অগ্ন্যাশয় হলো মেরুদণ্ডী প্রাণীদের পরিপাকতন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত একটি অঙ্গ একই সাথে অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিতন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত একটি গ্রন্থি। মানবদেহে এটি পেটের ভেতর পাকস্থলীর পেছনে অবস্থান করে এবং গ্রন্থিরূপে কাজ করে। অগ্ন্যাশয় একটি মিশ্রগ্রন্থি অর্থাৎ এটি একইসাথে অন্তঃক্ষরা ও বহিঃক্ষরা গ্রন্থিরূপে কাজ করে। অগ্নাশয়ের ৯৯% ভূমিকা বহিঃক্ষরা এবং ১% ভূমিকা অন্তঃক্ষরা। অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি হিসেবে এটি প্রধানত রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে; ইনসুলিন, গ্লুকাগন, সিক্রেটিন ও প্যানক্রিয়েটিক পলিপেপটাইড (পিপি) হরমোনসমূহ নিঃসরণ করে। অগ্ন্যাশয় নালির মাধ্যমে ডিওডেনামে অগ্ন্যাশয় রস ক্ষরণ করে এটি পরিপাকতন্ত্রে বহিঃক্ষরা গ্রন্থি হিসেবে ভূমিকা পালন করে। অগ্ন্যাশয় রসে বাইকার্বনেট থাকে যা পাকস্থলী থেকে ডিওডেনামে প্রবেশকৃত এসিডকে প্রশমিত করে। পাশাপাশি এতে হজমকারী এনজাইম (উৎসেচক) থাকে যা পাকস্থলী থেকে ডিওডেনামে আগত খাদ্যেমন্ডের শর্করা, আমিষ ও স্নেহ পদার্থের এর ভাঙন ঘটায়।
গঠন
মানবদেহে অগ্ন্যাশয় পেটের ভেতর অবস্থিত যা পাকস্থলীর পেছন থেকে শুরু হয়ে পেটের উপরের অংশে প্লীহার নিকট পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রাপ্তবয়স্কে এর দৈর্ঘ্য ১২-১৫ সেন্টিমিটার (৪.৭-৫.৯ ইঞ্চি), লোবিউলযুক্ত, দেখতে লালচে-কমলা বা মিষ্টি রংয়ের।
শারীরতত্ত্বে অগ্ন্যাশয়কে মাথা, ঘাড়, দেহ ও লেজ অংশে ভাগ করা হয়। ডিওডেনামের অভ্যন্তরীণ বাঁক থেকে অগ্ন্যাশয়ের শুরু যেখানে এর মাথাকে ঘিরে দুটি রক্তনালী থাকে: ঊর্ধ্ব মেসেন্টারিক ধমনী ও ঊর্ধ্ব মেসেন্টারিক শিরা। অগ্ন্যাশয়ের দীর্ঘতম অংশ এর দেহ যা পাকস্থলীর পেছনে প্রসারিত এবং এর লেজ প্লীহার কাছে গিয়ে শেষ হয়।
অগ্ন্যাশয়ের দেহজুড়ে দুটি নালি থাকে। প্রধান অগ্ন্যাশয় নালি এবং গৌণ অগ্ন্যাশয় নালি। প্রধান অগ্ন্যাশয় নালি, অভিন্ন পিত্তনালির সাথে যুক্ত হয়ে অ্যাম্পুলা অব ভ্যাটার (হেপাটোপ্যানক্রিয়েটিক অ্যাম্পুলা) গঠন করে। অ্যাম্পুলাটিকে ঘিরে স্ফিংক্টার অব ওডি নামক একটি পেশী রয়েছে। অ্যাম্পুলাটি ডিওডেনামের নিম্নগামী অংশে উন্মুক্ত হয়। প্রধান অগ্ন্যাশয় নালিতে অভিন্ন পিত্তনালির প্রবেশ স্ফিংক্টার অফ বয়ডেন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। গৌণ অগ্ন্যাশয় নালি, প্রধান অগ্ন্যাশয় নালির প্রবেশপথের উপরে অবস্থিত একটি ভিন্ন প্রবেশপথে ডিওডেনামে উন্মুক্ত হয়।
কলাস্থান
অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে পর্যবেক্ষণ করলে, অগ্ন্যাশয়ের একটি রঞ্জিত প্রস্থচ্ছেদ-এ দুই ধরনের প্যারেনকাইমাল কোষ দেখা যায়।হালকা রং-এ রঞ্জিত কোষ গুলো কে বলা হয় "আইলেটস অব ল্যাংগারহ্যান্স"।এগুলো হরমোন তৈরী করে এবং অন্তঃক্ষরা কার্যাবলীর অন্তরগত।
অন্তঃক্ষরা অংশ
কোষপুঞ্জগুলি গুচ্ছ গুচ্ছ অন্তঃক্ষরা কোষ ও এদের মধ্যে জালের মত বিস্তৃত কৈশিক নালীর নেটওয়ার্ক নিয়ে গঠিত। কোষপুঞ্জের কৈশিকণালীগুলির প্রাচীরে সার বেঁধে অন্তঃক্ষরা কোষগুলি অবস্থিত। বেশির ভাগ অন্তঃক্ষরা কোষের সাথে রক্তনালীর সরাসরি সংযোগ আছে। অন্তঃক্ষরা কোষগুলি যেন "ব্যস্তভাবে নিজেদের হরমোন উৎপাদন করে যাচ্ছে এবং আশেপাশের অন্যান্য অগ্ন্যাশয় কোষগুলিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করছে, যেন সেগুলি দেহের একেবারে ভিন্ন কোন অংশে অবস্থিত।" ("...busily manufacturing their hormone and generally disregarding the pancreatic cells all around them, as though they were located in some completely different part of the body." )
|
জাতীয় গ্রন্থাগার |
|
বৈজ্ঞানিক ডাটাবেজ |
|