Мы используем файлы cookie.
Продолжая использовать сайт, вы даете свое согласие на работу с этими файлами.

দোলযাত্রা

Подписчиков: 0, рейтинг: 0
দোলযাত্রা
A Holi Festival - Krishna Radha and Gopis.jpg
রাধা ও অন্যান্য গোপীগণের সঙ্গে দোল খেলছেন কৃষ্ণ
অন্য নাম দোল, দোলপূর্ণিমা, বসন্তোৎসব, হোলি
পালনকারী হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন ও অন্যান্য
ধরন ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, বসন্ত উৎসব
তাৎপর্য
  • মন্দের উপর ভালোর জয়
  • রাধা কৃষ্ণের ঐশ্বরিক প্রেমের উদযাপন
  • বসন্ত ঋতুর আগমন
উদযাপন হোলির আগের রাতে: হোলিকা দহন, রঙিন রং বা আবির দিয়ে খেলা, নাচ, শুভেচ্ছা, উৎসবের সুস্বাদু খাবার
শুরু ফাল্গুনী পূর্ণিমা
তারিখ ফাল্গুন (ফেব্রুয়ারি-মার্চ)
সম্পর্কিত গৌর পূর্ণিমা

দোলযাত্রা বা হোলি /ˈhl/ রঙের উৎসব, বসন্তের উৎসব এবং প্রেমের উৎসব নামেও পরিচিত, হিন্দুধর্মের অন্যতম জনপ্রিয় এবং উল্লেখযোগ্য উৎসব ৷ হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, বৃন্দাবনে রাধা ও কৃষ্ণের দ্বারা হোলি খেলা উৎসব পালিত হয়েছিল। হোলিকা দহন কিংবদন্তি অশুভ শক্তির বিপরীতে শুভের জয় নির্দেশিত করে। এটির উদ্ভব ভারতীয় উপমহাদেশে এবং সেখানে বেশি উদযাপিত হয় তবে দক্ষিণ এশীয় প্রবাসীদের মাধ্যমে এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চল এবং পশ্চিমা বিশ্বের কিছু অংশেও ছড়িয়ে পড়ছে। এই উৎসবের অপর নাম বসন্ত উৎসবফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে দোলযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।

বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী, ফাল্গুনী পূর্ণিমা বা দোলপূর্ণিমার দিন বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ আবির বা গুলাল নিয়ে রাধিকা ও অন্যান্য গোপীগণের সঙ্গে রং খেলায় মেতেছিলেন। সেই ঘটনা থেকেই দোল খেলার উৎপত্তি হয়। দোলযাত্রার দিন সকালে তাই রাধা ও কৃষ্ণের বিগ্রহ আবির ও গুলালে স্নাত করে দোলায় চড়িয়ে কীর্তনগান সহকারে শোভাযাত্রায় বের করা হয়। এরপর ভক্তেরা আবির ও গুলাল নিয়ে পরস্পর রং খেলেন। দোল উৎসবের অনুষঙ্গে ফাল্গুনী পূর্ণিমাকে দোলপূর্ণিমা বলা হয়। আবার এই পূর্ণিমা তিথিতেই চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্ম বলে একে গৌরপূর্ণিমা নামেও অভিহিত করা হয়।

দোলযাত্রা উৎসবের একটি ধর্মনিরপেক্ষ দিকও রয়েছে। এই দিন সকাল থেকেই নারীপুরুষ নির্বিশেষে আবির, গুলাল ও বিভিন্ন প্রকার রং নিয়ে খেলায় মত্ত হয়। শান্তিনিকেতনে বিশেষ নৃত্যগীতের মাধ্যমে বসন্তোৎসব পালনের রীতি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময়কাল থেকেই চলে আসছে। দোলের পূর্বদিন খড়, কাঠ, বাঁশ ইত্যাদি জ্বালিয়ে এক বিশেষ বহ্ন্যুৎসবের আয়োজন করা হয়। এই বহ্ন্যুৎসব হোলিকা দহন বা ন্যাড়াপোড়া নামে পরিচিত। উত্তর ভারতে হোলি উৎসবটি বাংলার দোলযাত্রার পরদিন পালিত হয়।

আঞ্চলিক নাম, আচার এবং উদযাপন

হোলি ( হিন্দি : होली , কন্নড় : ಹೋಳಿ , মারাঠি : होळी , নেপালি : होली , পাঞ্জাবি : होली , তেলেগু : హోళి ) পশ্চিমবঙ্গ এবং আসমে বসন্ত উৎসব ( বাংলা : बसंत हारब ) ("বসন্ত উৎসব") নামেও পরিচিত । আসামে রঙের উৎসব বা দোল যাত্রা ( অসমীয়া : দ'ল যাত্ৰা ), নেপালের পাহাড়ি অঞ্চলে ফাগু পূর্ণিমা ( নেপালি : फागु पूर्णिमा ) , ওড়িশায় দোলা যাত্রা ( ওড়িয়া : ଦୋଳଯାତ୍ରା ) ; ফাকুয়া বা ফাগওয়াহ ( অসমীয়া : ফাকুভা ) এবং ভোজপুরীতে ফাগুয়া (পশ্চিম বিহার) নামেও পরিচিত । প্রথা এবং উদযাপন ভারতের অঞ্চলগুলির মধ্যে পরিবর্তিত হয়।

ব্রজ অঞ্চলে হোলির বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে , যার মধ্যে রয়েছে ঐতিহ্যগতভাবে রাধা কৃষ্ণের সাথে যুক্ত স্থানগুলি : মথুরা , বৃন্দাবন, নন্দগাঁও , বারসানা এবং গোকুল যা হোলির মৌসুমে পর্যটন হয়ে ওঠে।

ভারত ও নেপালের বাইরে, হোলি পালন করা হয় বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের হিন্দুদের দ্বারা এবং সেইসাথে সুরিনাম , গায়ানা , ত্রিনিদাদ এবং টোবাগো , দক্ষিণ আফ্রিকা , মালয়েশিয়া , যুক্তরাজ্য , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র , কানাডা , অস্ট্রেলিয়ার মতো বৃহৎ ভারতীয় উপমহাদেশীয় প্রবাসী জনসংখ্যার দেশগুলিতে। , মরিশাস এবং ফিজি । দক্ষিণ এশিয়ার বাইরে হোলির আচার ও রীতিনীতিও স্থানীয় অভিযোজনের সাথে পরিবর্তিত হয়।

তাৎপর্য

দোলযাত্রা বা হোলি উৎসব সংক্রান্ত পৌরাণিক উপাখ্যান ও লোককথাগুলি মূলত দুই প্রকার: প্রথমটি দোলযাত্রার পূর্বদিন পালিত বহ্ন্যুৎসব হোলিকাদহন বা মেড়াপোড়া সংক্রান্ত, এবং দ্বিতীয়টি রাধাকৃষ্ণের দোললীলা বা ফাগুখেলা কেন্দ্রিক কাহিনী।

২০১০ সালে রাজস্থানের উদয়পুরে হোলিকা দহন উৎসব

দোলের সঙ্গে জড়িয়ে আছে রাধা কৃষ্ণের অমর প্রেম কাহিনি।কোথাও অশুভকে হারিয়ে শুভ শক্তির জয়, আবার কোথাও ঘন প্রেমের আখ্যান, এই সবের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে দোল বা হোলির রঙ।

বিষ্ণুর কিংবদন্তি

ভাগবত পুরাণ এর সপ্তম অধ্যায় অনুসারে,অসুর রাজা হিরণ্যকশিপু অমর হতে চান। এজন্য ব্রহ্মার নিকট হতে অমরত্বের বরপ্রাপ্তির জন্য তিনি কঠোর ধ্যানে নিমগ্ন হন। কিন্তু দেবতারা খুব কমই অমরত্ব দান করে। কিন্তু হিরণ্যকশিপু এমন বর চান যাতে তাঁর মনে হয় যেন পরোক্ষভাবে তিনি অমরত্ব লাভ করেছেন। তিনি যে বর লাভ করেন তাতে তিনি পাঁচটি বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী হন। এগুলো হচ্ছে, তাকে মানুষও হত্যা করতে পারবে না, কোন প্রাণীও হত্যা করতে পারবে না; তাকে ঘরেও হত্যা করা যাবে না, আবার বাইরেও হত্যা করা যাবে না; তাকে দিনেও হত্যা করা যাবে না আবার রাতেও হত্যা করা যাবে না; তাকে অস্ত্রের (যা ছুড়ে মারা হয়) দ্বারাও হত্যা করা যাবে না আবার সস্ত্রের (যা হাতে থাকে) দ্বারাও হত্যা করা যাবে না; তাকে স্থল, জল বা বায়ু কোথাও হত্যা করা যাবে না। এই বর লাভ করে হিরণ্যকশিপু অহংকারী ও উদ্ধত হয়ে ওঠে। তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, কেবল তাকেই দেবতা হিসেবে পূজা করা হবে। কেউ তার আদেশ পালন না করলে তিনি তাকে শাস্তি দেবেন বা হত্যা করবেন। তার পুত্র প্রহ্লাদ তার সাথে সম্মত হয়নি। তিনি একজন বিষ্ণুভক্ত ছিলেন, তার পিতাকে দেবতা হিসেবে পূজা করতে তাই তিনি অস্বীকার করেন। প্রহ্লাদ বিষ্ণুকেই পূজা করা চালিয়ে যান।

এতে হিরণ্যকশিপু খুব রাগান্বিত হন এবং প্রহ্লাদকে হত্যা করার বিভিন্ন চেষ্টা করেন। এগুলোর মধ্যে একবার হিরণ্যকশিপু তার বোন হোলিকার কাছে সাহায্য চান। হোলিকার একটি বিশেষ পোশাক ছিল যা তাকে আগুনে পুড়ে যাবার হাত থেকে রক্ষা করত। হিরণ্যকশিপুকে তিনি তার কোলে বসতে বলেন, আর হিরণ্যকশিপু তার কোলে বসলে তিনি প্রহ্লাদের উপর আগুন জ্বালিয়ে দেন। এতে প্রহ্লাদ আগুনে পুড়ে মারা যাবে কিন্তু হোলিকার কাছে থাকা বিশেষ বস্ত্রের জন্য তার কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু সেই আগুন জ্বলতেই হোলিকার শরীর থেকে সেই বস্ত্র খুলে গিয়ে প্রহ্লাদের শরীরকে আবৃত করে। এতে হোলিকা আগুনে পুড়ে যায়, আর প্রহ্লাদ ক্ষতি থেকে বেঁচে যায়।

বিষ্ণু নৃসিংহ অবতার (অর্ধমানব-অর্ধসিংহ) রূপে গোধূলি লগ্নে (দিন ও রাতের মাঝামাঝি সময়ে) আবির্ভূত হন, হিরণ্যকশিপুকে ঘরের চৌকাঠে (না বাইরে না ঘরে) নিয়ে যান, তাকে নিজের কোলে (না বায়ুতে, না স্থলে) স্থাপন করেন, ও এরপর হিরণ্যকশিপুর নাড়িভুড়ি বের করে ও তার থাবা দিয়ে (না অস্ত্র না সস্ত্র) তাকে হত্যা করেন। এভাবে হিরণ্যকশিপুর লাভ করা বর তাকে বাঁচাতে পারেনি। প্রহ্লাদ ও মানব জাতি বাধ্যবাধকতা ও ভয় থেকে মুক্তি পায়। নৃসিংহের দ্বারা হিরণ্যকশিপু বধ এর এই কাহিনী অশুভ এর উপর শুভের জয়কে নির্দেশ করে। হোলিকা দহন বা নেড়াপোড়া উৎসব এই ঘটনাটিকেই নির্দেশ করে। হোলিকার এই অগ্নিদগ্ধ হওয়ার কাহিনিই দোলের পূর্বদিনে অনুষ্ঠিত হোলিকাদহন বা চাঁচর উৎসবের সঙ্গে যুক্ত।স্কন্দপুরাণ গ্রন্থের ফাল্গ‌ুনমাহাত্ম্য গ্রন্থাংশে হোলিকা ও প্রহ্লাদের উপাখ্যান বর্ণিত হয়েছে।

কৃষ্ণের কিংবদন্তি

ভারতের ব্রজ অঞ্চলে, যেখানে কৃষ্ণ ছোট থেকে বড় হয়, সেখানে রাধা ও কৃষ্ণের স্বর্গীয় ভালোবাসার স্মৃতি হিসেবে দিনটি রঙ পঞ্চমি হিসেবে উদযাপিত হয়। বসন্তে উৎসবটি হয়, এবং প্রেমের উৎসব হিসেবে দিনটি পালিত হয়। এছাড়া দিনটিতে কৃষ্ণকে স্মরণ করার জন্য আরেকটি পুরাণও রয়েছে। হোলিকে ফাগওয়া (Phagwah)-ও বলা হয়, এবং এক্ষেত্রে হোলিকাকে বলা হয় পুতানা। কৃষ্ণের মামা এবং রাজা কংস তার শিশু ভাগ্নে কৃষ্ণকে নিজের জীবনের জন্য সংকট বলে মনে করে। কংস রাক্ষসী পুতানাকে, নারীর বেশে কৃষ্ণকে হত্যা করতে পাঠায়, যেখানে পুতানা রাক্ষসী কৃষ্ণকে স্তন্যদান করাতে গিয়ে বিষ প্রয়োগ করে কৃষ্ণকে হত্যা করবে। কিন্তু শিশু কৃষ্ণ কেবল পুতনার বিষাক্ত দুধই পান করেনি, সেইসাথে পুতানার রক্তও পান করে। এরফলে পুতনা একজন রাক্ষসীতে পরিণত হয়। এরপর পুতানা পালিয়ে যায় ও আগুনে জ্বলে ওঠে, এবং কৃষ্ণের গায়ের রঙ ঘন নীল হয়ে যায়।

ফাগওয়া (Phagwah) উদ্‌যাপনের আগের রাতে পুতনার দহন উদযাপিত হয়। হিন্দু পুরাণ অনুসারে, কৃষ্ণ তার যৌবনে হতাশ হয়ে ভাবে, উজ্জ্বল বর্ণের রাধা ও অন্যান্য গোপিরা তার শ্যাম বর্ণের কারণে পছন্দ করবে কিনা। এতে কৃষ্ণের মা কৃষ্ণের হতাশায় ক্লান্ত হয়ে তাকে বলেন, রাধার কাছে গিয়ে সে রাধার মুখমণ্ডলকে যেকোন রঙ দিয়ে রাঙ্গিয়ে দিতে পারে। কৃষ্ণ তাই করে, এবং এরপর রাধা ও কৃষ্ণ জুড়ি হয়ে যায়। রাধা ও কৃষ্ণের এই রঙ নিয়ে খেলাই হোলি বা দোলযাত্রা হিসেবে পালিত হয়। ভারতের বাইরে, হোলি (ফাগ্বাহ) এর কিংবদন্তীটি কিছু ক্যারিবীয় এবং দক্ষিণ আমেরিকার ভারতীয় বংশদ্ভূত সম্প্রদায়ে দেখা যায়, যেমন গায়ানা এবং ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে এটি দেখা যায়।মরিশাসেও এই দিন পালন করা হয়।

অন্যান্য হিন্দু ঐতিহ্য

বাংলাদেশের তেওতা জমিদার বাড়ির দোলমঞ্চ

বৈষ্ণবধর্ম ছাড়া শৈবধর্মশাক্তধর্মেও হোলি উৎসবের তাৎপর্য রয়েছে। হোলি নিয়ে আরেকটি গল্প আছে যা ভালোবাসার জন্য আগুনে পুড়ে আত্মত্যাগ এর সাথে সম্পর্কিত। এই গল্পটি শিবকামদেবের। শিবের সাথে পার্বতীর বিবাহ হবার পূর্বে, পার্বতী শিবকে যোগ ও ধ্যান থেকে বাস্তব জগতে ফিরিয়ে আনবার জন্য বসন্ত পঞ্চমীর দিনে প্রেমের দেবতা কামদেবের সাহায্য প্রার্থনা করেন। কামদেব (প্রেমের দেবতা) এবং তার স্ত্রী রতি (প্রেমের দেবী) পার্বতীকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছিলেন যাতে পার্বতী শিবকে তার স্বামী রূপে অর্জন করতে সক্ষম হন। শিব যোগাসনে গভীর ধ্যানে মগ্ন ছিলেন। কামদেব ও রতি শিবের ধ্যান ভঙ্গ করে পার্বতির সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করানোর জন্য তার দিকে তীর ছোড়ে। কিন্তু ধ্যানে এই বিঘ্ন ঘটবার কারণে শিব তার তৃতীয় চক্ষু খোলেন এবং সেই চোক্ষুর তেজদীপ্ত চাহনিতে কামদেব দগ্ধ হয়ে ছাইয়ে পরিণত হয়। এই ঘটনায় কামদেবের স্ত্রী রতির বিমর্ষ হয়ে পড়ে। তাদের তীর কাজ করেনি, বরং শিবকে বিদ্ধ করার আগেই এগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। পরবর্তিতে শিব ও পার্বতির বিবাহ হয়। এই বিবাহের সময় রতি শিবের কাছে প্রার্থনা করেন যাতে কামদেবকে তার কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়। শিব সম্মত হন, এবং কামদেবকে সত্যিকারের আবেগ এর একটি অবাস্তব সত্তা হিসেবে তাকে ফিরিয়ে দেন। প্রেমের দেবতার এই ফিরে আসা বসন্ত পঞ্চমি উৎসবের চল্লিশ দিন পর হোলি হিসেবে পালিত হয়। এই কামদেবের কিংবদন্তি ও হোলি উৎসবে এর তাৎপর্যের বিভিন্ন প্রকরণ আছে, বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতে এই কিংবদন্তির বিভিন্ন রূপ দেখা যায়।

সাংস্কৃতিক তাৎপর্য

ভারতবর্ষের বিভিন্ন হিন্দু ঐতিহ্যেই হোলি উৎসবের সাংস্কৃতিক তাৎপর্য রয়েছে। এটি একটি উৎসবমুখর দিন যখন একজন তার অতীতের ভুলগুলো ভুলে যায়। এই দিনে মানুষেরা একে অপরের মধ্যকার ঝগড়া-বিবাদ মিটমাট করে ফেলে, এই দিনে তারা এসব ঝগড়া বিবাদ ভুলে যায় ও ক্ষমা করে দেয়। তারা পুরনো ঋণ মাফ করে দেয়, এবং নতুন করে চুক্তি শুরু করে। হোলি উৎসব একই সাথে বসন্তের আগমন বার্তাও নিয়ে আসে। অনেকের কাছে এটা নতুন বছরের শুরুকে নির্দেশ করে। এটি মানুষের জন্য ঋতু পরিবর্তনকে উপভোগ করা ও নতুন বন্ধু বানাবার উৎসব।

অন্যান্য ভারতীয় ধর্ম

ঐতিহ্যগতভাবে এই উৎসবটিকে অ-হিন্দুদের মধ্যে, যেমন জৈন এবং নেপালের নেওয়ার বৌদ্ধদের মধ্যেও দেখা যায়।

শিখরা একে ঐতিহ্যগতভাবে উৎসব হিসেবে পালন করেছে, অন্তত উনিশ শতক জুড়ে। শিখ ধর্মের ঐতিহাসিক ধর্মে এই উৎসবকে হোলা বলা হয়। শিখদের শেষ মানবগুরু গুরু গোবিন্দ সিংহ হোলিকে পরিবর্তন করে তিন দিনের হোলা মহল্লা উৎসবে পরিণত করেছিলেন, যেখানে হোলি উৎসব বর্ধিত হয়ে এতে মার্শাল আর্টও অন্তর্ভুক্ত হয়। আনন্দপুর সাহিব এর উৎসবের পর হোলি উৎসবের এই বৃদ্ধির সূচনা ঘটে। এই আনন্দপুর সাহিবে শিখ সৈন্যরা একটি নকল যুদ্ধে অংশগ্রহণ, ঘোড়দৌড়, শরীরচর্চা, তীর চালানো ও সামরিক-চর্চা করে।

মহারাজা রঞ্জিত সিংহের সময় শিখ সাম্রাজ্যে হোলি খেলা হয় এবং সেই উৎসবের সংস্কৃতি ভারত ও পাকিস্তানের উত্তর অঞ্চলে বিস্তৃত হয়। ট্রিবিউন ইন্ডিয়া এর একটি প্রতিবেদন অনুসারে, শিখ দরবারের একটি নথি বলছে, ১৮৩৭ সালে লাহোরে রঞ্জিত সিংহ ও তার কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ ৩০০ মাউন্ড এর রঙ ব্যবহার করেছিলেন। রঞ্জিত সিংহ বিলাবল বাগানে অন্যদের সাথে হোলি উৎসব উদ্‌যাপন করেছিলেন, যেখানে বিভিন্ন সজ্জিত তাবু খাটানো হয়। ১৮৩৭ সালে স্যার হেনরি ফেন, যিনি তদকালীন ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর সেনাপতি ছিলেন, তিনি রঞ্জিত সিংহের আয়োজিত হোলি উৎসবে যোগদান করেছিলেন। রঞ্জিত সিংহের উদ্যোগে লাহোর দুর্গে একটি দেয়াল চিত্র তৈরি করা হয়, যেখানে কৃষ্ণকে গোপিদের সাথে হোলি খেলতে দেখা যায়। রঞ্জিত সিংহের মৃত্যুর পর, তার শিখ পুত্রেরা এবং অন্যেরা রঙ দিয়ে আরম্বরপূর্ণভাবে হোলি উৎসব পালন করা চালিয়ে যান, এবং এই উৎসবগুলোতে ব্রিটিশ কর্মকর্তাগণও যোগদান করতেন।

শান্তিনিকেতনের বসন্তোৎসব

দোলযাত্রা উৎসব শান্তিনিকেতনে বসন্তোৎসব নামে পরিচিত। অতীতে শান্তিনিকেতনের বিদ্যালয়ে বসন্তের আগমন উপলক্ষে একটি ছোটো ঘরোয়া অনুষ্ঠানে নাচগান, আবৃত্তি ও নাট্যাভিনয় করা হত। পরবর্তীকালে এই অনুষ্ঠানটি পরিব্যপ্ত হয়ে শান্তিনিকেতনের অন্যতম জনপ্রিয় উৎসব বসন্তোৎসবের আকার নেয়। ফাল্গুনী পূর্ণিমা অর্থাৎ দোলপূর্ণিমার দিনই শান্তিনিকেতনে বসন্তোৎসবের আয়োজন করা হয়। পূর্বরাত্রে বৈতালিক হয়। দোলের দিন সকালে ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল গানটির মাধ্যমে মূল অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। সন্ধ্যায় গৌরপ্রাঙ্গনে রবীন্দ্রনাথের কোনো নাটক অভিনীত হয়।

বহিঃসংযোগ


Новое сообщение