Продолжая использовать сайт, вы даете свое согласие на работу с этими файлами.
রাম ঠাকুর
শ্রী শ্রী রামঠাকুর | |
---|---|
জন্ম |
(১৮৬০-০২-০২)২ ফেব্রুয়ারি ১৮৬০ ডিঙ্গামানিক, ফরিদপুর, বাংলা প্রদেশ, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান বাংলাদেশ) |
মৃত্যু | ১ মে ১৯৪৯(1949-05-01) (বয়স ৮৯) নোয়াখালী, পূর্ব বাংলা, পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
ক্রম | আত্মোপলব্ধি |
দর্শন | তন্ত্র, যোগ |
রাম ঠাকুর (জন্মনাম রাম চন্দ্র চক্রবর্তী, ২ ফেব্রুয়ারি,১৮৬০-১ মে, ১৯৪৯) ১৯ শতকের একজন হিন্দু ধর্মগুরু এবং সাধক।
ঊনবিংশ এবং বিংশ শতাব্দীর ভারতীয় সমাজ জীবনে কুসংস্কার, ব্রিটিশ রাজশক্তির সৃষ্টি করা ভেদ নীতি ও দাঙ্গার বিরুদ্ধে শুধু আধ্যাত্মিক চেতনায় মানুষকে বলীয়ান করাই নয়, সমাজ সংস্কারের এক সার্থক রূপকার ছিলেন রাম ঠাকুর।
জীবনী
জন্ম
১৮৬০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার ডিঙ্গামানিক গ্রামে শ্রীঁরাধামাধব চক্রবর্তী ও শ্রীমতি কমলাদেবীর সন্তান হিসাবে শ্রীশ্রী রামঠাকুর জন্মগ্রহণ করেন। তারা ছিলেন চার ভাই ও এক বোন; কালীকুমার, কাশীমণি দেবী, জগবন্ধু এবং যমজ ভাই রাম ও লক্ষ্মণ। দুই যমজ ভাই ছিলেন অবিবাহিত।
শৈশব
শৈশবে গ্রামের পাঠশালায় বাংলা শেখার মাধ্যমে শ্রীশ্রী রামঠাকুরের শিক্ষা গ্রহণ শুরু হয়। পিতা তন্ত্রসাধক ছিলেন বলে বালক বয়সেই রামায়ণ, মহাভারত এবং পুরাণ চর্চায় তিনি গভীর মনোযোগী হয়ে ওঠেন। তার স্মৃতি শক্তি ছিল প্রখর। দুই যমজ ভাইয়ের একই সঙ্গে উপনয়ন হয়। ত্রিসন্ধ্যাবন্দনা থেকে সব করণীয় কাজ তিনি একাগ্রতার সঙ্গে পালন করতেন। শ্রীশ্রী রামঠাকুরের পিতার গুরুদেব ছিলেন শ্রীঁমৃত্যুঞ্জয় ন্যায়পঞ্চানন। তিনি শ্রীশ্রী রামঠাকুরকে খুব স্নেহ করতেন। মাত্র আট বছর বয়সে রামঠাকুর তার পিতাকে হারান। পিতার মৃত্যুর কয়েক দিন পর গুরুদেবের অসুস্থতার খবর শুনে তার মাতা শ্রীমতি কমলাদেবী দুই যমজ পুত্র রাম ও লক্ষ্মণকে সঙ্গে নিয়ে তাকে দেখতে যান। তাদের সামনেই গুরুদেব শ্রীঁমৃত্যুঞ্জয় ন্যায়পঞ্চানন মারা যান। কয়েক দিনের ব্যবধানে প্রথমে পিতা, পরে গুরুদেবের মৃত্যুতে বালক রামঠাকুরের মনে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়। মানুষের জীবনমৃত্যু কেন্দ্রিক নানা প্রশ্ন তার মনে ঘুরপাক খেতে থাকে। কোনও এক অক্ষয় তৃতীয়া তিথিতে স্বপ্নে দেখা দিয়ে গুরুদেব তাকে সিদ্ধ মন্ত্র দেন। এর পর তার জীবনে শুরু হয় এক নতুন অধ্যায়। সিদ্ধ পুরুষের মতো তিনি মাঝে মাঝেই ভাবাবিষ্ট হয়ে পড়তেন। মানসিক ভাবাবিষ্ট শ্রীশ্রী রামঠাকুর ১৮৭২ সালে সকলের অজ্ঞাতে অজানাকে জানার লক্ষ্যে গৃহত্যাগী হন। অনুসন্ধিৎসু বালক পায়ে হেঁটে বন জঙ্গল পাহাড় নদীর অজানা অচেনা পথ পেরিয়ে অবশেষে পৌঁছালেন আসামের শ্রীশ্রী কামাক্ষ্যাদেবীর মন্দিরে। অক্ষয় তৃতীয়া তিথিতে তিনি কামাক্ষ্যা মন্দিরে পৌঁছে গুরুদেবের দেওয়া সিদ্ধ নাম এক মনে জপ করার সময় তিনি পরিষ্কার শুনতে পেলেন, গম্ভীর গলায় তাকে কে যেন ডাকছে। রাম, রাম ডাক শুনে তার বুঝতে অসুবিধা হল না, যে গুরুদেবের সিদ্ধ নাম তিনি স্বপ্নে পেয়েছেন, এই ডাক হল তারই। ডাকের অমোঘ টানে সাড়া দিয়ে বাইরে এসে শ্রীশ্রী রামঠাকুর দেখেন জটাধারী, দীর্ঘাঙ্গী এক জ্যোতির্ময় মহাপুরুষ সামনে দাঁড়িয়ে। তাকে গুরু হিসাবে বরণ করে শ্রীশ্রী রামঠাকুর প্রণাম করলেন। গুরুও তার যোগ্য শিষ্যকে আলিঙ্গন করলেন। এর পর শুরু হল গুরুর সঙ্গে অজানার সন্ধানে অন্তহীন পথে যাত্রা।
সাধন জীবন
কিশোর শ্রীশ্রী রামঠাকুর গুরুর নির্দেশে পাহাড়, মরুপথ পেরিয়ে গভীর অরণ্যের নিরালায় তপস্যায় বসলেন। শোনা যায়, হিমালয় পর্বতমালায় কখনও কৌশিকাশ্রম, কখনও বশিষ্ঠাশ্রম সহ বহু অজানা স্থানে বছরের পর বছর তপস্যা করে এবং তপস্যারত মুনিদের সেবাপূজায় সময় কাটিয়ে তিনি অষ্টসিদ্ধি অর্জন করেন। এর পর গুরুর নির্দেশে লোকালয়ে ফিরে মানবসেবায় নিয়োজিত হন। গুরুর কৃপায় তার কাছে অগম্য স্থান এবং অজ্ঞাত বস্তু বলে কিছু ছিল না। এর পর গুরু তাকে মাতৃসেবার জন্য বাড়ি ফিরতে আদেশ করেন। গুরুর নির্দেশ শিরোধার্য করে নিজের রোজগারে মাতৃসেবার জন্য তিনি নোয়াখালির এক ইঞ্জিনিয়ারের বাড়িতে পাচকের কাজ নেন। শ্রীশ্রী রামঠাকুর নিষ্ঠার সঙ্গে রান্নার কাজ করতেন। সকলকে নিজের হাতের রান্না খাবার খাইয়ে আনন্দ পেলেও তিনি নিজে এ সব কিছুই খেতেন না। সামান্য দুধ এবং দু’এক টুকরো ফলাহারেই তাঁর শরীর ছিল সুস্থ ও সবল। অচিরেই কর্মদাতা ইঞ্জিনিয়ার বুঝতে পারেন, তাঁর বাড়ির পাচক কোনও সামান্য মানুষ নন; এক মহাপুরুষ। শ্রীশ্রীঠাকুরের স্বরূপ জানার পর তিনি তাঁকে আর পাচকের কাজ করতে দেননি। এরপর শ্রীশ্রী রামঠাকুর ফেণী শহরে এক ওভারসিয়ারের অধীনে সরকারি কাজ নেন। সেই সময় নানা জাতের বহু মহিলা কর্ম সূত্রে ফেণী শহরে থাকতেন। তাঁদের আপন জন বলে কেউ ছিল না। শ্রীশ্রীঠাকুর নিজের হাতে রান্না করে এই সব মহিলাকে যত্ন সহকারে খাওয়াতেন। এদের কেউ অসুস্থ হলে মা বোনের মর্যাদায় সেবা করতেন। শ্রীশ্রীঠাকুরের এই সেবাপরায়ণতা দেখে তখনকার মহকুমা হাকিম কবি নবীনচন্দ্র সেন শ্রীশ্রী রামঠাকুর সম্পর্কে লিখেছেন, পরসেবায় ছিল তাঁর পরমানন্দ। জেলখানার ইটখোলার ঘরে পাবলিক ওয়ার্কস প্রভুদের আনন্দ দিতে কখনও কখনও বারাঙ্গনারা হাজির হত। শ্রীশ্রীঠাকুর তাদেরও রান্না করে খাওয়াতেন, মাতৃজ্ঞানে সেবাযত্ন করতেন। তৎকালীন কুসংস্কারচ্ছন্ন সমাজে যেখানে ছোঁয়াছুঁয়ির নামে শুচিবায়ুগ্রস্ত মনোভাব, বর্ণ বৈষম্যের মতো কুপ্রথার প্রভাব ছিল, তখন নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ পরিবারের অকৃতদার যুবকের এ হেন আচরণকে সমাজ বিপ্লবের এক উদাহরণ হিসাবে উল্লেখ করা যেতে পারে। কবি নবীনচন্দ্র সেন ‘আমার জীবন’ বইয়ের চতুর্থ ভাগে ‘প্রচারক না প্রবঞ্চক’ অংশে শ্রীশ্রী রামঠাকুরের কিছু অলৌকিক ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন। প্রাণিকুলের প্রতি শ্রীশ্রী রামঠাকুরের ছিল যথেষ্ট মায়ামমতা। ফুলের সুগন্ধের মতো তার আধ্যাত্মিক জ্ঞান, যৌগিক শক্তি, নানা বিভূতি প্রকাশিত হয়েছে। শ্রীশ্রী রামঠাকুর তার জীবনের অর্ধেক সময় লোকচক্ষুর আড়ালে গভীর যোগ সাধনায় মগ্ন ছিলেন। সাধনার মাধ্যমে যে মহাসত্য তিনি উপলিব্ধ করেছিলেন, তা বাকি ৪০ বছর (১৯০৮ থেকে ১৯৪৯) সকলের মঙ্গলে লোকালয়ে বিলিয়েছেন। তার কাছে, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, শুচি, অশুচির কোনও ভেদ ছিল না। সব ঘটনাই তিনি নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে ব্যাখ্যা করে ভক্তদের বোঝাতেন। প্রকৃত অর্থেই তিনি ছিলেন সমভাব নিরপেক্ষ শক্তির আধার। মন্দির, মসজিদ, গির্জায় নয়, শ্রীশ্রীঠাকুর অবস্থান করেছেন ভক্তের প্রয়োজনে, ভক্তের আলয়ে। লোকালয়ে থাকার প্রায় ৪৫ বছর তিনি মানব মুক্তির দিশা বিতরণ করেছেন। ভক্তদের তিনি বলতেন, আমি আপনাদের জন্য চাইখ্যা ‘নাম’ আনছি। বর্তমানে সদাব্যস্ত গার্হস্থ সমাজে এমন এক সহজ সরল অনাড়ম্বর ‘নাম’ করার নির্দেশ এবং সত্যের প্রতি অনুরাগ পৌঁছে দিতে পারে কৈবল্য মুক্তি। বৈষ্ণব, শৈব এবং শাক্ত মতে প্রয়োজনভিত্তিক নাম বিলি করে তিনি প্রকৃত অর্থেই ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে উঠে মানব সম্প্রদায়ের প্রচার করে গিয়েছেন। তিনি শুধু আধ্যাত্মিক গুরুই নন, তিনি জন্মজন্মান্তরের মা, বাবা ও বন্ধু।
মৃত্যু
১৯৪৯ সালের ১ মে অক্ষয় তৃতীয়ার পুণ্য লগ্নে চৌমুহনীতে অগণিত ভক্তকে চোখের জলে ভাসিয়ে ৯০ বছর বয়সে শ্রীশ্রী রামঠাকুর পরলোক যাত্রা করেন।
মন্তব্য
রাম ঠাকুরের একনিষ্ঠ ভক্ত ডঃ যতীন্দ্রমোহন দাশগুপ্ত'কে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন-
সমুদ্রেরও একটা কূল আছে, কিন্তু তোমার ঠাকুরের কোনও কূলকিনারা নেই।
কৈবল্যধাম আশ্রম প্রতিষ্ঠা
শ্রীশ্রী রামঠাকুরের নির্দেশে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে ১৯৩০ সালে কৈবল্যধাম আশ্রম এবং ১৯৪২ সালে কলকাতার দক্ষিণ শহরতলির যাদবপুরে কৈবল্যধাম আশ্রম তৈরি হয়। এছাড়া, ১৯৪৩ সালে তার জন্মভিটা ডিঙ্গামানিক গ্রামে সত্যনারায়ণ সেবা মন্দির তৈরি হয়। নামপ্রার্থীদের জন্য এক নির্দিষ্ট প্রথায় মোহান্ত পরম্পরা মারফত নাম বিতরণের তিনি ব্যবস্থা করে গিয়েছেন।