Мы используем файлы cookie.
Продолжая использовать сайт, вы даете свое согласие на работу с этими файлами.

বিউবনিক প্লেগ

Подписчиков: 0, рейтинг: 0
বিউবনিক প্লেগ
Plague -buboes.jpg
বিউবনিক প্লেগ রোগে আক্রান্ত রোগীর উরুতে ক্ষত যা বিউবো নামে পরিচিত।
বিশেষত্ব সংক্রামক ব্যাধি
লক্ষণ জ্বর, মাথাব্যথা, বমি, লিম্ফনোড ফুলে যাওয়া ইত্যাদি।
রোগের সূত্রপাত জীবাণুতে আক্রান্ত হওয়ার ১ থেকে ৭ দিনের মধ্যে।
কারণ মক্ষিকা (flea) দ্বারা বাহিত ইয়ারসিনিয়া পেস্টিস (Yersinia pestis)
রোগনির্ণয়ের পদ্ধতি রক্ত, থুতু বা লসিকাগ্রন্থিতে জীবাণুর উপস্থিতি নির্ণয় করা যায়।
চিকিৎসা স্ট্রেপটোমাইসিন, জেনটামাইসিন, বা ডক্সিসাইক্লিন প্রভৃতি অ্যান্টিবায়োটিক।
সংঘটনের হার প্রতিবছর প্রায় ৬৫০ জন রোগী আক্রান্ত হয়।
মৃতের সংখ্যা চিকিৎসা প্রদান সত্ত্বেও মৃত্যুহার ১০%।

বিউবনিক প্লেগ (ইংরেজি: Bubonic plague) হল ইয়ারসিনিয়া পেস্টিস নামক ব্যাক্টেরিয়াঘটিত প্লেগ রোগের তিনটি প্রকারের একটি। জীবাণুর সংস্পর্শে আসার ১ থেকে ৭ দিনের মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। উপসর্গগুলো হল জ্বর, মাথাব্যথা, বমি। ত্বকের যে স্থান দিয়ে জীবাণু প্রবেশ করে তার নিকটবর্তী লসিকাগ্রন্থি ফুলে যায় ও ব্যথা হয়। মাঝেমধ্যে ফোলা লসিকাগ্রন্থি ফেটে যেতে পারে।

প্লেগ রোগের তিনটি রূপভেদ যেমন বিউবনিক প্লেগ, সেপটিসেমিক প্লেগনিউমোনিক প্লেগ এর মধ্যে কোনটিতে আক্রান্ত হবে তা নির্ভর করে শরীরে জীবাণু প্রবেশের ধরনের উপর। বিউবনিক প্লেগ সাধারণত ছোট প্রাণী থেকে আক্রান্ত মক্ষিকার মাধ্যমে ছড়ায়। এটা প্লেগে আক্রান্ত প্রাণীর মৃতদেহ থেকে নির্গত তরল পদার্থ থেকেও ছড়াতে পারে। বিউবনিক প্লেগের ক্ষেত্রে, মক্ষিকা ত্বকে কামড়ালে জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে লসিকানালীর মাধ্যমে লসিকাগ্রন্থিতে পৌছায় ফলে লসিকা ফুলে যায়। রক্ত, থুতু বা লসিকাগ্রন্থিতে জীবাণুর উপস্থিতি নির্ণয় করে রোগ নির্ণয় করা যায়।

প্রতিরোধের ক্ষেত্রে বিভিন্ন জনস্বাস্থ্য বিষয়ক পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে যেমন যেসব এলাকায় প্লেগের প্রাদুর্ভাব বেশি সেখানে জনগণকে মৃত প্রাণীর সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখা প্লেগ প্রতিরোধে টীকার কার্যকারিতা খুব একটা নেই।স্ট্রেপটোমাইসিন, জেনটামাইসিন, বা ডক্সিসাইক্লিন প্রভৃতি অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহৃত হয়। চিকিৎসা না করালে প্লেগ আক্রান্ত রোগীর ৩০% থেকে ৯০% রোগীই মৃত্যুবরণ করে। মৃত্যু হলে সাধারণত দশ দিনের মধ্যেই হয়। চিকিৎসা সত্ত্বেও মৃত্যুঝুঁকি প্রায় ১০%। সারাবিশ্বে প্রতিবছর প্রতিবেদনকৃত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৬৫০ জন তন্মধ্যে প্রায় ১২০ জন মৃত্যুবরণ করে। একবিংশ শতাব্দীতে আফ্রিকায় এই রোগটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

প্লেগকে ব্ল্যাক ডেথ এর কারণ হিসেবে মনে করা হয় যা এশিয়া, ইউরোপআফ্রিকায় চতুর্দশ শতাব্দীতে মহামারী আকারে দেখা দেয় যাতে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ প্রাণ হারায়। যার ২৫%-৬০% লোকই ছিল ইউরোপীয়। সে সময় বহুসংখ্যক শ্রমজীবী মানুষ মৃত্যুবরণ করায় শ্রমিক সঙ্কট দেখা দেয় ফলে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি পায়। কোনোকোনো ঐতিহাসিক এই ঘটনাকে ইউরোপীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের সন্ধিক্ষণ বোলে বিবেচনা করেন।bubonic শব্দটি গ্রিক শব্দ βουβών থেকে উদ্ভূত যার অর্থ "কুঁচকি" (groin)। স্ফীত লসিকাগ্রন্থিকে বুঝাতে "buboes" শব্দটিও ব্যবহৃত হয়।

উপসর্গসমূহ

রক্ত ও ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়া বিউবনিক প্লেগে আক্রান্ত রোগীর ছবি দেখানো হয়েছে যার নাকের অগ্রভাগ, ঠোঁট, হাতের আঙুলে টিস্যু নেক্রোসিস হয়েছে এবং তার অগ্রবাহুতে কালশিরে পড়েছে। এক সময় ব্যক্তিটির সমগ্র শরীরেই কালশিরে পড়েছিল।

বিউবনিক প্লেগের সবচেয়ে সুপরিচিত লক্ষণ হল এক বা একাধিক সংক্রমিত, স্ফীত ও ব্যথাযুক্ত লসিকা গ্রন্থি যা বিউবো নামে পরিচিত। "ইয়ারসিনিয়া পেস্টিস" নামক ব্যাক্টেরিয়া মক্ষিকার কামড়ের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশের পর নিকটবর্তী লসিকা গ্রন্থিতে বসতি গড়ে এবং বংশবিস্তার করে। বিউবোগুলো সাধারণত বগল, ঊরুর ঊর্ধ্বভাগ, কুঁচকি ও ঘাড় অঞ্চলে বেশি দেখা যায়। এছাড়া হাত ও পায়ের আঙুল, ঠোঁট ও নাকের অগ্রভাগের টিস্যুতে গ্যাংগ্রিন হয়। কামড়ভিত্তিক বিস্তারপ্রক্রিয়া হওয়ায় বিউবনিক প্লেগেই প্রথম প্রকাশ পায়। বিউবনিক প্লেগের উপসর্গসমূহ ব্যাক্টেরিয়ার সংস্পর্শে আসার কয়েকদিনের মধ্যেই প্রকাশ পায়। উপসর্গসমূহ নিম্নরূপঃ

  • শীত শীত অনুভূতি
  • অসুস্থতা-বোধ
  • উচ্চমাত্রায় জ্বর >৩৯ °সে (১০২.২ °ফা)
  • মাংসপেশি সংকোচন
  • খিঁচুনি
  • মসৃণ, স্ফীত, ব্যথাযুক্ত লসিকা গ্রন্থি বা বিউবো যা কুঁচকিতে বেশি দেখা যায় তবে বগল বা ঘাড়েও থাকতে পারে। প্রায়শ প্রাথমিক সংক্রমনের নিকটবর্তী স্থানে বেশি দেখা যায়।
  • আক্রান্ত লসিকা গ্রন্থি ফুলে যাওয়ার আগেই ব্যথা হতে পারে।
  • হাত ও পায়ের আঙুল, ঠোঁট ও নাকের অগ্রভাগের টিস্যুতে গ্যাংগ্রিন হয়।

অন্যান্য লক্ষণসমূহের মধ্যে রয়েছে গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস, অনবরত রক্তবমি (হিমাটেমেসিস), হাত-পা ব্যথা হওয়া, কাশি ও রোগী জ্যান্ত থাকা অবস্থাতেও ত্বকের ক্ষয় বা পচনের ফলে সৃষ্ট তীব্র ব্যথা। এছাড়া প্রচণ্ড ক্লান্তি, পেটের সমস্যা, লেন্টিকিউলি (সারা দেহে ছড়িয়ে থাকা কালো দাগ), চিত্তবৈকল্য বা প্রলাপ বকা ও গাঢ় নিদ্রা বা অচেতন অবস্থা।

কারণ

এটা ইয়ারসিনিয়া পেস্টিস নামক ব্যাক্টেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত একটা ওরিয়েন্টাল যা র‍্যাট ফ্লি (Xenopsylla cheopis) এর চিত্র যার অন্ত্রে জীবাণুগুলো কালো পিণ্ড আকারে দেখা যাচ্ছে। অন্ত্রের সম্মুখভাগ Y. pestis এর বায়োফিল্ম দ্বারা অবরুদ্ধ থাকে ফলে যখন মক্ষিকা অসংক্রমিত পোষকের রক্ত খাওয়ার চেষ্টা করে তখন অন্ত্র থেকে জীবাণু উদ্গিরণের মাধ্যমে কামড়ানোর স্থানে প্রবেশ করে সংক্রমণ ঘটায়।

বিউবনিক প্লেগ হল Xenopsylla cheopis নামক সংক্রমিত র্যাষট ফ্লির কামড়ের ফলে সৃষ্ট লসিকাতন্ত্রের একটি সংক্রমণ। খুব বিরল কিছু ক্ষেত্রে যেমন সেপটিসেমিক প্লেগ, সরাসরি সংক্রমিত টিস্যু বা আরেকজন সংক্রমিত ব্যক্তির কফের সংস্পর্শে আসলে রোগটি ছড়াতে পারে। মক্ষিকাটি গৃহ ও ক্ষেতের ইঁদুরের দেহে পরজীবী হিসেবে বাস করে এবং তার পোষকটি মারা গেলে আরেকটি শিকারের সন্ধান করে। ব্যাক্টেরিয়াটি মক্ষিকার কোনো ক্ষতি করে না যা এক পোষক থেকে আরেক পোষকে জীবাণুর বিস্তারে সহায়তা করে। জীবাণুগুলো মক্ষিকার অন্ত্রে জড়ো হয়ে একটি পিণ্ডের মতো বায়োফিল্ম তৈরি করে। অন্ত্রের সম্মুখভাগ Y. pestis এর বায়োফিল্ম দ্বারা অবরুদ্ধ থাকে ফলে যখন মক্ষিকা অসংক্রমিত পোষকের রক্ত খাওয়ার চেষ্টা করে তখন অন্ত্র থেকে জীবাণু উদগিরণের মাধ্যমে কামড়ানোর স্থানে প্রবেশ করে সংক্রমণ ঘটায়। ব্যাক্টেরিয়া মক্ষিকার কামড়ের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশের পর নিকটবর্তী লসিকা গ্রন্থিতে বসতি গড়ে এবং বংশবিস্তার করে। ইয়ারসিনিয়া পেস্টিস ব্যাক্টেরিয়া ফ্যাগোসাইটোসিস ঠেকাতে পারে এমনকি ফ্যাগোসাইটের অভ্যন্তরে বংশবিস্তার করতে পারে ও তাদেরকে হত্যাও করতে পারে। কিছুদিনের মধ্যে লসিকা গ্রন্থিতে রক্তপাত হয়ে স্ফীত হয় ও টিস্যুগুলো নেক্রোসিস হয়। কখনোকখনো বিউবনিক প্লেগ প্রাণঘাতী সেপটিসেমিক প্লেগে রূপান্তরিত হতে পারে। প্লেগ ফুসফুসেও ছড়াতে পারে সেক্ষেত্রে এটি নিউমোনিক প্লেগ নামে পরিচিত।

রোগ নির্ণয়

প্লেগ রোগ নির্ণয় নিশ্চিতকরণে ল্যাবোরেটরি পরীক্ষা প্রয়োজন। রোগীর নমুনা কালচার করে Y. pestis ব্যাক্টেরিয়া শনাক্ত করে এই রোগ নিশ্চিত করা সম্ভব। সংক্রমণের প্রাথমিক ও শেষ পর্যায়ে রোগীর সিরাম পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া র্যাণপিড ডিপস্টিক টেস্টের মাধ্যমে ব্যাক্টেরিয়ার অ্যান্টিজেন শনাক্ত করে তৃণমূল পর্যায়ে খূব দ্রুত রোগ নির্ণয় করা যায়।

পরীক্ষার জন্য নিম্নলিখিত জায়গা থেকে নমুনাগুলো সংগ্রহ করা হয়:

  • বিউবো: স্ফীত লসিকা গ্রন্থি বিউবনিক প্লেগের উল্লেখযোগ্য লক্ষণ। সুচ দিয়ে লসিকা গ্রন্থি থেকে তরল নমুনা নেওয়া হয়।
  • রক্ত
  • ফুসফুস

চিকিৎসা

বিউবনিক প্লেগের চিকিৎসায় বিভিন্ন প্রকারের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে রয়েছে অ্যামিনোগ্লাইকোসাইডসমূহ যেমন স্ট্রেপটোমাইসিন ও জেনটামাইসিন, টেট্রাসাইক্লিনসমূহ (বিশেষত ডক্সিসাইক্লিন) ও ফ্লুরোকুইনোলোন যেমন সিপ্রোফ্লক্সাসিন। চিকিৎসা পাওয়া সত্ত্বেও মৃত্যুহার প্রায় ১-১৫%, তবে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুহার বেড়ে ৪০-৬০% হতে পারে। প্লেগে আক্রান্ত রোগীর খুব দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন এবং মৃত্যু প্রতিহত করার জন্য প্রথম লক্ষণ প্রকাশের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া উচিত। অন্যান্য চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে অক্সিজেন, শিরাভ্যন্তরীণ তরল প্রয়োগ ও শ্বাস প্রশ্বাসে সহায়তা করা।যে সকল ব্যক্তি নিউমোনিক প্লেগ রোগীর সংস্পর্শে আসবে তাদেরকে প্রতিষেধমূলক অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে। বিউবনিক প্লেগে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে সংক্রমণের ১২ ঘণ্টার মধ্যে স্ট্রেপটোমাইসিন ব্যবহার করে নাটকীয় সাফল্য পাওয়া গিয়েছে।

ইতিহাস

প্রথম মহামারী

পূর্বাঞ্চলীয় রোমান সাম্রাজ্যে (বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য) প্রথম প্লেগ দেখা যায় যা সম্রাট প্রথম জাস্টিনিয়ান এর নামানুসারে জাস্টিনিয়ানের প্লেগ নামকরণ করা হয়। সম্রাট প্রথম জাস্টিনিয়ান প্লেগে আক্রান্ত হলেও ব্যাপক চিকিৎসায় তিনি বেঁচে যান। উক্ত মহামারীতে প্রায় আড়াইকোটি(৬ষ্ঠ শতাব্দীর মহামারী) থেকে পাঁচ কোটি লোক প্রাণ হারায়। ঐতিহাসিক প্রকোপিয়াস তার হিস্ট্রি অব দ্যা ওয়ারস গ্রন্থের ২য় ভলিউমে প্লেগের সাথে তার নিজের লড়াই ও উদীয়মান সাম্রাজ্যের উপর এর প্রভাব সম্পর্কে লিখেছিলেন। ৫৪২ খ্রিষ্টাব্দের বসন্তকালে, প্লেগ কনস্টান্টিনোপলে পৌঁছে বন্দর থেকে বন্দরে ও ভূমধ্যসাগরের চারিদিকে ছড়াতে থাকে। পরবর্তীতে পূর্বদিকে এশিয়া মাইনর পশ্চিমদিকে গ্রিসইতালি পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। সম্রাট জাস্টিনিয়ানের প্রচেষ্টায় বিলাসবহুল পণ্যদ্রব্য আমদানি-রপ্তানি হওয়ায় পণ্যদ্রব্য স্থানান্তরের কারণে দেশের অভ্যন্তরে প্লেগ ছড়িয়ে যায় এবং তার রাজধানী বিউবনিক প্লেগের প্রধান রপ্তানিকারকে পরিণত হয়। প্রিকোপিয়াস সিক্রেট হিস্ট্রি গ্রন্থে জাস্টিনিয়ানকে পিশাচ সম্রাট হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন যে, জাস্টিনিয়ান হয় নিজে প্লেগের স্রষ্টা ছিলেন নতুবা তার পাপকর্মের জন্য শাস্তি পাচ্ছিলেন।

দ্বিতীয় মহামারী

তুরনাই এর নাগরিকদের দ্বারা প্লেগে মৃতদের কবর দেওয়ার চিত্র। এটা The Chronicles of Gilles Li Muisis (1272–1352) থেকে নেওয়া একটি অনুচিত্র। Bibliothèque royale de Belgique, MS 13076-77, f. 24v.
১৭২০-১৭২১ সালে ফ্রান্সের মার্তিগুই শহরে বিউবনিক প্লেগে মৃতদের একটি গণকবর।

মধ্যযুগের শেষদিকে (১৩৪০-১৪০০) ইউরোপে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। ১৩৪৭ সালে কুখ্যাত বিউবনিক প্লেগের মহামারী হয় যা প্রায় একতৃতীয়াংশ লোকের প্রাণহানি ঘটায়। ইতিহাসে এটি ব্ল্যাক ডেথ নামে পরিচিত। কতক ঐতিহাসিক বিশ্বাস করেন যে, ঐ সময় সমাজের লোকজন অনেক বেশি হিংস্র হয়ে উঠে কারণ বিশাল মৃত্যুহার জীবনকে সস্তা করে দেয় ফলে যুদ্ধ-বিগ্রহ, অপরাধ, গণবিদ্রোহ ও নিপীড়নের হার বৃদ্ধি পায়। ব্ল্যাক ডেথ উৎপত্তি লাভ করে মধ্য এশিয়ায় ও ইতালিতে ছড়ায় পরবর্তীতে ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলিতে ছড়িয়ে যায়। আরব ঐতিহাসিক ইবনে আল-ওয়ারদনি ও আলমাকরিজি বিশ্বাস করতেন যে ব্ল্যাক ডেথের উৎপত্তি হয়েছিল মঙ্গোলিয়ায়। চীনা প্রতিবেদনেও ১৩৩০ সালের শুরুর দিকে মঙ্গোলিয়ায় ব্যাপক প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। ২০০২ সালে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে এটা ১৩৪৬ সালের শুরুর দিকে স্টেপি এলাকায় শুরু হয়েছিল যেখানে প্লেগের জীবাণু কাস্পিয়ান সাগরের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় তীর হতে দক্ষিণ রাশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। মঙ্গোলীয়রা চীন ও ইউরোপের মধ্যে অবস্থিত বাণিজ্য পথ, সিল্ক রোড, বন্ধ করে দেয় যা পূর্ব রাশিয়া থেকে পশ্চিম ইউরোপে ব্ল্যাক ডেথের বিস্তার থামিয়েছিল। ক্রিমিয়া উপদ্বীপের কাফা এলাকায় অবস্থিত ইতালীয় বণিকদের সর্বশেষ বাণিজ্য স্টেশনে মঙ্গোলদের হামলার মাধ্যমে মহামারীর সূত্রপাত ঘটে। ১৩৪৬ সালের শেষের দিকে প্লেগ দেয়াল অবরোধকারীদের মধ্যে ছড়ায় পরে তাদের মাধ্যমে শহরের মধ্যে ছড়িয়ে যায়। বসন্তের আগমন ঘটলে ইতালীয় বণিকরা তাদের জাহাজে পালিয়ে যায় এবং নিজেদের অজান্তেই তারা ব্ল্যাক ডেথ বহন করে নিয়ে যায়। মক্ষিকার মাধ্যমে ইঁদুরে বাহিত হয়ে, প্লেগ প্রথমত কৃষ্ণ সাগরের আশে পাশের লোকদের মাঝে ছড়ায় এবং তারপর লোকজন এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় পালানোর কারণে ইউরোপের বাকি অংশে ছড়িয়ে যায়।

তৃতীয় মহামারী

উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে প্লেগ পুনরায় মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। পূর্ববর্তী দুটি প্রদুর্ভাবের মতো, এবারও পূর্ব এশিয়া বিশেষ করে চীনের ইউনান প্রদেশে শুরু হয়েছিল যেখানে প্লেগের কয়েকটা প্রাকৃতিক উৎস রয়েছে। প্রথম প্রাদুর্ভাবটি ঘটেছিল অষ্টাদশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগে। ছড়ানোর পূর্বে কয়েক বছর ধরে রোগটি দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে অবস্থান করেছিল। চীনের ক্যান্টন শহরে, ১৮৯৪ সালের জানুয়ারি মাসে শুরু হয়ে জুন পর্যন্ত প্রায় আশি হাজার লোকের মৃত্যু হয়। হংকংয়ের নিকটবর্তী শহরের সাথে প্রত্যহ পানি যাতায়াত থাকায় প্লেগ সেখানে খুব দ্রুত ছড়ায় এবং দুই মাসের মধ্যে ২,৪০০ জনেরও অধিক লোক মারা যায়। আধুনিক মহামারী হিসেবে পরিচিত তৃতীয় মহামারী উনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ থেকে বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিককার সময়ে জাহাজ পথে সারাবিশ্বের বন্দর নগরীতে ছড়িয়েছিল। ১৯০০-১৯০৪ সালের দিকে সান ফ্রান্সিস্কোর চাইনাটাউনে প্লেগ আক্রমণ হয়েছিল। এবং ১৯০৭-১৯০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের ওকল্যান্ড ও ইস্ট বে এলাকায় ছড়ায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ প্রাদুর্ভাবটি ঘটেছিল ১৯২৪ সালে লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে। বন্য ইঁদুরে রোগটি এখনো বিদ্যমান থাকায় তদের সংস্পর্শে আসলে মানুষেও ছড়াতে পারে।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মহামারীটি ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত সক্রিয় ছিল বলে বিবেচনা করা হয় যখন বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর মৃতের সংখ্যা ২০০ তে নেমে এসেছিল। ১৯৯৪ সালে ভারতে পাঁচটি প্রদেশে প্রায় ৭০০ জন (৫২ জন মৃত সহ) প্লেগে আক্রান্ত হয়। সেসময় ভারতীয় লোকজন প্লেগের হাত থেকে বাঁচার জন্য এক প্রদেশ থেকে অন্য প্রদেশে চলে যেতে থাকে।

২০০১ সাল থেকে এক দশক ধরে , জাম্বিয়া, ভারত, মালাউই, আলজেরিয়া, চীন, পেরুগণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র দেশসমূহে সর্বাধিক প্লেগ রোগী ছিল যার মধ্যে শুধু গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রেই ১,১০০ জনেরও বেশি প্লেগ রোগী রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিকট প্রতিবছর প্রায় ১০০০ থেকে ২০০০ রোগীর প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ পর্যন্ত রাজনৈতিক অস্থিরতা, স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে জ্ঞানস্বল্পতার কারণে মাদাগাস্কারে নিয়মিতভাবে মহামারী হয়। ১৯০০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর গড়ে ৯ জন সহ ১০৩৬ জন প্লেগে আক্রান্ত হয়। ২০১৫ সালে, যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে ১৬ জন প্লেগে আক্রান্ত হয় তন্মধ্যে ইয়সমাইট ন্যাশনাল পার্কে ২ জন ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘটনাগুলো সাধারণত নিউ মেক্সিকোর উত্তরাঞ্চলের পল্লি এলাকায়, উত্তর অ্যারিজোনা, দক্ষিণ কলোরাডো, ক্যালিফোর্নিয়া, দক্ষিণ অরেগন ও দূরের পশ্চিম নেভাডায় হয়। ২০১৭ সালের নভেম্বরে, মাদাগাস্কার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে প্লেগ প্রাদুর্ভাব নিয়ে প্রতিবেদন পেশ করে যেখানে ওই দেশে সাম্প্রতিক যে কোনো প্রাদুর্ভাবের তুলনায় রোগী ও মৃতের সংখ্যা বেশি ছিল। তবে অধিকাংশ রোগীই বিউবনিকের পরিবর্তে নিউমোনিক প্লেগে আক্রান্ত ছিল।

সমাজ ও সংস্কৃতি

প্লেগ রোগটি প্রথম দেখা দেওয়ার পর থেকে এর প্রাদুর্ভাবের সাথে সম্পর্কিত মৃত্যুর মাপকাঠি ও সামাজিক অভ্যুত্থানের বিষয়টি ঐতিহাসিক ও গল্পের বর্ণনায় প্রধান বিষয় হিসেবে স্থান পেয়েছে। চসার, বোক্কাচ্চো, পেত্রার্কের কাজসহ অনেক সমসাময়িক উৎসে বর্ণিত ও উল্লেখিত ব্ল্যাক ডেথ ওয়েস্টার্ন ক্যাননের অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। বোকাচ্চোর লেখা দ্যা দেকামেরোন নামক গল্প গ্রন্থটি একটা ফ্রেম স্টোরির (যেখানে এক গল্পের মধ্যে দ্বিতীয় আরেকটি গল্প বলা হয়) জন্য বিখ্যাত যেখানে একজন ব্যক্তির গল্প বলা হয়েছে যে ব্ল্যাক ডেথের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য ইতালির ফ্লোরেন্স শহর থেকে পালিয়ে নির্জন গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলেন। প্লেগের বছরগুলোতে জীবিত ছিলেন এমন ব্যক্তির মুখ থেকে বর্ণনাকৃত চাঞ্চল্যকর কাহিনিমূলক ঘটনা বিভিন্ন শতাব্দী ও সংস্কৃতিতে খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো। পরবর্তী কাজসমূহ যেমন আলবেয়ার কামুর উপন্যাস দা প্লেগ অথবা ইংমার বারিমান-এর চলচ্চিত্র দ্য সেভেন্থ সিল –এ প্রেক্ষাপট হিসেবে মধ্যযুগীয় বা আধুনিক সময়ের কোনো শহরে বিউবনিক প্লেগকে দেখানো হয়েছে, যেটার মূলবক্তব্য হল প্লেগের সময় বিভিন্ন সমাজ, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির ভাঙন, মৃত্যুর সাথে সাংস্কৃতিক ও মানসিক অস্তিত্বের লড়াই এবং সময়াময়িক নৈতিক ও আধ্যাতিক প্রশ্নের ব্যাপারে প্লেগের রূপকাশ্রয়ী ব্যবহার।

বায়োলজিক্যাল যুদ্ধ

প্লেগকে বায়োলজিক্যাল যুদ্ধের প্রাথমিক উদাহরণ হিসেবে গণ্য করা হয় কারণ চতুর্দশ শতাব্দীতে সৈন্যরা প্লেগ মহামারী ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য শহর ও গ্রামের দেওয়ালের ওপারে প্লেগে আক্রান্ত মৃতদেহগুলোকে নিক্ষেপ করতো। পরবর্তীতে দ্বিতীয় চীন-জাপানযুদ্ধে রাজকীয় জাপানি সৈন্যরা প্লেগকে ব্যাক্টেরিয়াজনিত অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। এগুলো সরবরাহ করেছিল জাপানি আর্মির মেডিকেল অফিসার ও মাইক্রোবায়োলজিস্ট শিরো ইশির ইউনিট ৭৩১ যা যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারের পূর্বে মানবশরীরে পরীক্ষা চালানো হয়েছিল।উদাহরণস্বরূপ, ১৯৪১ সালে, রাজকীয় জাপানি বিমানবাহিনী চীনের নিংবো শহরে বিউবনিক প্লেগ জীবাণু বহনকারী মক্ষিকার বোমা ছুড়েছিল।খাবারোভস্ক যুদ্ধাপরাধ বিচার-এর সময় অভিযুক্ত যেমন মেজর জেনারেল কিয়াশি কাওয়াশিমা সাক্ষ্য দেন যে, ১৯৪১ সালে, ইউনিট ৭৩১ এর ৪০ জন সদস্য চীনের চ্যাংদ এলাকায় প্লেগবাহী মক্ষিকা নিক্ষেপ করেছিল যা পরে ঐ এলাকায় প্লেগ মহামারী ছড়ায়।

আরো দেখুন

আরো পড়ুন

বহিঃসংযোগ

শ্রেণীবিন্যাস
বহিঃস্থ তথ্যসংস্থান

টেমপ্লেট:Gram-negative bacterial diseases


Новое сообщение