Мы используем файлы cookie.
Продолжая использовать сайт, вы даете свое согласие на работу с этими файлами.
পুরুষ ও নারীবাদ
Другие языки:

পুরুষ ও নারীবাদ

Подписчиков: 0, рейтинг: 0

ঊনবিংশ শতাব্দি থেকেই পুরুষেরা নারীবাদের গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছেন, আর তাদের এই অংশগ্রহণ নারীবাদ আন্দোলনের প্রতিটি তরঙ্গেই দৃশ্যমান ছিল। নারীবাদী পুরুষরা সমাজের বিস্তৃত ক্ষেত্রে নারীদের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করেছেন। আর এই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য তারা সাধারণত কৌশলগতভাবে সমাজে পুরুষের বিশেষ সুবিধা বা মেল প্রিভিলেজকে ব্যবহার করতে পেরেছেন। যাইহোক, নারীবাদী পুরুষেরা বেল হুকস এর মত অনেক নারীবাদী লেখিকার পাশে দাঁড়িয়েও যুক্তিতর্কে অংশগ্রহণ করেছেন। লিঙ্গবাদ এবং লৈঙ্গিক ভূমিকার সমাজ-সাংস্কৃতিক বিভিন্ন বাঁধা হতে পুরুষের স্বাধীনতার বিষয়টিও নারীবাদী আন্দোলনের একটি বিশেষ অংশ।

ইতিহাস

পারকার পিলসাবারি এবং অন্যান্য পুরুষ এবলিশনিস্টগণ নারীবাদী মতাদর্শকে ধারণ করেন এবং প্রকাশ্যে নারীবাদী হিসেবে পরিচিত হন। তারা তাদের প্রভাব প্রতিপত্তিকে কাজে লাগিয়ে নারীদের এবং কৃতদাসদের অধিকার আদায়ের কাজ করেন।

পিলসবারি ১৮৬৫ সালে আমেরিকান ইকুয়াল রাইট এসোসিয়েশন এর সংবিধান এর খসরা তৈরির কাজে সাহায্য করেন। তিনি নিউ হ্যাম্পশায়ার উইমেন সাফরেজ এসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে আসীন ছিলেন। ১৮৬৮ এবং ১৮৬৯ সালে তিনি এলিজাবেথ ক্যাডি স্ট্যাননের সাথে রেভোল্যুশন নামক পত্রিকা সম্পাদনার কাজ করেন।

সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতক জুড়ে বেশিরভাগ প্রো-ফেমিনিস্ট লেখকেরই উথান ঘটে ফ্রান্সে। এদের মধ্যে ছিলেন দেনিস দিদেরো, পল হেনরি থিরি দলবাক এবং চার্লস লুই দে মতেস্কু। মতেস্কু তার এপিস্টোলারি নোভেল পারশিয়ান লেটারএ রক্সানা নামে একটি চরিত্র তুলে ধরেন যিনি পিতৃতন্ত্রকে পরাভূত করেছিলেন। এই রচনায় তিনি ডেস্পোটিজম এর বিরুদ্ধেও যুক্তি তুলে ধরেছিলেন। অষ্টাদশ শতকে অনেক পুরুষ দার্শনিককে মানবাধিকার বিষয়ক সমস্যার প্রতি আকৃষ্ট হতে দেখা যায়। ফরাসী দার্শনিক মার্কুইস দে কুঁদরসে নারীদের শিক্ষাগ্রহণকে সমর্থন দেন। এসময় আইনের চোখে নারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে এটা জনগণ বিশ্বাস করতে শুরু করলে উপযোগবাদী জেরেমি বেন্থামের মত অনেক উদারপন্থীগণ প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীদের সমান অধিকারের সাবী করেন।

ঊনবিংশ শতকে নারীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। ইংরেজ আইনগত ইতিহাসবেত্তা হেনরি মেইন তার এনশিয়েন্ট ল(১৮৬১) গ্রন্থে পিতৃতন্ত্রের অবশ্যম্ভাবিতার সমালোচনা করেন। ১৮৬৬ সালে দ্য সাবজেকশন অব উইমেন গ্রন্থের রচয়িতা জন স্টুয়ার্ট মিল ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নারী অধিকার সংক্রান্ত একটি পিটিশন পেশ করেন এবং রিফর্ম অ্যাক্ট ১৮৬৭ এর একটি সংশোধনীকে সমর্থন করেন। তার প্রচেষ্টাগুলো ছিল বিবাহিতা নারীদের সমস্যাগুলোর উপর। সেসময় ভিক্টোরিয়ান নারীদের বিবাহ অর্থ ছিল তাদের স্বাধীনতা, অধিকার এবং সম্পত্তি বিষর্জন দেয়া। নারী অধিকার আন্দোলনে জন স্টুয়ার্ট মিলের যুক্ত হওয়ার মূলে ছিল হ্যারিয়েট টেইলরের সাথে তার দীর্ঘ বন্ধুত্বের সম্পর্ক, যার সাথে তার বিবাহও হয়েছিল।

১৮৪০ সালে নারীদেরকে লন্ডনে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড অ্যান্টি-স্লেভারি কনভেনশনে অংশগ্রহণ করতে বাঁধা দেয়া হয়। নারীদের অংশগ্রহণের সমর্থকরা যুক্তি দেখান, দাসত্বমুক্তির উদ্দেশ্যে সংঘটিত সম্মেলনে নারী ও পুরুষকে একত্রে বসায় নিষেধাজ্ঞা এক ধরনের কপটাচার, একই ধরনের বিচ্ছিন্নতাবাদী নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের আলাদা করতে ব্যবহার করা হয়। এরপরও যখন নারীদেরকে সামনের দিকে বসতে দিতে নিষেধ করা হয় তখন এবলিশনিস্ট উইলিয়াম লয়েড গ্যারিসন, চার্লস লেনক্স রেমন্ড, ন্যাথানিয়েল পিবডি রজার্স এবং হেনরি স্ট্যানন নিরবে নারীদের সাথে আসনগ্রহণ করেন।

অ্যান্টি-স্লেভারি কনভেনশনে নারীদের অংশগ্রহণের বিরুদ্ধে একটি কথা ছিল, নারীদেরকে পুরুষদের দায়িত্বগুলো নেবার জন্য সৃষ্টি করা হয় নি। এবলিশনিস্ট থমাস ওয়েন্টওর্থ হিগিনসন এর বিরুদ্ধে গিয়ে বলেন:

আমি ভেবে পাইনা, একজন নারী যখন তার চোখ খুলে এই শ্রদ্ধার বদলে আসা অবজ্ঞাকে দেখতে পান তখন তিনি এই ধিক্কারের শিহরণ কীভাবে এড়িয়ে যেতে পারেন। এটা সেই অবজ্ঞা যা তাকে দীর্ঘদিন যাবত আইনগত, রাজনৈতিক এবং শিক্ষাগত অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে... [একজন নারীর সমান অধিকার প্রয়োজন] এটা একারণে নয় যে তিনি পুরুষের 'বেটার হাফ', বরং একারণে যে তিনি পুরুষের 'আদার হাফ'। একজন এঞ্জেল হিসেবে তার এই অধিকারগুলোর প্রয়োজন নেই, তার এই অধিকারগুলোর প্রয়োজন মানবতার একটি অংশ হিসেবে।

আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানী মাইকেল কিমেল নারীবাদের প্রতি সংবেদনশীল পুরুষদেরকে তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করেন: প্রোফেমিনিস্ট, ম্যাসকুলিনিস্ট এবং অ্যান্টিফেমিনিস্ট। প্রোফেমিনিস্ট পুরুষগণ বিশ্বাস করেন নারীবাদী আন্দোলনের ফলে আসা পরিবর্তন পুরুষদেরও উপকার করবে। তারা পাবলিক স্ফিয়ারে নারীদের অধিক অংশগ্রহণ এবং বাসায় শ্রমবণ্টনের পরিবর্তনকে সমর্থন করেন। অ্যান্টিফেমিনিস্টরা নারীদের ভোটাধিকার এবং পাবলিক স্ফিয়ারে তাদের অংশগ্রহণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন, চিরাচরিত পিতৃতান্ত্রিক পারিবারিক মডেলকে সমর্থন করেন। আর ম্যাসকুলিনিস্ট আন্দোলন পুরুষদের একটি দলের আন্দোলন। তাদের মতে যার জন্ম "পুরুষত্বে নারীত্বারোপের" এর একটি পরোক্ষ প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই আন্দোলনের জন্ম।

পুরুষের স্বাধীনতা আন্দোলন

পুরুষদেরকে লৈঙ্গিক ভূমিকার সীমাবদ্ধতা হতে মুক্ত হতে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে একটি সচেতনতা সৃষ্টিকারী দলের দ্বারা ১৯৭০ এর দশকের শুরুর দিকে পুরুষের স্বাধীনতা আন্দোলনের শুরু হয়। আন্দোলনের প্রবক্তাগণ যুক্তি দেখান, মেল বন্ডিং বা পুরুষত্বের বন্ধন হল একটি প্রক্রিয়া যার ফলে পুরুষদেরকে পুরুষত্বের একক রুপে পরিচিত হতে হয়, যা পিতৃতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। এরকম বন্ধনের পরিবর্তে পুরুষের স্বাধীনতা আন্দোলন পুরুষত্বের ধারণার খারাপ দিকগুলোকে স্বীকার করে, যেগুলো হল একক পরিবারে পুরুষের জীবিকার্জকের অবশ্যাম্ভাবী ভূমিকার ফাঁদে পড়া এবং পুরুষদের আবেগ প্রকাশ একটি ট্যাবু হিসেবে বিবেচিত হওয়া। এই আন্দোলনের তাৎপর্য হল, এটা পুরুষদেরকে তাদের পুরুষত্ব বজায় রেখেও নিজেদের আবেগের প্রতি উন্মুক্ত হওয়াকে গ্রহণযোগ্য করতে পেরেছে।

জীববিজ্ঞানগত পুরুষ-লিঙ্গ এবং পুরুষত্বের সামাজিক গঠন বা সোশ্যাল কনস্ট্রাকশনের মধ্যে সম্পর্ককে কিছু বিশেষজ্ঞ নারীবাদী আন্দোলনে পুরুষের অংশগ্রহণের বাঁধা হিসেবে মনে করেছিলেন। এটা সূক্ষ্মভাবে সেক্স রোল থিওরির বিপক্ষে যায় যা জেন্ডারকে সেক্স এর জীববিজ্ঞানগত পার্থক্য দ্বারা নির্ধারিত হিসেবে দেখে থাকে। পুরুষের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলো ছিল জেন্ডারগুলো যৌক্তিক, এদের একটি ছাড়া আরেকটির অস্তিত্ব নেই এবং জেন্ডার সম্পূর্ণভাবে একটি সোশ্যাল কনস্ট্রাকশন, জীববিজ্ঞানগতভাবে এটি চাপিয়ে দেয়া নয়। এভাবে দ্বিতীয় তরঙ্গের প্রোফেমিনিস্ট লেখকগণ সামাজিক আচার, প্রতিষ্ঠান এবং জেন্ডারের ধারণার মধ্যকার সম্পর্ক উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

অ্যান্টিফেমিনিস্ট প্রতিক্রিয়া

মেনস রাইটস মুভমেন্ট বা পুরুষদের অধিকার আন্দোলনকে কিছু নারীবাদী অ্যান্টিফেমিনিস্ট প্রতিক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন।

মেনস রাইটস এবং ম্যাসকুলিনিস্ট

১৯৮০ এর দশকের প্রথম দিকে পুরুষদের স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতিক্রিয়া হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে মেনস রাইটস বা পুরুষদের অধিকার এর প্রচারণা শুরু হয়। মেনস রাইটস এর কর্মীগণ নিজেদেরকে ম্যাসকুলিনিস্ট হিসেবে পরিচয় দান করেন।

ম্যাসকুলিনিস্টগণ দাবী করেন যে, নারীদের চিরাচরিত সুবিধাগুলোর বর্জন নারীবাদের অগ্রসর হবার জন্য যথেষ্ট নয়, তাই তাদের নিজেদের উপর পুরুষত্ব আরোপের মাধ্যমে নিজেদেরকে পুনরুজ্জীবিত করা উচিত। একই ধরনের যুক্তি মাসকুলার খ্রিশ্চিয়ানিটি নামে একটি ধর্মীয় পরিমণ্ডলের আন্দোলনেও শোনা যায়।

মেনস রাইটস কর্মীদের আরেকটি বিশ্বাস ছিল যে, পুরুষের সমস্যাগুলো নারীদের সমস্যাগুলোর চেয়ে কম প্রকাশিত হয় এবং নারীদের উপর আসা যেকোন নির্যাতন পুরুষের ঘাড়েই বর্তায়। তারা দাবী করেন, পুরুষের অর্থনৈতিক বোঝা, জীবিকার্জকের ভূমিকা, কম গড় আয়ু এবং ডিভোর্স, কাস্টাডি আইন ও গর্ভপাত আইনে পুরুষের উপর থাকা বৈষম্যগুলো পুরুষের ভুক্তভোগী হবার সাক্ষ্য দেয়।

এই প্রচারণা সবচেয়ে বেশি কৃতকার্য হয়েছে পারিবারিক আইনের আইনগত সংশোধনের মাধ্যমে, বিশেষ করে চাইল্ড কাস্টডির ক্ষেত্রে। মেনস রাইটস এর কর্মীরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের জুডিশিয়ারি সিস্টেম চাইল্ড কাস্টডির ক্ষেত্রে পিতাদের উপর বৈষম্যের সৃষ্টি করে কারণ মাকেই সন্তানের প্রধান যত্নপ্রদানকারী হিসেবে দেখা হয়। তারা দাবী করেন, জীবিকার্জকের ভূমিকার কারণে পুরুষদের উপর অর্থনৈতিক বোঝা আসায় সন্তানদের যত্ন নেয়া পুরুষের জন্য কঠিন হয়ে যায়, আর কোর্টে এই সমস্যাকে খুব একটা পাত্তা দেয় না।

কিছু সংগঠন যেমন ন্যাশনাল কোয়ালিশন অব ফ্রি মেন (এনসিএফএম) কীভাবে লিঙ্গ বৈষম্য পুরুষদের প্রভাবিত করে সেটা নিয়ে পরীক্ষা করার প্রচেষ্টা চালায়। যেমন এই দলটি বলে নারীদের অনুকূলে থাকা কাস্টডি অধিকারগুলো পুরুষদের উপর বৈষম্যের সৃষ্টি করে কারণ এগুলো এই বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে যে প্রাকৃতিকভাবেই নারীরা পুরুষের চেয়ে ভাল যত্নপ্রদান করতে সক্ষম। সেই সাথে নারীরা পুরুষের চেয়ে কম নিন্দনীয় এই বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে একই অপরাধের জন্য জুডিশিয়ারি সিস্টেম কর্তৃক কম সাজা পান। এভাবে, এনসিএফএম এর মত সংগঠনগুলো এরকম বিষয়ে সচেতনতা ও সমর্থন বৃদ্ধির কাজ করে।

মেল ফেমিনিজম এবং প্রোফেমিনিজম

নারীবাদী লেখিকা শিরা টারান্ট বলেন, ইতিহাসে অনেক পুরুষ নারীবাদী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন এবং গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। আজ, মাইকেল ফ্লাড, মাইকেল মেসনার এবং মাইকেল কিমেলের মত পণ্ডিতগণ পুরুষ বিষয়ক গবেষণা বা মেনস স্টাডি এবং প্রোফেমিনিজমের সাথে যুক্ত।

পুরুষেরা নারীবাদী হতে পারবেন কি পারবেন না এটা নিয়ে নারীবাদে একটি বিতর্ক রয়েছে। কিছু নারীবাদী, যেমন সিমোন ডি বেভোয়া তার বিখ্যাত রচনা দ্য সেকেন্ড সেক্স এ বলেছেন, লিঙ্গদ্বয়ের মাঝের অন্তর্নিহিত পার্থক্যের জন্য পুরুষেরা নারীবাদী হতে পারবেন না।সেপারেটিস্ট ফেমিনিস্টগণও এই ধারণা পোষণ করে থাকেন। তাদের মতে, কেবল পুরোপুরিভাবে পুরুষত্বের দৃষ্টিভঙ্গিকে বর্জন করলেই নারীবাদ নারীদেরকে নিজেদের শব্দে সংজ্ঞায়িত করতে পারবে, আর নারীবাদী আন্দোলনে পুরুষদের অংশগ্রহণ সামাজিক পরিবর্তনে পিতৃতান্ত্রিক মূল্যবোধ স্থাপন করবে। কিছু নারীবাদী লেখিকা বলেন, পুরুষেরা নারীদের মত একই নির্যাতনের শিকার হন না, নারীদের অভিজ্ঞতাগুলোর অনুভূতি গ্রহণ করতে পারেন না এবং তাই তারা নারীবাদী আন্দোলন বা ধারণায় গঠনমূলক অবদান রাখতে পারবেন না।

আবার অনেক নারীবাদী মনে করেন, নারীবাদী আন্দোলনে পুরুষের উপস্থিতি এবং স্বীকৃতি নারীদের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অনেক নারীবাদী লেখিকা দাবী করেছেন, নারীদের বিরুদ্ধে চলা লিঙ্গবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার ক্ষেত্রে নিজেকে নারীবাদী হিসেবে পরিচয় দেয়াই একজন পুরুষের জন্য সবচাইতে শক্তিশালী অবস্থান। তারা বলেন, নারীবাদী আন্দোলনে পুরুষের অংশগ্রহণকে অনুমতি দেয়া তো বটেই, সেই সাথে অনুপ্রাণিত করা উচিত। কিছু নারীবাদীর কাছে, নারীবাদী আন্দোলনে পুরুষের অংশগ্রহণ হল নারীবাদী আন্দোলনকে বিশ্বায়িত করা বা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার একটি প্রক্রিয়া, এবং এর প্রাসঙ্গিকতার জন্যই এটা গুরুত্বপূর্ণ। পুরুষদেরকে নারীবাদী আন্দোলনে অংশগ্রহণে অনুপ্রাণিত করার ক্ষেত্রে একটি চ্যালেঞ্জ হল জেন্ডার এবং আইডেন্টিটির পরষ্পরবিরোধী উপাদানগুলোর মধ্যে বিচ্ছিন্নতা। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আফ্রিকান আমেরিকান পুরুষেরাই সিভিল রাইট মুভমেন্ট এর সাথে লৈঙ্গিক নির্যাতনের সমাপ্তির মধ্যকার সম্পর্ক বুঝতে সক্ষম হন নি। সিভিল রাইট মুভমেন্ট বা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আফ্রিকান আমেরিকানদের মধ্যে যে বন্ধন তৈরি হয় তা আফ্রিকান আমেরিকান নারী ও পুরুষের মাঝে সংহতি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। এই পথটি অন্য বিষয়গুলোতেও প্রযোজ্য এবং নারীবাদের বেলায়ও কার্যকরী হতে পারে। নারী ও পুরুষরা এই বিভিন্ন বিষয়ের মাঝের সম্পর্ক বুঝতে সক্ষম হলে তা নারীবাদের জন্যই অনেক উপকারী হবে। থিওরি অব স্ট্র্যাটেজিক ইন্টারসেকশনালিটি অনুযায়ী আমাদের আইডেন্টিটি বা পরিচয়ের এমন একটি অংশের অভিজ্ঞতাকে যদি ব্যবহার করা হয় যা আরেকটি অংশের সাথে ইন্টারসেক্ট করেছে তাহলে তা আরও নতুন উপাদান যুক্ত করার মাধ্যমে নারীবাদী আন্দোলনকেই শক্তিশালী করবে। অন্যান্য নারী নারীবাদী বলেন পুরুষেরা নারীবাদী হতে পারবে না কারণ তারা নারী নন, তারা নারীদের সমস্যা বুঝতে পারেন না, আর তারা নারীদের বিরুদ্ধে যে শ্রেণী নির্যাতকের ভূমিকায় দাঁড়িয়েছে সেই শ্রেণীরই সদস্য। তারা দাবী করেন পুরুষেরা অন্তর্নিহিতভাবেই বিশেষ সুবিধা ভোগ করেন যা তাদেরকে নারীবাদী সংগ্রামের সাথে পরিচিত হতে বাঁধা দান করে আর তাই নারীবাদী হওয়া তাদের জন্য অসম্ভব।

পুরুষদের নারীবাদী হওয়া সমর্থন করে এমন একটি যুক্তি হল, নারীবাদী আন্দোলন থেকে পুরুষদেরকে বর্জন করলে নারীবাদী আন্দোলন পুরপুরিভাবে একটি নারীসসর্বস্ব কার্যক্রম হয়ে যায়, যা আবার নিজেই লিঙ্গবাদী হয়ে যায়। এই যুক্তি বা ধারণা বলে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত পুরুষেরা নারীদের বিরুদ্ধে থাকা লিঙ্গবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের সমান দায়িত্ব না নেয়, ততক্ষণ পর্যন্ত নারীবাদী আন্দোলন লিঙ্গবাদী স্ববিরোধিতায় ভুগবে যাকে এই আন্দোলন নিজেই দূরীভূত করতে চায়। এই অর্থসংক্রান্ত বিতর্কে 'প্রোফেমিনিস্ট' শব্দটি একটি মধ্যস্থতা করে, কারণ এই শব্দটি ফেমিনিজম শব্দটির কাছাকাছি কিন্তু নিজে সেই শব্দটি নয়। আবার 'প্রো' প্রিফিক্স বা উপসর্গটি আরও বেশি কার্যকরিতা এবং ধনাত্মকতা নির্দেশক। আবার 'প্রোফেমিনিজম' ব্যবহার করা হবে নাকি হাইফেন দিয়ে 'প্রো-ফেমিনিজম' লেখা হবে সেটা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে, কারণ 'প্রো-ফেমিনিজম' শব্দটির দূরত্ব ফেমিনিজম থেকে 'প্রোফেমিনিজম' এর চেয়ে বেশি হয়ে যায়।

মেনস স্টাডিজ

পুরুষত্ব বিষয়ক বিশেষজ্ঞগণ জেন্ডারের উপর একাডেমিক পরিব্যপ্তি মেনস স্টাডিজ বা পুরুষ বিষয়ক পাঠের মাধ্যমে আরও বৃদ্ধি করেছেন। যদিও কিছু নারীবাদী বলে থাকেন, উইমেনস স্টাডি ছাড়া সকল একাডেমিক ডিসিপ্লিনই মেনস স্টাডিজ, কারণ তাদের দাবী মতে পাঠ্যক্রমের প্রতিটি বিষয়ই পুরুষের বিষয় তবুও পুরুষত্ব বিষয়ক বিশেষজ্ঞগণ বলেন, মেনস স্টাডিজে বিশেষ ভাবে পুরুষের জেন্ডারের অভিজ্ঞতা নিয়ে কাজ করা হয়। মেনস স্টাডিজের কেন্দ্র হল এটা বোঝা যে, "জেন্ডার" বলতে "নারী" বোঝায় না, একইভাবে "রেস" বলতে "কৃষ্ণাঙ্গ" বোঝায় না। মেনস স্টাডি সাধারণভাবে ইন্টারডিসিপ্লিনারি এবং এখানে একটি নারীবাদী ধারণা গ্রহণ করা হয় যা বলে, "যা ব্যক্তিগত তাই রাজনৈতিক"। পুরুষত্ব বিষয়ক পণ্ডিতগণ উইমেনস স্টাডিজ কর্তৃক তৈরি করা জেন্ডার সম্পর্কিত ধারণার উপর আরও নতুন ধারণা যোগ করতে চান।

সাম্প্রতিক জরীপ

২০০১ সালের একটি জরীপে দেখা যায় শতকরা ২০ শতাংশ আমেরিকান পুরুষ নিজেদেরকে নারীবাদী হিসেবে বিবেচনা করেন এবং ৭৫ শতাংশ পুরুষ বলেন তারা নারীবাদী নন। ২০০৯ সালের আরেকটি জরীপে দেখা যায় আমেরিকার ২৪ শতাংশ পুরুষ "নারীবাদী" শব্দটিকে একটি ইনসাল্ট হিসেবে নিচ্ছেন। পাঁচ জন পুরুষের মধ্যে চারজন নিজেদেরকে নারীবাদী হিসেবে দাবী করতে অস্বীকার করেন। কিন্তু যখন নারীবাদের সংজ্ঞা দিয়ে তাদের প্রশ্ন করা হয় তখন এই সংখ্যা পাঁচ জন পুরুষের মধ্যে দুই জন পুরুষে নেমে আসে। ১৯৮৩ এবং ১৯৯৯ সালের জরীপের তুলনায় এখন আরও বেশি পুরুষ মনে করেন যে নারীবাদী আন্দোলন তাদের উপকার করেছে। এই বিষয়টিতে ৪৭ শতাংশ পুরুষ রাজি হয়েছেন। ৬০ শতাংশ পুরুষ মতামত দিয়েছেন যে এখন আর শক্তিশালী নারীবাদী আন্দোলনের প্রয়োজন নেই। যাই হোক, যুক্তরাজ্যে ২০১০ সালের একটি জরীপে দেখা যায় কেবল ১৬ শতাংশ পুরুষ নিজেদেরকে নারীবাদী হিসেবে মতামত দিয়েহচে, ৫৪ শতাংশ পুরুষ বলেছেন তারা নারীবাদী নন এবং ৮ শতাংশ জানিয়েছেন তারা অ্যান্টিফেমিনিস্ট।

আরও দেখুন

External links


Новое сообщение