Продолжая использовать сайт, вы даете свое согласие на работу с этими файлами.

প্রতিশ্রুতি ভীতি
বিয়ে করতে ভয় পাওয়ার বিষয়টিকে ‘গ্যামোফোবিয়া’ বলা হয়। গ্রিক ভাষায় (gamo') গ্যামো মানে বিয়ে আর (phobia)ফোবিয়া মানে ভয়। গ্যামোফোবিয়া হলো, বিয়ে কিংবা কোনো ধরনের স্থায়ী সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার ভয়।আত্ম-সহায়তা ভিত্তিক সাহিত্যে, প্রতিশ্রুতি ভীতি হচ্ছে বিবাহ বা দীর্ঘমেয়াদী অংশীদারত্ব বা বাগদান এড়িয়ে যাওয়া। এই অবস্থাটি প্রায়ই কারও মধ্যে বেশি পরিমাণে দেখা যায়, এবং এটি শিক্ষায়তন, কর্মক্ষেত্র এবং গৃহের জীবনকে প্রভাবিত করে।
১৯৮৭ সালে একটি জনপ্রিয় আত্ম-সহায়তা ভিত্তিক গ্রন্থ "Men Who Can't Love" (পুরুষ যে ভালোভাসতে জানে না) এ প্রথম "কমিটমেন্টফোবিয়া" ("প্রতিশ্রুতি ভীতি") শব্দটি উল্লেখ করা হয়। এই গ্রন্থটিতে কেবল পুরুষের মধ্যে প্রতিশ্রুতি ভীতির কথা লেখা হয় বলে, লিঙ্গবাদকে আশ্রয় করার জন্য বইটির সমালোচনা করা হয়। এরফলে লেখকগণ পরবর্তীতে প্রতিশ্রুতি ভীতির একটি তুলনামূলক লিঙ্গ নিরপেক্ষ রূপ তুলে ধরেন ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত হওয়া "He's Scared, She's Scared" (তিনি (পুরুষ) ভীত, তিনি (মহিলা) ভীত)) গ্রন্থে। যখন বিবাহের প্রতি বিতৃষ্ণায় ভয় জড়িত থাকে, তখন একে গ্যামোফোবিয়া (Gamophobia) বলা হয়। বিবেহের প্রতি ঘৃণা বা বিদ্বেষকে বলা হয় বিবাহ-বিদ্বেষী।। যারা মানসিক ভাবে এই ফোবিয়ায় আক্রান্ত তারা নতুন জীবন নিয়ে খুব ভীত থাকে।
কারণ
পরিবেশ,পরিস্থিতি ও মানসিকতার বিকাশের উপর গ্যামোফোবিয়ার কারণ নির্ভরশীল। গ্যামোফোবিয়া আক্রান্ত মানুষের মাঝে বিবাহিত জীবন নিয়ে একটা ভয় কাজ করে।নিজের ব্যাক্তি স্বাধীনতার জায়গাটুকু খর্ব হতে পারে কিংবা মানিয়ে চলা যাবে কিনা এধরনের একটা চিন্তায় থাকেন এই ধরনের ফোবিয়ায় আক্রান্ত মানুষরা। উশৃঙ্খল পরিবারে বেড়ে উঠা অনেকের মধ্যেই এই ভীতি থাকতে পারে। তাদের ধারণা হয়ে যায় সম্পর্ক মানেই কোনো একদিন আর টিকে থাকবে না, ভেঙ্গে যাবে। আবার যেসব পরিবারে বাবা মা খুব ঝগড়া করেন, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে স্বাভাবিক সুর কেটে যায়, সেইসব অনেকেও গ্যামোফোবিয়ায় ভুগতে পারে। এছাড়া, অনেকক্ষেত্রেই এমন হয় সত্যিকারের প্রেম ভেঙ্গে যাওয়ার পর অনেকেই মানসিকভাবে এতোটাই ভেঙ্গে পড়ে যে, কাউকে আর তার আপন মনে হয় না। সে তখন কাউকেই আর বিশ্বাস করতে পারে না। আবার হীনম্মন্যতা কিংবা নিজের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত ঘোরে আবদ্ধ মানুষদেরও গ্যামোফোবিয়া হতে পারে। আত্ম-সহায়তার সাধারণ সমালোচনা ছাড়াও, হারভার্ড মনোবিজ্ঞানী ডেবোরাহ ডিপাউলো একক বা সিংগেল ব্যক্তিদের উপর কালিমালেপন নিয়ে সিংগেলিজম (Singleism) নামে একটি গ্রন্থ লিখেছিলেন।
"ভীতি" বা "ফোবিয়া" এর মত শব্দের ব্যবহার হচ্ছে একটি অন্তর্নিহিত ভাষাবিজ্ঞানগত পক্ষপাত। এটি জীবনধারার নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তগুলোকে (যেমন, অবিবাহিত অবস্থা বনাম বিবাহের সিদ্ধান্ত, বা ইচ্ছাকৃতভাবে সন্তানহীন থাকবার সিদ্ধান্ত) পরোক্ষভাবে সাধারণীকৃত, অযৌক্তিক ভীতি হিসেবে পুনর্গঠিত করে, যেখানে একজন ব্যক্তির নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যকে চিহ্নিত করতে বা বর্ণনা করতে এটি ব্যর্থ হয়। যেমন, পুরুষ অধিকার আন্দোলনে উচ্চ বিবাহবিচ্ছেদ হার, এবং ব্যয়বহুল ভরণপোষণ ও আইনগত খরচ এর কথা উল্লেখ করে যে বিবাহ ধর্মঘট (Marriage strike) করা হয়, তা বিবাহে প্রতিশ্রুতিতে ভীতির জন্য নয়, বরং সেই আন্দোলনকারীগণ এখানে অর্থনৈতিক নিয়ামকযুক্ত যৌক্তিক বিবেচনার ভিত্তিতে একটি সম্পূর্ণভাবে বৈধ, যৌক্তিক অবস্থান গ্রহণ করেন।
লক্ষণ
যাদের গ্যামোফোবিয়া হয় তারা সাধারণত সম্পর্কের ব্যাপারে বেশ উদাসীন থাকে। এসব নিয়ে ঐকান্তিক কোনো কথা উঠলে এড়িয়ে যেতে চায়। এছাড়া, বিয়ে সংক্রান্ত যেকোনো আলোচনা তারা অপছন্দ করে। এমনকি আয়োজনেও তারা যেতে চায় না। বিয়ের লৌকিকতাকে তারা বেশ অপছন্দ করে। তারা সবসময়ই মনে করে সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়াটা হয়ত ভুল সিদ্ধান্ত হবে। এই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে থাকাও গ্যামোফোবিয়ার একটি লক্ষণ।
প্রতিকার
বাগদানে কারো অনীহা থাকলে তাকে যেভাবে তিরস্কার করা হয়, বিপরীতে সে আবার যে প্রতিক্রিয়া দেখায় এর ফলে একই হয়ে যায়। ফলে যে মানুষটা গ্যামোফোবিয়ায় ভুগছে সে আরো বেশি সম্পর্কের প্রতি বিরক্তিবোধ করে। আর যে গ্যামোফোবিয়া আক্রান্ত মানুষের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করে ফেলেছে মাত্র সেও হয়ত গ্যামোফোবিয়ায় ভুগতে শুরু করবে একটা সময়। মনোবিজ্ঞানী অথবা মানসিক ডাক্তারের কাউন্সেলিংয়ে অনেকসময় এই ফোবিয়া কাটিয়ে উঠা যায়। ডাক্তারের পরামর্শে ঔষধ খেলেও গ্যামোফোবিয়া থেকে বের হওয়া যায়।