Продолжая использовать сайт, вы даете свое согласие на работу с этими файлами.
প্রজেক্ট ৫২৩
প্রজেক্ট ৫২৩ (অথবা কার্যাদেশ নং পাঁচশত তেইশ ; চীনা: 523项目)ভিয়েতনাম যুদ্ধে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের ওষুধ উৎপাদনের স্বার্থে সাংস্কৃতিক পুনর্গঠনের ও এর পরবর্তী সময়ে চীন প্রজাতন্ত্র কর্তৃক পরিচালিত একটি গোপন সামরিক গবেষণার সাংকেতিক নাম। ১৯৬৭ সালের মে মাসের (বছরের পঞ্চম মাস) ২৩ তারিখে যাত্রা শুরু করায় প্রজেক্টির এরূপ নামকরণ করা হয়েছে। সেসময়ে যুদ্ধে নিহত সৈন্যের সংখ্যার চেয়ে ম্যালেরিয়ার আক্রান্ত হয়ে বেশি সৈন্য মৃত্যুবরণ করায় এই রোগের ওষুধ আবিষ্কারের লক্ষ্য নিয়ে প্রজেক্ট ৫২৩ এর সৃষ্টি হয়।ভিয়েতনাম প্রজাতন্ত্রের (সেসময়ে উত্তর ভিয়েতনাম) প্রধানমন্ত্রী হো চি মিনের নির্দেশনায় চীন প্রজাতন্ত্রের প্রিমিয়ার চৌ এনলাই “মিত্রদের সৈন্যবাহিনীকে যুদ্ধের উপযোগী রাখতে” প্রজাতন্ত্রের চেয়ারম্যান মাও সেতুং-কে ম্যালেরিয়া প্রতিকারে নতুন ওষুধের জন্য গণ গবেষণাপ্রকল্প চালু করতে রাজি করিয়ে ফেলেন। ৫০০ চীনা বিজ্ঞানীকে ডাকা হয়। প্রকল্পটিকে দুটি ধারায় বিভক্ত করা হয়। একটি ধারা সিনথেটিক যৌগের উন্নয়নে নিয়োজিত হয়, আরেকটি ধারা প্রথাগত চীনা ওষুধের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় নিয়োজিত থাকে। দ্বিতীয় ধারাটি বেশি কার্যকর প্রমাণিত হয়; তারা সরাসরি একটি নতুন ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী যৌগশ্রেণীর আবিষ্কার ও উন্নয়ন ঘটায় যার নাম আর্টেমিসিনিন প্রকল্পটি ১৯৮১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করা হয়।
উচ্চ কার্যক্ষমতা, নিরপত্তা এবং স্থায়িত্বের জন্য আর্টেমিসিন যেমন আর্টেমিথার এবং আর্টেসুনেট; ফ্যালসিপ্যারাম ম্যালেরিয়া জনিত রোগের প্রতিকারে ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হতে থাকে। এগুলোর সম্মিলিত ওষুধ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক সমর্থিত এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ ওষুধের তালিকার অন্তর্ভুক্ত। প্রজেক্টের সদস্যদের মধ্যে চৌ ইকিং ও তার দল চাইনিজ একাডেমী অফ মিলিটারি মেডিকেল সাইন্সের অণুজীববিজ্ঞান ও মহামারিবিদ্যা ইন্সটিটিউটে কোয়ারটেম (আর্টেমিথার-লিউমফ্যানট্রিন এর সমন্বয়ে তৈরি) নামক ওষুধের উন্নয়নের জন্য ২০০৯ সালে “অ-ইউরোপীয় দেশ” বিভাগে ইউরোপিয়ান ইনভেন্টর অ্যাওয়ার্ড লাভ করে। চায়না একাডেমী অফ চাইনিজ মেডিকেল সাইন্সের কিং হাওসু রিসার্চ সেন্টারের ইন্সটিটিউট অফ মেটারিয়া মেডিকা এর বিজ্ঞানী তু ইউইউ আর্টেমিসিন আবিষ্কারের জন্য ২০১১ সালে ল্যাস্কার-ডিবেকারি ক্লিনিকাল মেডিসিন রিসার্চ পুরস্কার এবং ২০১৫ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
পটভূমি
১৯৫৪ সালে উত্তর ভিয়েতনাম (সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের মত কমিউনিস্ট রাষ্ট্রের সমর্থনে) এবং দক্ষিণ ভিয়েতনামের (যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্র রাষ্ট্রগুলোর সমর্থনে) মধ্যে ভিয়েতনাম যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধ ১৯৬১ সালে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। যুদ্ধে একটি ভালো অবস্থানে থাকলেও পিপল’স আর্মি অফ ভিয়েতনাম (উত্তর ভিয়েতনামের সৈন্য) এবং দক্ষিণে এর মিত্র ভিয়েত চং এর অনেক সৈন্য ম্যালেরিয়া মহামারির কারণে মৃত্যুবরণ করে। কিছু যুদ্ধ ক্ষেত্রে সৈন্যের সংখ্যা অর্ধেক এমনকি ভয়াবহ অবস্থায় ৯০ শতাংশ সৈন্য যুদ্ধে অক্ষম হয়ে পরে। ভিয়েতনাম গণপ্রজাতন্ত্রের (তৎকালীন উত্তর ভিয়েতনাম) প্রধান মন্ত্রী হো চি মিন তার স্বদেশী, চীন প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী চৌ এনলাইয়ের কাছে চিকিৎসা সাহায্য চান। সেসময়ে কমিউনিস্ট পার্টি অফ চায়নার চেয়ারম্যান মাও সেতুং সবেমাত্র সাংস্কৃতিক বিপ্লবের(১৯৬৬-১৯৭১) সূচনা করেন যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ হয়ে যায় এবং অসংখ্য বিজ্ঞানী ও বুদ্ধিজীবী নির্বাসিত হন। যাইহোক, মাও, হো চি মিনের অনুরোধ গুরুত্বের সাথে নেন এবং একটি সামরিক প্রকল্পের অনুমতি দেন। ১৯৬৭ সালের ২৩ মে ৬০০ বিজ্ঞানীর একটি সভা ডাকা হয় যারা ছিলেন সামরিক শাখায় বা বিজ্ঞানের সাধারণ শাখায়, ছিলেন প্রথাগত গবেষণাকারী। ঐ সভা ছিল ঐ সামরিক গবেষণা প্রকল্পের সূচনা, সাংকেতিক নাম প্রজেক্ট ৫২৩,প্রকল্প শুরুর তারিখের ভিত্তিতে এই নামকরণ (বছরের ৫ম মাস মে এর ২৩ তারিখ)। প্রকল্পটি দুইটি ধারায় ভাগ হয়। একটি ধারা প্রথাগত সিনথেটিক যৌগের উন্নয়নে নিয়োজিত হয় এবং অন্য ধারাটি প্রথাগত চীনা ভেষজের উপর গবেষণা করতে থাকে। একে একটি উচ্চপর্যায়ের গোপনীয় মিশন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই প্রজেক্টটি অসংখ্য বিজ্ঞানীকে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের কঠোরতা থেকে রক্ষা করে।
কার্যপরিচালনা এবং সফলতা
প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে সৈন্যদের সিনথেটিক ওষুধ দেয়া হয়। পাইরিমিথামাইন এবং ড্যাপ্সোন এর মিশ্রণ, পাইরিমিথামাইন এবং সালফাডক্সাইন এর মিশ্রণ, এবং সালফাডক্সাইন আর পাইপারএকুইন ফসফেটের মিশ্রণ যুদ্ধক্ষেত্রে পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু এই ওষুধগুলো খুব বাজে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখায়। তারপর মূল লক্ষ্য হয়ে দাড়ায় প্রথাগত চীনা ভেষজ পরীক্ষা করে নতুন যৌগ আবিষ্কার করা। প্রথম আগ্রহের বিষয় ছিল চ্যাংশ্যাং, যা সম্পর্কে বর্ণনা ছিল প্রাচীনতম মেটারিয়া মেডিকায়(চিকিৎসা সংক্রান্ত গ্রন্থ) যার নাম “ক্যানন অফ দ্যা ডিভাইন হাসব্যান্ডম্যান’স মেটারিয়া মেডিকা”। এটি ডাইক্রোয়া ফেব্রিফুগা উদ্ভিদের মূলের নির্যাস। একেবারে প্রথম দিকে পরীক্ষিত গাছগুলোর মধ্যে ছিল “হুয়াংঘুয়াহাও” (সুইট ওয়ার্মউড অথবা বৈজ্ঞানিক নাম আর্টেমিসিয়া আন্যুয়া) । এই দুইটি ভেষজ উদ্ভিদ আধুনিক ফার্মাকোলজিতে ব্যাপক সাফল্য আনে।
চ্যাংশ্যাং থেকে ফেব্রিফিউজিন
প্রথম আগ্রহের বিষয় ছিল চ্যাংশ্যাং যা কিনা ‘’ডাইক্রোয়া ফেব্রিফুগা’’ মূলের নির্যাস। ১৯৪০ এর দিকে চীনা বিজ্ঞানীরা দেখান যে চ্যাংশ্যাং প্লাজমোডিয়ামের কিছু প্রজাতির বিরুদ্ধে কার্যকরী। এর প্রধান ম্যালেরিয়া বিরোধী উপাদান ফেব্রিফিউজিন পৃথক করে আমেরিকান বিজ্ঞানীরা। কিন্তু প্রকল্পের বিজ্ঞানীরা জানান যে এটি ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী হলেও এটি তীব্র ও বিষাক্ত, কুইনাইন থেকে বেশি তীব্র— অর্থাৎ মানবদেহে ব্যবহারের অনুপযোগী। (প্রকল্পটির পর, যৌগটি এখনও তদন্তের মধ্যে আছে এবং এর থেকে মানানসই উপজাত তৈরির চেষ্টা চলছে, যেগুলোর মধ্যে হ্যালোফিউজিনোন হতে পারে ম্যালেরিয়া, ক্যান্সার, ফাইব্রোসিস এবং জ্বালাময় রোগের বিরুদ্ধে কার্যকরী ওষুধ। )
আর্টেমিসিনিন এবং এর উপজাতকগুলোর আবিষ্কার
আর্টেমিসিয়া অ্যান্যুয়া” এর নির্যাস যার নাম কিংহাও সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছিল চীনা শারীরতত্ত্ববিদ গে হুংয়ের গ্রন্থে যার নাম চৌহৌ পেইচি ফাং (জরুরী প্রয়োজনে ব্যবস্থাপত্রের পঞ্জিকা”)।তু ইউইউ এবং তাঁর দল সর্বপ্রথম পর্যবেক্ষণ করেন। ১৯৭১ সালে তাঁরা দেখেন যে শুকনো পাতা (বেইজিং থেকে আনা) প্রাপ্ত নির্যাস কোন ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী কার্যক্রম দেখায় না। জি হং এর লিখিত বর্ণনাগুলো সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করে তাঁরা নির্যাস সংগ্রহের পদ্ধতি পরিবর্তন করে সতেজ পাতা থেকে নিম্ন তাপমাত্রায় নির্যাস সংগ্রহের চেষ্টা করেন। জি হং স্পষ্টভাবে প্রস্তুতপ্রণালী বর্ণনা করেছেনঃ "কিংহাও, এক গুচ্ছ, দুই সেং [২ × ০.২ লিটার ] পানি ভেজানোর জন্য লাগবে, একে নিংড়াও, রস নাও, পুরোটা গলাধঃকরণ কর”। তাঁরা দেখেন যে সিচুয়ান প্রদেশ থেকে প্রাপ্ত নমুনাগুলো শুধু সক্রিয় যৌগটি উৎপন্ন করতে পারে। তাঁরা বিশুদ্ধ নির্যাসকে ট্যাবলেটে পরিণত করেন, কিন্ত তা খুব অল্প সক্রিয়তা প্রদর্শন করে। এরপরই তাঁরা বুঝতে পারেন যে যৌগটি খুবই অদ্রবণীয় অর্থাৎ খুব সহজে তরলে মিশতে চায় না। অতঃপর তাঁরা এটিকে ক্যাপস্যুলে পরিণত করেন। ১৯৭২ সালের ৮ মার্চে তাঁরা জানান যে নতুন নির্যাসটির সাহায্যে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত ইঁদুরের সফল চিকিৎসা করা হয়। ১৯৭২ সালের আগস্ট মাসে তাঁরা একটি মেডিকেল পরীক্ষার কথা জানান যার ফলে ২১ জন ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা করা হয়। ১৯৭৩ সালে ইউনান ইন্সটিটিউট অফ মেটারিয়া মেডিকা এবং শ্যান্ডং ইন্সটিটিউট অফ ট্র্যাডিশনাল মেডিসিন এন্ড মেটারিয়া মেডিকার বিজ্ঞানীগণ কেলাস রূপে একটি ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী যৌগ প্রস্তুত করেন এবং এর নাম দেন ‘’হুয়াংঘুয়াহাওসু’’ অথবা “হুয়াংঘাওসু” যেটির ঘটনাক্রমে পুনরায় নাম হয় ‘’কিংহাওসু’’ (যা আবার পরবর্তীকালে উদ্ভিদবিদ্যার নামকরণের ভিত্তিতে আর্টেমিসিনিন নামে জনপ্রিয় হবে)। (আর্টেমিসিন এর রাসায়নিক গঠন ১৯৭৫ সালে বের করা হয় এবং ১৯৭৭ সালে প্রকাশ করা হয়।) একই বছর তু ঐ নির্যাস থেকে ডিহাইড্রোআর্টেমিসিনিন শনাক্ত করেন। এই যৌগটি এর কাছাকাছি যৌগগুলো থেকে বেশি দ্রবণীয়(অর্থাৎ তরলে খুব সহজে মিশে যায়) ও সক্রিয়। একই সময়ে অন্যান্য সদস্যগণ আর্টেমিসিনিনের অন্যান্য উপজাত আবিষ্কার করতে থাকেন যাদের মধ্যে আর্টেমিথার এবং আর্টেসুনেট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেসময়ে যাবতীয় মেডিকেল পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া যায় যে আর্টেমিসিনিনগুলো (এর উপজাতগুলো) অন্য যেকোনো প্রথাগত ওষুধ যেমন ক্লোরোকুইন এবং কুইনাইন থেকে বেশি কার্যকর। বর্তমানে এগুলো শুধু সর্বাধিক কার্যকরী নয় বরং সবচেয়ে বেশি নিরাপদ ও দ্রুত নিরাময়কারী ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী ওষুধ হিসেবে স্বীকৃত।
আর্টেসুনেট এবং এর সমন্বিত ওষুধ
সাকসিনিক এসিড ব্যবহার করে ডিহাইড্রোআর্টেমিসিনিন (ডিএইচএ) থেকে আর্টেসুনেট পৃথক করা হয়। এটি রাসায়নিকভাবে অসাধারণ স্থায়ী এবং আর্টেমিসিনিনগুলোর মধ্যে একমাত্র ওষুধ যাকে মুখ দিয়ে নেয়ার ওষুধ ও মলনালী দেয়ার ক্যাপস্যুল এবং ইন্ট্রাভেনাস ইনজেকশনে পরিণত করা হয়েছে। মেডিকেল পরীক্ষায় দেখা গেছে ‘’প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপ্যারাম” ঘটিত ভয়াবহ ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে এটি সর্বাধিক কার্যকরী ওষুধ।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০০৬ সালে সুস্পষ্টভাবে এটিকে জটিল ম্যালেরিয়ার প্রথম সারির চিকিৎসায় একমাত্র ওষুধ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে (তবে ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ঠেকানোর জন্য অন্যান্য ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী ওষুধের সাথে এর সমন্বিত ওষুধ) এবং এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রয়োজনীয় ওষুধের তালিকার অন্তর্ভুক্ত। আর্টেসুনেটের সমন্বিত ওষুধ (যেমন আর্টেসুনেট/অ্যামডিয়াকুইন and artesunate/mefloquine) আর্টেমিথার-ভিত্তিক ওষুধগুলো থেকে বেশি কার্যকর।
সিনথেটিক ওষুধের আবিষ্কার
প্রজেক্ট ৫২৩ এর বদৌলতে অসংখ্য সিনথেটিক ওষুধ যেমন ১৯৭৩ সালে পাইরোনারিডিন, ১৯৭৬ সালে লিউমেফায়ন্ট্রাইন এবং ১৯৮৬ সালে ন্যাপথোকুইন আবিষ্কার হয়। এগুলো ম্যালেরিয়া বিরোধী ওষুধ এবং আর্টেমিসিনিন-সমন্বিত থেরাপিতে ব্যবহার হয়।
সমাপ্তি এবং পরবর্তী ঘটনা
১৯৭৫ সালে ৩০ এপ্রিল সাইগনের পতন ভিয়েতনাম যুদ্ধ শেষ হলে প্রজেক্ট ৫২৩ এর সামরিক প্রয়োজনীয়তা কমতে থাকে। গবেষকগণ তাঁদের গবেষণার ফলাফল প্রকাশের অনুমতি পান নি তবে প্রজেক্টের কর্মীদের মধ্যে আলোচনার অনুমতি ছিল। ইংরেজিতে প্রথম প্রকাশ (এবং এভাবেই চীনের বাইরে প্রকাশিত হয়) হয় চীনা মেডিকেল জার্নালের ১৯৭৯ সালের ডিসেম্বর সংখ্যায়, যেটির রচনা করেছিলেন কিংহাওসু অ্যান্টিম্যালেরিয়া কোঅরডিনেটিং রিসার্চ গ্রুপ। এটির উপর দৃষ্টি পরে – স্পেশাল প্রোগ্রাম ফর রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং ইন ট্রপিকাল ডিজিজেস(টিডিআর)-এর যার অর্থায়ন করেছিল জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক তহবিল, জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচী, বিশ্বব্যাংক এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তাঁরা সহযোগিতা করতে চেয়েছিল কিন্তু গবেষণাটি তখনও চীনা নন এমন কোন গবেষকের জন্য উন্মুক্ত ছিল না। ১৯৮০ এর শুরুর দিকে গবেষণা প্রকৃত অর্থেই বন্ধ হয়ে যায় এবং ১৯৮১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রজেক্টটি সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। টিডিআর এর সুযোগ নেয় এবং ১৯৮১ সালে আর্টেমিসিনিন এবং এর উপজাতগুলোর উপর বেইজিংয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক সভার আয়োজন করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিংহাওসু এবং এর উপজাতগুলোর উন্নয়নের মাধ্যমে প্রজেক্টের গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অব্যাহত রাখতে জাতীয় পরিচালনা কমিটি গঠন করে।
প্রথম আন্তর্জাতিক সমন্বয় হয় রোচে ফার ইস্ট রিসার্চ ফাউন্ডেশনের কিথ আর্নল্ডের সাথে চীনা বিজ্ঞানী জিং-বো জিয়াং, যিং-বো –গুও, গুও-কিয়াও লি এবং ইউন ছিউং কং –দের মধ্যে। ১৯৮২ সালে ‘'দ্যা ল্যান্সেটে'’ তাঁরা প্রথম তাঁদের কাজ আন্তর্জাতিকভাবে প্রকাশ করেন, যেখানে তাঁরা ক্লোরকুইন প্রতিরোধী ‘’প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপ্যারাম’’-এর উপর আর্টেমিসিনিন ও মেফ্লোকুইনের কার্যকারিতার কথা উল্লেখ করেন। (কিথ আর্নল্ড ছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন যারা ১৯৭৯ সালে মেফ্লোকুইনের উন্নয়ন করেন এবং চীনদেশে নতুন এই ওষুধটি পরীক্ষা করার পরিকল্পনা করছিলেন। তিনি এবং তাঁর স্ত্রী মৌই প্রজেক্ট ৫২৩ এর ঐতিহাসিক দলিল অনুবাদকারী ও একে বিশ্বের নজরে স্বীকৃতি আনয়নকারী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ হয়ে দাঁড়ান।) ইউনাইটেড স্টেটস আর্মির অধীনে ওয়াল্টার রিড আর্মি ইন্সটিটিউট অফ রিসার্চের এক্সপেরিমেন্টাল থেরাপিউটিক্স বিভাগ প্রথম সংস্থা হিসেবে চীনের বাইরে আর্টেমিসিনিন এবং এর উপজাত প্রস্তুত করতে সক্ষম হয়। তাদের দ্বারা এই ওষুধ উৎপাদনের মধ্যদিয়ে এর বাণিজ্যিক সফলতার দরজা খুলে যায়।
কোয়ার্টেম আবিষ্কার
ওষুধ হিসেবে আর্টেমিথার এর উৎস কণা আর্টেমিসিনিন অপেক্ষা অধিক সম্ভাবনাময় ছিল। ১৯৮১ সালে কিংহাওসু(আর্টেমিসিনিন) এবং এর উপজাতগুলোর উন্নয়ন সংক্রান্ত জাতীয় পরিচালনা কমিটি চাইনিজ একাডেমী অফ মিলিটারি মেডিকেল সাইন্সের অণুজীববিদ্যা ও মহামারীবিদ্যা ইন্সটিটিউটের চৌ ইছিংকে আর্টেমিথারের উন্নয়নের দায়িত্ব দেন। চৌ দেখেন যে আর্টেমিথার এবং আরেকটি ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী লিউমেফ্যান্ট্রাইনের মিশ্রণ সবগুলো ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী ওষুধের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী। তিনি ৪ বছর একা কাজ করেন এবং ১৯৮৫ সালে নিং ডিয়াংজি ও তাঁর দল চৌ ইছিংয়ের সাথে যোগ দেন। তাঁরা মেডিকেল পরীক্ষায় দেখেন যে ঐ মিশ্রণের ট্যাবলেটের ভয়াবহ ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের হার অনেক বেশি, যেসমস্ত এলাকায় বহু ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী ওষুধের কার্যকরীতা হ্রাস হতে দেখা গেছে সেগুলো নিয়েও প্রতিরোধের হার ৯৫ শতাংশের বেশি। তাঁরা ১৯৯১ সালে পেটেন্টের জন্য আবেদন করেও তা ২০০২ সালে পান। ১৯৯২ সালে তাঁরা এটিকে চীনে একটি নতুন ওষুধ হিসেবে নিবন্ধন করেন। এটা দেখে নোভার্টিস বিপুল পরিমাণে ওষুধ উৎপাদনের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। ১৯৯৯ সালে নোভার্টিস আন্তর্জাতিক লাইসেন্সিং অধিকার লাভ করে এবং তারা ওষুধের ব্র্যান্ড নাম (বা বাণিজ্যিক নাম) দেয় কোয়ার্টেম। ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন ওষুধটির অনুমোদন দেয়।
আরও দেখুন
- ওষুধ আবিষ্কার
-
ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী চিকিৎসা
- আর্টেমিসিনিন (যারা মূল অবদান রেখেছেন: ইউ ইয়াগাং (余亚纲), গু গুওমিং (顾国明), তু ইউইউ (屠呦呦), লুও জিউয়ান (罗泽渊), লি গুওকিয়াও (李国桥) et al., 1972)
- ডিহাইড্রোআর্টেমিসিনিন (তু ইউইউ et al., ১৯৭৩)
- পাইরোনারিডাইন (১৯৭৩)
- আর্টেমিথার (লি ইং (李英), ১৯৭৫)
- লুমেফ্যানট্রাইন (১৯৭৬)
- আর্টেসুনেট (লি গুওকিয়াও (李国桥), ১৯৭৭)
- আর্টেমিথার/লুমেফ্যান্ট্রাইন (চৌ ইকিং (周义清), 1985)
- ন্যাপথোকুইনোন (১৯৮৬)
- চীন প্রজাতন্ত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ইতিহাস
- চীনা আবিষ্কারের তালিকা এবং চীনা উদ্ভাবনের তালিকা
- চীনা ভেষজবিদ্যা এবং প্রথাগত চীনা ওষুধ
আরও পড়ুন
- Jianfang, Zhang (২০১৩)। Detailed Chronological Record of Project 523 and the Discovery and Development of Qinghaosu (Artemisinin)। Translated by Arnold, Keith and Arnold, Muoi। Houston, Texas: Strategic Book Publishing। আইএসবিএন 978-1-62212-164-9।