Продолжая использовать сайт, вы даете свое согласие на работу с этими файлами.
মায়াস্বর
পরিবেশন কলা |
---|
মায়াস্বর বলতে এক ধরনের পরিবেশন কলাকে বোঝানো হয়। যিনি এই খেলাটি দেখান তিনি হলেন মায়াস্বরী (ভেন্ট্রিলোকুইস্ট)। একজন মায়াস্বরী মঞ্চে এমনভাবে তার কণ্ঠকে ব্যবহার করেন যাতে মনে হয় যে অন্য কোনও উৎস থেকে (সাধারণত মায়াস্বরীর হাতে থাকা পুতুলের মুখ থেকে) শব্দটি আসছে। ‘মায়াস্বরী’ ও একটি পুতুলের মাঝে মজাদার কথোপকথনের মধ্যে চলে এই খেলার আবহ। কখনো হাসি-ঠাট্টা, কখনো জীবন দর্শন, কখনোবা সমাজের হালচাল নিয়ে রচিত হয় কথোপকথনের বিষয়বস্তু। কিন্তু উপস্থাপনা খুব সূক্ষ্ম হওয়া বাঞ্ছনীয় যাতে করে দর্শকদের মাঝে সন্দেহ না হতে পারে যে দুজন একই ব্যক্তি। এই কলাটিকে ইংরেজিতে ভেন্ট্রিলোকুইজম (ইংরেজি: Ventriloquism) বলে।
উদ্ভব
ঐতিহাসিক দিক থেকে, মায়াস্বর এক ধরনের ধর্মীয় সংস্কৃতি। মায়াস্বরের ইংরেজি Ventriloquism এসেছে লাতিন venter (পেট) এবং loqui (কথা) থেকে। যার দরুন এথেন্সের ভেন্ট্রিলোকুইজমের নামকরা যাজক ‘ইউরিকাইস’ এবং তার শিষ্যদের নাম হয়েছিল ‘Belly Prophet’। নামটির অর্থ অনেকটা এরকম- 'পেটের অন্তরাল থেকে কথা'। এই কথাকে মায়াস্বরীদের পেটের অন্তরালে আশ্রয় নেওয়া প্রেতের কাছ থেকে আসা বাণী হিসাবে কল্পনা করা হত। এই মায়াস্বরীরা প্রেতদের সাথে যোগাযোগ করতে পারতেন বলে ভাবা হত এবং এরা সাধারণত ভবিষ্যদ্বাণীও করতেন। পরবর্তীতেও বিভিন্ন ধর্মে এই ‘ভেন্ট্রিলোকুইজমে’র ব্যবহার দেখা যায়। মূলত মৃত আত্মা নামানো, যাকে আমরা প্ল্যানচেট বলে থাকি, এই কাজে ভেন্ট্রিলোকুইজম সবচাইতে বেশি ব্যবহার করা হত। ধীরে ধীরে এই বিদ্যাটি সকলের কাছে যাদুবিদ্যা হিসেবে ধরা দেয় এবং এর পর থেকেই মূলত মঞ্চে ভেন্ট্রিলোকুইজমের ব্যবহার শুরু হয়। চীনও এই বিদ্যাটির জন্য খুব প্রসিদ্ধ ছিল। ওখানে এই বিদ্যার নাম ‘কৌজি’।
বিস্তার ও অগ্রগতি
অষ্টাদশ শতাব্দীতে এসে ‘ভেন্ট্রিলোকুইজম’ একটি বিনোদনের মাধ্যম হয়ে গড়ে ওঠে। এই সময়টিতে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের ভ্রাম্যমাণ বাজারের সৃষ্টি হয় এবং বিভিন্ন পর্যটক, পরিব্রাজক ও ভ্রমণপিপাসু মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ফলে বিভিন্ন মেলায় এই বিদ্যার প্রদর্শন শুরু হয়। ইংল্যান্ডেই এই বিদ্যার দৃশ্যমান রূপের সূচনা হয় বলে ধরা হয়ে থাকে। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে ভেন্ট্রিলোকুইজম একটি প্রতিষ্ঠিত বিনোদন মাধ্যম হিসেবে চিহ্নিত হয়। কিন্তু সেই সময় এই বিদ্যায় এখনকার মতো পুতুলের ব্যবহার ছিল না। তখন অন্য আওয়াজটি মনে হতো অনেক দূর থেকে আসছে যা এখন খুব কাছে একটি পুতুল রেখে করা হয়। ১৭৫৭ সালে অস্ট্রিয়ান ব্যারন ডি মেঙ্গেন নামে জনৈক ব্যক্তি প্রথম মঞ্চে পুতুলের ব্যবহার শুরু করেন। ভেন্ট্রিলোকুইজমের আধুনিকায়নের পেছনে অনেক দক্ষ ব্যক্তির অবদান থাকলেও ফ্রেড রাসেলকেই আধুনিক ভেন্ট্রিলোকুইজমের জনক বলা হয়। এই ফ্রেড রাসেলই প্রথম ভেন্ট্রিলোকুইজমকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন এবং নিয়মিত বিভিন্ন জায়গায় স্টেজ শো করতেন। পরবর্তীতে পল উইনচেল, জিম্মি নেলসন, ডেভিড স্ট্রেসম্যান, জেফ দুনহাম, টেরি ফেটোর, ওয়েল্যান্ড ফ্লাওয়ার্স, সারি লুইস, উইলি টাইলার এবং জে জেনসন এর মতো অনেক গুণী ভেন্ট্রিলোকুইলিস্ট এ অদ্ভুত খেলায় যুক্ত হন।
উপমহাদেশে মায়াস্বর
ভারতীয় উপমহাদেশে ভেন্ট্রিলোকুইজমের সূত্রপাত ঘটে ভারতের ‘প্রফেসর যশোয়ান্ত পাধ্যায়ে’র হাত ধরে। তার ছেলে রামদাস পাধ্যায় এই বিদ্যাকে আরও বেশি জনপ্রিয় করেন প্রথম টেলিভিশনে দেখানোর মাধ্যমে। কিন্তু আঁকা সংস্কৃতির জনপ্রিয়তার সাথে সাথেই ভাটা পড়তে থাকে এই বিদ্যার। টিভিতে মানুষ অনেক বেশি আধুনিক হয়ে পড়তে থাকে, যার দরুন এই বিদ্যার গ্রহণযোগ্যতা বেশ কমে যায়। কিন্তু স্ট্যান্ড আপ কমেডির জনপ্রিয়তার সাথে সাথে বর্তমানে আবার নতুন করে তরুণদের মধ্যে ভেন্ট্রিলোকুইজমের প্রতি আগ্রহ জন্মাচ্ছে।
কলাকৌশল
মায়াস্বরের কলাকৌশল বেশ জটিল ও অত্যন্ত সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। গভীরভাবে শ্বাস নিয়ে স্বাভাবিকভাবে শব্দের উচ্চারণ করা মায়াস্বরের জন্য অত্যাবশ্যক। সমস্ত ব্যাপারটির সময় জাদুকর বা মায়াস্বরী ঠোঁটে কোনো নড়াচড়া করতে পারে না বা করলেও তা মুখগহ্বরের মধ্যে খুব কৌশলে করতে হয়। মায়াস্বরীদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো সাথের পুতুলটিকে সঠিক সময় সঠিকভাবে নড়াচড়া করানো। পুতুলের অঙ্গভঙ্গির প্রত্যুত্তরে মুখে ধরে রাখতে হয় সমগ্র মুখ বিস্তৃত হাসি। এর ফলে ঠোঁট যথেষ্ট ফাঁকা থাকে, এতে ঠোঁটের নড়াচড়া ছাড়াই শব্দ বেরোতে পারে ভেতর থেকে। ভেন্ট্রিলোকুইস্ট বা মায়াস্বরীকে শব্দ উচ্চারণের ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। স্বরবর্ণগুলো ঠোঁটের নড়াচড়া ছাড়াই উচ্চারণ করা যায় । কিন্তু বাংলায় (ব, ম, প) এবং ইংরেজিতে (f, v, p and m) ধ্বনিগুলো উচ্চারণ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এখানেও তাকে বুদ্ধির আশ্রয় নিতে হয়। এ কারণে একজন ভেন্ট্রিলোকুইস্ট বা মায়াস্বরী ছোট শিশুর ডামি ব্যবহার করেন যাতে করে মনে হয় শিশুটি সব কথা এখনও উচ্চারণ করতে শেখেনি। তাদের মুখের এই অস্পষ্ট স্বরকেই স্বাভাবিক মনে হয়। সাম্প্রতিক সময়ে পুতুলের পরিবর্তে বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষিত প্রাণীকে ডামি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ভুল ধারণা
সাহিত্যে কিছু সময়ে মায়াস্বরের উল্লেখের ক্ষেত্রে দেখা যায়, মায়াস্বরবিদ তার কন্ঠকে দূরে কোন একটি স্থানে ছুঁড়ে দিলেন। সাহিত্যের খাতিরে ব্যবহৃত হলেও এটি বাস্তব নয়। মায়াস্বরবিদের কথাগুলো সবসময়েই তার কন্ঠ থেকে নির্গত হয়। মানব মস্তিষ্কে দৃশ্যমান আলো এবং শব্দ একই সাথে বিশ্লেষিত হয়। এই দৃশ্যমান ঘটনাবলী এবং অবস্থানের মাঝে মায়াস্বরবিদ কিছু ছদ্ম দিকনির্দেশ করেন বলে শব্দের উৎপত্তিস্থানের অবস্থান নিয়ে ভ্রান্তি তৈরি হয়। এই ভ্রান্তি তৈরির সামগ্রিক প্রক্রিয়াটির নামই মায়াস্বর বা ভেন্ট্রিলোকুইজম।
বাংলা সাহিত্যে মায়াস্বর
ভেন্ট্রিলোকুইজম বা মায়াস্বর অনেক প্রাচীন বিদ্যা হলেও এর জনপ্রিয়তা বহুকাল ধরে চলে আসছে। সাহিত্যাঙ্গনেও এই বিষয়ের উপর অনেক বই রচিত হতে দেখা যায়। সত্যজিত রায়ের ‘ভুতো’ গল্পটি তো অসম্ভব রোমহর্ষক একটি গল্প।
আরো পড়ুন
- Vox,Valentine I Can See Your Lips Moving, the history and art of ventriloquism (1993) 224 pages. (3000 year history of the practice. Plato Publishing/Empire publications আইএসবিএন ০-৮৮৭৩৪-৬২২-৭
- Leigh Eric Schmidt (1998) "From Demon Possession to Magic Show: Ventriloquism, Religion, and the Enlightenment". Church History. 67 (2). 274-304.