Продолжая использовать сайт, вы даете свое согласие на работу с этими файлами.
মাদার টেরিজা
কলকাতার সন্ত টেরিজা মেরি টেরিজা বোজাঝিউ | |
---|---|
জন্ম |
(১৯১০-০৮-২৬)২৬ আগস্ট ১৯১০ |
মৃত্যু | ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯৭(1997-09-05) (বয়স ৮৭) |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
নাগরিকত্ব |
আলবেনীয় (১৯১০-১৯২৮)
ব্রিটিশ ভারতীয় (১৯২৮-১৯৪৭) ভারতীয় (১৯৪৭-১৯৯৭) |
পেশা | ক্যাথলিক সন্ন্যাসিনী, ধর্মপ্রচারক |
পরিচিতির কারণ | দ্য মিশনারিজ অফ চ্যারিটি (দাতব্য ধর্মপ্রচারক সংঘ) |
উত্তরসূরী | সন্ন্যাসিনী নির্মলা যোশি |
পুরস্কার |
নোবেল শান্তি পুরস্কার (১৯৭৯) ভারতরত্ন (১৯৮০) প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম (১৯৮৫) বালজান পুরস্কার (১৯৭৮) |
মেরি টেরিজা বোজাঝিউ (জন্ম: অ্যাগনিস গঞ্জা বোজাঝিউ; আলবেনীয়: [aˈɲɛzə ˈɡɔndʒɛ bɔjaˈdʒiu];২৬ আগস্ট , ১৯১০ –৫ সেপ্টেম্বর , ১৯৯৭), যিনি মাদারটেরিজা বা তেরেসানামে অধিক পরিচিত, ছিলেন একজন আলবেনীয়-বংশোদ্ভুতভারতীয়ক্যাথলিক সন্ন্যাসিনী এবং ধর্মপ্রচারক। টেরিজার জন্মস্থান অটোমান সাম্রাজ্যের আলবেনিয়া রাজ্যের স্কপিয়ে। আঠারো বছর বয়স পর্যন্ত তিনি সেখানেই কাটান। ১৯২৮ সালে তিনি আয়ারল্যান্ড হয়ে তৎকালীন ব্রিটিশ উপনিবেশ ভারতে খ্রিস্টধর্ম প্রচার অভিযানে আসেন। জীবনের বাকি অংশ তিনি ভারতেই থেকে যান।
১৯৫০ সালে কলকাতায় তিনি দ্য মিশনারিজ অফ চ্যারিটি (দাতব্য ধর্মপ্রচারক সংঘ) নামে একটি খ্রিস্ট ধর্মপ্রচারণাসংঘ প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১২ সালে এই সংঘের সাথে যুক্ত ছিলেন ৪৫০০ সন্ন্যাসিনী। প্রথমে ভারতে ও পরে সমগ্র বিশ্বে তার এই ধর্মপ্রচারণা কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৬ সালে পোপ ফ্রান্সিস তাকে 'সন্ত' হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেন এবং ক্যাথলিক গির্জায় তিনি 'কলকাতার সন্ত টেরিজা' হিসেবে আখ্যায়িত হন।
১৯৬৯ সালে বিবিসিতে সামথিং বিউটিফুল ফর গড শিরোনামে ম্যালকম মাগারিজের প্রামাণ্য তথ্যচিত্র প্রচারিত হলে তার দাতব্য ধর্মপ্রচারণাসংঘের কার্যক্রম পশ্চিমা গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয় এবং টেরিজার খ্যাতি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পরে। তিনি ১৯৭৯ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার ও ১৯৮০ সালে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ভারতরত্ন লাভ করেন। টেরিজার মৃত্যুর সময় বিশ্বের ১২৩টি রাষ্ট্রে মৃত্যুপথ যাত্রী এইডস, কুষ্ঠ ও যক্ষ্মা রোগীদের জন্য চিকিৎসাকেন্দ্র, ভোজনশালা, শিশু ও পরিবার পরামর্শ কেন্দ্র, অনাথ আশ্রম ও বিদ্যালয়সহ দ্য মিশনারিজ অফ চ্যারিটির ৬১০টি কেন্দ্র বিদ্যমান ছিল।
মেরি টেরিজা বোজাঝিউ একজন বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব; মৃত্যুর আগে ও পরে তিনি বিভিন্ন ব্যক্তি, সংস্থা ও একাধিক রাষ্ট্রের সরকার দ্বারা নন্দিত ও নিন্দিত হয়েছেন। জার্মেইন গ্রিয়ার টেরিজাকে 'ধর্মীয় সাম্রাজ্যবাদী' হিসেবে সমালোচনা করেছেন।ক্রিস্টোফার হিচেন্স, মাইকেল প্যারেন্টি, অরূপ চট্টোপাধ্যায়, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ প্রভৃতি ব্যক্তি ও সংস্থা জন্মনিরোধক এবং গর্ভপাতের বিষয়ে তার আপত্তি, দারিদ্র্যের আধ্যাত্মিক মাহাত্ম্যে তার বিশ্বাস ও মৃত্যুপথযাত্রীদের খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করার সমালোচনা করেন। বিভিন্ন মেডিক্যাল জার্নালে তার প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসার নিম্নমানের সমালোচনা করা হয় এবং দানের অর্থের অস্বচ্ছ ব্যয়ের বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
জীবনী
প্রাথমিক জীবন
অ্যাগনিস গঞ্জা বোজাঝিউ আলবেনীয় ভাষায় গঞ্জা শব্দের অর্থ গোলাপকুঁড়ি) ১৯১০ সালের ২৬ আগস্ট উসমানীয় সাম্রাজ্যের ইউস্কুবে (অধুনা উত্তর মেসিডোনিয়ার রাজধানী স্কপিয়ে) জন্মগ্রহণ করেন। তবে ২৬ আগস্ট জন্ম হলেও তিনি ২৭ আগস্ট তারিখটিকে তার "প্রকৃত জন্মদিন" মনে করতেন; কারণ ওই তারিখেই তার বাপ্তিস্ম সম্পন্ন হয়েছিল। তিনি ছিলেন নিকোলো ও দ্রানা বয়াজুর কনিষ্ঠ সন্তান। তাদের আদি নিবাস ছিল আলবেনিয়ার শ্কড্যর্ অঞ্চলে। তার পিতা আলবেনিয়ার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯১৯ সালে মাত্র আট বছর বয়সে তার পিতৃবিয়োগ হয়। পিতার মৃত্যুর পর তার মা তাকে রোমান ক্যাথলিক আদর্শে লালন-পালন করেন। জোয়ান গ্র্যাফ ক্লুকাস রচিত জীবনী থেকে জানা যায়, ছোট্টো অ্যাগনেস ধর্মপ্রচারকদের জীবন ও কাজকর্মের গল্প শুনতে বড়োই ভালবাসতেন। ১২ বছর বয়সেই তিনি ধর্মীয় সন্ন্যাস জীবন যাপনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। ১৮ বছর বয়সে তিনি গৃহত্যাগ করে একজন ধর্মপ্রচারক হিসেবে যোগ দেন সিস্টার্স অফ লোরেটো সংস্থায়। মা আর দিদিদের সঙ্গে আর তার কোনোদিন দেখা হয়নি।
অ্যাগনেস প্রথমে আয়ারল্যান্ডের রথফার্নহ্যামে লোরেটো অ্যাবেতে ইংরেজি ভাষা শিক্ষা করতে যান। কারণ এই ভাষাই ছিল ভারতে সিস্টার্স অফ লোরেটোর শিক্ষার মাধ্যম। ১৯২৯ সালে ভারতে এসে দার্জিলিঙে নবদীক্ষিত হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৩১ সালের ২৪ মে তিনি সন্ন্যাসিনী হিসেবে প্রথম শপথ গ্রহণ করেন। এই সময় তিনি ধর্মপ্রচারকদের পৃষ্ঠপোষক সন্ত Thérèse de Lisieux –এর নামানুসারে টেরিজা নাম গ্রহণ করেন। ১৯৩৭ সালের ১৪ মে পূর্ব কলকাতায় একটি লোরেটো কনভেন্ট স্কুলে পড়ানোর সময় তিনি চূড়ান্ত শপথ গ্রহণ করেন।
স্কুলে পড়াতে তার ভাল লাগলেও কলকাতার দারিদ্র্যে তিনি উত্তরোত্তর উদ্বিগ্ন হয়ে উঠতে লাগলেন।পঞ্চাশের মন্বন্তরে শহরে নেমে আসে অবর্ণনীয় দুঃখ আর মৃত্যু; ১৯৪৬ সালে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গাতেও বহু মানুষ মারা যান। এই সব ঘটনা টেরিজার মনে গভীর প্রভাব বিস্তার করে।
মিশনারিস অফ চ্যারিটি
১৯৪৬ সালের ১০ই সেপ্টেম্বর ধর্মীয় নির্জনবাসের জন্য দার্জিলিং যাওয়ার সময় তার মধ্যে এক গভীর উপলব্ধি আসে। এই অভিজ্ঞতাকে পরবর্তীতে "আহ্বানের ভিতরে আরেক আহ্বান" হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। এ নিয়ে তিনি আরও বলেছিলেন,
“ |
কনভেন্ট ত্যাগ করে দরিদ্রদের মাঝে বাস করা এবং তাদের সহায়তা করা আমার জন্য আবশ্যক ছিল। এটা ছিল এক সরাসরি আদেশ। এই আদেশ পালনে ব্যর্থ হওয়ার অর্থ ছিল বিশ্বাস ভেঙে ফেলা |
” |
১৯৪৮ সালে এই মোতাবেক দরিদ্রের মাঝে ধর্মপ্রচার কাজ শুরু করেন। প্রথাগত লোরেটো অভ্যাস ত্যাগ করেন। পোশাক হিসেবে পরিধান করেন নীল পারের একটি সাধারণ সাদা সুতির বস্ত্র। এ সময়ই ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণ করে বস্তি এলাকায় কাজ শুরু করেন। প্রথমে মতিঝিলে একটি ছোট স্কুল স্থাপনের মাধ্যমে শুরু করেছিলেন। পরবর্তীতে ক্ষুধার্ত ও নিঃস্বদের ডাকে সাড়া দিতে শুরু করেন। তাদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করতে থাকেন। তার এই কার্যক্রম অচিরেই ভারতীয় কর্মকর্তাদের নজরে আসে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও তার কাজের স্বীকৃতি দিয়েছিলেন।
প্রথম দিকের এই দিনগুলো তার জন্য বেশ কষ্টকর ছিল। এ নিয়ে ডায়রিতে অনেক কিছুই লিখেছেন। সে সময় তার হাতে কোন অর্থ ছিল না। গরিব এবং অনাহারীদের খাবার ও আবাসনের অর্থ জোগাড়ের জন্য তাকে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হতো। ধনী ব্যক্তিদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে হতো। এসব কাজ করতে গিয়ে অনেক সময়ই হতাশা, সন্দেহ ও একাকিত্ব বোধ করেছেন। মাঝে মাঝে মনে হয়েছে, কনভেন্টের শান্তির জীবনে ফিরে গেলেই বোধহয় ভাল হবে। ডায়রিতে লিখেছিলেন:
“ | ঈশ্বর চান যে, আমি এক বন্ধনমুক্ত সন্ন্যাসিনীই থাকি, ক্রুশ চিহ্নের দীনতা আমাকে আবৃত করে থাক। আজ একটা ভাল শিক্ষা পেলাম। গরিব লোকদের দারিদ্র্য কত কষ্টকর। যখন বাড়ি খুঁজে বেড়াচ্ছি, হেঁটে হেঁটে আমার গা-হাত-পা ব্যথা হয়ে যেত। আমি ভেবে দেখলাম, বাসস্থান, খাদ্য, সাহায্য কোথায় পাবে, তার চেষ্টাতেই গরিব মানুষদের দেহ এবং আত্মা কী যন্ত্রণা ভোগ করে। তখন প্রবল হয়ে উঠলো লোভ। লরেটোর প্রাসাদোপম গৃহগুলির কথা মনে উদয় হল। কে যেন আমায় লোভ দেখাতে লাগল, 'একবার মুখ ফুটে চাইলেই, সে-সবই আবার ফিরে পাব।' আমার প্রভু, নিজের ইচ্ছায়, তোমার প্রতি প্রেমে, আমি তাই করতে চাই, যা আমাকে দিয়ে তুমি করাতে চাও। এক বিন্দু অশ্রুও আমার চোখ থেকে আমি পড়তে দিলাম না। | ” |
১৯৫০ সালের ৭ই অক্টোবর তেরেসা "ডায়োসিসান ধর্মপ্রচারকদের সংঘ" (বিশপের এলাকার মত সমাবেশ) করার জন্য ভ্যাটিকানের অনুমতি লাভ করেন। এ সমাবেশই পরবর্তীতে মিশনারিস অফ চ্যারিটি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
কলকাতায় মাত্র ১৩ জন সদস্যের ছোট্ট অর্ডার হিসেবে চ্যারিটির যাত্রা শুরু হয়েছিল। বর্তমানে এর অধীনে ৪,০০০ এরও বেশি সন্ন্যাসিনী কাজ করছেন। চ্যারিটির অধীনে এতিমখানা ও এইড্স আক্রান্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র পরিচালিত হয়। বিশ্বব্যাপী শরণার্থী, অন্ধ, পক্ষাঘাতগ্রস্ত, বয়স্ক, মাদকাসক্ত, দরিদ্র্য, বসতিহীন এবং বন্যা, দুর্ভিক্ষ বা মহামারিতে আক্রান্ত মানুষের সেবায় চ্যারিটির সবাই অক্লান্ত পরীশ্রম করে যাচ্ছেন।
১৯৫২ সালে মাদার তেরেসা কলকাতা নগর কর্তৃপক্ষের দেয়া জমিতে মুমূর্ষুদের জন্য প্রথম আশ্রয় ও সেবা কেন্দ্র গড়ে তোলেন। ভারতীয় কর্মকর্তাদের সহায়তায় একটি পরিত্যক্ত হিন্দু মন্দিরকে কালিঘাট হোম ফর দ্য ডাইং-এ রূপান্তরিত করেন। এটি ছিল দরিদ্র্যদের জন্য নির্মীত দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র। পরবর্তীতে এই কেন্দ্রের নাম পরিবর্তন করে রাখেন নির্মল হৃদয়। এই কেন্দ্রে যারা আশ্রয়ের জন্য আসতেন তাদেরকে চিকিৎসা সুবিধা দেয়া হতো এবং সম্মানের সাথে মৃত্যুবরণের সুযোগ করে দেয়া হয়। এ বিষয় তেরেসা বলেন, "A beautiful death is for people who lived like animals to die like angels — loved and wanted." এর কিছুদিনের মধ্যেই তেরেসা হ্যানসেন রোগে (সাধারণ্যে কুষ্ঠরোগ নামে পরিচিত) আক্রান্তদের জন্য একটি সেবা কেন্দ্র খোলেন যার নাম দেয়া হয় শান্তি নগর। এছাড়া মিশনারিস অফ চ্যারিটির উদ্যোগে কলকাতার বাইরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেশ কিছু কুষ্ঠরোগ চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এই কেন্দ্রগুলোতে ঔষধ, ব্যান্ডেজ ও খাদ্য সুবিধা দেয়া হয়।
সংঘের শিশুদের লালন-পালন করতো। এক সময় শিশুর সংখ্যা অনেক বেড়ে যাওয়ায় তেরেসা তাদের জন্য একটি আলাদা হোম তৈরির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। এই অনুভূতি থেকেই ১৯৫৫ সালে নির্মল শিশু ভবন স্থাপন করেন। এই ভবন ছিল এতিম ও বসতিহীন শিশুদের জন্য এক ধরনের স্বর্গ।
অচিরেই মিশনারিস অফ চ্যারিটি দেশ-বিদেশের বহু দাতা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হয়। এর ফলে অনেক অর্থ সংগ্রহ করা সম্ভব হয়। ১৯৬০-এর দশকের মধ্যে ভারতের সর্বত্র চ্যারিটির অর্থায়ন ও পরিচালনায় প্রচুর দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র, এতিমখানা ও আশ্রয় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ভারতের বাইরে এর প্রথম কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৫ সালে ভেনিজুয়েলায়। মাত্র ৫ জন সন্ন্যাসিনীকে নিয়ে সে কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৬৮ সালে রোম, তানজানিয়া এবং অস্ট্রিয়াতে শাখা খোলা হয়। ১৯৭০-এর দশকে এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকার কয়েক ডজন দেশে শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সাথে অবশ্য তার দর্শন ও প্রায়োগিক দিক নিয়ে কিছু সমালোচনাও হয়। মাদার তেরেসার বিরুদ্ধে সমালোচকরা খুব কম তথ্যই হাজির করতে পেরেছিলেন। একথা স্বীকার করে নিয়েই ডেভিড স্কট বলেন, “মাদার তেরেসা স্বয়ং দারিদ্র্য বিমোচনের বদলে ব্যক্তি মানুষকে জীবিত রাখার উপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।” এছাড়া কষ্টভোগ বিষয়ে তার মনোভাবও সমালোচিত হয়েছে। অ্যালবার্টার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “তিনি মনে করতেন, কষ্টভোগের মাধ্যমে যীশুর কাছাকাছি যাওয়া যায়।” এছাড়া ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল ও দ্য ল্যান্সেট পত্রিকায় তার সেবা কেন্দ্রগুলোর চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে। অনেকেই এক হাইপোডার্মিক সূচ একাধিক বার ব্যবহারের কথা বলেছেন। কেন্দ্রগুলোর জীবনযাত্রার নিম্নমানও সমালোচিত হয়েছে। তার উপর সংঘের অ-বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গি পদ্ধতিগত রোগ-নিরূপণকে প্রায় অসম্ভব করে তুলেছিল।
আন্তর্জাতিক কার্যক্রম
১৯৮২ সালে বৈরুত অবরোধের চূড়ান্ত প্রতিকূল সময়ে মাদার তেরেসা যুদ্ধের একেবারে ফ্রন্ট লাইনের হাসপাতালে আটকে পড়া ৩৭ শিশুকে উদ্ধার করেন। ইসরায়েলী সেনাবাহিনী ও ফিলিস্তিনী গেরিলাদের মধ্যে সাময়িক যুদ্ধ বিরতি ঘটিয়ে পরিবেশ কিছুটা অনুকূলে এনেছিলেন। এই সুযোগেই রেড ক্রসের সহায়তায় যুদ্ধ বিধ্বস্ত অঞ্চলে যান। বিধ্বস্ত হাসপাতালগুলো থেকে কম বয়সের রোগীদের সরিয়ে আনেন।
সমাজতান্ত্রিক শাসনের সময়ে পূর্ব ইউরোপের অনেক দেশেই ধর্মপ্রচার কার্যক্রম নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু ১৯৮০-'র দশকে ইউরোপের সে অংশ তুলনামূলক উদার হয়ে উঠে। এ সময়েই মাদার তেরেসা মিশনারিস অফ চ্যারিটির কাজ পূর্ব ইউরোপ পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হন। কয়েক ডজন প্রকল্পের মাধ্যমে তার কাজ শুরু হয়েছিল। এ সময় গর্ভপাত এবং বিবাহবিচ্ছেদ-এর বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানের কারণে অনেকে তার সমালোচনা করেন। কিন্তু তেরেসা সব সময় বলতেন, "No matter who says what, you should accept it with a smile and do your own work."
তেরেসা ইথিওপিয়ার ক্ষুধার্তদের কাছে যেতেন, ভ্রমণ করতেন চেরনোবিল বিকিরণে আক্রান্ত অঞ্চলে। আমেরিকার ভূমিকম্পে আক্রান্তদের মাঝে সেবা পৌঁছে দিতেন। ১৯৯১ সালে তেরেসা প্রথমবারের মত মাতৃভূমি তথা আলবেনিয়াতে ফিরে আসেন। এদেশের তিরানা শহরে একটি "মিশনারিস অফ চ্যারিটি ব্রাদার্স হোম" স্থাপন করেন।
১৯৯৬ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর ১০০ টিরও বেশি দেশে মোট ৫১৭টি ধর্মপ্রচার অভিযান পরিচালনা করছিলেন। মাত্র ১২ জন সদস্য নিয়ে যে সংঘের যাত্রা শুরু হয়েছিল সময়ের ব্যবধানে তা কয়েক হাজারে পৌঁছোয়। তারা সবাই বিভিন্ন দেশের প্রায় ৪৫০টি কেন্দ্রে মানবসেবার কাজ করে যাচ্ছিল। গরিবদের মধ্যেও যারা গরিব তাদের মাঝে কাজ করতো এই চ্যারিটি, এখনও করে যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চ্যারিটির প্রথম শাখা প্রতিষ্ঠিত হয় নিউ ইয়র্কের ব্রঙ্ক্স বরোর দক্ষিণাঞ্চলে। ১৯৮৪ সালের মাঝে যুক্তরাষ্ট্রে চ্যারিটির প্রায় ১৯টি শাখা সক্রিয়ভাবে কাজ করা শুরু করে।
চ্যারিটি দাতব্য কাজের জন্য যে অর্থ পেতো তার ব্যবহার নিয়ে বেশ কয়েকজন সমালোচনা করেছেন। ক্রিস্টোফার হিচেন্স ও স্টার্ন সাময়িকী সমালোচনা করে বলেছে, গরীবদের উন্নয়নের কাজে চ্যারিটিতে যত অর্থ আসে তার কিছু অংশ অন্যান্য কাজেও ব্যয় করা হয়।
সিদ্ধাবস্থা
১৭ ডিসেম্বর ২০১৫ সালে ভ্যাটিকান নিশ্চিত করে যে পোপ ফ্রান্সিস মাদার তেরেসার একটি দ্বিতীয় অলৌকিক অবদানকে স্বীকৃতি দিয়েছেন, যেটিতে একাধিক মস্তিষ্কের টিউমার সহ একজন ব্রাজিলিয়ান মানুষের নিরাময় জড়িত। পোপ ফ্রান্সিস ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তে ভ্যাটিকান সিটির সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারে একটি অনুষ্ঠানে তাকে সন্ত উপাধি প্রদান করেন । ১৫ জন সরকারি প্রতিনিধি এবং ইতালি থেকে ১,৫০০ গৃহহীন মানুষ সহ, শত সহস্র মানুষ অনুষ্ঠানের জন্য জড়ো হন। অনুষ্ঠানটি ভ্যাটিকান চ্যানেলে লাইভ টেলিভিশনে এবং অনলাইন দেখানো হয়েছিল; মাদার তেরেসার আদি শহর স্কোপজেতে, তার সিদ্ধাবস্থার একটি সপ্তাহব্যাপী উদ্যাপন ঘোষণা করা হয়। ভারতের, কলকাতায় মিশনারিজ অফ চ্যারিটিতে একটি বিশেষ গণ উদ্যাপন করা হয়।
স্বাস্থ্যহানি ও মৃত্যু
১৯৮৩ সালে পোপ জন পল ২ এর সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে রোম সফরের সময় মাদার তেরেসার প্রথম হার্ট অ্যাটাক হয়। ১৯৮৯ সালে আবার হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পর তার দেহে কৃত্রিম পেসমেকার স্থাপন করা হয়। ১৯৯১ সালে মেক্সিকোতে থাকার সময় নিউমোনিয়া হওয়ায় হৃদরোগের আরও অবনতি ঘটে। এই পরিস্থিতিতে তিনি মিশনারিস অফ চ্যারিটির প্রধানের পদ ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব করেন। কিন্তু চ্যারিটির নানরা গোপন ভোটগ্রহণের পর তেরেসাকে প্রধান থাকার অনুরোধ করে। অগত্যা তেরেসা চ্যারিটির প্রধান হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন।
১৯৯৬ সালের এপ্রিলে পড়ে গিয়ে কলার বোন ভেঙে ফেলেন। আগস্টে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন। এর পাশাপাশি তার বাম হৃৎপিণ্ডের নিলয়, রক্ত পরিবহনে অক্ষম হয়ে পড়ে। ১৯৯৭ সালের ১৩ই মার্চ মিশনারিস অফ চ্যারিটির প্রধানের পদ থেকে সরে দাড়ান। ৫ই সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।
কলকাতার আর্চবিশপ হেনরি সেবাস্তিয়ান ডি'সুজা বলেন, তেরেসা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তিনি এক ধর্মপ্রচারককে এক্জোর্সিজ্ম করতে বলেছিলেন। কারণ তার ধারণা ছিল, কোন শয়তান তেরেসাকে আক্রমণ করেছে।
মৃত্যুর সময় মাদার তেরেসার মিশনারিস অফ চ্যারিটিতে সিস্টারের সংখ্যা ছিল ৪,০০০; এর সাথে ৩০০ জন ব্রাদারহুড সদস্য ছিল। আর স্বেচ্ছাসেবীর সংখ্যা ছিল ১০০,০০০ এর উপর। পৃথিবীর ১২৩টি দেশে মোট ৬১০টি কেন্দ্রে ধর্মপ্রচারণার কাজ পরিচালিত হচ্ছিল। এসব কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ছিল এইড্স, কুষ্ঠরোগ ও যক্ষ্মা রোগে আক্রান্তদের জন্য চিকিৎসা কেন্দ্র, সুপ কিচেন, শিশু ও পরিবার পরামর্শ কেন্দ্র, এতিমখানা ও বিদ্যালয়।
আধ্যাত্মিক জীবন
যদিও টেরিজা তার দৈনন্দিন জীবনে নিয়মানুবর্তিতার সাথে খ্রিস্টধর্মের আচার পালন করতেন, তার চিঠিপত্র থেকে জানা যায় তিনি তার জীবনের শেষ পঞ্চাশ বছর অন্তরের অন্তস্থলে ইশ্বরের অস্তিত্ব অনুভব করেননি। ইশ্বরের অনুপস্থিতে হাহাকার প্রকাশ করে তিনি লিখেছেন যে ঈশ্বর তাকে পরিত্যাগ করেছেন।
“ | Where is my faith? Even deep down ... there is nothing but emptiness and darkness ... If there be God—please forgive me. কোথায় আমার বিশ্বাস? এমনকি হৃদয়ের গভীরে শূন্যতা আর অন্ধকার ছাড়া কিছু নেই। যদি ঈশ্বর তুমি থাকো, আমাকে ক্ষমা করো। |
” |
সমালোচনা
একজন বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে মেরি টেরিজা বোজাঝিউ'র জীবন ও কর্ম তার মৃত্যুর আগে ও পরে বিশ্বের বিভিন্ন ব্যক্তি, সংস্থা ও একাধিক রাষ্ট্রের সরকার দ্বারা নন্দিত ও নিন্দিত হয়েছে। তার ও তার প্রতিষ্ঠিত দাতব্য ধর্মপ্রচারকদলের ক্রিয়াকলাপ অসংখ্য বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সমালোচকরা দাতব্য ধর্মপ্রচারকদলের সেবার নিম্নমান, বলপূর্বক ধর্মান্তর ও মৃত্যুপথযাত্রীদের খ্রিস্টধর্মে দীক্ষাদানের নিন্দা জ্ঞাপন করেছে এবং তাদের সাথে উপনিবেশবাদ ও বর্ণবাদের সম্পর্ক পেয়েছে। টেরিজার সঙ্ঘের 'সবকিছুই ছিল খ্রিস্টান হবার শর্তে' – সে খাবার হোক বা শোবার জায়গা হোক। টেরিজা গণযোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত ছিলেন। অনেক সমালোচক মনে করেন, ক্যাথলিক চার্চ খ্রিস্টানধর্ম প্রচার ও সমালোচনার মোকাবেলা করতে তেরেসার ভাবমূর্তি ব্যবহার করেছে। বিশ্ববিখ্যাত চিন্তাবিদ জার্মেইন গ্রিয়ার টেরিজাকে 'ধর্মীয় সাম্রাজ্যবাদী' বলে সমালোচনা করেছেন। অনেকে তাকে উন্মত্ত উগ্রবাদী, মৌলবাদী তথা ভণ্ড বলে আখ্যায়িত করে বলেছেন যে তিনি নিজের ধর্মীয় আদর্শ তথা ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করতে দুস্থবঞ্চিতদের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
পুরস্কার ও সম্মাননা
- নোবেল শান্তি পুরস্কার -১৯৭৯
- ভারতরত্ন -১৯৮০
- সন্তকরণ, ২০১৬
আরো পড়ুন
টীকা
বহিঃসংযোগ
- জীবনী - ভ্যাটিকানের ওয়েবসাইট
- মাদার তেরেসা স্মারক নিবন্ধগুচ্ছ
- মাদার তেরেসা: দি এঞ্জেল অফ মার্সি
- মাদার তেরেসা: দি পাথ অফ লাভ
- নোবেল ফাউন্ডেশনে নোবেল বিজয়ী মাদার তেরেসার জীবনী ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১ সেপ্টেম্বর ২০০৪ তারিখে
- নোবেল বক্তৃতা, ডিসেম্বর ১১, ১৯৭৯
- মাদার তেরেসা (দি নোবেল প্রাইজ ইন্টারনেট আর্কাইভ)
- মাদার তেরেসা: দি এঞ্জেল অফ মার্সি (সিএনএন) ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৭ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে
- The TIME 100: শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি - মাদার তেরেসা ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১ মে ২০০৯ তারিখে
- লিসেন টু মাদার তেরেসা প্রে হার ডেইলি প্রেয়ার
- স্পিচ এট নেশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট, ওয়াশিংটন, ডি.সি., ফ্রেব্রুয়ারি ৩, ১৯৯৪
- Peggy Noonan, “Still, Small Voice,” Crisis, 1 February 1998 (নেশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট স্পিচ)
- মাদার তেরেসা (ইন্টারনেট মুভি ডাটাবেজ)
- সমালোচনা
- Christopher Hitchens' criticisms of মাদার তেরেসা ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৮ অক্টোবর ২০০০ তারিখে
- Sally Warner: Mother Teresa of Calcutta
- An open letter to Mother Teresa, from Aroup Chatterjee
- Donal MacIntyre: The squalid truth behind the legacy of Mother Teresa
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী (১৯৭৬-২০০০)
| |
---|---|
| |
|