Продолжая использовать сайт, вы даете свое согласие на работу с этими файлами.
সংক্রমণ-বাহক অনুসন্ধান
সংক্রমণ-বাহক অনুসন্ধান | |
---|---|
জনস্বাস্থ্যে সংক্রমণ-বাহক অনুসন্ধান (ইংরেজি: Contact tracing) বলতে এমন একটি প্রক্রিয়াকে বোঝায় যেখানে কোনও নিশ্চিতভাবে ছোঁয়াচে রোগাক্রান্ত (বা নিশ্চিতভাবে রোগজীবাণু দ্বারা সংক্রমিত) ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন, এমন সম্ভাব্য সমস্ত ব্যক্তিকে (যাদেরকে "সংক্রমণ-বাহক" "Contact" বলা হয়) অনুসন্ধান ও শনাক্ত করা হয় এবং পরবর্তীতে ঐ সব সংক্রমণ-বাহক সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। প্রথমে সংক্রমিত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসা সংক্রমণ-বাহকদের অনুসন্ধান করা হয়, তারপর ঐ সব সংক্রমণ-বাহকদের সংক্রমণের জন্য পরীক্ষা করা হয়, সংক্রমিত হলে তাদেরকে চিকিৎসা করা হয় ও অন্তরিত করে রাখা হয় এবং তারপরে ঐসব সংক্রমণ-বাহকদের সংস্পর্শে এসেছেন, এমন দ্বিতীয় স্তরের সংক্রমণ-বাহকদেরকেও অনুসন্ধান করা হয় এবং এভাবে প্রক্রিয়াটি চলতে থাকে, যতক্ষণ না পর্যন্ত সমস্ত সংক্রমিত ব্যক্তিকে খুঁজে না পাওয়া যায়। এই প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি অবলম্বনের প্রধান লক্ষ্য হল জনসাধারণের মধ্যে সংক্রমণের সংখ্যা হ্রাস করা বা শূন্যতে নামিয়ে আনা। যেসমস্ত রোগব্যাধির জন্য সংক্রমণ-বাহক অনুসন্ধান প্রক্রিয়াটি নির্বাহ করা হয়, তাদের মধ্যে আছে যক্ষ্মা, টিকা দ্বারা প্রতিরোধযোগ্য সংক্রমণ যেমন হাম, যৌন উপায়ে সংক্রমিত রোগ (যেমন এইডস), কিছু গুরুতর ব্যাকটেরিয়াঘটিত সংক্রমণ, রক্তবাহিত সংক্রমণ এবং কিছু নতুন ধরনের ভাইরাসঘটিত সংক্রমণ (যেমন সার্স-কোভ-২ করোনাভাইরাস রোগ)
সংক্রমণ-বাহক অনুসন্ধান প্রক্রিয়াটি জনস্বাস্থ্য খাতে সংক্রামক রোগব্যাধির নিয়ন্ত্রণে বহু দশক ধরেই একটি প্রধান স্তম্ভ হিসেবে কাজ করে আসছে। গুটিবসন্ত রোগ নির্মূলকরণ কেবলমাত্র বিশ্বব্যাপী টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমেই সফল হয়নি, বরং এই সাফল্যের অন্যতম একটি নিয়ামক ছিল সমস্ত সংক্রমিত ব্যক্তিকে খুঁজে বের করার জন্য ব্যাপকভাবে সংক্রমণ-বাহক অনুসন্ধান প্রক্রিয়াটি চালানো। খুঁজে পাওয়ার পরে সংক্রমিত ব্যক্তিদেরকে অন্তরণ করা হয়েছিল এবং তাদের পারিপার্শ্বিক ঝুঁকিপূর্ণ জনসম্প্রদায়কে গুটিবসন্তের টিকাদান করা হয়েছিল।
তবে সংক্রমণ-বাহক অনুসন্ধান সর্বদা কোনও সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে দক্ষ পদ্ধতি না-ও হতে পারে। যেসব অঞ্চলে রোগের প্রাদুর্ভাব বা বিস্তার বেশি, সেখানে ছাঁকন (screening স্ক্রিনিং) পদ্ধতি কিংবা সন্নিবদ্ধ পরীক্ষণ (focused testing) পদ্ধতি অপেক্ষাকৃত অধিকতর সাশ্রয়ী হতে পারে।
লক্ষ্য
সংক্রমণ-বাহক অনুসন্ধানের লক্ষ্যগুলি নিম্নরূপ:
- চলমান সংক্রমণে বাধা দেওয়া এবং সংক্রমণের বিস্তার হ্রাস করা
- সংক্রমণের সম্ভাবনার ব্যাপারে সংস্পর্শে আসা সংক্রমণ-বাহকদেরকে সাবধান করা এবং তাদেরকে প্রতিরোধমূলক উপদেশ-পরামর্শ কিংবা প্রতিকারমূলক সেবা প্রদান করা
- ইতিমধ্যেই সংক্রমিত ব্যক্তিদেরকে রোগনির্ণয়, পরামর্শদান ও প্রতিকার প্রদান করা।
- যদি সংক্রামক রোগটি প্রতিকারযোগ্য হয়, তাহলে আদিতে সংক্রমিত রোগীর যেন পুনরায় সংক্রমণ না হয়, তা প্রতিরোধ করা।
- কোনও নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর জন্য একটি রোগের রোগতত্ত্বীয় দিকগুলি সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণ করা।
যেসমস্ত রোগের সংক্রামক ক্ষমতা সুনিশ্চিত নয়, সেক্ষেত্রেও রোগটির বৈশিষ্ট্যাবলি (যেমন সংক্রমণশীলতা ) সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করার লক্ষ্যে কখনও কখনও সংক্রমণ-বাহক অনুসন্ধান পদ্ধতিটি অবলম্বন করা হয়।
সংক্রমণ-বাহক অনুসন্ধানের ধাপসমূহ
সংক্রমণ-বাহক অনুসন্ধান প্রক্রিয়াটিতে সাধারণত নিম্নলিখিত ধাপগুলি অনুসরণ করা হয়:
- একজন ব্যক্তিকে সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়। এই ব্যক্তিটিকে "সূচক রোগী" ডাকা হয়। এই ব্যক্তিটিকে হয় জনস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয় ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারকের কাছে তাকে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়।
- সূচক রোগীটির সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় এবং তার গতিবিধি ও সে অন্য কোন্ ব্যক্তির সাথে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এসেছে, সে ব্যাপারে তথ্য আহরণ করা হয়।
- রোগ ও সংক্রমণের প্রতিবেশ (Context) অনুযায়ী পরিবারের সদস্য, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী এবং অন্য সমস্ত ব্যক্তি যারা সূচক রোগীর সংক্রমণ-বাহক সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে পারে, তাদেরও সাক্ষাৎকার নেওয়া হতে পারে।
- সংক্রমণ-বাহকদেরকে শনাক্ত করার পরে জনস্বাস্থ্য কর্মীরা তাদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে এবং তাদেরকে উপদেশ-পরামর্শ প্রদান করে, তাদের উপরে ছাঁকন পরীক্ষা (প্রশ্নোত্তরমূলক) সম্পাদন করে, রোগ প্রতিরোধমূলক এবং/কিংবা রোগ নিরাময়মূলক চিকিৎসা সেবা প্রদান করে।
- সংক্রমণ-বাহকদেরকে রোগ নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে নিজগৃহে অন্তরিত বা বিচ্ছিন্ন করে রাখা হতে পারে। কিংবা তাদেরকে বিভিন্ন স্থানে যেতে নিষেধ করা হয়।
- যদি সংক্রমণ-বাহকদেরকে ব্যক্তিগতভাবে শনাক্ত করা সম্ভব না হয়, তাহলে ব্যাপকতর যোগাযোগের ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে, যেমন গণমাধ্যমে সতর্কতামূলক বিজ্ঞপ্তি স্থাপন করা হতে পারে।
যদিও সংক্রমণ-বাহক অনুসন্ধান প্রক্রিয়াকে সহজতর করার জন্য রোগী নিজেই তার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদেরকে তথ্য, ওষুধ ও সাহায্যকারী সংস্থার নাম প্রদান করতে পারে, এ পর্যন্ত সাক্ষ্যপ্রমাণে দেখা গেছে যে জনস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ তাদেরকে সরাসরি জানালে প্রক্রিয়াটী সবচেয়ে বেশি কার্যকর হয়।
নতুন সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাবের সময়
সাধারণত স্থানিক রোগ বা স্থানীয় মহামারীর ক্ষেত্রে সংক্রমণ-বাহক অনুসন্ধান প্রক্রিয়াটি প্রয়োগ করা হয়। তবে নতুন কোনও বিরল ও অস্বাভাবিক সংক্রামক ব্যাধির প্রাদুর্ভাব ও বিস্তারের ক্ষেত্রেও এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগানো যায়। যেমন ২০০৬ সালের সার্স রোগের ক্ষেত্রে কিছু দেশে কোনও নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ে সম্ভাব্য রোগী বা দ্বিতীয় স্তরের সংক্রমণ নিশ্চিত করতে সংক্রমণ-বাহক অনুসন্ধান প্রক্রিয়াটি ব্যবহার করা হয়েছে।
বৃহত্তর বৈশ্বিক মহামারীর (বিশ্বমারীর) ক্ষেত্রে, যেমন ২০০৯ সালে এইচ১এন১ ইনফ্লুয়েঞ্জার বৈশ্বিক মহামারীর ক্ষেত্রে সংক্রমণ-বাহক অনুসন্ধান পদ্ধতিটি প্রয়োগ করা হয়। তবে এই ধরনের নৈরাজ্যমূলক বিপর্যয়ের সময়ে সংক্রমণ-বাহক অনুসন্ধান পদ্ধতিটি তার লক্ষ্য অর্জনে বড় ধরনের বাধার সম্মুখীন হয়।