Продолжая использовать сайт, вы даете свое согласие на работу с этими файлами.
টর্নেডো
আবহাওয়া |
---|
প্রকৃতি সিরিজের অংশ |
ঋতু |
ক্রান্তীয় মৌসুম |
ঝড়সমূহ |
বর্ষণ |
বিষয় |
টর্নেডো হল মেঘ (সাধারণত কিউমুলোনিম্বাস, ক্ষেত্রবিশেষে কিউমুলাস) ও পৃথিবীপৃষ্ঠের সাথে সংযুক্ত বায়ুস্তম্ভের আকারে সৃষ্ট প্রচণ্ড বেগে ঘূর্ণায়মান ঝড়। টর্নেডোর আকৃতি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এটি দৃশ্যমান ঘনীভূত ফানেল আকৃতির হয়, যার চিকন অংশটি ভূপৃষ্ঠকে স্পর্শ করে এবং এটি প্রায়শই বজ্রমেঘ দ্বারা ঘিরে থাকে।
অধিকাংশ টর্নেডোতে বাতাসের গতিবেগ থাকে ঘণ্টায় ১৩০ মাইলের (ঘণ্টায় ১৭৭ কিমি) কাছাকাছি, ব্যাপ্তি প্রায় ২৫০ ফুট (৭৫ মিটার) এবং দ্রুত নিঃশেষ হবার আগে এটি কয়েক মাইল বা কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারে। কিছু টর্নেডো আরো বেশি শক্তিসম্পন্ন হতে দেখা যায়; এগুলোর বাতাসের গতিবেগ থাকে ঘন্টায় ৩০০ মাইল বা ৪৮০ কিমি-এর বেশি, ব্যাপ্তিতে প্রায় এক মাইল বা ১.৬ কিমি-এরও অধিক এবং ভূমির উপর দিয়ে প্রায় ১০০ কিমি-এরও অধিক দূরত্ব এগুলো অতিক্রম করতে পারে।
এন্টার্কটিকা মহাদেশ ছাড়া প্রায় সর্বত্রই টর্নেডো দেখা গেলেও সবচেয়ে বেশি টর্নেডো সংঘটিত হয় যুক্তরাষ্ট্রে। এছাড়া দক্ষিণ কানাডা, দক্ষিণ এশিয়া (বিশেষ করে বাংলাদেশ এবং পূর্ব ভারত), দক্ষিণ আমেরিকার পূর্বমধ্যাংশ, আফ্রিকার দক্ষিণাংশ, উত্তরপশ্চিম এবং দক্ষিণপূর্ব ইউরোপ, ইটালি, পশ্চিম এবং দক্ষিণপূর্ব অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে টর্নেডো হতে দেখা যায়।
পরিভাষা
টর্নেডো
আবহাওয়াবিজ্ঞানের শব্দকোষ অনুযায়ী, টর্নেডো হল প্রচণ্ডবেগে ঘূর্ণনরত একটি বায়ুস্তম্ভ, যা ভূপৃষ্ঠের সংস্পর্শে একটি কিউমুলিফর্ম মেঘ থেকে ঝুলন্ত বা এর নিচে থাকে এবং প্রায়শই (কিন্তু সবসময় নয়) একটি ফানেলাকৃতির মেঘ হিসেবে দৃশ্যমান হয়।
ঘনীভূত ফানেল
একটি টর্নেডো যে সর্বদাই দৃশ্যমান হতে হবে এমন নয়, তবে প্রচণ্ড বাতাসের বেগের ফলে সৃষ্ট তীব্র নিম্নচাপ (দেখুন বার্নৌলির নীতি) এবং তড়িত ঘূর্ণনের ফলে বাতাস ঘনীভূত হয়ে এটি দৃশ্যমান ঘনীভূত ফানেলে পরিণত হয়। টর্নেডো হল এই বাতাসের ঘূর্ণি; ঘনীভূত মেঘটি নয়।
ফানেলাকৃতির মেঘ
এটি একটি দৃশ্যমান ঘনীভূত ফানেল যেটি শক্তিশালী বাতাস দ্বারা পৃষ্ঠের সাথে সম্পৃক্ত নয়। সব ফানেলাকৃতির মেঘই টর্নেডোতে পরিণত হয় না। তবে অনেক টর্নেডোই শুরুতে ফানেলাকৃতির মেঘ হিসাবে থাকে। অধিকাংশ টর্নেডোই ফানেল হিসেবে দৃশ্যমান থাকা অবস্থায় ভূপৃষ্ঠে শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহ সৃষ্টি করে, ফলে ফানেলাকৃতির মেঘ এবং টর্নেডোর মধ্যে পার্থক্য করা দুরূহ হয়ে পড়ে।
টর্নেডো পরিবার
অনেক সময় দেখা যায় একটিমাত্র টর্নেডো থেকে অনেকগুলো টর্নেডো এবং মেসোসাইক্লোনের সৃষ্টি হয়। যখন একটি পৃথক মেসোসাইক্লোন থেকে একটি পৃথক টর্নেডোর সৃষ্টি হয় তখন এই প্রক্রিয়াকে সাইক্লিক টর্নেডোজেনেসিস বলে। একই টর্নেডো থেকে সৃষ্ট টর্নেডোসমূহকে বলা হয় টর্নেডো পরিবার। কখনো কখনো পৃথক একটি মেসোসাইক্লোন থেকে অনেক টর্নেডো একসাথে সৃষ্টি হয় এবং ক্ষেত্রবিশেষে দেখা যায় পুরনো টর্নেডো নতুন সৃষ্ট হওয়া টর্নেডোর সাথে একীভূত হয়ে যায়।
টর্নেডো মড়ক
কখনো কখনো দেখা যায় যে, একটি বৃহদাকৃতির ঝড় থেকে অনেকগুলো টর্নেডো সৃষ্টি হয়। যদি কোন রকম বিরতি ছাড়া এরকম একের পর এক টর্নেডো সৃষ্টি হয়, তবে একে টর্নেডো মড়ক বলে, যদিও এর বিভিন্ন সংজ্ঞা রয়েছে। যদি একই এলাকায় কয়েকদিন ধরে এই টর্নেডো মড়ক চলে, তবে একে ধারাবাহিক টর্নেডো মড়ক বলে, যাকে অনেক সময় বর্ধিত টর্নেডো মড়কও বলা হয়।
শব্দের উৎপত্তি
"টর্নেডো" শব্দটি বাংলা ভাষায় এসেছে ইংরেজি ভাষার tornado শব্দের মাধ্যমে। এই শব্দটা এসেছে স্পেনীয় অপভ্রংশ ত্রোনাদা থেকে, যার অর্থ "বজ্রসম্পন্ন ঝড়"। এই শব্দটি মূলতঃ লাতিন শব্দ তোনারে (অর্থাৎ "বজ্রপাত") থেকে এসেছে। ধারণা করা হয়, এই দু'টি শব্দের সমন্বয়েই টর্নেডো শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। তবে হয়ত কোন লোককাহিনী থেকেও এর ব্যুৎপত্তি হতে পারে। টর্নেডো সাধারণভাবে টুইস্টার নামেও পরিচিত।
প্রকার
বহু ঘূর্ণি টর্নেডো
বহু ঘূর্ণি টর্নেডো হল এক প্রকার টর্নেডো যাতে দুই বা ততোধিক ঘূর্ণন বায়ুস্তম্ভ একটি নির্দিষ্ট কেন্দ্রের চারপাশে ঘুরতে থাকে। এরকম বহু ঘূর্ণি যে কোন প্রবাহেই সম্ভব হতে পারে, কিন্তু তীব্রতাসম্পন্ন টর্নেডোগুলোতেই সাধারণত বেশি দেখা যায়।
উপটর্নেডো
উপটর্নেডো বা স্যাটেলাইট টর্নেডো হল দুর্বল টর্নেডো যা একটি বড় ও শক্তিশালী টর্নেডোর নিকটবর্তী এলাকায় একই মেসোসাইক্লোনে সৃষ্টি হয়। বড় টর্নেডোটিকে ঘিরে এটি আবর্তিত হতে পারে (তাই এই নামকরণ) এবং দুটো মিলে একটি বৃহৎ বহু ঘূর্ণি টর্নেডো হিসেবে দেখা যায়, যদিও উপ-টর্নেডো এবং মূল টর্নেডোর ফানেলদ্বয় ভিন্ন ভিন্ন এবং উপটর্নেডোর ফানেলটি মূল টর্নেডোর ফানেলের চেয়ে অনেক ছোট হয়।
জলস্তম্ভ
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া সংস্থার (National Weather Service) মতে পানির উপর সৃষ্ট টর্নেডোকেই জলস্তম্ভ বলে। তবে গবেষকরা ভাল আবহাওয়ায় সৃষ্ট জলস্তম্ভ এবং টর্নেডোজনিত কারণে সৃষ্ট জলস্তম্ভের মধ্যে পার্থক্য করেন।
- ভাল আবহাওয়ায় সৃষ্ট জলস্তম্ভ কম ভয়ংকর এবং সাধারণভাবে বেশি দেখা যায় এবং এর গঠন প্রকৃতির সাথে ডাস্ট ডেভিল বা ধূলিঝড় এবং ভূমিস্তম্ভের মিল রয়েছে। এগুলো সাধারণত দুর্বল বাতাসসম্পন্ন, মৃদু প্রবাহ এবং ধীর গতিসম্পন্ন হয়। এগুলো সাধারণত ফ্লোরিডা কিইসে বেশি দেখা যায়।
- টর্নেডোজনিত জলস্তম্ভ হল আক্ষরিক অর্থে "পানির উপর টর্নেডো"। এগুলো পানিতে মেসোসাইক্লোন টর্নেডোর মতই সৃষ্টি হয়, অথবা ভূমিতে সৃষ্ট টর্নেডোই পানি অতিক্রম করে। যেহেতু এগুলো ভূমিতে সৃষ্ট টর্নেডোর মত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন, তাই ভাল আবহাওয়ায় সৃষ্ট জলস্তম্ভের চাইতে এগুলো অধিক ভয়ংকর।
ভূমিস্তম্ভ
মেসোসাইক্লোনের সাথে সংশ্লিষ্ট নয় এমন টর্নেডোকে সাধারণত ভূমিস্তম্ভ বা ল্যান্ডস্পাউট বলা হয়। এটাকে ভূমির উপর "ভাল আবহাওয়ায় সৃষ্ট জলস্তম্ভের" সাথে তুলনা করা যায়। জলস্তম্ভ এবং ভূমিস্তম্ভগুলো সাধারণত একই বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন- দুর্বল, ক্ষণস্থায়ী এবং ছোট ঘনীভূত ফানেল সম্পন্ন যেটা অনেক সময় ভূমি পর্যন্ত পৌঁছে না। যদিও এগুলো সাধারণ টর্নেডোর চাইতে অনেক দুর্বল, তবুও এগুলো শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহ সৃষ্টি করে এবং প্রভুত ক্ষতিসাধন করতে সক্ষম।
টর্নেডো সদৃশ ঘূর্ণন
দমকা টর্নেডো
দমকা টর্নেডো হল দমকা বাতাস সংবলিত ছোট, উলম্ব ঘূর্ণি। যেহেতু এগুলো মেঘের সাথে যুক্ত থাকে না, তাই এদের আসলে টর্নেডো বলা যায় কি না এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বজ্রসম্পন্ন ঝড়ের বর্হিপ্রবাহ থেকে দ্রুত গতির ঠান্ডা ও শুষ্ক বায়ু ঝড়ের বর্হিসীমানার অবস্থিত স্থির, উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ুর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হলে যে "ঘূর্ণন" প্রভাব সৃষ্টি হয় তার কারণে এগুলো সৃষ্টি হয়। যদি নিম্নস্তরে বায়ুর গতি ও দিক পরিবর্তন খুব দ্রুত হয়, তবে আনুভূমিক (অথবা কোণাকুণি) ভাবে ঘূর্ণন হতে পারে যা ভূমি স্পর্শ করে। এর ফলে দমকা টর্নেডো সৃষ্টি হয়। এগুলো সাধারণত সরল-রৈখিক ঝড়ো বাতাসের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত কোন এলাকার ক্ষুদ্র অংশে ঘূর্ণন বায়ু দ্বারা মারাত্মক ক্ষতি করে। যেহেতু এগুলো কোরিওলিস শক্তি তথা মেসোসাইক্লোনের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়, তাই এর ঘূর্ণন সাইক্লোনিক বা এন্টি-সাইক্লোনিক যে কোন কিছুই হতে পারে।
ঘূর্ণন ধূলিঝড়
ধূলিঝড় যখন টর্নেডোর মত স্তম্ভাকারে ঘুরতে থাকে তখন একে ঘূর্ণন ধূলিঝড় বলে যা ডাস্ট ডেভিল নামে ব্যাপক পরিচিত। এগুলো এমন কি খুব দুর্বল টর্নেডোর চাইতেও অধিক দুর্বল হয় এবং পরিষ্কার আকাশে সৃষ্টি হয়। গরমের দিনে ভূমির নিকটবর্তী বায়ু হালকা হয়ে উপরে ঊঠতে থাকলে এটা সৃষ্টি হয়। যদি নিম্নস্তরের বায়ুর গতি ও দিক দ্রুত পরিবর্তিত হয়, তবে এই উষ্ণ ও উর্দ্ধমুখী বায়ুস্তম্ভ একটি ক্ষুদ্র ঘূর্ণির সৃষ্টি করতে পারে যা ভূপৃষ্ঠ থেকে দৃষ্টিগোচর হয়। এগুলো টর্নেডো পর্যায়ভুক্ত নয়, কারণ এগুলো ভাল আবহাওয়ায় সৃষ্টি হয় এবং কোন মেঘের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকে না। তবে কখনো কখনো শুষ্ক এলাকায় এগুলো মারাত্মক ক্ষতিসাধন করতে পারে।
তুষার জলস্তম্ভ
তুষার জলস্তম্ভ স্নো-ডেভিল বা স্নোস্পাউট নামেও পরিচিত। এটি আবহাওয়ার একটি দুর্লভ নৈসর্গিক ঘটনা যেখানে তুষার ঝড়ের সময় টর্নেডো সদৃশ ঘূর্ণন বা জলস্তম্ভের আকারে ঘূর্ণনের সৃষ্টি হয়।
অগ্নি ঘূর্ণি
তীব্র দাবানলের সময় যদি টর্নেডো সদৃশ ঘূর্ণনের সৃষ্টি হয়, তবে সেটাকে অগ্নি ঘূর্ণি বলে। এগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র যেসব ঘূর্ণি মেঘের সাথে সংযুক্ত থাকে, তাদেরকেই টর্নেডো হিসেবে বিবেচনা করা হয়; বাকীগুলো টর্নেডো নয়। অগ্নি ঘূর্ণিগুলো সাধারণ টর্নেডোর মত শক্তিশালী হয় না। তবে এগুলোও প্রভূত ক্ষতিসাধনে সক্ষম।
শীতল বায়ু ঘূর্ণি
শীতল বায়ু ঘূর্ণি হলো ক্ষুদ্র ফানেলাকৃতির মেঘ যা কিউমুলিফর্ম মেঘের নীচ বা পাশ থেকে সৃষ্টি হয়। এগুলো ভূমি সমতলে কদাচিৎ বাতাস উৎপন্ন করে। যেহেতু এগুলো দুর্লভ, ক্ষণস্থায়ী এবং সহজে শনাক্ত করা যায় না (এগুলোর ক্ষুদ্রাকৃতি ও অঘূর্ণনশীল প্রকৃতির জন্য), তাই এদের গঠন-প্রক্রিয়া সম্পর্কে বেশি কিছু এখনো জানা যায় নি।
বৈশিষ্ট্য
আকৃতি
অধিকাংশ টর্নেডো দেখতে একটি সরু ফানেলের মত হয়, ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি ক্ষুদ্র বজ্রমেঘ দ্বারা কয়েকশ গজ (কয়েকশ মিটার) বিস্তৃত থাকে। তবে টর্নেডো বিভিন্ন আকার এবং আকৃতির হতে পারে।
ক্ষুদ্র ও তুলনামূলকভাবে দুর্বল ভূমিস্তম্ভগুলোকে শুধুমাত্র একটি ছোট ধুলার ঘূর্নি হিসেবে ভূপৃষ্ঠে দেখা যায়। যদিও ঘনীভূত ফানেল অনেক সময় ভূমি পর্যন্ত বিস্তৃত নাও থাকতে পারে, তবু যদি বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ মাইলের (বা ঘণ্টায় ৬৪ কিমি) বেশি হয়, তবে এ ঘূর্ণন টর্নেডো হিসেবে বিবেচিত হয়। বৃহৎ একক-ঘূর্ণি টর্নেডোগুলো দেখতে অনেকটা ভূপৃষ্ঠে পোঁতা কীলকের মত দেখায়। এজন্য এগুলোকে কীলক টর্নেডো বলে। এই কীলকাকৃতির টর্নেডোগুলো এতই বিস্তৃত হয় যে শুধু ঘন কালো মেঘের স্তুপই দেখা যায়। এগুলো বিস্তারে ভূপৃষ্ঠ থেকে মেঘের দূরত্বের চাইতেও বেশি বিস্তৃত হয়। এজন্য অভিজ্ঞ আবহাওয়াবিদরাও অনেক সময় দূর থেকে দেখে নিচু আকাশে ভাসন্ত মেঘ এবং কীলকাকার টর্নেডোর মধ্যে পার্থক্য করতে হিমশিম খেয়ে যান।
নিঃশেষিত পর্যায়ে টর্নেডো দেখতে সরু নল বা দড়ির মতো মনে হয় এবং অনেক সময় বেঁকে গিয়ে নানা জটিল আকৃতি নেয়। একে বলা হয় রোপিং আউট যেখানে টর্নেডোগুলো রজ্জু টর্নেডো-তে পরিণত হয়। বহু-ঘূর্ণি টর্নেডোগুলো দেখতে একটি নির্দিষ্ট কেন্দ্রকে আবর্তিত অসংখ্য ঘূর্ণির মত লাগে অথবা ঘনীভবন, ধুলাবালি এবং বজ্রের কারণে সম্পূর্ণ ঢাকা পড়ে একটি ফানেলের রূপ নেয়।
এসব আকৃতি ছাড়াও বৃষ্টি এবং ধূলার কারণে অনেক সময় টর্নেডোর আকৃতি বোঝা যায় না। এই টর্নেডোগুলো খুবই বিপদজনক, কারণ অভিজ্ঞ আবহাওয়াবিদরাও অনেক সময় এদের শনাক্ত করতে পারেন না।
বিস্তার
যুক্তরাষ্ট্রে একটি সাধারণ টর্নেডো প্রায় ৫০০ ফুট (১৫০ মিটার) বিস্তৃত হয় এবং ভূমিতে প্রায় ৫ মাইলের (৮ কিমি)মত দূরত্ব অতিক্রম করে , যদিও বিভিন্ন ধরনের টর্নেডো বিভিন্ন আকৃতির হয়, এমনকি কিছু টর্নেডোর বিস্তার কয়েক ফুট মাত্র হতে পারে। একটি টর্নেডোর কথা একবার জানা গিয়েছিল, যার ধ্বংস-পথ ছিল মাত্র ৭ ফুট (২ মি)। অন্যদিকে কীলকাকার ধরনের টর্নেডোগুলোর ধ্বংস-পথ এক মাইল (১.৬ কিমি) বা তারও বেশি হতে পারে। নেব্রাস্কার হলাম নামক ছোট্ট গ্রামে ২২শে মে, ২০০৪ সালে যে টর্নেডো হয় তা এক পর্যায়ে ভূমিতে ২.৫ মাইল (৪ কিমি) বিস্তৃত ছিল।
পথের দৈর্ঘ্যের ক্ষেত্রে, মার্চ ১৮, ১৯২৫ সালে সংঘটিত ট্রাই স্টেট টর্নেডো যেটি মিসৌরি, ইলিনয় এবং ইন্ডিয়ানা এই তিনটি রাজ্যকে আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল, সেটি ভূমির উপর একটানা ২১৯ মাইল (৩৫২ কিমি) পথ পারি দিয়েছিল। বেশিরভাগ টর্নেডো যেগুলোর পথের দৈর্ঘ্য ১০০ মাইলের বেশি তারা মূলত একটি টর্নেডো পরিবার, যেগুলো পরপর সংঘটিত হয়, যদিও ট্রাই স্টেট টর্নেডোর ক্ষেত্রে যে এমনটি ঘটেছিল তার কোন উল্লেখযোগ্য প্রমাণ নেই সর্বোপরি, এর পথটির বর্তমান পুনর্বিশ্লেষণে দেখা গেছে টর্নেডোটি যেখান থেকে শুরু হয়েছে ভাবা হয়েছিল সেখান থেকে আরো ১৫ মাইল (২৪ কিমি) দক্ষিণে এটি সৃষ্টি হয়েছিল।
বাহ্যিক রূপ
টর্নেডো পারিপার্শ্বিক পরিবেশের ভিত্তিতে বিভিন্ন বর্ণের দেখায়। শুষ্ক পরিবশে এগুলো প্রায় অদৃশ্য থাকে, কেবলমাত্র ফানেল যেখানে গঠিত হয় সেখানে ঘূর্ণনরত বর্জ্য দেখে চিহ্নিত করা যায়। যে ঘনীভূত ফানেলে কোন বর্জ্য থাকে না বা কিঞ্চিৎ থাকে, সেগুলো ধূসর থেকে সাদা বর্ণের হয়। জলস্তম্ভ হিসেবে যখন এগুলো পানির উপর দিয়ে যায়, তখন সাদা এমনকি নীল বর্ণ ধারণ করে। যেসব ফানেল শ্লথ গতির হয়, সেগুলো অনেক বর্জ্য, ধূলাবালি টেনে নেয়; এগুলো সাধারণত গাঢ় বর্ণের, বর্জ্যের রং ধারণ করে। গ্রেট প্লেইনসের টর্নেডোগুলি ভূমির লাল বর্ণের জন্য লাল রঙ্গের হয় এবং পাহাড়ী এলাকার টর্নেডোগুলো অনেক সময় তুষার-আবৃত এলাকা পার হয়ে উজ্জ্বল সাদা বর্ণ ধারণ করে।
টর্নেডোর বাহ্যিক রূপের জন্য আলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। টর্নেডো দেখার সময় যদি সূর্য এর পেছনে থাকে (ব্যাক-লিট), তবে টর্নেডো কালো দেখায়। অপরদিকে, সূর্য যদি দর্শকের পেছনে থাকে, একই টর্নেডো ধূসর বা উজ্জ্বল সাদা দেখায়। সূর্যাস্তের সময় যেসব টর্নেডো হয়, সেগুলি আলোর কারণে হলুদ, কমলা, গোলাপী ইত্যাদি বিভিন্ন বর্ণের হতে পারে।
মূল ঝড়ের বাতাস থেকে উৎসারিত ধূলা-বালি, ভারী বৃষ্টি ও শিলা, এবং রাতের অন্ধকার সব উপাদানই টর্নেডোর দৃষ্টিগ্রাহ্যতা সীমিত করতে পারে। এসব পরিবেশে সৃষ্ট টর্নেডোগুলো খুবই বিপদজনক, কারণ এসব ক্ষেত্রে তখন শুধুমাত্র রেডার অবজারভেশন, অথবা অগ্রগামী টর্নেডোর শব্দ থেকেই আসন্ন বিপদ সম্পর্কে আভাস পাওয়া যায়। সৌভাগ্যক্রমে অধিকাংশ বড় টর্নেডোই ঝড়ের বৃষ্টি-মুক্ত অংশে বা ঝড়ের যে অংশে বায়ু ঊর্ধ্বগামী, যেখানে বৃষ্টি হয় না বা খুব কম হয় সে অংশে সৃষ্টি হয়। এছাড়া, অধিকাংশ টর্নেডো বিকালের দিকে সৃষ্টি হয়, যখন সূর্যের উজ্জ্বল আলো গভীর মেঘমালাকেও ভেদ করতে পারে। অন্যদিকে, রাতের টর্নেডোগুলো বজ্রপাত দ্বারা প্রায়শই আলোকিত হয়।
ডপলার মোবাইল রেডার থেকে প্রাপ্ত ছবি এবং প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ অনুযায়ী যথেষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ আছে যে অধিকাংশ টর্নেডোর ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ন্যায় তীব্র নিম্নচাপযুক্ত একটি শান্ত ও স্বচ্চ্ব কেন্দ্র থাকে। এ এলাকাটি স্বছ্ব (সম্ভবত ধূলা-বালিতে পূর্ণ), তুলনামূলকভাবে দুর্বল বাতাস থাকে এবং খুব অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়, কারণ টর্নেডোর বাইরের অংশে ঘিরে থাকা ধূলাবালি ভেতরে আলো ঢুকতে বাধা দেয়। যারা টর্নেডোর অভ্যন্তরভাগ দেখেছে, তারা আলোর উৎস হিসেবে বজ্রপাতের কথা উল্লেখ করেছে।
ঘূর্ণন
টর্নেডো সাধারণত ঘূর্ণিঝড়ের ন্যায় একই দিকে ঘুরে; অর্থাৎ উত্তর গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার দিকে। যদিও বৃহৎ আকৃতির ঝড়গুলো সবসময় কোরিওলিস শক্তির প্রভাবে ঘূর্ণিঝড়ের ন্যায় ঘুরে, কিন্তু বজ্রঝড় এবং টর্নেডোগুলো এতই ক্ষুদ্র হয় যে কোরিওলিস শক্তির প্রত্যক্ষ প্রভাব এগুলোতে খুব অল্প অনুভূত হয়, যা রসবি নাম্বার দেখে বোঝা যায়। এমনকি সুপারসেল এবং টর্নেডোগুলো সিমুলেশনের সময়ও ঘূর্ণিঝড়ের ন্যায় ঘুরে যেখানে কোরিওলিস শক্তি উপেক্ষা করা হয়। ছোট আকৃতির মেসোসাইক্লোন এবং টর্নেডোগুলোর ঘূর্ণনের জন্য মূলত সুপারসেলের মধ্যস্থ জটিল প্রক্রিয়া এবং পারিপার্শ্বিক পরিবেশ দায়ী।
আনুমানিক ১% টর্নেডো প্রতিঘূর্ণিঝড় দিকে ঘূর্ণন করে। সাধারণত, শুধু জলস্তম্ভ এবং দমকা টর্নেডো প্রতিঘূর্ণিঝড় দিকে ঘূর্ণন করে, এবং এছাড়া সাধারণত সেই সব টর্নেডো, যেগুলোর সৃষ্টি হয় সাইক্লোনিক সুপারসেলের মধ্যস্থ নিম্নগামী RFD-এর প্রতিঘূর্ণিঝড় অংশে। তবে দুর্লভ কিছু ক্ষেত্রে প্রতিঘূর্ণিঝড় টর্নেডোগুলো সৃষ্টি হয় প্রতিঘূর্ণিঝড় দিকে ঘূর্ণনরত সুপারসেলের মেসোএন্টিসাইক্লোন থেকে, যেমন একইভাবে ঘূর্ণিঝড়ের দিকে ঘূর্ণনরত টর্নেডোগুলোর সৃষ্টি হয়, অথবা সহ-টর্নেডো হিসেবে হয় উপটর্নেডো বা সুপারসেলের মধ্যস্থ প্রতিঘূর্ণিঝড় ঘূর্ণির সাথে যুক্ত হয়ে।
জীবন-চক্র
সুপারসেল সম্পৃক্ততা
টর্নেডো প্রায়শই সুপারসেল নামক এক শ্রেণীর বজ্রঝড় থেকে সৃষ্টি হয়। সুপারসেলে কয়েক মাইল ব্যপ্তির সংঘবদ্ধ একটি ঘূর্ণনশীল এলাকা থাকে যা মেসোসাইক্লোন নামে পরিচিত এবং সাধারণত এটি ১-৬ মাইল (২-১০ কিমি) ব্যাপ্তির হয়। তীব্র শক্তিশালী টর্নেডোগুলো (বর্ধিত ফুজিতা স্কেলে ইএফ৩ থেকে ইএফ৫ ক্যাটাগরির) সুপারসেল থেকে সৃষ্টি হয়। টর্নেডো ছাড়াও প্রচুর বৃষ্টি, ঘন ঘন বজ্রপাত, শক্তিশালী দমকা হাওয়া এবং শিলাঝড় এই সুপারসেল বজ্রঝড়ের সাধারণ বৈশিষ্ট্য।
সুপারসেল থেকে সৃষ্ট অধিকাংশ টর্নেডো একটি নির্দিষ্ট জীবন চক্র অনুসরণ করে। এটা শুরু হয় যখন বর্ধিত বৃষ্টিপাত দ্রুত নিম্নগামী বায়ুর একটি এলাকা টেনে নিয়ে আসে যা রিয়ার ফ্ল্যাংক ডাউনড্রাফট (আরএফডি) নামে পরিচিত। ভূমির নিকটবর্তী এলাকায় বায়ুর এই নিম্নগামীতা বৃদ্ধি পায় এবং সেই সাথে এটা সুপারসেলের মধ্যে থাকা ঘূর্ণনরত মেসোসাইক্লোনকেও ভূমির দিকে টেনে নিয়ে আসে।
সৃষ্টি
মেসোসাইক্লোন ভূমির নিকটবর্তী হতে থাকলে ঝড়ের মূল অংশ থেকে নিচের দিকে নেমে আসতে থাকা একটি ঘনীভূত ফানেল দৃশ্যমান হয় এবং প্রায়শই ঘূর্ণন মেঘের দেয়াল সৃষ্টি করে। ফানেল যখন নেমে আসে, নিম্নগামী বায়ুও (আরএফডি) তখন ভূমি স্পর্শ করে এবং তা থেকে দমকা ঝড়ের সৃষ্টি হয় যা টর্নেডো থেকে বেশ কিছু দূরত্বে ক্ষতিসাধন করতে পারে। সাধারণত, নিম্নগামী বায়ু বা আরএফডি ভূমি স্পর্শ করার মিনিটখানেকের মধ্যে ফানেল মেঘটি টর্নেডোতে পরিণত হয়।
পূর্ণতা
প্রাথমিকভাবে টর্নেডোতে শক্তি সঞ্চালনের জন্য যথেষ্ট উষ্ণ ও আর্দ্র প্রবাহের উৎস থাকে। তাই এটি পরিণত পর্যায়ে আসা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে থাকে। এর আয়ু কয়েক মিনিট থেকে ক্ষেত্রবিশেষে এক ঘণ্টার বেশি হতে পারে এবং এ সময়েই সাধারণত টর্নেডোগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিসাধন করে এবং দুর্লভ ক্ষেত্রে এর ব্যাপ্তি এক মাইল বা ১.৬ কিমির বেশি দেখা যায়। ইতোমধ্যে, আরএফডি (যেটি এখন ঠান্ডা পৃষ্ঠ বাতাসের এলাকায় পরিণত হয়েছে) টর্নেডোর চারপাশে ধীরে ধীরে ঘিরে ফেলে এটিকে উষ্ণ প্রবাহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয় যা টর্নেডোতে শক্তি সরবরাহ করে আসছিল।
নিঃশেষ
মেসোসাইক্লোনকে পেছন দিক থেকে ঘিরে ধরা নিম্নগামী শুষ্ক বায়ু যা রিয়ার ফ্ল্যাংক ডাউনড্রাফট বা আরএফডি নামে পরিচিত টর্নেডোকে চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলে এর বাতাস সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ফলে ঘূর্ণিটি দুর্বল হতে আরম্ভ করে এবং সরু ও রজ্জু-সদৃশ দেখায়। এটাই হল নিঃশেষিত পর্যায়; যার স্থায়ীত্ব থাকে মাত্র কয়েক মিনিট এবং এর পরপরই টর্নেডো বিলীন হয়ে যায়। এই পর্যায়ে টর্নেডোর আকার মূল ঝড়ের বাতাস দ্বারা প্রচন্ড প্রভাবিত হয় এবং নানা চমৎকার আকৃতি নেয়।
টর্নেডো যখন নিঃশেষ পর্যায়ে প্রবেশ করে আরএফডি এর শক্তিসরবরাহকারী প্রবাহকে বিচ্ছিন্ন করায় তখন এর সাথে সংশ্লিষ্ট মেসোসাইক্লোনও দুর্বল হয়ে যায়। তীব্র শক্তিশালী সুপারসেলগুলো থেকে টর্নেডো তৈরি হতে পারে। মেসোসাইক্লোন এবং এর সাথে যুক্ত টর্নেডো যখন নিঃশেষ হয়ে আসে, ঝড়ের প্রবাহ তখন কেন্দ্রের কাছে নতুন আরেকটি এলাকা জুড়ে শুরু হয়। যদি নতুন কোন মেসোসাইক্লোন এ থেকে তৈরি হয়, তবে চক্রটি পুনরায় আরম্ভ হয় এবং একটি কিংবা আরো বেশি নতুন টর্নেডো সৃষ্টি হয়। কখনো কখনো পুরনো মেসোসাইক্লোন এবং নতুন মেসোসাইক্লোন একই সাথে টর্নেডো সৃষ্টি করে।
অধিকাংশ টর্নেডোর জীবন-চক্রের ক্ষেত্রে যদিও এটা বহুল-স্বীকৃত তত্ত্ব, কিন্তু অপেক্ষাকৃত ছোট টর্নেডো যেমন ভূমিস্তম্ভ বা ল্যান্ডস্পাউটের সৃষ্টি, দীর্ঘ-স্থায়ী টর্নেডো বা বহু-ঘূর্ণি সংবলিত টর্নেডোগুলো সৃষ্টির কারণ এই তত্ত্ব ব্যাখা করতে পারে না। এগুলোর প্রত্যেকটিরই নিজস্ব এবং আলাদা সৃষ্টিকৌশল বা মেকানিজম রয়েছে। তবে, অধিকাংশ টর্নেডোই এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বলা যায়।
তীব্রতা ও ধ্বংস-ক্ষমতা
ফুজিতা স্কেল এবং বর্ধিত ফুজিতা স্কেলের সাহায্যে টর্নেডোর ধ্বংস ক্ষমতা পরিমাপ করা হয়। ১৯৭১ সালে জাপানী-আমেরিকান বিজ্ঞানী টেড ফুজিতা টর্নেডোর ধ্বংস-ক্ষমতা পরিমাপের জন্য ফুজিতা স্কেল উদ্ভাবন করেন। টেক্সাস টেক বিশ্ববিদ্যালয়ের উইন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ সেন্টার এর উন্নততর সংস্করণ বর্ধিত ফুজিতা স্কেলের প্রস্তাব করে যা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া সংস্থা কর্তৃক ২রা ফেব্রুয়ারি, ২০০৬ সালে গৃহীত হয় এবং ১লা ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ সাল থেকে কার্যকর রয়েছে।
ইএফ০' মানের একটি টর্নেডো ধারণা করা হয় যে শুধু গাছপালা ধ্বংস করবে, কোন বড় দালানকোঠা নয়। অন্যদিকে একটি ইএফ৫ টর্নেডো ভিত্তি থেকে দালানকোঠা উপড়ে ফেলতে পারে, এমনকি বড় বড় বিল্ডিং বা স্কাইস্ক্রাপারেও আঘাত করে বিকৃত করে ফেলে। একইভাবে, টরো স্কেলে টি০ নির্ধারণ করা হয়েছে অতি দুর্বল টর্নেডোর জন্য, এবং টি১১ বুঝায় সবচেয়ে শক্তিশালী টর্নেডো। রাডার উপাত্ত, ফটোগ্রামেট্রি এবং ভূমিতে ঘূর্ণনের বিভিন্ন নমুনা বিশ্লেষণের মাধ্যমে এগুলোর তীব্রতা নির্ধারণ করে এসব রেটিং প্রদান করা হয়।
টর্নেডোর তীব্রতা এর আকার, আকৃতি ও অবস্থানের উপর নির্ভর করে না, যদিও শক্তিশালী টর্নেডোগুলো দুর্বল টর্নেডোগুলোর চেয়ে আকারে বড় হয়। এগুলোর পথের দৈর্ঘ্য এবং স্থায়িত্বও নানা রকম হয়, যদিও যেসব টর্নেডো বেশি দূরত্ব অতিক্রম করে, সেগুলো অপেক্ষাকৃত বেশি শক্তিশালী হয়। তীব্র শক্তিশালী টর্নেডোর ক্ষেত্রে, পথের একটি ক্ষুদ্র অংশেই এই তীব্রতা থাকে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই অতি তীব্রতা আসে বহু ঘূর্ণি টর্নেডো থেকে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৮০% টর্নেডো ইএফ০ এবং ইএফ১ (টি০ থেকে টি৩) শ্রেণীর। স্কেলের যত উপরের দিকে যাওয়া যায় অর্থাৎ টর্নেডোর শক্তি বৃদ্ধির সাথে সাথে উৎপন্ন হবার হারও কমে আসে; শক্তিশালী টর্নেডো অর্থাৎ ইএফ৪, টি৮ এর সংখ্যা ১%-এর চেয়েও কম।
যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে দক্ষিণ এশিয়া বিশেষ করে বাংলাদেশ ও পূর্ব ভারতে শক্তিশালী টর্নেডো সংঘটিত হতে দেখা যায়। এছাড়া ইউরোপ, এশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকাতেও প্রতি বছর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক টর্নেডো হয়।
এ পর্যন্ত সংঘটিত সবচাইতে প্রানহানিকর ১৫ টি টর্নেডো
উল্লেখযোগ্য কিছু টর্নেডো
নম্বর | স্থান | তারিখ | আহত | মৃত |
---|---|---|---|---|
১ | মানিকগঞ্জ – বাংলাদেশ | ২৬শে আগস্ট, ১৯৮৯ | ১২০০০ জন | ১৩০০ জন |
২ | ঢাকা – বাংলাদেশ | ১৪ই এপ্রিল, ১৯৬৯ | সঠিক তথ্য নেই | ৯২৩ জন |
৩ | মিসৌরি, ইলিনয়, ইন্ডিয়ানা – মার্কিন যুক্তরাস্ট্র | ১৮ই মার্চ, ১৯২৫ | ২০২৭ জন | ৬৯৫ জন |
৪ | মানিকগঞ্জ এবং নবাবগঞ্জ – বাংলাদেশ | ১৭ই মার্চ, ১৯৭৩ | - | ৬৮১ জন |
৫ | ভেলেটা – মাল্টা | ২৩শে নভেম্বর, ১৫৫১ | সঠিক তথ্য নেই | ৬০০ জন |
৬ | মাগুরা এবং নড়াইল – বাংলাদেশ | ১১ই মার্চ, ১৯৬৪ | সঠিক তথ্য নেই | ৫০০ থেকে ১৪০০ জন |
৭ | সিসিলি – ইটালি | ১২ই - , ১৮৫১ | সঠিক তথ্য নেই | ৫০০ জন |
৮ | মাদারীপুর – বাংলাদেশ | ১লা মার্চ, ১৯৭৭ | সঠিক তথ্য নেই | ৫০০ জন |
৯ | ইভানভো এবং ইয়োরোস্লাভ – রাশিয়া | ৯ই জুলাই, ১৯৮৪ | ২১৩ জন | ৪০০ জন |
১০ | মিসিসিপি – যুক্তরাষ্ট্র | ৬ই মে, ১৮৪০ | ১০৯ জন | ৩১৭ জন |
১১ | পশ্চিম বঙ্গ – ভারত | ৯ই মার্চ, ১৯৬৩ | সঠিক তথ্য নেই | ৩০০ জন |
১২ | বরিশাল – বাংলাদেশ | ২৯শে এপ্রিল, ১৯৭২ | সঠিক তথ্য নেই | ৩০০ জন |
১৩ | কুমিল্লা – বাংলাদেশ | ১৪ই এপ্রিল, ১৯৬৯ | সঠিক তথ্য নেই | ২৬৩ জন |
১৪ | মিসৌরী – যুক্তরাষ্ট্র | ৭ই মে, ১৮৯৬ | ১০০০ জন | ২৫৫ জন |
১৫ | উড়িষ্যা এবং পশ্চিম বঙ্গ – ভারত | ২৪শে মার্চ, ১৯৯৮ | সঠিক তথ্য নেই | ২৫০ জন |
আরও পড়ুন
- Howard B. Bluestein (১৯৯৯)। Tornado Alley: Monster Storms of the Great Plains। New York: Oxford University Press। আইএসবিএন 0-19-510552-4।
- Marlene Bradford (২০০১)। Scanning the Skies: A History of Tornado Forecasting। Norman, OK: University of Oklahoma Press। আইএসবিএন 0-8061-3302-3।
- Thomas P. Grazulis (জানুয়ারি ১৯৯৭)। Significant Tornadoes Update, 1992–1995। St. Johnsbury, VT: Environmental Films। আইএসবিএন 1-879362-04-X।
বহিঃসংযোগ
- সাধারণ পাঠ্য
- NOAA Storm Database 1950–Present
- European Severe Weather Database
- Social & Economic Costs of Tornadoes
- Tornado Detection and Warnings
- Electronic Journal of Severe Storms Meteorology
- NOAA Tornado Preparedness Guide
- Tornado History Project - Maps and statistics from 1950-Present
- গবেষণামূলক