বাইসাইকেল হেলমেট
বাইসাইকেল হেলমেট এক বিশেষ নকশায় তৈরি করা হয় যার উদ্দেশ্য থাকে সাইক্লিস্ট পড়ে গেলে চোট লেগে মাথাতে আঘাতের প্রভাব কমিয়ে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হ্রাস করা। দুর্ঘটনার কারণে বাইসাইকেল হেলমেট দ্বারা প্রদত্ত সুরক্ষার মাত্রা এবং হেলমেট পরা অবস্থায় সাইকেল চালক ও মোটর গাড়ি চালকের আচরণে তার প্রভাব সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক গবেষণা চলছে।
প্রাপ্ত সমীক্ষা থেকে কী সিদ্ধান্ত টানা যায় তা নিয়ে একটি সক্রিয় বিতর্ক রয়েছে যে কেবল বাচ্চাদের জন্য নাকি সমস্ত বয়সের সাইক্লিস্টদের জন্য হেলমেট ব্যবহার করতে প্রচার করা উচিত নাকি বাধ্য করা উচিত - তা নিয়ে। বিশেষ করে বাইসাইকেল হেলমেট আইন নিয়ে বিতর্ক তীব্র এবং মাঝে মাঝে তিক্ত হয়ে ওঠে। সেটা প্রায়ই কেবল বৈজ্ঞানিক এবং অন্যান্য একাডেমিক রচনার পৃথক পৃথক ব্যাখ্যার উপর ভিত্তি করেই নয় বিভিন্ন ব্যক্তির স্বতন্ত্র ধারণা ও আগ্রহের ভিত্তিতেও তৈরি হয়।
ব্যবহারের ইতিহাস
সাধারণ এবং গোষ্ঠীর মধ্যে হেলমেট ব্যবহারের পরিমাণে বিস্তর ফারাক লক্ষ্য করা যায়। ডাউনহিল পর্বত বাইক চালক এবং অপেশাদার সাইক্লিস্টরা সাধারণত হেলমেট পরে থাকেন এবং সাইকেল ক্রীড়ায় হেলমেটের ব্যবহার কয়েকটি আইনি ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। ইউটিলিটি সাইক্লিস্ট এবং বাচ্চাদের বাধ্য না করা হলে হেলমেট পরার সম্ভাবনা খুব কম থাকে।
সাইক্লিং ক্রীড়ায় হেলমেট ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা
ঐতিহাসিকভাবে খেলাধুলার প্রশাসক সংস্থা ইউনিয়ন সাইক্লিস্ট ইন্টারন্যাশনেল (ইউসিআই) দ্বারা নির্ধারিত রোড সাইকেল চালানোর নিয়মাবলীতে বিষয়টিকে ব্যক্তিগত পছন্দ এবং স্থানীয় ট্রাফিক আইনের অন্তর্গত রেখে হেলমেট ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তার বিধান দেওয়া হয়নি। বেশিরভাগ পেশাদার সাইক্লিস্ট হেলমেট না পরতে পছন্দ করেন। তাঁরা অস্বস্তির কথা উল্লেখ করে দাবি করেন যে দৌড়ের চড়াই-উতরাই চলাকালে হেলমেটের ওজন তাঁদেরকে অসুবিধার মধ্যে ফেলবে।
ইউসিআই কর্তৃক বাধ্যতামূলক হেলমেট ব্যবহার প্রবর্তনের প্রথম গুরুতর প্রচেষ্টা চালু হলে ১৯৯১ প্যারিস-নাইস দৌড়ে চালকরা ধর্মঘট করেন। ফলে ইউসিআই সেই পরিকল্পনাটি বাতিল করে।
১৯৯০ এর দশকে পেশাদার মর্যাদার ক্ষেত্রে ঐচ্ছিক হেলমেটের ব্যবহার কিছুটা বৃদ্ধি পায়। হেলমেট নীতিতে নয়া মোড় আসে ২০০৩ সালের মার্চ মাসে যখন প্যারিস–নাইস চলাকালে আন্ড্রে কিভিলিভ এর মৃত্যু হয়। নতুন নিয়ম ২০০৩ সালের ৫ মে প্রবর্তিত হয় এবং প্রথম আরোপিত হয় ২০০৩ গাইরো ডি 'ইটালিয়া দৌড়-এ। ২০০৩ সালের বিধিতে কমপক্ষে ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের চূড়ান্ত আরোহণের সময় হেলমেট ছাড়ার অনুমতি দান করা হয়েছিল। পরবর্তী পুনর্বিবেচনাকালে সর্বদাই হেলমেট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়।
কার্যকারিতা
মেটা-বিশ্লেষণ
বেশ কয়েকটি মেটা-বিশ্লেষণ এবং পর্যালোচনা করা হয় যাতে একাধিক কেস-নিয়ন্ত্রণ গবেষণার ফলাফলকে সংশ্লেষ করে মূল্যায়ন করা হয়। ১৯৯৯ সালে বাইসাইকেল হেলমেটের কেস-কন্ট্রোল স্টাডির একটি কোচরান পর্যালোচনা থমসন এট আল দ্বারা সাধিত হয়েছিল। দলটি মন্তব্য করে "সমস্ত বয়সের বাইসাইকেল চালকদের মাথা, মস্তিষ্ক এবং গুরুতর মস্তিষ্কের আঘাতের ঝুঁকি ৬৩ থেকে ৮৮% হ্রাস করে হেলমেট। মোটরযানের সঙ্গে জড়িত (৬৯%) এবং অন্যান্য কারণ-জনিত সংঘর্ষের (৬৮%) সাথে জড়িত ঘটনার জন্য হেলমেট সমান স্তরের সুরক্ষা প্রদান করে। এর কারণে উপরের এবং মাঝের মুখমন্ডল অঞ্চলের আঘাত ৬৫% হ্রাস পেয়েছে।"
অস্ট্রেলিয়ান সরকার কর্তৃক ২০০১ সালের মেটা-বিশ্লেষণে বলা হয়েছে যে "মাথার আঘাত ও মারাত্মক আঘাত রোধে হেলমেটের পক্ষে অভূতপূর্ব প্রমাণ রয়েছে"। এলভিক কৃত ২০১২ সালের পুনঃবিশ্লেষণ এই সিদ্ধান্তে পৌঁছোয় যে ২০০১ সালের মেটা-বিশ্লেষণ "প্রকাশনা জগতের পক্ষপাত-দুষ্ট এবং সময়-প্রবণতা পক্ষপাত দ্বারা প্রভাবিত এবং নিয়ন্ত্রিত ছিল। ফলে বিশ্লেষণে বাইসাইকেল হেলমেটের প্রভাবকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে অনুমান-নির্ভর রিপোর্টে পরিণত করা হয়েছিল"। এলভিক লিখেছেন "যখন মাথা, মুখ বা ঘাড়ে আঘাতের ঝুঁকিকে সামগ্রিকভাবে দেখা হয় তখন বাইসাইকেল হেলমেটের একটি ছোট-খাঁট প্রতিরক্ষামূলক প্রভাব রয়েছে লক্ষ্য করা যায়। পুরানো গবেষণায় এই প্রভাবটি পরিসংখ্যানগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্লেষণের র্যান্ডম-প্রভাব মডেল দ্বারা সংক্ষিপ্ত করা নতুন গবেষণা নির্দেশ করে যে পরিসংখ্যানগতভাবে তার একটি তাৎপর্যহীন প্রতিরক্ষামূলক প্রভাব বর্তমান"।
মেটা-বিশ্লেষণের নির্ভুলতার এই চ্যালেঞ্জের ফলাফল হিসাবে জাতীয় হাইওয়ে ট্র্যাফিক সুরক্ষা প্রশাসন তাদের ওয়েবসাইট থেকে "৮৫ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর" ভাষাটি সরিয়ে ফেলে।