Продолжая использовать сайт, вы даете свое согласие на работу с этими файлами.
লেওনার্ড অয়লার
লেওনার্ড অয়লার | |
---|---|
জন্ম |
(১৭০৭-০৪-১৫)১৫ এপ্রিল ১৭০৭ |
মৃত্যু | ১৮ সেপ্টেম্বর ১৭৮৩(1783-09-18) (বয়স ৭৬) [OS:৭ সেপ্টেম্বর ১৭৮৩] |
মাতৃশিক্ষায়তন | ব্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ে |
পরিচিতির কারণ | See full list |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | গণিত ও পদার্থ বিজ্ঞান |
প্রতিষ্ঠানসমূহ |
ইম্পেরিয়াল রাশিয়ান বিজ্ঞান একাডেমি বার্লিন একাডেমি |
সন্দর্ভসমূহ | শব্দের উপর গবেষণামূলক তত্ত্বালোচনা ("Physical dissertation on sound") (১৭২৬) |
ডক্টরাল উপদেষ্টা | জন বের্নুলি |
ডক্টরাল শিক্ষার্থী |
কোলাস ফাস জন হেন্নারট স্টিফেন রুমভস্কি |
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য শিক্ষার্থী | জোসেফ লুই(Lagrange) |
স্বাক্ষর | |
টীকা | |
জন অয়লার-এর মতে তিনি গণিতবিদ্যার জনক |
লেওনার্ড অয়লার (জার্মান: 'Leonhard Euler — উচ্চারণ: লেওনাআট্ অয়লা'উচ্চারণ (সাহায্য·তথ্য)) (আ-ধ্ব-ব: [ˈleonaɐt ˈɔʏlɐ]) (১৫ এপ্রিল, ১৭০৭, বাসেল, সুইজারল্যান্ড - ১৮ই সেপ্টেম্বর, ১৭৮৩, সেন্ট পিটার্সবার্গ, রাশিয়া) একজন সুইস গণিতবিদ এবং পদার্থবিজ্ঞানী। তিনি ক্যালকুলাস, সংখ্যাতত্ত্ব, অন্তরক সমীকরণ, গ্রাফ তত্ত্ব ও টপোগণিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। আধুনিক গণিতে ব্যবহৃত অনেক পরিভাষা ও ধারণা তার অবদান। গাণিতিক বিশ্লেষণে ব্যবহৃত গাণিতিক ফাংশন-এর ধারণা তারই আবিষ্কার। অয়লার e , পাই এর জন্য π , যোগের জন্য Σ চিহ্নের প্রবর্তন করেন। তিনি বলবিজ্ঞান, আলোকবিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিজ্ঞানেও অবদান রাখেন। সমসাময়িককালে তার মত প্রকাশনা সম্পন্ন কোনো গণিতবিদ ছিলেন না। এমনকি মুদ্রণ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ার পরও তার সমপরিমাণ প্রকাশনা সম্পন্ন বিজ্ঞানীর সংখ্যা খুবই কম।
অয়লারকে ১৮শ শতকের সেরা গণিতবিদ ও সর্বকালের সেরা গণিতবিদদের একজন বলে মনে করা হয়। গণিতবিদদের মধ্যে তার প্রকাশিত গবেষণা কাজের পরিমাণ আজও সর্বাধিক এবং এটি একটি গিনেস রেকর্ড। বলা হয় তার সম্পর্কে লাপ্লাস বলেছিলেন: "Lisez Euler, lisez Euler, c'est notre maître à tous" ("অয়লার পড়, অয়লার পড়, তিনি আমাদের সবার শিক্ষক।")। 2002 Euler নামের গ্রহাণুটি তার সম্মানে নামকরণ করা হয়। সুইস ১০-ফ্রা এর নোট এবং সুইজারল্যান্ড, রাশিয়া ও জার্মানির অসংখ্য ডাকটিকেটে তার ছবি রয়েছে।
জীবন
প্রথম জীবন
অয়লার এর বাবা ছিলেন পল অয়লার। তিনি ছিলেন রিফর্মড চার্চের একজন যাজক। মা ছিলেন মার্গারিট ব্রুকার, তিনিও ছিলেন একজন যাজকেরই মেয়ে। অয়লারের ছোট দুই বোন ছিল, আন্না মারিয়া এবং মারিয়া ম্যাগডালেনা। অয়লারের বয়স যখন এক বছর, তখন অয়লার পরিবার ব্যাসেল ছেড়ে রাইহেনে বসবাস করতে শুরু করেন এবং সেখানেই শৈশব কাটান অয়লার। পল অয়লার ছিলেন বের্নুলি পরিবারের—ইয়োহান বের্নুলির পারিবারিক বন্ধু, যিনি সে সময়ে ইউরোপের শ্রেষ্ঠ গণিতবিদ বিবেচিত ছিলেন। বের্নুলি তরুণ অয়লারের ওপর গভীর প্রভাব রাখেন। প্রাথমিক শিক্ষার জন্য অয়লারকে ব্যাসেলে তার মাতামহের কাছে পাঠানো হয়েছিল। মাত্র ১৩ বছর বয়সে তিনি ব্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ১৭২৩ সালে তিনি দেকার্ত ও নিউটনের দার্শনিক ধারণাসমূহের তুলনামুলক বিশ্লেষণ করে দর্শনে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। এ সময়ে তিনি ইয়োহান বের্নুলির কাছে প্রতি শনিবার বিকেলে পড়তে যেতেন, যিনি তার ছাত্রের অসাধারণ গাণিতিক প্রতিভা বুঝতে পারেন। তার পিতার ইচ্ছানুযায়ী ধর্মযাজক হবার লক্ষ্যে এ সময় তিনি ধর্মতত্ত্ব, গ্রীক ও হিব্রু নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন, তবে বের্নুলি পল অয়লারকে বোঝান যে তার পুত্র শ্রেষ্ঠ গণিতবিদদের সারিতে স্থান করে নেবার জন্যেই জন্মগ্রহণ করেছে। বেরনুলির সাহায্যে ১৭২৬ সালে অয়লার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সমাপ্ত করেন এবং ডি সোনো শিরোনামে শব্দ সঞ্চালনের ওপর পি.এইচ.ডি সম্পন্ন করেন। ১৭২৭ সালে 'জাহাজের পালের সবচেয়ে ভালো সন্নিবেশ কীভাবে করা যায়' তার ওপর একটি প্রবন্ধ লিখে প্যারিস আকাডেমির প্রাইজ প্রবলেম প্রতিযোগিতাতে জমা দেন গ্র্যান্ড প্রাইজের জন্য। সে বছর প্রথম পুরস্কার পেয়েছিলেন নেভাল আর্কিটেকচার এর জনক পিয়েরে বুগুয়ের। অয়লার লাভ করেন দ্বিতীয় স্থান। পরবর্তীকালে অয়লার তার জীবনে মোট ১২ বার এই পুরস্কার পেয়েছিলেন।
সাংক্ত পিতেরবুর্গ
এ সময়ে ইয়োহান বের্নুলির দুই পুত্র দানিয়েল ও নিকোলাস, সেন্ট পিতেরবুর্গে অবস্থিত ইমপেরিয়াল রাশিয়ান একাডেমি অফ সায়েন্সেসে কাজ করছিলেন। ১৭২৬ সালের জুলাই মাসে নিকোলাস রাশিয়ায় অবস্থানের এক বৎসরকাল অতিক্রান্ত হবার পর অ্যাপেন্ডিসাইটিসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। দানিয়েল তার ভাইয়ের গণিত/পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের পদটিতে নিয়োগ পাবার পর শারীরতত্ত্ব বিভাগে তার ছেড়ে আসা পদটির জন্যে সুহৃদ অয়লারের নাম সুপারিশ করেন। ১৭২৬ এর নভেম্বরে অয়লার আগ্রহের সাথেই আমন্ত্রণটি গ্রহণ করেন, কিন্তু মধ্যবর্তী সময়ে ইউনিভার্সিটি অফ বাসেলে পদার্থবিজ্ঞানে অধ্যাপক হবার ব্যর্থ চেষ্টা করে তার সাংক্ত পিতেরবুর্গে যোগদান করতে একটু বিলম্ব হয়।
অয়লার ১৭২৭ সালের ১৭ মে রাশিয়ার রাজধানীতে পদার্পণ করেন। তিনি চিকিৎসাবিজ্ঞান বিভাগের কনিষ্ঠ পদ হতে পদোন্নতিসহ গণিত বিভাগে যোগদান করেন। তিনি দানিয়েল বের্নুলির সাথে একই আবাসস্থলে অবস্থান করতেন এবং তারা যৌথভাবে বহু গবেষণায় অংশ নিয়েছেন। অয়লার রুশ ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন এবং সাংক্ত পিতেরবুর্গে থিতু হন। তাছাড়া তিনি রুশ নৌবাহিনীতে চিকিৎসকের কাজেও নিয়োজিত ছিলেন।
রুশ সম্রাট পিটার দ্য গ্রেট প্রতিষ্ঠিত সাংক্ত পিতেরবুর্গের একাডেমিটির লক্ষ্য ছিল রাশিয়ার শিক্ষার উন্নতিসাধন এবং পশ্চিম-ইউরোপের সাথে বৈজ্ঞানিক পার্থক্য কমিয়ে আনা। তাই এ প্রতিষ্ঠানটিতে অয়লারের মত বিদেশী জ্ঞানসাধকদের জন্যে বিশেষভাবে আকর্ষণীয় করে পরিচালনা করা হত। একাডেমির যথেষ্ট অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা ছিল এবং এর ছিল একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি যা কিনা স্বয়ং পিটারের ও রাশিয়ার অভিজাত ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত লাইব্রেরির দানে গড়ে উঠেছিল। শিক্ষকদের ওপর ক্লাসের চাপ কমানোর জন্যে খুব অল্প সংখ্যক ছাত্র ভর্তি করা হত এবং একাডেমি তার বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষকদের বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক প্রশ্ন নিয়ে চিন্তাভাবনা করার মত পর্যাপ্ত সময় ও স্বাধীনতা প্রদান করত।
একাডেমির পৃষ্ঠপোষক রাশিয়ার সম্রাজ্ঞী প্রথম ক্যাথারিন পরলোকগত স্বামীর প্রগতিশীল নীতি অনুসরণ করে আসছিলেন। কিন্তু অয়লারের আগমনের আগেই তার মৃত্যু হয়। রুশ সিংহাসনে অভিষেক হয় ১২ বছর বয়সী সম্রাট দ্বিতীয় পিটারের। তার ওপর প্রভাব বিস্তারে সমর্থ হয় রাশিয়ার রক্ষণশীল অভিজাত সমাজ। একাডেমির বিদেশী গবেষকদের বিষয়ে সন্দিগ্ধ এই অংশটি অয়লার ও তার সহকর্মীদের জন্য বরাদ্দ তহবিলের পরিমাণ হ্রাস করাতে সমর্থ হয়। এমন কি তাদের প্রচেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিদেশি ও অনভিজাত শিক্ষার্থীদের প্রবেশের দ্বার রুদ্ধ হয়।
তবে সম্রাট দ্বিতীয় পিটারের মৃত্যুর পর অবস্থার কিছুটা উন্নতি ঘটে। অয়লার দ্রুত পদোন্নতি পেয়ে ১৭৩১ সালে পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপকে পরিণত হন। রুশ নৌবাহিনীতে লেফটেন্যান্ট হিসেবে পদোন্নতির প্রস্তাব থাকলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং নৌবাহিনী থেকে বিদায় নেন। এর দুই বছর পর দানিয়েল বার্নুলি সেন্সরশিপ ও বৈরিতায় বিরক্ত হয়ে সাংক্ত পিতেরবুর্গ ছেড়ে বাসেলে চলে যান। তখন অয়লার গণিত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে তার উত্তরসূরি মনোনীত হন।
১৭৩৪ সালের ৭ জানুয়ারি বার্নুলি ক্যাথারিনা সেল্লের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন, যিনি ছিলেন একাডেমি জিমন্যাসিয়ামের চিত্রকর গিওর্গ সেল্লের কন্যা। এই তরুণ দম্পতি নেভা নদীর পাড়ে একটি বাড়ি ক্রয় করে সংসার শুরু করেন। তাদের তেরটি সন্তানের মধ্যে কেবল পাঁচজন শৈশব উত্তীর্ণ করতে সক্ষম হয়।
বার্লিন
রাশিয়ার ক্রমাবনতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে অয়লার ১৯ জুন ১৭৪১ সালে সাংক্ত পিতেরবুর্গ ছেড়ে বার্লিন একাডেমিতে যোগদান করেন, যা ফ্রেডেরিক দ্য গ্রেট অফ প্রুসিয়া তাকে প্রস্তাব করেছিলেন। তিনি দীর্ঘ পঁচিশ বছর বার্লিনে অবস্থান করেন এবং ৩৮০ টির বেশি প্রবন্ধ রচনা করেন। বার্লিনেই তিনি তার শ্রেষ্ঠ দু'টি কাজ সম্পন্ন করেন: Introductio in analysin infinitorum, ১৭৪৮ সালে প্রকাশিত ফাংশানের ওপর একটি রচনা এবং Institutiones calculi differentialis, ১৭৫৫ সালে ডিফারেন্সিয়াল ক্যালকুলাসের ওপর রচিত প্রবন্ধ। ১৭৫৫ সালে তিনি রয়েল সুইডিশ একাডেমি অফ সায়েন্সেস এর বিদেশী সভ্য নির্বাচিত হন।
পাশাপাশি অয়লার ফ্রেডেরিকের ভাগ্নী রাজকুমারী আনয়াল্ট-দেসাঁউকে শিক্ষাদানে নিযুক্ত হন। অয়লার তাকে প্রায় ২০০ টি চিঠি লেখেন, যা পরবর্তীকালে একত্রিত হয়ে একটি বহুল-বিক্রিত গ্রন্থে রূপায়িত হয়, যার নাম ছিল প্রাকৃতিক দর্শনের বিবিধ বিষয়ে জার্মান রাজকন্যাকে লেখা অয়লারের পত্রগুচ্ছ। বইটিতে পদার্থবিজ্ঞান এবং গণিত সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে অয়লারের দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় মেলে, পাশাপাশি অয়লারের ব্যক্তিত্ব ও ধর্মবিশ্বাস সম্বন্ধেও অন্তর্দৃষ্টি লাভ করা যায়। বইটি তার যেকোন গাণিতিক প্রকাশনার চাইতে অধিক পঠিত পুস্তকে পরিণত হয়, এবং এটি ইউরোপজুড়ে এবং আমেরিকাতে প্রকাশিত হয়। এই 'চিঠিগুলোর' জনপ্রিয়তা বৈজ্ঞানিক বিষয় সাধারণ মানুষের জন্যে বোধগম্যরূপে উপস্থাপনের ব্যাপারে অয়লারের প্রতিভার পরিচায়ক, যা ছিল তার মতো গবেষক বৈজ্ঞানিকদের মধ্যে বিরল একটি গুণ।
একাডেমির সম্মান বৃদ্ধিতে অনন্য ভূমিকা পালন করা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত অয়লারকে বার্লিন ছাড়তে বাধ্য করা হয়। তার একটি কারণ ছিল ফ্রেডেরিকের সাথে ব্যক্তিত্বের সংঘর্ষ, যিনি অয়লারকে স্থূল বিবেচনা করতেন, বিশেষ করে জার্মান রাজের চক্রের অন্যান্য দার্শনিকদের তুলনায়। ফ্রেডেরিকের নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে ছিলেন ভলতেয়ার, এবং এই ফরাসি দার্শনিক রাজার সামাজিক গন্ডিতে একটি বিশেষ সম্মানের অধিকারী ছিলেন। অয়লার, যিনি ছিলেন একজন সাদাসিধে ও ধর্মভীরু মানুষ, তিনি তার বিশ্বাস ও রুচির দিক দিয়ে ছিলেন সাধারণ। তিনি নানাভাবে ভলতেয়ারের ঠিক বিপরীত ছিলেন। অয়লারের বাগ্মিতার সুখ্যাতি ছিল না, তথাপি তিনি এমন সব বিষয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়তেন যে বিষয়ে তার জ্ঞান ছিল খুবই সামান্য, যার ফলে তিনি ভলতেয়ারের ক্ষুরধার বুদ্ধির নিয়মিত শিকারে পরিণত হতেন।ফ্রেডেরিকও অয়লারের ফলিত প্রকৌশল বিদ্যা সম্বন্ধে এভাবে হতাশা ব্যক্ত করেন:
“ | আমি আমার বাগানে একটি পানির ফোয়ারা তৈরি করতে চেয়েছিলাম: অয়লার হিসাব-নিকাশ করে জলাধার থেকে পানি তুলতে চাকার প্রয়োজনীয় শক্তির পরিমাণ নির্ণয় করেন, যা চ্যানেলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হবে এবং অবশেষে সানসসাউচির মধ্য থেকে নির্গত হবে। কলটি জ্যামিতিকভাবে নির্মিত হয়, কিন্তু তা জলাধারের পঞ্চাশ গজের মধ্যে এক আঁজলা পানিও তুলতে পারতো না। কেবলই মিথ্যে দম্ভ! জ্যামিতি নিয়ে আত্মশ্লাঘা! | ” |
দৃষ্টিশক্তি হারানো
অয়লারের দৃষ্টিশক্তি তার কর্মজীবন জুড়ে ক্রমাগত হ্রাস পেতে থাকে। তিন বছর দুরারোগ্য জ্বরে ভোগাড় পর ১৭৩৫ সালে তিনি তার ডান চোখের দৃষ্টিশক্তি প্রায় পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেন, তবে অয়লার এর জন্যে সাংক্ত পিতেরবুর্গ একাডেমিতে তার মানচিত্রাঙ্কণের কষ্টকর অভিজ্ঞাতাকেই দায়ী করতেন। তার ডান চোখের দৃষ্টিশক্তি বার্লিনে অবস্থানকালে আরও কমতে থাকে এবং অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে ফ্রেডেরিক তাকে "সাইক্লপ" হিসেবে অভিহিত করতেন। অয়লার পরবর্তীকালে তার সুস্থ বামচোখেও ছানিতে আক্রান্ত হন এবং ১৭৬৬ সালে অসুখটি ধরা পরার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই প্রায় পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যান। তবে তার অসুস্থতা তার কাজের ওপর অল্পই প্রভাব ফেলে, দৃষ্টিশক্তির অভাব তিনি পুষিয়ে নিয়েছিলেন তার মানসিক হিসাবনিকাশে দক্ষতা ও অসাধারণ স্মৃতিশক্তি দিয়ে। দৃষ্টান্তস্বরূপ, অয়লার ভার্জিল রচিত ঈনীড কাব্যগ্রন্থ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত না থেমে আবৃত্তি করতে পারতেন এবং সে সংস্করণের প্রতিটি পৃষ্ঠার প্রথম ও শেষ বাক্য কি ছিল তাও তিনি বলতে পারতেন। অনুলেখকদের সহযোগিতার ফলে বিভিন্ন শাখায় অয়লারের উৎপাদনশীলতা প্রকৃতপক্ষে বৃদ্ধি পায়। ১৭৭৫ সালে তিনি প্রায় প্রতি সপ্তাহে একটি করে গাণিতিক গবেষণা প্রবন্ধ রচনা করতেন।
রাশিয়ায় প্রত্যাবর্তন
ক্যাথারিন দ্য গ্রেটের সিংহাসনে আরোহণের পর রাশিয়ার পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করে এবং ১৭৬৬ সালে অয়লার সাংক্ত পিতেরবুর্গে একাডেমিতে ফিরে যাবার আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন এবং তার জীবনের বাকি অংশ রাশিয়াতেই অবস্থান করেন। তার দ্বিতীয় দফায় রাশিয়ায় অবস্থান ছিল বেদনাভারাক্রান্ত। সাংক্ত পিতেরবুর্গে ১৭৭১ সালের এক অগ্নিকান্ডে তার বাড়ি ভস্মীভূত হয় এবং সে যাত্রা কোন মতে তার প্রাণ রক্ষা হয়। ১৭৭৩ সালে তিনি তার স্ত্রী সুইস চিত্রকর গিওর্গ সেল্লের কন্যা ক্যাথারিন মাত্র ৪০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। প্রথম পক্ষের স্ত্রীর মৃত্যুর তিন বছর পর অয়লার তার স্ত্রীর সৎ বোন সালোম আবিজিল সেল্লেকে বিয়ে করেন। অয়লারের মৃত্যু পর্যন্ত তাদের দাম্পত্য জীবন স্থায়ী হয়েছিল।
১৮ সেপ্টেম্বর ১৭৮৩ সালে পরিবারের সদস্যদের সাথে মধ্যাহ্নভোজ সমাপ্ত করার পর আন্দ্রে লেক্সেলের সাথে নতুন আবিষ্কৃত ইউরেনাস এবং তার কক্ষপথ নিয়ে আলোচনা করবার সময় অয়লার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের শিকার হন এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যুবরণ করেন।জ্যাকব ফন স্টেলিন রাশিয়ান একাডেমি অফ সায়েন্সেসের পক্ষে একটি সংক্ষিপ্ত শোকবার্তা রচনা করেন এবং একটি শোকগাঁথা রচনা করেছিলেন রুশ গণিতবিদ ও অয়লারের শিষ্য নিকোলাস ফাস, যিনি অয়লারের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে তা পাঠ করেন। ফরাসি একাডেমির পক্ষে লিখিত শোকবার্তায় ফরাসি গণিতবিদ ও দার্শনিক মার্কুই দ্য কন্ডরসেট মন্তব্য করেন:
“ | …il cessa de calculer et de vivre — … তার গণনা করা ও বেঁচে থাকার অবসান ঘটল। | ” |
তাকে ভাসিলিয়েভস্কি দ্বীপের স্মলেনস্ক লুথেরান সমাধিক্ষেত্রে তার মৃতা পত্নীর পাশে সমাহিত করা হয়। ১৭৮৫ সালে রাশিয়ান একাডেমি অফ সায়েন্সেস পরিচালকের আসনের প্বার্শে অয়লারের একটি আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করে। ১৮৩৭ সালে রাশিয়ান একাডেমি অফ সায়েন্সেস তার কবরে একটি সমাধিফলক স্থাপন করে, যা ১৯৫৬ সালে অয়লারের ২৫০ তম জন্মবার্ষিকীতে তার দেহাবশেষ সহ XVIII শতাব্দীর সমাধিক্ষেত্র আলেক্সান্ডার নেভস্কি লাভ্রায় স্থানান্তরিত করা হয়।
পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতে অবদান
গাণিতিক ধ্রুবক e |
---|
নিবন্ধের ধারাবাহিকের অংশ |
Properties |
Applications |
Defining e |
ব্যক্তি |
Related topics |
অয়লার গণিতের প্রায় সকল শাখাতেই কাজ করেছেন: জ্যামিতি, ইনফিনিটসিমাল ক্যালকুলাস, ত্রিকোণমিতি, বীজগণিত, এবং সংখ্যা তত্ত্ব, পাশাপাশি কন্টিনিউয়াম পদার্থবিজ্ঞান, চন্দ্র তত্ত্ব পদার্থবিজ্ঞানের অন্যান্য ক্ষেত্রে। তিনি গণিতের ইতিহাসে একজন বহুপ্রজ ব্যক্তিত্ব; ছাপানো হলে তার রচনাবলী, যার কিনা বেশিরভাগই ভিত্তিস্বরূপ কাজ, প্রায় ৬০ থেকে ৮০ টি কোয়ার্টো ভলিউম দখল করবে। অয়লারের নাম বহুসংখ্যক বিষয়ের সাথে যুক্ত।
গাণিতিক প্রতীক
অয়লার নিজের লেখা বিপুল পরিমাণ ও সুপ্রচারিত পাঠ্যপুস্তকে বেশ কিছু নতুন প্রতীকের প্রচলন ও জনপ্রিয়করণ করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল তিনি প্রথম ফাংশনের ধারণা প্রচলন করেন এবং f(x) চিহ্ন দ্বারা f কে x এর ফাংশন রূপে প্রকাশ করেন। তিনি ত্রিকোণমিতিক ফাংশন প্রকাশের আধুনিক রীতিটিরও প্রচলন করেন, e দ্বারা স্বাভাবিক লগারিদমের ভিত্তি (যা বর্তমানে অয়লারের সংখ্যা হিসাবেও পরিচিত), গ্রিক বর্ণ Σ দ্বারা যোগফল এবং i দ্বারা কাল্পনিক সংখ্যা প্রকাশের প্রচলন করেন। গ্রিক বর্ণ 'π দ্বারা বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাত প্রকাশের রীতিটিও তিনি জনপ্রিয় করে তোলেন, তবে এ প্রতীকটি তার আবিষ্কৃত নয়।
বিশ্লেষণ
ইনফিনিটসিমাল ক্যালকুলাসের গড়ে ওঠা ছিল ১৮ শতকের গাণিতিক গবেষণার অগ্রদূত, এবং বের্নুলিরা—যারা ছিলেন অয়লারের পারিবারিক বন্ধু—এ ক্ষেত্রে গবেষণার পথিকৃৎ ছিলেন। তাদের প্রভাবেই ক্যালকুলাস অধ্যয়ন অয়লারের কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। যদিও অয়লারের সব প্রমাণই আধুনিক গাণিতিক কড়াকড়ির মানদন্ডে উত্তীর্ণ হয়নি, তথাপি তার ধারণা থেকে অসাধারণ অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।
অয়লার বিশ্লেষণে খ্যাতিমান হয়ে আছেন তার শক্তিধারার পুনঃপুনঃ ব্যবহার এবং অগ্রগতি সাধনের মাধ্যমে, যেমন
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, অয়লার e এবং বিপরীত বৃত্তীয় ফাংশানের শক্তি ধারায় বিস্তৃতি সরাসরি প্রমাণ করেছিলেন (নিউটন এবং লিবনিজ ১৬৭০ থেকে ১৬৮০ এর পরোক্ষ প্রমাণ করেছিলেন)। শক্তি ধারার সাহসী ব্যবহারের মাধ্যমে তিনি ১৭৩৫ সালে বিখ্যাত ব্যাসেল সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম হন (১৭৪১ সালে তিনি এর আরো বিস্তারিত একটি প্রমাণ প্রদান করেন):
অয়লার বিশ্লেষণী প্রমাণে সূচকীয় ফাংশন এবং লগারিদমের ব্যবহারের সূচনা করেন। তিনি শক্তি ধারার ব্যবহার করে বহুবিধ লগারিদমীয় ফাংশন আবিষ্কার করেন এবং সফলভাবে ঋণাত্মক ও জটিল সংখ্যার লগারিদম সজ্ঞায়িত করেন, যা লগারিদমের গাণিতিক ব্যবহারে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া তিনি জটিল সংখ্যার সূচকীয় ফাংশনকে সজ্ঞাবদ্ধ করেন এবং এর সাথে ত্রিকোণমিতিক ফাংশনের সম্পর্ক আবিষ্কার করেন। যেকোন বাস্তব সংখ্যা φ এর জন্যে অয়লারের সূত্রানুসারে জটিল সূচকীয় ফাংশন নিম্নলিখিত শর্তটি মেনে চলে
উপরিউক্ত সূত্রটির একটি বিশেষ ক্ষেত্র হল অয়লারের অভেদ,
যাকে রিচার্ড ফাইনম্যান গণিতের আকর্ষনীয়তম সমীকরণ" হিসেবে মন্তব্য করেছেন, কারণ এতে একই সঙ্গে যোগ, গুণন, সূচকীয় এবং সমতা চিহ্ন ব্যবহৃত হয়েছে এবং সাথে গণিতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধ্রুবক 0, 1, e, i এবং π ব্যবহৃত হয়েছে। ১৯৮৮ সালে ম্যাথেমেটিকাল ইনটেলিজেন্সারের পাঠকেরা এটিকে "সর্বকালের সবচেয়ে সুন্দর গাণিতিক সমীকরণ" হিসাবে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করে। অয়লার সেই নির্বাচনের সেরা পাঁচটি সমীকরণের তিনটির সাথেই যুক্ত ছিলেন।
দ্য ময়ভার সূত্র অয়লারের সূত্রের সরাসরি উপজাত।
এ ছাড়াও অয়লার উচ্চতর তুরীয় ফাংশনের ধারণাটি বিস্তৃত করেন গামা ফাংশন আবিষ্কার করে এবং চতুর্ঘাত সমীকরণ সমাধানের একটি নতুন পন্থা তৈরি করেন। তিনি জটিল সীমা বিশিষ্ট সমাকলন করবারও একটি উপায় আবিষ্কার করেন, যা আধুনিক কমপ্লেক্স এনালিসিসের পথ প্রদর্শন করে। তার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল বৈচিত্রের ক্যালকুলাস, যার একটি বিখ্যাত ফলাফল অয়লার লাগ্রাঞ্জ সমীকরণ।
অয়লার বিশ্লেষণী পদ্ধতির ব্যবহারের মাধ্যমে সংখ্যাতাত্তিক সমস্যা সমাধানের পথ দেখান। এর মাধ্যমে তিনি গণিতের দু'টি ভিন্ন শাখা একত্রিত করেন এবং বিশ্লেষণী সংখ্যা তত্ত্ব নামক একটি নতুন শাখার সূচনা করেন। এ নতুন শাখাটির ভিত্তি তৈরি করবার সময় অয়লার অধিজ্যামিতিক ধারা, q-ধারা, অধিবৃত্তীয় ত্রিকোণমিতিক ধারা এবং অবিরত ভগ্নাংশের বিশ্লেষণী তত্ত্বের সূচনা করেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মৌলিক সংখ্যার অসীমতা প্রমাণ করেন হারমনিক ধারার অপসারিতা ব্যবহার করে, এবং তিনি মৌলিক সংখ্যার বণ্টন অনুধাবনের লক্ষ্যে বিশ্লেষণী পদ্ধতি ব্যবহার করেন। অয়লারের এ কাজের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে মৌলিক সংখ্যা তত্ত্ব।
সংখ্যাতত্ত্ব
সংখ্যাতত্ত্বে অয়লারের আকর্ষণের কারণ ছিলেন ক্রিস্টিয়ান গোল্ডবাখ, তার সাংক্ত পিতেরবুর্গে একাডেমির সুহৃদ। সংখ্যাতত্ত্বে অয়লারের প্রাথমিক অনেক কাজেরই ভিত্তি ছিল সংখ্যাতত্ত্বের আরেক দিকপাল পিয়ে দ্য ফার্মার কাজ। অয়লার ফার্মার কিছু কাজকে বিস্তৃত করেন এবং কিছু অনুমান ভুল প্রমাণিত করেন।
অয়লার মৌলিক সংখ্যার বণ্টনের প্রকৃতির সাথে বিশ্লেষণের যোগসূত্র স্থাপন করেন। তিনি প্রমাণ করেন যে, মৌলিক সংখ্যার বিপরীতকের যোগফল অপসারী হয়। এটি প্রমাণ করতে গিয়ে তিনি রিম্যান জিটা ফাংশন ও মৌলিক সংখ্যার মাঝে সম্বন্ধ খুঁজে পান; যা রিম্যান জিটা ফাংশনের অয়লার উৎপাদক সূত্র নামে পরিচিত।
অয়লার নিউটনের অভেদ, ফার্মার ছোট্ট উপপাদ্য, ফার্মার দুই বর্গের সমষ্টির উপপাদ্য প্রমাণ করেন এবং লাগ্রাঞ্জের চার বর্গ তত্ত্বে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। তিনি টশিয়েন্ট ফাংশন φ(n) উদ্ভাবন করেন যা হল কোন পূর্ণসংখ্যা n এর সমান বা তার চাইতে ছোট এবং n এর সাথে সহমৌলিক এমন সংখ্যার সংখ্যা। এই ফাংশনের বিশেষত্ব ব্যবহার করে তিনি ফার্মার ছোট্ট উপপাদ্যের সাধারণীকরণ করেন, যা বর্তমানে অয়লারের তত্ত্ব নামে সুবিদিত। তিনি নিখুঁত সংখ্যার গবেষণায় নতুন মাত্রা যোগ করেন, গণিতের যে বিষয়টি ইউক্লিডের সময় থেকেই গণিতবিদদের বিশেষ আকর্ষণের বস্তু। তাছাড়া অয়লার মৌলিক সংখ্যা তত্ত্ব উন্নয়নে ভূমিকা রাখেন, এবং বর্গীয় বিপরীততার নিয়মটি অনুমান করেন। এ দু'টি ধারণা সংখ্যাতত্ত্বের ভিত্তিরূপ তত্ত্ব হিসাবে বিবেচিত এবং তার এই ধারণা পরবর্তী সময়ে গাউসের কাজের পথ প্রশস্ত করে।
গ্রাফ তত্ত্ব
১৭৩৬ সালে অয়লার কনিসবার্গের সাতটি সেতুর সমস্যাটি সমাধান করেন।প্রুসিয়ার অন্তর্গত কনিসবার্গ শহরটি ছিল প্রেজেল নদীর তীরে এবং সেখানকার দু'টি বৃহৎ দ্বীপ সাতটি সেতুর মাধ্যমে সংযুক্ত ছিল। সমস্যাটি ছিল এরকম যে, সাতটি সেতুর প্রত্যেকটি ঠিক একবার ব্যবহার করে শুরুর অবস্থানে ফেরত আসা সম্ভব কিনা। তা সম্ভব নয়: কারণ তা অয়লার বর্তনী তৈরি করে না। এ সমাধানটিকে গ্রাফ তত্ত্বের প্রথম উপপাদ্য বিবেচনা করা হয়, বিশেষত সমতলীয় গ্রাফ তত্ত্বের।
অয়লার যেকোন উত্তল বহতলকের শীর্ষ, ধার এবং তলের মধ্যে একটি সম্পর্কসূচক সমীকরণ আবিষ্কার করেন V − E + F = 2, যা সমতলীয় গ্রাফের ক্ষেত্রেও সত্য। সমীকরণটির ধ্রুবকটি তার গ্রাফের অয়লার বিশেষত্ব নামে পরিচিত, যা বস্তুটির গণের সাথে সম্পৃক্ত।কশি এবং লা ইলিয়ের এ সমীকরণটির সাধারণীকরণ করেন, যা টপোলজি নামক গণিতের একটি নতুন শাখার সূচনা করে।
ফলিত গণিত
অয়লারের শ্রেষ্ঠ সাফল্যের অন্যতম ছিল বাস্তব জগতের নানান সমস্যার বিশ্লেষণী সমাধান প্রদান, এবং বের্নুলি সংখ্যা, ফুরিয়ার ধারা, ভেন চিত্র, অয়লার সংখ্যা, ধ্রুবক e এবং π, অবিরত ভগ্নাংশ এবং সমাকলনের অসংখ্য প্রয়োগ বর্ণনা। তিনি লিবনিজের ডিফারেন্সিয়াল ক্যালকুলাসের সঙ্গে নিউটনের ফ্লাক্সিয়ন পদ্ধতির গাঁটছড়া বাঁধেন এবং বাস্তব সমস্যার সমাধানের ক্যালকুলাস ব্যবহারের বিভিন্ন সহায়ক কৌশল আবিষ্কার করেন। তিনি ডিফারেন্সিয়াল সমীকরণ ব্যবহারেরও পথিকৃৎ, বিশেষ করে অয়লার-মাসকেরনির ধ্রুবকের উদ্ভাবন:
অয়লারের সঙ্গীতে গাণিতিক ধারণার ব্যবহারের খেয়ালী শখ ছিল। ১৭৩৯ সালে তিনি Tentamen novae theoriae musicae রচনা করেন এই আশায় যে একসময় সঙ্গীততত্ত্ব একসময় গণিতের মাঝে স্থান করে নেবে। কিন্তু তার এই বিশেষ কাজটি সেভাবে জনপ্রিয়তা পায়নি এবং এ সম্বন্ধে বলা হত এটি সঙ্গীতশিল্পীদের জন্যে একটু বেশি গাণিতিক আর গণিতবিদদের জন্যে একটু বেশি সুরেলা।
পদার্থবিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিদ্যা
চিরায়ত বলবিজ্ঞান |
---|
বিষয়ের উপর একটি ধারাবাহিকের অংশ |
বিষয়শ্রেণীসমূহ
|
অয়লার বের্নুলির সাথে যৌথভাবে অয়লার–বের্নুলি বিম সমীকরণ তৈরি করেন, যা প্রকৌশলবিদ্যার একটি ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে বিবেচিত। অয়লার চিরায়ত বলবিদ্যা এবং জ্যোতির্বিদ্যায়ও তার প্রতিভার পরিচয় রাখেন। জ্যোতির্বিদ্যায় তার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তার ক্যারিয়ারজুড়ে বেশ কয়েকটি প্যারিস একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হন। তার অর্জনের মধ্যে রয়েছে ধূমকেতু ও অন্যান্য মহাকাশীয় বস্তুর কক্ষপথের নিখুঁত হিসাব, ধূমকেতুর আচরণ উপলব্ধিকরণ, এবং সূর্যের প্যারালাক্স হিসাবকরণ। লঙ্গিটিউড সারণী তৈরিতেও তার করা গণনার অবদান রয়েছে।
তদু[পরি, অয়লার অপটিক্সে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তিনি তার অপটিকস গ্রন্থে নিউটনের কণা তত্ত্বের সাথে দ্বিমত পোষণ করেন, যা ছিল সে সময়ের প্রতিষ্ঠিত একটি তত্ত্ব। তার ১৭৪০ সালে উপস্থাপিত প্রবন্ধ ক্রিস্টিয়ান হাইগেনের আলোর তরঙ্গ সংক্রান্ত মতবাদটি প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করে, যা আলোর কোয়ান্টাম তত্ত্বের প্রচলনের পূর্ব পর্যন্ত প্রভাবশালী ছিল।
যুক্তিবিদ্যা
তিনি বদ্ধ রেখার মাধ্যমে সাইলোজিস্টিক কারণ নির্ণয় (১৭৬৮) তত্ত্বের জন্যেও খ্যাত। এ ধরনের চিত্রকে তার নামানুসারে অয়লার চিত্র বলা হয়।
ব্যক্তিগত দর্শন এবং ধর্মীয় বিশ্বাস
অয়লার এবং তার বন্ধু দানিয়েল বার্নুয়ি ছিলেন লাইবনিৎসের একক সত্ত্বা এবং ক্রিস্টিয়ান উলফের দর্শনের পরিপন্থী। অয়লার দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন জ্ঞান সঠিক পরিমাণগত নিয়মের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত, যে মতবাদ একক সত্ত্বা তত্ত্ব ও উলফীয় বিজ্ঞানে অনুপস্থিত ছিল। অয়লারের ধর্মীয় বিশ্বাসও হয়তো তার মতবাদটি অপছন্দ করায় ভূমিকা রেখেছিল; তিনি এমনকি উলফের মতবাদকে "পৌত্তলিক ও নাস্তিকতাবাদ" হিসাবেও চিহ্নিত করেন।
অয়লারের ধর্মবিশ্বাসের অনেকটুকুই তার জার্মান রাজকুমারীকে লেখা পত্রগুচ্ছ এবং তার আগের একটি রচনা Rettung der Göttlichen Offenbahrung Gegen die Einwürfe der Freygeister (মুক্তচিন্তাবিদদের অভিযোগের জবাবে স্বর্গীয় উদ্ভাসনের আত্মরক্ষা) থেকে ধারণা করতে পারা যায়। এসব রচনা থেকে বোঝা যায় অয়লার ছিলেন একজন পুরোদস্তুর ধর্মভীরু খ্রিস্টান।
ধর্মনিরপেক্ষ দার্শনিকদের সাথে ধর্ম বিষয়ে অয়লারের বিতর্ক সম্বন্ধে একটি বিখ্যাত হাস্যরসাত্মক গল্প প্রচলিত আছে, যা অয়লারের দ্বিতীয় দফায় সাংক্ত পিতেরবুর্গ বাসের সময় ঘটেছিল। ফরাসি দার্শনিক দেনিস দিঁদেরো ক্যাথারিন দ্য গ্রেটের আমন্ত্রণে রাশিয়া ভ্রমণ করছিলেন। তো সম্রাজ্ঞী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছিলেন যে দার্শনিকের নাস্তিকতাবাদের যুক্তি হয়তো তার দরবারের সদস্যদের প্রভাবিত করছে, এবং তাই অয়লার ফরাসি দার্শনিককে মোকাবিলা করবার জন্যে আদিষ্ট হলেন। দিঁদেরোকে জানানো হয় একজন প্রাজ্ঞ গণিতবিদ ঈশ্বরের অস্তিত্ত্ব প্রমাণ করেছেন: তিনি দরবারে উপস্থাপিত প্রমাণটি দেখতে সম্মত হলেন। অয়লার সেখানে উপস্থিত হলেন, দিঁদেরোর নিকটবর্তী হলেন এবং গলায় সম্পূর্ণ প্রত্যয় নিয়ে ঘোষণা করলেন, "জনাব, , তাই ঈশ্বর আছেন—উত্তর করুন!" দিঁদেরো, যার কাছে (গল্পানুসারে) গণিতশাস্ত্র ছিল হিব্রু ভাষা, হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন এবং সমগ্র দরবার অট্টহাস্যে ফেটে পড়ল। লজ্জিত হয়ে তিনি সম্রাজ্ঞীর নিকট রাশিয়া ছেড়ে যাবার অনুমতি প্রার্থনা করলেন, যাতে সম্রাজ্ঞী খুশিমনেই সম্মতি জানালেন। তবে গল্পটি যতটা হাস্যকর হোক না কেন, এটি অতরঞ্জিত বলেই মনে হয়, কারণ দিঁদেরো ছিলেন একজন স্বনামধন্য গণিতবিদ যার গাণিতিক গবেষণামূলক আলোচনা গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
নির্বাচিত গ্রন্থতালিকা
অয়লার গণিতে মহান অবদান রেখেছেন। তার শ্রেষ্ঠ রচনাগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- এলিমেন্টস অফ এলজেবরা। এই প্রাথমিক বীজগণিত বইটি সংখ্যার প্রকৃতির ওপর আলোচনার মাধ্যমে শুরু হয়েছে এবং বহুপদী সমীকরণের সমাধানের কৌশল শেখানোর পাশাপাশি বীজণিতের প্রাথমিক ভিত্তি তৈরি করতে সাহায্য করে।
- ইন্ট্রোডাকটিও ইন এনালাইসিন ইনফিনিটোরাম (১৭৪৮). ইংরেজি অনুবাদ Introduction to Analysis of the Infinite (অসীমের বিশ্লেষণে প্রথম ধাপ) অনুবাদক জন ব্লানটন (Book I, আইএসবিএন ০-৩৮৭-৯৬৮২৪-৫, Springer-Verlag 1988; Book II, আইএসবিএন ০-৩৮৭-৯৭১৩২-৭, Springer-Verlag 1989)।
- ক্যালকুলাসের দু'টি প্রভাবশালী পাঠ্যপুস্তক: ইন্সটিটিউশনেস ক্যালকুলি ডিফারেন্সিয়ালস (১৭৫৫) এবং ইনস্টিটিউশনাম ক্যালকুলি ইন্টিগ্রালিস (১৭৬৮–১৭৭০)।
- Lettres à une Princesse d'Allemagne (জার্মান রাজকুমারীকে লেখা পত্রগুচ্ছ) (১৭৬৮–১৭৭২)। Available online (in French). English translation, with notes, and a life of Euler, available online from Google Books: Volume 1, Volume 2
- Methodus inveniendi lineas curvas maximi minimive proprietate gaudentes, sive solutio problematis isoperimetrici latissimo sensu accepti (১৭৪৪)। এই ল্যাটিন শিরোনামটির অনুবাদ হল সর্বোচ্চ বা সর্বনিম্ন বৈশিষ্ট্য সংবলিত বক্ররেখা অঙ্কনের কৌশল, অথবা সুপারপেরিমেট্রিক সমস্যা সমাধানের সর্বগ্রহণযোগ্য পদ্ধতি.
অয়লারের রচনাবলী Opera Omnia নামে, ১৯১১ সাল থেকে সুইস একাডেমি অফ সায়েন্সেস এর অয়লার কমিশন কর্তৃক প্রকাশিত হয়ে আসছে।
টীকা
উচ্চতর পঠন
- Lexikon der Naturwissenschaftler, 2000. Heidelberg: Spektrum Akademischer Verlag.
- Demidov, S.S., 2005, "Treatise on the differential calculus" in Grattan-Guinness, I., ed., Landmark Writings in Western Mathematics. Elsevier: 191–98.
- Dunham, William (1999) Euler: The Master of Us All, Washington: Mathematical Association of America. আইএসবিএন ০-৮৮৩৮৫-৩২৮-০
- Fraser, Craig G., 2005, "Leonhard Euler's 1744 book on the calculus of variations" in Grattan-Guinness, I., ed., Landmark Writings in Western Mathematics. Elsevier: 168–80.
- Gladyshev, Georgi, P. (2007) “Leonhard Euler’s methods and ideas live on in the thermodynamic hierarchical theory of biological evolution,” International Journal of Applied Mathematics & Statistics (IJAMAS) 11 (N07), Special Issue on Leonhard Paul Euler’s: Mathematical Topics and Applications (M. T. A.).
- W. Gautschi (২০০৮)। "Leonhard Euler: his life, the man, and his works"। SIAM Review। 50 (1): 3–33। ডিওআই:10.1137/070702710।
- Heimpell, Hermann, Theodor Heuss, Benno Reifenberg (editors). 1956. Die großen Deutschen, volume 2, Berlin: Ullstein Verlag.
- Krus, D.J. (2001) "Is the normal distribution due to Gauss? Euler, his family of gamma functions, and their place in the history of statistics," Quality and Quantity: International Journal of Methodology, 35: 445–46.
- Nahin, Paul (2006) Dr. Euler's Fabulous Formula, New Jersey: Princeton, আইএসবিএন ৯৭৮-০-৬৯১-১১৮২২-২
- Reich, Karin, 2005, " 'Introduction' to analysis" in Grattan-Guinness, I., ed., Landmark Writings in Western Mathematics. Elsevier: 181–90.
- Richeson, David S. (2008) Euler's Gem: The Polyhedron Formula and the Birth of Topology. Princeton University Press.
- Sandifer, Edward C. (2007), The Early Mathematics of Leonhard Euler, Mathematical Association of America. আইএসবিএন ০-৮৮৩৮৫-৫৫৯-৩
- Simmons, J. (1996) The giant book of scientists: The 100 greatest minds of all time, Sydney: The Book Company.
- Singh, Simon. (1997). Fermat's last theorem, Fourth Estate: New York, আইএসবিএন ১-৮৫৭০২-৬৬৯-১
- Thiele, Rüdiger. (2005). The mathematics and science of Leonhard Euler, in Mathematics and the Historian's Craft: The Kenneth O. May Lectures, G. Van Brummelen and M. Kinyon (eds.), CMS Books in Mathematics, Springer Verlag. আইএসবিএন ০-৩৮৭-২৫২৮৪-৩.
-
"A Tribute to Leohnard Euler 1707–1783"। Mathematics Magazine। 56 (5)। ১৯৮৩। অজানা প্যারামিটার
|month=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
বহিঃসংযোগ
- ওয়েস্টেন, এরিক ডব্লিউ., Euler, Leonhard (1707–1783) - সাইন্সওয়ার্ল্ড।
- Encyclopedia Britannica article
- গণিত উদ্ভববিজ্ঞান প্রকল্পে লেওনার্ড অয়লার
- How Euler did it contains columns explaining how Euler solved various problems
- Euler Archive
- Euler Committee of the Swiss Academy of Sciences
- References for Leonhard Euler
- Euler Tercentenary 2007
- The Euler Society
- Leonhard Euler Congress 2007—St. Petersburg, Russia
- Project Euler
- Euler Family Tree
- Euler's Correspondence with Frederick the Great, King of Prussia
- "Euler - 300th anniversary lecture" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৭ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে, given by Robin Wilson at Gresham College, 9 May 2007 (can download as video or audio files)
- ও'কনর, জন জে.; রবার্টসন, এডমুন্ড এফ., "লেওনার্ড অয়লার", ম্যাকটিউটর গণিতের ইতিহাস আর্কাইভ, সেন্ট অ্যান্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link) ।