Продолжая использовать сайт, вы даете свое согласие на работу с этими файлами.
অতিস্থূলতার ব্যবস্থাপনা
অতিস্থূলতা রোগের প্রধান চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে খাদ্যাভ্যাস এবং শারীরিক কসরত। খাদ্যাভ্যাস কর্মসূচীর ফলে অল্প সময়ের মধ্যে ওজন হারানো সম্ভব, কিন্তু এই ওজনকে ওইভাবে কমিয়ে রাখা সমস্যার হতে পারে এবং মাঝে মাঝেই শারীরিক কসরতের প্রয়োজন পড়তে পারে। একইসঙ্গে কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার ঐ ব্যক্তির জীবনশৈলীর চিরদিনের অংশ হয়ে যেতে পারে। ওজন কমিয়ে তা দীর্ঘ সময়ের জন্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে সাফল্যের হার খুবই কম. এই সাফল্যের হার হলো ২—২০শতাংশ।
যদিও আরও অনেক নির্দিষ্ট কাঠামোর প্রেক্ষাপটে ৬৭%মানুষ রয়েছেন যারা এক য়ছর ধরে তাদের শারীরিক ওজন ১০%রও বেশি কমিয়ে যেতে অথবা ওজন কমানোর ধারা বজায় রাখতে পারছেন। 3কেজি (৬.৬ পাউণ্ড) বা তার বেশি ওজন অথবা সম্পূর্ণ শারীরিক ভরের ৩% কমানোর গড় বজায় রাখা যেতে পারে পাঁচ বছর পর্যন্ত।
ওজন কমানোয় সঙ্গে নির্দিষ্ট জনসংখ্যার মৃত্যুর হারে এক উল্লেখযোগ্য সুফল কয়েকটি সমীক্ষায় লক্ষ করা গেছে। অতি স্থূল মহিলা যাঁরা ওজন সংক্রান্ত অসুখে আক্রান্ত তাঁদের নিয়ে এক প্রত্যাশিত সমীক্ষায় দেখা গেছে, যে কোনো মাত্রায় আন্তর্জাতিক ওজন কমানোর সঙ্গে মৃত্যুহার ২০% কমার সম্পর্ক রয়েছে। স্থূলতা সংক্রান্ত অসুখ ছাড়া অতি স্থূল মহিলাদের ক্ষেত্রে ৯কেজি (২০পাউণ্ড) বা তার বেশি ওজন কমানোর সঙ্গে মৃত্যুহার ২৫% কমে যাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে।
সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, নির্দিষ্ট কিছু উপগোষ্ঠীর মধ্যে যাদের টাইপ ২ ডায়াবেটিস রয়েছে এবং তারা মহিলা, তাদের ক্ষেত্রে সবধরনের মৃত্যুহারে দীর্ঘমেয়াদী সুফল পাওয়া গেছে। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ওজন কমানোর সুফলে খুব একটা উন্নতি হয়নি। পরবর্তী এক সমীক্ষায় পাওয়া গেছে, নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে যাঁরা ওজন কমিয়েছেন তাঁদের মধ্যে যাঁরা মারাত্মক স্থূল ছিলেন সেই সব মানুষের ক্ষেত্রে মৃত্যুহার কমার এক সুফল লক্ষ করা গেছে। স্থূলতার জন্য খুবই কার্যকরী চিকিত্সা হলো বারিয়াট্রিক অস্ত্রপোচার। যদিও এর খরচ এবং জটিলতার ঝুঁকির কারণে গবেষকরা কার্যকরী কিন্তু কম আক্রমণাত্মক অন্য উপায় খুঁজে দেখছেন।
ডায়াটিং বা খাদ্যতালিকায় সীমাবদ্ধকরা
ওজন কমানোর জন্য যে সাধারণ খাদ্য তুলে ধরা হয় তা সাধারণত চারটি ভাগে বিভক্ত: কম চর্বি, কম কার্বোহাইড্রেট, কম ক্যালোরি এবং খুবই কম ক্যালোরি। এলোমেলোভাবে নির্বাচিত ছ’টি নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষা নীরিক্ষার মেটা-বিশ্লেষণে তিনটি মূল ধরনের খাদ্যের (কম ক্যালোরি, কম কার্বোহাইড্রেট, এবং কম চর্বি) মধ্যে কোনো পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। সব সমীক্ষায় দেখা গেছে, এতে মাত্র ২-৪কিলোগ্রাম (৪.৪-৮.৮পাউণ্ড) ওজন কমে। বৃহত্পুষ্টির উপর জোর না দিলেও দুবছরে এই তিনটি পদ্ধতির ফলে একইরকম ওজন কমে।
অধিক কার্বহাইড্রেট জাতীয় খাবার অর্থাৎ শর্করাপ্রধান খাবার কমিয়ে দিয়ে কম কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার যেমন শাকসবজি অধিক পরিমাণে নিয়মিত গ্রহণ করলে ক্যালরি নিয়ন্ত্রণে এনে ওজন কমানো সম্ভবপর হয়। অত্যন্ত কম ক্যালোরির খাদ্য যেমন শাকসবজি থেকে দৈনিক ২০০—৮০০ক্যালোরি পাওয়া যায়। খারাপ চর্বি এবং কার্বোহাইড্রেট এই দুই থেকেই ক্যালোরি গ্রহণকে নিয়ন্ত্রণ করে ভিটামিন ও মিনারেলযুক্ত শাকসবজি, কম ক্যালরির শস্য ও প্রোটিন গ্রহণকে বজায় রাখে। তারা শরীরকে অনাহারে রেখে দেয়, ফলে শরীরে জমে থাকা বাড়তি ক্যালরি খরচ হতে থাকে এবং গড়ে প্রত্যেক সপ্তাহে গড়ে ১.৫—২.৫কিলোগ্রাম (৩.৩—৫.৫পাউণ্ড) ওজন কমায়। সাধারণভাবে ব্যবহারের জন্য এই খাদ্য সুপারিশ করা হয় না। কারণ এর সঙ্গে অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জড়িয়ে আছে। যেমন সরু মাংসপেশী হারানো, গাউটের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া এবং ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য কমে যাওয়া। যে সমস্ত মানুষ এই ধরনের খাদ্যভ্যাস করছেন তাদের অবশ্যই খুব ঘনিষ্ঠভাবে চিকিত্সকের তত্ত্বাবধানে থাকা উচিত যাতে যে কোনো রকম জটিলতা কমানো যায়।
শারীরিক কসরত বা ব্যায়াম
চর্বি এবং গ্লাইকোজেন থেকে পাওয়া শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রহণ করে পেশী। পায়ের পেশী বড়ো হওয়ার কারণেই হাঁটা, দৌড়োনো এবং সাইকেল চালানো হলো শরীরের ওজন কমানোর ক্ষেরে সবচেয়ে কার্যকরী উপায়। শারীরিক কসরত বৃহত্পুষ্টির ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে। দ্রুত হাঁটার মতো মাঝারি মাপের শারীরিক কসরতের সময় চর্বিকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করার একটা ঝোঁক তৈরি হয়েছে। স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন সুপারিশ করেছে, সপ্তাহে অন্তত ৫দিন ৩০মিনিট সময় ধরে মাঝারি মাপের শারীরিক কসরত করা উচিত।
কোক্রেন কোলাবরেশনের মাধ্যমে এলোপাতাড়িভাবে ৪৩জনের উপর নিয়ন্ত্রিত সমীক্ষা চালিয়ে মেটা-বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে শুধুমাত্র শারীরিক কসরত করলে ওজন কম কমে। এর সঙ্গে খাদ্যাভ্যাসের বিষয়টি যুক্ত করলে যদিও, শুধুমাত্র খাওয়া কমিয়েই ১কিলোগ্রাম পর্যন্ত ওজন কমানো যায়। বড়ো ধরনের শারীরিক কসরতে করে দেখা গেছে, ১.৫কিলোগ্রাম (৩.৩পাউণ্ড) ওজন কমেছে। তাসত্ত্বেও সাধারণ জনসংখ্যার মধ্যে যেভাবে শারীরিক কসরত করা হয় তাতে মাঝারি মাপের প্রভাব পড়েছে। খাদ্য গ্রহণে নিয়ন্ত্রণ না রেখেই ২০ সপ্তাহের প্রাথমিক সামরিক প্রশিক্ষণে দেখা যায় নবনিযুক্ত স্থূলকায় ব্যক্তির কমপক্ষে ১২.৫ কিলোগ্রাম (২৭.৬ পাউণ্ড) ওজন হ্রাস পেয়েছে। আপাত দৃষ্টিতে ওজন কমাতে হলে অতি শারীরিক কসরত অত্যন্ত জরুরি বলেই মনে করা হয়। যে যন্ত্রের সাহায্যে হাঁটা পথ পরিমাপ ও কত পা হাঁটলো তা জানা যায় তা অর্থাৎ পিডোমিটার ব্যবহার করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অনেক বেশি উদ্বুদ্ধ হতে পারবেন। কেউ যদি গড়ে ১৮ সপ্তাহ শারীরিক কসরত করে এবং কসরতের মাত্রাকে বাড়িয়ে ২৭% করতে পারে তাহলে BMI নিশ্চিতভাবেই ০.৩৮ অংশ কমাতে সমর্থ হবেন।
সিঁড়ি ভাঙায় উত্সাহিত করার পাশাপাশি সমবেত প্রচার চলতে থাকলে জনগণের মধ্যে কায়িক শ্রম করার মানসিকতা বৃদ্ধি পায়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, কলম্বিয়ার বোগোটা শহরে প্রতি রবিবার ও ছুটির দিন শহরবাসী যাতে শারীরিক কসরত করতে পারে তারজন্য ১১৩কিলোমিটার (৭০ মাইল) দীর্ঘ রাস্তা কার্যত বন্ধ করে দেওয়া হয়। দীর্ঘস্থায়ী ও কঠিন রোগ, স্থূলতাকে মোকাবিলা করতেই পথচারীদের জন্য ঐ রাস্তা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
ওজন কমানোর কর্মসূচী
ওজন কমানোর কর্মসূচী অনেক সময়ই জীবনশৈলীর পরিবর্তন এবং খাদ্যাভ্যাসের সংশোধনকেও তুলে ধরে। এরসঙ্গে অধিক ক্যালরিযুক্ত খাবার অল্প পরিমাণে খাওয়া অথবা অধিক ক্যালরির খাবারের বদলে কম ক্যালরির আইটেম খাবার হিসেবে গ্রহণ করা, নির্দিষ্ট কিছু ধরনের খাবার অর্থাৎ শর্করা, ভাজাপোড়া, বাইরের খাবার ও জাঙ্ক ফুড খাওয়া কমিয়ে দেওয়া এবং সচেতনভাবেই আরও বেশি করে শারীরিক কসরত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া যুক্ত থাকতে পারে। ওজন কমানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এমন একদল মানুষের সঙ্গেও অন্য মানুষের যোগাযোগ তৈরি সম্ভব করে তোলা যায় এই কর্মসূচীর মাধ্যমে। এই কর্মসূচীতে যোগদানকারীদের মধ্যে পারস্পরিক প্রেরণা এবং উত্সাহজনক সম্পর্ক গড়ে উঠবে এই আশা। বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় কর্মসূচী প্রচলিত আছে। এর মধ্যে রয়েছে ওয়েট ওয়াচার্স, ওভারইটার্স অ্যানোনিমাস এবং জেনি ক্রেইগ। কেউ দুবছরের বেশি সময় ধরে নিজে থেকেই নির্দিষ্ট একটি খাদ্য তালিকায় সীমাবদ্ধ রাখলে এইগুলি মাঝারি মাপের ওজন কমাতে (২.৯কে জি, ৬.৪পাউণ্ড) সাহায্য করে বলে মনে করা হয়। ইন্টারনেট ভিত্তিক কর্মসূচী অকার্যকর বলেই মনে করা হয়। চীনের সরকার বেশ কিছু সংখ্যক ‘চর্বি খামার’এর প্রচলন করেছে, যেখানে অতি স্থূল শিশুরা বাধ্যতামূলক কিছু শারীরিক কসরত করতে যায়। তারা একটি আইনও পাস করেছে। এই আইনে বলা হয়েছে, প্রতিদিন স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের অন্তত এক ঘণ্টা শারীরিক কসরত বা খেলাধুলা করতে হবে (চীনে অতি স্থূলতা দেখুন)।
ওষুধের ব্যবস্থা
মাত্র দুধরনের অতি স্থূলতা-রোধী ওষুধ দীর্ঘদিন ব্যবহারের জন্য এখন এফ ডি এ বা FDA অনুমোদন রয়েছে। তার একটি হলো ওরলিস্ট্যাট (জেনিক্যাল), যেটা অগ্ন্যাশয়ের লিপাসকে বাধা দিয়ে অন্ত্রের চর্বি শুষে নেয়। অপরটি হলো সিবুট্রামাইন (মেরিডিয়া)। এটা মস্তিষ্কে কাজ করে। এটা নোরেপাইনফ্রাইন, সেরেটোনিন এবং ডোপামাইন (অবসাদ-বিরোধীর সঙ্গে অনেকটা সাদৃশ্য আছে)’এর স্নায়বিকপরিবহনের নিষ্ক্রিয়তায় বাধা দেয়। ফলে খাবারের ইচ্ছা কমে যায়। রিমোনাব্যান্ট (অ্যাকমপ্লিয়া) নামে একটি তৃতীয় ওষুধ এণ্ডোক্যানাবাইনয়েড সিস্টেমকে একটি নির্দিষ্ট বাধা দানের মধ্যে দিয়ে কাজ করে। এই ওষুধ তৈরি করা হয়েছে সেই জ্ঞান থেকে যেখানে যাঁরা গাজা খান তাঁদের মধ্যে অনেক সময় ক্ষুধার অনুভূতি কাজ করে যাকে মাঝে মাঝেই উল্লেখ করা হয় ‘চিবোনো’ হিসেবে। অতি স্থূলতার চিকিৎসায় এই পদ্ধতি ইউরোপে অনুমতি পেলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় নিরাপত্তাজনিত কারণে অনুমতি পায়নি। যদিও ২০০৮ সালের অক্টোবর মাসে ইওরোপীয়ান মেডিসিন এজেন্সি সুপারিশ করেছে ইউরোপে রিমোনাব্যান্টের বিক্রি বন্ধ করে দেওয়ার জন্য। কারণ মনে করা হচ্ছে এর থেকে যতোটা না সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে তার থেকে ঝুঁকির পরিমাণ বেশি হয়ে যাচ্ছে। এই ওষুধগুলির সাহায্যে মাঝারি ওজন কমানো যায়। দীর্ঘ সময় ধরে ওরলিস্ট্যাটে ২.৯কেজি (৬.৪পাউণ্ড), সিবুট্রামাইনে ৪.২কেজি (৯.৩পাউণ্ড) এবং রিমোনাব্যান্টে ৪.৭কেজি (১০.৪পাউণ্ড) হলো ওজন কমানোর গড় হার। ওরলিস্ট্যাট এবং রিমোনাব্যান্ট ডায়াবেটিসের ঘটনা কমানোর দিকে নিয়ে যায় এবং তিনটি ওষুধই কোলেস্টেরলের উপর প্রভাব ফেলে। যদিও, এই ওষুধগুলি দীর্ঘ সময়ের জটিলতা এবং অতি স্থূলতার ফলাফলের উপর কতোটা প্রভাব ফেলে সে সম্পর্কে খুব কম তথ্যই পাওয়া গেছে। সাধারণভাবে ব্যবহার হয় না এমন কিছু ওষুধও এখানে রয়েছে। এর মধ্যে কিছু আছে যেগুলি শুধুই অল্প সময়ের জন্য ব্যবহার করতে বলা হয়েছিলো, অন্যগুলি ব্যবহার করা হয় কোনোরকম লেবেল ছাড়া। এখনো অন্য কিছু ওষুধ ব্যবহার করা হয় বেআইনিভাবে। এরমধ্যে অধিকাংশই এক বা অধিক স্নায়ু পরিবহনের উপর কাজ করে খাবারের ইচ্ছাটাকেই দমিয়ে দেয়।ফেণ্ড্রিমেট্রাজাইন (বোনট্রিল), ডাইথাইলপ্রোপিয়ন (টেনুয়েটে) এবং ফেন্টারমাইন (অ্যাডিপেক্স-পি) মতো কিছু ওষুধকে এফ ডি এ স্বল্প সময় ব্যবহারের জন্য অনুমতি দিয়েছিলো। কিন্তু বুপ্রোপিয়ন (ওয়েলবুট্রিন), টোপিরামেট (টোপাম্যাক্স) এবং জোনিসামাইড (জোনেগ্র্যান) মতো কিছু ওষুধ ব্যবহৃত হয় কোনো লেবেল ছাড়াই। কোনো ওষুধের কার্যকারিতা নির্ভর করে তার মধ্যে কমোরবাইটিসের উপস্থিতির ওপর। অতি ওজন ডায়াবেটিকসের ক্ষেত্রে মেটফরমিন (গ্লুকোফেজ)কে পছন্দ করা হয়। কারণ এটা সালফোনিলুরিয়াস বা ইনসুলিনের থেকে হালকা ওজন কমানোর ক্ষেত্রে বেশি কার্যকরী। অন্যদিকে থেথিয়াজোলিডাইনেডিয়েনেস-এর ফলে ওজন বাড়তে পারে। তবে এটা মধ্যস্থলের অতি স্থূলতা কম করে। ফ্লুক্সেটাইন (প্রোজ্যাক), ওরলিস্ট্যাট এবং সিবুট্রামাইন ১২—৫৭সপ্তাহ ব্যবহার করে ডায়াবেটিক্সে মাঝারি মাপের ওজন কমানো সম্ভব। প্রাথমিক প্রমাণে যদিও দেখা গেছে, সিবুট্রামাইন বনাম নিয়ন্ত্রণ (১১.৪% বনাম ১০.০%) যারা নিচ্ছে তাদের মধ্যে অনেক বেশি পরিমাণে হৃদরোগের ঘটনা ঘটছে। [407] এই সমস্ত চিকিত্সার ফলে স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি কী কী সুবিধা পাওয়া গেছে তা এখনো স্পষ্ট নয়। ১৯৯৭সালে বাজার থেকে ফেনফ্লুরামাইন এবং ডেক্সফেমফ্লুরামাইন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। আবার ২০০৪সালে ইফেড্রাইন(চীনের ঐতিহ্যগত ভেষজ ওষুধ ইফেড্রা সিনিকা থেকে তৈরি মা হুয়াঙ্গ—এ পাওয়া যায়) বাজার থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। মাদক আসক্তির আশঙ্কায় অতি স্থূলতার চিকিত্সার জন্য ডেক্সামফেটামাইনসকে এফ ডি এ বা FDA অনুমতি দেয়নি। যথেষ্ট পরিমাণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে এই সমস্ত ওষুধ ব্যবহারের সুপারিশ করা হয়নি। যদিও মানুষ মাঝে মাঝেই বেআইনিভাবে এই সমস্ত ওষুধ ব্যবহার করে।
অস্ত্রোপচার
[420] বারিয়াট্রিক সার্জারি ("ওজন কমানোর অস্ত্রোপচার") হলো স্থূলতার চিকিৎসায় শল্য চিকিৎসার ব্যবহার। যেহেতু প্রত্যেক অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রেই জটিলতা রয়েছে, তাই মারাত্মকভাবে স্থূল ব্যক্তির ক্ষেত্রেই একমাত্র অস্ত্রোপচারের সুপারিশ করা হয় (BMI > ৪০) খাদ্যাভ্যাসে নিয়ন্ত্রণ এনে এবং পারমাকোলজিকাল চিকিৎসার মাধ্যমে যাদের ওজন কমানো সম্ভব হয় না কেবলমাত্র তাদের ক্ষেত্রেই এই পথ নেওয়া হয়। ওজন কমানোর অস্ত্রোপচার বিভিন্ন নীতির ওপর ভরসা করে রয়েছে : সবচেয়ে সাধারণ দুটি লক্ষ্য হলো পাকস্থলীর আয়তন কমানো (যথা অ্যাডজাস্টেবল গ্যাস্ট্রিক ব্যাণ্ড ও ভার্টিকাল ব্যাণ্ডেড গ্যাস্ট্রোপ্লাস্টি করে)। অরুচির প্রাথমিক ধারণা তৈরি করে এবং যা ভুঁড়ি কমিয়ে দেয় তাকে গ্যাস্ট্রিক বাইপাস সার্জারি বলা হয় যা সরাসরি শোষণ কমিয়ে দেয়। ব্যাণ্ড সার্জারি উলটোনোও সম্ভব, কিন্তু ভুঁড়ি কমানো বা বাওয়েল শর্টেনিং তা নয়। ল্যাপ্রোস্কোপির মাধ্যেমেও কিছু প্রক্রিয়া করা যায়। ওজন কমানোর অস্ত্রোপচারে প্রায়ই জটিলতা হয়।[422] প্রবল স্থূলতার জন্য অস্ত্রোপচারের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী ওজন হ্রাস ও সামগ্রিকভাবে মৃত্যুহারের সম্পর্ক জুড়ে রয়েছে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে ১৪% থেকে ২৫% ওজন হ্রাস (কী ধরনের প্রণালী নেওয়া হয়েছে তার ওপর নির্ভর করে) হয়েছে ১০ বছরে, এবং ২৯% হ্রাস হয়েছে সামগ্রিক মৃত্যহারের ক্ষেত্রে সাধারণ ওজন কমানোর পদক্ষেপের তুলনায়।[424] বারিয়াট্রটক অস্ত্রোপচারের পর দেখা গেছে ডায়াবেটিস মেলিটাস, কারডিওভাস্কুলার রোগ ও ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি লক্ষণীয়ভাবে কমে গেছে।[428][426] অস্ত্রোপচারের প্রথম কয়েক মাসের মধ্যে চিহ্নিত ওজন হ্রাস হয় এবং তার পর থেকে দীর্ঘমেয়াদীভাবে তা টিকে থাকে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেলো দুর্ঘটনা ও আত্মহত্যায় ব্যাখ্যাতীতভাবে মৃত্যু বেড়েছে যদিও রোগ প্রতিরোধের নিরিখে এটি অধিকতর নয়।[429] যখন দুটি মূল প্রণালীর তুলনা করা হয় দেখা যায় ব্যান্ডিং প্রণালীর থেকে তুলনায় গ্যাস্ট্রিক বাইপাস পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচারের এক বছর পর ৩০% বেশি ওজন হ্রাস হয়।[431] লিপোসাকশনর প্রভাব স্থূলতার ওপর খুবই কম। কিছু ছোটো সমীক্ষায় দেখা গেছে অন্যদের সুবিধাও [433]একেবারেই নেই।[435] গ্যাস্ট্রোস্কপির মাধ্যমে ইন্ট্রাগ্যাসট্রিক বেলুন প্রতিস্থাপন তবু প্রতিশ্রুতিসম্পন্ন। এক ধরনের বেলুন ৫.৭ BMI এককের ওপর ৬ মাসের ওপর অথবা ১৪.৭ কেজি (৩২.৪ পাউণ্ড)ওজন হ্রাস করতে পারে। বেলুন সরিয়ে নিলে হারানো ওজন ফিরে পাওয়া খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার, যদিও, ৪.২% মানুষই এই যন্ত্রটি সহ্য করতে পারে না।[437]
ক্লিনিকাল নিয়ম বিধি
স্থূলতার ক্রমবর্ধমান হার সামাল দিতে পশ্চিমী বিশ্বের বেশিরভাগটাই ক্লিনিকাল প্র্যাক্টিস গাইডলাইন তৈরি করেছে। ২০০৪-এর পর থেকে অস্ট্রেলিয়া,[439] কানাডা,[440] ইউরোপীয় ইউনিয়ন,[441] ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র[442] সকলেই এব্যাপারে বিবৃতি প্রকাশ করছে। আমেরিকান কলেজ অব ফিজিসিয়ান্স দ্বারা প্রকাশিত ক্লিনিকাল প্র্যাক্টিস গাইডলাইনে নিম্নলিখিত পাঁচটি সুপারিশ করা হয়েছে:[444]
- 30-এর ওপর যাদের বি এম আই (BMI) তাদের অবশ্যই ডায়েট বা খাদ্যাভ্যাসের উপদেশ মেনে চলা উচিত, ওজন কমানোর জন্য শারীরিক কসরত ও অন্যান্য আচরণগত বিধিনিষেধ মেনে চলা উচিত।
- এতে লক্ষ্যে পৌঁছানো না গেলে ফারমাকোথেরাপি করার প্রস্তাব দেওয়া যেতে পারে। তবে যার ওপর এটা প্রয়োগ হবে তাকে আগে থেকেই জানিয়ে দেওয়া উচিত যে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে এবং সুদূর প্রসারী নিরাপত্তা বা সাফল্যের তথ্য নেই।
- ওষুধ দিয়ে চিকিত্সার কথাও বলা যেতে পারে, যাতে থাকবে সাইবুট্রামিন, ওরলিস্ট্যাট, ফেন্টারমাইন, ডাইইথাইল প্রপিওন, ফ্লাক্সিটিন, ও বুপ্রোপিওন। আরো মারাত্মক স্থূলতার ক্ষেত্রে অ্যাম্ফিটামিন ও মিথাম্পিটামিন-এর মতো শক্তিশালী ওষুধ কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। সারট্রালিন, টপিরামেট, অথবা জোনিসামিড-এর মতো ওষুধগুলি ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়ার মতো যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ নেই।
- যাদের বি এম আই (BMI) 40-এর বেশি, যারা ওজন কমানোর লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে (ওষুধ প্রয়োগ বা ওষুধ ছাড়া) এবং যাদের মধ্যে স্থূলতা সম্পর্কিত জটিলতা দানা বেঁধেছে তাদের বারিয়াট্রিক অস্ত্রোপচারের ইঙ্গিত দেওয়া যেতে পারে। এর সম্পর্কিত জটিলতা গুলি অবশ্য সেই মানুষটিকে জানানো প্রয়োজন।
- যাদের বারিয়াট্রিক অস্ত্রোপচারের দরকার তাদের বড়ো মাপের সংস্থায় পাঠানো উচিত যেখানে এমন সার্জেনরা রয়েছেন যারা হামেসাই এমন অস্ত্রোপচার করে থাকেন।
ইউ এস প্রিভেন্টিভ টাস্কফোর্স (USPSTF) প্রকাশিত একটি ক্লিনিকাল প্র্যাক্টিস গাইডলাইন-এ বলা হয়েছে যে নিয়মিত আচার ব্যবহার পরামর্শ দেওয়া বা তা না করার কথা বলার মতো যথাযথ তথ্যপ্রমাণ নেই, তবে স্বাস্থ্যসম্মত সাধারণ খাবার নেওয়ার কথা বলা যেতে পারে তবে যাদের হাইপারলিপিডেমিয়া আছে তাদের ব্যাপক স্বাস্থ্যসম্মত খাবার দেওয়ার কথা বলতে হবে এবং কার্ডিওভাস্কুলার ও ডায়েট সংক্রান্ত কঠিন ব্যাধির মতো অন্যান্য ঝুঁকির বিষয়গুলিও থাকবে। প্রাথমিক চিকিৎসক অথবা অন্য বিশেষজ্ঞ যেমন নিউট্রিশানিস্ট বা ডায়াটেশিয়ানরাই ব্যাপক পরামর্শ দিতে পারেন।[445][447] 2006- এ কানাডা তথ্যভিত্তিক প্র্যাকটিস গাইডলাইন তৈরি করে তা প্রকাশ করে। সেই নির্দেশিকায় শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ের মধ্যেই ব্যক্তিগত ও জনসমষ্টি স্তরে স্থূলতা রোধ ও ঠেকানোর প্রচেষ্টার কথা বলা হয়।[448] ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন 2008 —এ ইউরোপে ক্রমবর্ধমান স্থূলতার হারবৃদ্ধি ঠেকাতে ক্লিনিকাল প্র্যাক্টিস নির্দেশিকা প্রকাশ করে।[449] 2004 -এ অস্ট্রেলিয়াও এমন একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করে।[450] [451]