Продолжая использовать сайт, вы даете свое согласие на работу с этими файлами.
শ্রবণ সহায়ক যন্ত্র
শ্রবণ সহায়ক যন্ত্র | |
---|---|
শ্রবণ সহায়ক যন্ত্র বলতে একটি বিশেষ ধরনের নকশা করা যান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বোঝায়, যা কোনও শ্রবণ-প্রতিবন্ধী ব্যক্তি (যে কানে কম শুনতে পায় অর্থাৎ যার শ্রুতিলোপ ঘটেছে) কানে পরিধান করলে তার কাছে পরিবেশ থেকে আগত শব্দের প্রাবল্য বা তীব্রতা বৃদ্ধি পায় ও শব্দ অধিকতর শ্রাব্য (শোনার উপযোগী) হয়, ফলে ঐ ব্যক্তির শ্রবণের মান উন্নত হয়। এটিকে শ্রবণ-সহায়, শ্রুতি-সহায় বা শ্রবণযন্ত্র কিংবা সহজ ভাষায় কানে শোনার যন্ত্র নামেও ডাকা হয়। ইংরেজি ভাষাতে এটি "হিয়ারিং এইড" (Hearing aid) নামে পরিচিত। বেশির ভাগ দেশে শ্রবণ সহায়ক যন্ত্রগুলিকে চিকিৎসা যন্ত্র হিসেবে শ্রেণীকরণ করা হয় এবং এগুলির সংজ্ঞা ও মান বিধিমালার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ক্ষুদ্রাকারের শব্দ বিবর্ধক যেমন ব্যক্তিগত শব্দ বিবর্ধকসমূহ অথবা অন্য যেকোনও সরল শব্দ বিবর্ধনকারী ব্যবস্থাকে "শ্রবণ সহায়ক যন্ত্র" হিসেবে বিক্রয় করা সম্ভব নয়।
আদিতে কর্ণতূর্য (ear trumpet) বা কর্ণশিঙা শ্রুতিসহায় হিসেবে ব্যবহার করা হত; এগুলি সক্রিয় কোনও ব্যবস্থা ছিল না, বরং এগুলিকে এমনভাবে নকশা করা হয়, যাতে এগুলি বহিস্থ পরিবেশের শব্দশক্তিকে একত্রিত করে কর্ণনালীর অভ্যন্তরে চালিত করতে পারে। একটি আধুনিক শ্রবণ সহায়ক যন্ত্রে একটি স্ফটিকের তৈরি অতিক্ষুদ্র শব্দগ্রাহক বা মাইক্রোফোন, তড়িৎকোষ-চালিত শব্দ বিবর্ধক (Amplifier) ও কানে পরিধেয় অংশ (Earpiece) থাকে, যার মধ্যে অতিক্ষুদ্র একটি শব্দকারক (speaker) কিংবা কম্পক (vibrator) থাকে। যন্ত্রটি সাধারণত কানের পেছনে পরিধান করা হয়; তবে কখনও কখনও এটি বহিঃকর্ণের নালীর ভেতরেও ঢোকানো থাকতে পারে। অখণ্ড সমন্বিত বর্তনীর উদ্ভাবন ও উন্নয়নের সাথে সাথে শ্রবণ সহায়ক যন্ত্রগুলি আকারে অত্যন্ত ছোট ও ওজনে অনেক হালকা হয়ে গেছে; এমনকি এগুলিকে চশমার কাঠামো বা ফ্রেমের ভেতরের দিকে লুকিয়ে রাখাও সম্ভব। পরিধানকারীর কাছে শব্দের প্রাবল্য (volume) ও ধ্বনিগুণ (tone) নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা থাকে, যার মাধ্যমে যন্ত্রটি গ্রহণযোগ্য মাত্রার ও উচ্চমানের শব্দ উৎপাদন করতে পারে। কিছু কিছু শ্রবণ সহায়ক যন্ত্র কেবলমাত্র নির্দিষ্ট কোনও সীমার মধ্যে অবস্থিত কম্পাঙ্কগুলিকে বিবর্ধনের জন্য বিশেষভাবে বানানো হয়।
২১শ শতকে এসে উপরে বর্ণিত অ্যানালগ শ্রবণ সহায়ক যন্ত্রের পরিবর্তে ডিজিটাল শ্রবণ সহায়ক যন্ত্রের ব্যবহার অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ডিজিটাল শ্রবণ সহায়ক যন্ত্রগুলিতে শব্দগ্রাহক (মাইক্রোফোন), বিবর্ধক (অ্যামপ্লিফায়ার) ও শব্দকারক (স্পিকার)-এর পাশাপাশি অ্যানালগ-থেকে-ডিজিটাল ও ডিজিটাল-থেকে-অ্যানালগ পরিবর্তক (কনভার্টার) ও একটি অত্যন্ত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কম্পিউটার ( ইলেকট্রনীয় গণকযন্ত্র) থাকে। এই কম্পিউটার-নিয়ন্ত্রিত (যান্ত্রিক গণনাক্ষমতাবিশিষ্ট) ইলেকট্রনীয়-শাব্দিক ব্যবস্থাটি পরিবেশের শব্দকে শ্রাব্য তথা পরিষ্কার শোনার উপযোগী রূপে রূপান্তরিত করতে পারে। এ লক্ষ্যে যন্ত্রটি শব্দমিতিক (audiometrical) ও মস্তিষ্কের বোধগত (cognitive) বিভিন্ন নিয়মের (অর্থাৎ কান ও মস্তিষ্ক কীভাবে শব্দসঙ্কেত প্রক্রিয়াজাত করে, তার নিয়মগুলির) সাহায্য নেয়। অধিকন্তু আধুনিক শ্রবণ সহায়ক যন্ত্রগুলিতে উচ্চমানের ডিজিটাল সঙ্কেত প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবহার করে কথোপকথনের বোধগম্যতা ও ব্যবহারকারীর আরাম বৃদ্ধি করতে চেষ্টা করা হয়। এ ধরনের ডিজিটাল সঙ্কেত প্রক্রিয়াজাতকরণের মধ্যে আছে প্রত্যাবর্তন (feedback) ব্যবস্থাপনা, প্রশস্ত পরিবর্তনশীল শ্রবণ-পরিসীমা সঙ্কোচন (wide dynamic range compression), দিকমুখিতা (directionality), কম্পাঙ্ক হ্রাসকরণ এবং অবাঞ্ছিত কোলাহল (noise) হ্রাসকরণ।
আধুনিক ডিজিটাল শ্রবণ সহায়ক যন্ত্রগুলিকে পরিধানকারীর জীবনধারা, কানের আকৃতি, শ্রুতিহরণের মাত্রা, ইত্যাদির সাথে মিল করে বা সঙ্গতি রেখে প্রস্তুত করা সম্ভব। শ্রুতি সহায়ক যন্ত্রটিকে রোগীর সবচেয়ে সাম্প্রতিক শ্রুতিলেখ (audiogram)-এর সাথে সঙ্গতি রেখে কম্পাঙ্কের ভিত্তিতে প্রস্তুত করা যায়। এই প্রক্রিয়াকে "সঙ্গতিকরণ" (fitting) বলে; সাধারণত শ্রবণবিজ্ঞানে বিশেষজ্ঞ কোনও চিকিৎসক (যাকে "শ্রবণবিজ্ঞানী" বা "শ্রবণ উপকরণ বিশেষজ্ঞ" নামে ডাকা হয়) এই সঙ্গতিকরণের কাজটি সম্পন্ন করেন। কোনও শ্রবণ সহায়ক যন্ত্র কতটুকু উপকারী হবে, তা অনেকাংশেই এই সঙ্গতিকরণের মানের উপরে নির্ভর করে। শ্রবণ সহায়ক যন্ত্রের মতো অন্যান্য যন্ত্রের মধ্যে অস্থি-অঙ্গীভূত নকল শ্রবণাঙ্গ (Osseointegrated auditory prosthesis) এবং কর্ণকম্বু-প্রোথ (cochlear implant) অন্যতম।