Мы используем файлы cookie.
Продолжая использовать сайт, вы даете свое согласие на работу с этими файлами.

ধনুষ্টঙ্কার

Подписчиков: 0, рейтинг: 0
Tetanus
প্রতিশব্দ Lockjaw
Opisthotonus in a patient suffering from tetanus - Painting by Sir Charles Bell - 1809.jpg
Muscle spasms (specifically opisthotonos) in a person with tetanus. Painting by Sir Charles Bell, 1809.
বিশেষত্ব Infectious disease
লক্ষণ fever, cramped-up jaw, Muscle spasms, headache, seizures, sweating, and trouble swallowing
রোগের সূত্রপাত 3–21 days following exposure
স্থিতিকাল Months
কারণ Clostridium tetani
ঝুঁকির কারণ Break in the skin
রোগনির্ণয়ের পদ্ধতি Based on symptoms
প্রতিরোধ Tetanus vaccine
চিকিৎসা Tetanus immune globulin, muscle relaxants, mechanical ventilation
ঔষধ diazepam and methocarbamol
আরোগ্যসম্ভাবনা 10% risk of death
সংঘটনের হার 209,000 (2015)
মৃতের সংখ্যা 56,700 (2015)

ধনুষ্টঙ্কার বা টিটেনাস, বা লক-জ, একটি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ যার প্রধান লক্ষণ হল মাংস পেশীর খিঁচুনি| সাধারণত , খিঁচুনি চোয়ালে শুরু হয় এবং তারপরে শরীরের বাকি অংশে ছড়িয়ে পরে। প্রতিটি খিঁচুনির দমক সাধারণত কয়েক মিনিট স্থায়ী হয়। প্রায়ই তিন থেকে চার সপ্তাহ ঘনঘন খিঁচুনি হতে থাকে। কখনও কখনও খিঁচুনির দমক এতই তীব্র হয় যে তা হাড় ভাঙ্গার জন্যও যথেষ্ট । টিটেনাসে এ ছাড়াও জ্বর, ঘাম, মাথাব্যথা, গিলতে সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, দ্রুত হৃদস্পন্দন ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয় । লক্ষণগুলি সাধারণত সংক্রমণের তিন থেকে একুশ দিনের পর দেখা যায়। সুস্থ হতে কয়েক মাস সময় লেগে যায়। প্রায় দশ শতাংশ ক্ষেত্রে মৃৃত্যু হয়ে থাকে ।

ক্লোস্ট্রিডিয়াম টেটানি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে টিটেনাস হয়, যা সাধারণত মাটি, লালা, ধুলো এবং সারে পাওয়া যায়। এই ব্যাকটেরিয়াটি সাধারণত দূষিত বস্তুুর দ্বারা সৃষ্ট কাটা বা খোঁচার মত চামড়ার ক্ষতর মাধ্যমে মানব দেহে প্রবেশ করে. এরা মানব দেহে এক প্রকার প্রতিবিষ (Toxin) তৈরি করে যা স্বাভাবিক পেশী সংকোচনে হস্তক্ষেপ করে। এই রোগ উপস্থাপিত লক্ষণ এবং উপসর্গের উপর ভিত্তি করে নির্ণয় করা হয়। এই রোগ এক মানুষ থেকে অন্য মানুষে ছড়ায় না।

টিটেনাস বা ধনুষ্টঙ্কারের টিকা দিয়ে ধনুষ্টঙ্কার প্রতিরোধ করা যেতে পারে। ক্ষত ভালভাবে পরিষ্কার করা উচিত এবং সকল মৃত দেহকোষ ও টিস্যু অপসারণ করা উচিত। যাদের ক্ষতর পরিমাপ উল্লেখযোগ্য এবং তিনটির কম টিকার ডোজ নেওয়া রয়েছে, তাদের টিকা এবং টিটেনাস ইমিউনো গ্লোবুলিন উভয়ই সুপারিশ করা হয়। সংক্রামিত ব্যক্তিদের চিকিৎসায়, টিটেনাস ইমিউন গ্লোবুলিন, বা তা অনুপলব্ধ হলে, ইন্ট্রাভেনাস ইমিউনোগ্লোবুলিন (IVIG) ব্যবহার করা হয়। খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণ করতে পেশী শিথিলকারী ঔষধি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কোন ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস প্রভাবিত হয়ে থাকলে যান্ত্রিক বায়ুচলাচল (মেকানিকাল ভেন্টিলেশন) প্রয়োজন হতে পারে।

ধনুষ্টঙ্কার পৃথিবীর সব জায়গায় দেখা যায় তবে গরম এবং আর্দ্র জলবায়ুতে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় যেখানে মাটি উচ্চ জৈব উপাদান সমৃদ্ধ। 2015 সালে বিশ্বব্যাপী প্রায় 209,000 সংক্রমণ এবং প্রায় 59,000 মৃত্যু হয়েছিল। যেখানে 1990 সালে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল 356,000 । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর প্রায় 30 জন ধনুষ্টঙ্কারে আক্রান্ত হন, যার প্রায় সবকটি ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে টিকা দেওয়া হয়নি। খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীতে হিপোক্রেটিস এই রোগের প্রাথমিক বর্ণনা করেছিলেন। 1884 সালে তুরিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তোনিও কার্লে এবং জর্জিও রাটোন দ্বারা রোগের কারণ নির্ধারণ করেন এবং 1924 সালে একটি টিকা তৈরি করা হয় ।

লক্ষণ ও উপসর্গ

সাধারনত ধনুষ্টঙ্কারের প্রথমিক উপসর্গ হিসেবে চোয়ালের পেশীতে মৃদু খিঁচুনি — যা লক-জ বা ট্রিসমাস নামেও পরিচিত।মুখের পেশীগুলিতেও এই খিচুনির প্রভাব দেখা যেতে পারে যার ফলে চেহারা এক বিশেষ রূপ নেয় যাকে রিসাস সার্ডোনিকাস বলা হয়। বুক, ঘাড়, পিঠ, পেট এবং নিতম্বের পেশী ও প্রভাবিত হতে পারে। পিঠের পেশীর খিঁচুনির কারণে পীঠ ধনুকাকৃতি হয়ে যায়- যাকে অপিস্টোটোনোস বলা হয়। কখনও কখনও খিঁচুনি যখন শ্বাস নিতে সাহায্যকারি পেশীগুলিকে প্রভাবিত করে, যার ফলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

দীর্ঘা পেশী ক্রিয়া ফলে অনেক সময় আকস্মিক, শক্তিশালী এবং বেদনাদায়ক পেশীসমূহর সংকোচনের ঘটে, যাকে "টিটানি" বলা হয়। এই পর্বগুলি অনেক সময় এত তীব্র হয় যে মাংসপেশী ছিড়ে বা হাড় ভেঙে (ফ্র্যাকচার) যেতেও পারে। অন্যান্য উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, অস্থিরতা, বিরক্তি, খেতে অসুবিধা, শ্বাসকষ্ট, প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া, প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং মলত্যাগের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা।

সুচিকিৎসার পরেও, ধনুষ্টঙ্কারে আক্রান্ত প্রায় 10% লোক মারা যায়। টিকা না দেওয়া ব্যক্তি এবং ৬০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে মৃত্যুর হার বেশি।

রোগজীবাণুর উন্মেষপর্ব

ধনুষ্টঙ্কারের উন্মেষপর্ব যদিও কয়েক মাস পর্যন্ত হতে পারে, তবে সাধারণত মোটামুটি দশ দিনের হয়ে থাকে। সাধারণভাবে, কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র থেকে আঘাতের স্থান যত বেশি দূরে, উন্মেষপর্ব তত বেশি| উন্মেষপর্ব যত কম সময়ের হয়, উপসর্গ তত বেশি গুরুতর হয়। ট্রিসমাস ন্যাসেন্টিয়ামে (অর্থাৎ নবজাতকের টিটেনাস), সাধারণত জন্মের ৪ থেকে ১৪ দিন পর (গড়ে প্রায় 7 দিন) লক্ষণগুলি দেখা যায়।

চিকিৎসাগত ভিত্তিতে, ধনুষ্টঙ্কার চারটি ভিন্ন রূপ বর্ণনা করা হয়েছে।

জেনেরালাইজড টিটেনাস

জেনেরালাইজড টিটেনাস হল ধনুষ্টঙ্কারের সবচেয়ে সাধারন প্রকার, যা প্রায় ৮0% কেস| এখানে লক্ষণগুলে সাধারণত অবরোহী ধারাতে প্রকাশ পেয়ে থাকে। প্রথম লক্ষণ হিসেবে দেখা দেয় ট্রিসমাস বা লক-জ, এবং মুখের খিঁচুনি যাকে রিসাস সার্ডোনিকাস বলে অবিহিত করা হয়ে থাকে| তারপরে ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, গিলতে অসুবিধা হওয়া, বুকের ও পায়ের মাংসপেশীগুলির অনমনীয়তা বা শক্ত হয়ে যাওয়া প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দেয়। অন্যান্য লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে উচ্চ তাপমাত্রা, ঘাম, উচ্চ রক্তচাপ এবং আকষ্মিক হৃদস্পন্দনের দ্রুততা। ঘন ঘন খিঁচুনি হতে পারে যা কয়েক মিনিটের জন্য স্থায়ী হয় এবং শরীরকে একটি বিশেষ আকৃতি প্রদান করে যাকে অপিস্টোটনোস বলা হয় । খিঁচুনি চার সপ্তাহ পর্যন্তও চলতে পারে এবং সম্পূর্ণ সুস্থ হতে কয়েক মাসও সময় লেগে যেতে পারে।

নবজাতকের ধনুষ্টঙ্কার / নিওনেটাল টিটেনাস

নবজাতকের ধনুষ্টঙ্কার বা নিওনেটাল টিটেনাস ( ট্রিসমাস নাসেন্টিয়াম ) হল জেনারালাইজড টিটেনাসেরই এক প্রকার, যা নবজাতকদের মধ্যে দেখা যায়, সাধারণত সেই সকল নবজাতকদের যাদের মায়েরা ধনুষ্টঙ্কারের টিকা নেয়নি। যদি মাকে ধনুষ্টঙ্কারের বিরুদ্ধে টিকা দেওয়া থাকে, তাহলে শিশুরা অক্রিয় অনাক্রম্যতা অর্জন করে এবং তাই সুরক্ষিত থাকে। এই সংক্রমন সাধারণত শিশুর না শুকানো নাভির অংশের মাধ্যমে ঘটে, বিশেষ করে যখন না শুকানো নাভির অংশ যদি জীবাণুমুক্ত নয় এমন যন্ত্র দিয়ে কাটা হয়ে থাকে। ১৯৯৮ সালের হিসাবে অনেক উন্নয়নশীল দেশে নবজাতকের ধনুষ্টঙ্কার খুব সাধারণ ব্যাপার ছিল এবং প্রায় 14% (২১৫,০০০) নবজাতকের মৃত্যুর জন্য দায়ী ছিল। ২০১০ সালে বিশ্বব্যাপী নবজাতক মৃত্যুর সংখ্যা ছিল প্রায় ৫৮,০০০ । একটি জনস্বাস্থ্য অভিযানের ফলস্বরূপ, নবজাতক টিটেনাস থেকে মৃত্যুর সংখ্যা ১৯৯০ এবং ২০১০ এর মধ্যে ৯০% হ্রাস পেয়েছে এবং ২০১৩ সালের মধ্যে ২৫টি দেশ ছাড়া সমস্ত দেশ থেকে এই রোগটি প্রায় নির্মূল করা গিয়েছে। নবজাতকের টিটেনাস বা প্রায় ধনুষ্টঙ্কার আজ উন্নত দেশগুলিতে বিরল।

আঞ্চলিক ধনুষ্টঙ্কার / লোকাল টিটেনাস

আঞ্চলিক ধনুষ্টঙ্কার বা লোকাল টিটেনাস ধনুষ্টঙ্কারের একটি অস্বাভাবিক রূপ, যেখানে আঘাতের স্থানের শারীরবৃত্তীয় অঞ্চলের পেশীগুলির একটানা সংকোচন দেখা যায়। এরকম সংকোচন অনেক সপ্তাহ ধরে চলতে পারে। স্থানীয় টিটেনাস সাধারণত অতটা গুরুতর হয় না; মাত্র ১% ক্ষেত্রেই মারাত্মক রূপ নেয়, তবে তা জেনেরালাইজড টিটেনাসের সূচনার আগের পর্যায়ে দেখা যায়।

সেফালিক টিটেনাস

সেফালিক টিটেনাস ধনুষ্টঙ্কারের বিরলতম রূপ (0.৯-৩% ক্ষেত্রে)| এটির প্রভাব মাথার স্নায়ু ও পেশীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। এটি সাধারণত মাথা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় আঘাত লাগা যেমন মাথার খুলি ফেটে যাওয়া, মাথায় কেটে যাওয়া, চোখে আঘাত লাগা, দাঁত তোলা, এবং ওটাইটিস মিডিয়া, ইত্যাদির পর দেখা দেয়| শরীরের অন্যান্য অংশে আঘাত এর পরেও এটিকে কখনও কখনও দেখা দিতেও দেখা গেছে| . এই রোগ বেশীর ভাগই মুখের স্নায়ুর পক্ষাঘাত দিয়ে প্রকাশ পায়, যার হেতু লক-জ, মুখের স্নায়ের পালসি বা টোসিস ( চোখের উপরের পাতা খুলে রাখতে না পারা) দেখা দেয়|;তবে অন্যান্য মস্তিস্কের স্নায়ুও প্রভাবিত হতে পারে। সেফালিক টিটেনাস রোগে সব সময় মাথায় সীমাবদ্ধ নাও থাকতে পারে। এর বিরলতার কারণে অনেক চিকিৎসক এই রোগের লক্ষণের সাথে পরিচিত নাও হতে পারেন এবং যথারীতি ধনুষ্টঙ্কার হিসাবে সন্দেহ নাও করতে পারেন। অনেক সময়ই লক্ষণগুলি প্রাথমিক আঘাত যার থেকে সংক্রমণ হয়েছে তার সাথে একযোগে বর্তমান থাকায় চিকিৎসা আরও জটিল হয়ে পরে। ধনুষ্টঙ্কারের অন্যান্য রূপের তুলনায় সেফালিক টিটেনাস মারাত্মক রূপ ধারন করার সম্ভাবনা বেশি, জেনারালাইজড টিটেনাসে রূপান্তর হবার প্রবনতা এই প্রকার ধনুষ্টঙ্কারে ১৫-৩০% কেস ফেটালিটি রেটের জন্য দায়ী।

কারণ

ক্লোস্ট্রিডিয়াম টিটানি তার এন্ডোস্পোরের কারণে টেকসই। ছবিতে চিত্রিত আছে একটি ব্যাকটেরিয়া একা, একটি স্পোর উৎপাদিত হচ্ছে, এবং স্পোর একা।

ধনুষ্টঙ্কার টিটেনাস ব্যাকটেরিয়া ক্লোস্ট্রিডিয়াম টেটানি থেকে হয়। ধনুষ্টঙ্কার একটি আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সমস্যা যার মূল কারণ হল সি. টেটানির এন্ডোস্পোরগুলির সর্বব্যাপী উপস্থিতি। এন্ডোস্পোরগুলি একটি খোঁচার ( ভেদনকারী আঘাত ) দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতের মাধ্যমেও শরীরে প্রবেশ করে যেতে পারে । সি  টেটানি একটি অ্যানেরোবিক বা অবাত ব্যাকটেরিয়াম হওয়ায় এটি এবং এর এন্ডোস্পোরগুলি অক্সিজেনেবিহীন পরিবেশে বৃদ্ধি পায় যথা একটি খোঁচা থেকে সৃষ্ট ক্ষত। অক্সিজেনের মাত্রার পরিবর্তনের সাথে, ড্রাম স্টিক-আকৃতির অন্তবীজগুলি দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।

রোগটি প্রায় শুধুমাত্র তাদের মধ্যে দেখা যাদের ঠিকমত টিকাকরণ সম্পূর্ণ হয়নি। এটি উষ্ণ, স্যাঁতসেঁতে জলবায়ুতে জৈব-পদার্থে সমৃদ্ধ মাটির জায়গাতে বেশি দেখা যায়। জৈবসার দেওয়া মাটিতে স্পোর থাকতে পারে, কারণ স্পোর ঘোড়া, ভেড়া, গবাদি পশু, কুকুর, বিড়াল, ইঁদুর, গিনিপিগ এবং মুরগির মতো বহু প্রাণীর অন্ত্রে ও মলে ব্যাপকভাবে উপস্থিত থাকে। কৃষি প্রধান অঞ্চলে, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ শরীরে এই জীবাণু বহন করে চলে।

স্পোরগুলি ত্বকের উপরিভাগে এবং দূষিত হেরোইনেও পাওয়া যেতে পারে। হেরোইন ব্যবহারকারীরা, বিশেষত যারা এটি ত্বকের নিচে ইনজেকট করেন, তাদের টিটেনাস সংক্রামনের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। কদাচিৎ, অস্ত্রোপচার, ইন্ট্রামাসকুলার ইনজেকশন, জটিল অস্থিভঙ্গ বা দাঁতের সংক্রমণের মাধ্যমে ধনুষ্টঙ্কারের সংক্রমন হতে পারে। পশুর কামড়ের মাধ্যমেও ধনুষ্টঙ্কার ছড়াতে পারে।

ধনুষ্টঙ্কারকে প্রায়ই মরচে, বিশেষত মরচে ধরা পেড়েক এর সাথে যুক্ত করা হয়ে থাকে| যদিও মরচে নিজে টিটেনাস সৃষ্টি করে না, তবে মরচে জমে থাকা বস্তুগুলি প্রায়শই বাইরে খোলা অবস্থায় থাকে বা অবাত ব্যাকটেরিয়ার আধিক্য যেখানে এমন জায়গায় পাওয়া যায়। মরচে ধরা ধাতুর রুক্ষ পৃষ্ঠ সি  টেটানি মিশে থাকা ধুলো-ময়লা ধারণ করে রাখে আর পেড়েক ধারালো বস্তু হওয়ার কারণে সহজেই ত্বককে ছিদ্র করে ফেলে এবং ক্ষতস্থানের মধ্যমে শরীরের গভীরে এন্ডোস্পোরের প্রবেশ ঘটায়। এন্ডোস্পোর হল একটি অ-বিপাকীয় প্রতিরোধী কাঠামো যা চরম পরিবেশেও বেঁচে থাকাতে সক্ষম, এবং যখন পর্যাপ্ত পরিবেশ পেলে বিপাক প্রক্রিয়া শুরু করে ও সংক্রমণ ঘটায়। তাই, পেড়েকের উপর পা রাখলে (মরচে ধরে হোক বা না হোক) ধনুষ্টঙ্কারের সংক্রমণ হতেই পারে|যেহেতু ত্বকের নিচের পরিবেশে অক্সিজেন কম থাকে (অবাত) এবং ছিদ্রকারী বস্তুটি এন্ডোস্পোরকে বৃদ্ধির উপযুক্ত এই পরিবেশে পৌঁছে দিতে পারে। এটি একটি সাধারণ ভুল ধারণা যে মরচে নিজেই কারণ এবং মরচেহীন পেড়কের খোঁচায় কোন ঝুঁকি নয়।

প্যাথোফিজিওলজি

টিটেনাস প্রতিবিষের সংস্পর্শে আসার আগে এবং পরে একটি নিউরোট্রান্সমিটার-ভরা গুটিকা। প্রতিবিষ VAMP প্রোটিনের বিভাজন ঘটায়, গুটিকার একীকরণ ও স্নায়ুসন্ধিতে নিউরোট্রান্সমিটার নিঃসরণকে বাধা দেয়।

টিটেনাস নিউরোটক্সিন (TeNT) স্নায়ু-মাংসপেশীর সংযোগস্থলের প্রাক-প্রান্তসন্নিকর্ষ ঝিল্লের সাথে আবদ্ধ হয়, অভ্যন্তরীকৃত হয় এবং অ্যাক্সন বেয়ে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে পৌঁছায় এখানে, এটি বেছে বেছে এন্ডোসাইটোসিসের মাধ্যমে নিরোধক স্নায়ুকোষের সাথে আবদ্ধ এবং পরিবাহিত হয়। এরপর এটি স্নায়ুকোষের মধ্যে গুটিকা ছেড়ে সাইটোসলের উদ্দেশ্যে অগ্রসর হয় ও সেখানে এটি ভেসিকল অ্যাসোসিয়েটেড মেমব্রেন প্রোটিন (VAMP) সিনাপটোব্রেভিনের, যা স্মল সিন্যাপটিক ভেসিকলের (SSV's) বা ক্ষুদ্র প্রান্তসন্নিকর্ষ গুটিকার ঝিল্লিদের একীকরণের জন্য প্রয়োজনীয়, বিভাজন ঘটায়। SSV নিউরোট্রান্সমিটারকে নিঃসরণের জন্য ঝিল্লিতে নিয়ে যায়, তাই এই প্রক্রিয়ার বাধাদানের মাধ্যমে নিউরোট্রান্সমিটারের নিঃসরণে বাধা দেয়।

ধনুষ্টঙ্কারের প্রতিবিষ বিশেষত নিরোধক স্নায়ুকোষ থেকে নিসৃত নিউরোট্রান্সমিটার GABA এবং গ্লাইসিন নিঃসরণে বাধা দেয়। এই নিউরোট্রান্সমিটারগুলি অত্যধিক সক্রিয় চেষ্টিয় স্নায়ুকোষগুলিকে প্রশমিত করে এবং সংকোচিত হওয়ার পর পেশীগুলিকে শিথিল করা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যখন নিরোধক স্নায়ুকোষগুলি তাদের নিউরোট্রান্সমিটারগুলি নিঃসরণ করতে অক্ষম হয়, তখন চেষ্টিয় স্নায়ুকোষগুলি অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পরে ও পেশীগুলি শিথিল হতে পারেনা। এই জন্যই ধনুষ্টঙ্কারের সংক্রমণে পেশীর খিঁচুনি ও স্পাস্টিক পক্ষাঘাত দেখা যায়।

ধনুষ্টঙ্কারের প্রতিবিষ, টেটানোস্পাসমিন, একটি ভারী চেইন ও একটি হাল্কা চেইন দ্বারা গঠিত। এর তিনটি ডোমেন রয়েছে, যার প্রতিটিই বিষক্রিয়ায় প্যাথোফিজিওলজিতে অবদান রাখে। ভারী চেইনের দুটি ডোমেন রয়েছে। হেভি চেইনের এন-টার্মিনালটি মেমব্রেন ট্রান্সলোকেশনে বা কোষঝিল্লি কে পার হতে সাহায্য করে এবং সি-টার্মিনাল টক্সিনকে সঠিক স্নায়ুকোষের নির্দিষ্ট রিসেপ্টর সাইট খুঁজে বের করতে সাহায্য করে। লাইট চেইন ডোমেইন নিরোধক স্নায়ুকোষের সাইটোসোলে পৌঁছে VAMP প্রোটিনকে বিভাজিত করে ।

টিটেনাস টোক্সিনের কার্যপ্রণালীকে প্রধানত চারটি ধাপে ভাগ করা যায়: স্নায়ুকোষের সাথে আবদ্ধ হওয়া, টক্সিনের অভ্যন্তরীণকরণ, কোষঝিল্লি পারাপার করা এবং VAMP এর বিভাজন।

স্নায়ুকোষনির্দিষ্ট বন্ধন

টক্সিন ক্ষতস্থান থেকে রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে স্নায়ু-মাংসপেশীর সংযোগস্থলের চেষ্টীয় স্নায়ুকোষের প্রাক-প্রান্তসন্নিকর্ষ ঝিল্লীর সাথে আবদ্ধ হয়। ভারী চেইনের সি-টার্মিনাল ডোমেন প্রাক-প্রান্তসন্নিকর্ষ ঝিল্লীর সঠিক গ্লাইকোপ্রোটিনগ্লাইকোলিপিডগুলিকে চিনে সঠিক স্থানে আবদ্ধ হতে সাহায্য করে। টক্সিনটি এরপর একটি এন্ডোসাইটিক গুটিকা হিসাবে স্নায়ুকোষে প্রবেশ করে অ্যাক্সন হয়ে , কোষ দেহ হয়ে মেরুদণ্ড এবং কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ডেনড্রাইটিক টার্মিনালে যায়। এর পর এটি সিনাপটিক ক্লেফ্টে বা প্রান্তসন্নিকর্ষ বিভাজিকায় নিসৃত হয় এবং চেষ্টীয় স্নায়ুকোষের সাথে যেমন পূর্বে আবদ্ধ হয়েছিলো তেমনি নিরোধক স্নায়ুকোষের প্রাক-প্রান্তসন্নিকর্ষ ঝিল্লীর সাথে আবদ্ধ হয়ে যায়।

অভ্যন্তীকরণ

ধনুষ্টঙ্কারের প্রতিবিষের এর এন্ডোসাইটোসিসের মাধ্যমে অভ্যন্তীকরণ হয়ে থাকে, এবার একটি অম্ল গুটিকায়। কোন এক অজানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, নিরোধল স্নায়ুকোষের ফায়ারিং দ্বারা সৃষ্ট ডিপোলারাইজেশন টক্সিনকে স্নায়ুকোষের ভিতরের গুটিকায় ভিতর টেনে নেয়।

কোষঝিল্লি পারাপার করা বা মেমব্রেন ট্রান্সলোকেশন

টক্সিনটির গুটিকার থেকে বাহির হয়ে কোন উপায়ে স্নায়ুর সাইটোসোলে যাওয়ার প্রয়োজন হয় অভিষ্টে কার্যকরী হতে। গুটিকা ঝিল্লীর কম পিএইচ টক্সিনের গঠনগত পরিবর্তন ঘটায়, জলে দ্রবণীয় ফর্ম থেকে হাইড্রোফোবিক ফর্মে রূপান্তরিত হয়। হাইড্রোফোবিক প্যাচগুলি উন্মোচিত হওয়ার সাথে সাথে, টক্সিন গুটিকা ঝিল্লীর মধ্যে গলে যেতে সক্ষম হয়ে ওঠে। টক্সিন ঝিল্লিতে একটি আয়ন চ্যানেল বা স্থূলানু প্রণালী গঠন করে যা অনির্দিষ্ট প্রকারের হয় Na +, K +, Ca 2+ এবং Cl স্থুলানুর জন্য । বিশেষজ্ঞদের এই ব্যপারে ঐকমত্য যে এই নতুন প্রণালীটি বিষের লাইট চেইনের গুটিকার ভিতর থেকে স্নায়ুকোষের সাইটোসোলে স্থানান্তরের সাথে জড়িত, তবে প্রক্রিয়াটি ভালভাবে না বোঝা গেছে না বিশেষজ্ঞ ঐক্যমত হতে পেরেছেন। প্রস্তাবিত আছে যে প্রণালীটি লাইট চেইনকে (নিম্ন পিএইচ পরিবেশ দ্বরা উন্মেলিত) টক্সিন ছিদ্রের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে যেতে দেয়, অথবা ছিদ্রটি স্থুলানু প্রবেশ ও বাহির করার মাধ্যমে ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল গ্রেডিয়েন্টে যথেষ্ট পরিবর্তন নিয়ে আসে ও গুটিকার অস্রবন-বিভাজন ঘটায় এবং গুটিকার মধ্যেকার সবকিছু ছড়িয়ে দেয়।

এনজাইমেটিক টার্গেট ক্লিভেজ উৎসেচক দ্বারা নির্দিষ্ট বিভাজন

ধনুষ্টঙ্কারের প্রতিবিষের হাল্কা চেইন একটি জিঙ্ক বা দস্তা-নির্ভর প্রোটিয়েজ । গবেষকরা অনুমান করেছিলেন যে এই জিঙ্ক প্রোটিয়েজ কাঠামো (His-Glu-Xaa-Xaa-His) লক্ষ্যনির্ভর বিভাজনের জন্য অপরিহার্য ছিল কিন্তু সম্প্রতি এটি পরীক্ষা করে নিশ্চিত করা গিয়েছে: ভারী ধাতু চেলেটর সাহায্যে স্নায়ুকোষ থেকে সমস্ত দস্তা অপসারণ করা হলে তখন টক্সিন কার্যক্ষমতাহীন হয়ে পরে , দস্তা পুনরায় যোগ করা হলেই টক্সিনটি আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে। লাইট চেইনটি VAMP এর সাথে আবদ্ধ হয়ে Gln 76 ও Phe 77 এর মাঝখান দিয়ে বিভাজন করে । VAMP ব্যতীত, চেষ্টিয় স্নায়ুকোষ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় নিউরোট্রান্সমিটার ধারণকারী গুটিকাগুলি ( GABA এবং glycine) উন্মুক্ত হয়না, যার ফলে চেষ্টিয় স্নায়ু ও পেশীর টানটান ভাব অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পরে।

রোগ নির্ণয়

বর্তমানে ধনুষ্টঙ্কারের নির্ণয়ের জন্য কোন রক্ত পরীক্ষা নেই। উপসর্গের উপস্থাপনার উপর ভিত্তি করে রোগ নির্ণয় করা হয়ে থাকে, ব্যাকটেরিয়ার পৃথকিকরনের উপর নির্ভরশীল নয়, শুধুমাত্র 30% ক্ষেত্রে ক্ষত থেকে ব্যাকটেরিয়াকে পুনরুদ্ধার করা যায় এবং টিটেনাসবিহীন লোকদের থেকে বিচ্ছিন্ন করা যেতে পারে। পরীক্ষাগার সি টিটানিকে শুধুমাত্র ইঁদুরে টেটানোস্পাজমিন উৎপাদনের মাধ্যমে সনাক্ত করা যায়। অন্য কোন রোগ নির্ণয় করা না গেলে, ও সম্প্রতি মাথার আঘাত লেগে থাকলে লক্ষণের ভিত্তিতে সেফালিক টিটেনাসের সম্ভবনা বিচার করা হয় ।

"স্প্যাটুলা টেস্ট" হল টিটেনাসের জন্য একটি ক্লিনিকাল পরীক্ষা যার মধ্যে একটি নরম-মাথার যন্ত্রের সাহায্যে পোস্টেরিয়র ফ্যারিঙ্কস বা গলবিলের পশ্চাত প্রাচীর স্পর্শ করা হয় ও তার প্রভাব পর্যবেক্ষণ করা হয়। চোয়ালের অনিচ্ছাকৃত সংকোচনকে ("স্প্যাটুলা" এর উপর কামড় দেওয়া) ইতিবাচক ফলাফল বলে ধরা হয় এবং গ্যাগ রিফ্লেক্স তথা ওয়াক তুলে বহিরাগত বস্তুকে বার করে দেবার চেষ্টাকে নেতিবাচক ফলাফল মানা হয়। দ্য আমেরিকান জার্নাল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিনের একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে, স্প্যাটুলা টেষ্ট উচ্চ নির্দিষ্টতা (শূন্য ভুল-ইতিবাচক পরীক্ষার ফলাফল) ও উচ্চ সংবেদনশীলতা (94% সংক্রামিত ব্যক্তি একটি ইতিবাচক উৎপন্ন করে) সমপন্ন একটি পরীক্ষা।

প্রতিরোধ

অন্যান্য সংক্রামক রোগের মত প্রাকৃতিকভাবে অর্জিত ধনুষ্টংকার থেকে আরোগ্য লাভ ধনুষ্টংকারের বিরূদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে না।টেটানোস্পাসমিন টক্সিনের অত্যন্ত ক্ষমতার সমপন্নতাই এর কারণ । টেটানোস্পাসমিন অনাক্রম্যতা প্রতিক্রিয়া উস্কে দেওয়ার আগেই প্রাণঘাতী প্রতিপন্ন হয়ে ওঠে।

টিটেনাস টক্সয়েড দিয়ে টিকাকরণের মাধ্যমে ধনুষ্টঙ্কার প্রতিরোধ করা যেতে পারে। সিডিসি সুপারিশ অনুযায়ী প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি দশ বছরে একবার করে গুণবর্ধকমাত্রার টিকা গ্রহন করা উচিৎ, | বহু জায়গায় স্ট্যান্ডার্ড কেয়ার প্র্যাকটিস বা স্বীকৃত শুশ্রষার রীতি হল যে এমন সেই সকল ব্যক্তিকেই গুণবর্ধকমাত্রায় টিকা প্রদান করা যিনি কোনওরূপ ছিদ্র ক্ষত নিয়ে এসেছেন ও অনিশ্চিত যে তিনি শেষ কবে টিকা নিয়েছেন বা যদি তিনি সারাজীবনে তিনবারের কম টিকা নিয়েছেন । গুণবর্ধকমাত্রা সাধারনত বর্তমান ক্ষত থেকে ধনিষ্টঙ্কারের সম্ভাব্য মারাত্মক হয়ে ওঠা প্রতিরোধ করতে পারবে না, কারণ ধনুষ্টঙ্কারের প্রতিরক্ষিকা তৈরি হতে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লেগে যায়।

সাত বছরের কম বয়সী শিশুদের, ধনুষ্টঙ্কারের টিকা প্রায়শই , ডিপিটি/ডিটিএপি ভ্যাকসিন এর মত একটি সম্মিলিত টিকা হিসাবে দেওয়া হয়, যার মধ্যে ডিপথেরিয়া এবং পের্টুসিসের বিরুদ্ধেও টিকা অন্তর্গত। সাত বছরের বেশি বয়সী শিশুদের ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য, টিডি টিকা (টেটেনাস এবং ডিপথেরিয়া) বা টিডিএপি (টেটেনাস, ডিপথেরিয়া এবং অ্যাসেলুলার পারটুসিস) সাধারণত ব্যবহৃত হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মাতৃত্বকালীন বা নবজাতকের ধনুষ্টঙ্কার নির্মূল করতে সক্ষম হলে দেশগুলিকে শংসাপত্র দেয়৷ শংসাপত্রের জন্য কমপক্ষে দুই বছর প্রতি ১,000 জীবিত জন্মে ১টিরও কম সংক্রমন হার প্রয়োজন। ১৯৯৮ সালে উগান্ডায়, নবজাতক শিশুদের মধ্যে ৩,৪৩৩ ধনুষ্টঙ্কারের ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছিল; এর মধ্যে ২,৪০৩ জন মারা গেছে। একটি বড় জনস্বাস্থ্য প্রচেষ্টার পরে, ২০১১ সালে উগান্ডা মা ও নবজাতকের ধনুষ্টঙ্কার নির্মূল করেছে বলে প্রত্যয়িত হয়েছিল।

পোস্ট-এক্সপোজার প্রফিল্যাক্সিস / রোগ-সংস্পর্শ পরবর্তী প্রতিকার

ধনুষ্টঙ্কারের সংস্পর্শে আসার ঘটনা সন্দেহ হলে টিটেনাস টক্সয়েড দেওয়া যেতে পারে টিটেনাস ইমিউনোগ্লোবুলিনের সাথে বা ব্যতীতেও দেওয়া যেতে পারে (এটিকে টিটেনাস অ্যান্টিবডি বা টিটেনাস অ্যান্টিটক্সিনও বলা হয়ে থাকে )। এটি ইন্ট্রাভেনাস থেরাপি অথবা ইন্ট্রামাসকুলার ইনজেকশন হিসাবে দেওয়া হয়ে থাকে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১১ বছর বয়সী বা তার বেশি বয়সী অ-গর্ভবতী ব্যক্তিদের কেউ যদি এইরূপ ঘটনার সম্মুখিন হন, তার জন্য নির্দেশিকাগুলি নিম্নরূপ:

টিকা দেওয়ার অবস্থা পরিষ্কার, ছোটখাটো ক্ষত অন্য সব ক্ষত
অজানা বা ৩ ডোজ এর কম টিটেনাস টক্সয়েড টিকা Tdap এবং ক্যাচ-আপ টিকা দেওয়ার সুপারিশ করুন Tdap এবং ক্যাচ-আপ টিকা দেওয়ার সুপারিশ করুন
টিটেনাস ইমিউনোগ্লোবুলিন
টিটেনাস টক্সয়েডের বা তার বেশি ডোজ এবং শেষ ডোজ ৫ বছরের কম সময়ের মধ্যে নেওয়া কোন ইঙ্গিত নেই কোন ইঙ্গিত নেই
টিটেনাস টক্সয়েডের ৩ বা তার বেশি ডোজ এবং শেষ ডোজ 5-10 বছর আগে নেও কোন ইঙ্গিত নেই Tdap (যদি এখনও প্রাপ্ত না হয়) বা Td
টিটেনাস টক্সয়েডের 3 বা তার বেশি ডোজ এবং শেষ ডোজ থেকে 10 বছরেরও বেশি সময় ধরে Tdap (যদি এখনও প্রাপ্ত না হয়) বা Td Tdap (যদি এখনও প্রাপ্ত না হয়) বা Td

চিকিৎসা

২০১২ তে ধনুষ্টঙ্কারে মৃত্যুহার প্রতি লক্ষে
  0–1
  1–2
  2–3
  4–8
  9–13
  14–28
  29–151

অনুগ্র বা মাইল্ড ধনুষ্টঙ্কার

ধনুষ্টঙ্কারের অনুগ্র হলে নিম্নোক্ত চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে:

গুরুতর টিটেনাস

গুরুতর ক্ষেত্রে রোগীকে ভর্তি করে নিবিড় পরিচর্যা ইন্টেন্সিভ কেয়ারে রাখতে হয়। অনুগ্র ধনুষ্টঙ্করের জন্য উপরোক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থাগুলি ছাড়াও:

  • হিউম্যান টিটেনাস ইমিউনোগ্লোবুলিন ইন্ট্রাথেকলি ইনজেকশন (যা অবস্থার উন্নতির হার 4% থেকে 35%তে বাড়িয়ে দিতে সক্ষম)
  • 3 থেকে 4 সপ্তাহের জন্য ট্র্যাকিওটমি এবং যান্ত্রিক বায়ুচলাচল (মেকানিকাল ভেন্টিলেশন)। শ্বাসনালীকে সুরক্ষিত করার জন্য ট্র্যাকিওটমি সুপারিশ করা হয় কারণ এন্ডোট্র্যাকিয়াল টিউবের উপস্থিতি খিঁচুনির উদ্দীপক হিসেবে কাজ করতে পারে।
  • ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সংমিশ্রণ, শিরার মাধ্যমে, খিঁচুনি এবং স্বায়ত্তশাসিত পেশীর অনিয়ন্ত্রিত অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনতে
  • একটানা ডায়াজেপাম IV
  • ধনুষ্টঙ্কারের স্বায়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের উপর প্রভাবগুলিকে সামলানো মুশকিল হতে পারে (পর্যাযক্রমে উচ্চ ও নিম্ন রক্তচাপ / জ্বরঅবোষ্ণতা ) এর জন্য IV ল্যাবেটালল, ম্যাগনেসিয়াম, ক্লোনিডিন বা নিফেডিপিন প্রয়োজন হতে পারে

মাংশপেশীর খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণের জন্য ডায়াজেপাম বা অন্যান্য পেশী শিথিলকারী ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। চরম ক্ষেত্রে কিউরারে -জাতীয় ওষুধ দিয়ে ব্যক্তিকে অসাড় করে যান্ত্রিক ভাবে বায়ুচলাচল নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন হতে পারে।

ধনুষ্টঙ্কারের আক্রমনের পর জীবিত থাকার জন্য, শ্বাসনালী তথা শ্বাসক্রিয়া রক্ষণাবেক্ষণ এবং ঠিক পুষ্টি প্রয়োজন। ৩৫০০ থেকে ৪০০০ ক্যালোরি এবং কমপক্ষে 150 g প্রোটিন প্রতিদিন দেওয়া হয়, প্রায়শই তরল আকারে একটি টিউবের মাধ্যমে সরাসরি খাদ্যনালীতে ( পারকিউটেনিয়াস এন্ডোস্কোপিক গ্যাস্ট্রোস্টমি ), বা শিরার মাধ্যমে ( প্যারেন্টেরাল নিউট্রিশন )। এইরকম উচ্চ-ক্যালরিযুক্ত খাদ্য প্রয়োজন হয় পেশীর বর্ধিত কার্যকলাপে সৃষ্ট বিপাকীয় ধকলের জন্য। শরীরকে নষ্ট হয়ে যাওয়া স্নায়ুর অ্যাক্সন টার্মিনালগুলিকে পুনরায় তৈরি করতে হয় আর তাই সম্পূর্ণ সুস্থ হতে ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ সময় লেগে যায়।

অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে সাধারনত মেট্রোনিডাজল ব্যবহার করা হয় । এটি শিরাপথে, মুখ দিয়ে বা মলদ্বার দিয়ে দেওয়া যেতে পারে। পেনিসিলিনও একই রকম কার্যকারি, কিন্তু কেউ কেউ উদ্বেগ প্রকাশ করে থাকেন যে এটি GABA রিসেপ্টরকে, যা ইতিমধ্যেই টেটানোস্পাসমিন দ্বারা প্রভাবিত, বাধা দেয়, ও খিঁচুনির উদ্রেক করে।

এপিডেমিওলজি

প্রতি 100,000 টিটেনাসের জন্য অক্ষমতা-সামঞ্জস্যপূর্ণ জীবন বছর 2004 সালে বাসিন্দারা। 
  no data
  ≤10
  10-25
  25-50
  50-75
  75-100
  100-125
  125-150
  150-200
  200-250
  250-500
  500-750
  ≥750

২০১৩ সালে ধনুষ্টঙ্কার প্রায় ৫৯,০০০ মৃত্যুর কারণ হয়েছিল - ১৯৯০ সালে যা ছিল ৩৫৬,০০০। ধনুষ্টঙ্কার - বিশেষত নবজাতকদের, - অ-শিল্পায়িত দেশগুলির একটি উল্লেখযোগ্য জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসাবে আজও রয়ে গেছে| ২০০৮ সালে নবজাতকদের ধনুষ্টঙ্কারের ফলে বিশ্বব্যাপী ৫৯,০০০ নবজাতকের মৃত্যুর হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, ২০০০ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ৩১টি কেস নথিভুক্ত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় সব ক্ষেত্রেই এমন ব্যক্তিরাই আক্রান্ত হয়েছে যারা হয় টিকাগ্রহন একেবারেই করেনি নয় টিকার কার্যকাল অনেক আগেই পেরিয়ে এসেছে।

ইতিহাস

প্রাচীন সম্প্রদায় ও সভ্যতারা ধনুষ্টঙ্কার সুপরিচিত ছিল, এরা ক্ষতর সাথে মাংশপেশীর মারাত্মক খিঁচুনি মধ্যেকার সম্পর্কর ব্যপারে অবগত ছিল। ১৮৮৪ সালে, আর্থার নিকোলাইয়ের মুক্ত-জীবিত, অবাত মাটির ব্যাকটেরিয়া থেকে স্ট্রিকানিনসাদৃশ ধনুষ্টঙ্কারের প্রতিবিষকে বিচ্ছিন্ন করেছিলেন। ১৮৮৪ সালে তুরিন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই প্যাথলজিস্ট আন্তোনিও কার্ল এবং জর্জিও রাটোন প্রথমবারের মতো ধনুষ্টঙ্কারের সংক্রমণযোগ্যতা প্রদর্শন করে রোগের কারণতথ্য আরও পরিস্ফুট, করেন। তারা খরগোশের সায়াটিক নার্ভে মারনাপন্ন ধনুষ্টঙ্কারের রুগীর পূঁজ ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রবেশ করিয়ে ধনুষ্টঙ্কার রোগ তৈরি করেন ও ধনুষ্টঙ্কারের ছড়িয়ে পড়ার সময়কার স্নায়ুর প্রতিবর্ত ক্রীয়া পরীক্ষা করেতে থাকেন।

১৮৯১ সালে, ধনুষ্টঙ্কার আক্রান্ত একজন ব্যক্তির দেহ থেকে কিতাসাতো শিবাসাবুরো সি. টিটানি কে আলাদা করেন, এবং পরবর্তীকালে দেখিয়েছিলেন যে প্রাণীদেহে ইনজেকশনের মাধ্যমে এটি কে প্রবেশ করালে সেই প্রাণী রোগাক্রান্ত হয়ে পরে ও নির্দিষ্ট অ্যান্টিবডি বা প্রতিরক্ষিকা দ্বারা সৃষ্ট প্রতিবিষকে নিস্ক্রিয় করা যায়। ১৮৯৭ সালে, এডমন্ড নোকার্ড দেখিয়েছিলেন যে টিটেনাস অ্যান্টিটক্সিন মানুষের মধ্যে পরোক্ষ অনাক্রম্যতা প্ররোচিত করে এবং এটি ধনুষ্টঙ্কারের প্রতিরোধ ও চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। ১৯২৪ সালে পি. ডেসকম্বে টিটেনাস টক্সয়েড টিকা তৈরি করেন,যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুদ্ধের ক্ষত থেকে ধনুষ্টঙ্কার হওয়া প্রতিরোধে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল।

ব্যুৎপত্তি

টিটেনাস শব্দটি এসেছে প্রাচীন গ্রিকτέτανος tetanos "taut" থেকে, যা আবার প্রাচীন গ্রিকτείνειν teinein "to stretch" থেকে এসেছে.

গবেষণা

এ ব্যপারে কোনও পর্যাপ্ত প্রমান নেই যে ভিটামিন সি দ্বারা ধনুষ্টঙ্কারের চিকিৎসা বা প্রতিরোধ করা যায় । এটির কারন, অন্তত আংশিকভাবে, এই যে পূর্বের সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষা যেখানে ভিটামিন সি ও ধনুষ্টঙ্কারের চিকিৎসার মধ্যে সম্ভাব্য সংযোগ খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে তা সবই অতি নিম্নমানের ছিল।

আরো দেখুন

  • রেনশ সেল
  • টিটানাইজড অবস্থা
  • টেটানোস্পাসমিন

Новое сообщение