Продолжая использовать сайт, вы даете свое согласие на работу с этими файлами.
হাম
হাম | |
---|---|
প্রতিশব্দ | মর্বিলি, রুবিওলা, লাল মিজলস, ইংরেজ মিজলস |
একটি হামে আক্রান্ত শিশুর দেহে চার দিনের পুরনো লাল ফুসকুড়ি দেখা যাচ্ছে | |
বিশেষত্ব | সংক্রামক রোগ |
লক্ষণ | জ্বর, কাশি, নাসাস্রাব, নেত্রপ্রদাহ, লাল ফুসকুড়ি |
জটিলতা | ফুসফুসপ্রদাহ (নিউমোনিয়া), খিঁচুনি, মস্তিষ্কপ্রদাহ , উপপ্রকট কঠিনকারক সর্বমস্তিষ্কপ্রদাহ, অনাক্রম্য-অবদমন, শ্রুতিহানি, দৃষ্টিহানি (অন্ধত্ব) |
রোগের সূত্রপাত | সংক্রমণের ১০-১২ দিন পরে |
স্থিতিকাল | ৭-১০ দিন |
কারণ | হামের ভাইরাস |
প্রতিরোধ | হামের টিকা |
চিকিৎসা | সহায়ক চিকিৎসা সেবা |
সংঘটনের হার | প্রতি বছর ২ কোটি |
মৃতের সংখ্যা | ২ লক্ষের বেশি (২০২১) |
হাম বা রুবিওলা (ইংরেজি: Rubeola) একটি অত্যন্ত ছোয়াঁচে ও তীব্র ভাইরাসঘটিত রোগ। প্যারামক্সিভাইরাস গোত্রের মর্বিলিভাইরাস গণের অন্তর্গত একটি ভাইরাসের কারণে রোগটি ঘটে থাকে; ভাইরাসটির পূর্ণ বৈজ্ঞানিক নাম মিজল্স মর্বিলিভাইরাস (Measles morbillivirus)। ভাইরাসটি প্রথমে শ্বাসনালিতে সংক্রমিত হয়, এরপর রক্তের মাধ্যমে দেহের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। বাগদাদ-ভিত্তিক পারসিক চিকিৎসক আবু বকর মুহাম্মদ ইবন জাকারিয়া আল রাজি সর্বপ্রথম খ্রিস্টীয় ৯ম শতকে হাম রোগটির বিস্তারিত লিখিত বর্ণনা দেন। ১৭৫৭ সালে ফ্রান্সিস হোম নামক একজন স্কটীয় চিকিৎসক রোগীর রক্তে উপস্থিত একটি সংক্রামক জীবাণুর কারণে যে হাম রোগটি হয়, তা প্রমাণ করেন। ১৯৫৪ সালে মার্কিন চিকিৎসক জন এন্ডার্স ও টমাস পিবলস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বস্টন নগরীতে হামে আক্রান্ত রোগীদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে সেখান থেকে হামের ভাইরাসটিকে পৃথক করতে সক্ষম হন। হামের ভাইরাসটি একটি একসূত্রবিশিষ্ট, ঋণাত্মক-দিকমুখী, আবরণীবিশিষ্ট, অখণ্ডিত আরএনএ ভাইরাস। ভাইরাসটির ২৪টি প্রকারণ থাকা সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে, তবে বর্তমানে মাত্র ৬টি প্রকারণ মানবজাতিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মানুষ ভাইরাসটির স্বাভাবিক পোষক; মানুষ ছাড়া অন্য কোনও প্রাণীর হাম হয় না।
মানবদেহে হাম সংক্রমিত হবার ১০ থেকে ১২ দিন পরে এর লক্ষণ-উপসর্গগুলি প্রকাশ পায় ও এরপর ৭-১০ দিন টিকে থাকে। শুরুর দিকে তীব্র সর্দিকাশির মতো উপসর্গ (হাঁচি-কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া, গলা ব্যথা) এবং সাথে রক্তাভ বা ফোলা চোখ ও তীব্র জ্বরের (প্রায়শ ৪০ °সে (১০৪ °ফা)-র বেশি তাপমাত্রার) সৃষ্টি করে। এছাড়া প্রথম উপসর্গ প্রকাশের দুই থেকে তিন দিন পরে গালের ভেতরের দিকে সাদাবর্ণের ছোপ দেখা যেতে পারে, যাদেরকে "কোপলিকের ছোপ" (Koplik's spots) বলে। পরবর্তী পর্যায়ে প্রথমে মুখ ও ঘাড় ও এরপর তিনদিনের মধ্যে দেহের অন্যান্য অংশের ত্বক বিন্দু বিন্দু লাল ফুসকুড়িতে ছেয়ে যায়। ফুসকুড়িগুলি ৫-৬ দিন টিকে থাকে, তারপরে মিলিয়ে যায়। সাধারণত ভাইরাসের সংক্রমণের পরে গড়ে ১৪ দিন পরে লাল ফুসকুড়িগুলি প্রকাশ পায়।
ঠিকমতো এ রোগের চিকিৎসা না করা হলে রোগী নানা গুরুতর জটিলতায় পড়তে পারে। তীব্র পর্যায়ে কানে রোগজীবাণু সংক্রমণ ও প্রদাহ (ওটাইটিস, ৭%), তীব্র উদরাময় (ডায়রিয়া, ৮%) ও এর কারণে দেহে পানিশূন্যতা, ফুসফুসে রোগজীবাণু সংক্রমণ ও প্রদাহ (নিউমোনিয়া, ৬%), মস্তিষ্কে প্রদাহ (এনসেফালাইটিস), গলাফোলা রোগ (ক্রুপ), অন্ধত্ব, খিঁচুনি, ইত্যাদি হতে পারে। মস্তিষ্ক প্রদাহ থেকে মৃত্যুও ঘটতে পারে। এই জটিলতাগুলির পেছনে হামের ফলে সৃষ্ট অনাক্রম্যতার অবদমন (immunosuppression) অংশত দায়ী। হাম মূলত একটি বায়ুবাহিত রোগ। হামে আক্রান্ত ব্যক্তি হাঁচি বা কাশি দিলে জীবাণু বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে এবং এটি ২ ঘন্টা বাতাসে ভেসে থাকতে পারে বা কোনও কিছুর পৃষ্ঠতলে লেগে থাকতে পারে। এছাড়া হামে আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে ব্যক্তিগত সংস্পর্শে আসলে বা নাক বা গলার নিঃসরণের সরাসরি সংস্পর্শে আসলে এটি সংবাহিত হতে পারে। একজন ব্যক্তি হামে আক্রান্ত হলে তার সাথে ঘনিষ্ঠ অনাক্রম্যতাহীন (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাহীন) ১০ জনের মধ্যে ৯ জনেরই হাম হতে পারে। এছাড়া সাধারণত একজন হামে আক্রান্ত ব্যক্তি ১২ থেকে ১৮ জন ঝুঁকিপ্রবণ ব্যক্তির দেহে রোগটি সংক্রমিত করতে পারে (অর্থাৎ এর জনন সংখ্যা ১২-১৮)। হামের জীবাণু সংক্রমণের পরে লক্ষণ-উপসর্গ প্রকাশ পেতে ১০ থেকে ১৪ দিন লাগে। কিন্তু উপসর্গগুলি (বিশেষত ত্বকে লাল ফুসকুড়ি) প্রকাশের চার দিন আগে থেকেই আক্রান্ত ব্যক্তি হামের জীবাণু নিজের অজান্তে ছড়াতে থাকে, আর লক্ষণ প্রকাশের পরেও আরও চারদিন ব্যক্তিটি ছোঁয়াচে থাকে।
হামের জন্য বিশেষ কোনও ভাইরাস নিরোধক ঔষধ নেই। হাম একটি ভাইরাসের কারণে ঘটে বলে ব্যাকটেরিয়া-নিরোধক (অ্যান্টিবায়োটিক) ঔষধ দিয়ে এটি নিরাময় করা যায় না। হামে আক্রান্ত ব্যক্তিকে অন্যান্য ঝুঁকিপ্রবণ ব্যক্তিদের কাছে থেকে পৃথক বা অন্তরিত করে রাখতে হয়। হামের গুরুতর জটিলতাগুলিকে হ্রাস করার জন্য পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণ করে ও বিছানায় শুয়ে বিশ্রাম নিয়ে অনাক্রম্যতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হবে। পানিশূন্যতার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পুনরোদনমূলক পানীয় খেতে হবে যাতে উদরাময় ও বমির ফলে দেহ থেকে বের হয়ে যাওয়া তরল ও অন্যান্য আবশ্যকীয় উপাদানগুলির অভাব পূরণ হয়। কাশির জন্য কাশির ঔষধ বা সিরাপ খেতে হবে। চামড়ার চুলকানির জন্য লোশন দিতে হবে। জ্বর কমানোর জন্য অ্যাস্পিরিন বা প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ সেবন করতে হবে। শ্বাসনালিতে ব্যথা-উপদ্রব কমানোর জন্য শ্বাসের সাথে পানির ভাঁপ নিতে হবে। সাধারণত দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে হাম নিজে থেকেই সেরে যায়। হাম হলে যে দ্বিতীয়-পর্যায়ের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হয়, তা থেকে শিশুদের মৃত্যু হবার ঝুঁকি থাকে। ফুসফুস, কান ও চোখকে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য ব্যাকটেরিয়া-নিরোধক (অ্যান্টিবায়োটিক) ঔষধ সেবন করতে হতে পারে। হামে আক্রান্ত সমস্ত শিশুকে ২৪ ঘণ্টা পর দুই মাত্রায় সম্পূরক ভিটামিন এ দেয়া হয়, যাতে হামের কারণে সৃষ্ট ভিটামিন এ-র অভাব পূরণ হয় (যা অপুষ্টিতে না ভোগা শিশুদেরও হতে পারে) এবং চোখের ক্ষতি বা অন্ধত্ব প্রতিরোধ করা যায়। এছাড়া ভিটামিন এ সেবনে হামজনিত মৃত্যুর সংখ্যাও হ্রাস পায়।
একবার হাম থেকে সেরে উঠলে রোগীরা সারা জীবনব্যাপী হামের বিরুদ্ধে অনাক্রম্যতা (রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা) অর্জন করে। ৫ বছরের কম বয়সী টিকাহীন শিশু, ৩০ বছরের বেশি বয়সের টিকাহীন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি, টিকাহীন গর্ভবতী নারী, দুর্বল অনাক্রম্যতাবিশিষ্ট ব্যক্তি, অপুষ্টিতে ভোগা ব্যক্তি ও ভিটামিন এ-র অভাবে ভোগা ব্যক্তিরা অত্যন্ত ঝুঁকিপ্রবণ। শিশুদের নিয়মিত হামের টিকাদান এবং গণটিকাদান আভিযান চালনা বৈশ্বিক পর্যায়ে হামের সংক্রমণ ও হামজনিত মৃত্যু হ্রাসের প্রধানতম উপায়। হাম টিকার মাধ্যমে সম্পূর্ণ প্রতিরোধযোগ্য (৯৭% কার্যকর)। ১৯৬৩ সাল থেকে প্রায় ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে হামের টিকা দেওয়া হচ্ছে, যা দুই মাত্রায় (ডোজে) দিলে অনাক্রম্যতা অর্জিত হয়। টিকাটি নিরাপদ, কার্যকর ও সস্তা (মাত্র এক মার্কিন ডলার দাম)। টিকাপ্রদত্ত অনাক্রম্যতা বহু বছর ধরে বজায় থাকলেও সারা জীবন ধরে না-ও থাকতে পারে। ৫ বছরের কমবয়সী শিশুরাই হামে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় বলে এক বছর থেকে ১৮ মাস বয়সী শিশুদের হামের টিকার প্রথম মাত্রাটি দেওয়া হয়। এরপর ৪ থেকে ৬ বছর বয়সে দ্বিতীয় মাত্রা বা ডোজটি দিতে হয়। এক বছরের কম বয়সের শিশুদের টিকা দেওয়া হয় না; তারা ইতিমধ্যেই হাম রোগ হওয়া ও অনাক্রম্যতা অর্জনকারী মায়ের গর্ভে থাকার সময় পরোক্ষভাবে বা জন্মের পরে মায়ের বুকের দুধ পান করে অনাক্রম্যতা (প্রতিরক্ষিকা বা অ্যান্টিবডি) অর্জন করে, তবে বুকের দুধ খাওয়া বন্ধ করলে আড়াই মাসেই অনাক্রম্যতা চলে যায়। তবে যেসব মায়ের জীবনে কখনও হাম হয়নি, কিন্তু হামের টিকা গ্রহণ করা আছে, তারা তাদের ভ্রূণে প্রতিরক্ষিকা প্রদান করে না, ফলে ঐসব শিশু জন্ম থেকেই হামের বিরুদ্ধে আক্রান্তপ্রবণ হতে পারে। ১৯৫৬ সালের পরে জন্ম নেওয়া সমস্ত প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি যাদের কোনও দিন হাম হয়নি বা শৈশবে টিকা নেয়নি, তাদেরও অন্তত একটি মাত্রায় হামের টিকা নেওয়া আবশ্যক। তবে গর্ভবতী নারী, এইডস, যক্ষ্মা বা কর্কটরোগে (ক্যান্সার) আক্রান্ত ব্যক্তি, অণুচক্রিকা-স্বল্পতায় ভোগা ব্যক্তি, সম্প্রতি রক্ত বা রক্তরস (প্লাজমা) দান করা ব্যক্তি, অনাক্রম্যতন্ত্রের উপর প্রভাব পড়ে এমন ঔষধ গ্রহণকারী ব্যক্তি, সম্প্রতি অন্য কোনও টিকা গ্রহণকারী ব্যক্তি কিংবা হামের টিকার কোনও উপাদানের প্রতি জীবনঘাতী অতিপ্রতিক্রিয়া (অ্যালার্জি) প্রদর্শনকারী ব্যক্তিদের জন্য হামের টিকা নেওয়া নিষেধ। বর্তমানে শিশুদেরকে সাধারণত হামের টিকা আলাদা করে দেওয়া হয় না, বরং এমএমআর টিকা (হাম, গালফোলা রোগ বা মাম্পস ও জার্মান হাম বা রুবেলার টিকা) কিংবা এমএমআরভি টিকার (হাম, মাম্পস, রুবেলা ও জলবসন্ত বা ভ্যারিসেলার টিকা) অংশ হিসেবে প্রদান করা হয়।
উন্নত দেশগুলির মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৮৫ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত হামের রোগীদের মাত্র ০.২%-এর মৃত্যু ঘটে, কিন্তু অপুষ্টিতে ভোগা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে মৃত্যুহার ১০% পর্যন্ত উঠতে পারে। বেশিরভাগ হামজনিত মৃত্যুই অনূর্ধ্ব ৫ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে ঘটে থাকে। ইদানিং ভ্রমণের কারণে ও টিকা নিতে অনীহার কারণে বিভিন্ন দেশে হামের বিরুদ্ধে অনাক্রম্যতা হ্রাস পাচ্ছে ও হামের ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া হামের টিকাটি গরম আবহাওয়ায় কার্যকারিতা হারায়, তাই বিদ্যুৎচালিত হিমায়কের উপরে নির্ভরশীল শীতল সরবরাহ শৃঙ্খলে কোনও ব্যাঘাত ঘটলে এটিকে সমস্ত শিশুর কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয় না। দারিদ্র্য বা যুদ্ধবিগ্রহের কারণে হিমায়ক ও বিদ্যুৎ সরবরাহের অভাবে ভোগা দেশ বা অঞ্চলে এই সমস্যাটি প্রকট। তাই আরও কার্যকরী ও তাপসহ টিকা উদ্ভাবনের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এখনও বহু উন্নয়নশীল দেশে হাম বিরাজ করছে। বিশেষ করে আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশের কিছু অঞ্চলে এর প্রাদুর্ভাব বেশি। হামজনিত মৃত্যুর ৯৫%-ই নিম্ন মাথাপিছু আয় ও দুর্বল স্বাস্থ্য অবকাঠামোবিশিষ্ট দেশগুলিতে ঘটে থাকে। যেসমস্ত দেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা যুদ্ধবিগ্রহের শিকার, সেগুলিতে হামের প্রাদুর্ভাব মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। স্বাস্থ্য অবকাঠামো ও স্বাস্থ্যসেবার ক্ষতির ফলে নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচি ব্যাহত হতে পারে এবং আবাসিক ত্রাণ বা উদ্বাস্তু শিবিরগুলিতে ভিড়ের কারণে সংক্রমণের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যেতে পারে।
হামের সংক্রমণ রোধ করা খুবই জরুরি। হামের বিরুদ্ধে সম্প্রদায়ব্যাপী বা যূথ অনাক্রম্যতা (Herd immunity হার্ড ইমিউনিটি) অর্জন করতে হলে সময়মত কমপক্ষে কোনও জনসমষ্টির ৯৫-৯৬% ব্যক্তির দুই মাত্রায় (ডোজ) টিকা দেওয়া থাকতে হবে। ২০১০-এর দশকে এসে বিশ্ব পর্যায়ে হামের টিকার প্রথম মাত্রাটি গড়ে প্রায় ৮৫% শিশুকে দেয়া সম্ভব হয়েছে, এবং দ্বিতীয় মাত্রাটির সংখ্যা বাড়লেও ২০১০-এর দশকের শেষে এসে মাত্র ৭১% শিশুকে দ্বিতীয় মাত্রার টিকাদানের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। ফলে এখনও বিশ্বে হামের কারণে বহু শিশু টিকার অভাবে মারা যাচ্ছে। ২০১৯ সালে টিকার আবশ্যকীয় ব্যাপ্তির অনুপস্থিতির কারণে সব মিলিয়ে ২ লক্ষেরও বেশি ব্যক্তি হামের কারণে মারা যায়, যাদের সিংহভাগই ছিল শিশু। ২০১০-এর দশকে এসে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, মাদাগাস্কার, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, জর্জিয়া, কাজাখস্তান, উত্তর ম্যাসিডোনিয়া, সামোয়া, টোঙ্গা ও ইউক্রেনে হামের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব ঘটে।
শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের হাম
শিশুদের মতো বড়দেরও হাম হতে পারে। তাই এখন হামের প্রতিষেধক হিসেবে বড়দের জন্যও আছে ‘এমএমআর’ টিকা। এ টিকা দেওয়া না থাকলে হাম হওয়ার আশঙ্কা থাকতে পারে। তবে, সাধারণত একবার হাম হলে দ্বিতীয়বার আর এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। তবে সবাইকেই সতর্ক থাকতে হবে, কেননা হাম ছোঁয়াচে।
হামের লক্ষণ
হাম হলে প্রথমে জ্বর হয় ও শরীর ম্যাজ ম্যাজ করে বা হালকা ব্যথা লাগে। প্রথম এক-দুই দিন অনেক তীব্র জ্বরও হতে পারে। চোখ-মুখ ফুলে উঠতে পারে। চোখ লাল হয়ে যেতে পারে, চোখ দিয়ে পানি পড়তে পারে। নাক দিয়ে জল পড়তে পারে এবং হাঁচিও হতে পারে। শরীরে ব়্যাশ বা ছোট ছোট লালচে গুটি/ফুসকুড়ি দেখা দেয় এবং দ্রুতই তা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ সময় বিশেষত শিশুরা কিছুই খেতে চায় না এবং ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়ে।
হাম হলে করণীয়
হাম হলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। চিকিৎসক রোগীকে ভালোভাবে দেখার পর শনাক্ত করতে পারবেন আসলেই হাম হয়েছে কিনা। সাধারণত তিন দিনের চিকিৎসাতেই এই রোগের জ্বর ভালো হয় এবং সাত দিনের মধ্যেই হামে আক্রান্ত রোগী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠে। হামে আক্রান্ত রোগীকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে। আর একটু পর পর ভেজা তোয়ালে/গামছা বা নরম কাপড় দিয়ে শরীর মুছিয়ে দিতে হবে। রোগীর বেশি জ্বর হলে বমিও হতে পারে। তবে এতে চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। এ ক্ষেত্রে ওষুধ খেতে হবে। তবে কোনো ভাবেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া রোগীকে ওষুধ খাওয়ানো যাবে না।
বিশ্রাম ও পানি
হাম হলে রোগীকে পুরোপুরি বিশ্রামে থাকতে হয়। এ সময় বাসা থেকে বের না হওয়াই ভালো। অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। আর স্বাভাবিক খাবারদাবারের পাশাপাশি রোগীকে বেশি বেশি তরল খাবারও দিতে হবে।
চিকিৎসা না হলে
সময়মতো চিকিৎসা করানো না হলে হাম থেকে ফুসফুস প্রদাহ বা নিউমোনিয়া, কানে রোগজীবাণু সংক্রমণ এমনকি মস্তিষ্কে প্রদাহ রোগ হতে পারে। তাই হামের নিরাপদ চিকিৎসা করানো খুবই জরুরি।
আরও দেখুন
বহিঃসংযোগ
দারিদ্র্যজনিত রোগ | এইডস · ম্যালেরিয়া · যক্ষ্মা · হাম · নিউমোনিয়া · উদরাময় |
---|---|
অবহেলিত রোগ |
কলেরা · চাগাস রোগ · আফ্রিকান নিদ্রা রোগ · শামুক জ্বর · গিনি ক্রিমি · নদী অন্ধত্ব · কালা জ্বর · চুলকানি
|
বিবিধ |