Продолжая использовать сайт, вы даете свое согласие на работу с этими файлами.
পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা
পয়ঃনিষ্কাশন বা স্যানিটেশন বলতে বোঝায়, নিরাপদ খাওয়ার পানি এবং মানববর্জ্য ও ব্যবহৃত পানি যথাযথ নিষ্কাশন সংক্রান্ত গণস্বাস্থ্য ব্যবস্থা। মল-মূত্রের সাথে মানুষের সংস্পর্শ রোধও স্যানিটেশনের একটি অংশ। যেমন: পায়খানার পরে সাবান দিয়ে হাত ধোওয়া। স্যানিটেশন ব্যবস্থার প্রধান লক্ষ্যই হল একটি পরিচ্ছন্ন পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের সুস্বাস্থ্য রক্ষা করা যাতে জীবাণু সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়। উদাহরণস্বরূপ: ডায়রিয়া, শিশুর অপুষ্টি ও শারীরিক বিকাশে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার একটি প্রধান কারণ যা উন্নত স্যানিটেশনের মাধ্যমে কমানো সম্ভব। যেসব সম্প্রদায়ে বা পল্লী অঞ্চলে স্যানিটেশন ব্যবস্থা দুর্বল সেসব স্থানে ডায়রিয়া বাদেও আরো রোগ-জীবাণু সহজে ছড়ায় যেমন, কলেরা, হেপাটাইটিস, পোলিও ও কৃমিজনিত রোগ প্রভৃতি।
স্যানিটেশন প্রযুক্তি ও এর পদক্ষেপসমূহের বিস্তৃত পরিসর বিদ্যমান। এই পরিসরে বিভিন্ন সমাজে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। যেমন, টেকসই স্যানিটেশন, জরুরী স্যানিটারি ল্যাট্রিন, কন্টেইনার ভিত্তিক স্যানিটেশন (মল-মূত্র ধরে রাখার জন্য), বাস্তুতান্ত্রিক স্যানিটেশন (ecosan-পরিবেশে মানব মল-মূত্র ব্যবহারোপযোগী ব্যবস্থা), সম্প্রদায় নিয়ন্ত্রিত পরিপূর্ণ স্যানিটেশন (CLTS) প্রভৃতি পদক্ষেপ এর উজ্জ্বল উদাহরণ। স্যানিটেশন ব্যবস্থা বলতে বোঝানো হয়, মানববর্জ্য (মল-মূত্র) এবং ব্যবহৃত পানির যথাযথ নিষ্কাশন, সংরক্ষণ এবং প্রয়োজনে পুনঃব্যবহার করন। পুনঃব্যবহারকরণের ক্ষেত্রে সাধারণত প্রধান উদ্দেশ্য থাকে, মানববর্জ্য (মল-মূত্র) এবং ব্যবহৃত পানিতে থাকা পুষ্টি উপাদানসমূহ, জৈব উপাদানসমূহ, শক্তি বা পানি। মানববর্জ্য (মল-মূত্র) এবং ব্যবহৃত পানিকে যে প্রক্রিয়ায় পুনঃব্যবহারযোগ্য করে কাজে লাগানো হয় তাকে "স্যানিটেশন ভ্যাল্যু চেইন" বা "স্যানিটেশন ইকোনমি" বলা হয়।
বিভিন্ন দেশে স্যানিটেশনের অবস্থা কেমন তা তুলনা করতে স্যানিটেশনের বিভিন্ন 'পর্যায়' নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০১৬ তে 'খোলা স্থানে মলত্যাগ' বিষয়ে শুরু হওয়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত সমন্বিত পর্যবেক্ষণ অভিযান (JMP) স্যানিটেশনের ধাপ বা পর্যায়গুলো নিম্নোক্ত নামগুলো দিয়ে সূচিত করেছে- 'অনুন্নত', 'সীমিত', 'সাধারণ' এবং সর্বোচ্চ ধাপ হল, 'নিরাপদ ব্যবস্থা'। এই বিশেষণগুলো কেবল উন্নয়নশীল দেশগুলোতেই ব্যবহার্য্য।
২০১০ সালে পানি ও স্যানিটেশনে মানব অধিকার (HRWS)জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে স্বীকৃত হয়। এছাড়া স্যানিটেশন হল বৈশ্বিক উন্নয়নের একটি পূর্বশত এবং টেকসই উন্নয়নলক্ষ্য ৬ এর একটি অংশ। সমন্বিত পর্যবেক্ষণ অভিযান (JMP) কর্তৃক গবেষণায় উঠে আসে যে, সাড়ে চার বিলিয়নের মত মানুষ পৃথিবীতে এখনও নিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবস্থা পায়নি। উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থার অভাব কে গণস্বাস্থ্যকেই হুমকিতে ফেলছে না বরং মানব বৈশিষ্ট ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকেও ক্ষুণ্ন করছে।
সংজ্ঞা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্যানিটেশন টার্মটিকে নিম্নোক্তভাবে বিবৃত করেছে:
"স্যানিটেশন বলতে সাধারণত বোঝানো হয়, মানব মল ও মুত্রের নিরাপদ নিষ্কাশনে যথাযথ ব্যবস্থা এবং সুবিধাস প্রদান। 'স্যানিটেশন' শব্দটি দিয়ে আরো বোঝানো হয়, নিষ্কাশিত বর্জ্য এবং ব্যবহৃত পানি ইত্যাদির যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধিসমূহ মেনে চলা।"
স্যানিটেশনে নিম্নোক্ত প্রকৌশল অবকাঠামোর উপাদানসমূহও অন্তর্ভুক্ত (যদিও উপাদানগুলোর প্রথমটিই কেবল স্যানিটেশন টার্মটির সাথে জোরালোভাবে সম্পৃক্ত): মানববর্জ্যব্যবস্থাপনা, নিষ্কাশিত পানিব্যবস্থাপনা (যার মধ্যে ব্যবহৃত পানি সহযোগে উদ্ভিদ চাষ প্রক্রিয়াও অন্তর্ভুক্ত), দূষিত মাটিব্যবস্থাপনা , বৃষ্টির পানির জন্য নালাব্যবস্থাপনা পদ্ধতিসমূহ।
দেশ ভেদে স্যানিটেশন শব্দের ব্যবহারিক অর্থে ভিন্নতা পাওয়া যেতে পারে। যেমন, কোনো কোনো দেশে স্বাস্থ্যবিধিকেই স্যানিটেশনের অন্তর্ভুক্ত অংশ বলে মনে করা হয়। এজন্য জাতিসংঘের বিশ্ব পানি সরবরাহ এবং স্যানিটেশন সহযোগী কাউন্সিল স্যানিটেশনের ব্যাখ্যায় বলছে,'স্যানিটেশন হল মানববর্জ্য, ঘরের ব্যবহৃত ময়লা পানি, দূষিত মাটির সংরক্ষণ, উপযুক্ত স্থানে স্থানান্তর, যথাযথ প্রতিবিধান এবং তদসম্পৃক্ত স্বাস্থ্যবিধি উৎসাহিত করন।
যদিও ওপরের সংজ্ঞাগুলো থেকে দেখা যাচ্ছে যে, পানি নিষ্কশন ব্যবস্থাও স্যানিটেশনের অন্তর্ভু্ক্ত তবুও কখনও কখনও স্যানিটেশন থেকে একে আলাদা করেও বলা হয় যেমন, "স্যানিটেশন এবং ময়লা পানি ব্যবস্থাপনা"।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
সর্বসাকুল্যে স্যানিটেশনের উদ্দেশ্যগুলো হল, সবার জন্য স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ গড়ে তোলা, প্রাকৃতিক উপাদানসমূহ সংরক্ষণ (যেমন, মাটি ও পানি), মানববর্জ্য (মানুষের পেশাব-পায়খানা)-সংশ্লিষ্ট সুবিধা ও নিরাপত্তা প্রদান।
২০১০ সালে পানি ও স্যানিটেশনে মানব অধিকার (HRWS) জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে স্বীকৃত হয়। এটি মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক আইনেও স্বীকৃত হয়। এছাড়াও আন্তর্জাতিক আইনের মানবাধিকার অংশেও এটি স্বীকৃত হয়েছে। এটি মানবাধিকার থেকে শুরু করে একটি উপযুক্ত জীবনমান হিসেবে বিবেচিত হয়।
উপযুক্ত স্যানিটেশন ব্যবস্থা মানুষ এবং মানববর্জ্যের মাঝে অন্তরায় তৈরি করে যা সমাজে রোগ সংক্রমণ-প্রবাহচক্রের ধারা ভেঙ্গে দেয় (উদাহরণস্বরূহ, কলেরা, ডায়রিয়াজাতীয় পায়খানাজনিত রোগব্যাধীর ক্ষেত্রে যেমনটা ঘটে)। এই দৃষ্টিভঙ্গিটি চিত্রায়িত করা হয়ে থাকে এফ-ডায়গ্রামের মাধ্যমে যেখানে পায়খানাজনিত রোগব্যাধীর প্রবাহের বেশিরভাগ রাস্তার নামই ইংরেজি "এফ" বর্ণ দিয়ে শুরু হয়ঃ পায়খানা, আঙুল, মাছি, মাঠ, তরল, খাবার।
মূল চ্যালেঞ্জগুলোর একটি হল স্থায়ী স্যানিটেশন ব্যবস্থা তৈরি করা বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। স্যানিটেশন ব্যবস্থা ধারাবাহিক বজায় রাখার জন্য অনেকগুলো ব্যাপার লক্ষণীয়ঃ প্রযুক্তিগত সুবিধা, প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি। স্যানিটেশন ব্যবস্থার অবকাঠামোকে অবশ্যই ভোক্তার অবস্থা এবং এলাকার সুযোগ সুবিধার সীমাবদ্ধতার প্রতি লক্ষ্য রেখে খাপ খাওয়ানোর উপযোগী করে নিতে হবে।
স্যানিটারি ব্যবস্থায় একটি কেন্দ্রীয় অবকাঠামো তৈরি করা যেতে পারে যেমন, নালাব্যবস্থা, খালব্যবস্থা, পানির ঢলে বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং বর্জ্য ফেলার নির্ধারিত ভূমিব্যবস্থা। এইসব অবকাঠামোগুলো ময়লা পানি এবং অন্যান্য শক্ত বর্জ্য নিষ্কাশনে ব্যবহৃত হবে। স্যানিটেশন-প্রযুক্তিকে নির্দিষ্ট স্থানে সহজে ব্যবহাযোগ্যভাবেও প্রস্তুত করা যেতে পারে। যেমন, পিট ল্যাট্রিন (পাতকুয়ার উপর বসানো পায়খানা) কিংবা পানিবিহীন টয়লেট ইত্যাদির জন্য এরূপ পযুক্তি কাজে লাগতে পারে।
কেবল প্রযুক্তিগত বিষয়াদির দিকে নজর দিলেই হবে না; জনগণকে স্যানিটেশনের ব্যবস্থা প্রদানের লক্ষ্যে পুরো ব্যবস্থার দিকেই মনোযোগ দিতে হবে। যেমন, টয়লেট, ময়লা পানির নিষ্কাশনব্যবস্থা, আবর্জনা সবকিছুরই সঠিক ব্যবস্থাপনা করা। ব্যবহারকারী, মানববর্জ্য ও নষ্ট পানি সংগ্রহ পদ্ধতি, আবর্জনা সরানো এবং যথাযথ ব্যবস্থাগ্রহণ এবং পুনর্ব্যবহার অথবা নিষ্কাশন এসব কিছুই স্যানিটেশন চেইনের ভেতরে অন্তর্ভুক্ত।
শ্রেণিবিভাগ ও শর্তাবলি
স্যানিটেশন বিষয়টি বিভিন্ন অভিধায় বা বিশেষণে বিশেষিত করে এর প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে। বিভিন্ন ধরনের স্যানিটেশন ব্যবস্থা বিদ্যমান যার মধ্যে কোনো কোনোটি কেবল মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনা আবার কোনোটি যাবতীয় স্যানিটেশন ব্যবস্থা। নিম্নে এদের শিরোনামভিত্তিক আলোচনা প্রদত্ত হল-
বেসিক স্যানিটেশন
২০১৭ সালে JMP "বেসিক স্যানিটেশন" শিরোনামের একটি নতুন বিষয় সামনে আনে। এটি হল উন্নত স্যানিটেশন সুবিধা যা পৃথকভাবে একজনের ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করা থাকে। এর চেয়ে একধাপ নিম্নস্তরের আরেকটি ব্যবস্থা আছে যাকে "সীমিত স্যানিটেশন সেবা" বলা হয় যার ব্যাখ্যা হল, ঘরের লোকদের যৌথভাবে উন্নত স্যানিটেশন সুবিধা।
কন্টেইনার ভিত্তিক স্যানিটেশন
কন্টেইনার ভিত্তিক স্যানিটেশন (CBS) হল এমন স্যানিটেশন ব্যবস্থা যেখানে মানববর্জ্য একটি বদ্ধ, পরিবহনযোগ্য কন্টেইনারে জমা করা যেগুলো যথাস্থানে নিয়ে যাওয়া হয় শোধনের জন্য। সাধারণ ভ্রাম্যমাণ টয়লেটগুলোতে এই ব্যবস্থা থাকে যেখানে ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ করে টয়লেটের সুবিধা প্রদান করা হয়। তবে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বর্জ্য নিষ্কাশন কর্তৃপক্ষের সহায়তা পেলে এই কন্টেইনার ভিত্তিক স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিম্ন আয়ের শহরগুলোতেও ব্যবহার করা যায়। কারণ নালা খনন করা এবং যথাযথ ব্যবস্থাপনা রক্ষা করার যেরকম খরচ তার চাইতে এই ব্যবস্থায় বর্জ্য সংগ্রহ, পরিবহন এবং শোধনের খরচ অনেক কম। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কন্টেইনার ভিত্তিক স্যানিটেশন পদ্ধতি ইউরিন-ডাইভারটিং শুষ্ক টয়লেট পদ্ধতি (এ পদ্ধতিতে মল ও মুত্রকে আলাদা করে শুষ্ক মল পুনঃব্যবহারের উদ্দেশ্যে সংগ্রহ করা এবং মুত্রকে ফেলে দেয়া হয়)-র ওপর ভিত্তি করেও হয়।
কমিউনিটি-লেড টোটাল স্যানিটেশন
কমিউনিটি-লেড টোটাল স্যানিটেশন (CLTS) বা সম্প্রদায় নিয়ন্ত্রিত পরিপূর্ণ স্যানিটেশন হল, মূলত পল্লী অঞ্চলে খোলা পায়খানা ব্যবহার বন্ধের জন্য গোষ্ঠীর আচরণ পরিবর্তনের লক্ষ্যে গৃহীত উদ্যোগ। এটি এমন একটি উদ্যোগ যেখানে যন্ত্রাংশের অতিরিক্ত ছাড়াই গ্রামীণ স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা হয় এবং যা সম্প্রদায়গুলোকে উন্মুক্ত পায়খানা ব্যবহারের ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে এবং এর সমস্যাসমূহ শনাক্ত করতে সহায়তা করে।
শুষ্ক স্যানিটেশন
শুষ্ক স্যানিটেশন এখনও সর্বত্র পরিচিত নয় এবং এর সংজ্ঞা দেয়াটাও একটু কঠিন। সাধারণ শুষ্ক স্যানিটেশন বলতে এমন একটি ব্যবস্থাকে বোঝানো হয় যেখানে কোনো নির্দিষ্ট ধরনের শুষ্ক টয়লেট ব্যবহৃত হয় এবং এতে বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য নালার ব্যবস্থা থাকে না। প্রায়ই দেখা যায়, মানুষ শুষ্ক স্যানিটেশন বলে সাধারণত মুত্র পৃথকীকৃত শুষ্ক টয়লেটকেই (UDDTs) বোঝায়। এটি শুষ্ক স্যানিটেশনের একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে মল এবং মুত্র আলাদা স্থানে নির্গত করতে বলা হয়। মুত্রকে সরাসরি নল দিয়ে মাটিতে প্রবাহিত করা হয়। টয়লেটের নিচে দুটো গর্ত করে রাখা থাকে। ব্যবহারকারীগণ প্রথম ছয় মাস একটি গর্তে মলত্যাগ করেন। গর্ত ভরার পর অন্য অংশ ব্যবহার করেন। সেটিও ভরে গেলে পূর্বের গর্ত থেকে শুষ্ক মল বের করে আবার সেই অংশ ব্যবহার করা হয়। সংরক্ষিত মল জৈব সার বা অন্যান্য কাজে পুনঃব্যবহার করা হয়।
বাস্তুতান্ত্রিক স্যানিটেশন
বাস্তুতান্ত্রিক স্যানিটেশন, যাকে সংক্ষেপে ইকোস্যান (ecosan=Ecological sanitation) বলা হয়, এটি এমন একটি উদ্যোগ যা মূলত স্যানিটেশন এবং কৃষি উভয় ব্যবস্থার মধ্যে সমন্বয়ক এবং চক্র পূর্ণকারী (প্রধানত জৈব ও পুষ্টি উপাদানের নবায়নযোগ্য করার) একটি নিরাপদ পদ্ধতি। অন্য কথায় বলতে গেলে, "বাস্তুতান্ত্রিক স্যানিটেশন মানববর্জ্যের উপাদান সমূহ (উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদান এবং জৈব পদার্থ)-কে নিরাপদে শস্য উৎপাদনের জন্য নবায়নযোগ্য করে তোলে যার ফলে অনবায়নযোগ্য উৎসের ব্যবহার হ্রাস করা সম্ভব হয়।" উপযুক্ত পরিপকল্পনা এবং তত্ত্বাবধানের থাকলে ইকোস্যান আমাদেরকে দিতে পারে এমন একটি স্বাস্থ্যবিধিসম্মত নিরাপদ, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির উৎকর্ষক, পুনঃনবায়নযোগ্য পদ্ধতি যা মানববর্জ্যকে পুষ্টি উপাদানে পরিণত করে যা পুনরায় ময়লা এবং পানিতে মিশে ভূমিতে চলে যায়। ইকোস্যানকে রিসোর্স-ওরিয়েন্টেড স্যনিটেশনও (resource-oriented sanitation) বলা হয়।
জরুরি স্যানিটেশন
প্রাকৃতিক দূর্যোগে, শরণার্থীদের ক্যাম্প এবং জাতিগত নিধনের শিকার উদ্বাস্তু (অভ্যন্তরীণভাবে উচ্ছেদকৃত জনগোষ্ঠী) মানুষদের জন্য জরুরি স্যানিটেশনের প্রয়োজন পড়ে। এখানে তিনটি পর্যায় আছে, তাৎক্ষণিক, স্বল্পকালীন এবং দীর্ঘকালীন। তাৎক্ষণিক পর্যায়ে মূল লক্ষ্য থাকে খোলা পায়খানা ব্যবহার বন্ধ করে অন্তত সাধারণ ল্যাট্রিন, কূপ ল্যাট্রিন (পাতকূয়ার ওপর বসানো ল্যাট্রিন), ঝুড়ি টয়লেট, কন্টেইনার ভিত্তিক টয়লেট, রাসায়নিক টয়লেট (এ পদ্ধতিতে রাসায়নিক ব্যবহার করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হয় যেমন, গন্ধ দূর করা)। স্বল্পকালীন পর্যায়ে মুত্র পৃথকীকৃত শুষ্ক টয়লেট (UDDTs), সেপ্টিক ট্যাংক, বিকেন্দ্রীয় ময়লা পানি ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য কৌশল ব্যবহৃত হতে পারে। এছাড়াও হাত ধোয়া এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্লাজ (পাত কূয়ায় বর্জ্য সংরক্ষণ করার পর তা নিষ্কাশন ব্যবস্থা)ও জরুরি স্যানিটেশনের অন্তর্ভুক্ত। আন্তর্জাতিক আন্দোলন স্ফিয়ার প্রোজক্টের হ্যান্ডবুক থেকে সাধারণ দূর্যোগ বা যুদ্ধ পরবর্তী অবস্থায় স্যানিটেশন এবং প্রতিরক্ষার মূলনীতিসমূহ পাওয়া যায়।
পরিবেশগত স্যানিটেশন
পরিবেশগত স্যানিটেশন রোগ সংক্রমণের সাথে সম্পৃক্ত পরিবেশগত বিষয়গুলোর নিয়ন্ত্রণকে অন্তর্ভুক্ত করে। এই শ্রেণিভুক্ত বিষয়গুলো হল, ময়লা-ব্যবস্থাপনা, পানি ও ময়লা পানি-ব্যবস্থাপনা, শিল্পবর্জ্য-ব্যবস্থাপনা এবং কোলাহল ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ।
উন্নত ও অনুন্নত স্যানিটেশন
উন্নত ও অনুন্নত স্যানিটেশন বলতে বোঝানো হয়, মানবর্জ্য এবং গৃহস্থালীর বিষয়াবলি ব্যবস্থাপনা। এই বিষয়টি মূলত বিশ্বসাস্থ্যসংস্থা/ইউনিসেফ কর্তৃক পানি সরবরাহ এবং পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য যৌথ মনিটোরিং অভিযান এর ঘোষিত স্যানিটেশনের মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলের লক্ষ্য বর্ণনা করার জন্য নির্দেশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
স্যানিটেশনের অভাব
স্যানিটেশনের অভাব বলতে স্যানিটেশনের অনুপস্থিতিকেই বোঝায়। ব্যবহারিক অর্থে এর অর্থ ব্যবহারোপযোগী টয়লেটের অভাব বা স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের অভাব। স্যানিটেশনের অভাবে খোলা পায়খানা ব্যবহার শুরু হয় যা গণস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। অনুমান করা হয়, ২০১৫ সালেও দুই দশমিক চার বিলিয়ন (২৪০ কোটি) মানুষ উন্নত স্যানিটেশনের অভাবে ভুগছে।
অনসাইট স্যানিটেশন
অনসাইট স্যানিটেশন হল, এমন স্যানিটেশন ব্যবস্থা যেখানে বর্জ্য, নষ্ট পানি ফেলার স্থানেই সংরক্ষণ করে এর প্রতিবিধান করা হয়। প্রতিবিধানের বিভিন্ন পর্যায় থাকতে পারে। একেবারে শূণ্য থেকে উৎকৃষ্ট যেকোনো পর্যায়ই হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, পিট ল্যাট্রিন (পাত কূয়ার ওপর বসানো ল্যাট্রিন যেখানে বর্জ্যের প্রতিবিধানের কোনো ব্যবস্থাই নেই) এবং সেপটিক ট্যাংক (যেখানে ময়লা পানির প্রাথমিক ব্যবস্থাপনা বা প্রতিবিধান করা হয়)। অনসাইট স্যানিটেশন ব্যবস্থা অনেক সময় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্লাজ (পাত কূয়ায় বর্জ্য সংরক্ষণ করার পর তা নিষ্কাশন ব্যবস্থা) এর সাথে সংযুক্ত থাকে যেখানে বর্জ্যের স্লাজ যে স্থানের ময়লা তুলে নিয়ে জমা করা হয় তার ব্যবস্থাপনা করা হয় অন্যস্থানে নিয়ে গিয়ে। আর ময়লা পানি সাধারণ ঐ সব স্থানেই জমা হয় যেখানে পাইপ দিয়ে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা আছে।
এর সাথে আরেকটি সম্পৃক্ত বিষয় আছে যাকে বলা হয় বিকেন্দ্রীয় ময়লা পানির ব্যবস্থাপনা যার কাজ বিশেষভাবে বললে অনসাইট স্যানিটেশনের ময়লা পানির অংশটির ব্যবস্থাপনা। তাছাড়াও অনসাইট খালসুবিধা (onsite sewage facility)ও ময়লা পানির ব্যবস্থাপনায় ব্যবহৃত হতে পারে এবং এ দুটো টার্ম (বিকেন্দ্রীয় ময়লা পানির ব্যবস্থাপনা ও অনসাইট খালসুবিধা) প্রায় সমার্থক।
নিরাপদ ব্যবস্থাপনাকৃত স্যানিটেশন
বর্তমানে স্যানিটেশনের উৎকৃষ্ট একটি স্তরকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমন্বিত পর্যবেক্ষণ অভিযান (JMP)এর সংজ্ঞানুযায়ী সাধারণ নিরাপদ ব্যবস্থাপনাকৃত স্যানিটেশন বা "safely managed sanitation" বলা হয়ে থাকে। এটিও বেসিক স্যানিটেশনের আওতাভুক্ত। তবে এতে অতিরিক্ত সুবিধা হিসেবে বর্জ্য নিরাপদে নিষ্কাশিত হয় অথবা পরিবহন করে অন্য স্থানে নিয়ে ব্যবস্থাপনা করা হয়।
টেকসই স্যানিটেশন
টেকসই স্যানিটেশন এর ভেতরে মূলত পুরো স্যনিটেশন ভ্যাল্যু চেইনই অন্তর্ভুক্ত: ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা থেকে শুরু করে, বর্জ্য ও ময়লা পানি সংরক্ষণ পদ্ধতি, পরিবহন, প্রতিবিধান এবং পুনঃব্যবহার অথবা নিষ্কাশন। এই টার্মটি ২০০৯ সাল থেকে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০০৭ সালে সাসটেইনেবল স্যানিটেশন এলিয়েন্স স্যানিটেশন সিস্টেমগুলোর স্থায়িত্ব তুলনা করার জন্য পাঁচটি স্থায়িত্বের মানদণ্ড সংজ্ঞায়িত করে। টেকসই হওয়ার নিয়মানুযায়ী, একটি স্যানিটেশন সিস্টেম অর্থনৈতিকভাবে কার্যকর, সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য, টেকনিক্যালি এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে উপযুক্ত হতে হবে, এবং এটির পরিবেশ এবং প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করাও উচিত।
অন্যান্য
আরো কিছু টার্ম আছে যেগুলো নির্দিষ্ট ধরনের স্যানিটেশনকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়:
কমিউনিটি বা সম্প্রদায় ভিত্তিক স্যনিটেশন (এটি বিকেন্দ্রীয় ময়লা পানি ব্যবস্থাপনার সাথে প্রায়ই সংযুক্ত থাকে)
স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়াদি
যেকোনো সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য সুস্বাস্থ্য রক্ষায় উন্নত স্বাস্থ্যবিধি এবং নিরাপদ পানির সাথে সাথে পর্যাপ্ত স্যানিটেশনের গুরুত্ব অপরিসীম। উন্নত স্যানিটেশনের অভাবে নানান রোগ ব্যাধীর বিস্তার ঘটে। স্যানিটেশন থেকে উদ্ভূত বেশিরভাগ রোগ ব্যাধীর দারিদ্র্যের সাথে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক বিদ্যমান। পরিষ্কার পানির অভাব এবং অনুন্নত স্যানিটেশনের কারণে অনেক রোগ-জীবাণু জন্মায় এবং বিস্তার লাভ করে। অনুমান করা হয় অপর্যাপ্ত স্যানিটেশন বিশ্বব্যাপী ৪.০ শতাংশ মৃত্যু এবং ৫.৭ শতাংশ রোগের জন্য দায়ী।
স্যানিটেশনের অভাব একটি মারাত্মক সমস্যা যা বেশিরভাগ উন্নয়নশীল এবং ক্রমবর্ধমান দেশসমূহকে ক্ষতির মুখে ফেলে। মলমূত্র এবং বর্জ্য আলাদা করাটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর মাধ্যমে মানব বর্জ্যের মাধ্যমে সংক্রামিত হতে পারে এমন রোগসমূহ প্রতিরোধ করা সম্ভব। নতুবা উন্নত দেশগুলোর পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশগুলোও রোগ-ব্যাধীর বিস্তার প্রতিরোধে ব্যাপক সমস্যার মধ্যে পরে যেতে পারে।
এই পরিস্থিতি জনস্বাস্থ্যের জন্য যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে যেমন, বর্জ্য পানযোগ্য পানিকে দূষিত করে ফেলতে পারে এবং শিশুদের জন্য ডায়রিয়ার প্রাণনাশী রূপ বয়ে আনতে পারে। উন্নত স্যানিটেশনে এবং হাত ধোওয়া ও পানি বিশুদ্ধকরণের সঠিক চর্চাই পারে প্রতি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়া ১৫লক্ষ শিশুর মৃত্যু রোধ করে তাদের সুস্থ জীবন প্রদান করতে।
অনুমান করা হয় যে প্রতি বছর অপর্যাপ্ত স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলনের ফলস্বরূপ ৫০ লক্ষ মানুষ প্রতিরোধযোগ্য পানিবাহিত রোগে মারা যায়। স্যানিটেশন এর প্রভাব সমগ্র ইতিহাস জুড়ে মানব সমাজকে প্রভাবিত করেছে। স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য স্যানিটেশন একটি অত্যাবশ্যকীয় বিষয়।
ডায়রিয়া
ডায়রিয়ার উল্লেখযোগ্য সমস্যা: ডায়রিয়ার ফলে প্রতি বছর মৃত্যুর পরিমাণ ১৬ থেকে ২৫ লাখের মধ্যে বলে অনুমান করা হয়। আক্রান্তদের বেশিরভাগই পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের ওজন কম হওয়ার ঝুঁকি বেশি যা তাদের তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ (ILI) এবং ম্যালেরিয়া সম্পর্কিত অন্যান্য রোগে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। ডায়রিয়া মূলত মলমুত্রের মাধ্যমে ছড়ায়।
অসংখ্য গবেষণায় দেখা গেছে যে পানযোগ্য পানি এবং স্যানিটেশন এর উন্নয়ন ডায়রিয়ার ঝুঁকি হ্রাস করে। এই ধরনের উন্নয়নের মধ্যে উদাহরণস্বরূপ বলা যায় পানির ফিল্টার ব্যবহার করা, উচ্চমানের পাইপ দিয়ে পানির ব্যবস্থা করা এবং পানি নির্গমনের জন্য ভালো নালা ব্যবস্থাপনা।
খোলা স্থানে মলত্যাগ বা স্যানিটেশন এর অভাব বিভিন্ন রোগ সৃষ্টির একটি প্রধান কারণ; বিশেষত ডায়রিয়া এবং অন্ত্রের কৃমি সংক্রমণের ক্ষেত্রে। উদাহরণস্বরূপ, সংক্রামক ডায়রিয়ার ফলে ২০১১ সালে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে প্রায় ৭ লাখ শিশু মারা যায় এবং ২৫ কোটি শিশু স্কুল কামাই করে। ডায়রিয়ার ফলে শিশুদের মধ্যে অপুষ্টি দেখা দিতে পারে এবং তাদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে। খোলা স্থানে মলত্যাগ হল ডায়রিয়াজনিত মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে প্রতি বছর ২ হাজার জন এবং প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন করে মারা যায়।
অপুষ্টি এবং স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া
অনিরাপদ জল, স্যানিটেশন এবং হাইজিন এর অনুশীলনের অভাবে উদ্ভূত অপুষ্টিজনিত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মৃত্যুর সংখ্যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এস্টিমেশন অনুযায়ী পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে প্রতি বছরে ৮৬০,০০০ জন। অপুষ্টি এবং সংক্রামক রোগগুলোর মধ্যে একাধিক আন্তঃনির্ভরতার দিক থাকায় পানি, স্যানিটেশন এবং হাইজিনের অনুশীলনের অভাবে সৃষ্ট সংক্রামক রোগজনিত অপুষ্টির অনুপাত নির্ধারণ করা খুব কঠিন হয়ে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের মতে, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের অপুষ্টির প্রায় অর্ধেক কারণ বারবার ডায়রিয়া বা অন্ত্রের কৃমি সংক্রমণের সাথে সম্পর্কিত যা মূলত পানি, স্যানিটেশন এবং হাইজিনের অনুশীলনের অভাবেই ঘটে থাকে।
স্যানিটেশনের অভাবে সৃষ্ট রোগ-ব্যাধি
স্যানিটেশন এবং হাইজিনের অভাবজনিত প্রাসঙ্গিক ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি ও রোগসমূহের মধ্যে রয়েছে:
- পানিবাহিত রোগসমূহ, যেগুলো পানযোগ্য পানি দূষিত করতে পারে
- মলমূত্র হতে সংক্রামিত রোগসমূহ
- অন্ত্রের কৃমি দ্বারা সংক্রমণ: বিশ্বব্যাপী প্রায় দুই বিলিয়ন মানুষ মাটিতে জন্মানো কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হয়, এগুলো মানুষের মলে উপস্থিত ডিম্বাণুর মাধ্যমে ছড়ায়। ফলে দুর্বল স্যানিটেশন ব্যবস্থাসম্পন্ন অঞ্চলগুলোর মাটি সহজেই দূষিত হয়ে যেতে পারে।
- শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হওয়া
- অপুষ্টি, বিশেষত শিশুদের মধ্যে
স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি যথাযথ অনুশীলনের মাধ্যমে যেসব রোগের বিস্তার হ্রাস করা যেতে পারে তার তালিকা অনেক দীর্ঘ। উদাহরণস্বরূপ, ভারতে, ১৫ টি রোগের তালিকা দেওয়া হয়েছে যা স্যানিটেশন উন্নতির মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যেতে পারে:
- রক্তস্বল্পতা (অ্যানিমিয়া), অপুষ্টি
- অ্যাস্কারিয়াসিস
- ক্যামপাইলোব্যাক্টেরিওসিস
- কলেরা
- সায়ানোব্যাক্টেরিয়ার বিষক্রিয়া
- ডেঙ্গু
- হেপাটাইটিস
- জাপানি এনসেফালাইটিস (JE)
- লেপ্টোস্পাইরোসিস
- ম্যালেরিয়া
- রিং-ওর্ম (ছত্রাকজনিত এক ধরনের রোগ)
- স্ক্যাবিস
- সিসটোসোমায়োসিস
- ট্রাকোমা
- টাইফয়েড জ্বর
- শিজেলোসিস
- পোলিও আরেকটি রোগ যেটা অনুপযুক্ত স্যানিটেশন এবং হাইজিনের সাথে সম্পৃক্ত।
স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে উদ্বুদ্ধকরণ
অনেক ক্ষেত্রে, এককভাবে স্যানিটেশন সুবিধার ব্যবস্থা করার মাধ্যমে জনগণের সুস্বাস্থ্যের গ্যারান্টি দেয়া যায় না। সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো বলছে, স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলনগুলো স্যানিটেশন সম্পর্কিত রোগের উপর যেমন দুর্দান্ত প্রভাব ফেলেছে তেমনি স্যানিটেশন সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রেও অবদান রাখছে। তাই স্বাস্থ্যবিধির প্রতি উদ্বুদ্ধকরণ স্যানিটেশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং ভাল স্বাস্থ্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে এটি মুখ্য উপাদানও বটে।
স্বাস্থ্যবিধির প্রতি উদ্বুদ্ধকরণ পানি, স্যানিটেশন এবং হাইজিন (WASH:water,sanitation and hygine) সম্পর্কিত রোগসমূহ হ্রাস এবং প্রতিরোধের লক্ষ্যে জনগণকে অভ্যাস পরিবর্তন করতে সক্ষম করার একটি পরিকল্পিত পদ্ধতি। এটি সাধারণত WASH-পরিষেবসমূহ এবং এর কার্যক্রম ও মেইনে্টনেন্সভুক্ত অবকাঠামোর দায়িত্ব নেওয়ার জন্য জনগণকে আকৃষ্ট করার জন্য একটি অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতি। স্বাস্থ্যবিধি প্রচারের তিনটি মূল উপাদান হল: (wash সংক্রান্ত) তথ্য এবং জ্ঞান একজন আরেকজনকে জানিয়ে দেওয়া, আক্রান্তদেরকে একত্র করা এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী এবং সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা।
পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়াদি
নিদের্শক জীবসমূহ
পরিবেশ থেকে নেয়া নমুনাসমূহ পর্যবেক্ষণের সময় বিভিন্ন ধরনের নির্দেশক জীব ব্যবহার করা হয় গৃহীত নমুনাতে কি পরি মলমুত্রজনিত দূষণ ঘটেছে তা নির্ণয় করতে। ব্যাকটিরিওলজিকাল পানি বিশ্লেষণের জন্য সাধারণত ব্যবহৃত নির্দেশকগুলোর মধ্যে রয়েছে, ই কোলি (E. coli) ব্যাকটিরিয়া এবং অ-নির্দিষ্ট মলের কোলিফর্ম ব্যাক্টেরিয়াসমূহ। মাটি, নর্দমার স্লাজ (কাদামাটি), নর্দমার বায়োসলিড (জৈবসার) অথবা শুষ্ক টয়লেট থেকে নেয়া মলের গুঁড়োর ক্ষেত্রে নির্দেশক হিসেবে হেলমিন্থ (কৃমি) ডিম্বাণু সাধারণত ব্যবহার করা হয়। হেলমিন্থ ডিম্বাণু বিশ্লেষণের সাথে সাথে, ডিম্বাণুগুলো নমুনা থেকে বের করা হয়। তার পরে কার্যকর ও অকার্যক্ষমতাসম্পন্ন ডিম্বাণুর মধ্যে পার্থক্য করার জন্য একটি কার্যক্ষমতার পরীক্ষা করা হয়। তারপর নমুনায় হেল্মিন্থ ডিম্বাণুর কার্যকর ভগ্নাংশটি গণনা করা হয়।
ময়লা পানি এবং ঝড়-বৃষ্টির পানির ব্যবস্থাপনা
ময়লা পানি ব্যবস্থাপনা বলতে ময়লা পানি সংগ্রহ, পরিশোধন, নিষ্কাশন বা পুনরায় ব্যবহারকে বোঝানো হয়।
উন্নত দেশগুলোর শহরাঞ্চলে স্যানিটেশন ব্যবস্থা সাধারণত এমন হয়: মাধ্যাকর্ষণ বলকে কাজে লাগিয়ে নর্দমাগুলোতে ময়লা পানি জমা করা হয়। তারপর সেই পানি পরিশোধিত করে নদী, হ্রদ বা সমুদ্রে পুনরায় ব্যবহারের জন্য নিষ্কাশন করা হয়। নর্দমাগুলো হয়ত ঝড়ের পানি যাওয়ার ড্রেনগুলোর সাথে মিলিত থাকে বা সেগুলো পৃথকভাবে স্যানিটারি নর্দমা হিসাবেই ব্যবহৃত হয়। সংযুক্ত নর্দমা সাধারণত এসব দেশের কেন্দ্রীয়, পুরানো অংশ বা শহুরে অঞ্চলে পাওয়া যায়। ভারী বৃষ্টিপাত এবং অপর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনার ফলে সংযুক্ত বা পৃথক নর্দমায় উপচে পড়ার মত অবস্থা হতে পারে। ফলে নর্দমার পানি রাস্তায় বা ঘরবাড়িতে ঢুকে পড়তে পারে। অনেক সময় কলকারখানাসমূহ তাদের বর্জ্য পানি পৌরসভার নর্দমায় ছেড়ে দেয়। যদি এই কারখানার বর্জ্য পানি আগে থেকে পরিশোধিত না করা থাকে তাহলে তাহলে ময়লা পানি পরিশোধনের কাজটি আরো অধিক মাত্রায় জটিল হয়ে যায়।
উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বেশিরভাগ ময়লা পানি পরিশোধন না করেই পরিবেশে নির্গত করা হয়। কেন্দ্রীয় নর্দমা ব্যবস্থাপনার বিকল্প হিসেবে অনসাইট স্যানিটেশন, বিকেন্দ্রীয় ময়লা পানি ব্যবস্থাপনা, শুষ্ক টয়লেট ইত্যাদিও উল্লেখযোগ্য।
কঠিন বর্জ্য নিষ্পত্তিকরন
কঠিন বর্জ্য নিষ্পত্তি করার সবচেয়ে পরিচিত জায়গা হল খোলা ময়দান; যেখানে ময়লা পুতে রাখা হয়। তবে এ ছাড়াও আরো কয়েকটি পদ্ধতি আছে: বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলা, পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলা, জৈব সার এবং জৈব জ্বালানিতে রূপান্তরকরা। খোলা ময়দানের ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোতে বর্জ্য নিষ্পত্তিকরণের কঠোর নিয়মতান্ত্রিকতা থাকে যেখানে স্বল্পোন্নত দেশগুলো কম কঠোর নিয়মকানুন প্রয়োগ করে থাকে।
জীবাণুর বিস্তার রোধে প্রতিদিন বর্জ্য নিষ্পত্তিকরণ অত্যন্ত জরুরী। তাছাড়া উন্নত দেশগুলোতে ভূগর্ভস্থ পানির দূষণ রোধে বর্জ্য নিষ্পত্তিকরণের সমতলভূমি যেন কাদামাটির সংস্পর্শে না আসে সেজন্য পেরিমেটার সিলিং এর ব্যবস্থা থাকে।
কঠিন বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলার ক্ষেত্রে বর্জ্য থেকে বিষাক্ত ও বায়ূ দূষক পদার্থ নির্গত হয়। পুনর্ব্যবহারযোগ্য করন ও জৈব জ্বালানীতে রূপান্তর করনই হল টেকসই বিকল্প ব্যবস্থা যাতে সাধারণত উচ্চতর লাইফসাইকেল কস্টের প্রতি লক্ষ রাখা হয়, বিশেষত বাস্তুসংস্থানের ধারা বিবেচনা করলে এমনটা বলতেই হয়। আর বর্জ্য থেকে জৈবসার প্রস্তুত করাটা অনেকটা সারের বাজার চাহিদার উপর সীমাবদ্ধ।
অন্যান্য খাত
খাদ্য শিল্প খাত
ফুড ইন্ডাস্ট্রি (খাদ্য শিল্প)-তে স্যানিটেশন বলতে বোঝায় খাবার প্রস্তুত করার জন্য ব্যবহৃত যেসব স্থানের সাথে খাবারে সংস্পর্শ ঘটে (food-contact surfaces) সেসব স্থান নিয়মিত এমন পদ্ধতিতে পরিষ্কারের ব্যবস্থা করা যে পদ্ধতি অণুজীবের উদ্ভিদকোষ ধ্বংস করতে কার্যকর এবং অন্যান্য অবাঞ্ছিত অণুজীবের সংখ্যা যথেষ্ট পরিমাণে হ্রাস করতে সক্ষম তবে ভোক্তার জন্য খাবার বা তার সুরক্ষাতে বিরূপ প্রভাব ফেলে না (ইউ. এস. ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, কোড অব ফেডারেল রেগুলেশনস, 21CFR110, USA-এর সংজ্ঞা)। স্যানিটেশন মান বজায় রাখার পদ্ধতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড ইন্ডাস্ট্রির জন্য বাধ্যতামূলক। একইভাবে জাপানেও খাদ্য স্যানিটেশন আইনের আনুগত্যের মাধ্যমে খাদ্য স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা আবশ্যক।
খাদ্য ও বায়োফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পে "স্যানিটারি সরঞ্জাম" শব্দের অর্থ এমন সরঞ্জাম যা ক্লিন-ইন-প্লেস (সিআইপি) এবং স্টেরিলাইজেশন-ইন-প্লেস (এসআইপি) পদ্ধতি ব্যবহার করে পুরোপুরি পরিষ্কারযোগ্য: এই পদ্ধতিতে সকল দ্রবণ এবং অন্যান্য তরল পরিষ্কার থেকে সম্পূর্ণ নিষ্কাশনযোগ্য। এই পদ্ধতি ডিজাইনের ক্ষেত্রে বিবেচনা করতে হবে খাদ্য বর্জ্য নিষ্কাশনে সমস্যা যতটা কমানো যায়। মোট কথা, পরিচ্ছন্নতা বাড়াতে এই খাদ্য সরঞ্জামগুলো মরিচাবিহীন বিশেষ ধরনের ইস্পাত স্টিল-316L দিয়ে বানানো হয়। ব্যাকটিরিয়া অনুপ্রবেশের সম্ভাবনা কমাতে খাবার সংস্পর্শে আসার স্থান বা তল সাধারণত ০.৫ মাইক্রোমিটরের কম অমসৃণ রাখতে ইলেক্ট্রোপলিশ করা হয়।
উন্নয়নশীল দেশসমূহ
২০০৬ সনের ডিসেম্বরে, যুক্তরাজ্যের সাধারণ পরিষদ ২০০৮ সনকে "আন্তর্জাতিক স্যানিটেনশন বর্ষ" হিসেবে ঘোষণা করে। এই বর্ষের লক্ষ্য ছিল স্যানিটেশনের লক্ষ্য অর্জনে আরো গণসচেতনতা গড়ে তোলা এবং কার্যকর উদ্যোগ হাতে নেয়া।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য নং ৬ (২০১৬ অনুযায়ী)
২০১৬ সনে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য এই সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্য হিসেবে প্রতিস্থাপিত হয়। স্যানিটেশন এখন বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের পূর্বশর্ত এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ৬ (এসডিজি ৬) এর একটি অংশ। এর লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বত্র প্রত্যেকের জন্য শৌচাগার ব্যবহারের সুযোগ নিশ্চিত করা।
স্যানিটেশন লক্ষ্যমাত্রার জন্য একটি সূচক হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে "সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়ার সুবিধা সহ নিরাপদ স্যানিটেশন পরিষেবাগুলো ব্যবহারকারী জনসংখ্যার অনুপাত"-কে। সমন্বিত পর্যবেক্ষণ অভিযান (JMP) কর্তৃক ২০১৭ এর বেসলাইন এস্টিমেশনের মান অনুযায়ী বর্তমানে ৪.৫ বিলিয়ন (৪৫০ কোটি) লোক নিরাপদ স্যানিটেশন সেবা থেকে বঞ্চিত। জেএমপি হল ইউনিসেফ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ৬ (SDG6) এর অগ্রগতি পর্যবেক্ষণের জন্য যৌথ পর্যবেক্ষণ অভিযান।
সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য নং ৭ (২০১৫ পর্যন্ত)
২০০০ সালে নিউইয়র্কের মিলেনিয়াম সামিট এবং জোহানেসবার্গে টেকসই বিকাশের উপর ২০০২-বিশ্ব সম্মেলন চলাকালীন, জাতিসংঘ সংযুক্ত দেশগুলোর দারিদ্র্য বিমোচন ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (MDGs)প্রস্তুত করেছে। ২০১৫ সালের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যটি ছিল ১৯৯০ সালের বেসলাইন বর্ষে পানযোগ্য পানি এবং স্যানিটেশনের সুবিধা বঞ্চি লোকের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনা। ২০০৬ সালের জেএমপি এবং জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এমডিজি স্যানিটেশন লক্ষ্যমাত্রার অগ্রগতি বেশ মন্থর এবং পূরণীয় লক্ষ্যমাত্রা এবং বর্তমান বাস্তবতার মধ্যে বৃহত ব্যবধান বিরাজ করছে।
এই ব্যবধানের জন্য অসংখ্য কারণ রয়েছে। একটি প্রধান হল স্যানিটেশন একটি মৌলিক বিষয় হওয়া সত্ত্বেও অন্যান্য বিষয়ের মত এর প্রতি রাজনৈতিকভাবে তেমন নজর দেওয়া হয় না। আন্তর্জাতিক কর্মসূচিসমূহে স্যানিটেশনকে ততটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না যতটা অন্যান্য সংশ্লিষ্ট প্রকল্প যেমন পানি সরবরাহ প্রভৃতির প্রতি জোর দেওয়া হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইউনিসেফ কর্তৃক পরিচালি পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন-এর যৌথ মনিটরিং অভিযান জাতীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্তরে বিভিন্ন ধরনের পানযোগ্য পানির উৎস এবং স্যানিটেশন সুবিধা নিয়ে প্রতি দুই বছর নতুন নতুন এস্টিমেশন প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। ২০১৫ সালের জেএমপি রিপোর্টে বলা হয়েছে:
১৯৯০ থেকে ২০১৫ এর মধ্যে, বিশ্বব্যাপী খোলা স্থানে মলত্যাগের হার ৩৮% থেকে ২৫% এ নেমে এসেছে। ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাপী প্রায় এক বিলিয়নের (৯৪৬ মিলিয়ন) কম লোক এখনও খোলা মলত্যাগ করছে।
"উন্নত স্যানিটেশন" এর জেএমপি সংজ্ঞা অনুযায়ী ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাপী শহরাঞ্চলের জনসংখ্যার ৮২% এবং গ্রামীণ জনসংখ্যার ৫১% উন্নত স্যানিটেশন সুবিধা ব্যবহার করছে।
আর্থিক সুবিধা
মানুষের মলমূত্রের উপযুক্ত ব্যবস্থাপনার ফলে সমাজ নানাবিধ সুবিধা প্রাপ্ত হয়। এই সুবিধাগুলো গণস্বাস্থ্যের পাশাপাশি পরিবেশের জন্যও উল্লেখযোগ্য। অনুমান করা হয় স্যানিটেশনে ব্যয় করা প্রতিটি মার্কিন ডলারের বিনিময়ে সমাজে ৫.৫ মার্কিন ডলার ফেরৎ পাওয়া যায় অর্থাৎ স্যানিটেশনে এক টাকা খরচ করলে লাভ আসছে সাড়ে চার টাকা।
বিভিন্ন উদ্যোগ
২০১১ সালে বিল এবং মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন মানব বর্জ্যের যথাযথ ব্যবস্থাপনার জন্য নিরাপদ এবং অধিকতর কার্যকর উপায়সমূহের প্রচারের জন্য 'রাইনেন্ট দ্য টয়লেট চ্যালেঞ্জ' চালু করে। এই কর্মসূচির লক্ষ্য এমন প্রযুক্তির বিকাশ সাধন করা যা বিশ্বব্যাপী স্যানিটেশন বৈষম্য দূর করতে সহায়তা করতে পারে।
ইতিহাস
বিস্তারিত জানতে দেখুন: শৌচাগার
প্রধান মানব বসতিগুলো প্রথম দিকে কেবল সেসব স্থানেই বিকাশ লাভ করতে পারত যেখানে প্রচুর পরিমাণ পানির উৎস ছিল যেমন নদী বা প্রাকৃতিক ঝরনার কাছাকাছি স্থানসমূহ। ইতিহাসের সর্বত্র মানব সম্প্রদায় তাদের বসতিতে পানি সরবরাহ এবং বর্জ্য পানি নিষ্কাশনের জন্য বিভিন্ন যান্ত্রিক ব্যবস্থা উদ্ভাবন করে। সেই সময় ময়লা পানি নিষ্কাশনের প্রধান লক্ষ্যই থাকত বর্জ্য পানিকে কোনো প্রাকৃতিক পানির উৎসে ছেড়ে দেওয়া যেমন নদী বা সমুদ্রে ছেড়ে দেওয়া যাতে সেই পানি জলাধারের পানিতে মিশে যায় এবং স্রোতে টানে ফিকে ভেসে চলে যায়।
এশিয়ার সিন্ধু উপত্যকার সভ্যতার মধ্যে স্যানিটেশন ব্রোঞ্জ যুগের জনসাধারণের পানি সরবরাহ এবং স্যানিটেশন এর একটি উদাহরণ (৩৩০০-১৩০০ খৃস্টপূর্বাব্দ)।
প্রাচীন রোমে স্যানিটেশন বেশ বিস্তৃত ছিল। জনবহুল অঞ্চল থেকে বর্জ্য পানি সংগ্রহ ও অপসারণের জন্য রোমে ব্যবহৃত যান্ত্রিক ব্যবস্থার ড্রেনগুলো ছিল পাথর এবং কাঠের নির্মিত। উদাহরণস্বরূপ রোমের টাইবার নদীতে ক্লোকা ম্যাক্সিমা দেখুন। অনুমান করা হয় যে প্রাচীন রোমের প্রথম নর্দমাগুলো খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ এবং ৭৩৫ অব্দের মধ্যে নির্মিত হয়েছিল। তবুও, সেই সময় রোমে দুর্বল স্যানিটেশনের কারণে বেশ কয়েক প্রজাতি হেলমিন্থ (অন্ত্রের কৃমি)-র ব্যাপক বিস্তৃতি লক্ষ করা যায় যে কারণে তাদের মধ্যে পাতলা পায়খানা ও ডিসেন্ট্রির সমস্যা বিরাজমান ছিল।
আদি মধ্যযুগ পর্যন্ত বেশিরভাগ ইউরোপে অন্যান্য স্যানিটেশন সম্পর্কিত রেকর্ড খুব কম রয়েছে। মধ্যযুগে ইউরোপ ও এশিয়া জুড়ে দুর্বল স্যানিটারি ব্যবস্থা এবং জনসংখ্যাধিক্য ছিল ব্যাপক। এর ফলেই দেখা দেয় বড় বড় মহামারী যেমন জাস্টিনিয়ানের প্লেগ (৫৪১-৫৪২) এবং কালো মড়ক (১৩৪৭-১৩৫১) যার ফলে লক্ষ লক্ষ লোক মারা গিয়েছিল। আঞ্চলিকভাবে স্যানিটেশন-এর ঘাটতির কারণে, মধ্যযুগীয় সময়ে ইউরোপে শিশু মৃত্যুর হার ছিল উচ্চ।