Мы используем файлы cookie.
Продолжая использовать сайт, вы даете свое согласие на работу с этими файлами.

হিরণ্যগর্ভ

Подписчиков: 0, рейтинг: 0
মানাকু রচিত গোল্ডেন কসমিক ডিম বা হিরণ্যগর্ভের পাহাড়ি চিত্র, ১৭৪০ খৃষ্টাব্দ।

হিরণ্যগর্ভ (সংস্কৃত: हिरण्यगर्भः) আক্ষরিক অর্থে 'স্বর্ণ গর্ভ' বা 'স্বর্ণ ডিম্ব' হলেন বৈদিক দর্শনে উল্লেখিত বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির প্রধান কারণ বা উৎস। হিন্দু সৃষ্টিতত্ত্ব অনুসারে আদি পুরুষই হলেন হিরণ্যগর্ভ।ঋগ্বেদের ১০.১২১ সূক্তটি হিরণ্যগর্ভ সূক্ত নামে পরিচিত। এই সূক্তে তাঁকে দেবতাদের ঈশ্বর ও তাঁর সমান কেউ নেই বলে উল্লেখ করে, এবং শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় হিরণ্যগর্ভকে প্রজাপতি হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। হিরণ্যগর্ভ ধারণাটি প্রথমে ঋগ্বেদের ১০ মণ্ডলের ৮২ সূক্ত ৫ এবং ৬ মন্ত্রে বর্ণিত হয়েছে, যেটি বিশ্বকর্মা সূক্ত নামে পরিচিত। যেখানে বর্ণিত হয়েছে— "আদিম গর্ভ" মহাজাগতিক সৃষ্টিকর্তা বা বিশ্বকর্মার নাভিতে স্থিত রয়েছে। পরবর্তীতে হিন্দু গ্রন্থগুলোতে বিশ্বকর্মার পরিবর্তে সূর্য বা বিষ্ণু উল্লেখিত হয়েছে।

উপনিষদে একে মহাবিশ্বের আত্মা বা ব্রহ্ম, বলা হয়েছে, এবং আরো উল্লেখিত হয়েছে যে- হিরণ্যগর্ভ অন্ধকারময় মহাশূন্যে প্রায় ১ বছর অবস্থিত ছিল এবং পরবর্তীতে এটি দুইভাগে বিভক্ত হলে, স্বর্গপৃথিবীর সৃষ্টি হয়। আধুনিক বিজ্ঞানের, বিগ ব্যাং তত্ত্বের সাথে এটিকে তুলনা করা হয়। বিগ ব্যাং তত্ত্ব অনুসারে, এই মহাবিশ্বের উৎপত্তি হয়েছে একটি বিন্দু থেকে।

ধ্রুপদী হিন্দু ধর্মগ্রন্থে, যেমন: বেদান্ত সূত্রে, হিরণ্যগর্ভ শব্দটি দ্বারা ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তা বুঝানো হয়েছে। হিরণ্যগর্ভ সোনার ডিম থেকে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে মনুসংহিতার ১.৯ শ্লোক অনুসারে, জলনিক্ষিপ্ত সেই বীজ সূর্যের ন্যায় প্রভাবিশিষ্ট একটি অণ্ডে পরিণত হল আর সেই অণ্ডে তিনি স্বয়ংই সর্বলোকপিতামহ ব্রহ্মা রূপে জন্ম গ্রহণ করলেন। কিন্তু মহাভারতে উক্ত হয়েছে, হিরণ্যগর্ভ থেকে তিনি প্রকাশিত হয়েছেন।

কিছু ধ্রুপদী যোগশাস্ত্রে হিরণ্যগর্ভকে যোগের প্রবর্তক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যদিও হিরণ্যগর্ভ হিসেবে ঋষি কপিলও উক্ত হন।

সৃষ্টিকার্য

মৎস্য পুরাণের (২.২৫-৩০) শ্লোকে প্রাথমিক সৃষ্টির বিবরণ রয়েছে। মহাপ্রলয়ের পরে, মহাবিশ্বের বিরাট বিচ্ছেদ, সর্বত্র অন্ধকার ছিল। সবকিছু গভীর নিদ্রামগ্ন ছিল। কিছুই ছিল না, হয় চলন্ত বা অচল। তারপর স্বয়ম্ভু, আত্মপ্রকাশিত সত্তার উদ্ভব, যা ইন্দ্রিয়ের বাইরে একটি রূপ। এটি থেকে প্রথমে কারণ বারি বা জল তৈরি হয় এবং এর মধ্যে সৃষ্টির বীজ স্থাপিত হয়। বীজ স্বর্ণ গর্ভে পরিণত হয়, হিরণ্যগর্ভ। তারপর স্বয়ম্ভু ডিম্বের মধ্যে প্রবেশ করেন।

নারায়ণ সূক্ত অনুসারে, দৃশ্যমান বা অদৃশ্য সবকিছুই নারায়ণেরভিতরে এবং বাইরে স্থিত আছে।

ঈশ উপনিষদ্ অনুসারে, মহাবিশ্ব ঈশ্বর কর্তৃক সৃষ্ট, যিনি এর ভিতরে এবং বাইরে উভয়ই দিকে ব্যাপ্ত আছেন। তিনি চলমান ও অচল, তিনি দূরে ও কাছাকাছি, তিনি এই সবের মধ্যে ও এইসব বাইরে সমভাবে স্থিত আছেন।

বেদান্ত সূত্রে আরও বলা হয়েছে যে, ব্রহ্ম হচ্ছে সেই যার কাছ থেকে এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি, যার মধ্যে এটি টিকে থাকে এবং প্রলয়ের পরে ব্রহ্মে মিশে যাবে।

সাংখ্য দর্শন মনে করে যে, সৃষ্টির দুটি মুখ্য কারণ রয়েছে, পুরুষপ্রকৃতি। চৈতন্যময় পুরুষের কার্যকারণে প্রকৃতির উপাদানগুলোর মূর্ত প্রকাশ বা বিবর্তন হলো সৃষ্টি।

ভাগবত বলে যে, আদিতে নারায়ণ একাই ছিলেন, যিনি সৃষ্টি, ভরণ-পোষণ, এবং প্রলয়ের কারণ (ব্রহ্মা, বিষ্ণুশিবের ত্রিমূর্তি নামেও পরিচিত)। সেই পরম হরি বহু-মাথা, বহু-চোখ, বহু-পা, বহু-অস্ত্রশস্ত্র এবং বহু-অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিশিষ্ট। সে হরি সমস্ত সৃষ্টির পরম বীজ, সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতম, শ্রেষ্ঠ থেকে শ্রেষ্ঠতম, বৃহৎ থেকে বৃহত্তম, এবং এমনকি সবকিছুর চেয়েও সেরা, সর্বশক্তিমান, এমনকি বায়ু এবং সমস্ত দেবতাদের চেয়েও বেশি শক্তিমান, সূর্য ও চাঁদের চেয়েও বেশি উজ্জ্বল, এবং মন ও বুদ্ধির চেয়েও বেশি সূক্ষ্ম। তিনিই স্রষ্টা, বিধাতা, পরমসত্তা। এই শব্দটির অর্থ এমন হতে পারে যে, যিনি এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের আদি স্রষ্টা, তাকেই সমস্ত চরাচর জগতের সৃষ্টির গর্ভ বা উৎস হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে।

ঋগ্বেদের হিরণ্যগর্ভ সূক্তে বলা হয়েছে, সৃষ্টির আদিতে কেবল হিরণ‍্যগর্ভই বিদ‍্যমান ছিলেন। তিনি জাতমাত্রই প্রাণিবর্গের অদ্বিতীয় অধীশ্বর বা স্রষ্টা। তিনি অন্তরীক্ষলোক, দ‍্যুলোক ও এই ভূমিভাগকে ধারণ করে আছেন (স্বস্থানে স্থাপিত করেছেন)। সমস্ত কিছুতে তিনি পরিব্যাপ্ত হয়ে, চৈতন্যময় সত্তারূপে তিনি এই বিশ্বজগত পরিচালিত করছেন।

গ্রন্থপঞ্জি


Новое сообщение