জীবনের সাত স্তম্ভ
জীবনের সাত স্তম্ভ (ইংরেজি The Seven Pillars of Life) হল মার্কিন জৈবরসায়নবিদ ড্যানিয়েল কশল্যান্ড কর্তৃক ২০০২ সালে বিবৃত জীবনের সাতটি আবশ্যকীয় মূলনীতি যার উদ্দেশ্য ছিল জীবনের একটি সার্বজনীন সংজ্ঞায় উপনীত হওয়া। জীবনের এরকম একটি সার্বজনীন সংজ্ঞা সূত্রায়নের একটি লক্ষ্য হল কৃত্রিম জীবন ও বহিঃজাগতিক জীবনের প্রকৃতি বুঝতে পারা ও তাকে শনাক্ত করা জীবনের এই সাতটি স্তম্ভ হল কর্মসূচি, উদ্ভাবনা, প্রকোষ্ঠীভবন, শক্তি, পুনরুৎপাদন, অভিযোজ্যতা এবং স্বাতন্ত্র্য (ইংরেজি ভাষায় যথাক্রমে Program, Improvisation, Compartmentalization, Energy, Regeneration, Adaptability, এবং Seclusion)।
জীবনের সাত স্তম্ভের বিবরণ
কর্মসূচি
কশল্যান্ডের মতে "কর্মসূচি" বলতে সময় অতিবাহিত হবার সাথে সাথে কোনও জীবন্ত ব্যবস্থাকে বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান এবং তাদের মধ্যবর্তী আন্তঃক্রিয়াসমূহের গতিবিদ্যার বর্ণনা যে সুপরিকল্পিত নির্দেশমালাতে বর্ণিত থাকে, তাকে বোঝায়। পৃথিবীর বুকে জীবনের যে রূপটি সম্পর্কে আমরা অবগত, সেই জীবনের ক্ষেত্রে এই কর্মসূচিটি ডিএনএ ও আরএনএ নামক দুই ধরনের নিউক্লিয়িক অ্যাসিডের ভেতরে সঙ্কেতায়িত থাকে। তবে "কর্মসূচি"র ধারণা অন্যান্য কাল্পনিক বা অনাবিষ্কৃত কোনও সত্তার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে।
উদ্ভাবনা
"উদ্ভাবনা" বলতে কোনও জীবন্ত সত্তা বা ব্যবস্থা যে বৃহত্তর পরিবেশে অবস্থান করে, সেই পরিবেশের প্রতি সাড়া দিয়ে তার "কর্মসূচি"তে পরিবর্তন এনে জীবনের নতুন কোনও রূপে পরিণত হবার ক্ষমতাকে বোঝায়। পৃথিবীপৃষ্ঠে যে প্রক্রিয়াতে জীবন এই উদ্ভাবনা বৈশিষ্ট্যটি প্রকাশ করে, তা হল প্রাকৃতিক নির্বাচন।
প্রকোষ্ঠীভবন
"প্রকোষ্ঠীভবন" বলতে কোনও জীবন্ত সত্তা বা ব্যবস্থার অভ্যন্তরে সংঘটিত আবশ্যকীয় রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলিকে ধারণ করার জন্য পৃথক পৃথক অঞ্চল বা জায়গার ব্যবস্থা করাকে বোঝায়। কোনও রাসায়নিক বিক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বিক্রিয়ক উপাদানগুলি যেন সঠিক ঘনমাত্রায় থাকে ও বহিঃস্থ পরিবেশের দ্বারা যেন প্রভাবিত না হয়, সে ব্যাপারে সুরক্ষা প্রদানের জন্য প্রকোষ্ঠীভবনের প্রয়োজন।
শক্তি
জীবিত সত্তা বা ব্যবস্থাগুলি বৃদ্ধি, চলন এবং অভ্যন্তরীণ রাসায়নিক পরিবহন ও বিক্রিয়ার জন্য শক্তি খরচ করার প্রয়োজন হয়। তাই শক্তি ছাড়া জীবন অসম্ভব। পৃথিবীতে শক্তির মূল উৎস হল সূর্য।
পুনরুৎপাদন
"পুনরুৎপাদন" বলতে জীবিত ব্যবস্থার ভেতরে বিভিন্ন উপাদানের যে অবনতি বা ক্ষতি হয়, সেই ক্ষতি পূরণ করাকে বোঝায়। জীবিত সত্তা বা ব্যবস্থা বহিঃস্থ পরিবেশ থেকে অণু গ্রহণ করা, নতুন অণু ও উপাদান সংশ্লেষণ করে এই ক্ষতিপূরণ করার চেষ্টা করে। যদি বার্ধক্যের কারণে ক্ষতিপূরণ করা সম্ভব না হয়, তাহলে নতুন প্রজন্মের জীবের জন্ম দিয়ে আবার নতুন করে জীবন্ত ব্যবস্থা শুরু করে।
অভিযোজ্যতা
"অভিযোজ্যতা" হল চাহিদা, বিপদ বা পরিবর্তনের সাপেক্ষে কোনও জীবন্ত ব্যবস্থার প্রত্যুত্তর প্রদানের ক্ষমতা। অভিযোজ্যতা ও উদ্ভাবনার মধ্যে পার্থক্য আছে। অভিযোজ্যতার ক্ষেত্রে জীবনের কর্মসূচিতে পরিবর্তন আনার প্রয়োজন পড়ে না, বরং সাময়িক উত্তর দেওয়া হয়। অভিযোজ্যতা আণবিক স্তর থেকে আচরণগত স্তর পর্যন্ত পশ্চাৎপ্রেরণ (feedback) ও সম্মুখপ্রেরণ (feedforward) ব্যবস্থার মাধ্যমে ঘটে থাকে। যেমন, কোনও প্রাণী বড় কোনও আক্রমণকারীকে দেখলে এর দেহের অভ্যন্তরে গ্রন্থিরস বা হরমোন নিঃসৃত হয় এবং এটি পলায়নের আচরণ প্রদর্শন করে।
স্বাতন্ত্র্য
"স্বাতন্ত্র্য" বলতে রাসায়নিক পথগুলির এবং রাসায়নিক অণুগুলির বিশেষায়িত প্রভাবগুলির স্বাতন্ত্র্যকে বোঝায়, যাতে এগুলি জীবন্ত ব্যবস্থায় একে অন্যকে প্রভাবিত না করে স্বতন্ত্রভাবে কাজ সম্পাদন করতে পারে। পৃথিবীতে জীবদেহে প্রোটিন অণুগুলি তাদের বিশেষ কাজ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন কাঠামোর অধিকারী হয় এবং স্বাতন্ত্র্য নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।