আনোয়ারা সৈয়দ হক
আনোয়ারা সৈয়দ হক | |
|---|---|
|
কথাশিল্পী আনোয়ারা সৈয়দ হক
| |
| জন্ম | আনোয়ারা বেগম (1940-11-05) ৫ নভেম্বর ১৯৪০ যশোর জেলা, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান বাংলাদেশ) |
| পেশা | মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, অধ্যাপক, লেখক, ঔপন্যাসিক |
| ভাষা | বাংলা |
| জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
| শিক্ষা | এমবিবিএস |
| শিক্ষা প্রতিষ্ঠান | ঢাকা মেডিকেল কলেজ |
| ধরন | গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ |
| উল্লেখযোগ্য রচনাবলি | তৃষিতা |
| উল্লেখযোগ্য পুরস্কার | বাংলা একাডেমি পুরস্কার |
| সক্রিয় বছর | ১৯৫৪-বর্তমান |
| দাম্পত্যসঙ্গী | সৈয়দ শামসুল হক (বি. ১৯৬৫ - ২০১৬) |
| সন্তান | বিধিতা সৈয়দ হক (মেয়ে) দ্বিতীয় সৈয়দ হক (ছেলে) |
আনোয়ারা সৈয়দ হক (জন্ম ৫ নভেম্বর, ১৯৪০) হলেন একজন খ্যাতনামা বাংলাদেশী মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, অধ্যাপক ও কথাসাহিত্যিক। তিনি বেশ কিছু গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ ও শিশুসাহিত্য রচনা করেছেন। একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে তার রচনায় মনস্তাত্ত্বিক দিকগুলো তুলে ধরেছেন। উপন্যাসে অবদানের জন্য তিনি ২০১০ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে। পারিবারিক জীবনে তিনি সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের সহধর্মিণী ছিলেন। এছাড়াও তিনি অনুসন্ধান কমিটি, ২০২২-এর সদস্য।
প্রাথমিক জীবন
আনোয়ারা ১৯৪০ সালের ৫ নভেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমান বাংলাদেশ) যশোর জেলার চুড়িপট্টি গ্রামে এক মুসলমান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা গোলাম রফিউদ্দিন চৌধুরী ছিলেন একজন ব্যবসায়ী ও মা আছিয়া খাতুন একজন গৃহিণী। তার বাবা খুবই ধার্মিক মানুষ ছিলেন। তাকে ছোটবেলায় কঠিন পর্দা ও অন্যান্য ইসলামী শরিয়ত মেনে চলতে হতো। তার শৈশব ও কৈশোর কাটে যশোরে।
শিক্ষাজীবন
আনোয়ারার পাঠদানের হাতেখড়ি হয় মায়ের কাছে। চুড়িপট্টির মোহনগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। মধুসূদন তারাপ্রসন্ন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক ও ১৯৫৮ সালে মাইকেল মধুসূদন দত্ত স্কুল ও কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন। কলেজ গ্রন্থাগারে প্রচুর বই থাকলেও তিনি তা অধ্যয়নের সুযোগ পান নি। সে সময়ে শিক্ষার্থীরা শুধু পাঠ্যবই পড়ারই সুযোগ পেত। তাই মাঝে মাঝে উপন্যাস, ম্যাগাজিন ও অন্যান্য সাহিত্য পেলে তারা নিজেদের ধন্য মনে করত। ১৯৫৯ সালে আনোয়ারা ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। তিনি ইংরেজি সাহিত্যে পড়তে চাইলেও তার বাবার আগ্রহে তাকে মেডিকেলে ভর্তি হতে হয়। ১৯৬৫ সালে তিনি এমবিবিএস পাস করেন। পরে ১৯৭৩ সালে উচ্চ শিক্ষার জন্য লন্ডন যান। তিনি সেখান থেকে ১৯৮২ সালে মনোবিজ্ঞানে এমআরসিপি ডিগ্রী লাভ করে দেশে ফিরে আসেন।
কর্মজীবন
এমবিবিএস পাস করার পর তিনি তৎকালীন পাকিস্তান বিমান বাহিনী মেডিকেল কোরে লেফটেন্যান্ট পদে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সম্পূর্ণ নয় মাস তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। ঢাকা এয়ারবেসের মেডিক্যাল সেন্টারে তিনি চিকিৎসা করেছেন সৈনিকদের এবং তাদের স্ত্রী-পুত্র-কন্যাদের। ১৯৭৩ সালে তিনি বিমানবাহিনীর চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে লন্ডন চলে যান এবং সেখানে কয়েকটি হাসপাতালের চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। লন্ডন থেকে উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে দেশে এসে ১৯৮৪ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজে মনোরোগ বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৯ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি জাতীয় মাদকাসক্তি নিরময় কেন্দ্রের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। পরে ১৯৯৩ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ছিলেন ঢাকার মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও অধ্যাপক। ১৯৯৮ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে অবসর নেন। ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্য ও স্কটল্যান্ডের বিভিন্ন হাসপাতালে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৬ সাল থেকে তিনি ঢাকার বারডেম হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের অধ্যাপক ও বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত আছেন।
সাহিত্যিক জীবন
আনোয়ারার প্রথম ছোটগল্প পরিবর্তন ১৯৫৪ সালে দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত হয়। ১৯৫৫ সাল থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত তিনি নিয়মিত দৈনিক ইত্তেফাকের কচি কাঁচার আসরে লিখতেন। মাইকেল মধুসূদন কলেজে পড়াকালীন দৈনিক আজাদ, মাসিক মোহাম্মদী ও গুলিস্তা পত্রিকায় তার লেখা গল্প, কবিতা প্রকাশিত হত। গুলিস্তা পত্রিকায় লিখে তিনি পুরষ্কৃতও হয়েছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়াকালীন লেখালেখির পাশাপাশি তিনি কলেজের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে পড়েন। এই সময়ে ঢাকা থেকে প্রকাশিত প্রথম শ্রেণীর পত্র-পত্রিকা ও বিভিন্ন মেডিকেল জার্নালে তার লেখা ছাপা হত। তার প্রথম উপন্যাস ১৯৬৮ সালে সচিত্র সন্ধানীতে প্রকাশিত হয়। তার সেই প্রেম সেই সময় ও বাজিকর উপন্যাসে সাধারন মানুষের দুঃখ-দুর্দশা ও আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা বর্ণিত হয়েছে। নরক ও ফুলের কাহিনী উপন্যাসে লিখেছেন তার ছেলেবেলার কথা। বাড়ি ও বণিতা উপন্যাসে চিত্রায়িত হয়েছে মধ্যবিত্ত পরিবারের সামাজিক সমস্যা। উপন্যাস ছাড়া তিনি শিশুদের জন্য সাহিত্য রচনা করেছেন। ১৯৭৭ সালে ছানার নানার বাড়ি, বাবার সাথে ছানা (১৯৮৬), ছানা এবং মুক্তিযুদ্ধ (১৯৮৭), ১৯৯০ সালে তৃপ্তি, আবেদ হোসেনের জোৎস্না দেখা, ১৯৯২ সালে হাতছানি, আগুনের চমক এবং মুক্তিযোদ্ধার মা নামক শিশুতোষ গল্প ও উপন্যাসগুলি প্রকাশিত হয়।
পারিবারিক জীবন
আনোয়ারা ১৯৬২-৬৩ সালের দিকে সৈয়দ শামসুল হকের অনুপম দিন, শীত বিকেল, সম্রাটের ছবি, এক মহিলার ছবি, দেয়ালের দেশ পড়ে তার সাথে দেখা করার চেষ্টা করেন। তিন পয়সার জোসনা গল্পটি পড়ার পর তিনি সৈয়দ হককে চিঠি লিখেন। সৈয়দ হক এক মাস পর সেই চিঠির জবাব দেন। এরপর প্রতিনিয়তই তারা চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ করতে থাকেন। একদিন সৈয়দ হক তাকে ঢাকার গুলিস্তান সিনেমা হলের চিন-চাও রেস্তোরায় দেখা করতে বলেন। প্রথম সাক্ষাতে সৈয়দ হক তাকে উদ্দেশ্য করে একটি কবিতা লিখেন। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তখন তারা ব্রিটিশ কাউন্সিলসহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হন। ১৯৬৫ সালের ১৯ নভেম্বর তিনি সৈয়দ হকের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। সৈয়দ হক ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ফুসফুসের কর্কটরোগ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এই দম্পতির দুই সন্তান। মেয়ে বিদিতা সৈয়দ হক একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষক। ছেলে দ্বিতীয় সৈয়দ হক একজন আইটি বিশেষজ্ঞ, গল্পকার ও গীতিকার। তিনি যুক্তরাজ্যের রিচমন্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্টারন্যাশনাল ফিনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে এমবিএ পাস করেন।
গ্রন্থতালিকা
ছোটগল্প
- পরিবর্তন (১৯৫৪)
- পারুলীর উড্ডয়ন
- হেলাল যাচ্চিল রেশমার সাথে দেখা করতে
- গলে যাচ্ছে ঝুলন্ত পদক
- অন্ধকারে যে দরোজা
- মানসিক সমস্যার গল্প
- শূন্যতার সাথে নৃত্য
- গুজরিপঞ্জম
- গ্রাম গঞ্জের গভীরে
- পূর্ণিমায় নখের আঁচড়
- সূর্য ওঠার গল্প
উপন্যাস
- তৃষিতা (১৯৭৬)
- সোনার হরিণ (১৯৮৩)
- সেই প্রেম সেই সময়
- বাজিকর
- জলনুড়ি
- তারাবাজি
- হাতছানি
- উদয় মিনাকে চায়
- অস্থিরতার কাল, ভালোবাসার সময়
- ভালোবাসার লাল পিঁপড়ে
- নরক ও ফুলের কাহিনী
- বাড়ি ও বনিতা
- গা শিরশির (২০১১)
- কার্নিশে ঝুলন্ত গোলাপ
- সেই ভাষণটি শোনার পর
- নিঃশব্দতার ভাঙচুর
- তাম্রচূড়ের লড়াই
- সেইসব দিন
- যোজন দূরের স্বজনেরা
- ঘুম
- খাদ
- আহত জীবন
- আকাশ ভরা
- দুই রমণী
- নারী : বিদ্রোহী
- সবুজ পশমি চাদর
- ব্যবহ্নতা
- আয়নার বন্দী
- নখ
- সন্দেহ
- ঘুমন্ত খেলোয়াড়
- রূপালী স্রোত
- চেমনআরার বাড়ি
কাব্যগ্রন্থ
- কিছু কি পুড়ে যাচ্ছে কোথাও
- তুমি আগে যাবে, না আমি
- স্বপ্নের ভেতর
- তুমি এক অলৌকিক বাড়িঅলা
- কাল খুব কষ্টে ছিলাম
- আমার শয্যায় এক বালিশ-সতীন
প্রবন্ধ
- নারীর কিছু কথা আছে
- কিশোর-কিশোরীর মন ও তার সমস্যা
- যেমন আমাদের জীবন
- ক্ষুব্ধ সংলাপ (২০১১)
- মেয়ে হয়েছি বেশ করেছি (২০১২)
- তোমার কথা
- পিকাসোর নারীরা
শিশুসাহিত্য
- ছানার নানার বাড়ি (১৯৭৭)
- বাবার সাথে ছানা (১৯৮৬)
- ছানা এবং মুক্তিযুদ্ধ (১৯৮৭)
- পথের মানুষ ছানা
- একজন মুক্তিযোদ্ধার ছেলে
- আমাদের মুক্তিযোদ্ধা দাদাভাই
- মন্টির বাবা
- তোমাদের জন্য এগারোটি
- উল্টো পায়ের ভূত
- আমি ম্যাও ভয় পাই
- আমি বাবাকে ভালোবাসি
- হানাদার বাহিনী জব্দ
- মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ছড়া
- ছোটখেলের বীর
- যেমন আমাদের জীবন
- সর্পরাজের যাদু
- আমার মা সবচেয়ে ভালো (২০০৮)
- তুমি এখন বড় হচ্ছো
- টুটুলের মা-গাছ
- উদাসী বালক
- তপনের মুক্তিযুদ্ধ
- কাঠের পা
- আগুনের চমক
- দশ রঙের ছড়া
- মুক্তিযুদ্ধের পাঁচটি উপন্যাস
অনুবাদ
- ল্যু সালোমে : সাহিত্যভুবনের অগ্নিশিখা (২০১২)
স্মৃতিকথা
- অবরুদ্ধ
ভ্রমণকাহিনী
- উড়ে যাই দূরে যাই
পুরস্কার ও সম্মাননা
- ভাষা ও সাহিত্যে একুশে পদক - ২০১৯
- উপন্যাস শাখায় নৃ প্রকাশনী থেকে ছানা ও নানুজান-এর জন্য পাঞ্জেরী ছোটকাকু আনন্দ আলো শিশুসাহিত্য পুরস্কার - ২০১৯
- উপন্যাসে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার - ২০১০
- কবীর চৌধুরী শিশু সাহিত্য পুরস্কার - ২০০৬
- ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার - ২০০৬
- অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার
- মাইকেল মধুসূদন পুরস্কার
- শিশু একাডেমি পুরস্কার
বহিঃসংযোগ
|
একুশে পদক বিজয়ী ২০১৯
| ||
|---|---|---|
| গবেষণা | ||
| ভাষা ও সাহিত্য | ||
| ভাষা আন্দোলন | ||
| মুক্তিযুদ্ধ | ||
| শিক্ষা | ||
| শিল্পকলা |
|
|