Продолжая использовать сайт, вы даете свое согласие на работу с этими файлами.
ধর্ম ও স্কিৎসোফ্রেনিয়া
ধর্ম এবং স্কিৎজোফ্রেনিয়ার মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক মনোস্তাত্ত্বিকদের কাছে আগ্রহের জায়গায় পরিণত হয়েছে। কারণ ধর্মীয় অভিজ্ঞতা এবং মনোব্যাধির মধ্যে সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। ধর্মীয় অভিজ্ঞতার সাথে প্রায়সময়ই শ্রাব্য অমূলবেদন (হ্যালুসিনেশন) এবং/অথবা দর্শন অমূলবেদনের সংযোগ খুঁজে পাওয়া যায় এবং স্কিৎসোফ্রেনিয়ার যেসব রোগী এই অভিজ্ঞতা উপলব্ধ করে; তাদের একইরকম অমূলবেদন (হ্যালুসিনেশন) হয়। বিশ্বাসের যে বিশাল রকম পরিসর এই পরিসরকে আধুনিক চিকিৎসকরা ভ্রান্তি (ইংরেজি: Delusion) হিসেবে বিবেচনা করেন। সাধারণভাবে বলতে গেলে, "স্কিৎসোফ্রেনিয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধিতে ও এর প্রতিরক্ষা উভয়তেই" ধর্মের প্রভাব আছে।
চিকিৎসকদের প্রতিবেদন অনুসারে স্কিৎসোফ্রেনিয়ার রোগীরা বিভিন্ন বিশ্বাস লালন করে থাকে। তার মধ্যে একটা সাধারণ বিশ্বাস হলোঃ তারা ঈশ্বরের দ্বারা আশীর্বাদপুষ্ট অথবা তারা নবী- যাদের সাথে সরাসরি ঈশ্বর কথা বলেন অথবা তাদের উপর ভুত প্রেত ভর করে তাদের পরিচালনা করছে। এরকম হরেক রকম বিভ্রান্তি মানুষ তৈরী করে থাকে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া স্কিৎসোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের উপর করা একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে ২৪ শতাংশ স্কিৎসোফ্রেনিয়ার রোগী ধর্মীয় ভ্রান্তির শিকার।
বহু জাতীয় সংস্কৃতির উপর করা গবেষণা থেকে দেখা গিয়েছে যে, যেসব মানুষ নিজেদের খ্রিষ্টান বলে পরিচয় দেয় এবং ইউরোপ অথবা উত্তর আমেরিকার মত খ্রিষ্টান প্রধান দেশে বসবাসকারী বাস্তবতাবিবর্জিত ধর্মীয় বিশ্বাসীদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে স্কিৎসোফ্রেনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি দেখা যায়। তুলনামুলক বিচারে দেখা গিয়েছে, জাপানে স্কিৎসোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চারপাশে লজ্জ্বা, অপবাদ ছড়ানো হচ্ছে এরকম বিভ্রান্তি বেশি দেখা যায় এবং পাকিস্তানের স্কিৎসোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে আত্মীয় ও প্রতিবেশীরা ক্ষতি করবে, এরকম বিভ্রান্তিতে তারা বেশি ভোগে, এমনটা দেখা যায়। এরকম বিভ্রান্তিকে প্যারানোয়িয়া বলে।
প্রেক্ষাপট
স্কিৎসোফ্রেনিয়া একটি জটিল মনোব্যাধী, এর লক্ষণ হিসেবে দেখা যায়, এরা অপ্রাসঙ্গিক কথা বলে, হেলুসিনেশন, বিভ্রান্তির মধ্যে দিয়ে যায়, নিজেকে সমাজ থেকে গুটিয়ে ফেলে, কথাবার্তায় অসংলগ্নতা দেখা যায়। স্কিৎসোফ্রেনিয়ার কারণ পরিষ্কার না, তবে অনুমেয় এটির সাথে জিনগত সংযোগ আছে। পরিবারের কারো এটি থাকলে, অন্য কোনো সদস্যের এটি হওয়ার দৃঢ় সম্ভাবনা আছে। এই মনোবৈকল্যের সাথে সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক ফ্যাক্টর জড়িত, এই মনোবৈকল্য (ডিসঅর্ডার) বেড়ে যেতে পারে যদি উচ্চ পীড়নের (স্ট্রেস) মধ্য দিয়ে ব্যক্তি অতিবাহিত হয়। স্নায়ুবিজ্ঞানীরা দেখেছেন, যে স্কিৎসোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত মানুষদের মস্তিষ্কের ভেন্ট্রিকল সুস্থ স্বাভাবিক মস্তিষ্কের তুলনায় বড় (ফ্লুয়েড পুর্ণ ক্যাভিটি) হয়। ধারণা করা হয় স্নায়ুকোষ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার দরুন এমনটা হয়। এর লক্ষণ শৈশবেই দেখা যাওয়া শুরু করে। একটি শিশুর স্কিৎসোফ্রেনিয়ার চিকিৎসা নজিরবিহীন, কারণ শিশুর ক্রমবিকাশের সময় কোন ধরনের ভ্রান্ত বিশ্বাস ও ভাবনা তার মনে প্রোথিত হচ্ছে এবং কোন ভাবনা ও বিশ্বাসের সাথে স্কিৎসোফ্রেনিয়ার সংযোগ আছে, তা নির্নেয় করা কষ্টসাধ্য।মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসা (যাকে সচরাচর এন্টিসাইকোটিক বা মনোব্যাধী প্রতিরোধী বলা হয়) এবং থেরাপির মাধ্যমে স্কিৎসোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি কর্মক্ষম এবং সফল জীবন অতিবাহিত করতে পারে।
স্কিৎসোফ্রেনিয়ার চিকিৎসায় ধর্মের ভূমিকা
গবেষণা থেকে দেখা গিয়েছে যে, স্কিৎসোফ্রেনিয়ায় যারা আক্রান্ত হয়, তাদের জন্য ধর্মকে ব্যবহার করে চিকিৎসা করলে ফলটা ভালোই আসে। গবেষণা থেকে পাশাপাশি এও দেখা গিয়েছে যে, ধর্মকে ব্যবহার করে এধরনের মনোবৈকল্যের চিকিৎসায় হয় কার্যকরী ফল আনে অথবা সে ধর্মই এর চিকিৎসার পথে অন্তরায় হয়ে যায়। বিশেষ করে যারা ধর্মীয় সম্প্রদায়ে সক্রিয় থাকে; তাদের জন্য ধর্ম, এ মনোবৈকল্যের মোকাবিলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটা নির্ণয় করা কঠিন একজন ব্যক্তির ধর্মীয় অভিজ্ঞতার গল্প সত্য; নাকি অসুস্থতার ইতিবাচক লক্ষণ। এ ক্ষেত্রে একজন দক্ষ ও নির্ভরযোগ্য থেরাপিস্টই এধরনের রোগীকে সাহায্য করতে পারে। একজন থেরাপিস্ট একজনের চিকিৎসায় ধর্মকে ব্যবহার করতেই পারেন। এটা সামগ্রিকভাবে সম্ভব, একজন চিকিৎসক কাটা দিয়ে কাটা তোলার মত করে, ধর্মীয় বিভ্রান্তির কারণে যারা এই হেলুসিনেশনে ভোগে; তাদেরকে সুস্থ করতে ধর্মের প্রয়োগ করতে পারেন। যারা গীর্জায় নিয়মিত প্রার্থনা করেন, এবং এধরনের ডিসঅর্ডারে ভুগেন, প্রতিবেদন অনুসারে মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসার পর, তাদের জীবনে প্রভুত পরিবর্তন এসেছে। তারা বাস্তবতার সামনাসামনি হওয়ার পরিবর্তে ধর্মকে আশার উৎস হিসেবে বেশি দেখে।
স্কিৎসোফ্রেনিয়ার সাথে ধর্মের সংযোগ
স্কিৎসোফ্রেনিয়া পরিবেশগত ফ্যাক্টর, সুনির্দিষ্ট মানসিক চাপ, গভীর মানসিক পীড়া এবং অস্বস্তিকর ঘটনার দিরুণ হতে পারে। এটা সম্ভাব্য ধর্ম; স্কিজোফ্রেনিয়া সৃষ্টিতে একটি নিয়ামক ভূমিকা পালন করে। ধর্ম প্রকৃতিতে যে স্বাভাবিক ঘটনা ঘটে তাকে অতিক্রম করে কিছু অলৌকিক কল্পনা করতে উৎসাহিত করে। ধর্মীয় অভিজ্ঞতা প্রত্যক্ষ করার পর তারা এমন কিছু কল্পনা করতে শুরু করে; যা হয়তো তাদের জন্য সুরক্ষিত নয়। কারণ ধর্ম একজন বিশ্বাসীকে তার সচরাচর ভাবনাকে বাদ দিয়ে সম্ভব-অসম্ভব ঘটনাকে কল্পনা করতে শেখায়। ফলে তারা বাস্তববাদী চিন্তা বাদ দিয়ে অলৌকিক কল্পনা করা শুরু করে; যা মনোজগতে একটা সুগভীর প্রভাব ফেলতে পারে। ধর্মে-বিশ্বাসীরা যখনই স্কিৎসোফ্রেনিয়া আক্রান্ত হয় তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে; তারা নিজেদেরকে ঈশ্বরের প্রতিনিধি বা ঈশ্বরের ভক্ত; যার সাথে ঈশ্বর কথা বলেন অথবা ধর্মীয় দেবতা অথবা মেজাই হিসেবে চিন্তা করে। এইধরনের লক্ষণগুলো পরবর্তীতে উগ্র চরিত্রের সূচনা করতে পারে; কারণ তারা ধর্মীয় গ্রন্থ কে আক্ষরিকভাবে না নিয়ে ভাবার্থভাবে নেয় এবং মনে করে ধর্মে যে সংঘর্ষের কথা বলা হয়েছে, তাদেরকে তার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে হবে। কিছু কিছু ঘটনার ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে যে, স্কিৎসোফ্রেনিয়ার সেসব রোগীরা অনেক বেশি পীড়া অনুভব করে; যদি তারা মনে করে তাদের এ কষ্ট ঈশ্বরপ্রদত্ত শাস্তি। ধর্মকে কীভাবে দেখে তার উপর এটা অনেকটা নির্ভর করে। স্কিৎজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত রোগী যদি ধর্মকে গভীরভাবে বিবেচনা করে এবং তার কষ্টকে ঈশ্বরের শাস্তি হিসেবে চিন্তা করে, তবে এ হেন গভীর বিশ্বাসের দরুন সে অসাড় হয়ে যেতে পারে; যা তার জন্যে যথেষ্ট ক্ষতিকর। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, কোনো কোনো স্কিৎজোফ্রেনিয়া আক্রান্ত রোগী মনে করে; তারা যা দেখছে তা ঐশ্বরিক অভিজ্ঞতা। এই অভিজ্ঞতা বারবার দর্শনের জন্য সে রোগ থেকে মুক্ত হওয়ার যেকোন চিকিৎসাকে প্রত্যাখ্যান করে। গবেষণা থেকে দেখা গিয়েছে, যে সমস্ত ধর্মীয় বিশ্বাসী রোগীরা সিৎজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হয়; তারা স্কিৎসোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত না হওয়া ধার্মিকদের তুলনায়, অধিকতর ধার্মিক। এটাও দেখা গিয়েছে যে, যারা ধর্মীয় বিশ্বাসী হওয়ার সাথে সাথে বিভ্রান্তির শিকার হয়; তারা এর চিকিৎসা দীর্ঘসময় ধরে চালিয়ে যান না।