রেবিজ ভাইরাস
| রেবিজ ভাইরাস (RABV) | |
|---|---|
| 
 | |
| ট্রান্সমিশন মাইক্রোগ্রাফ চিত্রে অসংখ্য রেবিজ ভিরিয়ন(গাঢ় ধূসর বর্ণের কণিকাসমূহ) ও নেগ্রিবডি(রেবিজ ইনফেকশনের সেলুলার ইনক্লুশন) দেখা যাচ্ছে। | |
| ভাইরাসের শ্রেণীবিন্যাস | |
| গ্রুপ: | ৫ম গ্রুপ ((-)ssRNA) | 
| বর্গ: | Mononegavirales | 
| পরিবার: | Rhabdoviridae | 
| গণ: | Lyssavirus | 
| প্রজাতি: | Rabies lyssavirus | 
রেবিজ ভাইরাস (ইংরেজি: Rabies virus) একধরনের নিউরোট্রপিক ভাইরাস যা মানুষ ও প্রাণীর দেহে রেবিজ রোগ করতে পারে। এই ভাইরাস সাধারণত প্রাণী ও মানুষের লালারসের মাধ্যমে ছড়াতে পারে।অন্যান্য র্যাবডোভাইরাসের মতো রেবিজ ভাইরাসেরও বহু পোষক প্রাণী রয়েছে। এই ভাইরাস জলাতংক রোগের জন্য দায়ী।
বৈশিষ্ট্যাবলী
রেবিজ ভাইরাস হলো র্যাবডোভাইরাস পরিবারের অন্তর্গত বুলেট আকৃতির ক্যাপসিড ও লিপোপ্রোটিন এনভেলাপযুক্ত এক-সূত্রক নেগেটিভ পোলারিটি আরএনএ ভাইরাস। জিনোম আরএনএ নেগেটিভ পোলারিটি হওয়ার জন্য এর ভিরিওনে আরএনএ ডিপেন্ডেন্ট আরএনএ পলিমারেজ থাকে। রেবিজ ভাইরাস একক অ্যান্টিজেনিক টাইপ। এই ভাইরাসের অ্যান্টিজেনেসিটি এর এনভেলাপের গ্লাইকোপ্রোটিন স্পাইকে বিদ্যমান।
বিস্তার
এই ভাইরাস সাধারণত রেবিজ দ্বারা আক্রান্ত প্রাণীর কামড়ের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে। রেবিজ ভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত প্রাণীর ভাইরাল এনসেফালাইটিস হয় ফলে প্রাণীটি আক্রমণাত্মক হয়ে যায় এবং অল্পতেই কামড়িয়ে দেয়। এই ধরনের প্রাণীকে রেবিড অ্যানিম্যাল (rabid animal) বলে। এই ভাইরাস প্রায় সকল স্তন্যপায়ী প্রাণীকেই আক্রান্ত করতে পারে তবে খুব অল্পসংখ্যক স্তন্যপায়ী মানুষের সংক্রমণের উৎস হিসেবে গুরুত্ব বহন করে। সাধারণত কুকুর, বিড়াল, বাদুড়, ভোঁদড়, রাকুন প্রভৃতির মাধ্যমে বেশি ছড়ায়। সাধারণত খরগোশ ও তীক্ষ্ণদন্তী প্রাণী (rodent) যেমন, ইঁদুর, মূষিক, কাঠবিড়াল প্রভৃতির মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ায় না। সারাবিশ্বে প্রতিবছর প্রায় পঞ্চাশ হাজার মানুষ রেবিজ রোগে মৃত্যু বরণ করে।
জীবনচক্র
রেবিজ ভাইরাস কুকুর, বিড়াল প্রভৃতি প্রাণীর কামড়ের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে। কামড় স্থানেই এরা বংশবৃদ্ধি আরম্ভ করে দেয়। এরা সংবেদী স্নায়ুকে আক্রান্ত করে এবং অ্যাক্সন বেয়ে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের দিকে এগোতে থাকে। স্নায়ুর মধ্য দিয়ে পরিবহনের সময় সাধারণত কোনো ইমিউন রিয়্যাকশন হয় না, যদিওবা হয় তাহলে তা খুবই সামান্য। ভাইরাস কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে পৌছানোর পর সেখানে বংশবৃদ্ধি করতে থাকে এবং পুনরায় প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র বেয়ে লালাগ্রন্থিসহ অন্যান্য অঙ্গে এসে জমা হয়। লালাগ্রন্থি থেকে লালারসে ভাইরাস প্রবেশ করে ফলে জলাতঙ্ক রোগীর কামড়ের মাধ্যমে এটা অন্যের দেহে পরিবাহিত হতে পারে। স্নায়ুতন্ত্রে এটি নিউরনকে ধ্বংস করে এবং এনসেফালাইটিস করতে পারে।
রোগ
এই ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট রোগকে রেবিজ (rabies) বলে। এই ভাইরাসের সুপ্তাবস্থা কামড় স্থানের উপর ভিত্তি করে দুই থেকে ষোল সপ্তাহ বা আরো বেশি হতে পারে। পায়ের তুলনায় মাথার দিকে কামড়ালে সুপ্তিকাল আরো কমে যায় কারণ ভাইরাসের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে পৌছাতে সময় কম লাগে। প্রথমদিকে অনির্দিষ্ট কিছু লক্ষণ যেমন জ্বর, ক্ষুধামন্দা, কামড় স্থানের অনুভূতিতে পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। কয়েকদিন পর থেকে তন্দ্রা, কনফিউশন, লালারসের ক্ষরণ বৃদ্ধি প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দেয়। সবচেয়ে লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে ঢোক গিলার সময় তীব্র ব্যথাযুক্ত সংকোচন হওয়া বিশেষ করে পানি পানের সময় গলায় তীব্র ব্যথা হয় ফলে রোগীর মধ্য হাইড্রোফোবিয়া বা পানিভীতি তৈরি হয়। এই অবস্থার জন্য বাংলায় এই রোগকে জলাতঙ্ক নামে অভিহিত করা হয়। এই রোগ একবার হলে মৃত্যু অনিবার্য। কোনো অ্যান্টিভাইরাল ঔষধ এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে না তবে এই রোগের টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে। রেবিড প্রাণী কামড় দেওয়ার সাথে সাথে দ্রুত সময়ের মধ্যা টিকা নিলে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।