Продолжая использовать сайт, вы даете свое согласие на работу с этими файлами.
লাইকেন
লাইকেন(/ˈlaɪkən/ or /ˈlɪtʃən/) হচ্ছে একটি ছত্রাক (মাইকোবায়েন্ট) এবং একটি সালোকসংশ্লেষণে সক্ষম জীবের (ফটোবায়েন্ট) একত্রে সহাবস্থান। ইংরেজি Lichen শব্দটি এসেছে ল্যাটিন Leichen থেকে, যার অর্থ হল শৈবালতুল্য পুষ্পক ছত্রাক বিশেষ। ফটোবায়েন্ট হচ্ছে মূলত সবুজ শৈবাল ( সাধারণত Trebouxia) এবং সায়ানোব্যাকটেরিয়া ( সাধারণত Nostoc )। ছত্রাকের সাথে কখনো কখনো শৈবাল ও সায়ানোব্যাকটেরিয়া উভয়েই থাকতে পারে। দুইটি ভিন্ন ধরনের জীবের এধরনের সহাবস্থানকে মিথোজীবিতা বলে।
শৈবালটি ছত্রাকের ক্রীতদাস হিসেবে থাকে বলে এই মিথোজীবিতাকে হেলোটিজম ও বলা হয়ে থাকে। অধিকাংশ লাইকেনের ক্ষেত্রে ছত্রাক শৈবাল কোষের অভ্যন্তরে হস্টোরিয়াম প্রেরণ করে পুষ্টি সংগ্রহ করে বলে এই সহাবস্থানকে আংশিক পরজীবিতা ও বলা হয়ে থাকে। লাইকেন অসংখ্য বর্ণ, প্রকার ও আকৃতির হতে পারে। লাইকেনের বৈশিষ্ট্যগুলো উদ্ভিদের মত হলেও লাইকেন উদ্ভিদ নয়। লাইকেন শাখাযুক্ত হতে পারে (ফ্রুটিকোজ), পাতার মত হতে পারে (ফোলিয়োজ), ভূমির ওপর রঙের স্তর গঠন করেছে এমনও হতে পারে (ক্রাসটোজ) অথবা অন্য প্রকারেরও হতে পারে। লাইকেনের নামের সাথে প্রায়শই মস শব্দটি যুক্ত থাকে (যেমন- "Reindeer moss", "Iceland moss"), লাইকেন দেখতে মসের মত হতে পারে এবং মসের সাথে বৃদ্ধি লাভ করতে পারে, কিন্তু এদের সাথে মস অথবা অন্য কোন উদ্ভিদের কোন সম্পর্ক নেই।
লাইকেন সমুদ্র স্তর থেকে উচ্চ আলপাইন স্তর, লাইকেন ব্যাপকভাবে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বাকল, পাতা, মস এবং অন্যান্য লাইকেনের উপর ও প্রচুর পরিমাণে লাইকেন জন্মাতে পারে। অনুমান করা হয় যে ভূপৃষ্ঠের শতকরা ৬ শতাংশ লাইকেন দ্বারা ঢাকা।
অন্তর্গঠন
অণুবীক্ষণ যন্ত্রে লাইকেনের চারটি স্তর দেখা যায়। সবচেয়ে উপরের স্তরটি ঘন সন্নিবেশিত ছত্রাকীয় হাইফি দ্বারা গঠিত। এটি ঊর্ধ্ব কর্টেক্স। এর পুরুত্ব কয়েক শত মাইক্রোমিটার হতে পারে। ঊর্ধ্ব কর্টেক্স এর পরবর্তী স্তর শৈবাল স্তর। এই স্তরে ছত্রাকের হাইফির ফাঁকে ফাঁকে শৈবাল অবস্থিত। শৈবাল কোষ সাধারণত হাইফি দ্বারা মোড়ানো থাকে। কখনো কখনো কোষগুলো ভেদ করে হস্টোরিয়া প্রবেশ করে। শৈবাল স্তরের নিচের স্তরটি মেডুলা স্তর। এই স্তরে ফাঁকা ফাঁকা ভাবে ছত্রাক হাইফি থাকে। কোন শৈবাল কোষ থাকে না। সর্বশেষ স্তরটি হচ্ছে নিম্ন কর্টেক্স। এই স্তরটিও ঊর্ধ্ব কর্টেক্স স্তরের মত ঘন সন্নিবেশিত ছত্রাকীয় হাইফি দ্বারা গঠিত। এই স্তরের নিম্ন পৃষ্ঠে প্রায়শই মূলসদৃশ ছত্রাকীয় রাইজাইন দেখা যায় যা লাইকেনকে পোষকের সাথে আটকিয়ে রাখে।
বিস্তার ও বংশবৃদ্ধি
বেশিরভাগ লাইকেন অযৌন প্রজনন করে; কখনো অঙ্গজ প্রজনন আবার কখনো ছত্রাক এবং শৈবাল কোষ ধারণকারী ডায়াস্পোর এর বিচ্ছুরণ এর মাধ্যমে। Soredia ( একবচনে Soredium) হচ্ছে কতগুলো শৈবাল কোষের গুচ্ছ যা ছত্রাক ফিলামেন্টাস দ্বারা আবদ্ধ থাকে, বাতাসের মাধ্যমে বিচ্ছুরণ ঘটে। আরেক ধরনের ডায়াস্পোর পাওয়া যায় Isidium এ। Isidia থ্যালাসের সবচেয়ে বাইরের স্তর থেকে বৃদ্ধি লাভ করে, এরা ভঙ্গুর প্রকৃতির হওয়ায় বাতাস, প্রাণী এবং বৃষ্টির ফোঁটার প্রভাবে ভেঙ্গে বিস্তার লাভ করতে পারে। ফ্রুটিকোজ লাইকেন কিছু কিছু ক্ষেত্রে খণ্ডিত হতে পারে। থ্যালাসে সুস্পষ্ট পার্থক্য না থাকায় কোনটি ডায়াস্পোর এর বিস্তার আর কোনটি অঙ্গজ প্রজনন তা সহজে বোঝা যায় না। অনেক লাইকেন শুষ্ক হয়ে খণ্ডিত হয়ে যায় এবং বিস্তার লাভ করে। পরবর্তীতে আর্দ্রতা উপস্থিত হলে খণ্ডগুলো বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। অনেক লাইকেন-এর ছত্রাক সদস্য অন্যান্য সাধারণ ছত্রাকের মত মিয়োসিস কোষ বিভাজনের মাধ্যমে স্পোর সৃষ্টি করে যৌন প্রজনন প্রক্রিয়ায় বংশবৃদ্ধি করে। বিস্তারের পর লাইকেন গঠনের জন্য ছত্রাকের স্পোরকে অবশ্যই একটি লাইকেন গঠন উপযোগী শৈবাল সদস্যের সাথে মিলিত হতে হবে।
বাসস্থান
লাইকেন রেইন ফরেস্ট ও উডল্যান্ডের গাছের শাখা ও পাতায় এপিফাইট হিসেবে থাকে না। অর্থাৎ যে গাছে অবস্থান করে সেখানে পরজীবী হিসেবে না থেকে বৃষ্টিপাত এবং বাতাস থেকে পুষ্টি ও আর্দ্রতা শোষণ করে। এছাড়া নগ্ন পাথর, ভূমি পৃষ্ঠ এবং সুষম আর্দ্রতাবিশিষ্ট পরিবেশে জন্মায়। এমন অনেক বহুতল ভবন রয়েছে যাদের ছাঁদে লাইকেন জন্মায়। লাইকেন ব্যাপকভাবে বিস্তৃত ও সম্ভবত দীর্ঘায়ুর অধিকারী। লাইকেনের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ দৈহিক গঠন এবং কোষ রসায়ন পৃথকভাবে বসবাসকারী ছত্রাক এবং শৈবাল থেকে ভিন্ন। পৃথিবীর কিছু চরম পরিবেশে লাইকেনের জন্ম হয়। উদাহরণস্বরূপ আর্কটিক তুন্দ্রা, উত্তপ্ত মরুভমি, পাথুরে উপকূল, এবং প্রত্যাশিত ধাতব লাভের পর অবশিষ্ট বিষাক্ত কাচ সদৃশ উপজাতকের স্তুপেও এদের জন্ম হতে পারে ।
সংক্ষিপ্ত বৈশিষ্ট্য
লাইকেনের দেহ ( থ্যালাস ) শৈবাল ও ছত্রাকের দেহ অপেক্ষা ভিন্ন। ছত্রাক শৈবালটিকে ঘিরে ফেলে, প্রায়শই ছত্রাক টিস্যু শৈবালকে আবদ্ধ করে ফেলে যা লাইকেন গঠনে সহায়ক। কখনো কখনো ছত্রাকের হস্টোরিয়া শৈবালের কোষ প্রাচীর ভেদ করে প্রবেশ করে। লাইকেন সামান্য পরিমাণ পানির উপস্থিতিতেও টিকে থাকতে পারে। মেমব্রেনের পুনর্গঠনের জন্য কয়েক মিনিট সময় লাগে। শৈবাল ও সায়ানোব্যাকটেরিয়ার কোষ সালোকসংশ্লেষণ করতে পারে বলে লাইকেনে উপস্থিত দুটি জীবই পরিবেশের কার্বন ডাই অক্সাইড কে জৈব কার্বন চিনিতে রুপান্তর করে ব্যবহারের সুযোগ পায়। সহাবস্থানকারী জীবদ্বয় প্রধানত বৃষ্টিপাত এবং ধূলা-বালির মাধ্যমে পরিবেশ থেকে পানি ও খনিজ পুষ্টি গ্রহণ করে। লাইকেনের ছত্রাক সদস্যটি পানি ধরে রেখে এবং খনিজ পুষ্টি আহরণের জন্য অপেক্ষাকৃত বড় পৃষ্ঠ প্রদান করে শৈবালকে সাহায্য করে। ছত্রাকের সঙ্গীটি যদি সায়ানোব্যাকটেরিয়া হয় অথবা শৈবালও একইসাথে উপস্থিত থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট লাইকেন গঠন করে সেখানে সায়ানোব্যাকটেরিয়াটি নাইট্রোজেন সংবন্ধন করে লাইকেনে নাইট্রোজেনের যোগান দেয়। যদিও বিভিন্ন সায়ানোলাইকেনে উপস্থিত সায়ানোব্যাকটেরিয়াগুলোর মধ্যে অনেক মিল রয়েছে, কিন্তু তারা মুক্ত অবস্তায় পরিবেশে বিরাজমান সর্বাধিক ঘনিষ্ঠ সায়ানোব্যাকটেরিয়া থেকে ভিন্ন। দুইটি ভিন্ন প্রজাতি যুক্ত হয়ে লাইকেন গঠন করলে তাদের বাস্তুসংস্থানিক বিস্তৃতি বৃদ্ধি পায় কিন্তু এরূপ মিথোজীবিতা তাদের জন্য সবসময় বাধ্যতামূলক নয়। উদাহরণস্বরূপ লাইকেনের অনেক শৈবাল সদস্যকে স্বাধীন ভাবেও পরিবেশে টিকে থাকতে দেখা যায়। লাইকেনে উপস্থিত ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির উভয়েই এই সহাবস্থানের সুফল ভোগ করতে পারে কিংবা যেকোনো একটি প্রজাতি এর সুফল ভোগ করতে পারে অথবা একটি প্রজাতি পরজীবী হিসেবেও থাকতে পারে। কোন সায়ানোব্যাকটেরিয়া গবেষণাগারে একাকী যে গতিতে বৃদ্ধি পায় তা লাইকেনে সহাবস্থানকারী হিসেবে এর বৃদ্ধির গতির চেয়ে বেশি। ২০১২ সালের ২৬ এপ্রিল বিজ্ঞানিরা জানান যে জার্মান অ্যারোস্পেস সেন্টার (DLR) দ্বারা পরিচালিত মার্স সিমুলেসন ল্যাবরেটরিতে মঙ্গল গ্রহের মত একই পরিবেশে ৩৪ দিন পর্যবেক্ষণে লাইকেন টিকে থাকতে সক্ষম হয় এবং সালোকসংশ্লেষণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অভিযোজন দক্ষতা প্রদর্শন করে।
ইতিহাস
কিছু সময়ের জন্য লাইকেনকে একক জীবসত্তা মনে করা হয়েছিল। ১৮৬৭ সালে সুইস উদ্ভিদবিদ Simon Schwendener লাইকেন সম্পর্কে দ্বৈত তত্ত্ব প্রস্তাব করলে লাইকেনের প্রকৃত গঠন উন্মোচিত হওয়া শুরু করে। সে সময় গবেষণা ভিত্তিক প্রমাণ প্রদান করা সম্ভব ছিল না। Simon Schwendener আলোক অণুবীক্ষণযন্ত্র দ্বারা লাইকেন, শৈবাল ও ছত্রাকের অন্তর্গঠন এবং বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করে তার অনুকল্প (হাইপোথিসিস) উপস্থাপন করেছিলেন। সেই সময়ে একটি ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত ছিল যে প্রত্যেকটি জীবসত্তা একক জীবসত্তা। তাই সে সময়ের অনেক অগ্রগণ্য লাইকেনবিদ যেমন- James Mascall Morrison Crombie এবং William Nylander এই অনুকল্প প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
তবে অন্যান্য বিখ্যাত জীববিজ্ঞানী যেমন- Heinrich Anton de Bary, অ্যালবার্ট বারনার্ড ফ্র্যাঙ্ক, Melchior Treub এবং Hermann Hellriegel এত দ্রুত অনুকল্প প্রত্যাখ্যান করেননি এবং পরবর্তীতে এই ধারণা জ্ঞানের অন্যান্য শাখা যেমন- অণুজীববিজ্ঞান, উদ্ভিদবিজ্ঞান, প্রাণিবিজ্ঞান এবং মানব দেহে পরজীবীর ক্ষেত্রে বিস্তার লাভ করে। যখন ক্ষতিকর অণুজীব এবং এর পোষক এর মদ্ধকার সম্পর্ক উন্মোচিত হল তখন থেকে Schwendener এর অনুকল্প জনপ্রিয় হতে থাকল। লাইকেনের দ্বৈত চরিত্রের অস্তিত্বের গবেষণা ভিত্তিক প্রমাণ পাওয়া যায় ১৯৩৯ সালে যখন Eugen Thomas তার প্রথম সফল রি-সিনথেসিস পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেন।
পরিসংখ্যান
এরূপ মিথোজীবিতা ছত্রাককে পুষ্টি সরবরাহ করে বলে ছত্রাক এর ২০% প্রজাতি এরূপ মিথোজীবিতা গ্রহণ করেছে। Ascomycota পর্বে সর্বাধিক, ছত্রাকের ৪০% প্রজাতি লাইকেন হিসেবে থাকে। কিছু ছত্রাক যা লাইকেন গঠন করে, তারা যেসব ছত্রাক উদ্ভিদ দেহে পরজীবী তাদের সাথে একই বর্গে অবস্থান করে। অবশিষ্ট লাইকেন গঠনকারী ছত্রাক পাঁচটি বর্গে বিস্তৃত যাদের সকল সদস্যই লাইকেন গঠন করে( বর্গগুলো হচ্ছেঃ Graphidales, Gyalectales, Peltigerales, Pertusariales, এবং Teloschistales)। লাইকেন গঠনকারী ছত্রাক এবং সাধারণ ছত্রাক উভয়েই একই গণ অথবা প্রজাতির সদস্য হতে পারে।
লাইকেনের অটোট্রফিক সদস্যটি প্রোক্যারিওট ও হতে পারে অথবা ইউক্যারিওট ও হতে পারে। লাইকেন সৃষ্টিকারী ছত্রাকদের সাথে প্রায় ১০০ প্রজাতির সালোকসংশ্লেষণক্ষম সঙ্গীর সহাবস্থান চিহ্নিত করা হয়েছে যারা ৪০ টি গণ এবং ৫ টি ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণী(প্রোক্যারিওট : Cyanophyceae; ইউক্যারিওট : Trebouxiophyceae, Phaeophyceae, Chlorophyceae) এর অন্তর্ভুক্ত।প্রোক্যারিওটিক সদস্যরা হচ্ছে মূলত সায়ানোব্যাকটেরিয়া যারা নীলসবুজ শৈবাল নামে ও পরিচিত। আমাদের পরিচিত লাইকেন সমূহের মধ্যে ৮% লাইকেনে নীলসবুজ শৈবাল দেখা যায়। সবচেয়ে বেশি সংখ্যক প্রজাতি দেখা যায় Nostoc গণে। লাইকেনের ইউক্যারিওটিক সদস্যগুলো হচ্ছে ক্লোরোফাইটা সবুজ শৈবাল অথবা জ্যান্থোফাইটা হলুদ-সবুজ শৈবাল। ৯০% লাইকেনে সবুজ শৈবাল থাকে এবং এই শৈবালদের ৪০% Trebouxia গণের অন্তর্ভুক্ত। এদিক থেকে দ্বিতীয় বৃহত্তম গণ হচ্ছে Trentepohlia। এই শৈবালগুলো সম্ভবত লাইকেনের সদস্য হিসেবেও থাকতে পারে আবার স্বাধীনভাবেও পরিবেশে টিকে থাকতে পারে।
মিথোজীবিতা
- "লাইকেন হচ্ছে ছত্রাক যারা কৃষির সূচনা করেছে।" - Trevor Goward
এটা আবশ্যক নয় যে একটি ছত্রাক শুধুএকটি শৈবালের সাথেই একত্রে লাইকেন গঠন করবে। কোন লাইকেনে একটি ছত্রাকের একাধিক শৈবাল সঙ্গী থাকতে পারে। লাইকেনের গঠন আকৃতিতে ছত্রাকের প্রভাব বেশি থাকে। একটি শৈবাল প্রজাতি ভিন্ন ভিন্ন ছত্রাক প্রজাতির সাথে সহাবস্থান করে ভিন্ন ভিন্ন লাইকেন সৃষ্টি করতে পারে। একটি ছত্রাক প্রজাতি একসাথে দুইটি অথবা তিনটি শৈবাল প্রজাতির সাথেও লাইকেন গঠন করতে পারে। তবে খুব দুর্লভ হলেও এটা দেখা যায় যে দুই বা তারও অধিক ছত্রাক একটি মাত্র লাইকেন গঠনে অংশ নেয়।
বৈজ্ঞানিক নামকরণ ও শ্রেণীবিন্যাস
লাইকেন এবং এর অন্তর্ভুক্ত ছত্রাকের বৈজ্ঞানিক নাম একই হয়। লাইকেনের জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস পদ্ধতিও ছত্রাকের অনুরূপ। শৈবাল সদস্যটির বৈজ্ঞানিক নাম এবং শ্রেণীবিন্যাস লাইকেন ও ছত্রাকের বৈজ্ঞানিক নাম এবং শ্রেণীবিন্যাস অপেক্ষা ভিন্ন হয়।
প্রকারভেদ
গঠনগত প্রকারভেদ থ্যালাসের ভিত্তিতে করা হয়।
- ক্রাসটোজ লাইকেন- পোষক বস্তুর সাথে নিবিড়ভাবে লেগে থাকে।
- ফোলিয়োজ লাইকেন- এরা দেখতে বিষমপৃষ্ঠ পাতার মত।
- ফ্রুটিকোজ লাইকেন- শাখাযুক্ত, খাড়া অথবা ঝুলন্ত দেহের হয়।
- লেপ্রোজ লাইকেন- এই লাইকেন পাথরের উপর পাউডারের মত জন্মায়।
লাইকেনোমেট্রি
লাইকেনোমেট্রি হচ্ছে একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোন উন্মুক্ত পাথরের উপর অবস্থিত লাইকেনের বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে পাথরটির বয়স নির্ধারণ করা হয়। ১৯৩৩ সালে Knut Fægri সর্বপ্রথম এই পদ্ধতি প্রয়োগ করলেও ১৯৫০ সালে অস্ট্রিয়ান Roland Beschelইউরোপের আল্পস সম্পর্কিত একটি লেখায় এই বিষয়ে সর্বপ্রথম আলোচনা করেন।প্রত্নতত্ত্ব, জীবাশ্মবিদ্যা এবং Geomorphology তে এই পদ্ধতির ব্যবহার করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় লাইকেনের নিয়মিত কিন্তু ধীর বৃদ্ধি অনুমান করে উন্মুক্ত পাথরের বয়স নির্ণয় করা হয়। ৫০০ বছর কম পুরনো ভূমির বয়স নির্ণয়ে এটি বেশি উপযোগী কারণ এই সময়সীমায় রেডিওকার্বন পদ্ধতিগুলোর নির্ভুলতা কমে যায়।
বাস্তুসংস্থান
সূর্যের আলো পাওয়ার জন্য লাইকেনকে অন্যান্য উদ্ভিদের সাথে প্রতিযোগিতা করার কথা থাকলেও এদের ছোট আকার এবং ধীর বৃদ্ধির কারণে এরা ঐ সমস্ত স্থানে বিকশিত হয় যেখানে বড় গাছ-পালা জন্মানো কষ্টসাধ্য। লাইকেন পৃথিবীর কিছু চরম পরিবেশ যেমন সুউচ্চ পর্বতে উচ্চ অক্ষাংশে বিকাশ লাভ করে। কিছু লাইকেন মরুভূমি এবং আর্কটিক অঞ্চলের বরফে ঢাকা পরিবেশেও বিকাশ লাভ করে। লাইকেনের একটি বিশেষ সুবিধা হচ্ছে এরা poikilohydric (poikilo- variable, hydric- relating to water) অর্থাৎ অল্প পানি পেলেও টিকে থাকতে পারে। অত্যন্ত শুষ্ক পরিবেশে লাইকেনের কোষগুলো এমনভাবে শুষ্ক হয় যাতে অধিকাংশ জৈব রাসায়নিক ক্রিয়া থেমে যায়। একে ক্রিপ্টোবায়োটিক অবস্থা বলে। লাইকেন উচ্চ তাপমাত্রা, খরা সহ্য করে টিকে থাকে। বসবাসস্থবল বা সাবস্ট্রেট এর স্থায়িত্ব লাইকেনের আবাসস্থলের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।
European Space Agency আবিষ্কার করেছে যে লাইকেন কোন সুরক্ষা ছাড়াই মহাশূন্যে টিকে থাকতে পারে। Complutense University of Madrid এর Leopoldo Sancho দ্বারা পরিচালিত একটি গবেষণায় লাইকেনের দুইটি প্রজাতি Rhizocarpon geographicum এবং Xanthoria elegans কে একটি ক্যাপসিউল এ ভরে ২০০৫ সালের মে মাসে রাশিয়ান সয়োজ রকেটের মাধ্যমে মহাশূন্যে প্রেরণ করা হয়। ১৫ দিন পর সেগুলো ফেরত নিয়ে এসে পরীক্ষা করে দেখা যায় যে মহাশূন্যের পরিবর্তনশীল উচ্চ তাপমাত্রা ও কসমিক রশ্মির বিকিরণের মধ্যেও লাইকেনের স্বাস্থ্য ঠিক ছিল।
অভিব্যক্তি এবং ফসিলবিদ্যা
লাইকেন ছত্রাকের পুষ্টি লাভের একটি আদিম কৌশল। লাইকেন যে চরম পরিবেশে জন্মায় তা সাধারণত ফসিল গঠনের উপযোগী নয়। সবচেয়ে পুরনো যে ফসিল যাতে ছত্রাক ও শৈবাল উভয়কেই উদ্ধার করা হয়েছিল তা Devonian আমলের শুরুর দিকের, প্রায় ৪০০ মিলিয়ন বছর পুরনো। এটি থেকে সামান্য পুরানো ফসিল Spongiophyton কে গঠন এবং আইসোটোপের ভিত্তিতে লাইকেন বলা যায় যদিও আইসোটোপের ভিত্তি প্রশ্নবিদ্ধ। এটি প্রস্তাব করা হলেও প্রমাণিত নয় যে আরও পুরনো ফসিল Nematothallus লাইকেন ছিল। এটাও দাবি করা হয়েছে যে Ediacaran ফসিলগুলো লাইকেন ছিল, যদিও তা প্রমাণিত নয়।অ্যাম্বারে নিমজ্জিত লাইকেন ফসিল ও পাওয়া গেছে। উত্তর ইউরোপে অ্যাম্বারের টুকরায় ৪০ মিলিয়ন বছর পুরনো ফসিল Anzia পাওয়া গেছে।আমেরিকার উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার ট্রিনিটি কাউন্টি থেকে মধ্য Miocene যুগের ফসিল Lobaria পাওয়া গেছে।
বায়ু দূষণ
লাইকেন যদি সবসময় দূষিত বাতাসে উন্মুক্ত থাকে এবং কোন অংশ যদি দেহ থেকে ঝরে না যায় তবে লাইকেন দেহে দূষিত পদার্থের স্তুপ গঠন আটকাতে পারে না। পত্ররন্ধ্র এবং কিউটিকল না থাকায় লাইকেন অ্যারোসল এবং গ্যাস শোষণ করে যা তাদের থ্যালাস থেকে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় ফটোবায়েন্ট স্তরে প্রবেশ করে। লাইকেনের মূল না থাকায় বায়ু থেকে উপাদান গ্রহণ করে। ফলে লাইকেনে উপস্থিত উপাদান গুলো অনেক সময় বায়ুর উপাদানের সমাবেশ নির্দেশ করে। লাইকেন সম্পর্কিত অনেক গবেষণা লাইকেনকে কার্যকরী বায়োইনডিকেটর বা পরিবেশের বিশুদ্ধতার মানদণ্ড হিসেবে চিহ্নিত করে। সব লাইকেনই বায়ু দূষণের প্রতি সমানভাবে স্পর্শকাতরতা প্রদর্শন করে না। এটা নির্ভর করে মাইকোবায়েন্টের শক্তি চাহিদার উপর, মাইকোবায়েন্ট ফটোবায়েন্টের উপর যত বেশি নির্ভরশীল হয় স্পর্শকাতরতা তত বৃদ্ধি পায়। বায়ু দূষণের প্রভাবে লাইকেন এর ফটোবায়েন্ট জৈব রাসায়নিক শক্তি ব্যবহার করে কোষের গঠন মেরামত করতে। ফলে মাইকোবায়েন্ট এই শক্তি পায় না। ফলে মিথোজীবিতা নষ্ট হয় এবং লাইকেন গঠন ব্যাহত হয়।
ব্যবহার
খাদ্য
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে লাইকেনকে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কোন কোন দেশে দুর্ভিক্ষের সময় এটিকে খাওয়া হয়, কোন দেশে আবার এটি প্রধান খাদ্য। লাইকেনের পলিস্যাকারাইড মানুষ হজম করতে পারে না। আবার কিছু লাইকেনে বিষাক্ত উপাদান যেমন- vulpinic acid অথবা usnic acid থাকে। অতীতে উত্তর ইউরোপে Iceland moss (Cetraria islandica) গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য ছিল এবং একে রুটি, পুডিং, স্যূপ, সালাদ হিসেবে ব্যবহার হত। বেশিরভাগ লাইকেন হলুদ হয়।
Wila (Bryoria fremontii) অনেক মানুষের কাছে অতীতেও সুস্বাদু খাবার ছিল এবং এখনো আছে।
জৈব বিয়োজন
লাইকেনকে পলিসটার রেসিন বিয়োজন করতে দেখা গেছে।
গ্যালারী
Xanthoparmelia cf. lavicola, a foliose lichen, on basalt.
Map lichen (Rhizocarpon geographicum) on rock
Reindeer moss (Cladonia rangiferina)
Lobaria oregana, commonly called 'Lettuce lichen,' in the Hoh Rainforest, Washington State
Lecanora cf. muralis lichen on the banks of the Bega canal in Timișoara
Caloplaca marina, a marine lichen
আরও পড়ুন
- Ahmadjian V. (১৯৯৩)। The Lichen Symbiosis। New York: John Wiley & Sons। আইএসবিএন 0-471-57885-1।
- Brodo, I.M., S.D. Sharnoff, and S. Sharnoff, 2001. Lichens of North America. Yale University Press, New Haven.
- Gilbert, O. 2004. The Lichen Hunters. The Book Guild Ltd. England.
- Haugan, Reidar; Timdal, Einar (১৯৯২)। "Squamarina scopulorum (Lecanoraceae), a new lichen species from Norway"। Nordic Journal of Botany। 12 (3): 357–360। ডিওআই:10.1111/j.1756-1051.1992.tb01314.x।
- Hawksworth, D.L. and Seaward, M.R.D. 1977. Lichenology in the British Isles 1568 - 1975. The Richmond Publishing Co. Ltd., 1977.
- Kershaw, K.A. Physiological Ecology of Lichens, 1985. Cambridge University Press Cambridge.
- Kirk PM, Cannon PF, Minter DW, Stalpers JA. (২০০৮)। Dictionary of the Fungi. (10th সংস্করণ)। Wallingford: CABI। আইএসবিএন 978-0-85199-826-8। উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: একাধিক নাম: লেখকগণের তালিকা (link)
- Knowles M.C. (১৯২৯)। "Lichens of Ireland"। Proceedings of the Royal Irish Academy। 38: 1–32।
- Purvis, O.W., Coppins, B.J., Hawksworth, D.L., James, P.W. and Moore, D.M. (Editors) 1992. The Lichen Flora of Great Britain and Ireland. Natural History Museum, London.
- Sanders W.B. (২০০১)। "Lichens: interface between mycology and plant morphology"। BioScience। 51 (12): 1025–1035। ডিওআই:10.1641/0006-3568(2001)051[1025:LTIBMA]2.0.CO;2।
- Seaward M.R.D. (১৯৮৪)। "Census Catalogue of Irish Lichens"। Glasra। 8: 1–32।
- Whelan, P. 2011. Lichens of Ireland. The Collins Press, Cork, Ireland.
বহিঃসংযোগ
- LIAS light: an online interactive identification key for the lichen species of the World
- University of Sydney lichen biology
- Memorial University's NL Nature project, focusing primarily on lichens ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৮ জুন ২০১৯ তারিখে
- ESA article on lichen survivability in low earth orbit
- ব্রিটিশ লাইকেন সোসাইটি ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ জুলাই ২০১৯ তারিখে
- আয়ারল্যান্ডের লাইকেন
- উত্তর আমেরিকার লাইকেন
- Pacific Northwest Fungi Online Journal, includes articles on lichens
- Fungi that discovered agriculture
- Pictures of Tropical Lichens
- High Resolution 1.5 Gigapixel Image of a Lichen Covered Rock
- Good example of a Lichen
- How To Grow Lichen
- "Lichens"। New International Encyclopedia। ১৯০৫। উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link) [[Category:উইকিপিডিয়া নিবন্ধ যাতে নিউ ইন্টারন্যাশনাল এনসাইক্লোপিডিয়া থেকে একটি উদ্ধৃতি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে]]
- "Lichens"। এনসাইক্লোপিডিয়া আমেরিকানা। ১৯২০। উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)