Продолжая использовать сайт, вы даете свое согласие на работу с этими файлами.
কিটোন-উৎপাদক খাদ্যাভ্যাস
কিটোন-উৎপাদক খাদ্যাভ্যাস হল এক প্রকার বিশেষায়িত খাদ্যাভ্যাস বা পথ্য ব্যবস্থা, যেখানে উচ্চমাত্রার চর্বি, পর্যাপ্ত পরিমাণে আমিষ এবং অল্প পরিমাণে শর্করা থাকে। এই পথ্য শিশুদের মৃগীরোগ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এই খাদ্য ব্যবস্থা শর্করার বদলে চর্বি পোড়ানোর মাধ্যমে দেহে শক্তি সরবরাহ করে। সাধারণ অবস্থায়, খাবারে উপস্থিত শর্করা ভেঙে গ্লুকোজে পরিণত হয় এবং পুরো দেহে শক্তির যোগান দেয়। এই গ্লুকোজ মস্তিষ্কের প্রধান শক্তি উৎস। কিন্তু খাবারে যদি যথেষ্ট পরিমাণে শর্করা না থাকে, তাহলে যকৃত চর্বিকে ফ্যাটি এসিড আর কিটোন যৌগে পরিণত করে। এই কিটোন মস্তিষ্কে প্রবেশ করে আর মস্তিষ্কের শক্তি উৎস হিসেবে গ্লুকোজকে প্রতিস্থাপিত করে। দেহে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রায় কিটোন উপস্থিত থাকলে সে অবস্থাকে কিটোসিস বলে, যা মৃগীরোগের কারণে ঘটা খিঁচুনির প্রবণতাকে কমায় । দেখা গেছে, এই পথ্য ব্যবহার করার ফলে মৃগীরোগে ভোগা প্রায় অর্ধেক সংখ্যক শিশু আর তরুণের মধ্যে খিঁচুনির প্রবণতা অর্ধেকে নেমে এসেছে। এমনকি পথ্য ব্যবহার করা বন্ধ করার পরও এই প্রভাব বজায় ছিল । কিছু গবেষণা থেকে দেখা গেছে, কিটোজেনিক ডায়েটের অন্যতম সংস্করণ অ্যাটকিন্স ডায়েট অনুসরণ করলেও প্রাপ্তবয়স্করা কিটোজেনিক ডায়েটের মত ফলাফল পেতে পারেন । তবে এ ধরনের পথ্যের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার মধ্যে আছে কোষ্ঠকাঠিন্য, উচ্চ কোলেস্টেরল, বর্ধন ধীরগতিতে হওয়া, অ্যাসিডোসিস, এবং কিডনিতে পাথর হওয়া।
শিশুদের মৃগীরোগের জন্য যে প্রচলিত পথ্য ব্যবস্থা আছে, সেটায় পর্যাপ্ত পরিমাণে আমিষ থাকে দেহের বর্ধন ঘটা আর ক্ষতিপূরণের জন্য, সাথে পর্যাপ্ত ক্যালোরি থাকে বয়স আর উচ্চতা অনুযায়ী সঠিক ওজন বজায় রাখার জন্য। ১৯২০-এর দশকে শিশুদের মৃগীরোগের চিকিৎসা হিসেবে কিটোজেনিক ডায়েটের প্রচলন ঘটে, কিন্তু মৃগীরোগের ওষুধ বের হয়ে যাওয়ার কারণে এই পথ্য ব্যবস্থা জনপ্রিয়তা হারাতে শুরু করে। ঐতিহ্যবাহী কিটোজেনিক ডায়েটে চর্বির ওজন আর শর্করা-আমিষের যৌথ ওজনের অনুপাত রাখা হয় ৪ঃ১। এই অনুপাত অর্জনের জন্য উচ্চ শর্করা সমৃদ্ধ খাবার, যেমন শ্বেতসার যুক্ত ফল আর সবজি, রুটি, পাস্তা, খাদ্যশস্য, চিনি, ইত্যাদি খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়; যোগ করা হয় উচ্চ চর্বি সমৃদ্ধ খাবার, যেমন বাদাম, মাখন, দুধের সর। খাওয়ার যোগ্য চর্বির বেশিরভাগই দীর্ঘ-শিকল বিশিষ্ট ট্রাইগ্লিসেরাইড (LCTs) নামক অণু দিয়ে গঠিত। কিন্তু মধ্য-শিকল বিশিষ্ট ট্রাইগ্লিসেরাইডসমূহ (MCTs, এসব অণু লম্বা-শিকল বিশিষ্ট ট্রাইগ্লিসেরাইড অণুর চেয়ে আকারে ছোট) বেশি কিটোজেনিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হয়ে থাকে। নারিকেল তেল হল মধ্য-শিকল বিশিষ্ট ট্রাইগ্লিসেরাইড সমৃদ্ধ খাবার। তাই কিটোজেনিক ডায়েটের আরেকটি সংস্করণ, MCT কিটোজেনিক ডায়েট, নারিকেল তেলের মাধ্যমেই রোগীর ক্যালোরি চাহিদার অর্ধেক পূরণ করে থাকে। এই ধরনের পথ্যে যত কম পরিমাণে চর্বির দরকার হয়, ততই আমিষ আর শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়ার সুযোগ বাড়ে, ফলে খাবারে বৈচিত্র্য আনা সম্ভব হয়।
কিটোজেনিক ডায়েট আর কোনো স্নায়বিক রোগের চিকিৎসার জন্য উপযোগী কিনা, সেটা সম্পর্কে বেশ কিছু গবেষণা করা হয়েছে। এসব রোগের মধ্যে আছে: আলঝেইমার'স ডিজিজ, অ্যামায়োট্রফিক ল্যাটেরাল স্ক্লেরোসিস, মাথা ব্যথা, নিউরোট্রমা, ব্যথা, পার্কিন্সন'স ডিজিজ, এবং ঘুম সংক্রান্ত রোগ।
ইতিহাস
কিটোজেনিক ডায়েট একটি মূলধারার পথ্য চিকিৎসা পদ্ধতি যা চালু হয়েছিল মৃগীরোগ সারানোর জন্য উপবাসের যে ব্যবহার প্রচলিত ছিল, সেটার সীমাবদ্ধতাগুলো দূর করার জন্য। ১৯২০ এবং '৩০-এর দশকে জনপ্রিয় হলেও মৃগীরোগের ওষুধ বের হওয়ার পর এই ডায়েটের ব্যবহারে ধ্বস নামে । মৃগীরোগে আক্রান্ত বেশিরভাগ ব্যক্তিই ওষুধের সাহায্যে তাদের খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। কিন্তু ২০-৩০% রোগী বিভিন্ন ওষুধ ব্যবহারের পরও নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হন । এদের জন্য, এবং নির্দিষ্ট করে বললে বাচ্চাদের মৃগীরোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য, কিটোজেনিক ডায়েট আবারও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে
খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণ
কিটোজেনিক ডায়েট কীভাবে কাজ করে সেটা ব্যাখ্যার জন্য অনেক প্রকল্প উপস্থাপিত হয়েছে, কিন্তু এটা এখনো পর্যন্ত রহস্যই রয়ে গেছে। যেসব প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে আছে সিস্টেমিক অ্যাসিডোসিস (রক্তে অ্যাসিডের উচ্চ মাত্রা), ইলেক্ট্রোলাইট পরিবর্তন এবং হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তে কম মাত্রার গ্লুকোজ থাকা)। যদিও কিটোজেনিক ডায়েট গ্রহণকারী রোগীর মস্তিষ্কে বিভিন্ন ধরনের জৈব রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে, তবে এগুলোর মধ্যে কোনটি খিঁচুনি-বিরোধী ভূমিকা রাখে, তা জানা যায়নি।
অন্যান্য প্রয়োগ
কিছু ক্যান্সার কোষ তাদের শক্তি উৎপাদনের জন্য কিটোন যৌগ ব্যবহার করতে পারে না বলে ক্যান্সারের চিকিৎসা হিসাবে কিটোজেনিক ডায়েট অনুসরণ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। ক্যান্সারের চিকিৎসায় কিটোজেনিক ডায়েটের ভূমিকা নিয়ে ২০১৮ সালে কিছু প্রি-ক্লিনিক্যাল এবং ক্লিনিক্যাল পরীক্ষণের উপর ভিত্তি করে একটা বৈজ্ঞানিক পর্যালোচনা করা হয়। সেখান বলা হয়, মানুষের উপর করা ক্লিনিক্যাল পরীক্ষণগুলো খুবই ছোট আকারের ছিল, যেখানে কিটোজেনিক ডায়েটের টিউমার-বিরোধী দুর্বল একটা ভূমিকা দেখা গেছে, বিশেষ করে গ্লিওব্লাস্টোমার জন্য। কিন্তু অন্যান্য ক্যান্সারের ক্ষেত্রে কোনো টিউমার-বিরোধী ভূমিকা দেখা যায়নি।