Продолжая использовать сайт, вы даете свое согласие на работу с этими файлами.
লুই পা
লুই পা (ওড়িয়া: ଲୁଇ ପା, অসমীয়া: লুইপা) বৌদ্ধধর্মের একজন মহাসিদ্ধ, কবি ও বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থের রচয়িতা।
নামকরণ
যদিও তিব্বতী ভাষাইয় লুই শব্দের অর্থ 'যে ব্যক্তি মাছের অন্ত্র ভক্ষণ করেন', কিন্তু লুই শব্দটি প্রাচীন বাংলা শব্দ লোহিত (=রোহিতা=রুই) থেকে এসেছে বলে সুকুমার সেন মনে করেন। তার মতে ধর্মমঙ্গলকাব্য গ্রন্থে উল্লিখিত লুইধর, লুইচন্দ্র, লুইয়া প্রভৃতি নামগুলিও একই ভাবে লোহিত শব্দ থেকে এসেছে। আবার, অসমীয়া ঐতিহাসিক ডিম্বেশ্বর নাগের মতে এই নাম ব্রহ্মপুত্র নদ বা লুইট থেকে এসেছে।
চতুরাশিতি সিদ্ধ প্রবৃত্তি গ্রন্থ অনুযায়ী জীবনী
ভারতীয় মহাসিদ্ধদের জীবনী নিয়ে লেখা চতুরাশিতি সিদ্ধ প্রবৃত্তি গ্রন্থে লুইপাকে চুরাশিজন মহাসিদ্ধের একজন হিসেবে বলা হয়েছে। এই গ্রন্থ অনুযায়ী, লুইপা সিংহলদ্বীপে এক রাজার দ্বিতীয় সন্তান ছিলেন। সিংহলদ্বীপ নামে প্রাচীনকালে বেশ কিছু স্থান থাকলেও ঐতিহাসিকেরা শ্রীলঙ্কা অথবা ওড্ডিয়ানকে এই গ্রন্থে বর্ণিত সিংহলদ্বীপ বলে মনে করেছেন।
চতুরাশিতি সিদ্ধ প্রবৃত্তি গ্রন্থের মতে লুইপার পিতা তাকে রাজ্য শাসনের দায়িত্ব দিতে চাইলেও তিনি বোধিলাভের উদ্দেশ্যে নিজের রাজ্য ছেড়ে রামেশ্বরম হয়ে বজ্রাসন বা বুদ্ধগয়া চলে আসেন। এরপর তিনি সালিপুত্র বা মগধ পৌছলে, একজন ডাকিনী তাকে বোধিলাভের জন্য খাদ্যের ব্যাপারে রাজরক্তের অভিমান ভুলে যাওয়ার উপদেশ দিলে লুই পা বারো বছর শুধুমাত্র মাছের অন্ত্র খেয়ে জীবধারণ করেন। তিব্বতীতে এই কারণে লুই বলা হয়ে থাকে। এই গ্রন্থ অনুযায়ী মগধের রাজা ইন্দ্রপাল ও তার ব্রাহ্মণ মন্ত্রী দারিক পা ও দেঙ্গি পা নামে লুই পার দুই শিষ্যতে পরিণত হন।
চোস-ব্যুং গ্রন্থ অনুযায়ী জীবনী
বু-স্তোন-রিন-চেন-গ্রুব (তিব্বতি: བུ་སྟོན་རིན་ཆེན་གྲུབ་) রচিত চোস-ব্যুং গ্রন্থে লুই পাকে ওড্ডিয়ানের রাজা ললিতচন্দ্রের পুত্র হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। লুই পা শবর পার বক্তব্যে মুগ্ধ হয়ে তার কাছে উপদেশ চাইলে তাকে চক্রসম্বর তন্ত্র অনুসরন করতে বলা হয়। এই তন্ত্রসাধনা করে লুই পা গণচক্র অনুষ্ঠানে চব্বিশজন ডাকিনীর সাথে এক মৃতদেহ ভোজন করেন। এরপর তিনি ওড্ডিয়ান ত্যাগ করে বাংলায় গঙ্গা নদীর তীরে মাছের অন্ত্রের স্তূপের পাশে বসে বজ্রযান বৌদ্ধধর্মের সর্বোচ্চ মহামুদ্রা সিদ্ধি লাভ করেন।
তারানাথের লেখনীতে জীবনী
তিব্বতী বৌদ্ধধর্মের জোনাং মতের সাধক তারানাথের লেখার সঙ্গে চোস-ব্যুং গ্রন্থ অনুযায়ী লুই পার জীবনীর পার্থক্য আছে। তার লেখাতে পাওয়া যায়, লুইপা ওড্ডিয়ানের রাজা ছিলেন এবং বজ্রবরাহী মতে বৌদ্ধধর্মের চর্চা করেছিলেন।
আদিসিদ্ধ
চতুরাশিতি সিদ্ধ প্রবৃত্তি গ্রন্থ লুই পার জীবনী দিয়ে শুরু হয়েছে। চর্যাপদের প্রথম পদ লুই পার রচনা। এই কারণে লুই পা কে আদিসিদ্ধ হিসেবে বর্ণনা করা হয়ে থাকে। কিন্তু রাহুল সাংকৃত্যায়ন সরহকে আদিসিদ্ধ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। লুই পার শিক্ষক শবর পা সরহের শিষ্য ছিলেন বলে লুই পা সরহের পরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। লুই পার সাধনারীতি অনুসরণ করে কম্বল পা, ইন্দ্রভূতি, কাহ্ন পা প্রভৃতি বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যরা চক্রসম্বর তন্ত্র সাধনা করেন। মার-পা-ছোস-ক্যি-ব্লো-গ্রোস এই তন্ত্রকে তিব্বত নিয়ে যান, যেখানে এটি কাগ্যু গোষ্ঠীর য়িদাম সাধনা রূপে এখনো প্রচলিত আছে।
মৎস্যেন্দ্রনাথ
আধুনিক ঐতিহাসিকেরা লুই পা এবং ভারতীয় ঐতিহ্যের আদিসিদ্ধ মীননাথ বা মৎস্যেন্দ্রনাথ একই ব্যক্তি হিসাবে চিহ্নিত করেছেন । তিব্বতী ঐতিহ্যে লুই পাকে বাংলার এবং ভারতীয় ঐতিহ্যে মৎস্যেন্দ্রনাথকে চন্দ্রদ্বীপের ধীবরশ্রেণীরসম্ভূত বলে বর্ণনা করা হয়েছে। কৌলজ্ঞাননির্ণয় নামক গ্রন্থে মৎস্যেন্দ্রনাথকে যোগিনী কৌল সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। অপরদিকে তারানাথ লুই পাকে যোগিনী ধর্মমতের স্রষ্টা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
সাহিত্যরচনা
ব্স্তান-'গ্যুর গ্রন্থে লুই পাকে শ্রীভগবদ অভিসময়, বজ্রসত্ত্ব সাধনা, তত্ত্বস্বভাব দোহাকোষ গীতিকা দৃষ্টি নাম, শ্রীচক্রসম্বর অভিসময় টীকা এবং বুদ্ধদয়া গ্রন্থের রচয়িতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি অতীশ দীপঙ্করের সাথে অভিসময় বিভঙ্গ রচনা করেছিলেন। চর্যাপদের প্রথম এবং ঊনত্রিশতম পদ লুই পার রচনা
প্রাচীন বাংলা
| |
---|---|
বৌদ্ধ পন্ডিত | |
হিন্দু পন্ডিত | |
কবি | |
গ্রন্থ |