Мы используем файлы cookie.
Продолжая использовать сайт, вы даете свое согласие на работу с этими файлами.
ধর্ম সম্পর্কিত বিবর্তনগত মনোবিজ্ঞান

ধর্ম সম্পর্কিত বিবর্তনগত মনোবিজ্ঞান

Подписчиков: 0, рейтинг: 0

বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের নীতি ব্যবহার করে ধর্মীয় বিশ্বাসকে ব্যাখ্যা করার যে পাঠ তাকেই ধর্মের উৎপত্তি বিষয়ক বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান বলা হয়। ধর্মের মনস্তত্ত্বকে ব্যাখ্যা করার জন্য একটি ধাপ। অন্যান্য জৈবিক অঙ্গের কার্যক্রমের মত মস্তিষ্কের যে কার্যক্রমেরও জিনগত ভিত্তি আছে, বলে অনুমান করা হয় এবং বিবর্তনপ্রাকৃতিক নির্বাচনের ফলে মস্তিষ্কের কার্যক্রমে প্রভাব পরে। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানীরা মস্তিষ্কের এই বোধিগত কার্যক্রম সম্পর্কে বিশেষ করে এই ক্ষেত্রে ধর্ম সম্পর্কে বুঝার জন্য প্রয়াস করেন। তারা ধর্ম কীভাবে টিকে রয়েছে এবং মানুষের সাথে এর উপযোগিতা কতটুকু এবিষয় সম্বন্ধে জানার জন্য গবেষণা চালান।

বিবর্তনের গঠনপ্রক্রিয়া

বিজ্ঞানীদের মধ্যে একটা বিষয়ে মতৈক্য দেখা যায় যে, মানুষের ইতিহাসে ধর্মের বিবর্তন বেশ পুর্বেই দেখা গিয়েছে। তবে ধর্মের কীভাবে বিবর্তন হলো, এই বিষয়ে বিজ্ঞানীরা ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারেননি।টেমপ্লেট:Citation neded এই বিষয়ে দুইটি মত প্রচলিত আছে। একটি হলোঃ বিবর্তনের ফলে প্রাকতিক নির্বাচনের কারণে ধর্মের নিজে নিজে বিবর্তন এবং পরিবেশের সাথে তাল মিলিয়ে অভিযোজন হয়েছে, যার ফলে বিবর্তন গত কিছু সুবিধা ধর্ম পেয়েছে। আরেকটি বিকল্প মত হলোঃ ধর্মীয় বিশ্বাস এবং স্বভাবের কারণ হয়তোবা অন্যান্য অভিযোজিত কোনো লক্ষণের উপজাত হিসেবে উৎপন্ন হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে যে প্রাকৃতিক নির্বাচনের কথা বলা হয়, তার মধ্য দিয়ে হয়তো ধর্মকে যেতে হয় নি।

ধর্মীয় স্বভাবের কারণে সুনির্দিষ্ট কিছু ক্ষতি হয়, যেমনঃ কৌমারব্রত, বিপজ্জনক নিয়মকানুন অথবা ধর্মীয় রীতিনীতি বা প্রার্থনা করতে গিয়ে সময় অপচয় করা, যা হয়তো অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যেত।এসব দেখে যুক্তির দিক থেকে চিন্তা করতে গেলে বরং এটাই বলা যায়, প্রাকৃতিক নির্বাচনের তো ধর্মের বিরুদ্ধে কাজ করার কথা, কিন্তু ধর্মের এত বছর পরেও টিকে যাবার তাহলে কারণ কী? অর্থাৎ এথেকে বলা যায়, ধর্ম অথবা অন্য কোনো কিছু এমনভাবে কাজ করছে, যার ফলে  প্রাকৃতিক নির্বাচনের কারণে ধর্ম সুবিধা লাভ করছে।

ধর্মের অভিযোজন

রিচার্ড সোসিশ (Richard Sosis) এবং কানাডেসি আলকোর্টা (Candace Alcorta) ধর্মের অভিযোজনিক নীতি নিয়ে আলোচনা করেন।

বিভিন্ন ধরনের "সামাজিক সংহতি তত্ব" (social solidarity theories) অনুযায়ী ধর্ম বিবর্তিত হয়েছে গ্রুপ বা দলের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক ও ভ্রার্তৃত্ব তৈরীর জন্য। গ্রুপ সদস্যদের মধ্যে সাধারণ সম্পর্ক প্রত্যেকের জন্য সুবিধা বয়ে আনে, যার ফলে প্রত্যেকেরই টিকে থাকার সুবিধা ও প্রজনন গত সুবিধা বৃদ্ধি পায়। এই সুযোগই সহযোজনগত সুবিধা থেকে ব্যায়বহুল নিয়ম উভয়কে সুবিধা দেয়।

এইযে সামাজিক সংহতি মুলক তত্ব তা ধর্মের অনেক কঠোর (তীব্র কষ্টদায়ক) ও বিপজ্জনক স্বভাবকে ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করে। ব্যয়বহুল সংকেতদায়ী তত্ব ধর্মীয় নীতিগুলো জনগণের সামনেই থাকে, ফলে তাকে নকল করা প্রায় অসম্ভব।(একারণে ধর্মের অনেক কঠোর নিয়মকে ভিন্ন পথে বাতিল করতে হয়, যেমনঃ হিন্দু ধর্মে সতীদাহ প্রথা, ইসলাম ধর্মের বহুবিবাহ বা দাসীদের সাথে যৌনসঙ্গমকে ধর্মীয় নিয়ম দিয়েই বাতিল করা সম্ভবপর নয়) তাই এককভাবে কোনো কিছু না করে দলগত ভাবে কাজ করলে ধর্মের কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়মের সাথে আপোষ করা যায়। কারণ ধর্মের সকল নিয়মকে হালকাভাবে নেওয়া যায় না। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে একসাথে বাস করাটা একটা চমৎকার উদাহরণ । রিচার্ড সোসিশ, হাওয়ার্ড সি. ক্রেস এবং জেমস এস. বুস্টার একটি ক্রস কালচারাল জরিপ করেন, যা দেখায় সমাজে যেসব পুরুষ যুদ্ধের সাথে সংযুক্ত হয়, তারা দেখা যায় নানারকম কঠিন ধর্মীয় রীতি পালনে বেশি উদ্যোগী হয়।

গবেষণা দেখিয়েছে, ধর্ম পালনের সাথে দীর্ঘজীবন আর স্বাস্থ্যের একটা সরাসরি সংযোগ রয়েছে। যদিও এ গবেষণাটি ছিল বিতর্কিত। হ্যারল্ড জি. কোয়েনিগ এবং হার্ভে জে. কোহেন ১০০টি গবেষণার প্রমাণ সাপেক্ষে এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বলেছেন যে, মানুষের স্বাস্থের উন্নয়নের জন্য ধর্মের যে প্রভাব, তা ৭৯ শতাংশ ক্ষেত্রে পজেটিভ (অর্থাৎ ৭৯ শতাংশ ক্ষেত্রে ধর্মের কারণে মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে)। এই গবেষণাটা মিডিয়াতে জনপ্রিয় হয়ে গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে NPR(বেতার প্রোগ্রাম) মিয়ামির অধ্যাপক গেইল ইরনসনকে (Gail Ironson) উদ্ধৃত করে বলে, গবেষকরা দেখিয়েছেন ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখলে যারা এইচআইভির রোগী, তাদের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ কারী কোষের সক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং ধর্মে গভীরভাবে আস্থাকারীরা ভাইরাসের আক্রমণ হওয়ার পুর্বেই বুঝতে পারেন। যাইহোক, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ড.রিচার্ড পি.স্লোয়ান নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেন যে"... এমন কোনো শক্তিশালি প্রমাণ নেই, যার ফলে আমরা বলতে পারি, ধর্মের সাথে শরীর স্বাস্থ্যের কোনো সংযোগ আছে।" যে গবেষণায় ধর্মের সাথে স্বাস্থ্যের সংযোগের বিষয় উঠে এসেছে, তা নিয়ে এখনো বিতর্ক আছে এবং তারা কোনো সরাসরি সম্পর্ক দেখাতে পারে নি, যার ফলে এটা প্রমাণিত হয়, ধর্মের সাথে স্বাস্থ্যের সংযোগ আছে। মার্ক স্টিবিচ দাবী করেছেন; ধর্মের সাথে স্বাস্থ্যের সরাসরি সংযোগ তো আছে, কিন্তু এর কারণ কী অজানা।

উপজাত হিসেবে ধর্ম

উপজাত: ফ্যাক্টরিতে মুলত সাবানায়ন পদ্ধতিতে সাবান তৈরী করা হয়, কিন্তু ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও গ্লিসারিন তৈরী হয়। এই যে সাবানের পাশাপাশি গ্লিসারিন উৎপাদিত হলো, এই গ্লিসারিনই হলো উপজাত। অর্থাৎ, কোনো সিস্টেম যদি কোনো দ্রব্য উৎপাদন করতে থাকে, এবং কাঙ্ক্ষিত দ্রব্যের সাথে সাথে ভিন্ন গুণাগুণ বিশিষ্ট অন্য দ্রব্য উৎপাদিত হলে সে দ্রব্যটাই উপজাত।

স্টিফেন জে গুল্ড ধর্মকে এক্সাপটেশন বা স্প্যান্ড্রেলের একটি উদাহরণ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানে এক্সাপটেশন বলতে, কোন বৈশিষ্ট্যের (trait) বিবর্তনের ক্ষেত্রে যদি বৈশিষ্ট্যেটির সম্পাদিত কাজের (function) পরিবর্তন হয়, তবে তাকে এক্সাপটেশন বলে। যেমন একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য বিশেষ কোন কার্য সম্পাদিত করতে পারে বলে কোন প্রজাতিতে বৈশিষ্ট্যটি বিবর্তিত হতে পারে, কিন্তু পরবর্তীকালে সেই বৈশিষ্ট্যটি পূর্বোক্ত কার্যের ভিন্ন কোন কার্য সম্পাদিত করতে পারে যা উক্ত বৈশিষ্ট্যের বিবর্তনগত প্রয়োজনীয়তার সাথে সম্পর্কযুক্ত নাও হতে পারে। বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানে স্প্যান্ড্রেল বলতে একটি ফিনোটাইপিক (শারীরগত) বৈশিষ্ট্য বোঝায় যা প্রাকৃতিক নির্বাচন (natural selection) এর ফলস্বরূপ বিবর্তিত না হয়ে, অন্য কোন বৈশিষ্ট্যের উপজাত (byproduct - প্রধান ফলাফল ছাড়াও অতিরিক্ত ফলাফল) হয়ে থাকে। এই কথাটি বললেও, স্টিফেন জে এটা নির্ধারণ করতে পারেন নি যে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে ঠিক কোন বৈশিষ্ট্যের বিবর্তনের জন্য ধর্ম আমাদের মধ্যে একটি উপজাত (spandrel) বা কোন বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তিত সম্পাদিত কার্য (exaptation) হিসেবে বর্তমান রয়েছে। যাইহোক, তিনি ফ্রয়েড (Freud's) এর প্রস্তাবনাকেই ব্যবহার করেছেন। সে প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, আমাদের বিশাল মস্তিষ্ক বিবর্তিত হয়েছে ভিন্ন কারণে, কিন্তু পরবর্তীতে তা সচেতনতা বা চিন্তা করার কাজে (consciousness) ব্যবহৃত হয়। এই সচেতনতাই মানুষকে ব্যক্তিগত নৈতিকতার সাথে ডিল করতে বাধ্য করে। তাই মনে করা হয়, এই নৈতিকতা সৃষ্টির জন্যই উপজাত হিসেবে ধর্মের সৃষ্টি হয়েছে।

অন্যন্য গবেষকরা ধর্মের উৎপত্তির জন্য প্রভাবক হিসেবে কাজ করে এরকম সুনির্দিষ্ট কিছু কার্যক্রম প্রস্তাব করেছেন। মানুষে এই ধারণা তৈরী হওয়া, তাদের অপরাধ- অন্যায়ের কারণেই অদৃশ্য কেও তাদের শাস্তি স্বরুপ ক্ষতি করতে পারে(দেখুনঃ agent detection), তাদের মধ্যে কোনো কিছু (প্রাকৃতিক নানাবিধ ঘটনা) ঘটলে তা কেন হচ্ছে, এর পিছনে কারণ কী, এই বোধ সৃষ্টি হওয়া, (দেখুন etiology) এবং এটা বুঝতে সক্ষম হওয়া অন্য মানুষেরও স্বতন্ত্রভাবে নিজেদের মত বিশ্বাস আছে, তাদেরও নিজেদের মত আশা-আকাঙ্ক্ষা আছে (দেখুনঃ theory of mind)। এই তিন অভিযোজন মানুষকে ভাবতে প্ররোচিত করেছে যে, এই সবকিছুর পিছনে কোনো সত্তা আছে, যার ইচ্ছায় এসব সংগঠিত হয়। কারণ তৎকালীন সময়ে বিভিন্ন বিষয় যেমনঃ বজ্রপাত, ঘুর্ণিঝড়, বিদ্যুৎ চমকানো, ভূমিকম্প জীবনের জটিলতা(বায়োলজিক্যাল জটিলতার কথা বলা হয়েছে) ইত্যাদিকে অন্য কোনোভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভবপর ছিল না।

প্যাসকেল বয়ার তার বই রেলিজিয়ন এক্সপ্লেইনড নামক বইতে প্রস্তাব দিয়েছেন যে, ধর্মীয় চেতনার কোনো সহজ ব্যাখ্যা নেই। তিনি ড্যান স্পারবার এবং স্ট এটরানের ধারণার উপর ভিত্তি করে একথা বলেছেন। এই ধারণায় বলা হয় ধর্মীয় চেতনা (cognition) বিবর্তনের বিভিন্ন অভিযোজনের কারণে (লোক মনস্তত্ত্বও অন্তর্ভুক্ত) ধর্ম উপজাত হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে। প্যাসকেল বয়ার দেখান, মানুষের মাঝে একটি বিষয় কাজ করে, যেকারণে "যৎসামান্য প্রতিসজ্ঞা" ধারণাগুলো (minimally counter-intuitive concept) মনে রাখবার ক্ষেত্রে মানুষ বিশেষ সুবিধা লাভ করে, এবং মনে রাখতে পারে। প্রতিসজ্ঞা ধারণা (Counterintuitive concept) দ্বারা এমন ধারণাকে বোঝায় যেগুলোকে আমাদের সজ্ঞা (intuition), সাধারণ অনুভূতি (common sense) দ্বারা ভুল বলে মনে হয়। প্যাসকেল বয়ার বলেন, বিভিন্ন সত্তাতাত্ত্বিক (ontological) প্রশ্নের বেলায়, যেমন আমাদের এই জগৎ কীভাবে গঠিত হল, জগৎ ও বাস্তবের অস্তিত্বের কারণ কী - এই সব প্রশ্নে মানুষের সাধারণ সজ্ঞা, সাধারণ অনুভূতির বাইরে যদি যৎসামান্য প্রতিসজ্ঞা ধারণা কাজ করে তাহলে তা মানুষের বেশি মনে থাকে। অর্থাৎ জগৎ সম্পর্কিত সত্তাতাত্ত্বিক প্রশ্নগুলোর ক্ষেত্রে যদি খুব কম পরিমাণের জন্য মানুষের সেটাকে নিজের সজ্ঞা ও সাধারণ অনুভূতি অনুসারে ভুল বলে মনে হয়, তাহলে তা তার অন্যান্য বিষয়গুলোর চেয়ে বেশি মনে থাকে। যেসব প্রাত্যহিক ধারণা সবসময় মানুষের সজ্ঞা বা বোধগম্যের মধ্যে পড়ে, অথবা যেসব ধারণা একেবারেই মানুষের অন্তর্নিহিত প্রত্যাশাকে লঙ্ঘণ করে বা সজ্ঞা ও সাধারণ অনুভূতির বিরুদ্ধে চলে যায়, মানুষ সেগুলোর থেকে এই যৎসামান্য প্রতিসজ্ঞা ধারণা আলাদা। প্যাসকেল বয়ারের মতে, সেই সব ধারণাগুল মানুষের ক্ষেত্রে বেশি স্মরণীয় হয় না, বা মনে দাগ কাটে না, যেমনটা যৎসামান্য প্রতিসজ্ঞা ধারণার ক্ষেত্রে ঘটে। আর প্যাসকেল এরই নাম দেন "যৎসামান্য প্রতিসজ্ঞা প্রভাব" (the minimal counteriintuitive effect)। একজন ঈশ্বর বিভিন্ন দিক দিয়েই মানুষের মত, কিন্তু তারা মানুষের চেয়েও অনেক বেশি ক্ষমতাশালী হয়- ধর্মতত্ত্বে উল্লিখিত ঈশ্বর সংক্রান্ত এধরনের ধারণাগুলোকে প্রায়ই প্রতিসজ্ঞা ধারণা হিসেবে বিবেচনা করা যায়। বিভিন্ন পরীক্ষাগুলো দেখিয়েছে, ধার্মিক মানুষজন তাদের ঈশ্বরে নরাত্বরোপ করতে পছন্দ করে, যদি নরাত্বরোপ করার এই ধারণাটি ধর্মীয় বেত্তাদের ঈশ্বর কেমন হবে, সেসংক্রান্ত জটিল ধারণার সাথে সাংঘর্ষিক হয় তবুও।

পিয়েরে লিনার্ড এবং প্যাসকেল বয়ার প্রস্তাবনায় বলেন যে, মনুষ একটি বিপদ-সতর্কতামূলক ব্যবস্থাকে ("hazard-precaution system") বিবর্তিত করেছে, যার ফলে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তারা সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে অনুমান করতে পারে, এবং সে অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। ধর্মীয় স্বভাবের কিছু রীতিনীতির বৈশিষ্ট্য হলো পরিস্থিতিকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা(উদাহরণস্বরুপঃ বাংলাদেশের কথা ধরা যাক, ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাদের যুদ্ধের নির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি ধর্মকে ব্যবহার করে উদ্দেশ্যমুলক প্রচারণা চালানো হয়েছিল, এই অবস্থা অন্যান্য জাতিতে এবং ইতিহাসেও দেখা যায়, যেখানে ধর্মকে ব্যবহার করে বিভিন্ন যুদ্ধকে জায়েজ করা এবং যোদ্ধাদের উদ্ভুদ্ধ করা হয়)। লিনার্ড এবং বয়ার একটা সম্ভাবনার কথা বলেন, যেখানে বলা হয়, সংবেদনশীল বিপদ-সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিজেই যোগ্যতা তৈরির উপকার (fitness benifit) প্রদান করে থাকতে পারে। আর এরপর সেই ধর্ম "প্রত্যেকের নিয়ন্ত্রণাতীত উদ্বিগ্নতাকে (unmanageable anxieties) একে অপরের সমন্বিত কার্যের সাথে একীভূত করে বা সমন্বিত করে সেগুলোকে (নিয়ন্ত্রণাতীত উদ্বিগ্নতা) আরও বেশি সহনশীল ও অর্থবহ করে তোলে।

জাস্টিন এল. বেরেট তার হোয়াই উড এনিওয়ান বিলিভ ইন গড?(কেন কেও ঈশ্বরে বিশ্বাস করে) বইতে বলেছেন যে, ঈশ্বরে বিশ্বাস খুব সাধারণ একটা প্রাকৃতিক বিষয় কারণ এটা মানুষের মনস্তাত্ত্বিক বিষয়, যা সকল মানুষের দ্বারা গঠিত হয়েছে। তিনি আমাদের মন কীভাবে গঠিত হয়েছে এবং কীভাবে তার উন্নয়ন ঘটেছে তা নিয়ে আলোচনা করেছেন, তার মতে, আমাদের মন এভাবেই তৈরী হয়েছে, যাতে করে সর্বশক্তিমান, সবজান্তা, অমররণশীল এক মহান ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস রাখা যায়। তিনি মনের অন্যান্য বিশ্বাসের সাথে, ঈশ্বরে বিশ্বাসকে তুলনা করেন ও নাস্তিকতা সম্পর্কিত বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান নিয়ে তার অন্বেষণকে একটি অধ্যায় লিখেন। তিনি আরও বলেছেন, মানুষের মস্তিষ্কে প্রাথমিক ভাবে বিপদকে শনাক্ত করার জন্য একটি মানসিক সত্তা তৈরী হয়, যে সত্তা তাকে সকল বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করে। একে তিনি হাইপারএকটিভ এজেন্সি ডিটেকশন ডিভাইস (HADD), বলে অভিহিত করেন। এই HADD নিজে স্পর্শকাতর হলেও টিকে থাকার লড়াইয়ে কিছু সুবিধা নিয়ে এসেছিল, তাঁর মতে কারো দ্বারা খুন হয়ে যাওয়ার থেকে কাল্পনিক কোনো সত্তাকে এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। কারণ এই ধরনের কাল্পনিক সত্তাই ভুত এবং আত্মায় বিশ্বাস করার মন মানসিকতা তৈরী করে।

যদিও হোমিনিডরা সম্ভবত তাদের উত্থানশীল কগনিটিভ ক্ষমতা পুষ্টি ও সঙ্গির মতো প্রাথমিক প্রয়োজন মিটাতে ব্যবহার শুরু করে কিন্তু সন্ত্রাস ব্যবস্থাপনা তত্ত্ব বলে যে, এই ক্ষমতা ব্যবহারের আগে তাদের মধ্যে অহমবোধ চেতনার উৎপত্তি ঘটে (এবং তার (স্বয়ং/অহমবোধ এর পরিসমাপ্তি ঘটে)। মৃত্যু সচেতনতা পরিনত হলো অতীতের অভিযোজন ক্ষমতাসমূহের অতি বিধ্বংসী ব্যাপারে। তার ফলের উদ্বিগ্নতা ঠিক এসব ক্ষমতাকে নষ্ট করার হুমকিতে পরিনত হলো এবং ফলে তাদের নিধন দরকার পড়লো। যেকোনো সামাজিক সজ্জা অথবা উদ্‌যাপন যেটা গনহারে জনগনের মাধ্যমে গৃহীত হলো, তাদের দরকার ছিলো এই সন্ত্রাসের ব্যবস্থাপনা করা। এটা করার মূল পদ্ধতি ছিলো "মূল্যবান ব্যক্তিতে পরিনত হওয়া, একটি অর্থময় বিশ্বে....সংস্কৃতি রক্ষাকর্ম তৈরির মাধ্যমে আত্মসম্মান অর্জন", যেহেতু এটা মৃত্যুর ফলে সৃষ্ট গুরুত্বহীন চেতনকে প্রতিহত করতো এবং সরবরাহ করতো ১) রুপক অমরত্ব, একটি সংস্কৃতির বংশের মাধ্যমে যেটা বেচে থাকে শারীরিক স্বয়ং এর বাইরে ("জাগতিক গুরুত্ব") ২)আক্ষরিক অমরত্ব। মৃত্যুপরবর্তী জীবনের ওয়াদা অথবা চলনশীল অস্তিত্বের, যা ধর্মগুলোতে বিশেষায়িত হয় ("মহাজাগতিক গুরুত্ব").

মিমস (Memes)

মিম রিচার্ড ডকিন্স দ্বারা প্রবর্তিত একটি নতুন শব্দ। এর দ্বারা যে অর্থটি বুঝায় তা হলোঃ কোনো চিন্তা, মতবাদ বা স্টাইল যদি সংস্কৃতির মধ্য দিয়েই ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তবে তাকে মেমে বলে। মিম বিভিন্ন ধরনের প্রতীক, আইডিয়া বা পরিকল্পনার সমন্বয়ক হিসেবে একজন মানুষের মন থেকে অন্য মানুষের মনে বক্তৃতা, লেখা, ভঙ্গিমা বা রীতিনীতির মাধ্যমে ছড়ায়।

ডকিন্স তার দ্য সেলফিশ জিন বইটিতে বলেছেন সাংস্কৃতিক মিমস অনেকটা জিনের মত কাজ করে (জিন যেভাবে নিজেই প্রাকৃতিক নির্বাচনের অংশ হিসেবে নিজেই নিজের প্রতিরুপ তৈরী করতে পারে, নিজের পরিব্যাপ্তি ঘটাতে পারে)। তার গড ডিল্যুশন বইতে ডকিন্স পরবর্তীতে আরও বলেছেন, ধর্মীয় সত্যকে প্রশ্ন করা যায় না, তাদের স্বভাব হচ্ছে, মনের ভাইরাসের ন্যায় ছড়িয়ে যাওয়া। এই ধরনের ধারণা অনুসারে বলা যায়, যারা ধর্মীয় বিশ্বাসকে প্রশ্ন করে না, তারা; যারা প্রশ্ন করে তাদের তুলনায় জৈবিক ভাবে ফিট ছিল। ফলে 'যোগ্যতমের টিকে থাকা' এই নীতি অনুসারে যেসব মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসকে প্রশ্ন করার সক্ষমতা ছিল, তারা ধীরে ধীরে মোট জনসংখ্যার অনুপাতে কমে যেতে থাকল। অন্যদিকে পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলোতে বা মৌখিক (অলিখিত) ধর্মীয় নিয়ম-কানুনগুলো এই সিদ্ধান্তই নিল যে, যারা ধর্মীয় নিয়ম কানুন মানে, জৈবিকভাবে তারাই সক্ষম বেশি হয়। ফলে ধর্মীয় কোনো নীতি বা কাহিনী; তা যতই হাস্যকর বা রুপকথার মত মনে হোক না কেন, তা নিয়ে সমালোচনা করার মত মানুষ দিনকে দিন কমতে থাকল। (দেখুন: denialism.)

এই মডেলটা এটাই ব্যাখ্যা করে যে, ধর্ম হচ্ছে মানব মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে cognitive modules এর একটা উপজাত অংশ। যা বিবর্তনের অংশ হিসেবে টিকে থাকা ও প্রজননের যে সমস্যা তার মুখোমুখি হয়ে লড়াই করে তার প্রভাব বৃদ্ধি করেছে। অলৌকিক সত্তার উপস্থিতির বিষয়টা মানব মনে তৈরী হয়েছে, চারপাশে কোনো মানুষ বা জীবের উপস্থিতি আছে (সিক্স সেনস) এই ধরনের অনুমান থেকে।(হয়তো কোনো লতা পড়ে রয়েছে, প্রথম দেখায় আমাদের পুর্বপুরষরা তাকে ভুল করে ভাবল সাপ)। হঠাৎ করে, একজন মানুষের (আমাদের পুর্বপুরুষ) হয়তো মনে হলো কেও তাকে গোপনে লক্ষ্য করছে, সে চারপাশে তাকিয়ে দেখল কেও নাই।

এই ধরনের অভিজ্ঞতার যে গল্পগুলো তার সাথে আরও ডালপালা গজিয়ে নানাবিধ রুপে সমাজে চলতে থাকল। এই ধরনের বিষয়ের উপর নির্ভর করে তৎকালীন দলনেতারা নানান ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে থাকল, এবং তারা এই সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে যে ভবিষ্যদ্বাণী করতো, তা দেখা যেতে লাগলো, ফলেও যায়। ফলে মানুষের মনে অলৌকিক শক্তির একটা ধারণা বদ্ধমুল হতে লাগলো।

মানুষের মাঝে একে অপরকে ভালোবাসার প্রবণতা দেখা যাওয়ায়, দুইজনের মাঝেই ঈশ্বর সংক্রান্ত যে ভাবনা তা শেয়ার হলো। এছাড়াও, মৃতদেহ মানুষের মাঝে একটা অস্বস্তিকর অনুভূতি তৈরী করত। একটা মানুষ কিছুক্ষণ আগেও ছিল, তারপরেই আর নেই, এই ধরনের ভাবনা মৃতের আত্মীয়দের মস্তিষ্কে আলোড়ন তৈরী করত। বিভিন্ন ধরনের স্বপ্ন তাদের কে বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে, একটা বেমানান ধারণা তৈরী করল যে, মৃতরা আমাদের চারপাশেই আছে। মানুষের সামাজিক জীবনে হয়তো সবকিছু ঠিকঠাকভাবে চলছে না, তখন তার মনে হলো এই দুর্ভাগ্য তার জীবনে নেমে এসেছে, কারণ সে অলৌকিক সত্তা তার উপর প্রসন্ন নয়। তাই সে দুর্ভাগা মানুষটির সত্তাটিকে প্রসন্ন করার যে মন-মানসিকতা, ধরে নেওয়া হয়, এই প্রবণতা থেকেই পুজো-পাঠ বা প্রার্থনার মত ধর্মীয় নিয়ম-কানুন গুলো এসেছে।(দেখুনঃ ritual). একটি যথেষ্ট বড় গ্রুপে দেখা যেত, কেও কেও এসব নিয়ম সম্বন্ধে অন্যদের তুলনায় যথষ্ ওয়াকিবহাল এবং তারা এসব রীতিনীতির বিশেষজ্ঞ হয়ে গেল। (আধুনিক পুরোহিত বা ইমামের উৎপত্তি হয়তো এখান থেকেই)। যেহেতু সমাজ বাড়তে থাকল, প্রতিযোগতা বাড়তে থাকল 'যোগ্যতমের টিকে থাকা' এই নীতিকে অনুসরণ করে ধর্মের চর্চাকারীরা তাদের ধর্মীয় নীতিকে পরিস্থিতির সাথে তাল মিলিয়ে এমন ভাবে পরিবর্তন করল, যার ফলে যারা নতুন করে ধর্মে দীক্ষিত হবে তাদের কোনোরুপ সমস্যা তৈরী না হয়। অবশেষে ধর্মচর্চাকারী সেই বিশেষজ্ঞরা তাদের সমমনা বা সহযোগীদের নিয়ে রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য ধর্মীয় সংস্থা গঠন করেন, যাকে আমরা বর্তমানে ধর্ম বলে জানি।

আরও দেখুন

আরও পড়ুন

বহিঃসংযোগ


Новое сообщение