Мы используем файлы cookie.
Продолжая использовать сайт, вы даете свое согласие на работу с этими файлами.

সত্য সাই

Подписчиков: 0, рейтинг: 0
সত্য সাই
Sathya Sai Baba.jpg
সত্য সাই বাবা
দর্শন শিরডি সাই বাবা আন্দোলন
উদ্ধৃতি সবাইকে ভালবাসো, সকলের সেবা করো
সর্বদা সহায়তা করো, কাউকে কষ্ট দিও না

সত্য সাই বাবা (তেলুগু: సత్య సాయిబాబా, পূর্বাশ্রমের নাম সত্যনারায়ণ রাজু) (২৩ নভেম্বর, ১৯২৬ – ২৪ এপ্রিল, ২০১১) ছিলেন একজন ভারতীয় হিন্দু ধর্মগুরু, আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব ও শিক্ষাবিদ। তার ভক্তদের বিশ্বাসে তিনি ছিলেন একজন অবতারগডম্যান। আধ্যাত্মিক শিক্ষক ও অলৌকিক ক্রিয়াপ্রদর্শক। শূন্য থেকে "বিভূতি" বা পবিত্র ছাই এবং আংটি, নেকলেস বা ঘড়ির মতো ছোটো ছোটো বস্তু হাজির করে সত্য সাই যুগপৎ খ্যাতি অর্জন ও বিতর্ক সৃষ্টি করেন। যুক্তিবাদীরা এই সব ঘটনাকে সাধারণ জাদুর খেলা বলে থাকেন। অন্যদিকে ভক্তেরা এগুলিকে তার দৈব শক্তির প্রকাশক মনে করেন। তার ওপর যৌন নিৰ্যাতন এবং নকলেরও অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছিল, কিন্তু তিনি এসব অভিযোগকে ষড়যন্ত্ৰ আখ্যা দিয়ে, অভিযোগ অস্বীকার করেন।

সত্য সাই নিজেকে শিরডি সাই বাবার অবতার বলে দাবি করতেন, যাঁর শিক্ষার মধ্যে হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের ধর্মমতের প্রতিফলন দেখা যেত। ভারতীয় আধ্যাত্মিক গুরু মেহের বাবার মতে, তিনি একজন তান্ত্ৰিক এবং তিনি অলৌকিক কার্যাবলীর জন্য তন্ত্ৰের ব্যবহার করতেন।

সত্য সাই ও তার সংগঠন ভারতে ও ভারতের বাইরে একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও অন্যান্য দাতব্য সংস্থা চালাতেন। ১৯৯৯ সালের একটি হিসেব অনুযায়ী, সত্য সাইয়ের ভক্তসংখ্যা ৬০ লক্ষের কিছু বেশি। যদিও তার ভক্তদের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি বলে মনে করা হয়। যেহেতু তার সংগঠনে সদস্যপদের কোনো ব্যবস্থা নেই, সেহেতু তার ভক্তের প্রকৃত সংখ্যা জানা যায় না।সত্য সাই অর্গানাইজেশন ১১৪টি দেশে প্রায় ১,২০০টি "সত্য সাই বাবা কেন্দ্র" চালায়। এই সংস্থার মাধ্যমে সত্য সাই বাবা বিনামূল্যে চিকিৎসা প্ৰদানের জন্য চিকিৎসালয়, ক্লিনিক, পানীয় জলের প্ৰকল্প ইত্যাদি পরিচালনা করতেন। ভারতে সত্য সাই মূলত শহুরে উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর "ধনীতম, শিক্ষিত ও পাশ্চাত্য ধারণায় দীক্ষিত" ব্যক্তিদের আকর্ষণ করেছেন। ভারতে তিনি একজন সাংস্কৃতিক প্রতীকে পরিণত হয়েছিলেন। ভারতের একাধিক রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সহ অসংখ্য ব্যক্তি তার প্রতি অনুরক্ত হন। ২০০২ সালে তিনি দাবি করেছিলেন যে, ১৭৮টি দেশে তার ভক্তেরা ছড়িয়ে আছে।

জীবন

পূর্বজীবন

সত্য সাই বাবার পূর্ব জীবনের প্রায় সমস্ত তথ্য তার চারিদিকে সৃষ্ট হেগিয়োগ্রাফি, এবং ভক্তদের জন্য বিশেষ মহত্ব থাকা এবং ভক্তদের সত্য সাই বাবার 'দিব্য' হওয়ার প্রমাণ বলে বিশ্বাস করা প্রবাদ থেকে গ্রহণ করা। এই উৎসসমূহের মতে, সত্য সাই বাবার জন্ম তখনকার ব্রিটিশ ভারতের মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির পুত্তপর্থিতে মীচারাগাণ্ডা ঈশ্বরম্মা এবং পেড্ডাভেংকামা রাজু রত্নাকরমের গৃহে হয়েছিল। তার মা ঈশ্বরাম্মার ঐশ্বরিক বলে বিশ্বাস করা, সত্য সাই বাবার জন্মকে অনেকে অলৌকিক ঘটনায় পূর্ণ বলে বিশ্বাস করেন।

সত্য সাই বাবার একজন দাদা রত্নাকরম শেষম রাজু (১৯২১-১৯৮৪), দুই বোন ভেংকাম্মা (১৯২৩-১৯৯৩) এবং পর্বতম্মা (১৯২৮-১৯৯৮)এবং একজন ভাই জানকিরমিয়াহ (১৯৩০-২০০৩) আছে।

শৈশবাবস্থায় তিনি "অস্বাভাবিকভাবে বুদ্ধিমান" এবং দয়ালু ছিলেন বলা হয়, যদিও শিক্ষামূলকভাবে নয়, যেহেতু তার অভিরুচি আধ্যাত্মিক দিকে ছিল। তিনি ভক্তিগীতি, নৃত্য এবং নাট্যে অসাধারণ পারদর্শিতা দেখিয়েছিলেন। অল্প বয়স থেকেই তিনি খাদ্য, মিষ্টান্ন ইত্যাদি শূন্য থেকে প্রকট করতে সক্ষম ছিলেন বলে জানা যায়।

জ্ঞাপন

নিজেকে শিরডির সাই বাবার অবতার বলে দাবী করার পরে চোদ্দ বছরের সত্য সাই বাবা।

৮ মার্চ ১৯৪০এ, নিজের দাদা শেষাম রাজুর সঙ্গে পুত্তপর্থির কাছের একটি ছোট শহর উরাভাকোণ্ডায় থাকাকালে সত্য সাই বাবাকে একটি কাঁকড়া বিছে কামড়ায়। তিনি কয়েক ঘণ্টার জন্য মূর্ছিত হয়ে পড়েন। তারপরের কয়েকদিনে তার স্বভাবে উল্লেখনীয় পরিবর্তন দেখা যায়। হাসি-কান্না, চিৎকার-কথাবার্তা-মৌন ইত্যাদির লক্ষণ দেখা গিয়েছিল। দাবী করা হয় যে, তিনি সংস্কৃতে পদ্য গাইতে শুরু করেন — যে ভাষা তিনি একেবারে অজ্ঞাত ছিলেন। চিকিৎসকের মতে, তার হিস্টিরিয়া রোগ হয়েছিল। চিন্তিত হয়ে তার বাবা-মা তাকে পুত্তপর্থিতে ফিরিয়ে আনেন। তাকে ওঝা, ডাক্তার ইত্যাদির কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। কাডিরির একজন ওঝা চিকিৎসার নামে তার উপর অত্যাচার শুরু করে; সত্য গোটা সময় ধরে শান্ত হয়ে থাকেন, যা তার বাবা-মাকে অধিক চিন্তিত করে তোলে।

২৩ মে ১৯৪০এ, সত্য বাড়ির লোকদের একজায়গায় ডাকেন এবং তাদের জন্য প্রসাদ ও ফুল প্রকট করেন। এই দেখে সত্যর বাবা ভয়ভীত হলেন এবং ভাবলেন সত্যকে কোনো ভূতে ধরেছে। তিনি সত্যকে নিজের প্রকৃত পরিচয় না দিলে প্রহারের হুমকি দেন। ২০ অক্টোবর ১৯৪০এ, ছোট সত্য শান্ত এবং দৃঢ়ভাবে বলেন "আমি সাই বাবা", শিরডির সাই বাবার এক প্রসঙ্গে। এই প্রথমবার তিনি শিরডির সাই বাবা হওয়ার কথা বলেন — মহারাষ্ট্রের একজন প্রখ্যাত সন্ত, যার সত্য জন্ম হওয়ার ৮ বছর পূর্বে মৃত্যু হয়েছিল।

প্রথম মন্দির এবং পুত্তপর্থির বিকাশ

১৯৪৪এ, সত্য সাই বাবার ভক্তদের জন্য পুত্তপর্থির কাছে একটা মন্দির নির্মাণ করা হল; সেই মন্দিরকে এখন "পুরানো মন্দির" বলা হয়। বর্তমান আশ্রম প্রশান্তি নিলয়মের নির্মাণ ১৯৪৮ সালে আরম্ভ হয় এবং ১৯৫০ সালে শেষ হয়। ১৯৫৪ সালে সত্য সাই বাবা একটি ছোট সাধারণ চিকিৎসালয় পুর্ত্তিপর্থিতে স্থাপন করলেন। তিনি ক্রমে জাদুর শক্তি এবং চিকিৎসার ক্ষমতার জন্য বিখ্যাত হলেন। ১৯৫৭ সালে সত্য সাই বাবা উত্তর ভারতে তীর্থ ভ্রমণ করেন।

স্ট্রোক এবং প্যারালাইসিস

১৯৬৩তে, সত্য সাই বাবা চারটি গুরুতর হার্ট অ্যাটাকের সন্মুখীন হন, যার জন্য তার শরীরের একটা দিক নিথর হয়ে যায়। তারপরে, প্রশান্তি নিলয়মে জড়ো হয়ে তার সুস্থ হয়ে ওঠার প্রার্থনা করা হাজার হাজার লোকের সামনে তিনি নিজেকে রোগমুক্ত করে তোলেন।

পুনরায় জন্মগ্রহণ করার ভবিষ্যদ্বাণী

আরোগ্য হওয়াতে তিনি ঘোষণা করেন যে তিনি একদিন "প্রেম সাই বাবা"র রূপে, নিকটবর্তী রাজ্য কর্ণাটকে জন্মগ্রহণ করবেন। তিনি বলেন, "আমি শিব-শক্তি, একজন ঋষির বরলাভের ফলে ভরদ্বাজ গোত্রে জন্মগ্রহণ করেছি। শিবই শিরডির সাই বাবার গোত্রে জন্ম গ্রহণ করেন, শিব-শক্তি আমার রূপে, এবং শক্তি প্রেম সাই বাবার রূপে কর্ণাটকের মণ্ড্য জেলায় জন্ম গ্রহণ করবেন।"" তিনি ঘোষণা করেন ৯৬ বছর বয়সে তার মৃত্যুর ৮ বছর পরে তিনি পুনরায় জন্ম গ্রহণ করবেন (কিন্তু তিনি ৮৪ বছর বয়সেই দেহত্যাগ করেন)।

আফ্রিকা

১৯৬৮ সালের ২৯ জুন, তিনি নিজের একমাত্র সমুদ্রপথের যাত্রায় কেনিয়া এবং উগান্ডা যান।নাইরোবিতে তিনি নিজের ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যর কথা বলেন:

"আমি তোমাদের হৃদয়ে প্রেমের প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করতে এসেছি, চাইব যে এটি প্রতিদিন এবং অধিক উজ্জ্বলতার সঙ্গে জ্বলুক। আমি কোনো বিশেষ ধর্মের হয়ে আসিনি। আমি কোনো সম্প্রদায়, ধর্ম বা কারণের প্রচারের জন্য আসিনি, আমি কোনো বিশ্বাসের অনুরাগী গোষ্ঠী তৈরি করতেও আসিনি। আমি আমার নিজের উদ্দেশ্যে বা অন্য কোনো কারণে শিষ্য বা ভক্ত বৃদ্ধি করার কোনো উদ্দেশ্যে আসিনি। আমি তোমাদেরকে এই একতার বিশ্বাস, এই আধ্যাত্মিক নীতি, এই প্রেমের পথ, এই প্রেমের মহত্ব, এই প্রেমের দায়িতে্বর বিষয়ে বলতে এসেছি।"

পরবর্তী বছরগুলিতে

১৯৬৮তে তিনি মুম্বাইতে ধর্মক্ষেত্র (ধর্মক্সেত্র) বা সত্যম মন্দির (সত্যম মন্দির) প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৩এ, তিনি হায়দ্রাবাদে শিবম মন্দির (শিবম মন্দির) স্থাপন করেন।১৯ জানুয়ারি ১৯৮১তে, তিনি চেন্নাইতে সুন্দরম মন্দিরের (সুন্দরম মন্দির) শুভারম্ভ করেন।

১৯৯৩এ একটি ঘটনা ঘটে; চারজন দুর্বৃত্ত ছুরির সঙ্গে তার শোওয়ার ঘরে ঢোকে, হত্যার উদ্দেশ্যে অথবা তার ভক্তদের মধ্যে কেউ ক্ষমতার লড়াইয়ের জন্য। তাতে সাই বাবার কোনো ক্ষতি হয়নি। ঘটনাটিতে দুর্বৃত্তদের, এবং সত্য সাই বাবার দুজন সেবকের মৃত্যু হয়। পুলিশের অনুসন্ধানে বহু কথা নিরুত্তর থেকে যায়।

মার্চ ১৯৯৫তে, সত্য সাই বাবা অন্ধ্রপ্রদেশের অনন্তপুর জেলার শুষ্ক রায়লসীমা অঞ্চলের ১২ লাখ লোককে জল সরবরাহ করার প্রকল্প হাতে নেন।

১৯৯৯-এর এপ্রিলে, তিনি তামিলনাডুর মাদুরাইতে আনন্দ নিলয়ম মন্দির স্থাপন করেন।

বৃদ্ধাবস্থা এবং রোগ

২০০৩-এ, সত্য সাই বাবার কোমরে ফ্র্যাক্চার হয়, যখন একটি লোহার টুলে দাঁড়িয়ে থাকা একজন ছাত্র এবং টুলটি তার ওপর পড়ে যায়। তারপর থেকে তিনি গাড়ীতে বা চেয়ারে বসে 'দর্শন' দিতে থাকেন।

২০০৪-এর পর থেকে তিনি 'দর্শন' দিতে চাকাযুক্ত চেয়ার ব্যবহার করতে শুরু করেন এবং সাধারণ মানুষের সামনে আসা কমিয়ে দেন।

মৃত্যু

২৮ মার্চ ২০১১তে, তাকে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যার জন্য শ্রী সত্য সাই সুপার স্পেশালিটি চিকিৎসালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রায় একমাস চিকিৎসালয়ে থাকার পরে, তার স্বাস্থ্য দিনে-দিনে খারাপ হয়ে যাওয়ায়, রবিবার, ২৪ এপ্রিলের ৭:৪০ (ভারতীয় মান সময়)-এ তিনি ইহলীলা সংবরণ করেন।

সত্য সাই বাবা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে তিনি ৯৬ বছর বয়সে শরীর ত্যাগ করবেন এবং ততদিন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে থাকবেন। তার মৃত্যুর পরে, কিছুসংখ্যক ভক্ত বলেন যে সম্ভবতঃ তিনি চান্দ্র পঞ্জিকার কথা বলেছিলেন, যা তেলুগু হিন্দুরা ব্যবহার করে, এবং সৌর পঞ্জিকার বিষয়ে বলা হয়নি, এবং বয়স নির্ণযে়র ভারতীয় বিধির ব্যবহার করেছিলেন, যেখানে আগত বছরটিকে ব্যক্তির জীবনের অংশ বলে ধরা হয়। অন্য ভক্তরা তার পুনর্জীবিত হওয়া, পুনর্জন্ম গ্রহণ করা ও জাগ্রত থাকার কথা বলেন। ২৯ মার্চ ২০১১তে, সত্য সাই বাবাকে ওয়াটকিন্স হান্ড্রেড স্পিরিচুয়াল পাওয়ার লিস্ট-এ (ওয়াাটকিনের ১০০ আধ্যাত্মিক শক্তির তালিকায়) অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

শেষকৃত্য

তার শরীরকে দুদিনের জন্য রেখে দেওয়া হয় এবং ২৭ এপ্রিল ২০১১ সালে তাকে সম্পূর্ণ রাজ্যিক সম্মানের সঙ্গে কবর দেওয়া হয়। অনুস্থানটিতে প্রায় ৫ লাখ মানুষের সমাগম ঘটেছিল, এবং অন্য গণ্যমান্য ব্যক্তির সঙ্গে ভারতের তখনকার প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, গুজরাটের তখনকার মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ক্রিকেট খেলোয়াড় শচীন তেন্ডুলকর, তখনকার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এস এম কৃষ্ণা এবং অম্বিকা সোনি ইত্যাদি এসেছিলেন।

সত্য সাই বাবার মৃত্যু ভারতীয় রাজনীতিবিদ, চলচ্চিত্র তারকা, খেলোয়াড়, শিল্পোদ্যোগী ইত্যাদির মধ্যে গভীর শোকের সৃষ্টি করে। বহু মানুষ তাকে একজন অতি দয়ালু, নিঃস্বার্থ ব্যক্তি হিসেবে স্মরণ করেন, যিনি সর্বদা অন্যকে সহায়তা করার কাজ করতেন, নিজের ট্রাস্টের হাজার হাজার কোটি টাকার মাধ্যমে।

তাকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা রাজনীতিবিদদের মধ্যে তখনকার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং,শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি মহিন্দা রাজপক্স এবং চতুর্দশ দলাই লামা অন্যতম। সেই দিনই জন্মদিন থাকা বিখ্যাত ক্রিকেট তারকা শচীন তেণ্ডুলকার নিজের জন্মদিনের সমস্ত আয়োজন বাতিল করেন। সংবাদপত্র দ্য হিন্দুতে প্রকাশ হয়েছিল যে, "সত্য সাই বাবার আধ্যাত্মিকতা ও হিন্দু বিশ্বাসের প্রচার তাঁর ধর্ম-নিরপেক্ষতার বিশ্বাসে কখনও বাধাপ্রদান করেনি।"

কর্ণাটক সরকার ২৫ এবং ২৬ এপ্রিলের দিনদুটি এবং অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার ২৫, ২৬ এবং ২৭ এপ্রিলের দিনগুলি শোক প্রকাশের দিন হিসেবে ঘোষণা করেন।

পুত্তপর্থিতে সত্য সাই বাবার সমাধি

বাসস্থান উন্মুক্তি

১৭ জুন ২০১১তে, দান-দক্ষিণায় চলা ট্রাস্ট হিসেবে আরম্ভ হওয়া এবং আইনিভাবে ধর্মনিরপেক্ষ শ্রী সত্য সাই কেন্দ্রীয় ন্যাসের দুইজন আধিকারিক সত্য সাই বাবার ব্যক্তিগত বাসভবন সরকার, ব্যাঙ্ক এবং কর বিভাগের আধিকারিক, উচ্চতম ন্যায়ালয়ের বিচারক এ পি মিশ্রা ও কর্ণাটক উচ্চ ন্যায়ালয়ের অবসরপ্রাপ্ত বিচারক বেইদ্যনাথ, আয়কর বিভাগের দিক থেকে একজন নির্দ্ধারক, এবং ভারতের ভূতপূর্ব মুখ্য ন্যায়াধীশ পি এন ভগবতীর উপস্থিতিতে খোলে। সাই বাবার মৃত্যুর পরে সিল করা বাসভবনটিতে ৯৮ কিলোগ্রাম সোনার অলংকার যার মূল্য প্রায় ২১ কোটি টাকা, ৩০৭ কিলোগ্রাম রূপার অলংকার যার মূল্য প্রায় ১.৬ কোটি টাকা, এবং ১১.৬ কোটি টাকা নগদ পাওয়া যায়। নগদ পাওয়া ধনসম্পদ সাই ট্রাস্টের স্টেট ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়। সোনা এবং অন্যান্য সামগ্রী বিশেষ সুরক্ষিত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। জুলাইতে জেলা প্রশাসন অতিরিক্ত ৭৭ লাখ টাকা অন্য ৪টি ঘরে বিভিন্ন মূল্যবান বস্তুসহ লাভ করেন। এই সমস্ত দ্রব্যের মোট মূল্য ৭.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের চেয়েও বেশি বলে মনে করা হয়।

য়জুর্মন্দিরে দৈনন্দিন ভক্ত এবং নিঃস্বার্থ সেবকদের দেওয়া বিভিন্ন বস্তু যেমন হাজার হাজার খাঁটি রেশমের শাড়ি, ধুতি, জামা, ৫০০ জোড়া জুতো, পার্ফ্যুম ও হেয়ার্স্প্রের কয়েক ডজন বোতল, বৃহৎ পরিমাণের সোনা এবং রূপার "মঙ্গল সূত্রম্", হীরের মতো মূল্যবান পাথর ইত্যাদি পাওয়া যায়। সাই বাবার পরিধেয় ৭৫০ জোড়া গেরুয়া এবং সাদা কাপড়ও পাওয়া যায়।

জুলাই ২০১১তে, তেমনিভাবে ব্যাঙ্গালোরের আশ্রমে ৬ কিলোগ্রাম সোনার মুদ্রা এবং অলংকার, ২৪৫ কিলোগ্রাম রূপার সামগ্রী এবং ৮০ লাখ টাকা নগদ পাওয়া গিয়েছিল।

এই সামগ্রীগুলি বছর বছর ধরে সাই বাবার সমগ্র বিশ্বের ভক্তদের তাকে ধার্মিক উপহার হিসেবে দেওয়া বলে বিশ্বাস করা হয়।

ইচ্ছাপত্র মু্ক্তি

২ সেপ্টেম্বর ২০১২তে, সত্য সাই বাবার ঘনিষ্ঠ সত্যজিৎ সাইলান সাইবাবার ২৩ মার্চ ১৯৬৭তে পঞ্জীকৃত ইচ্ছাপত্রটি মু্ক্ত করে বলেন যে, সাই বাবা ট্রাস্টের সম্পত্তির ওপর তার পরিবারের কোনো অধিকার নেই। পত্রটিতে লেখা ছিল:

আমি, ভারতীয় নাগরিক, প্রশান্তি নিলয়ম ডাকঘরের শ্রী সত্য সাই নিচের কয়েকটি কথা ঘোষণা করছি:-

১) আমি অনন্তপুর জেলার পুত্তপর্থিতে জন্মগ্রহণ করেছিলাম এবং আমার বয়স বর্তমানে ৪৪ বছর। আমি বিদ্যালয়ে যোগদান করেছিলাম কিন্তু পড়াশোনা ত্যাগ করে আমি সনাতন ধর্মের প্রচারের প্রতি সমর্পিত হই। আমি অবিবাহিত এবং আমি আমার বাবা-মায়ের গৃহ বারো বছর বয়সে ত্যাগ করেছিলাম ও আমি ধার্মিক নির্দেশ গ্রহণ করে গেরুয়া পোশাক পরিধান করেছি এবং আমার সাংসারিক/বা পরিবার সম্বন্ধিত মোহ নেই। আমি ঘোষণা করছি যে, আমি আমার বাবা-মায়ের বাড়ি স্থায়ীভাবে ত্যাগ করে এসেছি এবং আমার ফিরে যাওয়ার কোনো উদ্দেশ্য নেই। আমি, পরিবারের সম্পত্তিতে আমার সকল অধিকার বা রুচি, স্থাবর এবং/বা অস্থাবর যাই থাকুক বা যেখানেই থাকুক তা ত্যাগ করছি এবং আমি কোনো ব্যক্তিগত ধন-সম্পত্তি, টাকা, জমির অধিকারী নই।

আমার ভক্তগণ আমাকে যা দেবে, তাতে আমার পরিচালনা, নিরীক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণে একজন ট্রাস্টি হিসাবে থাকবে, জনতার কাজে ব্যবহার হওয়ার জন্য। আমি এই ঘোষণা করছি যাতে কেউই পরিবারের সম্পত্তির অধিকার দাবী করতে বা আমার মাধ্যমে নিতে না পারে, যদি সেরকম কিছু থাকে।

সত্যজিৎ সাইলান প্রকৃত পত্রটির একমাত্র জীবিত সাক্ষী ইন্দুলাল শার কিছু প্র-পত্রও সঙ্গে দাখিল করেন। সত্যজিৎ সাইলানের বক্তব্য মতে, সাই বাবার নির্দেশমর্মে তিনি ১৯৯৮-এর থেকে পত্রটির দায়িত্বে আছেন। শ্রী সত্য সাই কেন্দ্রীয় ট্রাস্টের আধিকারিকগণ বলেন যে তারা এই ইচ্ছাপত্রের প্রতি সম্মান জানাবেন।

কৰ্মরাজির গ্ৰন্থসূচী

"বাহিনী" (বাহিনী) সত্য সাই বাবা দ্বারা লিখিত গ্ৰন্থের একটি ক্ৰম।

সত্য সাই সংস্থা

সত্য সাই সংস্থা বা "শ্রী সত্য সাই সেবা সংস্থা" সাই বাবা ১৯৬০র দশকে স্থাপন করেছিলেন। ভারতে প্রথম সাই কেন্দ্রগুলি "শ্রী সত্য সাই সেবা সমিতি"র নামে খোলা হয়েছিল। সত্য সাই সংস্থা "সদস্যগণের সেবা কার্যে আধ্যাত্মিক প্রগতি লাভ করার জন্য" খোলা হয়েছিল।

সত্য সাই সংস্থা মাসিক সনাতন সারথী নামের একটি আনুষ্ঠানিক পত্রিকা প্রকাশ করে।

সত্য সাই বাবা বলতেন যে, সত্য সাই সংস্থার মূল উদ্দেশ্য "মনুষ্যকে নিজের মধ্যে অন্তর্নিহিত দিব্যতার পরিচয় করানো। সেজন্য, আপনার দায়িত্ব সেই একজনে জোর দেওয়া, আপনি করা বা বলা সকলকিছুতে সেই একজনকে অনুভব করা। ধর্ম বা খেলা বা স্তর বা রঙের প্রভেদকে গুরুত্ব না দেওয়া। এক-ভাবকে তোমার সকল কাজকে আকুল করে দেওয়া। তেমন করা সকলেরই এই সংস্থায় স্থান আছে, বাকীরা প্রত্যাহার করুক।"

সত্য সাই সংস্থার মতে ১১৪টি দেশে প্রায় ১২০০টা "সত্য সাই বাবা" কেন্দ্র আছে। পরে, সাই বাবার ভক্তের সংখ্যা জানাটিও কঠিন। ধারণাটি ৬০ লাখ থেকে ১০ কোটি পর্যন্ত। ভারতে, সাই বাবার প্রায় সকল ভক্ত উচ্চ মধ্যবিত্ত এবং শহরে থাকেন, "প্রায় সকলেই ধনসম্পদ, শিক্ষা এবং পশ্চিম চিন্তাধারার সঙ্গে পরিচিত"। ২০০২ সালে তিনি ১৭৮টি দেশে তার ভক্ত থাকার কথা দাবী করেন।

সত্য সাই বাবা বৃহৎ সংখ্যায় বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, চিকিৎসালয়, ও অন্য তেমন বিনামূল্যের প্ৰতিষ্ঠান ভারতে এবং বিদেশে স্থাপন করেন, যার খরচ সাধারণত প্ৰায় ১০ হাজার কোটি ভারতীয় টাকা বলে মনে করা হয়। পরবর্তীকালে, ১.৪ লাখ কোটি টাকাও অনেকে বলেন। সাই বাবার মৃত্যুর পরে, সংস্থাটির খরচ কীভাবে চালানো হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, এটি অন্যায়ের ধারণাও সৃষ্টি করে, নগদ ধন বা সোনা থাকা বাক্স লুকানোর অভিযোগ ওঠে।

প্রতিষ্ঠান, প্রকল্প ও অন্যান্য কর্ম

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

সত্য সাই বাবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ অন্যান্য শিক্ষামূলক দিকে পারদর্শিতা সৃষ্টি করার সঙ্গে চরিত্র শিক্ষা, মানবীয় মূল্যবোধ এবং নৈতিকতার দিকে গুরুত্ব আরোপ করে।

শ্রী সত্য সাই বাবা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পুত্তপর্থি, অন্ধ্রপ্রদেশ, ভারত

শ্রী সত্য সাই উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান

১৯৮১তে প্রতিষ্ঠিত, কয়েক বছরের জন্য শ্রী সত্য সাই বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত, সত্য সাই বাবা যার আচার্য ছিলেন, শ্রী সত্য সাই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চারটি ক্যাম্পাস আছে, একটা পুত্তপর্থিতে ছেলেদের জন্য, একটা ব্যাঙ্গালোরের হোয়াইটফিল্ডে ছেলেদের জন্য, একটা অন্ধ্রপ্রদেশের অনন্তপুরে মেয়েদের জন্য, এবং একটা মুদ্দেনাহল্লিতে ছেলেদের জন্য।

শ্রী সত্য সাই উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়

শ্রী সত্য সাই উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয় সত্য সাই বাবা ১৫ জুন ১৯৮১ত পুত্তপর্থির প্রশান্তি নিলয়মে 'শ্রী সত্য সাই বিদ্যা গিরি' কম্প্লেক্সে আরম্ভ করেছিলেন। এটি একটি আবাসিক বিদ্যালয়, যেখানে ছেলে এবং মেয়েদের জন্য পৃথক হোষ্টেল আছে। বিদ্যালয়টি কেন্দ্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা ফলক, নতুন দিল্লির অধীনে প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণ পর্যন্ত পাঠদান করে। ২০১৪তে এই বিদ্যালয়কে ভারতের শীর্ষ ১০টি কেন্দ্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা ফলক অধীনস্থ বিদ্যালয়ের মধ্যে গোনা হয়েছিল।

অন্যান্য

সত্য সাই বাবা মুদ্দেনাহল্লি এবং কানিভেনারায়ণাপুর অঞ্চলে মুদ্দেনাহল্লি-সত্য সাই লোক সেবা বিদ্যালয় এবং শ্রী সত্য সাই লোক সেবা ন্যাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালাতেন। তিনি মদিয়ল নারায়ণ ভটের থেকে শ্রী সত্য সাই লোক সেবা প্রতিষ্ঠানের মতো প্রতিষ্ঠানও নেন। বর্তমানে এর শীর্ষস্থানে গংগাধর ভট আছেন। তদুপরি, একটি সত্য সাই বাবা বিশ্ববিদ্যালয় এবং চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ের নির্মাণ কার্য ২০০ একর (০.৮১ কি-মি) জমিতে চলছে। সত্য সাই বলেছিলেন যে, ক্যাম্পাসটি পুত্তপর্থির আধারে নির্মাণ করা হবে এবং শিক্ষার সঙ্গে আধ্যাত্মিক জ্ঞানও প্রদান করবে।

শ্রী সত্য সাই সুুপার স্পেশালিটি চিকিৎসালয়, হোয়াইটফিল্ড, ব্যাঙ্গালোর, কর্ণাটক, ভারত

চিকিৎসালয় এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা

শ্রী সত্য সাই কেন্দ্রীয় ন্যাস কয়েকটি সাধারণ চিকিৎসালয়, দুটি বিশেষ চিকিৎসালয়, চক্ষু চিকিৎসালয় এবং ভ্রাম্যমাণ ডিস্পেন্সারী চালায়, সঙ্গে গ্রামীণ অঞ্চলে স্বাস্থ্য শিবির চালিয়ে আসছে।

শ্রী সত্য সাই সাধারণ চিকিৎসালয়, হোয়াইটফিল্ড

শ্রী সত্য সাই সাধারণ চিকিৎসালয় হোয়াইটফিল্ড, ব্যাঙ্গালোরে অবস্থিত, যা ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল এবং যেখানে বিনামূল্যে জটিল সার্জারি, খাদ্য এবং ওষুধ প্রদান করা হয়। চিকিৎসালয়টি ২০ লক্ষাধিক মানুষকে পরিষেবা দিয়ে চলেছে।

শ্রী সত্য সাই উচ্চতর চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান, পুত্তপর্থি

শ্রী সত্য সাই সুপার স্পেশালিটি চিকিৎসালয়, পুত্তপর্থি, অন্ধ্র প্রদেশ, ভারত

শ্রী সত্য সাই উচ্চতর চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান একটি ৩০০ বিছানাযুক্ত সুবিধা যা বিনামূল্যে সার্জারি-সম্বন্ধীয় এবং চিকিৎসা পরিষেবা দেয় এবং যেটি ২২ নভেম্বর ১৯৯১এ ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পি. ভি. নরসিমা রাও উদ্বোধন করেছিলেন।

চিকিৎসালয়টিতে ১১টা সার্জিক্যাল থিয়েটার, ৫টা বিশেষ পরিষেবা একক, দুটি কার্ডিয়াক কাঠাটারাইজেশন পরীক্ষাগার, চিকিৎসা সম্বন্ধিত এবং সার্জিক্যাল ওয়ার্ড, এবং একটা ২৪-ঘণ্টার এমার্জেন্সি একক ছিল। "কার্ডিওলজি, কার্ডিওথোরাসিক, ভাস্কুলার চার্জারি, ইউরোলজি, অফ্থ্যাল্মোলজি ইত্যাদি বিষয়ে শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসক সমগ্র পৃথিবীর থেকে নিজ ইচ্ছায় আসেন এবং বিনামূল্যে পরিষেবা প্রদান করছেন"।

চিকিৎসালয়টির নিজের এক আলাদারকম ইতিহাস আছে। ২৩ নভেম্বর ১৯৯০তে, বাবার জন্মদিনে, দরিদ্র মানুষজনের চিকিৎসা পরিষেবা লাভ না করা নিয়ে ভাষণ দেওয়ার সময়ে সত্য সাই বাবা বলেন যে, একবছরের ভিতর পুত্তপর্থি গ্রামে একটি নতুন চিকিৎসালয় আসবে যা সকল রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান করবে। চিকিৎসালয়টি অভিলেখ গড়ে একবছরে নির্মাণ করা হয় এবং প্রথম কার্ডিওথোরাসিক অপারেশন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়।

শ্রী সত্য সাই উচ্চতর চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান, হোয়াইটফিল্ড

শ্রী সত্য সাই সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, হোয়াইটফিল্ড, ব্যাঙ্গালোর, কর্ণাটক, ভারত

প্রথম সুপার স্পেশালিটি চিকিৎসালয় নির্মাণের পর কর্ণাটক সরকার সাই বাবাকে আরেকটি চিকিৎসালয় বানাতে ৫৩ একর জমি দেয়, হোয়াইটফিল্ডে।

এই সুপার স্পেশালিটি চিকিৎসালয়টিতে ৩৩৩টি বিছানা আছে। চিকিৎসালয়টি ১৯ জানুয়ারি ২০০১এ ভারতের তৎকালীন প্রধান মন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী উদ্বোধন করেছিলেন। এই চিকিৎসালয় নির্মাণে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছিল। হাসপাতালটি ২৫০,০০০-এরও বেশি রোগীর চিকিৎসা বিনা খরচে সম্পাদন করেছে।

পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্প

অনন্তপুর

নভেম্বর ১৯৯৫তে সত্য সাই বাবা রায়ালসীমাতে পানীয় জলর অভাবের জন্য তার দুঃখ হওয়ার কথা প্রকাশ করেন। মার্চ ১৯৯৫ত শ্রী সত্য সাই কেন্দ্রীয় ন্যাস অনন্তপুরের সকলো গ্রামে জল সরবরাহ করার কথা আলোচনা করেন। ১৯৯৬তে কাজ সম্পূর্ণ হয়, শুষ্ক অনন্তপুর অঞ্চলের ৭৫০টি গ্রামের ১২ লাখ মানুষকে জল সরবরাহ করা হয়।

চেন্নাই

২০০৪এ কাজ সম্পন্ন হওয়া চেন্নাই পানীয় জল প্রকল্প চেন্নাইতে পুনর্নির্মিত জলমার্গ "সত্য সাই গঙ্গা ক্যানেল"-এর দ্বারা চেন্নাইতে জল সরবরাহ করে। তামিলনাডুর মুখ্যমন্ত্রী এম করুণানিধি প্রকল্পটির এবং সাই বাবার কাজের খুব প্রশংসা করেন। অন্য তেমন প্রকল্প হল ৪৫০০০০জন লোককে ১৭৯ গ্রামে উপকার করা মেডাক প্রকল্প, ১৪১ গ্রামে ৩৫০০০০জন লোককে উপকার করা মহবুবনগর জেলা প্রকল্প ইত্যাদি। জানুয়ারি ২০০৭-এ, ন্যাস মহারাষ্ট্রের লাতুরে মানুষকে জল সরবরাহ করার কথাও বলেছিল।

ওড়িশা

২০০৮ সালে ওড়িশার ২০ লাখ মানুষ বানাক্রান্ত হয়। সেজন্য, ১৬টি গ্রামকে প্রাথমিক পর্যায়ের কাজের অন্তর্গত করে, ৬৯৯টা ঘর নির্মাণ করা হয় শ্রী সত্য সাই সেবা সংস্থার দ্বারা, মার্চ ২০০৯ সালে।

এডুকেয়ার

সত্য সাই বাবার এডুকেয়ার প্রকল্পের উদ্দেশ্য সমগ্র বিশ্বে বিদ্যালয় স্থাপন করা এবং ছাত্র-ছাত্রীদের অন্ততঃ ৫টা মানবীয় মূল্যবোধের জ্ঞান দেওয়া। সাই এডুকেয়ার সাইটের মতে, অস্ট্রেলিয়া, মেক্সিকো, যুক্তরাজ্য, পেরু ইত্যাদি ৩৩টি দেশে বিদ্যালয় খোলা হয়েছে। টাইমস অব জাম্বিয়ার মতে-- "জাম্বিয়ার শিক্ষা ব্যবস্থায় সত্য সাই বাবার কাজের বিশেষ ইতিবাচক প্রভাব আছে। মানবীয় মূল্যবোধের ওপর আধারিত শিক্ষা, যা সাই বাবার শিক্ষা আদর্শের ফল, জাম্বিয়ার শিক্ষাবিদদের জন্য চোখ খুলে দেওয়া বস্তু"

কানাডায়, কানাডার স্বাধীন অনুসন্ধান এবং শিক্ষা সংস্থা ফ্রেশার ইন্সটিটিউট সত্য সাই বিদ্যালয়কে অন্টারিওর শীর্ষ ৩৭টি বিদ্যালয়ের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন।

আধ্যাত্মিক সংবাদ মাধ্যম

২৩ নভেম্বর ২০০১-এ, ডিজিটাল বেতার নেটওয়ার্ক 'সাই গ্লোবাল হার্মনিক ওয়ার্ল্ড স্পেস অর্গানাইজেশন', যা বিশ্ব মহাকাশ সংস্থা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে আরম্ভ করা হয়েছিল। মাইকেল অলেইনিকফ নোবেল (অ্যালফ্রেড নোবেলের দূর-সম্পর্কিত এবং বেতার নেটওয়ার্কটির জন্য অন্যতম অর্থ-প্রদাতা) বলেন যে, বেতার নেটওয়ার্কটি সত্য সাই বাবার বিশ্ব সম্প্রীতির বার্তাটি ছড়াতে সহায়তা করবে।

আশ্রম এবং মন্দির

প্রশান্তি নিলয়ম

পুত্তপর্থি, অন্ধ্রপ্রদেশ
সত্য সাই বাবার জীবন এবং কর্মের ওপর আধারিত চৈতন্য জ্যোতি সংগ্রহালয়

পুত্তপর্থি, যেখানে সত্য সাই বাবার জন্ম হয়েছিল, অন্ধ্রপ্রদেশের একটি ছোট্ট প্রত্যন্ত গ্রাম ছিল। এখন সেই 'গ্রাম'-এ একটা বৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয় কম্প্লেক্স, এক বিশেষ চিকিৎসালয়, দুটি সংগ্রহালয়: "সনাতন সংস্কৃতি" (সর্ব ধর্ম সংগ্রহালয় বলেও পরিচিত) এবং "চৈতন্য জ্যোতি" যা সত্য সাই বাবার জীবন এবং শিক্ষার ওপরেই আধারিত (পরে নিজের স্থাপত্যের জন্য কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছে)। সেখানে একটি প্লেনেটেরিয়াম, একটা রেলওয়ে স্টেশন, একটা হিল-ভিউ ষ্টেডিয়াম, একটা প্রশাসনিক ভবন, ইন্ডোর স্পোর্টস ষ্টেডিয়াম ইত্যাদিও আছে। উচ্চ পর্যায়ের ভারতীয় রাজনীতিবিদ যেমন ভূতপূর্ব রাষ্ট্রপতি এ. পি. জে. আব্দুল কালাম, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী, অন্ধ্রপ্রদেশেের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কনিজেটি রসাইয়াহ, কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী বি-এস ইয়েদ্যুরাপ্পা ইত্যাদি মানুষরাও পুত্তপর্থির আশ্রমের আনুষ্ঠানিক অতিথি ছিলেন। দশ লাখেরও অধিক মানুষ সত্য সাই বাবার ৮০তম জন্মদিন উপভোগ করেছিল, তার মধ্যে ভারত এবং ১৮০টি অন্য দেশের ১৩০০০ বিশেষ লোক ছিল।

হনুমান, কৃষ্ণ, শিরডির সাই বাবা, শিব, বুদ্ধ, যীশুখ্রীস্ট এবং জরথুষ্ট্রর মূর্তি থাকা প্রশান্তি নিলয়মের পাহাড়

সত্য সাই বাবা প্রায়ই নিজের মুখ্য আশ্রম পুত্তপর্থির প্রশান্তি নিলয়মে থাকতেন। গ্রীষ্মকালে তিনি ব্যাঙ্গালোরের হোয়াইটফিল্ডের কাডুগোডির আশ্রম 'বৃন্দাবন'-এ (বৃন্দাবন) থাকতেন। মাঝের সময়ে তিনি কোডাইকানালের 'সাই শ্রুতি আশ্রম'-এও যেতেন।

সত্যম, শিবম, সুন্দরম

সত্য সাই বাবা তিনটি মন্দির স্থাপন করেছিলেন। প্রথমটি হল মুম্বাইয়ের "ধর্মক্ষেত্র" বা "সত্যম" (১৯৬৮), দ্বিতীয়টি হায়দ্রাবাদের "শিবম" (১৯৭৩), এবং তৃতীয়টি চেন্নাইয়ের "সুন্দরম" (১৯৮১)।

ভক্তদের বিশ্বাস এবং রীতি-নীতি

কেউ কেউ সত্য সাই বাবা আন্দোলনটিকে হিন্দু আন্দোলন বলে অভিহিত করেন। কিন্তু ২০০৬ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্থ্রপলজির অধ্যাপক জন ডি কেলি ফিজির হিন্দু অভিজানের বিষয়ে একটি নিবন্ধে লেখেন যে, সত্য সাই সংস্থা নিজেদের "হিন্দু" বলে পরিচিতি দেয় না। কেলির মতে, তারা নিজেদের প্রতিষ্ঠাতাকে জীবিত ধর্মীয় সমন্বয়ের রূপে দেখে এবং নিজেদের আন্তর্ধর্মীয় আন্দোলন বলে অভিহিত করে।

আন্তর্জাতিকভাবে, সত্য সাই বাবার ভক্তবৃন্দ দৈনিক, নতুবা সপ্তাহে একবার, বৃহস্পতিবার বা রবিবারে মিলিত হন এবং ভজন, প্রার্থনা ইত্যাদি গান; আধ্যাত্মিক ধ্যান, সেবা ইত্যাদি করেন এবং মানবীয় মূল্যবোধের শিক্ষায় অংশ গ্রহণ করেন, যাকে বাল বিকাশ বলা হয়।

গুণমুগ্ধগণ সাই বাবার দর্শন করে আধ্যাত্মিক লাভগ্রহণ করায় বিশ্বাস করতেন, প্রতিদিন সন্ধ্যায় এবং দুপুরে। সাই বাবা মানুষের সঙ্গে কথা বলতেন, চিঠি নিতেন, বিভূতি প্রকট করে বিলিয়ে দিতেন বা দল অথবা কোনো ব্যক্তিকে আধ্যাত্মিক উত্তর জানাতেন এবং সাধারণ পথপ্রদর্শনের জন্য সাক্ষাৎকার দিতেন।

স্বীকৃতি

২৩ নভেম্বর ১৯৯৯-এ, ভারত সরকারের ডাক বিভাগ সাই বাবার গ্রামে জল সরবরাহের জন্য করা কাজকে স্বীকৃতি দিতে একটি পোস্টাল স্ট্যাম্প বা ডাক মোহর চালু করে।

জানুয়ারী ২০০৭-এ, চেন্নাইবাসীরা চেন্নাইয়ের জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়ামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, সত্য সাই বাবাকে অন্ধ্রপ্রদেশের কৃষ্ণা নদীর জল চেন্নাইতে সরবরাহ করার ধন্যবাদস্বরূপ। চারজন মুখ্যমন্ত্রী অনুস্থানটিতে উপস্থিত ছিলেন।

তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বলেন যে, সাই বাবা এমন একজন যিনি "দশ লক্ষ লোককে একটি নৈতিক এবং অর্থপূর্ণ জীবন যাপন করতে প্রেরণা যোগান"

ভারতীয় ডাক বিভাগ সাই বাবাকে স্মরণ করতে এই আধ্যাত্মিক গুরুর ৮৮তম জন্মদিন, নভেম্বর ২০১৩-এ একটি স্ট্যাম্প চালু করে।

বিতর্ক

সমালোচনা

সাই বাবার সমালোচকগণ তার ওপর হাত-সাফাই, যৌন নির্যাতন, কালো টাকা রখা, সেবা প্রকল্পে গাফিলতি করা এবং হত্যা ইত্যাদির অভিযোগ এনেছেন।

১৯৭২ সালে আব্রাহম কাভুর প্রথমবারের জন্য সত্য সাই বাবাকে প্রকাশ্যভাবে সমালোচনা করেন, যখন তার একজন ভক্তকে সর্বসমক্ষে একটি দাবী করতে দেখেন যে, সত্য সাই বাবা সেইকো ঘড়ির একটি নতুন মডেলের সৃষ্টি করেছেন, এবং দাবীটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়।

এপ্রিল ১৯৭৬তে, হসুর নরসিংহাইয়াহ, একজন চিকিৎসক, যুক্তিবাদী এবং তখনকার ব্যাঙ্গালোর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য "যুক্তিপূর্বক এবং বৈজ্ঞানিকভাবে অলৌকিক কার্যাবলী এবং অন্য সত্যা-সত্য প্রমাণ করতে ও অন্ধবিশ্বাসের তদন্ত করতে" একটি সমিতি প্রতিষ্ঠা এবং সমিতিটির অধ্যাক্ষতা করেন। নরসিংহাইয়াহ সত্য সাই বাবার কাছে তিনটি বহুল প্রচারিত চিঠি প্রেরণ করেন এবং বাবাকে তার অলৌকিক কার্যাবলী নিয়ন্ত্রিত শর্তে করতে প্রত্যাহ্বান জানান। চিঠিগুলিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। সত্য সাই বাবা বলেন যে, তিনি এই কারণে চিঠিগুলির প্রতি দৃষ্টিপাত করেননি যে "বিজ্ঞান নিজের প্রশ্ন কেবল মানব চেতনা পর্যন্তই সীমিত রাখে এবং আধ্যাত্মিকতা চেতনার বাইরে। যদি আপনি আধ্যাত্মিকতার প্রকৃতি বুঝতে চান, তা কেবল আধ্যাত্মিকতার মাধ্যমেই সম্ভব এবং বিজ্ঞানর মাধ্যমে নয়। বিজ্ঞান যা্ জানতে পেরেছে তা কেবল সৃষ্টি সংক্রান্ত একটি ছোট্ট অংশ...." নরসিংহাইয়াহর সমিতিটি আগস্ট ১৯৭৭ সালে ভঙ্গ করা হয়। এর্লেণ্ডুর হেরাল্ডসনের মতে, সমিতির আনুষ্ঠানিক প্রত্যাহ্বান সমিতির নেতিবাচক মনোভাব এবং সমিতির চারদিকে থাকা এক ধূমধামের জন্য মিলিয়ে যায়। নরসিংহাইয়াহ এটি সত্য মানেন যে, সাই বাবা তার অলৌকিক কর্মাদি ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে তার চিঠিকে গুরুত্ব দেননি। এই ঘটনার পর কয়েকমাস ধরে ভারতীয় সংবাদ পত্রসমূহে তর্ক-বিতর্ক চলে।

১৯৭৬ সালে সত্য সাই বাবার বিরুদ্ধে অভিযান চালানো ভারতীয় যুক্তিবিদ বাসব প্রেমানন্দ সত্য সাই বাবাকে মানুষের কথামাফিক সোনার দ্রব্য প্রকট করে গোল্ড কন্ট্রোল অ্যাক্ট বা স্বর্ণ নিয়ন্ত্রণ আইন ভঙ্গ করার জন্য আইনি দণ্ড দেওয়ার অসফল চেষ্টা করেন। যখন অভিযোগটি খারিজ করা হয়, প্রেমানন্দ অসফলভাবে আপীল করেন এই ভিত্তিতে যে, আধ্যাত্মিক শক্তি আইন স্বীকৃত সুরক্ষাকবচ নয়।

১৯৯৫ত রবার্ট ইগল যুক্ত রাজ্যের জন্য প্রযোজনা করা, লেখা এবং পরিচালনা করা দূরদর্শনের তথ্যচিত্র গুরু বাস্টার্স-এ সত্য সাই বাবার নকলভাবে বস্তু প্রকট করার বিষয়ে অভিযোগ করেন। চলচ্চিত্রটির ক্লিপটি ডেকান ক্রনিকালে প্রথম পৃষ্ঠায় "ডি ডি টেপ আনভেইলস্ বাবা ম্যাজিক" শিরোনামে ২৩ নভেম্বর ১৯৯২ত প্রকাশিত হয়। কিন্তু হেরাল্ডসন বলেন যে, ডিডি ভিডিওটি অনুসন্ধান করে, গবেষকগণ নকল বস্তু প্রকটের কোনো তথ্য খুঁজে পাননি। হেরাল্ডসনের মতে, ভিডিওটি কর্পরেট ভণ্ডামির তদন্ত করা একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, যেখানে হাত-সাফাইয়ের কোনো নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিন্তু হেরাল্ডসন বলেন যে, ডিডি ভিডিওটি অনুসন্ধান করে, গবেষকগণ নকল বস্তু প্রকটের কোনো তথ্য খুঁজে পাননি। হেরাল্ডসনের মতে, ভিডিওটি কর্পরেট ভণ্ডামির তদন্ত করা একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, যেখানে হাত-সাফাইয়ের কোনো নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

১৯৯৮-এ ব্রিটিশ সাংবাদিক মিক ব্রাউন নিজের বই দা স্পিরিচুয়াল টুরিষ্ট-এ এই মত পোষণ করেন যে, সত্য সাই বাবার মার্কিনী ভক্ত ওয়াল্টার কয়ানকে পুনর্জীবিত করার ঘটনাটি সত্যি নাও হতে পারে। তার মত ইন্ডিয়ান স্কেপ্টিক পত্রিকায় ডাক্তারদের লেখা চিঠির ওপর আধারিত, যা বাসব প্রেমানন্দ কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছিল। ব্রাউন একই গ্রন্থই সাই বাবার বিভূতি প্রকট করার চিত্র লন্ডনের কিছু ঘরে দেখার কথা বলেন এবং বলেন যে সেটি়া ভুয়ো নয়। ব্রাউন সাই বাবার সর্বজ্ঞ হওয়ার দাবীকে নিয়ে বলেন যে "সংশয়বাদীদের তথ্য দেখিয়েছে যে, বাবার পড়া ঐতিহাসিক ঘটনা ও বাইবেলে থাকা ভবিষ্যদ্বানী এবং প্রতিষ্ঠিত তথ্যের মধ্যে অমিল আছে।

ভাংকুয়ভার সাান-এ ২০০১-এ প্রকাশ পেয়েছিল যে, বাবা অনুগামীদেরকে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে মানা করেছেন এই কথা বলার পরে যে "এই শিক্ষা (বেদ) অতি পবিত্র। আজ মানুষ আন্তর্জাল এবং দূরদর্শনে দেখা সকল কথা বিশ্বাস করে নেয়, কিন্তু বৈদিক ঘোষণাগুলিতে নিজের আস্থা সুদৃঢ় রাখে না। আন্তর্জাল একটি বর্জ্য কাগজের টুকরোর মত। 'অন্তর্জাল'কে বিশ্বাস কর, আন্তর্জালকে নয়।"

যৌন নির্যাতনের অভিযোগ

জানুয়ারি ২০০২তে, ডেনমার্কের রাষ্ট্রীয় দূরদর্শন এবং বেতার সম্প্রচার কোম্পানি ডেনিশ রেডিও সিডিউসড্ বাই সাই বাবা তথ্যচিত্রে সাই বাবার কিছু ভিডিও দেখিয়ে বলে যে, সাই বাবার অলৌকিকতা হাতের সাফাই বলে প্রমাণ করা যায়। তথ্যচিত্রটিতে আলায়া রহমের সাক্ষাৎকারও দেখানো হয়, যেখানে তিনি সত্য সাই বাবার ওপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আনেন। তার ফলস্বরূপ, যুক্তরাজ্যের সংসদে ব্রিটিশ পরিবারের ছোট ছেলেদের সত্য সাই বাবার আশ্রমে গিয়ে একা সাক্ষাৎ করার সম্ভাব্য বিপদের কথা আলোচনা হয়।

২০০৪ সালে বিবিসি "দ্য সিক্রেট স্বামি" (গুপ্ত স্বামী) নামে তথ্যচিত্র প্রচার করে, "দ্য ওয়ার্ল্ড আনকভার্ড" ক্রমের অংশ হিসাবে।". বিবিসির তথ্যচিত্রটির একটি মুখ্য বিষয় ছিল আলায়া রহমের যৌন নির্যাতনের অভিযোগ। অনুস্থানটিতে তাঁর সঙ্গে মার্ক রোকের সাক্ষাৎকারও নেওয়া হয়েছিল, যিনি ১৯৬৯ থেকে নিজের জীবনের ২৫ বছর ধরে আন্দোলনটির সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং সত্য সাই বাবার দ্বারা নির্যাতিত হওয়ার অভিযোগ এনেছিলেন। অনুস্থানটিতে সত্য সাই বাবার সমালোচক বাসব প্রেমানন্দও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন যে, সত্য সাই বাবা "শুধু একজন ঠগই নয়, বরং একজন বিপজ্জনক যৌন নির্যাতক"। তার সাক্ষাৎকার অনুযায়ী, তার কাছে ৩০ বছর ধরে ঘোরা কাহিনী আছে, এবং তিনি বলেন যে তার কাহিনীগুলি একইধরনের, গুপ্তাঙ্গে তেল মাখানোর ঘটনা। একজন প্রাক্তন-ভক্তের বক্তব্য মতে অনুযায়ী, সত্য সাই বাবা "হাতে তেল মাখেন, আমাকে আমার প্যান্ট খুলে ফেলতে বলেন এবং আমার গুপ্তাঙ্গে তেল ঘষতে থাকেন"। প্রেমানন্দের মতে, বহু ভারতীয় ছেলে নির্যাতনের শিকার হয়, কিন্তু সাই বাবার ভারতে ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী সংযোগ থাকায় প্রকাশ করতে ভয় করে।

সমালোচনার প্রত্যুত্তর

সত্য সাই বাবা এবং তার ভক্তবৃন্দ এমন অভিযোগ জোরদারভাবে নস্যাৎ করেন, যে অভিযোগ কখনও প্রমাণিত হয়নি। ভক্ত বিল আইৎকেন "দ্য উইক"-এ বলেছিলেন যে, সত্য সাই বাবার সুনাম এবং সম্মান তার বিষয়ে প্রকাশিত নেতিবাচক কাহিনীসমূহ দ্বারা প্রভাবিত হয়নি। তিনি বলেন যে, যত বেশি লোক তার বিরুদ্ধে বলে, তত অধিক ভক্ত তার কাছে আসে।

ডেইলি টেলিগ্রাফে লেখা প্রবন্ধ "ডিভাইন ডাউনফল"-এ সত্য সাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক অনিল কুমার বলেন যে, তিনি বিশ্বাস করেন যে এসব সমালোচনা সত্য সাই বাবার ঈশ্বরীয় পরীক্ষণের একটি অংশ এবং প্রত্যেক ধর্মীয় গুরুকেই জীবনে সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়েছে। অনিল কুমার আরও বলেন যে, সত্য সাই বাবার ওপর ছোটবেলা থেকে এমন অভিযোগ আনা হয়েছে, কিন্তু প্রতিটি অভিযোগের সঙ্গে তিনি অধিক কীর্তিমান হয়েছেন।

লরেন্স নিজের গ্রন্থ "রিডেম্প্টিভ এনকাউন্টার্স: থ্রি মডার্ণ স্টাইলস্ ইন দ্য হিন্দু ট্রেডিশন"-এ লিখেছেন, "তিনি যেই হোন, তাঁর সমালোচক দাবী করার মতো সাধারণ পার্লার জাদুগরের অধিক।""

সত্য সাই বাবা প্রকাশ্যে, ২৫ ডিসেম্বর ২০০০ সালে অভিযোগের প্রত্যুত্তর দেন:

কিছু লোক নিজের তুচ্ছ-মানসিকতার জন্য সাই বাবার ভাবমূর্তি নিচু করার চেষ্টা করে। নাম এবং যশ আমার লক্ষ্য নয়। সেজন্য, আমি মিথ্যা অভিযোগের জন্য কোনো কিছু হারাইনি। আমার মাহাত্ম্য দিনে দিনে বেড়ে যেতে থাকবে। এটি কখনো এতটুকু কম হবে না, যদি তাঁরা মিথ্যা অভিযোগগুলি সমগ্র বিশ্বে মোটা অক্ষরে প্রকাশও করে। কিছু ভক্তকে মিথ্যা বাক্যগুলির জন্য সন্তপ্ত হতে দেখা যায়। তাঁরা প্রকৃত ভক্ত নয়। সাই-এর শক্তি জানার পরেও 'কাকের কা-কা রব থেকে কেন ভয় পাবে? কারো দেওয়ালে লেখা, রাজনৈতিক সমাবেশে বলা বা লিখিত মাধ্যমে প্রকাশ করা অশ্লীল সমস্ত কাহিনির ওপরে বিশ্বাস করতে নেই।.

২৬ ডিসেম্বর ২০০০ সালে দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়াতে সাই বাবার বক্তব্য প্রকাশ পায়:

যীশুখ্রিস্টও বহু দুরূহতার সন্মুখীন হয়েছিলেন, এবং ঈর্ষার জন্য তিনি ক্রুসবিদ্ধও হয়েছিলেন। তাঁর চারপাশে থাকা বহু লোক তাঁর করা ভাল কাজ এবং তাঁর একত্রিত করা বিপুল সংখ্যক অনুগামী সহ্য করতে পারেনি। তাঁর একজন শিষ্য জুডাস বিশ্বাসঘাতকতা করেন। সেই সময়ে একজন জুডাস ছিল, কিন্তু এখন হাজার হাজার আছে। যেভাবে সেই জুডাসকে বিশ্বাসঘাতকতা করতে প্রলোভিত করা হয়েছিল, আজকের জুডাসকে মিথ্যা বলার জন্য ক্রয় করা হয়েছে। ঈর্ষা তাঁর ওপরে আসা অভিযোগের প্রেরক ছিল।.

ডিসেম্বর ২০০১ সালে তখনকার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সাই বাবার ভক্ত অটল বিহারী বাজপেয়ী, ভারতের উচ্চতম ন্যায়ালয়ের আগের মুখ্য ন্যায়াধীশ পি. এন. ভগবতী, ভারতের রাষ্ট্রীয় মানব অধিকার আয়োগের চেয়ার পার্সন এবং ভারতের উচ্চতম ন্যায়ালয়ের আগের মুখ্য ন্যায়াধীশ রংগনাথ মিশ্রা, আন্তর্সংসদীয় ইউনিয়নের সভাপতি এবং বিশেষ মানব উন্নয়ন অ্যাম্বাসেডর নাজমা হেপ্তুল্লা, ভারতীয় সাংসদ, আগে লোকসভায় এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শিবরাজ পাতিল একসঙ্গে নিচের বাক্যগুলিতে স্বাক্ষর করেন:

আমরা ভগবান শ্রী সত্য সাই বাবার ওপরে কিছু সুনিশ্চিত অভিরুচির এবং লোকের আনা বন্য, অচিন্তাশীল, এবং মিশ্রিত অভিযোগের জন্য অত্যন্ত দুঃখিত। আমরা সাধারণভাবে আশা করি যে, দায়িত্বশীল মাধ্যম সত্য তথ্য প্রকাশ করার আগে নিশ্চিত করে নেবে — বিশেষত যখন ব্যক্তিটিকে সমগ্র বিশ্বে প্রেম এবং নিঃস্বার্থ মানবসেবার স্বরূপ হিসাবে গ্রহণ করা হয়।.

উল্লেখযোগ্য অনুগামী

পাদটীকা

বহিঃসংযোগ


Новое сообщение