Продолжая использовать сайт, вы даете свое согласие на работу с этими файлами.
বিছানা
বিছানা হচ্ছে এক ধরনের আসবাবপত্র যা ঘুমানোর ও আরাম করতে ব্যবহার করা হয়। বেশিরভাগ আধুনিক বিছানায় ফ্রেমের মধ্যে নরম জাজিম থাকে। যা একটি শক্ত কাঠামো অথবা স্প্রিং এর ওপর অবস্থান করে। অনেক বিছানাতেই বাইরের কাঠামোর ভিতর একটি স্প্রিং বাক্সের মত থাকে। যা জাজিমকে সহায়তা করে নিজ অবস্থানে অবস্থান করতে। বাচ্চাদের চাকাযুক্ত বিছানা কিংবা দোলনা অথবা শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের ছোট বিছানা থেকে শুরু করে বৃহৎ আকারের পর্যন্ত বিভিন্ন আকারের বিছানা হতে পারে। যদিও বেশিরভাগ বিছানা এক জাজিম বিশিষ্ট হয়। তবুও আরও অনেক রকমের বিছানা হতে পারে। যেমন: মারফি বিছানা, যেটিকে দেয়ালের সাথে ভাজ করে রাখা যায়। এছাড়াও রয়েছে সোফা বিছানা, যেটিকে সোফার মত করে রাখা যায়। এবং তলা বিশিষ্ট বিছানা, যেটিতে দুই বা দুইয়ের অধিক জাজিম থাকতে পারে। অস্থায়ী বিছানা সমূহ হচ্ছে বায়ুভর্তি জাজিম এবং বহনযোগ্য ভাজ করা যায় এমন বিছানা। কিছু কিছু বিছানাতে জাজিম বা কাঠামো কিছুই থাকে না। যেমন ঝুলন্ত বিছানা, যেটিকে সবচেয়ে আরামদায়ক হিসেবে গণ্য করা হয়। এই ধরনের বিছানায় আরম করতে করতে দোলাও যায়।
অনেক বিছানাতে মাথার দিকে বোর্ড থাকতে পারে। অনেকগুলোতে আবার পাশে বোর্ড থাকে। কিছু কিছু বিছানাতে পায়ের দিকেও বোর্ড হয়। মাথার দিকে বোর্ড যুক্ত বিছানাতে ধুলো আলান, বিছানার স্কার্ট ও ঝালর জাতীয় চাদর মিশানো থাকে। যা বিছানার মূল কাঠামোকে আড়াল করে। বিছানাতে মাথা রাখার জন্য জাজিমের ওপরের দিকে বালিশ থাকে। এই বালিশ নরম তুলা দিয়ে ভরা থাকে। অনেক সময় মুড়ানো কম্বল আলাদা করে রাখা হয় শোওয়ার জন্য। যার মধ্যে চাদর, লেপ, বালিশ থাকে। একে সাধারণভাবে বিছানাপত্র অথবা বেডিং বলা হয়। এটি বিছানার আসবাব বিহীন সরানোর উপোযোগী অংশ। এই অংশকে ধোয়া বা রৌদে শুকানো যায়।
ইতিহাস
প্রাচীন সময়
প্রথমদিককার বিছানাগুলো ছিল খড়ের গাদা বা এরকম কিছুর (যেমন তালগাছের পাতার গাদা, পশুর চামড়া, শুকানো ফার্নজাতীয় পাতা) উন্নত সংস্করণ। একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন তাদেরকে মাটি থেকে উপরে তুলে দেয়। যেখানে তারা ময়লা, আবর্জনা ও ক্ষতিকারক পোকার হাত থেকে বাঁচতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকার সিবুধু গুহায় ৩৬০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিককার একটি বিছানা সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে। এই বিছানাটি সাইপারসি এবং একবীজপত্রী উদ্ভিদে আচ্ছাদিত ক্রিপ্টোক্যরিয়া গাছের বাকল দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল।স্কটল্যান্ড এর উত্তর দিকের একটি গ্রামে একটি বিছানা সংরক্ষিত আছে। যা পাথরের তৈরি এবং এর ওপরে একটি আরামদায়ক ফিলার রয়েছে। ধারণা করা হয় যে, এটি খ্রিষ্টপূর্ব ৩২০০ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ২২০০ এর মধ্যে কোন এক সময় নির্মিত হয়েছিল। মিশরীয়রা এমন পালঙ্ক বানিয়ে ছিল যাতে উঠতে সিড়ি লাগতো। এই বিছানাতে পাশবালিশ এবং মাথা রাখার বালিশও ছিল। এতে মশারি টাঙ্গানোর ব্যবস্থাও ছিল। মিশরের অভিজাত ফ্যারাওদের ও রানীদের বিছানাগুলো কাঠ দিয়ে তৈরি ছিল। কিছু কিছু বিছানা আবার সোনায় মোড়ানো থাকত। সেখানে মাথা রাখার জন্য এক বিশেষ ধরনের বস্তু থাকত। যা অর্ধ-নলাকৃতির এবং পাথর, কাঠ অথবা ধাতু দিয়ে তৈরি করা হতো। প্রাচীন আসিরিয়াবাসী, মেদিসবাসী এবং পারস্যবাসীদেরও একই রকমের বিছানা ছিল। তারা তাদের আসবাবপত্রকে মনিমুক্তা ও হাতির দাঁত দিয়ে খচিত করত।
ডানপাশের চিত্রটি একটি মাথা রাখার আসবাব। এই ধরনের আসবাব শোবার সময় মাথা রাখার জন্য ব্যবহৃত হতো। এইগুলো এমনকি কফিনগুলোতেও পাওয়া গিয়াছে যাতে মমির মাথা রাখা ছিল। মাথা রাখার এই আসবাবটি সম্ভবত কবরের লাশের মাথা রাখতে তৈরি করা হয়েছিল। এই সম্পর্কিত তথ্য সমাধির স্তম্ভগুলোতে লিখা আছে। যা থেকে জানা যায় মৃত্যুর পরেও বিভিন্ন রকম প্রার্থনা করার দরকার ছিল।
ধারণা করা হয় যে সবচেয়ে প্রাচীন বিছানা হচ্ছে অডিসিউসের চারপায়া (খাট)। ওডিসিতে রশি দিয়ে বোনা একটি বিছানা ভূমিকা রেখেছিল। একই রকম আর একটি বিছানা ওয়েলসের সেন্ট ফেগানস ন্যাশনাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে। অডিসিউস এটারও বর্ণনা করেছেন যে তিনি কীভাবে তার ও পেনেলোপ এর বাসরের বিছানা সজ্জিত করেছিলেন। প্রাচীনকালের তথ্য মতে, তখনকার সময়ে নতুন দম্পতির শোবার ঘর জলপাই গাছের কাণ্ড দিয়ে তৈরি করা হতো। তার বিস্তারিত বর্ণনা থেকে জানা যায় যে পেনেলোপ শঙ্কিত ছিল হোমারের বিষয়ে। হোমারের সোনা, রূপা ও হাতির দাঁতের কারুকার্য খচিত বিছানার উল্লেখ্য আছে। গ্রীকদের বিছানার কাঠামো কাঠ দিয়ে তৈরি করা হতো। এর মাথার দিকে একটি বোর্ড থাকতো এবং চামড়া দিয়ে চারপাশ মুানো থাকত। পরবর্তীকালে এ বিছানাগুলো প্রায়ই ব্যয়বহুল পিপের সঙ্গে যুক্ত করে তৈরি হতো। কখনও কখনও এটি ছিল হাতির কঠিন দাঁত যুক্ত। যার সঙ্গে কচ্ছপের খোলা কিংবা রূপার তৈরি পায়াও ছিল। এখানে উল্লেখ্য যে প্রায়শই রূপার পায়ার পরিবর্তে ব্রোঞ্জ এর পায়া ব্যবহার করা হতো। দামী বালিশ এবং চাদরও ব্যবহার করা হতো। তখনকার সময় মিলেটাস, করিনথ, কারথেজ অভিজাত এলাকা হিসেবে বিবেচিত হতো। এইসব স্থান থেকে প্রাপ্ত প্রাচীন গ্রিসের মহাকাব্যগুলোর ছবিতে ভাজ করা যায় এমন বিছানা আছে।
রোমানদের জাজিমগুলো নলখাগড়া, খড় অথবা উল ভরে তৈরি করা হতো। অধিক আরামের জন্য পাখির পালক ব্যবহার করা হতো। মাথার দিকে ছোট গদি থাকতো। অনেক সময় পিঠের দিকেও গদি থাকতো। বিছানাগুলো অনেক উঁচু হতো যার জন্য সিটি লাগত উঠতে। এই রকম বিছানাগুলোতে দুইজনের শোবার ব্যবস্থা থাকতো এবং এর মাথার দিকে বোর্ড এবং দুই পাশে রেলিং থাকতো। বিছানার চাদর অনেক দামি হতো। সাধারণত এই চাদরগুলো স্বর্ণের সূতা দিয়ে রক্তবর্ণের দোরোখা করা থাকতো। সামনের দিকে চাদর মাটি পর্যন্ত ছুয়ে যেতো। প্রায়শ বিছানার কারুকার্য ব্রোঞ্জের ওপর রূপা দিয়ে করা হতো। এলাগাবালুস এর একটি নিরেট রূপার বিছানা ছিল। পম্পেই এর কিছু বাড়ির দেয়ালের পাশে বিছানা ছিল। যা পর্দা অথবা অন্য কিছু দিয়ে ঢাকা থাকত। প্রাচীন রোমে বিশ্রাম করার জন্য বিভিন্ন রকমের বিছানা ছিল। এগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- লেক্টাস কুবিকুলারিস বা কক্ষ বিছানা, যা সাধারণের ব্যবহার্য ছিল।
- লেক্টাস জেনিয়ালিস বা বাসর বিছানা, যা নব বিবাহিতদের ব্যবহার্য ছিল। এটা বিভিন্নভাবে সাজানো হতো এবং দরজার ওপর পাশে বারান্দার পাশে রাখা থাকতো।
- লেক্টাস ডিসকিউবিটোরিয়াস বা টেবিল বিছানা। এই বিছানাটি খাবার খাওয়া ও শোবার কাজে ব্যবহার করা হতো। এই ধরনের বিছানায় তিনজন ঘুমাতে পারে। সবচেয়ে সম্মানিত জন মাঝখানে শুতো।
- লেক্টাস লিউকিউব্রেটোরিয়াস পড়ার বিছানা।
- এবং লেক্টাস ফিউনেবরিস বা ইমরটুয়ালিস যা দিয়ে মৃতদেহ বহন করে চিতাতে নিয়ে যাওয়া হতো।
মধ্যযুগীয় ইউরোপ
প্রাচীন জার্মানির লোকেরা মাটির ওপর এক ধরনের বিছানা বানিয়ে ঘুমাতো। এই বিছানাগুলো ছিল মূলত চামড়ায় মুড়ানো পাতা অথবা এক বিশেষ ধরনের চেটাল সিন্দুক যা পাতা এবং শৈবাল দিয়ে ভরা থাকতো। কিন্তু মধ্যযুগের শুরুর দিকে তারা মেঝেতে কার্পেট বিছিয়ে ঘুমাতো, অথবা তারা দেয়ালের সাথে কাঠের টুকরা লাগিয়ে ঘুমাতো। দুই জায়গাতেই তারা জাজিম বিছিয়ে নিতো। আর এই জাজিম তৈরি হতো পশুর চামড়া দিয়ে। যার ভিতর পালক, উল অথবা চুল ভরা থাকতো। সিলিং থেকে পর্দা ঝুলতো অথবা দেয়ালের গায়ে শক্ত কিছু লাগিয়ে তার থেকে ঝুলানো হতো। তারা সাধারণত বিছানায় নগ্ন হয়ে ঘুমাতো এবং একটা লিনেন চাদর দিয়ে নিজেদের ঢেকে রাখতো। এই চাদরটি গদির ওপর বিছানো থাকতো।
১২শ শতকে বিছানাগুলোতে বিলাসিতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। তখনকার বিছানাগুলো আরও কারুকার্য খচিত করে কাঠ দিয়ে তৈরি হতো। কারুকার্য ছাড়াও তাতে বিভিন্ন রকমের নকশা ও চিত্র অঙ্কিত থাকতো। তারা ভাজ করা যায় এমন বিছানাও ব্যবহার করতো। যা দিনের বেলায় বসার কাজে ব্যবহার করা হতো। এটির উপরের অংশ যা চামড়ায় তৈরি হতো তা রেশমি কাপড় দিয়ে ঢাকা থাকতো। রাতের বেলা তাতে লিনেনের চাদর ঢেকে দেওয়া হতো এবং বালিশ রাখা হতো। যেখানে রেশমি চামড়া চাদর হিসেবে ব্যবহার হতো। ক্যারোলিং রাজবংশের পাণ্ডুলিপি থেকে জানা যায় যে, ধাতু নির্মিত খাটের মাথার দিক পায়ের দিকের চেয়ে উঁচু হতো। এই রকমের বিছানার ধারা ১৩শ শতক পর্যন্ত ফ্রান্সে প্রচলণ ছিল। ঢাল থেকে শরীর ওপরে তুলতে অনেক গদি ব্যবহার করা হতো। ১২শ শতকের পান্ডুলিপি থেকে জানা যায় যে, তখনকার সময়ের খালগুলো অনেক উঁচু হতো। যাতে কারুকার্য, নকশা ও চিত্র খদিত থাকতো। এছাড়াও দোরোখা শয্যাবরণী এবং মাপমতো জাজিম থাকতো। এইসব বিছানার চারপাশে উপর থেকে পর্দা ঝুলতো এবং প্রায়শই একটা ঝুলন্ত বাতি থাকতো।
১৪শ শতকের দিকে কাঠের কাজ তার গুরুত্ব হারায়। তার বদলে ধনীদের বাটিতে ঝুলন্ত বিছানার কদর বাড়ে। তখনকার বিছানাগুলোতে রেশমি ও মখমল এমনকি সোনা দিয়ে বুনা কাপড়েরও প্রচলন ছিল। ১৪শ শতকের প্রথম দিককার গবেষকদের থেকে এই সব ঝুলন্ত বিছানার বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায় । এগুলোকে পশম দিয়ে খুব উননতভাবে দোরোখা করা হতো। এই সেই সময় যখন চারস্তম্ভ বিশিষ্ট বিছানা বা চাঁদোয়াযুক্ত বিছানার প্রচলন হয়। এই বিছানাগুলো ঘরের সিলিং থেকে ঝুলতো অথবা দেয়ালের সাথে শক্ত করে দিতে দিয়ে বাধা থাকতো। পরবর্তীতে যখন একটা ঘরের মধ্যে আর একটা ঘর করার নিয়ম চালু হয় তখন এই ধরনের বিছানাগুলোকে দ্বিস্তর বিশিষ্ট পর্দা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হতো। অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্রকে বাতিল করে দেওয়া হতো। দেয়াল এবং বিছানার মাঝখানের জায়গাটিকে রুয়েল বলা হতো। শুধুমাত্র আন্তরিক বন্ধুরাও সেখানে আসার অনুমতি পেতো। ১৪শ শতকেই পালকের বিছানার উচ্চ মূল্যায়ন করা হতো।
১৫শ শতকের বিছানাগুলো বৃহৎ আকারের হতো। এইগুলো দৈর্ঘ্যে ৭ থেকে ৮ ফুট (২.১ থেকে ২.৪ মিটার) এবং প্রস্থে ৬ থেকে ৭ ফুট (১.৮ থেকে ২.১ মিটার) আকারের হতো। জাজিমগুলো মটরশুঁটির খোসা, খড় অথবা পালক দিয়ে ভরা থাকতো। এই সময়কার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ তাদের সাথে তাদের সকল ব্যবহার্য দ্রব্যাদি বহন করতো। তারা এমনকি খাটের সাথে বিছানাও বহন করতো। এই কারণে তখনকার সময়ে খাট ছিল নিছক একটি কাঠামো যাকে সহজেই আলগা ও জোড়া লাগানো যেতো। কিন্তু ১৬শ শতকের শুরুর দিক থেকে বিছানাগুলো আরও ভারী এবং সাজানো হয়। যার কারণে এইগুলো তখন থেকেই একই স্থানে রাখা হতো।
নবজাগরণের সময় এবং আধুনিক ইউরোপ
১৭শ শতাব্দীকে "জাঁকজমকশালী বিছানার শতাব্দী" নামে অভিহিত করা হয়। এই সময়কার শৈলীর নাম হচ্ছে ল্য ডিউস্যস, যেখানে চাঁদোয়া এবং পর্দা শুধুমাত্র মাথার দিকে থাকতো। যা ফ্রান্সের আবদ্ধ বিছানাগুলোর জায়গা দখল করে। যদিও তা আরও অধিক সময়ব্যপী ইংল্যান্ডে প্রচলিত ছিল। ফ্রান্সের ষোড়শ লুইস এর কাছে বহুসংখ্যক অতীব ব্যয়বহুল বিছানা ছিল। তার প্রাসাদ আবিষ্কারকগণ ৪১৩টির কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলোর মধ্যে কতগুলো মুক্তা খচিত ছিল। যা গঠিত হয়েছিল রূপা কিংবা স্বর্ণের ওপর। ভ্রাসাই এর বিখ্যাত বিছানাটিতে আরক্ত মখমলের পর্দা ছিল। যার ওপর "ভেনাস এর জয়জয়কার" সেলাই করা ছিল। তখন এতই স্বর্ণ ব্যবহার করা হতো যে মখমল দেখাই যেত না।
১৮শ শতকে জার্মানিতে প্রথমবারের মতো পাখির পালকের বালিশের ব্যবহার শুরু হয়। যা বিছানার শোভা বাড়ায়। এমনকি তা ফ্রান্সের বেশিরভাগ অঞ্চলের লোকজন শিষ্টাচার হিসেবে ব্যবহার শুরু করে। যদিও বিছানার শৈলীর নাম ছিল ল্য ডিউস্যস, কিন্তু ফ্রান্সে বিভিন্ন নামের ও গড়নের বিছানা বিদ্যমান ছিল। ফ্রান্সের রাজা মহসভায় অবস্থানকালে সিংহাসনের পরিবর্তে এক ধরনের বিছানায় হেলান দিয়ে থাকত যাকে "ন্যায়ের বিছানা" বলা হতো। এই সময় রাজপুত্রগণ বসে, বৃহত্তম পদাদিকারীগণ দাড়িয়ে, ক্ষুদ্রতম পদাদিকারীগণ হাঁটুর উপর ভর দিয়ে অবস্থান করতো। এভাবে রাজকীয়গণ তাদের রাজ ক্ষমতার প্রদর্শন করতো।
ফ্রান্সের লুইস একাদশ এই ধারা শুরু করেন এবং তা শেষ সম্রাট পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। যেই কক্ষে আনুষ্ঠানিক বিছানা রাখা থাকতো তাকে চেম্বার জি প্যরেডি বলা হতো, সেখানে কেবল গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ যেমন রাষ্ট্রদূত ও অন্যান্য রাজ্যের সম্রাটগণ আমন্ত্রিত হতেন। এটাই তৎকালীন চল ছিল রাজসভার ভিড় থেকে সম্মানিত ব্যক্তিবর্গদের আলাদা করার। অন্যদিকে ভ্রার্সাই প্রাসাদের মহিলাগণও বাচ্চা প্রসবের আগে ও পরে, শোকে এবং আনন্দময় মূহুর্তে, এমনকি বিয়ের ঠিক পরের মুহূর্তে- মূলত বর্ণনা করা যায় এমন সব মূহুর্তেই তাদের ঘনিষ্ঠ বান্ধবীদের বিছানায় আমন্ত্রণ জানাতো। ১৭শ শতকেই এই প্রথাটি সাধারণভাবে প্রচলিত হয়ে যায়। হয়ত তখন শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণ না করতেই এমনটা করা হতো। ফরাসি বিপ্লবের পূর্ব পর্যন্ত ফ্রান্সের উঁচু সমাজে বহনযোগ্য বিছানা ব্যবহৃত হতো। নিকটতম বহনযোগ্য বিছানা পাওয়া যায় চার্লস দ্য বোল্ডের ব্যবহৃত সামগ্রীগুলোর মধ্যে পাওয়া গিয়েছিল। এইগুলো সজ্জিত ছিল একটি হালকা কাঠামোর উপর। এছাড়াও তখনকার সময়ের নিশ্চল বিছানার পাওয়া গিয়াছিল।
১৮শ শতকে লোহার বিছানার প্রসার ঘটে। তখন বিজ্ঞাপনে প্রচার করা হতো যে, কাঠের বিছানায় যেই পোকা থাকে তা লোহার বিছিনায় থাকে না। অন্যান্য জায়গায় সরানো বা ভাঁজ করা যায় এমন আবদ্ধ বিছানারও চল ছিল। তখন ইংল্যান্ডে অনেকটাই সহজ সরল গঠনের বিছানার চল ছিল। ১৯শ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চারস্তম্ভবিশিষ্ট বিছানাগুলো সাধারণ নাগরিকের বিছানা ছিল।
বিছানার মাপ
সারা বিশ্বব্যাপী ভিন্ন ভিন্ন মাপের বিছানা হয়। যা তিন জনে বসতে পারে এমন উপোযোগী চেয়ারের মাপ মতো করে তৈরি হয়। তিনজনের কম বসতে পারে এমনটা যদিও হয় না তবুও প্রতিটা দেশের নিজস্ব মানদন্ড ও শৈলী রয়েছে। যেখানে ইংরেজি ভাষাভাষী দেশসমূহে যুগল বিছানার সার্বজনীন মাপ চওড়ায় ৪ ফুট ৬ ইঞ্চি এবং লম্বায় ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি (১৩৭ সেমি × ১৯০ সেমি) কিন্তু অন্যান্য বিছানার মাপে পার্থক্য আছে। এমনকি মূল ইউরোপের মাপেও ভিন্নতা ঘটে। এর কারণ সব জায়গায় সমভাবে মেট্রিক পদ্বতি ব্যবহার করা হয় না।
১৯৫০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিছানা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানসমূহ একটি নতুন মাপ প্রচলন করেন যাকে কিং সাইজ বলে অভিহিত করা হয়। বাস্তবে কিং সাইজ অন্যান্য মাপগুলো থেকে আলাদা। যেহেতু এই মাপটি তখন প্রচলিত ছিল না তাই দুইটি স্প্রিং বক্সকে এক করে এটা তৈরি হতো এবং স্প্রিং এর ওপর কিং সাইজের জাজিম দেওয়া হতো। যুক্তরাষ্ট্রের মাপে এবং ইউরোপীয় মাপে প্রায়শই একটা ভুল ধারণা করা হয় যে এগুলো টুইন এক্সট্রা লং এর সমতুল্য। সে যাইহোক, এগুলো একটা আর একটার পরিপূরক। মূলত এখানে ৭৬ ইঞ্চি (১৯০ সেমি) চওড়ার পরিবর্তে ৭৮ ইঞ্চি. (২০০ সেমি) চওড়া করা হয়। যা ইউরোপীয় কিং সাইজে আদর্শ মাপ হিসেবে ধরা হয়। আর একটা কিং সাইজ আছে যা মূল সাইজের চেয়ে ভিন্ন, একে "ক্যালিফোর্নিয়া কিং সাইজ" বলা হয়। এর মাপ ৭২ ইঞ্চি × ৮৪ ইঞ্চি (১৮০ সেমি × ২১০ সেমি)। এটি চওড়ার দিকে কিছুটা ছোট হলেও লম্বার দিক থেকে বড়।
যা সারা বিশ্বব্যাপী সিঙ্গেল বিছানা হিসেবে পরিচিত তা যুক্তরাষ্ট্রে "টুইন বিছানা" নামে পরিচিত। আবার অনেক দেশে "টুইন বিছানা" দুইটি সিঙ্গেল বিছানার যোগে গঠিত হয়। এরকম আর একটা উদাহরণ হলো, যেমন অনেক দেশে পূর্ণাঙ্গ জাজিম "মাষ্টার সাইজ" বিছানা বলে ডাকা হয়
অনেক সময় জাজিম বিছানার সাথে লাগানো থাকে। এরকম বিছানার উদাহরণ হিসেবে বলা যায় টুইন সাইজ বিছানা ও কুইন সাইজ বিছানা । এছাড়াও নিম্নোক্ত তালিকায় যে মাপগুলো দেওয়া আছে তাও সব জায়গায় একরকম নয়।
জাজিমের মাপ | ইঞ্চি স্কেলে মাপ | সেমি স্কেলে মাপ |
---|---|---|
দোলনার মাপ | ৩০" চওড়া x ৭৪" লম্বা | ৭৬x১৮৮ |
টুইন | ৩৯" চওড়া x ৭৫" লম্বা | ৯৯x১৯০ |
টুইন এক্সট্রা লং | ৩৯" চওড়া x ৮০" লম্বা | ৯৯x২০৩ |
পূর্ণ মাপ | ৫৪" চওড়া x ৭৫" লম্বা | ১৩৭x১৯০ |
পূর্ণ মাপ (বেশি লম্বা) | ৫৪" চওড়া x ৮০" লম্বা | ১৩৭x২০৩ |
কুইন সাইজ | ৬০" চওড়া x ৮০" লম্বা | ১৫৩x২০৩ |
কল-কিং সাইজ | ৭২" চওড়া x ৮৪" লম্বা | ১৮৩x২১৪ |
কিং সাইজ | ৭৬" চওড়া x ৮০" লম্বা | ১৯৩x২০৩ |
সকল জাজিম নির্দিষ্ট মাপ অনুযায়ী তৈরি করা হয়, কিন্তু বিভিন্ন ব্রান্ডের মাঝে মাপের তারতম্য ঘটে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই পার্থক্য ২ থেকে ৫ ইঞ্চির মধ্যে হয়ে থাকে। যখন কেউ নিজ ইচ্ছার অনুযায়ী বিছানা তৈরি করতে চায় তখন স্বতন্ত্র জাজিমের মাপ হয়।
প্রসিদ্ধ বিছানা
বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম বিছানা হলো ওয়ের এর বিখ্যাত বিছানাটি। যা ১৫৮০ সালে নির্মিত হয়েছিল। এটি ৩.২৬ মিটার (১০.৭ ফুট) চওড়া এবং ৩.৩৮ মিটার (১১.১ ফুট) লম্বা। উইলিয়াম শেকসপিয়র রচিত টুয়েলফথ নাইট গ্রন্থে এই বিছানার কথা উল্লেখ আছে। এটি বর্তমানে লন্ডনের ভিক্টোরিয়া এন্ড এলবার্ট যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। এই যাদুঘরের আর একটি প্রসিদ্ধ বিছানা হলো "গোল্ডেন বিছানা", যা উইলিয়াম ভার্গ্রেস দ্বারা ১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে তৈরি হয়েছিল।
১৮৮২ সালে একজন ভারতীয় মহারাজার সম্পূর্ণ রূপার তৈরি একটি বিছানা ছিল। যার চারকোণে হাতে পাখা ধরা অবস্থায় চারটি পূর্ণাকার উলঙ্গ নারীমূর্তি ছিল। মহারাজা যখন বিছানার ওপর ঘুমাতেন তখন তার শরীরের ভরের প্রভাবে নারীমূর্তিগুলো হাতের পাখা নাড়ানো শুরু করতো।
১৮৬৫ সালের দিকে পরিবর্তনযোগ্য বিছানা পাওয়া যেত। যা পরিবর্তিত হয়ে পিয়ানো হয়ে যেত। যা ঘরের জায়গা যেমন বাচাতো তেমনি আবার বিনোদনও দিত।
ধরন
বিভিন্ন ধরনের বিছানা আছে:
- নিয়ন্ত্রণযোগ্য বিছানা হলো সেই বিছানা যাকে বিভিন্ন পন্থায় নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বেশিরভাগ হাসপাতালের বিছানা এই ধরনের বিছানা। যার ফলে রোগীরা চিকিৎসার স্বার্থে তাদের দেহের বিভিন্ন অংশ উঠাতে পারে। কারও কারও বাড়িতেও নিয়ন্ত্রণযোগ্য বিছানা থাকে। অনেক দম্পতিদের জন্য বিশেষভাবে নকশা করা এই ধরনের বিছানা পাওয়া যায়। সেখানে দুইটি আলাদা আলাদা জাজিম দুইটি আলাদা আলাদা পদ্ধতি অনুসরণ করে। যেখানে একজন শুয়ে থাকে সেখানে অপরজন তার অংশের জাজিম উপরে তুলে টেলিভিশন দেখা বা বই পেতে পারে। দম্পতিদের জন্য নকশা করা নিয়ন্ত্রণযোগ্য বিছানায় চিকিৎসার স্বার্থে পরিবর্তনও করা যায়। যাতে রোগীরা নিজেকে আরামদায়কভাবে রাখতে পারে।
- বায়ু-বিছানাতে বাতাস ভর্তি জাজিম থাকে। যার সাথে অনেক সময় বৈদ্যুতিক বায়ুনিষ্কাশনযন্ত্র যুক্ত থাকে এবং এটি পরিবর্তন ও নিয়ন্ত্রণযোগ্য। এই ধরনের বিছানার বহনযোগ্য সংস্করণটি গুটানো ও ভাজ করা যায়। তাই এটাকে ভ্রমণে অথবা অতিথির অস্থায়ী বিছানারূপে ব্যবহার করা যায়।
- নবজাতকের জন্য ঢাকনা যুক্ত বেতের দোলনা ব্যবহার করা হয়।
- বক্স-বিছানা হচ্ছে এমন একটা বিছানা যা একটা বড় বক্সের মতো করে তৈরি করা হয়। যার ছাদে, পাশে এবং পায়ের দিক কাঠ দিয়ে ঢাকা থাকে এবং সামনের দিকে অথবা পাশে একটা ছোট খুপরি থাকে যা দিয়ে এর ভিতরে প্রবেশ করা যায়। এই ধরনের বিছানা স্কটল্যান্ডের কুটিরগুলোতে খুবই প্রচলিত। অনেক সময় সাধারণ বিছানাগুলোকেও বক্স বিছানার মতো করা হয়।
- পিতলের বিছানা হলো সেই ধরনের বিছানা যা পিতল দিয়ে তৈরি করা হয়। পিতলের প্রলেপ দেওয়া বিছানাগুলো লোহার তৈরি বিছানার চেয়ে সস্তা। এই ধরনের বিছানায় লোহার কাঠামোর ওপর পাতলা করে পিতলের প্রলেপ দেওয়া থাকে। কালে কালে তা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে লোহা দৃশ্যমান হয়।
- পালান বিছানা হচ্ছে এমন এক ধরনের বিছানা যেখানে দুই বা তার অধিক সংখ্যক বিছানা একটার ওপর আর একটা থাকে। এই ধরনের বিছান সেনাছাউনিতে ও স্কী-লজে বহুল ব্যবহৃত। এছাড়াও গ্রীষ্মকালীন শিবিরগুলোতে এই ধরনের বিছানায় শিশু ও বয়ঃসন্ধিকালীন ছেলেমেয়েরা ঘুমায়। কিছু কিছু সস্তা হোটেলেও আগুন্তকদের জন্য এরকম বিছানার ব্যবস্থা থাকে। এমনকি অনেক বাসা বাড়িতে বাচ্চারা এই ধরনের বিছানায় ঘুমায়।
- চিলেকোঠার বিছানা পালান বিছানার মতই এক ধরনের বিছানা। তবে এখানে নিচের তাকের বিছানাটি থাকে না। নিচের তাকের খালি জায়গাটিতে গুদাম হিসেবে কিংবা কোন আসবাব বা পড়ার টেবিল ইত্যাদি রাখা হয়।
- ক্যপ্টেন'স বেড, যা ক্যপ্টেন বিছানা, বুক বিছানা ও কক্ষ বিছানা নামেও পরিচিত, এক ধরনের মাচা বিছানা যার নিম্নদেশে দেরাজ বা সংরক্ষিত বগি থাকে।
- ক্যাম্পের বিছানা যা খাটিয়া হিসেবেও অধিক পরিচিত। এক ধরনের সরল, অস্থায়ী ও বহনযোগ্য বিছানা। এই বিছানাগুলো সেনাবাহিনী ও ক্যাম্পারবৃন্দ দ্বারা বহুল ব্যবহৃত। গৃহহীন ও উদ্বাস্তুদের ঘুমানোর জন্য এবং বিভিন্ন ধরনের দূর্যোগ, বন্যা ও অন্যান্য সঙ্কটকালেও. এই ধরনের বিছানা ব্যবহার করা হয়।
- শামিয়ানা বিছানা চারস্তম্ভবিশিষ্ট বিছানার মতোই, কিন্তু এর স্তম্ভগুলো অপেক্ষাকৃত বেশি উঁচু এবং কাপড় দিয়ে সজ্জিত থাকে অথবা উপর থেকে কাপড় টাঙ্গানো থাকে। অনেক সময় এই কাপড় দিয়ে এর পুরোটাই ঢেকে ফেলা হয়।
- পর্দাযুক্ত বিছানা এক ধরনের দামী বিছানা যা পর্দা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়।
- কৌচ এমন এক ধরনের বিছানা যা দিনের বেলায় বসার এবং রাতের বেলা ঘুমানোর কাজে ব্যবহার করা হয়। সাধারণত এটাতে মট করে ভাঙ্গা যায় এমন পায়া আছে যা রাতের বেলায় ঘুমাতে কাজে লাগে।
- ফুটন এক ধরনের জাপানীজ শৈলীর বিছানা। যেখানে কাঠের কাঠামোর ভিতর জাজিম ভরা থাকে। এটি বৃহত্তর পাশ্চাত্যেরও একটি শৈলী, যেখানে এগুলোকে ভাজ করে বসার ব্যবস্থা করা হয়। যদিও ঐতিহ্যগতভাবে এই ধরনের বিছানা তুলা দিয়ে তৈরি করা হয় তবুও বিংশ শতাব্দীতে এসে কৃত্রিম ফোম এর ব্যবহার বাড়ছে।
- চারস্তম্ভবিশিষ্ট বিছানাগুলোতে চারকোণে চারটি স্তম্ভ থাকে, যা খাটের চাঁদোয়াকে খাটের সাথে যুক্ত থাকতে সহায়তা করে।
- ঝুলন্ত বিছানা হলো সেই বিছানা যা কাপ বা জাল ঝুলিয়ে তৈরি করা হয়। এটি মূলত জাহাজে কিংবা বাটিতে ব্যবহার করা হয়।
- নিরালা বিছানা হলো এমন একটি বিছানা যা এপার্টমেন্টে বসবাসকারীদের প্রয়োজনের তাগিদে সারাহ ই. গুড্ডি কর্তৃক উদ্ভাবিত হয়েছিল। যখন বিছানা হিসেবে ব্যবহৃত হয় না, তখন এটাকে প্রয়োজনীয়তা অনুসারে ভাজ করে অন্যান্য আসবাবপত্র যেমন বইয়ের তাক বা পড়ার টেবিলে পরিবর্তিত করা যায়।
- হাসপাতালের বিছানাগুলো আরোগ্যলাভ সহজতর করার জন্য বিশেষভাবে পরিকল্পিত এক ধরনের বিছানা। এটি ঐতিহ্যগতভাবে হাসপাতালে কিংবা রোগীদের সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার হয়। কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে যেমন মানুষের বাসা বাড়িতেও এর ব্যবহার রয়েছে। এই ধরনের বিছানা নিয়ন্ত্রণযোগ্য তাই মাথা কিংবা পাকে ওঠানামা করানো যায়। চিকিৎসার মাঝপথে কোথাও নিয়ে যেতে আধুনিক হাসপাতালের বিছানাগুলোতে চাকা আছে। এই চাকাগুলো ট্রলির চেয়ে অপেক্ষাকৃতভাবে বড় এবং অধিকতর স্থায়ী। "হাসপাতালের বিছানা" হাসপাতালের রোগী ধারণক্ষমতার একক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। যদিও কথাটাকে ছোট করে শুধুমাত্র "শয্যা" বলা হয়। (উদাহরণস্বরূপ: হাসপাতালটি ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট।)
- শিশুশয্যা (ছোট খাট অথবা দোলনা) শিশুদের জন্য নির্মিত বিছানা।
- ১৮৫০ এর দশকে লোহার বিছানা বিকশিত হয়। এইগুলো লোহা বা স্টিল দিয়ে তৈরি।
- ক্যাং চুল্লি বিছানা হলো চীনামাটি দিয়ে তৈরি এক ধরনের বিশেষ বিছানা। এটা মূলত রুম হিটার যা বিছানার কাজেও ব্যবহার করা হয়।
- পাঞ্জাবীদের ঐতিহাসিক বিছানা হলো চারপায়া। যা কাঠের ফ্রেমের ভিতর রশি বেঁধে তৈরি করা হয়।
- শোকের বিছানা হলো শোক প্রকাশের আনুষ্ঠানিক বিছানা। যেখানে মৃত ব্যক্তিকে শোওয়ানো হয়, অনেক সময় মোমের প্রতিকৃতিকে। পদমর্যাদার চিহ্ন স্বরূপ এই বিছানাগুলো ভিন্নতর হতে পারে।
- দেয়াল বিছানা হলো সেইসব বিছানা যেগুলোকে ভাজ করে দেয়ালের সাথে লাগিয়ে রাখা যায়। এই ধরনের বিছানা ঘরের জায়গা সাশ্রয় করে।
- ওটোম্যন বিছানা (যুক্তরাজ্যের) এক ধরনের বিছানা যেটার নিম্নদেশ গুদাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই ধরনের বিছানার জাজিমকে যন্ত্রের সাহায্যে তোলা বা সরানো যায়।
- তৃণশয্যা এক ধরনের অস্থূল ও হালকা গদি।
- প্ল্যাটফর্ম বিছানা হলো শক্ত কোন তক্তার ওপর জাজিম বা এ জাতীয় কোন কিছু বিছিয়ে তৈরি করা হয়।
- গুটানো বিছানা হলো সেইসব বিছানা যেগুলোকে অর্ধেক ভাজ করা যায় অথবা গোল-গোল করে গুটানো যায়। একে সহজেই যেকোনো স্থানে সংরক্ষণ বা সরানো যায়। এই বিছানাগুলো বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহার করা হয়, যখন ধারণার তুলনায় অতিথির সংখ্যা বেশি হয় তখন হোটেলে এই ধরনের বিছানা বিনামূল্যে অথবা মূল্য পরিশোধ করে ঘুমানো যায়। উদাহরণস্বরূপ ৪ জনের কক্ষে ৫ জন লোক দুইটি জোড়া-বিছানা নিয়ে আছে।
- দড়ি বিছানা হলো প্রাক-আধুনিক বিছানা। যার কাঠের কাঠামোর সাথে নির্দিষ্ট ধারা অনুযায়ী দড়ি বাধা থাকে। এই দড়ি জাজিমকে ধরে রাখে।
- সোফা বিছানা (বা টানা বিছানা) এক ধরনের ভাজযোগ্য বিছানা, যাকে ভাজ করে সোফা করা যায়।
- আধুনিক ইউরোপের শুরুর দিকে সিংহাসনের মতো বিছানার বিকাশ ঘটে যা পূর্বে বেদির মতো ছিল।
- সাধারণত এক থেকে আাড়াই বছরের শিশুদের বিছানাগুলো হয় ছোট ও তাদের ব্যবহারের উপযোগী।
- চক্রযুক্ত শয্যা হচ্ছে এমন এক বিছানা যা টুইন বিছানার নিচে রাখা থাকে। এটাকে বিছানার নিচের বিছানা বা দিনের বেলার বিছানাও বলা হয়।
- স্পন্দিত বিছানা যা "জাদুকরী আঙ্গুলের বিছানা" হিসেবেও পরিচিত। এটি পয়সা দিয়ে নিয়ন্ত্রিত অভিনব বিছানা। যা ১৯৬০ থেকে ১৯৮০ দশকের শুরু পর্যন্ত মোটরবিহারীদের মোটেলগুলোতে পাওয়া যেত। নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করলে এই বিছানাগুলো কিছু সময়ের জন্য স্পন্দিত হতো। বিকল্পধারায় এটি একটি আধুনিক বিছানা। যা মেশিনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে কাপতে পারে। এছাড়াও মেশিনের সাহায্যে সময় এবং কম্পন নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এটি চিকিৎসার স্বার্থে এবং কামনার স্বার্থে ব্যবহার করা হয়।
- পানি বিছানা হলো প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি এক ধরনের নরম জাজিম, যাতে পানিপূর্ণ থাকে । এই প্লাস্টিক এর জন্য একটি শক্ত কাঠামো প্রয়োজন।
কাঠামো
বিছানার কাঠামোকে খাট বলা হয়। এটি কাঠ অথবা স্টীল দিয়ে তৈরি। এর মাথা, পা ও পাশের তক্তা থাকে। ভারী অথবা বড় বিছানাগুলোর (যেমন কিং ও কুইন বিছানায়) কাঠামোকে সহয়তা করার জন্য অতিরিক্ত তক্তা থাকে, যা মূলত মাঝখানকে ধরে রাখে। এই তক্তা গুলোকে এমনভাবে জোড়া দেওয়া হয় যাতে এর ভিতরে জাজিমটা থাকতে পারে। অথবা স্প্রিং বসিয়ে জাজিম রাখা যায়।
বিছানার কাঠামোর ধরনগুলো হলো:
- মাচা - সাধারণত বাক্স স্প্রিং ছাড়া এই বিছানাগুলো তৈরি হয়।
- কাপ্তেন - এই বিছানাগুলোর নিচের খালি জায়গা ব্যবহার করার জন্য দেরাজ থাকে।
- পানি বিছানা- খুব শক্তিশালী কাঠামোর ওপর এই বিছানাগুলো তৈরি করা হয়। যা পানির ভর সহ্য করতে পারে। এই বিছানাগুলো প্রধানত বৃহৎ আকৃতির হয়।
যদিও বিছানার কাঠামো, হেডবোর্ড, ফুটবোর্ড, তক্তা সমূহ বিছানার অংশ নয়, তবুও বিছানা বোঝাতে এগুলো সবগুলোকেই বোঝায়। হেডবোড এবং ফুটবোর্ড কাঠের অথবা ধাতুর হতে পারে। এইগুলো পলিশ করা, অঙ্কিত এবং কাপড় অথবা চামড়া দিয়ে ঢাকা থাকতে পারে।
বিছানার তক্তা কাঠ বা ধাতু দিয়ে তৈরি করা হয়। যা হেডবোর্ড এবং ফুটবোর্ডকে যুক্ত করে। কতগুলো সরু কাঠের টুকরো বিছানার তক্তাগুলোর সাথে সমকোণে স্থাপিত হয়। এগুলো জাজিমকে অথবা স্প্রিংকে বহন করে। বিছানার তক্তাগুলো এবং স্তম্ভগুলো একটা অপরটির সাথে বিশেষ একটা রীতিতে জোড়া লেগে থাকে। এই পদ্ধতিতে আবার খুব সহজেই আলাদাও করা যায়। একে "নক-ডাউন" পদ্বতি বলে। প্রাথমিক কিছু "নক-ডাউন" পদ্বতিগুলো নিচে দেওয়া হলো:
- পিন আর হুক বন্ধন: উল্লম্বভাবে খাটের কাঠের ওপর খাঁজ কেটে অথবা ছিদ্র করা হয়। পিনগুলোকে অনুভূমিকভাবে খাটের স্তম্ভগুলোতে ঢুকানো হয়। যদি কেউ খাটগুলোর দিকে ভালোভাবে লক্ষ করে তবে দেখতে পাবে যে, দুইটি পিন লাগানো আছে। একটা নিচে এবং আর একটা তার উপরে লাগানো থাকে। আর হুকগুলো তক্তার শেষ প্রান্তে লাগানো থাকে। প্রকৃতপক্ষে এই হুকগুলো একটা প্লেটের অংশ যা তক্তার সাথে থাকে। এই হুকগুলো খাটের স্তম্ভগুলোর নির্ধারিত ছিদ্র পথে ঢুকিয়ে পিন লাগানো হয়।
- প্লেট এবং হুক বন্ধন: এখানে পিনের পরিবর্তে প্লেট থাকে। যা তক্তা আর স্তম্ভকে যুক্ত করে। এখানে হুক তক্তার সাথে যুক্ত থাকে, এটা হয় উঁচু নয় খাজ কাটা। যন্ত্রপাতির ওপর নির্ভর করে খাটের একটা খাজ প্রয়োজন যার ভিতরে প্লেট ঢুকানো হয়। এটাকে অনেক সময় চাবির ছিদ্র বন্ধনও বলা হয়। বিশেষ করে যখন হুকের বদলে প্লাগ ব্যবহার করা হয়।
- নক-ডাউন বন্ধনে বিছানার বল্টুর একটা ভিন্ন মাত্রা থাকে। খাটে একটা ছিদ্র ড্রিল করা হয়। বল্টুর মাথা ঢুকিয়ে প্লাগ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। তক্তাতে কীলক নাট অথবা অন্য ধরনের নাট বল্টুকে গ্রহণ করে। স্প্রিং ধাতু দিয়ে তৈরি করা হয় এবং সর্বোচ্চ আরামের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণে পেচানো হয়। নিরাপদ তক্তা বা খাটের পাশ বিছানার সাথে যুক্ত থাকে, (সাধারনভাবে শিশু ও বৃদ্ধদের বিছানায়) যাতে তারা নিচে পরে না যায়। নিরাপদ তক্তাটি এক টুকরা কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয় । যাকে বিছানার এক পাশে অথবা উভয় পাশে লাগানো হয়। এগুলোকে এমনভাবে তৈরি করা হয় যাকে প্রয়োজন শেষ হলে সরানো যায়।