জরায়ু বিদারণ
| জরায়ু বিদারণ | |
|---|---|
| বিশেষত্ব | ধাত্রীবিদ্যা |
| লক্ষণ | ব্যথা বৃদ্ধি ,যোনিতে রক্তপাত, সংকোচনে পরিবর্তন |
| রোগের সূত্রপাত | প্রসব এর সময় |
| ঝুঁকির কারণ | সিজারিয়ান সেকশনের পর যোনি দ্বারা জন্মদান, অন্যান্য গর্ভাশয় ক্ষত, বাধাযুক্ত প্রসব, প্রসব যন্ত্রণা আনয়ন, মানসিক আঘাত, কোকেইন ব্যবহার |
| রোগনির্ণয়ের পদ্ধতি | শিশুর হৃৎস্পন্দনের হারে দ্রুত পতন দ্বারা নির্ণয় |
| চিকিৎসা | অস্ত্রোপচার |
| আরোগ্যসম্ভাবনা | ৬% শিশুর মৃত্যুর ঝুঁকি |
| সংঘটনের হার | স্বাভাবিক জরায়ু যুক্ত মহিলা ১২,০০০ এর মধ্যে ১ জনের যোনিপথে প্রসবের সময় ২৮০ জনের মধ্যে ১ জনের সিজারিয়ান সেকশনের পর যোনি দ্বারা জন্মদান এর সময় |
যখন জরায়ুর পেশী প্রাচীর গর্ভধারণ বা প্রসবের সময় ছিঁড়ে যায় তাকে বলা হয় জরায়ু বিদারণ। আদর্শ উপসর্গগুলি যেমন ব্যথা বৃদ্ধি, যোনিতে রক্তপাত, সংকোচন এ পরিবর্তন, এগুলি সবসময় থাকেনা। মায়ের বা শিশুর বিকলাঙ্গতা বা মৃত্যু হতে পারে। বিভিন্ন ঝুঁকিগুলির মধ্যে আছে সিজারিয়ান সেকশনের পর যোনি দ্বারা জন্মদান (ভিএবিসি), অন্যান্য গর্ভাশয় ক্ষত, বাধাযুক্ত প্রসব, প্রসব যন্ত্রণা আনয়ন, মানসিক আঘাত, এবং কোকেইনের ব্যবহার। সাধারণত প্রসব এর সময়ে জরায়ুর বিদারণ ঘটতে পারে, কিন্তু এটি গর্ভাবস্থাতেও ঘটতে দেখা যায়। প্রসবের সময় শিশুর হৃৎস্পন্দনের হারে দ্রুত পতন দেখলে এই অবস্থার নির্ণয় করা যায়। জরায়ুজ ডেহিসেন্স একটি কম গুরুতর অবস্থা যেখানে পুরানো ঘায়ের শুধুমাত্র অসম্পূর্ণ বিদারণ দেখা যায়। রক্তপাত নিয়ন্ত্রণে দ্রুত অস্ত্রোপচার করে শিশু প্রসব করিয়ে চিকিৎসা করা উচিত। রক্তপাত নিয়ন্ত্রণে হিস্টেরেক্টমি করার দরকার পড়তে পারে।রক্ত সঞ্চারণ করে রক্তের ক্ষতি প্রতিস্থাপন করা যেতে পারে। যে মহিলাদের একবার জরায়ু বিদারণ হয়েছে তাদের পরবর্তী গর্ভধারণের পর সিজারিয়ান সেকশন এর সুপারিশ করা হয়। পূর্ববর্তী সিজারিয়ান সেকশন থাকলে আদর্শ পন্থায় যোনি পথে জন্মদানের সময় জরায়ু বিদারণের হার, অনুমান মত ০.৯%। যাঁদের পূর্বে একাধিক সিজারিয়ান সেকশন হয়েছে অথবা অন্য উপায়ে সিজারিয়ান সেকশন হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এই হার অনেক বেশি। যাঁদের জরায়ুতে ক্ষত আছে, তাদের যোনি পথে জন্মদানের সময় ঝুঁকি মোটামুটি প্রতি ১২,০০০ জনে ১ জন। শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ৬%।উন্নয়নশীল দেশের মানুষ আরও বেশি আক্রান্ত হন এবং সেক্ষেত্রে ফলাফল খারাপ।
লক্ষণ ও উপসর্গ
জরায়ু বিদারণের লক্ষণ প্রাথমিকভাবে বেশ সূক্ষ্ম হতে পারে। একটি পুরানো সিজারিয়ান ক্ষত ডেহিসেন্স হতে পারে; কিন্তু প্রসবকালীন আরও চেষ্টায় মহিলাটি পেটের ব্যথা অনুভব করবেন এবং যোনিপথে রক্তপাত হবে, যদিও এই লক্ষণগুলি স্বাভাবিক প্রসব থেকে আলাদা করা কঠিন। যদিও ভ্রূণের হৃৎস্পন্দনের হার কম হতে থাকা একটি লক্ষণীয় চিহ্ন, কিন্তু জরায়ু বিদারণের প্রধান লক্ষণ হল হাত দিয়ে যোনিপথ পরীক্ষা করলে ভ্রূণের স্থিতি উপলব্ধি করা যাবেনা। তলপেটে রক্তপাত হলে হাইপোভলিমিক শক হতে পারে এবং তার থেকে মৃত্যু হয়। যদিও সংশ্লিষ্ট মাতৃমৃত্যুর হার এখন এক শতাংশের কম, হাসপাতালে বিদারণ হলে ভ্রূণ মৃত্যুর হার দুই থেকে ছয় শতাংশের মধ্যে।
গর্ভাবস্থায় জরায়ু বিদারণ হলে অ্যাবডোমিনাল প্রেগন্যান্সি র সম্ভাবনা থাকে। এটিতে অ্যাবডোমিনাল প্রেগন্যান্সি দ্বারা শিশুর জন্ম সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় ঘটে।
- পেটে ব্যথা এবং নরম লাগা। ব্যথা খুব বেশি নাও হতে পারে; হঠাৎ সবচেয়ে বেশি সংকোচনের এটি হতে পারে। মহিলাটির অনুভূতি হতে পারে যে কিছু একটা "সরে গেছে" বা "ছিঁড়ে গেছে"।
- বুকে ব্যথা, স্ক্যাপুলার মধ্যে ব্যথা, অথবা উস্কানিমূলক ব্যথা— মহিলার মধ্যচ্ছদার নিচে রক্ত চলে আসায় অস্বস্তিকর ব্যথা।
- রক্তপাতের জন্য হাইপোভলিমিক শক — রক্তচাপ কমে যাওয়া, ট্যাকিকার্ডিয়া, ট্যাকিপনিয়া, পাণ্ডুবর্ণ ধারণ করা, ঠান্ডা ও আঠালো ত্বক, এবং উদ্বেগ। রক্তচাপের পতন প্রায়শই হেমোরেজের একটি লক্ষণীয় চিহ্ন।
- ভ্রূণের অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত লক্ষণ, যেমন দেরীতে মন্দন, পরিবর্তনশীলতা কমে যাওয়া, ট্যাকিকার্ডিয়া, এবং ব্রাডিকার্ডিয়া
- অমরাতে ভাঙ্গন সহ ভ্রূণের হৃৎস্পন্দন অনুপস্থিত; আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা করে ভ্রূণের হৃদ-ক্রিয়া না দেখতে পাওয়া
- জরায়ুর সংকোচন বন্ধ হয়ে যাওয়া
- প্যালপেশন করে জরায়ুর বাইরে ভ্রুণের অস্তিত্ব (সাধারণত শুধুমাত্র একটি বড়, সম্পূর্ণ বিদারণ হলে ঘটে)। এই সময়ে ভ্রূণ মৃত হতে পারে।
- অ্যাবডোমিনাল প্রেগন্যান্সির চিহ্ন
- মেয়াদ উত্তীর্ণ গর্ভাবস্থা
ঝুঁকির কারণগুলি
আগের কোন সিজারিয়ান সেকশন থেকে জরায়ুতে ক্ষত সবচেয়ে সাধারণ ঝুঁকির কারণ। এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে ৫২% মহিলার সিজারিয়ান ক্ষত ছিল। অন্য কিছু জরায়ুর আস্ত্রোপচার যেগুলিতে পুরো ভেতর পর্যন্ত কাটতে হয় (যেমন মায়োমেকটমি), অস্বাভাবিক প্রসববেদনা, অক্সিটোসিন দিয়ে প্রসব ব্যাথা বৃদ্ধি অথবা প্রস্টাগ্ল্যান্ডিনস, এবং উচ্চমাত্রায় প্যারিটি জরায়ু বিদারণের মঞ্চ তৈরী করেই রাখে। ২০০৬ সালে, প্রথম গর্ভধারনে জরায়ু বিদারণের একটি অত্যন্ত বিরল ঘটনা ঘটেছিল যেখানে ঝুঁকির কোন কারণ ছিলনা।
জরায়ু বিদারণের গভীরতা
একটি অসম্পূর্ণ বিদারণের ক্ষেত্রে পেরিটোনিয়াম অক্ষত থাকে। সম্পূর্ণ বিদারণ হলে জরায়ুর মধ্যস্থিত যাকিছু উদর গহ্বরে অথবা ব্রড লিগামেন্ট এ ছড়িয়ে পড়ে।
চিকিৎসা
আপৎকালীন অবস্থায় তরল প্রদান করে সিজারিয়ান প্রসব সহ এক্সপ্লোরেটরি লেপারোটমি এবং রক্ত সঞ্চারণ জরায়ু বিদারণের চিকিৎসার ব্যবস্থাপনা জন্য নির্দেশিত। বিদারণের প্রকৃতি এবং রোগীর অবস্থার উপর নির্ভর করে, জরায়ু মেরামত করা হতে পারে অথবা অপসারণ (সিজারিয়ান হিস্টেরেক্টমি) করা হয়। ব্যবস্থাপনায় বিলম্ব হলে মা এবং শিশু উভয়েই ঝুঁকির সম্মুখীন হয়।