুখের বিভিন্ন অংগী-ভংগী করা, চোখ খোলা-বন্ধ করা ইত্যাদি সকল ক্রিয়া এই স্নায়ুর সহযোগিতায় পরিচালিত হয়৷ কোন কারণে ফেসিয়াল স্নায়ুর পক্ষাঘাত হলে এই সকল ক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হয়৷
লক্ষণসমূহ
মুখমণ্ডলের একদিক হঠাৎ রাতের মধ্যে বেঁকে যায়। সেই দিকের চোখটি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ না হওয়ার উপক্রম হয়৷ হাঁ হলে মুখ একদিকে বাঁকা হয়ে যায়৷ খেতে, গিলতে কিছু অসুবিধা অনুভব হয়৷ দুদিনের ভিতর লক্ষণসমূহ স্পষ্ট হয়ে ধরা দেয়। কখনো কানের ভিতর কিছু যন্ত্রণার অনুভব হয়৷ শব্দের সংবেদন ক্ষমতাও বেড়ে যেতে পারে৷ বন্ধ না হওয়া চোখ শুষ্ক বা জল পড়তে থাকা পরিলক্ষিত হয়৷ মুখের রুচি কমে যায়৷ পুরুষ মহিলা সকলের এই রোগ হতে পারে৷ সাধারণত ১৫ থেকে ৬০ বছর বয়সে এই রোগ হতে দেখা যায়৷ কিন্তু যে কোনো বয়সেে এই রোগ হতে পারে৷ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ০.০২ % লোককে এই রোগে ভুগতে দেখা গিয়েছে৷ ইংল্যান্ডে প্রতি বছরে প্রত্যেক ৫০০০জনের ভিতর একজন এই রোগে আক্রান্ত হয়৷ অন্যদিকে, আমেরিকায় বছরে ৪০০০০জন "বেলের মুখমণ্ডলীয় পক্ষাঘাত"-এ আক্রান্ত হয়৷ ডায়েবেটিস, গর্ভাবস্থা, শ্বাসজনিত রোগে ভোগা লোক এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকা লোকদের সহজে রোগাক্রান্ত হতে দেখা যায়৷ ৯৯% রোগীর মুখমণ্ডলের দুর্বলতা বা প্যারালাইসিস একদিকেই হয়৷ ক্বচিৎ ১% রোগীর দুইদিক দুর্বল হতে দেখা যায়৷ ৮৫% রোগী তিনসপ্তাহের ভিতর সম্পূর্ণ আরোগ্য হয়৷ বাকী ১৫%-এর ক্ষেত্রে ৩ থেকে ৬ মাস সময় লাগে৷ সাধারণত দেখা দেওয়া উপসর্গসমূহ হ'ল — মাংসপেশী কঠোর অনুভব হওয়া, মাংসপেশীর কাঁপুনি ওঠা ও চোখে সর্বদা চেয়ে থাকা৷
রোগের কারণ
রোগের উৎপত্তির সঠিক কারণ জানা যায় নি৷ হারপিস পরিবারভুক্ত একধরনের বা কয়েকধরনের ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে ফেসিয়াল স্নায়ুর একটা অংশ ফুলে ওঠে এবং স্নায়ুর অনিষ্ট হওয়ার ফলে লক্ষণসমূহ ফুটে ওঠে৷ কিন্তু মনে রাখতে হবে মস্তিষ্কের টিউমার, আঘাত বা সংক্রমণের দ্বারাও ফেসিয়াল স্নায়ুর প্যারালাইসিস হতে পারে৷
রোগের শনাক্তকরণ ও যাবতীয় পরীক্ষাসমূহ
সাধারণত রোগ প্রাথমিক পরীক্ষাতেই শনাক্ত হয়৷ রোগীর মস্তিষ্কের সিটি স্কেন বা এম আর আই করে তাঁর যে টিউমার, সংক্রমণ বা আঘাতপ্রাপ্তি ঘটে ফেসিয়াল প্যরাালাইসিস হয় নি - সেটি ঠিক করা হয়৷ কখনো কখনো স্নায়ুর পরিবহন সক্ষমতা ইত্যাদিও পরীক্ষা করা হয়৷
চিকিৎসা
বহুক্ষেত্রে বিনা ঔষধেও রোগের নিরাময় হতে দেখা যায়৷ অ্যান্টি ভাইরাল জাতীয় ওষুধের কার্যকারিতা এখনো প্রমাণিত হয়নি। এক সপ্তাহ মেয়াদে স্টেরয়েড (প্রেডনিসনল নামের) ব্যবহার করে উপকৃত হতে দেখা যায়৷ বন্ধ না হওয়া চোখ ভাল না হওয়া পর্যন্ত যত্ন নিতে হয়। ফিজিওথেরাপি বা মাংসপেশীর উপযুক্ত ব্যায়ামও দরকার পড়ে৷ কদাচিৎ মুখাবয়বের বিকৃতি থেকে গেলে প্লাষ্টিক সার্জারির প্রয়োজন হয়৷
বহিঃসংযোগ
| শ্রেণীবিন্যাস | |
|---|---|
| বহিঃস্থ তথ্যসংস্থান |
- কার্লিতে বেলের পক্ষাঘাত (ইংরেজি)