Продолжая использовать сайт, вы даете свое согласие на работу с этими файлами.

সংজ্ঞানাত্মক স্নায়ুবিজ্ঞান
সংজ্ঞানাত্মক স্নায়ুবিজ্ঞান (ইংরেজি: cognitive neuroscience) হল একটা বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্র যেটা জীববিদ্যাগত অধ্যয়নের পদ্ধতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এবং যেটা সংজ্ঞান-এর ওপর জোর দেয়, যা মানসিক পদ্ধতিতে যুক্ত মস্তিষ্কে স্নায়ু সংযোগকে বিশেষ আলোকপাত করে। সংজ্ঞানাত্মক স্নায়ুবিজ্ঞান শাস্ত্রটি মনোবিজ্ঞান ও স্নায়ুবিজ্ঞান উভয় প্রকার বিজ্ঞানেরই একটি শাখা। এতে অনেকগুলি উপশাস্ত্রের সম্মিলন ঘটেছে যেমন সংজ্ঞানাত্মক মনোবিজ্ঞান, মনোজীববিজ্ঞান এবং স্নায়ুজীববিজ্ঞান। এফএমআরআই-এর উদ্ভাবনের আগে শাস্ত্রটি বোধনমূলক স্নায়ুশারীরবিদ্যা নামে পরিচিত ছিল। সংজ্ঞানাত্মক স্নায়ুবিজ্ঞানীরা কেবল পরীক্ষামূলক মনোবিজ্ঞান বা স্নায়ুজীববিজ্ঞানের ক্ষেত্র থেকে নয়, বরং মনোচিকিৎসা, স্নায়ুবিদ্যা, পদার্থবিজ্ঞান, ভাষাবিজ্ঞান এবং গণিতের ক্ষেত্র থেকেও আসতে পারেন।
মস্তিষ্কের অংশগুলো এই ক্ষেত্রে একটা গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করে। কেননা, চেতনার স্নায়বিক দৃষ্টিকোণ থেকে মস্তিষ্কের স্তরের বিভিন্ন প্রকোষ্ঠের সঙ্গে একটা বিষয় প্রতিষ্ঠা করতে স্নায়ুকোশ ও তার শাখাপ্রশাখা অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
সংজ্ঞানাত্মক স্নায়ুবিজ্ঞানে পরীক্ষামূলক পদ্ধতিসহ যে সব প্রক্রিয়াগুলো কাজে লাগানো হয়েছে যেমন, সম্পর্ক-বিষয়ক বিজ্ঞান ও সংজ্ঞানাত্মক মনোবিজ্ঞান, কার্যকর স্নায়বিক চিত্রণ, বৈদ্যুৎ-শারীরবিদ্যা, সংজ্ঞানাত্মক জৈবিক বিষয়সমূহ এবং আচরণগত প্রজননবিদ্যা।
যে সমস্ত রোগীর শারীরিক পরীক্ষায় মস্তিষ্কে ক্ষতের কারণে সংজ্ঞানাত্মক ঘাটতির কথা জানা যায় সেক্ষেত্রে সংজ্ঞানাত্মক স্নায়ুবিজ্ঞানের ধারণা প্রকট হয়। মস্তিষ্কের ক্ষতজনিত ক্ষতির কারণে স্বাস্থ্য ও মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা তুলনামূলকভাবে কম হওয়ার এটাই শুরুয়াত। এই ক্ষতি মস্তিষ্কে স্নায়বিক বর্তনীগুলোর পরিবর্তন সাধিত করে প্রাথমিক সংজ্ঞানাত্মক পদ্ধতি, যেমন, স্মৃতি অথবা শিক্ষা চলাকালীন ত্রুটি ধরা পড়ে। এমতাবস্থায় মানুষের শিক্ষায় ঘাটতি দেখা দেয়, এবং এই ক্ষতিকে তুলনা করা যায় যে, স্বাস্থ্যকর স্নায়বিক বর্তনীগুলো কতটা কাজ করছে আর এভাবে সিদ্ধান্তে আসা যায় সংজ্ঞানাত্মক স্নায়ুবিজ্ঞান কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হল। টেম্পোরাল লোবের বাঁদিক বা ওয়ার্নিকের এলাকা এবং ফ্রন্টাল লোবের ব্রক্কাস এলাকাসহ মস্তিষ্কের শিক্ষণের অপারগতার ব্যাপার ঘটে।
এছাড়া, মস্তিষ্কের উন্নয়নের ওপর সংজ্ঞানাত্মক যোগ্যতাসমূহের ভিত্তিতে সংজ্ঞানাত্মক স্নায়ুবিজ্ঞানের উন্নয়নের অধীনে শাখাক্ষেত্র হিসেবে অধ্যয়ন এবং পরীক্ষা চলে। এটা সময়কালে মস্তিষ্কের উন্নয়নকে দৃশ্যমান করে, বিভিন্নতা এবং সেইসব ভিন্নতার মনগড়া সম্ভাব্য কারণসমূহকে বিশ্লেষণ করে।
গণনাগত স্নায়ুবিজ্ঞান এবং সংজ্ঞানাত্মক মনোবিজ্ঞান তাত্ত্বিক পন্থার সঙ্গে যুক্ত।
ঐতিহাসিক উৎস
সংজ্ঞানাত্মক স্নায়ুবিজ্ঞান হল স্নায়ুবিজ্ঞান এবং মনোবিজ্ঞান থেকে সংযুক্ত হওয়া আন্তর্বিভাগীয় একটা ক্ষেত্র। অনেক রকম বিভাগের পরিবর্তনে গবেষকরাও তাঁদের পরীক্ষানিরীক্ষার কাজের ধরন বদল করেন এবং যেটা সম্পূর্ণরূপে ক্ষেত্র প্রস্তুত করে।
যদিও সংজ্ঞানাত্মক স্নায়ুবিজ্ঞানের কাজ হল মনের সঙ্গে সংযুক্ত স্নায়বিক প্রক্রিয়ার বর্ণনা দেওয়া, ঐতিহাসিকভাবে পরীক্ষার দ্বারা এটা উন্নীত কী করে মস্তিষ্কের একটা বিশেষ অঞ্চল প্রদত্ত মানসিক ক্রিয়াকে সমর্থন করে। যাইহোক, এটা প্রমাণিত যে, মস্তিষ্ককে প্রাথমিকভাবে বিভাজিত করার কাজটা হল সমস্যাসঙ্কুল। চিত্তবৃত্তির বহির্গাঠনিক গতি একটা বৈজ্ঞানিক ভিত্তির জোগান দিতে ব্যর্থ হওয়ার জন্যে সেটা বাতিল হয়েছে। গড় ক্ষেত্রিক দর্শন, যার অর্থ মস্তিষ্কের সকল অঞ্চলই সব আচরণে অংশগ্রহণ করে থাকে, হিটজিগ ও গুস্তাভ ফ্রিটশের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সঙ্গে যা শুরু হয়েছিল সেটা মস্তিষ্ক ম্যাপিংয়ের হিসেবে বাতিলও হয়েছিল এবং এমনকি হাঁবাচক নির্গমন টোমোগ্রাফি (PET) ও কার্যকর চৌম্বকীয় অনুরণন চিত্রণের (fMRI) মাধ্যমে উন্নীত হয়েছিল। সংজ্ঞানাত্মক স্নায়ুবিজ্ঞানের সৃষ্টিতে ক্ষেত্র হিসেবে গেস্টাল্ট তত্ত্ব, স্নায়ুমনোবিজ্ঞান এবং সংজ্ঞানাত্মক বিপ্লব ছিল প্রধান টার্নিং পয়েন্ট যা গবেষকদের আচরণ ও স্নায়বিক স্তরের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করতে সম্ভব করেছিল।
দর্শনে উৎসসমূহ
“খ্রিস্টপূর্ব পাঁচ শতক থেকে সতেরো এবং আঠারো খ্রিস্টাব্দ পুনর্জন্মপ্রাপ্ত হওয়া পর্যন্ত দর্শনের ইতিহাসে আণবিক তত্ত্বের গভীর মূলের মধ্যে পরিস্থিতি ব্যাখ্যার যে ধারণার কার্যকরতা সংশ্লিষ্ট ছিল, যার ওপর কাজ করে গিয়েছেন গ্যালিলিয়ো, দেকার্ত ও বয়েল। অন্যান্যদের মধ্যে দেকার্তের ধারণাই পরিষ্কার হল যে, মানুষ যন্ত্র বানিয়েছে যা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার মডেল হিসেবে কাজ করে।” — এই বিষয়ে ভাবনা করতে দার্শনিকেরা সব সময়ই আগ্রহী।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, অ্যারিস্টটল যদিও ধারণা পোষণ করতেন মস্তিষ্ক শরীরকে ঠান্ডা রাখে এবং বুদ্ধির উৎপত্তি হৃৎপিণ্ডকেন্দ্রিক। এটাও বলা হয়ে থাকে—খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকে রোমীয় চিকিৎসক গ্যালেন হলেন অন্য মতে বিশ্বাসী প্রথম ব্যক্তি এবং যিনি ঘোষণা করেছিলেন যে, মস্তিষ্ক হল মানসিক কার্যকারিতার উৎস, যদিও, এটা অ্যালকমায়েন কর্তৃক স্বীকৃতি লাভ করে। যাই হোক, গ্যালেন বিশ্বাস করতেন যে, ব্যক্তিত্ব এবং আবেগ মস্তিষ্কপ্রসূত নয়, বরং এগুলো অন্য প্রত্যঙ্গ থেকে উদ্ভূত হয়। অ্যান্দ্রেয়াস নামে একজন শারীরস্থানবিদ এবং চিকিৎসক প্রথম এব্যাপারে বিশ্বাসী ছিলেন যে, মস্তিষ্ক ও শরীরের স্নায়বিক পদ্ধতি হল মন এবং আবেগের কেন্দ্রবিন্দু। সংজ্ঞানাত্মক স্নায়ুবিজ্ঞানের প্রধান অবদান ক্ষেত্র যে মনোবিজ্ঞান, সেই মন সম্পর্কে ধারণা দার্শনিক যুক্তি থেকে উদ্ভূত হয়েছে।
উনিশ শতক
ফ্রেনোলজি
ফ্রেনোলজি ছিল সংজ্ঞানাত্মক স্নায়ুবিজ্ঞানের পূর্বসূরিদের মধ্যে একটি, এটা একটা ছদ্মবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি যাতে দাবি করা হয় যে, আচরণ মাথার খুলির আকৃতি দ্বারা নির্ধারিত হতে পারে। ফ্রাঞ্জ জোসেফ গল এবং জি জি স্পারজেইম উনিশ শতকের গোড়ায় বিশ্বাস করতেন যে, মানুষের মস্তিষ্ক প্রায় ৩৫টা বিভিন্ন খোপে গ্রথিত। গল তাঁর বইতে দাবি করেন যে, সাধারণভাবে স্নায়বিক পদ্ধতির শারীরস্থান ও দেহতত্ত্ব, বিশেষ করে মস্তিষ্ক, এগুলোর মধ্যে কোনো একটা অংশের বড়ো ঝাঁকানি মানেই হচ্ছে ওই ব্যক্তি ঘন ঘন সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের ব্যবহার করেছেন। ফ্রেনোলজি জার্নালে প্রকাশিত এই তত্ত্ব মানুষের নজর কেড়েছিল এবং ফ্রেনোমিটার সৃষ্টিতে রসদ জুগিয়েছিল; যে যন্ত্রে মানুষের উক্ত বিষয়ভিত্তিক ঝাঁকানি মাপা যায়। ফ্রেনোলজি যেখানে মেলা এবং কার্নিভালে একটি বিষয়বস্তু ছিল ঠিকই, কিন্তু বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের মধ্যে এটা ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্যতা আদায় করতে পারেনি। ফ্রেনোলজির একটা বড়ো সমালোচনা হল, গবেষকরা অভিজ্ঞতামূলকভাবে এই তত্ত্বের পরীক্ষা করে উঠতে পারেননি।
তথ্যসমূহ
স্নায়ুজীববিজ্ঞান (Neurobiology) • সংজ্ঞানাত্মক স্নায়ুবিজ্ঞান (Cognitive Neuroscience) • গণনামূলক স্নায়ুবিজ্ঞান (Computational Neuroscience) • স্নায়ু প্রকৌশল (Neural Engineering) • স্নায়ু-শারীরসংস্থান (Neuroanatomy) • স্নায়ুরসায়ন (Neurochemistry) • স্নায়ুচিত্রণ (Neuroimaging) • স্নায়ুভাষাবিজ্ঞান (Neurolinguistics) • স্নায়ুবিদ্যা (Neurology) • স্নায়ু-ঔষধবিদ্যা (Neuropharmacology) • স্নায়ুশারীরবিদ্যা (Neurophysiology) • স্নায়ুমনোবিজ্ঞান (Neuropsychology) • মনো-ঔষধবিদ্যা (Psychopharmacology) • সিস্টেম্স স্নায়ুবিজ্ঞান (Systems Neuroscience) |