Продолжая использовать сайт, вы даете свое согласие на работу с этими файлами.
বাহারি উদ্ভিদ
বাহারি উদ্ভিদ বা আলংকারিক উদ্ভিদ (ইংরেজি: Ornamental plants) এক ধরনের উদ্ভিদ যা মূলত সাজ-সজ্জার উদ্দেশে বাগানে এবং বাসা-বাড়িতে (টবে বা কর্তিত ফুল হিসেবে) ব্যবহৃত হয়। এ ধরনের উদ্ভিদ চাষ করাকে ফুলচাষ বা ফ্লোরিকালচার বলা হয়, যা উদ্যানতত্ত্বের একটি প্রধান শাখা।
বাগানের উদ্ভিদ
শোভাময় গাছগুলোকে সাধারণত এদের সুন্দর ফুল, পাতা, গন্ধ, সামগ্রিক পাতাযুক্ত জমিন, ফল, কাণ্ড এবং বাকল সহ বিভিন্ন নান্দনিক বৈশিষ্ট্য উপভোগ করার জন্য বাগানে রোপণ করা হয়। অনেক সময় মানুষ শখের বশে ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য প্রদান বিশিষ্ট সম্পন্ন গাছ রোপণ করে থাকে। যেমন: রেশমি গোলাপ (Rosa sericea) এবং ক্যাক্টাসকে এদের ব্যতিক্রম ধর্মী কাঁটার জন্য রোপণ করা হয়। তবে, সব ক্ষেত্রেই গাছগুলো রোপণ করার উদ্দেশ্য থাকে পরিচর্যাকারী ও দর্শনার্থীদের বিনোদন এবং প্রতিষ্ঠান বা স্থাপনার সৌন্দর্য বর্ধন করা।
বৃক্ষ
একইভাবে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য রোপিত গাছগুলোকে বাহারি বৃক্ষ বা শোভাময় বৃক্ষ বলা যেতে পারে। সাধারণত, যখন এদের ফুল, টেক্সচার, ফর্ম, আকার-আকৃতি এবং অন্যান্য নান্দনিক বৈশিষ্ট্যের জন্য এদেরকে কোনো উদ্যান বা বাগানে রোপণ করা হয় তখন তাদের এ নামে ডাকা হয়। রাস্তার ধারে যেসব আলংকারিক উদ্ভিদ লাগানো হয় তাদের পথবৃক্ষ বলে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:
- কলকে (Thevetia peruviana)
- গোলসাগু বা চাউর (Caryota urens)
- রয়েল পাম (Roystonia regia)
- বিলাতি ঝাউ (Casuarina equisetifolia)
- বট (Ficus religiosa)
- স্বর্ণচাঁপা (Michelia champaca)
- পলাশ (Butea monosperma)
- সোনালু বা বান্দরলাঠি (Cassia fistula)
- কৃষ্ণচূড়া (Delonix regia)
- অশোক (Saraca asoca)
- রক্তকাঞ্চন (Bauhinia purpurea)
- রেইনট্রি (Samanea saman)
- শিরীষ (Albizia lebbek)
- নিম (Melia azadirachta)
- শিমুল (Bombax ceiba)
- কাঠ বাদাম (Terminalia catappa)
- কদম (Anthocephalus chinensis)
- ছাতিম (Alstonia scholaris)
- নাগেশ্বর (Masua nagassarium)
- দেবদারু (Polyalthia longifolia)
- ইউক্যালিপ্টাস (Eucalyptus citriodora)
- হিজল (Barringtonia acutangula)
বিরুৎ
যেসব ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ শোভাময় উদ্ভিদ হিসাবে জন্মে তাদের বাহারি বিরুৎ বলা যেতে পারে। অনেকগুলো বাহারি বিরুৎ সত্যিকারের ঘাস (অর্থাৎ, পোসেসি গোত্রের উদ্ভিদ)। তবে এর কাছাকাছি কয়েকটি গোত্রের উদ্ভিদকেও বাহারি বিরুৎ হিসাবে বাজারজাত করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে: Cyperaceae, Juncaceae, Restionaceae, Typhaceae প্রভৃতি গোত্র। এরা প্রত্যেকেই একবীজপত্রী উদ্ভিদ, যাদের সমান্তরাল শিরাবিন্যাস বিশিষ্ট সরু পাতা বিদ্যমান। এদের অধিকাংশই বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ, তবে কিছু চিরহরিৎ এবং কিছু কাষ্ঠল টিস্যু বিশিষ্ট উদ্ভিদও রয়েছে। বাহারি বিরুৎ অনেক দেশেই জনপ্রিয়। কেননা, এগুলো সারা বছর জুড়ে বাগানে স্ট্রাইকিং লিনিয়ার ফর্ম, টেক্সচার, রঙ, গতি এবং নান্দনিকতা বজায় রাখে।
বাহারি বিরুৎগুলো শীতলতা সহনশীল এবং শরৎ ও শীত মৌসুমেও সতেজতা ধরে রাখতে পারে বলে অনেক শীত প্রধান রুক্ষ অঞ্চলে এরা বেশ জনপ্রিয়।
পরিচর্যা
কোনো উদ্ভিদের আলংকারিক হিসাবে বিবেচিত হওয়ার জন্য এদের নান্দনিক বৃদ্ধি করা দরকার। এজন্য এগুলোকে কোনও মালী কর্তৃক পরিচর্যা এবং ছাঁটাই করা প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ, টোপারি এবং বনসাইয়ের গাছকে কেবল নিয়মিত ছাঁটাই করার কারণেই এটি নান্দনিক হয়ে ওঠে। ছাঁটাইয়ের কাজটি না করা হলে গাছটি এত দ্রুত শোভাময় হতে পারত না।
বাহারি উদ্ভিদ আর অর্থকরী বা শস্যে উদ্ভিদ এক নয়। কৃষিকাজ এবং উদ্ভিজ্জ ফসলের জন্য এবং বনজ বা ফলদ গাছ পরিভাষাটি ব্যবহৃত হয়। তাই বলে যে একটি উদ্ভিদ একই সাথে আলংকারিক এবং ব্যবহার্য হতে পারবে না এমনটি নয়। যেমন: ল্যাভেন্ডার সাধারণত একটি বাহারি উদ্ভিদ হিসাবে জন্মে। তবে এটি ল্যাভেন্ডার তেল উৎপাদনের জন্য শস্য উদ্ভিদ হিসাবেও ব্যবহৃত হতে পারে।
পরিভাষাটির ব্যবহার
বাহারি উদ্ভিদ পরিভাষাটি সাধারণত উদ্যানমূলক ব্যবসার ক্ষেত্রে একই অর্থে ব্যবহৃত হয়। বাহারি উদ্ভিদ আর বাগানের উদ্ভিদ আনেক ক্ষেত্রে একই মনে হয়। তবে কোন কোন উদ্ভিদ বাগানে জন্মানো হতে পারে তার কোনো সুনির্দিষ্টতা নেই। বাহারি উদ্ভিদ হল সেইসব গাছ যা ব্যবহারের উদ্দেশ্যে নয়, বরং সৌন্দর্য প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে উৎপাদন করা হয়। কিছু গাছপালা অবশ্য একই সাথে আলংকারিক এবং কার্যকরী; তবে, মানুষ সাধারণত সেই উদ্ভিদগুলোকেই "বাহারি উদ্ভিদ" বলে যার আকর্ষণীয় হওয়ার বাইরে অন্য কোন উপকারিতা নেই। আবার অনেকে মনে করেন যে এই শোভা বর্ধনই যথেষ্ট মূল্যবান। বাহারি উদ্ভিদগুলোই শৌখিন বাগান তৈরির মূল উপকরণ। এগুলো সেই স্থানের জলবায়ু, পারিপার্শ্বিকতা এবং বাগানের প্রয়োজনের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন আকার-আকৃতি ও রঙের হতে পারে।
কিছু বাহারি উদ্ভিদ কেবল শোভাবর্ধনের জন্যই জন্মে। তাদের পাতা হতে পারে ঝরঝরে- যা ঝরে পড়ার আগে পর্যায়ক্রমে উজ্জ্বল কমলা, লাল এবং হলুদ হয়ে যায়; আবার হতে পারে চিরহরিৎ- যা সারাবছর সবুজ থাকে। কিছু বাহারি গাছ তার ঝাঁকুনিযুক্ত পাতা বা লম্বা সূঁচালো কাঁটার জন্য বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত; আর কয়েকটিকে তাদের রঙিন পাতার জন্যই নান্দনিক দেখায়। যেমন: রূপালী-ধূসর মাটির উপর উজ্জ্বল লাল বিরূৎ শোভাবর্ধক হিসেবে লাগানো যেতে পারে।
অন্যান্য আলংকারিক গাছগুলোকে তাদের ফুলের জন্য চাষ করা হয়। ফুলের শোভাই অনেক বাগানের প্রধান আকর্ষণ। অনেক ফুলের বাগানকারী বিভিন্ন ফুলের গাছ লাগাতে পছন্দ করেন যাতে গ্রীষ্ম থেকে বসন্ত পর্যন্ত বাগানটি ক্রমাগত ফুল উৎপাদনের মধ্যে থাকে। রোপিত গাছের ধরনের উপর নির্ভর করে ফুলগুলো ছোট বা বড় এবং চটকদার হতে পারে। কিছু শোভাময় উদ্ভিদে আবার বিচিত্র রঙের পাশাপাশি সুগন্ধও থাকে যা নান্দনিকতায় একটি ভিন্ন মাত্রা এনে দেয়।
আরো দেখুন
বহিঃসংযোগ
উইকিমিডিয়া কমন্সে বাহারি উদ্ভিদ সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।
- জিয়া উদ্দিন আহমেদ (২০১২)। "বাহারি উদ্ভিদ"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ইংরেজি ভাষার উইকিসংকলনে এনসাইক্লোপিডিয়া আমেরিকানার বাহারি উদ্ভিদ সংক্রান্ত নিবন্ধ