নড়িয়া হত্যাকাণ্ড
| নড়িয়া গণহত্যা | |
|---|---|
| স্থান | নড়িয়া, সিলেট, বাংলাদেশ |
| তারিখ | ৫ মে, ১৯৭১ (ইউটিসি+৬:০০) |
| লক্ষ্য | বাঙ্গালী হিন্দু |
| হামলার ধরন | গণহত্যা |
| ব্যবহৃত অস্ত্র | রাইফেল |
| নিহত | ২৮ |
| হামলাকারী দল | পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, রাজাকার, আলবদর, শান্তি কমিটি |
নড়িয়া গণহত্যা বলতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি দখলদারি সেনাবাহিনীর দ্বারা বাংলাদেশের সিলেটের নড়িয়া গ্রামে বাঙ্গালী হিন্দুদের উপর ১৪ই মে, ১৯৭১ সালে সংগঠিত হওয়া একটি হত্যাকান্ডকে বুঝায়।
পটভূমি
নড়িয়া গ্রামটি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার পশ্চিম মাথায় কাগাবালা ইউনিয়নে, মৌলভীবাজার থেকে ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। ১৯৭১ সালে, মৌলভীবাজার জেলা ছিল সিলেট জেলার একটি উপ-বিভাগ। গ্রামটিকে চতুর্দিকে অনেকগুলি হাওর পরিবেষ্টন করে আছে, ফলে বর্ষায় গ্রামটিতে যাওয়া প্রায় অনতিক্রম্য হয়ে পড়ে। তাই বর্ষা মৌসুমে যত্রতত্র যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে দেশীয় নৌকা একমাত্র সহায় হয়। ১৯৭১ সালে, গ্রামটিতে বেশীরভাগ গরীব এবং পিছিয়ে পড়া হিন্দুরা বাস করত, যারা গৃহস্থালি কাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করত।
২৬ শে মার্চ, পাকিস্তানি দখলদারি সেনাবাহিনীরা অপারেশন সার্চলাইট শুরু করে এবং হিন্দুদের বিতাড়িত করতে লক্ষস্থির করে। সহস্রাধিক হিন্দুদের মার্চ এবং এপ্রিল মাসে হত্যা করা হয় ফলে হাজার হাজার হিন্দু শরণার্থী হয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। ঐ সময়ে স্থানীয় একজন রাজাকার, মদরিছ আলীর নেতৃত্বে নড়িয়া গ্রামবাসীদের প্রস্তাব দেয়া হয় যে তারা ধর্মান্তরিত হয়ে তাদের মেয়েদের মুসলিম ছেলেদের সাথে বিয়ে দিতে। এভাবে গ্রামটিকে পাকিস্তানি দখলদারি সেনাবাহিনীর হাত থেকে রক্ষা করা যাবে। যখন গ্রামবাসীরা এতে প্রত্যাখ্যান করে, তখন এই রাজাকার তাদের গরুগুলোকে হস্তান্তর করতে বলে, এতেও তারা আবার প্রত্যাখ্যান করে। ফলে, এই রাজাকার তাদের উচিত শিক্ষা দেয়ার হুমকি দিয়ে যায়।
ঘটনা
৫ই মে, পার্শ্ববর্তী সাধুহাটি গ্রাম দিয়ে, শেরপুর ক্যাম্প হতে পায়ে হেঁটে ১২ জন পাকিস্তানি সৈন্য এসে এই গ্রামে পৌঁছায়। তাদেরকে সহায়তা করে নিয়ে আসে মৌলভীবাজার শান্তি কমিটির প্রেসিডেন্ট। ইতিমধ্যে কিছু গ্রামবাসী নিকটবর্তী ফরছা বিলে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেয় এবং অন্যান্যরা জীবন নিয়ে দৌড়ে পালাতে শুরু করে, যখন পাক হানাদাররা গ্রামটিতে এসে পৌঁছায়। রাজাকার, আলবদর সহ পাকিস্তানি দখলদারি সেনাবাহিনীর সহচররা গ্রামবাসীদের পালানোকে প্রতিহত করে। একশোরও অধিক নারী, পুরুষ এবং ছেলেমেয়েদের আটক করা হয় এবং পরে তাদের কামিনী কুমার দেব, একজন হিন্দু গ্রামবাসীর বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। মহিলা এবং শিশুদের, পুরুষদের কাছ থেকে আলাদা করে এবং কারারুদ্ধ অবস্থায় একটি কক্ষে পুরে রাখা হয়। কামিনী কুমার দেব সহ পুরুষদের একটি লাইনে দাঁড় করানো হয় এবং বার্স্ট ফায়ার করে তাদের মেরে ফেলা হয়। পুরুষদের হত্যার পর, পাকিস্তানি সৈন্যরা নারীদের ধর্ষণ করে। রাজাকার এবং আলবদর সহ স্থানীয় সহযোগীরা গ্রামের ১৯টি বাড়িঘর এবং ৬টি শস্যাগারে আগুন লাগিয়ে দেয়।
এই গণহত্যার পর, নড়িয়া একটি জনমানবহীন গ্রামে পরিণত হয় এবং মৃতদেহগুলো সৎকারের অভাবে পরে থাকে। কামিনী কুমার দেব এবং তার সহধর্মিণীর কঙ্কাল তাদের পুঁড়া-বাড়ি থেকে দুদিন পর উদ্ধার করা হয়। যেহেতু মৃতদেহের দুর্গন্ধ অসহনীয় হয়ে পড়েছিল, তাই রাজাকাররা মৃতদেহগুলোকে কবর দিতে তাদের আত্মীয়স্বজনদের বলে অন্যথায় তাদের হত্যার হুমকি দেয়। হুমকি পেয়ে, পার্শ্ববর্তী আব্দালপুর, নোয়াগাঁও এবং খাগরাকান্দি গ্রাম থেকে পাঁচ থেকে ছয়জন হিন্দু আত্মীয় এসে কামিনী কুমার দেবের বাড়ীর প্রাঙ্গণে লাশগুলোকে সমায়িত করে।
পরিণাম
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষে, মুক্তিযোদ্ধারা কবর খুঁড়ে কঙ্কালগুলো বের করেন এবং সেগুলোকে মৌলভীবাজারে নিয়ে যান। লাশের সংখ্যা গণনা করে, তাদের কঙ্কালগুলো মনু নদীর তীরে পুতে দেয়া হয়। মুজিবুর রহমানের হত্যার পর, কামিনী কুমার দেবের বাড়িতে একটি পূর্ব-পরিকল্পিত ডাকাতি সংগঠিত হয়। গণহত্যার স্থান ব্যতীত, তার উত্তরসূরিরা তাদের বাড়িঘর এবং অন্যান্য সম্পত্তি বিক্রি করে দেন। ২০১১ সালের ২৪শে মে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাদের গণহত্যা বিষয়ে তদন্ত সম্পন্ন করে।
আরো দেখুন
| গণহত্যাকারী |
|
||||||||||||||
|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
| সংগঠন | |||||||||||||||
| গণহত্যা |
|
||||||||||||||
| বুদ্ধিজীবী হত্যার শিকার |
|||||||||||||||
| প্রতিবাদ | |||||||||||||||
| বিচারকার্য | |||||||||||||||
| সম্পর্কিত ঘটনা | |||||||||||||||